কাদরিয়া ফির্কা
ফির্কার
নামঃ ক্বাদরিয়া
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন।
আরবি ক্বদল (قدر) শব্দ থেক ক্বাদরিয়া শব্দটি এসেছে। ক্বদর অর্থ হল ভাগ্য। অথচ ক্বাদরিয়া সম্প্রদায় ক্বদর বা ভাগ্য বিশ্বাস করেনা। তাদের নামের সাথে বিশ্বাসের কোন মিল নেই বরং নামের বিপরীত
বিশ্বাসই তারা করে থাকে। তাইতে বলা হয় যারা ক্বদর বা ভাগ্য বিশ্বাস করেনা তাদের কাদরিয়া
ক্বাদরিয়া বলা হয়। ক্বাদরিয়া ও মুতাজিলাদের মধ্যে আকিদাগত কিছু মিল থাকার কারনে
অনেকে ক্বাদরিয়া ও মুতাজিলাদের একই সম্প্রদায় মনে
করেন। অসলে ব্যাপারটা তা নয়। মুতাজিলা সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা হলো ওয়াসিল ইবনে
আতা অপর পক্ষে কাদরিয়া সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা
হলো সীসওয়াহ।
কাদরিয়া উৎপত্তি ও পেক্ষাপট: তাদের উদ্ভব ঘটে সাহাবায়ে
কিরামের শেষ যুগে খোলাফায়ে রাশেদার শেষ আমলে ও উমাইয়া শাসনামলের শুরুদিকে। "ফাতহুল মুলহিম" গ্রন্থকার
বলেন, কথিত আছে, কাবা শরীফে আগুন লাগার
ঘটনাকে কেন্দ্র করে সর্বপ্রথম এ ফিৎনার সূচনা হয়। তখন জনৈক
ব্যক্তি মন্তব্য করেন, এটা আল্লাহর ইচ্ছামত ক্বদর অনুসারে হয়েছে। আর অন্যরা
বলে, আল্লাহ এরূপ পরিকল্পনা নাতে
পারেন না। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ক্বাদরিয়া মতবাদ ছড়িয়ে পড়ে। খোলাফায়ে রাশেদাগনের যুগে কেউ তাকদির অস্বীকার করত না। (ইসলামী
আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ পৃষ্ঠা -২৮৭)।
কাদরিয়া সম্প্রদায়ের মৌলিক আকীদা-বিশ্বাসঃ-
১.তারা আল্লাহর অনাদি গুনাবলী অস্বীকার করে যেমন
ইলম, কুদেরত, হায়াত, শ্রবণ, দর্শণ ইত্যাদি অস্বীকার করে। তারা বলে আদিকালে আল্লাহর
কোন নাম বা গুনাবলী ছিল না।
২.তারা বলেন, আল্লাহ তা'য়ালাকে মানুষের চোখে দেখা অসম্ভব। আর মহান আল্লাহ মানুষকে দেখতে পায় কিনা সে বিষয় তারা দিধা বিভক্ত। এক দল বলে মহান আল্লাহ মানুষকে দেখতে পায় অপর দল বলে মহান আল্লাহ মানুষকে দেখতে পায় না।
৩. ক্বাদরিয়াদের প্রায় সকলেই মুতাজিলাদের মত বিশ্বাস করে পবিত্র কুরআনকে ‘আল্লাহ সৃষ্ট’। কালাম উল্লাহর সকল আদেম নিষেধও ‘আল্লাহ সৃষ্ট’। ইহার প্রমানর কুরআন সুন্নাহর কোন প্রমান তারা দিতে পারে নাই।
৪. মানুষ যে কাজ করে, তার সৃষ্টিকর্তা মানুষ। এখানে আল্লাহর হাত নেই।
৫.তারা বলে ফাসেকরা মুমিনও নয়, কাফেরও নয়, বরং তারা মধ্যবর্তী।
৬.বান্দার যেসব কর্মচিন্তা সম্পর্কে আল্লাহ
তা'য়ালা কোনো আদেশ নিষেধ দেননি, সেসব বিষয়ে
আল্লাহ তা'য়ালার কোনো ইচ্ছা এবং এরাদার সংশ্লিষ্টতাও নেই।
৭.তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শারীরিক মিরাজকে অস্বীকার করে। অথচ মিরাজ স্বশরীরে হয়েছিল।
৮.তারা রুহের জগতে আল্লাহ তা'য়ালার সাথে কৃত অঙ্গীকারকে অস্বীকার করে।
৯.তারা জানাযা নামাজের আবশ্যকীয়তাকে অস্বীকার করে।
কাদরিয়া মতবাদ সম্পর্কে শরয়ী হুকুমঃ-
প্রতিষ্ঠাকালীন আকীদা সমূহের আলোকে কাদরিয়ারা কাযী ইয়াজ রহঃ এর মতে কাফের।
"আল ফারকু বাইনাল ফিরাক" গ্রন্থের রচয়িতা মুহাম্মাদ ইবনে তাহির আল বাগদাদীর মতে তাদের আল-খতিবিয়্যাহ এবং হিমারিয়্যাহ এদুটি ফিরকা প্রকৃতপক্ষে ইসলামী দল নয়। আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি রহঃ বলেন,আলিমগনের অনেকেই কোনোরূপ ভাগাভাগি ছাড়াই দ্ব্যর্থহীনভাবেই কাদরিয়াদেরকে কাফের বলেছেন।
সালফে সালিহীনদের অধিকাংশই তাদেরকে কাফের বলেছেন। (তাদের আকিদাগুলি ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদের পৃষ্ঠা -২৯৩ থেকে নেওয়া)।
0 Comments
Thanks for your comment