কাদিয়ানী
ফির্কার নামঃ কাদিয়ানি
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন।
কাদিয়ানি একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসাবে পৃথিবীতে পরিচিতি লাভ করছে। মানুষ যে কোন ধর্ম মত গ্রহন করতে পারে এটা তার ধর্মীয়
স্বাধীনতা। কিন্তু অন্যের নামে নিজের ধর্ম মত প্রচার করার অধিকার কারো নেই। আর এই
অনধিকার চর্চা করেছেন মির্যা গোলাম আহ্মেদ কাদিয়ান। তিনি নিজে ধর্মমত আবিস্কার
করে নাম দিয়েছর ইসলাম। আর অনুসারির নাম দিয়েছেন মুসলিম। তিনি স্ববিরোধী কিছু দাবীর
মাধ্যমে নিজেকে ১৮৮৯ সালে আহ্মদিয়া মুসলিম জামাত নামক একটি মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা
হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করেছেন। তার দাবী মতে, তিনি একজন মুজাদ্দেদ
(আধ্যাত্মিক সংস্কারক),
প্রতিশ্রুত
মসীহ, মাহদী এবং খলীফা। তিনি একজন উম্মতি
নবী হিসেবেও নিজেকে দাবী করেন এবং তার সপক্ষে কুরআনের বহু আয়াত এবং ঘটনা পেশ
করেন। তাঁর অনুসারীরা আহমদিয়া এবং কাদিয়ানি উভয় নামেই পরিচিত। ইতিহাসে খুজলে
দেখা যাবে যুগে যুগে বহু জন বহু মতবাদ এনেছেন। পৃথিবীতে আব্দুল্লাহ ইবনে সাবার
শিয়া, ওয়াছিল ইবনে আতার’ মুতাজিলা, সীসওয়াহর কাদরিয়া, মির্জা হোসেন আলী ইবনে আব্বাসের বাহাই সম্প্রদায় সহ অনেক মতবাদ এখনও অনেক মতবাদ দুনিয়াতে বিদ্যমান
রয়েছে। তবে তারা কেউ কাদিয়ানীদের মত নবী, প্রতিশ্রুত মসীহ, মাহদী এবং খলীফা দাবি নিয়ে হাজির
হয়নি। যার কারণে প্রতিটি সচেতন মুসলিম জনগোষ্ঠীর কাছে তারা গ্রহণযোগ্য হয়নি। পৃথিবীর মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ৪৮ টি দেশ, রাবেতা ও ওআইসির
কাদিয়ানীদের অমুসলিম ও স্বতন্ত্র ধর্মের অনুসারী হিসাবে ঘোষণা করেছে। কাজেই মির্যা গোলাম আহ্মেদ
কাদিয়ান জীবনী জানতে পারলেই কাদিয়ানি সম্প্রদায় সম্পর্কে জানা যাবে। কারন তার জীবনের বাকে
বাকে সাজান আছে এই ধর্মমত।
মির্জা
গোলাম আহমেদ কাদিয়ানী
কাদিয়ানী মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা মির্জা গোলাম আহমেদ কাদিয়ানী
(Mirza Ghulam Ahmad) ১৮৩৫
সনের ১৩ই ফেব্রুয়ারী ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের গুরুদাসপুর জেলার কাদিয়ান নামক
গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মির্জা গোলাম
মুর্তজা ছিলেন একজন অভিজ্ঞ ও খ্যাতনামা চিকিৎসক। তার মাতা চিরাগ বিবি। তিনি জমজ
সন্তানের জন্ম দিলেও গোলাম আহমেদ ব্যতিত অপর সন্তানটি বাঁচেনি।
শৈশর
ও পড়াশুনা: তিনি প্রথমিকভাবে আরবী ভাষা ও
গ্রামার, কোরআন, দর্শন এবং ফারসী
ভাষা শিক্ষা করেন গৃহশিক্ষক ফজলে এলাহির নিকট। অত:পর ১০
বৎসর বয়সের সময় তার শিক্ষক নিযুক্ত হন ফজল আহমেদ। আর ১৮-১৯ বৎসর বয়সের সময়
তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেন গুল আলী শাহের নিকট। বাল্যকাল থেকেই মির্জা গোলাম আহমেদ
খুবই সাধারণ ছিলেন। জাগতিক কোন বস্তু তাকে আকর্ষণ করত না। তিনি খুব অন্যমনস্ক ও
ভুলোমনা ছিলেন।
তার
পারিবারিক: ১৮৫৩-৫৪ সনের দিকে গোলাম
আহমেদ পারিবারিকভাবে বিবাহ করেন হুরমত বিবিকে। এই স্ত্রী ছিলেন তার জ্ঞাতিগুষ্ঠিরই
একজন। তার গর্ভে দু’টি সন্তান
(মির্জা সুলতান আহমেদ ও মির্জা ফজল আহমেদ) জন্মলাভ করে। ১৮৯১ সনে গোলাম আহমেদ তার
এই স্ত্রীকে ডিভোর্স দেন। অবশ্য ইতিপূর্বে তিনি ১৮৮৪ সনে দিল্লীর নবাব মীর নাসির
উদ্দিনের কন্যা নূসরত জাহান বেগমকে বিবাহ করেছিলেন। এই স্ত্রীর গর্ভে গোলাম আহমেদ
তিনটি পুত্রসন্তান লাভ করেন। এরা হলেন যথাক্রমে-মির্জা বশির উদ্দিন মাহমুদ,
মির্জা বশির আহমেদ ও মির্জা শরীফ আহমেদ।
কর্ম
জীবন: ১৮৬৪ সনে মির্জা গোলাম
আহমেদ তার পিতার ইচ্ছানুসারে শিয়ালকোটে সরকারী চাকুরীতে যোগদান করেন। তার বড় ভাই
মির্জা গোলাম কাদিরও একজন সরকারী কর্মচারী ছিলেন। কিন্তু ১৮৬৮ সনে তিনি তার পিতার
ইচ্ছানুসারে চাকুরীতে ইস্তফা দিয়ে বাড়ী ফিরে আসেন এবং পৈত্রিক সম্পত্তি
দেখাশুনোর ভার নেন। পাঞ্জাবে গোলাম
আহমেদের দাদা গুল মুহম্মদের বিশাল জমিদারী ছিল। কিন্তু তার মৃত্যুর পর তৎকালীন
পাঞ্জাবের শিখ সরকার তাদের সমস্ত সম্পত্তি রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন করে নেয়। তাদের
অধীনে ছিল কেবল কাদিয়ান গ্রামটি। পরবর্তীতে শিখ সরকার ঐ গ্রামটিও রাষ্ট্রীয়
অধিকারভূক্ত করে নেয় এবং মির্জা পরিবারকে সেখান থেকে উৎখাত করে। কিন্তু শেষ
পাঞ্জাব শিখ সরকার রণজিৎ সিং তার শাসনের শেষ বৎসরে মির্জা গোলাম মুর্তজা কাদিয়ানে
ফিরে এলে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে তাকে পাঁচটি গ্রাম ফিরিয়ে দেন। অত:পর এই
ভূ-সম্পত্তি দেখাশুনোর জন্যে তিনি পুত্র গোলাম আহমেদকে চাকুরীতে ইস্তফা দিয়ে
গ্রামে ফিরে আসতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।
গবেষনা: নিজ গ্রামে ফিরে এসে নিজের অখন্ড
অবসরে গোলাম আহমেদ নিয়মিত প্রত্যাহিক এবাদতে, কোরআন পঠন ও তার তফসীর পর্যালোচনা ও অন্যান্য বিভিন্ন ধর্মীয় পুস্তকাদি
পাঠে মনোযোগ এবং নানাবিধ সমাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। তাছাড়া
তিনি তার পিতার সংগৃহীত চিকিৎসা শাস্ত্রের বিভিন্ন গ্রন্থাদি পঠনেও এসময় মনোযোগী
হয়েছিলেন। তিনি অনেক বই লিখেন।
তার ধর্মমতের উত্থান: ১৮৮০ থেকে ১৮৮৮ সাল পর্যন্ত গোলাম আহমদ কাদিয়ানী
ছিলেন একজন মুসলিম ধর্ম প্রচারক ও ইসলাম বিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে একজন তুখোড়
তার্কিক। তিনি বিভিন্ন ধর্মীয়
পন্ডিতদের সাথে বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় বিতর্কে লিপ্ত হয়েছেন এবং নিজের জ্ঞান ও
মেধার পরিচয় দিয়েছেন।
এরই মাঝে ১৮৮৬ সানে তিনি
সিদ্ধিলাভের জন্যে হোসিয়ারপুরে ধ্যানে বসেছিলেন, কিন্তু শারীরিক কারণে ৪০ দিবস ও রজনীর ঐ কঠোর ব্রত
তিনি সম্পন্ন করতে পারেননি।
আওলিয়া
হিসাবে প্রকাশ ও ঐষিবাণী পাওয়ার দাবি:
১৮৮৯
সন তিনি জনগনের নিকট থেকে বায়াআত গ্রহন শুরু করেন ও নিজেকে উম্মতের আওলিয়া
দরবেশের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে দাবি করেন। (সিরাতুল মাহদি ১ম খঃ পৃঃ ১৪, ৩১, ও ৮৯)।
এবং এ বছরই মির্জা গোলাম আহমদ ঘোষণা করেন যে,
তিনি একটি ঐষিবাণী পেয়েছেন, যাতে তাঁকে এ
মতবাদে বিশ্বাসীদের আনুগত্য গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। তিনি তার দৈব প্রাপ্ত ধর্মমতের
প্রচার শুরু করেন।
ঈশা
ইবনে মারইয়াম হওয়ার দাবি: ১৮৯১
সনে মির্জা গোলাম আহমেদ নিজেকে 'ঈশা ইবনে মারইয়াম' হিসেবে ঘোষণা দেন এবং তার দাবীর পিছনে কোরআন ও হাদিসের আলোকে নানা যুক্তি
ও তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেন। তার রচিত 'Jesus
in India' গ্রন্থটি তথ্য, তত্ত্ব, যুক্তি দিয়া নিজেকে ‘ঈশা ইবনে মারইয়াম’ প্রমাণে
আপ্রান চেষ্টা করেন। ঈশা ইবনে মারইয়াম হিসেবে ঘোষণা দেবার পর গোলাম আহমেদ তার
মতাদর্শ ছড়িয়ে দিতে সমগ্র ভারতবর্ষ চষে বেড়াতে লাগলেন। মির্জা গোলাম আহমেদ
নিজেকে ঈশা ইবনে মারইয়াম দাবী
করলে সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের নিকট থেকে আপত্তি, নিন্দা ও তীব্র বাঁধার সম্মুখিণ হলেন। এ সময়
"আহলে হাদিস" পত্রিকার সম্পাদক মওলানা সানাউল্ল্যা অমৃতসরী তাকে সরাসরি
মিথ্যেবাদী আখ্যায়িত করে তার পত্রিকার বিভিন্ন সংখ্যায় তার ভন্ডামি উপস্থাপন
করতে লাগলেন। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। (হাকিকাতুল ওয়াহয়ী পৃঃ ১৪৯, সিরাতুল মাহদি পৃঃ ৩১, ৮৯)।
নবী হিসাবে মনোনয়নের দাবি: ১৯০০ খ্রিঃ থেকে তার অনুসারী মুরিদগন তাকে নবী হিসেবে আখ্যায়িত করে। জনরোষ থেকে রক্ষা পেতে তিনি এসময়
নিজেকে আংশিক নবী, ছায়া নবী, ও ঝিল্লি বা বুরুজি নবী হিসাবে প্রচার করেন। (কালিমাতুল ফাসল পৃঃ ১৬৭, মুনকিরিনে
খিলাফত কা আনজাম পৃঃ ১৯)
১৯০১ খ্রিঃ তিনি নিজেকে নবী ও রাসুল
বলে ঘোষণা করেন এবং পূর্বেকার ঝিল্লি বা বুরুজি দাবি
রহিত করেন। (সিরাতুল মাহদি পৃঃ ৩১, হাকিকাতুল ওয়াহয়ি ৩৯১, খাজাইন
২২ খ। ৪০৬-৭)
অসুস্থ্যতা
ও মৃত্যু: ১৯০৮ সালে ২৫ মে, মির্জা গোলাম আহমেদ অসুস্থ্য
হয়ে পড়েন। এসময় তিনি লাহোরে ছিলেন। পরদিন ২৬ শে মে সকাল দশটার পর তিনি মারা
যান। মৃত্যুর পর
মির্জা গোলাম আহমেদের মৃতদেহ লাহোর থেকে পাঞ্জাবের কাদিয়ানে নিয়ে আসা হয়েছিল
এবং ২৭ শে মে, ১৯০৮ সনে
তার দাফন কাজ সম্পন্ন হয়।
মির্জা গোলাম আহমদ
কাদিয়ানী মৃত্যু পরবর্তি অবস্থা
বর্তমানে
গোলাম আহমেদের অনুসারীরা বিশ্বের অধিকাংশ দেশে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। ১৯০৮
সালে গোলাম আহমদ কাদিয়ানী মারা যায়। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর অনুসারীরা মৌলানা নুরউদ্দিনকে তার উত্তরসূরি
নির্বাচিত করেন। নুরউদ্দিনের মৃত্যুর পর ১৯১৪ সালে সম্প্রদায়টি অনুসারীদের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাপারে মত-পার্থক্য দেখা দিতে
থাকে। এবং তা
প্রকটরূপ লাভ করে, যার পরিনতিতে তারা দু’টি উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
ক.
কাদিয়ানী (যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী তনয় মীর্যা বশীরুদ্দীন মাহমুদের
নেতৃত্বাধীন)।
খ. লাহোরী
(যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নবুওয়াতের দাবীর প্রধান পৃষ্ঠপোষক মৌলবী মুহাম্মাদ
আলীর নেতৃত্বাধীন)।
তাদের
এ দু’টি উপদল ১৯৪৭ সাল থেকে পাকিস্তানের মাটিতে কাজ
করছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ অনুসারীরা কাদিয়ানে থেকে যায় এবং তারা গোলাম আহমদকে নবী বলে
স্বীকার করে। এবং ‘জামাত-ই-আহমদিয়া’ নামে
পাকিস্তানের রাবওয়াহ থেকে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করতে থাকে। অন্য শাখাটি গোলাম
আহমদকে একজন সংস্কারক বলে স্বীকার করে এবং তারা লাহোরে ‘আহমদিয়া
আঞ্জুমান ইশাত-ই-ইসলাম’ প্রতিষ্ঠা করে।
১৯৭৪
সালে বিশ্ব মুসলিম সংস্থা রাবেতা আলমে ইসলামীর উদ্যোগে পবিত্র মক্কা মুকাররমার
কনফারেন্সে ১৪৪ টি মুসলিম রাষ্ট্র ো ও সংগঠনের অংশগ্রহনে ঘোষণা করা হয় যে,
কাদিয়ানিরা কাফির এবং তাদের প্রচারিত কুরআনের তাফসির বিকৃত এবং তারা মুসলমানদের
ধোকা দিচ্ছে ও পথ ভ্রষ্ট করছে। ১৯৮৮ সালে ইরাকে ইসলামি সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি) এই
মর্মে সকল মুসলীম দেশের প্রতিশ্রুতি নেয় যে,তারা রাষ্টিয়ভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম
ঘোষনা করবে। এরই অংশ হিসাবে সউদি আরন, ইরাক, ইরান, কুয়েত ও মালয়েশিয়া কাদিয়ানিদের
অমুসলিম ঘোষনা করে। ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান গণপরিষদ কর্তৃক তাদেরকে অমুসলিম সংখ্যালঘু
বলে ঘোষিনা করা হয়। ১৯৮৪ সালে পাকিস্তানে তাদের কর্মকাণ্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী
করা হয়। ফলে তাদের বর্তমান নেতা: মীর্যা তাহের আহমাদ (গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর
পৌত্র) পাকিস্তান থেকে পালিয়ে নিয়ে লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে রয়েছে।
গত একশ বছরে এ আন্দোলন অনেক শক্তিশালী হয়েছে। তারা এখন অন্য
ধর্মের লোকদের স্ব-সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করছে এবং অনেক দেশেই তাদের অনুসারী
রয়েছে। বর্তমানে তাদের অনুসারীদের সংখ্যা তিন কোটিরও বেশি। বাংলাদেশে
কিছুসংখ্যক আহমদিয়া আছে। কিন্তু সবচেয়ে দুঃখজনক হলো যে,
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইউনিভার্সিটিগুলো, (যেমন
শিকাগো ইসলামিক ইউনিভার্সিটি যা তাদের প্রতিষ্ঠিত), বিভিন্ন
ইসলামী দেশ ও প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য ছাত্র গ্রহণ করে
এবং তাদেরকে ব্রেন ওয়াশ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার সুযোগ সুবিধা দ্বারা
আকৃষ্ট করার ও ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
বাংলাদেশে
আহমদিয়াদেন কর্মকান্ড
সম্ভবত ১৯০৫
সনের দিকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের আনোয়ারা থানার হযরত আহমদ কবীর নূর মোহাম্মদ কাদিয়ানি
ধর্মমত গ্রহন করে। তারপরে ১৯০৬ সনে কিশোরগঞ্জ জেলার নাগেরগাঁও গ্রামের রঈস উদ্দিন
খাঁন কাদিয়ান গিয়ে কাদিয়ানী হন। বগুড়া নিবাসী মৌলভী মোবারক আলী ১৯০৯ সনে কাদিয়ানী
হন। ১৯১২ সালে কাদিয়ানি ধর্মমত সর্বপ্রথম বাংলায় আসে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার মীর সৈয়দ
আবদুল ওয়াহেদের মাধ্যমে। তাঁর দীক্ষার পর কয়েকশত লোক এ ধর্মমতে যোগ দেয়। তখন
থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জামা’তে আহ্মদীয়া বাংলাদেশের পদচারণা শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ জামা’তের কেন্দ্র রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত এবং সারা দেশব্যাপী এর অনেক মসজিদ ও
মিশন হাউস রয়েছে। কাদিয়ানিদের দাবি মতে, বর্তমানে সমস্ত দেশব্যাপী ১০৩টি শাখায়
বিস্তার লাভ করেছে এবং বর্তমানে দেশব্যাপী প্রায় ৪২৫টি এরূপ স্থান রয়েছে যেখানে
আহ্মদীদের ছোট-ছোট সমাজ বা হালকা রয়েছে। সমস্ত অঙ্গসংগঠনগুলি খোদ্দাম, আনসার ও লাজনা পূর্ণ উদ্যোমে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এই জামা’ত ১৯২০ সন থেকে বাংলাদেশের প্রাচীনতম পাক্ষিক পাত্রিকা ‘আহ্মদী’ নিয়মিতভাবে বের করে আসছে। অঙ্গসংগঠনসমূহের
নিজস্ব ম্যাগাজিন/বুলেটিন রয়েছে। ঢাকাতে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ এম.টি.এ. বাংলাদেশ
স্টুডিও রয়েছে যা নিয়মিত এম.টি.এ. ইন্টারন্যাশনালের জন্য প্রোগ্রাম তৈরি করে থাকে।
বাংলাদেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুন্দরবন, আহমদনগর-শালসিঁড়ি,
রাজশাহী, কুমিল্লা এবং জামালপুর-ময়মনসিংহ অঞ্চলে
আহ্মদীদের সংখ্যা উল্ল্যেখযোগ্য। (সূত্র আহমদীয়াতাদের নিজেস্ব ওয়েব সাইড ‘আহ্মদীয়াত’) ।
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)
ইসলামের দৃষ্টিতে দলাদলি-১৭
কাদিয়ানিদের ধর্মীয় বিশ্বাস কি?
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন।
০১। মির্জা গোলাম আহমেদ অত্যন্ত
সুকৌশলে মুসলমানদের মাঝে তার ধর্মমত প্রচার করতে থাকে। প্রথমে সে নিজেকে একজন
মুজাদ্দিদ বা মহান সংস্কারক, তারপর ইমাম মাহদী, কখনো বা নিজেকে ঈসা (আলাইহিস সালাম) দাবী করে। তারপর নিজেকে ‘নবী’’ বলে প্রচার চালাতে থাকে। জনরোষ থেকে রক্ষা পেতে তিনি কখন
কখন নিজেকে আংশিক নবী,
ছায়া নবী, ও ঝিল্লি বা বুরুজি
নবী হিসাবে প্রচার করেন। শরীয়তের অনেক বিধান রহিত ঘোষণা করে এবং অনেক হুকুম-আকহাম রদবদল করতে থাকে। (রেফারেন্সের দরকার নেই, এটাই তারা প্রচার করে, তাদের বিভিন্ন লেখায় অসংখ্য
স্থানে উল্লেখ আছে)।
মন্তব্যঃ ইসলাম ধর্মে
মুহম্মদ মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যে সর্বশেষ নবী
এ ব্যপারে কোন মুসলিমের বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই। কারন এ আকিদা কুরআন হাদিসের
ষ্পষ্ট কষ্টি পাথরে যাচাই করা। এমন একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয় নিয়েও যে, শয়তায় তার ষড়যন্ত্রের
খেলা খেলতে পারে তা ভাবতে ও অবাক লাগে। তাই এ বিষয়টি একটু কুরআন হাদিসে আলোকে
পর্যালোচনা করব। (ইনশা আল্লাহ)
মহান আল্লাহ বলেন,
مَّا
كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَآ أَحَدٍ۬ مِّن رِّجَالِكُمۡ وَلَـٰكِن رَّسُولَ ٱللَّهِ وَخَاتَمَ ٱلنَّبِيِّـۧنَۗ
وَكَانَ ٱللَّهُ بِكُلِّ شَىۡءٍ عَلِيمً۬ا (٤٠)
অর্থ: (হে লোকেরা!) মুহাম্মাদ তোমাদের পুরুষদের মধ্য থেকে কারোর পিতা নয় কিন্তু সে আল্লাহর রসূল এবং শেষ নবী আর আল্লাহ সব জিনিসের
জ্ঞান রাখেন৷ (সুরা আহজাব ৩৩:৪০)।
আরবী অভিধান এবং প্রবাদ অনুযায়ী 'খতম'; শব্দের অর্থ হল, মোহর লাগানো, বন্ধ করা, শেষ পর্যন্ত পৌছে যাওয়া এবং কোন কাজ শেষ করে
দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি লাভ করা। মুসলিম বিশ্বের সকল অভিধান বিশারদ এবং তাফসীরকারগণ একযোগে
‘খাতামুন
নাবিয্যীন’ শব্দের অর্থ করেছেন, আখেরুন নাবিয়্যীন অর্থাৎ নবীদের
শেষ।এখানে ‘খাতামুন নাবিয়্যীন’
শব্দের অর্থ নবুওয়য়াতের সিলসিলার পরিসমাপ্তি ঘোষণা অর্থাৎ মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর আর কোন নবী আসবেন না। আভিধানিক অর্থের দিক দিয়েও এটিই একমাত্র
সত্য।
বর্তমান যুগে নবুওয়াতের ফিতনা সৃষ্টি কারি কদিয়ানি সম্পদায় ‘খাতামুন
নাবিয্যীন’ শব্দের অর্থ বিকৃত পকে প্রচার করে তারা বলে, ‘খাতামুন
নাবিয্যীন’ শব্দের অর্থ হল "নবীদের" মোহর। এরা বুঝাতে চায় রসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর তার
মোহরাংকিত হয়ে আরো অনেক নবী দুনিয়ায় আগমন করবেন। এ দলটি শব্দটির আর একটি বিকৃত
অর্থ করে বল, ‘খাতামুন নাবিয্যীন’ অর্থ হল, ‘আফজালুন
নাবিয়্যীন’। অর্থাৎ নবুওয়াতের
দরজা উন্মুক্তই রয়েছে, তবে কিনা নবুওয়াত
পূর্ণতা লাভ করেছে রসূলুল্লাহর ওপর।
খাতামুন নাবিয়্যীন সম্পর্কে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের উক্তি।
আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ নবী ও রাসূল। কিয়ামতের পূর্বে আর কোন নবীর আগমণ
ঘটবেনা। এটি ইসলামী আকীদার গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। কিন্তু কিয়ামতের পূর্বে অনেক
মিথ্যুক মিথ্যা নবুওয়াতের দাবী করে মুসলমানদের ঈমান নষ্ট করার চেষ্টা করছে । তাদের
মধ্যে অন্যতম মির্জা গোলাম আহমেদ। তাই এ সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর
উম্মাতকে কিভাবে সতর্ক করেছের তারই কিছু উদাহরন লক্ষ করুন।
০১. কুতায়বা
ইবনু সা'ঈদ (রহঃ)
... আবূ
হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি এবং আমার পূর্ববর্তী
নাবীগণের অবস্থা এরূপ, এক ব্যাক্তি যেন একটি ভবন নির্মাণ করল; ইহাকে
সুশোভিত ও সুসজ্জিত করল, কিন্তু এক কোনায় একটি ইটের জায়গা খালি রয়ে গেল।
অতঃপর লোকজন ইহার চারপাশে ঘুরে বিস্ময়ের সহিত বলতে লাগল ঐ শূন্যস্থানের ইটটি
লাগানো হল না কেন? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমিই
সেই ইট। আর আমিই সর্বশেষ নাবী। (সহীহ
বুখারী (ইফাঃ) হাদিস-৩২৮৩, মুসলিম হাদীস নং ৪২৩৯)।
০২. নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘ত্রিশজন মিথ্যুক আগমণের পূর্বে কিয়ামত
প্রতিষ্ঠিত হবেনা।তারা সকলেই দাবী করবে যে, সে আল্লাহর রাসূল’’। (বুখারী, কিতাবুল মানাকিব)।
০৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, ‘‘আমার উম্মতের একদল লোক মুশরিকদের সাথে মিলিত হওয়ার পূর্বে এবং মূর্তি পূজায় লিপ্ত হওয়ার পূর্বে কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা। আর আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশজন মিথ্যুকের আগমণ ঘটবে। তারা সকলেই নবুওয়াতের দাবী করবে।অথচ আমি সর্বশেষ নবী। আমার পর কিয়ামতের পূর্বে আর কোন নবী আসবেনা। (আবু দাউদ, তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীছ নং- ৫৪০৬)।
০৩. বাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আমার উম্মতর মধ্য থেকে ত্রিশজন মিথ্যাবাদী আসবে প্রত্যেকেই নিজেকে নবী বলে দাবী করবে। অথচ আমি হলাম শেষ নবী; আমার পরে কোন নবী নেই।” ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। (তিরমিযী ৮/১৫৬ হাদীস নং ৩৭১০)
৪। প্রখ্যাত
সাহাবী
আবু
হুরাইরা (রাঃ) হতে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু
আলাইহি
ওয়া
সাল্লাম) ইরশাদ
করেন, “বনী
ইসরাইলকে
পরিচালনা
করতেন
তাদের
নবীগণ।
এক
নবী
মৃত্যু
বরণ
করলে
আরেক
নবী
তার
স্থানে
এসে
দায়িত্ব
পালন
করতেন।
তবে
আমার
পরে
কোন
নবী
আসবে
না, আসবে খলীফাগণ।”(সহীহ
বুখারী)
৬। আবু
হুরায়রা (রাঃ) হতে
বর্ণিত, রাসূলে
করীম (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি
ওয়া
সাল্লাম) ইরশাদ
করেন, “পূর্ববর্তী
অন্যান্য
নবীদের
উপর
ছয়টি
বিষয়ে
আমাকে
অগ্রাধিকার
দেয়া
হয়েছে।
আমাকে
দেয়া
হয়েছে
অল্প
শব্দে
অনেক
বেশী
অর্থবোধক
কথা
বলার
যোগ্যতা, আমি
অনেক
দূর
থেকে
শত্রুবাহিনীর
মধ্যে
ত্রাস
সৃষ্টির
মাধ্যমে
বিজয়
প্রাপ্ত
হই।
গনিমত
তথা
পরাজিত
শত্রুবাহিনীর
ফেলে
যাওয়া
সম্পদ
আমার
জন্যে
বৈধ
করা
হয়েছে।
যমিনের
মাটিকে
পবিত্রতা
অর্জনের
মাধ্যম
এবং
সেজদা
প্রদানের
স্থান
বানানো
হয়েছে।
সমগ্র
সৃষ্টিকুলের
জন্য
আমাকে
নবী
বানানো
হয়েছে
এবং
আমার
মাধ্যমেই
নবী
আগমনের
ধারাকে
সমাপ্ত
করা
হয়েছে।” (মুসলিম
হাদীস
নং-৭১২)।
৭। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, রিসালাত ও নব্যুয়াত শেষ হয়ে গেছে এবং আমার পরে আর কোন রাসূল বা নবী আসবেনা”। (ইমাম আহমাদ ও ইমাম তিরমিযী এটি বর্ননা করেছেন)।
৮। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলী
(রাঃ) কে
লক্ষ্য
করে
বলেন, “মুসা
(আঃ) এর
নিকট
হারুন (আঃ) যেমন
তুমি
আমার
নিকট
ঠিক
তদ্রুপ।
তবে
আমার
পরে
কোন
নবী
নেই।” (বুখারী-৪০৬৪, মুসলিম
হাদীস
নং
৪৪১৮)।
সাহাবীরা মতামত: সাহাবীরা এই ব্যাপারে এক মত ছিলেন যে,
আর কোন নবী, রাসূল নেই।কুরআন এবং সুন্নাহর পর সাহাবায়ে
কেরামের ইজমা বা মতৈক্য হলো তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সমস্ত নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক বর্ণনা
থেকে প্রমাণিত হয় যে,
রসূলুল্লাহর (সা) ইন্তেকালের
অব্যবহিত পরেই যেসব লোক নবুওয়াতের দাবী করে এবং যারা তাদের নবুওয়াত স্বীকার করে নেয়,
তাদের সবার বিরুদ্ধে সাহাবায়ে কেরাম সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ করেছিলেন।
আলেম সমাজের মতামত: শরীয়তে সাহাবীদের ইজমার পর চতুর্থ পর্যায়ের সবচাইতে শক্তিশালী দলিল হলো সাহাবীগণের পরবর্তী কালের আলেম সমাজের ইজমা। এদিক দিয়ে বিচার করলে দেখা যায়, হিজরীর প্রথম শতাব্দী থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত প্রত্যেক যুগের এবং সমগ্র মুসলিম জাহানের প্রত্যেক এলাকার আলেম সমাজ হামেশাই এ ব্যাপারে একমত রয়েছেন যে, "মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরে কোন ব্যক্তি নবী হতে পারে না। এবং তার পর যে ব্যক্তি নবুওয়াতের দাবী করবে এবং যে ব্যক্তি এই মিথ্যা দাবীকে মেনে নেবে, সে কাফের এবং মিল্লাতে ইসলামের মধ্যে তার স্থান নেই।"
০১।
ইমাম আবু হানিফার যুগে (৮০-১৫০ হিঃ) এক ব্যক্তি নব্যুয়তের দাবী করে, এবং বলে, “আমাকে সুযোগ দাও, আমি নব্যুয়তের চিহ্ন পেশ করবো”। একথা শুনে আবু হানিফা বলেন, “যেই ব্যক্তি এই লোক থেকে নব্যুয়তের চিহ্ন তলব করবে সেও কাফের হয়ে যাবে”।
০২। কাসীর
(মৃত্যু ৭৭৪ হিঃ) তাঁর তাফসীরেও মোহাম্মদ
সাঃ কে শেষ নবী ও রাসূল বলে স্পষ্টভাবে ব্যখ্যা করেছেন। (দ্রষ্টব্যঃ
তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা আল আহযাব-৪০)।
০৩। ইমাম তাহাবী
(হি ২৩৯-৩২১) তার আকীদাতুস সালাফীয়া গ্রন্থে সালাফে সালেহীন
(প্রথম যুগের শ্রেষ্ঠ সৎকর্মশীলগণ) এবং বিশেষ করে ইমাম আবু হানীফা,
ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ রাহেমাহুমুল্লাহর আকিদা বিশ্বাস বর্ণনা প্রসংগে নবুওয়াত সম্পর্কিত এ
বিশ্বাস লিপিবদ্ধ করেছেন যে, "আর
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন আল্লাহর প্রিয়তম বান্দা, নির্বাচিত নবী ও পছন্দনীয় রসূল এবং শেষ নবী,
মুত্তাকীদের উম্মাত,
রসূলদের সরদার ও রব্বুল আলামীনের
বন্ধু। আর
তার পর
নবুওয়াতের প্রত্যেকটি দাবী পথভ্রষ্টতা এবং প্রবৃত্তির লালসার বন্দেগী ছাড়া আর কিছুই নয়।" (শারহুত তাহাবীয়া
ফিল আকীদাতিস সালাফিয়া, দারুল মাআরিফ মিসর, ১৫,৮৭,৯৬,৯৭,১০০ ও
১০২ পৃষ্ঠা।
ছায়ানবী বা
উপনবী হওয়ার ধারনা ইসলামে নেই।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামের শেষ বয়সের দিকে মুসায়লামা কায্যাব
নবুওয়াতের দাবী করেছিল। তার অনুসারীর সংখ্যা ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকল। আবু বকর (রাঃ) এর খেলাফতকালে সাহাবীগণ এই ফিতনার অবসান ঘটান চাইলেন। ফল
মিথ্যাবাদিদের সাথে “ইয়ামামার যুদ্ধে”। এমনিভাবে
যুগে যুগে আরো অনেকেই নবুওয়াতের দাবী করেছে। তাদের মধ্যে আসওয়াদ আনাসী, সাজা নামক জনৈক মহিলা,
মুখতার
আছ-ছাকাফী, হারিছ আল-কায্যাব অন্যতম।
তাদের মতই ভারতে মীর্জা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী নবুওয়াতের দাবী করেছিল। ইংরেজদের
সাহায্য এবং কাদিয়ানির অপতৎপড়তায়
যখন অনুসারীর
সংখ্যা ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন ভারত বর্ষের অনেক আলেম তার বিরুদ্ধে কঠিন
প্রতিবাদ করেন। মুসলমানগন পরিস্কারভাবে বুঝতে পারেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সমস্ত ভন্ড এবং
মিথ্যুক নবী সম্পর্কে উম্মাতকে সতর্ক করেছেন
মীর্জা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী তাদেরই একজন। যে সকল আলেম তার প্রতিবাদ করেন
তার মধ্যে অন্যতম হলেন আল্লামা কাজি ছানাউল্লাহ অম্রিতসরী। সে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় তার প্রতিবাদ করেন। এতে মিথ্যুক
কাদিয়ানী শায়খ ছানাউল্লাহর সাথে চ্যালেঞ্জ করলে উভয় পক্ষের মাঝে ১৩২৬ হিজরী সালে
এক মুনাযারা (বিতর্ক) অনুষ্ঠিত হয়।
ভন্ড
মির্জা গোলাম আহমেদ তার নবুওয়াতের সমর্থনে দলীল হিসাবে কুরআনে করিমের সূরায় ছফের
০৬ আয়াতরন ( أَحۡمَدُ) ‘আহম্মদ’ শব্দ দ্বারা দলীল নিলে কাজী সাহেব বললেন, তোমার নাম তো গোলাম আহমদ এখানে বলা হয়েছে আহমদ, অর্থাৎ তুমি আহমদের গোলাম, আহমদ নও, তখন সে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক
ভাবে আরবী ব্যাকরণের নিয়ম অনুসারে নামের প্রথম অংশ যেখানে উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ তা
ত্যাগ করে বলে উঠল, আমার নামের শেষাংশই
আমার নাম। কাজী সাহেব দেখলেন তার সাথে তর্কে যাওয়া বৃথা, কারণ সে গোড়ামী করে কুরআনের মনগড়া ব্যাখ্যা করার পরও
প্রমাণ হাজির করতে না পেয়ে আরবী ভাষার ব্যাকরণের বিপরীতে গিয়ে তার নামের
দ্বিতীয়াংশ আহমদ কেই প্রকৃত নাম
বলে সাব্যস্ত করতে যাচ্ছে। তখন তিনি সম্পূর্ণ তর্কের
খাতিরে বললেন, যদি নামের শেষাংশই উদ্দেশ্য
হয় তবে আমার নাম সানাউল্লাহ, আমার নামের শেষাংশ
আল্লাহ। তা হলে আমি তোমার আল্লাহ হয়ে তোমার মত খবিসকে
কক্ষনো মানুষের জন্য নবী হিসাবে পাঠাই নি।” বিতর্কের আগে তাদের
দুজনের সাথে এই মর্মে মুবাহালা হয় যে,
দু’জনের মধ্যে যে মিথ্যুক সে যেন অল্প সময়ের মধ্যে এবং
সত্যবাদীর জীবদ্দশাতেই কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে হালাক হয়ে যায়। আল্লাহ তা’আলা শায়খ ছানাউল্লাহর দু’আ কবূল করলেন। এই ঘটনার এক বছর এক মাস দশদিন পর মিথ্যুক কাদীয়ানী ডায়রিয়া রোগে
আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
এই ভাবে ভারত উপমহাদের
আলেমদের প্রতিবাদের মুখে মীর্জা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী তার নবী দাবি থেকে ফিরে এসে
বললেন, আমি নবী নই। মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন আল্লাহর শেষ নবী। তবে আমি হলামঃ
আংশিক নবী, ঝিল্লি বা বুরুজি নবী
বা ‘ছায়ানবী’ বা ‘প্রতিবিম্ব নবী’, মানে উনি নতুন শরীয়ত কায়েম করেননি,
উনি শরীয়ত বিহীন নবী মানে উপনবী বা ছায়ানবী। তার দাবি কে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যা যা করা দরকার সব রকম
প্রচেষ্টাই তিনি করেছিলেন। যতটা বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন ততটা না পারলেও অনেক
অনুসারী তিনি পেছেন। তার ছায়ানবীর ধারনা ইসলামি শরীয়ত তথা কুরআন সুন্নায় না থাকলেও
অনেক বিশ্বাস করেছের। ইসলামের যথাযথ জ্ঞান না থাকায় তাদের খোড়া যুক্তির কাছে বোকা
হয়ে কাদিয়ানি ধর্মমত গ্রহন করছের। একটা মিথ্যাকে সত্য তৈরী করতে হলে, যা যা করতে হয়, কাদিয়ানি সবই করেছেন আর অজ্ঞ উম্মতে ধোকা দিয়েছেন। অজ্ঞ উম্মত একবার ও ভাবলনা ইসলামে কি ‘ছায়া নবী’ বা কিংবা ‘উপনবী’ বলে কিছু আছে। অন্তত একটি কুরআনের আয়াত বা একটি সহীহ হাদীসের রেফারেন্স
দিক।
০১। মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত আছে, “মোহাম্মদ সাঃ বলেছেন, “আমার পরে মোবেশ্বারাত ব্যতীত নবুয়্যতের কিছুই বাকী নেই। সাহাবাগণ বললেন, ইয়া রাসূল, মোবেশ্বারাত কি বস্তু?? তিনি বললেন, সত্য স্বপ্ন”।(তিবরানি হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন)।
এই হাদীসের দ্বারা সুস্পষ্ট ভাবে প্রমান হয়, নবুয়্যতের কিছুই বাকী নেই, হোক তা নব আবিষ্কৃত উপনবী কিংবা ছায়ানবী।
২।
তাবুক যুদ্ধে রওয়ানা হবার পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি
ওয়া
সাল্লাম
হযরত আলীকে (রা) মদীনা তাইয়্যেবার তত্ত্বাবধান এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রেখে যাবার ফায়সালা করেন। এ ব্যাপারটি নিয়ে মুনাফিকরা বিভিন্ন ধরনের কথা বলতে থাকে । হযরত আলী (রা) রসূলুল্লাহকে (সা) বলেন, হে আল্লাহর রসূল, আপনি কি আমাকে শিশু এবং নারীদের মধ্যে ছেড়ে যাচ্ছেন৷ রসূলুল্লাহ (সা) তাকে সান্তনা দিয়ে বলেছিলেন- আমার সাথে তোমার সম্পর্কতো মূসার সাথে হারুনের সম্পর্কের মতো। অর্থাৎ তুর পর্বতে যাবার সময় হযরত মূসা (আ) যেমন বনী ইসরাঈলদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য হযরত হারুনকে পেছনে রেখে গিয়েছিলেন অনুরুপভাবে মদীনার হেফাজতের জন্য আমি তোমাকে পেছনে রেখে যাচ্ছি। কিন্তু সংগে সংগে রসূলুল্লাহ (সা) মনে এই সন্দেহও জাগে যে, হযরত হারুনের সংগে এভাবে তুলনা করার ফলে হয়তো পরে এ থেকে কোন বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। কাজেই পরমুহুর্তেই তিনি কথাটা স্পষ্ট করে দেন এই বলে যে, "আমার পর আর কোন ব্যক্তি নবী হবে না"।
(আবু দাউদ , ইমাম আহমাদ এবং মুহাম্মাদ ইসহাক)।
০৩। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,“আমার
পরে
কেউ
নবী
হলে
উমার
ইবনুল
খাত্তাব
নবী
হতেন।” (সুনান
তিরমিযী
হাদীস
নং-৩৬১৯)।
মুসলিম উম্মার কোন ছায়ানবী
বা উপনবী হওয়ার কথা থাকলে উপরের হাদিস স্পষ্টতই প্রমান করে, হয় উমার রাঃ অথবা আলী রাঃ ছায়ানবী বা উপনবী নবী হতেন।
কিন্তু আমরা জানি উমার রাঃ অথবা আলী রাঃ কেউই ছায়ানবী বা উপনবী ছিলেন না। তাহলে
পরিস্কার বুঝতে পারলাম মোহাম্মদ সাঃ যে ভবিশ্যাৎ বাণী করে গেছেন এবং বলেছেন, যে, আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশজন মিথ্যাবাদী
হবে। তাদের প্রত্যেকেই নিজেকে নবী বলে দাবী করবে। অথচ আমার পর আর কোন নবী নেই। ( সহিহ বুখারী, সূনানে তিরমিযী)। যা আজ প্রতিষ্ঠত সত্য। মহান আল্লাহ বলেছেন,
ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ
وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِى وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَـٰمَ دِينً۬اۚ
“আজ আমি
তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরীপূর্ণ করে দিলাম, আর তোমাদের
ওপর আমার (প্রতিশ্রুত) নেয়ামতও পূর্ণ করে
দিলাম। তোমাদের জন্য জীবন বিধান হিসেবে আমি ইসলামকেই মনোনীত করলাম”। (আল
মায়েদা-৩)।
কাদিয়ানিদের দাবি নবীদের পরে ছায়ানবী এসে ঐ দ্বীনের পরিপূর্নতা দান করেন। উপরের আয়াত প্রমান করে ইসলাম পরিপূর্ণ একটি
জীবন বিধান। এখানে কোন প্রকার ছায়ানবী বা উপনবী হওয়ার কোন প্রকারের সুযোগ
নেই।
দ্বীন প্রচরের জন্য মুসা
আলাইহিস সালাম আল্লাহর নিকট হারূন আলাইহিস সালাম মাধ্যমে ফরিয়াদ জানাল ঠিক এভাবে,
কুরআনের ভাষায় মহান আল্লাহ বলেন,
وَٱجۡعَل
لِّى وَزِيرً۬ا مِّنۡ أَهۡلِى (٢٩) هَـٰرُونَ
أَخِى (٣٠) ٱشۡدُدۡ
بِهِۦۤ أَزۡرِى (٣١) وَأَشۡرِكۡهُ
فِىٓ أَمۡرِى (٣٢)
আর আমার জন্য নিজের
পরিবার থেকে সাহায্যকারী হিসেবে নিযুক্ত করে দাও। আমার ভাই হরুনকে৷ তার মাধ্যমে আমার হাত মজবুত করো ।এবং তাকে আমার
কাজে শরীক করে দাও। (সুরা ত্বহা ২০:২৯-৩২)।
এই দুয়া কবুল
করলেন আর হারূন আলাইহিস সালাম কে পূর্ন নবী করলেন। কোর প্রকার ছায়ানবী বা উপনবী বানালেন
না।
আল্লাহ বলেন,
وَوَهَبۡنَا لَهُ ۥ مِن رَّحۡمَتِنَآ
أَخَاهُ هَـٰرُونَ نَبِيًّ۬ا (٥٣)
আর নিজ অনুগ্রহে তার ভাই হারুণকে নবী বানিয়ে তাকে সাহায্যকারী
হিসেবে দিলাম৷ (সুরা
মারইয়াম ১৯:৫৩)।
তাই বলা যায় ইসলামে কোর প্রকার ছায়ানবী বা উপনবী
বানানোর পদ্দতি থাকলে হারূন আলাইহিস সালাম কে
বানাতেন।
০২। কাদিয়ান বা আহমদীয়াতাদের নিজেস্ব ওয়েব সাইড ‘আহ্মদীয়াত’ (www.ahmadiyyabangla.org) "মুসলমানদের ঈমান কি তাসের ঘর যে ফুঁ দিলেই উড়ে যাবে?” এই শিরনাম লেখা হইয়াছে। লেখক: মাওলানা আব্দুল আউয়াল খান চৌধুরী লিখেন,
যারা
আমাদের বিরুদ্ধে ‘সর্বশেষ
নবী’ না
মানার অভিযোগ তুলেছেন তারাই কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মহানবী (সাঃ)-কে
সর্বশেষ নবী মানেন না। তারা উদোর
পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টায় রত।
তাদেরকই জিজ্ঞেস করুন, ঈসা নবী (আঃ) মহানবী
(সাঃ) উম্মতে
আবার আসবেন কিনা? উত্তরে তারা
বলবেন অবশ্যই আসবেন। তবে তিনি পুরনো নবী, তাঁর
আগমনে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ‘শেষত্ব’ ধবংস
হয় না। কী অদ্ভুত যুক্তি। এক মুখে বলছেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) শেষ
নবী তার পরে কোন নবী নেই, আবার, সেই
একই মুখে বলছেন তাঁর পর ঈসা নবী (আঃ) আসবেন! তাহলে
শেষ নবী কে হলেন? আমাদের নবী (সাঃ) নাকি
ঈসা (আঃ)? এখন
আহ্মদীদের বক্তব্য শুনুন। আমরা বলি, ইহুদী
উম্মতের ঈসা (আঃ) স্বাভাবিক
মৃত্যুবরণ করেছেন। যে ঈসা (আঃ)-এর
আগমনের ভবিষ্যদ্বানী ছিল, তিনি হলেন
ঈসা (আঃ)-এর
গুনে গুনান্বিত হয়ে, তাঁর মত
দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে এই উম্মতে জন্মগ্রহণকারী একজন রূপক ঈসা (আঃ)। তিনি
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর
অনুসারী হবেনা। তাঁরই আনুগত্য ও প্রেমের কারণে আল্লাহ্ তা’লা
কে ‘আনুগত্যকারী নবুওত’ বা ‘ছায়া
নবুওত’ দান
করবেন। ছায়া নবুওত বা আনুগত্যকারী নবুওত বলতে কোন নতুন শরীয়ত বা বিধান বুঝায় না
বরং মহানবী (সাঃ)-এর
বরকতে এমন আধ্যাত্নিকতা বুঝায় যখন মানুষ তার প্রভূ প্রতিপালকের সাথে অধিক পরিমানে
সংলাপের সৌভাগ্য লাভ করে। এই উম্মতের মাঝে মহানবী (সাঃ)-এর
আনুগত্যের শর্তসাপেক্ষে এই নিয়ামত লাভ করার কথা কুরআন শরীফে আল্লাহ্ তা’লা
সূরা নিসার ৭০ নম্বর আয়াতে উল্ল্যেখ করেছেন। আমাদের মতে খাতামান নবীঈন হযরত
মুহাম্মদ (সাঃ) এত
বড় নবী যে, তাঁর নগণ্য সেবকও আল্লাহ্র ইচ্ছায়
আধ্যত্নিকতার শেখরে পৌছতে পারে।
তবে সে মহানবী (সাঃ)-এর
অনুসারীই থাকবে, খাতামান নবীঈন (সাঃ)-এর
আনুগত্যের বিন্দুমাত্র বাইরে যেতে পারবেনা। এ অর্থেই মহানবী (সাঃ) নিজেই
তাঁর আগমনকারী মহান পুরুষকে ঈসা ‘নবীউল্লাহ্’ বলে
আখ্যা দান করেছেন।
০৩। তাদের নিজেস্ব
ওয়েব সাইড আহ্মদীয়াত (www.ahmadiyyabangla.org) "শুভ সংবাদ ও আমন্ত্রণ
‘হযরত মুহাম্মদ
মুস্তফা (সাঃ)-এর আরও একটি মহান
ভবিষ্যদ্বাণীর পূর্ণতা” এই
শিরোনাম লেখা হইয়াছে।
১৮৮২ ইং সনে হযরত আল্লাহ্ তা’আলার কাছ থেকে প্রত্যাদিষ্ট হয়ে সংস্কারক (মুজাদ্দিদ) হবার সুসংবাদ লাভ করেন এবং ১৮৮৯ ইং
মোতাবেক ১৩০৬ হিজরী (অর্থাৎ হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীর
প্রারম্ভে) আল্লাহ্ তা’আলার সুস্পষ্ট নির্দেশে প্রতিশ্রুত মসীহ্ এবং প্রতিক্ষীত
ইমাম মাহ্দী হওয়ার দাবী করেন এবং বয়’আত গ্রহণ আরম্ভ করেন। তাঁর দাবীর সত্যতার প্রমাণ স্বরূপ
পবিত্র কৃরআন ও হাদীসের ভিক্তিতে বহু নিদর্শনাবলীর ঘটরা ঘটে।
মন্তব্যঃ কাদিয়ানিদের আকিদা জানতে শুধু নিজেস্ব এই ওয়েব সাইড “আহ্মদীয়াত” নয়, তাদের যে
কোন প্রকাশনার বই পড়লেই এমন সব অদ্ভুদ আকিদা পাবেন, ইসলামে তার জুরি মেলা ভার। এই ওয়েব
সাইডের উক্ত লেখা পড়লে তাদের যে
আকিদা পাওয়া যায় তার সারাংশ দাড়ায়।
০১। ঈসা আলাইহিস সালাম যেহেতু নবী ছিলেন তাই আগমনে
হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামর “খাতামুন
নবুয়াত” ধবংস হবে।
০২। ঈসা আলাইহিস সালাম স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছেন। (এ ব্যপারে এই একই
ওয়ের সাইতে “পবিত্র কুরআনের ত্রিশটি আয়াতের আলোকে হযরত ঈসা (আ.)-এর মৃত্যুর প্রমান” শীরনামে একটি লেখা আছে। যার প্রায়
প্রতি আয়াতের ভুল অনূবাদ ও ভূয়া ব্যাখ্যা প্রদান করা হইয়াছে)।
০৩। অল্লাহর নবী ঈসা
আলাইহিস সালাম স্বয়ং আসবেন না। আসবেন এই উম্মতে
জন্মগ্রহণকারী একজন রূপক ঈসা। (
যে রূপক ঈসাকে তারা কাদিয়ানির বলে প্রচার ও বিশ্বাস করছে)।
০৪। প্রতিশ্রুত মসীহ্ (ঈসা ইবনে মারিয়াম আঃ) এবং প্রতিক্ষীত ইমাম
মাহ্দী একই ব্যক্তি।
প্রতিটি আকিদা যে কত অসার।
সমুদ্রের ঢেউয়ের সামনে বালুর বাধ যেমন অসহায় কুরআন ও সহিহ হাদিসে সামনে এসর আকিদা
আর যুক্তি তার চেয়ে হাজার গুন অসহায়। এক এক করে কুরআন ও সহিহ হাদিসে রেফারেন্স
উল্লেখ করলে কোন মুসলিমেরই কদিয়ানিদের ভন্ডামি ধরতে কষ্ট হবেনা। কাদিয়ানিদের যুক্তি হল, “ঈসা
আলাইহিস সালাম যেহেতু নবী ছিলেন তাই আগমনে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামর “খাতামুন নবুয়াত” ধবংস হবে”। কাদিয়ানিরা আসলে নিজেদের অসার যুক্তিকে
সার করার জন্য এমন সব যুক্তির অবতারণা করছেন। যদি প্রশ্ন করা হয়, মহান আল্লাহর
কাকে আগে নবী হিসাবে প্রেরণ করছেন? নিশ্চই বলবেন ঈসা আলাইহিস সালাম। আবার যদি প্রশ্ন করা হয়, প্রত্যেক
নবীর কি আলাদা আলাদা শরিয়ত ছিল? এর উত্তরে বলবেন, হ্যা ছিল। তাহলে ঈসা আলাইহিস সালাম যখন আসবেন তখন তার কি কোন নিজেস্ব শরিয়ত থাকবে, না কি তিনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের শরিয়ত মত দ্বীন পালন করবেন?
এর
উত্তরে বলবেন, তিনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামের শরিয়ত মত দ্বীন পালন করবেন। তাহলে
ব্যপারটা একদম পরিস্কার যে, ঈসা আলাইহিস সালাম, মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পূর্বেই
নবী ছিলেন। পরে এসে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামের শরীয়ত মতই চলবেন।
অর্থাৎ তিনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামের উম্মত হিসেবে আসবেন। তাহলে বুঝা গেল ঈসা আলাইহিস
সালামের আগমনে “খতমে নব্যুয়াত” এর তো
সমস্যা হচ্ছেনা। পূর্বে উল্লখিত হাদিস থেকে থেকে একথা স্পষ্টভারে প্রমানিত যে, মোহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরে আর কেউ নবী হয়ে পৃথিবীতে আসবে না।
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘মুসলমানদের ইমাম যখন তাদেরকে নিয়ে ফজরের নামায পড়ার জন্য সামনে চলে যাবেন
তখন ঈসা ইবনে মারইয়াম আগমণ করবেন। ইমাম যখন ঈসা (আঃ)এর আগমণ অনুভব করবেন তখন
পিছিয়ে আসতে চেষ্টা করবেন যাতে ঈসা (আঃ) সামনে গিয়ে মানুষের ইমামতি করেন। ঈসা (আঃ)
ইমামের কাঁধে হাত রেখে বলবেনঃ তুমিই সামনে যাও এবং তাদের নামায পড়াও। কারণ তোমার
জন্যই এ নামাযের ইকামত দেয়া হয়েছে। অতঃপর তিনি ইমামতি করবেন’’। ( ইবনে মাজাহ,
সহীহ ইবনে খুজায়মা। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, সহীহুল
জামে আস্ সাগীর, হাদীছ নং- ২৭৭)।
এখানে
যে ইমামের কথা বলা হয়েছে আলেমদের বিশুদ্ধ মতে তিনি হলেন ইমাম মাহদী। ঈসা (আঃ)এর
আগমণ সম্পর্কে আরো অনেক হাদীছ রয়েছে। এ সমস্ত সহীহ হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ভবিষ্যৎ বাণী করেছেন যে, কিয়ামতের পূর্বে ঈসা (আঃ) শেষ নবীর উম্মত হিসাবে (নবী হিসাবে নয়) দুনিয়াতে
আগমণ করবেন। এতে বিশ্বাস করা প্রতিটি মুসলিমের ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই
কাদিয়ানিদের যুক্তিতে ধোকা খাবেন না।
অন্য
হাদিসে এসেছে, হযরত যাবের বিন আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত আছে, নবী
(সা) বলেছেন, তাপর ঈসা ইবনে
মরিয়াম নাযিল হবেন। মুসলমানদের আমীর তাঁকে বলবেন, আসুন নামায
পড়িয়ে দিন। তিনি বলবেন, না। তোমরা স্বয়ং একে অপরের আমীর। (অর্থাৎ তোমাদের আমীর তোমাদের মধ্য থেকেই হওয়া উচিত)। আল্লাহ তায়ালা এ
উম্মতকে যে, সম্মান দান করেছেন তা
লক্ষ্য করেই তিনি ঐরূপ জবাব দেবেন”।–(মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)
ইসলামের দৃষ্টিতে দলাদলি-১৮
কাদিয়ানিদের ধর্মীয় বিশ্বাস কি?-০২
ঈসা আলাইহিস সালাম
কি স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছেন?
কাদিয়ানিরা যখন দেখে কোন যুক্তিই তাদের কাজে আসছে না, তখন বলতে
থাকে আমরা বিশ্বাস করি ঈসা আলাইহিস সালাম স্বাভাবিক
মৃত্যুবরণ করেছেন। এবং ইহার প্রমানে তারা নানান
প্রকারে ছল চাতিরির আশ্রয় নেন। “পবিত্র কুরআনের ত্রিশটি আয়াতের আলোকে হযরত ঈসা (আ.)-এর মৃত্যুর প্রমান”
এই শীরনামে লেখাটি
তারই একটি অংশ। এই লেখাটিতর যে ৩০ টি আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে, তার প্রতিটি ভুল
অনূবাদ করা হয়েছে অথবা ভূয়া ব্যাখ্যার দেওয়া হয়েছে। এই সকল ভূল সংশোধন না করে শুধু
ঈসা আলাইহিস
সালাম মৃত্যুবরণ করেনি এবং তার
আগমনের সত্যতা প্রমানে কিছু কুরআনের আয়াত ও হাদিস উল্লেখ করছি।
তারা
দাবি করে “ঈসা (আঃ) মারা গেছেন। এই দাবি
কতটুকু গ্রহনক যোগ্য বা যৌক্তিক? আসুর কুরআন কি বলে? পবিত্র এবং একমাত্র বিশুদ্ধ
মহা গ্রন্থ আল কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,
وَقَوۡلِهِمۡ
إِنَّا قَتَلۡنَا ٱلۡمَسِيحَ عِيسَى ٱبۡنَ مَرۡيَمَ رَسُولَ ٱللَّهِ وَمَا
قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَـٰكِن شُبِّهَ لَهُمۡۚ وَإِنَّ ٱلَّذِينَ ٱخۡتَلَفُواْ
فِيهِ لَفِى شَكٍّ۬ مِّنۡهُۚ مَا لَهُم بِهِۦ مِنۡ عِلۡمٍ إِلَّا ٱتِّبَاعَ
ٱلظَّنِّۚ وَمَا قَتَلُوهُ يَقِينَۢا (١٥٧)
অর্থ: এবং তাদের “আমরা
আল্লাহর রসূল মারয়াম পুত্র ঈসা মসীহ্কে হত্যা করেছি”, এই উক্তির জন্য (তারা
অভিশপ্ত হয়েছিল) ৷ অথচ প্রকৃতপক্ষে তারা
তাকে হত্যাও করেনি এবং শূলেও চড়ায়নি বরং ব্যাপারটিকে তাদের জন্য সন্দিগ্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ আর যারা এ ব্যাপারে মতবিরোধ করেছে তারাও আসলে
সন্দেহের মধ্যে অবস্থান করছে৷ তাদের কাছে এ সম্পর্কিত কোন জ্ঞান নেই , আছে
নিছক আন্দাজ-অনুমানের অন্ধ অনুসৃতি৷ নিসন্দেহে তারা
ঈসা মসীহকে হত্যা করেনি৷ (সুরা নিসা ৪:১৫৭)।
খৃস্টান ও ইহুদীরা ধারণা পোষণ করে
য়ে,তারা আর ঈসা আলাইহিস সালাম কে
শূলবিদ্ধ করে হত্যা করেছে। তাদের এই দাবিকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করান জন্য কুরআনের এই
আয়াতটি দ্ব্যর্থহীনভাবে একথা ঘোষনা
করে যে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে শূলে চাড়াবার আগেই উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। তাদের ধারনা নিছক একটি ভুল বুঝাবুঝি ছাড়া আর কিছুই নয়। আর কাদিয়ানিরা সব জানার পর ঈসা আলাইহিস সালামের মৃত্যু মনে
করা কুরআন অবমাননা করার দৃষ্টাতা ছাড়া আর কি হতে পারে। ইহুদীরা যখন বললেন ঈসা আলাইহিস
সালাম কে শূলবিদ্ধ করে হত্যা পরিকল্পনা করেছিল মহান আল্লাহ তখন তাকে তার নিকট উঠিয়ে
নিয়েছিলেন। তাই ইহুদীরা যে ব্যক্তিকে শূলে চড়ালো
সে ঈসা ইবনে মারয়াম ছিল না। সে ছিল অন্য
কোন ব্যক্তি। এ কথার প্রমানে কুরআনে মহান
আল্লাহ বলেন,
بَل
رَّفَعَهُ ٱللَّهُ إِلَيۡهِۚ وَكَانَ ٱللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمً۬ا (١٥٨)
অর্থ: বরং আল্লাহ তাকে
নিজের দিকে উঠিয়ে নিয়েছেন। আল্লাহ জবরদস্ত
শক্তিশালী ও প্রজ্ঞাময়৷ (সুরা নিসা ৪:১৫৮)।
কাদিয়ানিদের বক্তব্য
অনুসারে ঈসা (আঃ) মারা গেছেন। অথচ প্রকৃত সত্য হল যা আল্লাহ সুস্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করেছেন। এ ব্যাপারে দৃঢ়তা সহকারে যে সুস্পষ্ট
বক্তব্য পেশ করা হয়েছে তা কেবল এতটুকু যে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে হত্যা করতে ইহুদীরা
কামিয়াব হয়নি এবং আল্লাহ তাকে নিজের দিকে উঠিয়ে নিয়েছেন।
এখন প্রশ্ন ওঠে
কিভাবে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল। কুরআনে এর কোন বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়নি। তবে অসংখ্যা হাদীসেও সশরীরে উঠিয়ে
নেবার আকীদাকে আরো শক্তিশালী করেছে। এ হাদীসগুলোতে হযরত ঈসা ইবনে মারয়াম আলাইহিস সালামের পুনর্বার
দুনিয়ার আগমন ও দাজ্জালকে হত্যা করার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। এগুলো থেকে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের
দ্বিতীয় বার আগমনের ব্যাপারটি অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে। মৃত্যুর পর তিনি পুনর্বার জীবিত হয়ে
এই মরজগতে ফিরে আসবেন।
وَإِنَّهُ ۥ
لَعِلۡمٌ۬ لِّلسَّاعَةِ فَلَا تَمۡتَرُنَّ بِہَا وَٱتَّبِعُونِۚ هَـٰذَا صِرَٲطٌ۬
مُّسۡتَقِيمٌ۬ (٦١)
অর্থ: আর প্রকৃতপক্ষে
সে তো কিয়ামতের একটি নিদর্শন৷ অতএব সে ব্যাপারে তোমরা সন্দেহ পোষণ করো না এবং
আমার কথা মেনে নাও৷ এটাই সরল-সোজা পথ৷ (সুরা
জুকরুক ৪৩:৬১)।
অত্র আয়াতে কিয়ামতের পূর্বে ঈসা (আঃ)এর আগমণের কথা বলা হয়েছে।
এটি হবে কিয়ামতের একটি বড় আলামত। তাঁর আগমণ কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার প্রমাণ বহন
করবে’’। (তাফসীরে কুরতুবী, তাবারী ও
ইবনে কাছীর)।
ইবনে আব্বাস, মুজাহিদ, ইকরিমা, কাতাদা, সুদ্দী, দাহহাক, আবুল আলিয়া ও আবু মালেক বলেন, এর অর্থ হয়রত ঈসা আলাইহিস সালামের দ্বিতীয় আগমন, যে সম্পর্কে বহু হাদীসে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আয়াতের অর্থ হচ্ছে, তিনি দ্বিতীয় বার যখন পৃথিবীতে আগমন করবেন তখন বুঝা যাবে কিয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে। (তাফহিমূল কুরআন)
ইবনে আব্বাস, মুজাহিদ, ইকরিমা, কাতাদা, সুদ্দী, দাহহাক, আবুল আলিয়া ও আবু মালেক বলেন, এর অর্থ হয়রত ঈসা আলাইহিস সালামের দ্বিতীয় আগমন, যে সম্পর্কে বহু হাদীসে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আয়াতের অর্থ হচ্ছে, তিনি দ্বিতীয় বার যখন পৃথিবীতে আগমন করবেন তখন বুঝা যাবে কিয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে। (তাফহিমূল কুরআন)
সহীহ হাদিসের
আলোকে ঈসা আলাইহিস সালামের আগমনের প্রমান
ঈসা আলাইহিস
সালামের আগমণের ব্যাপারে অস্যংখ্য সহীহ হাদীছ বিদ্যমান রয়েছে। এখানে কয়েকটি সহিহ
হাদীছ উল্লেখ করা হলঃ
০১। আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘ঐ আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে। অচিরেই ন্যায় বিচারক শাসক
হিসেবে ঈসা আলাইহিস সালামে তোমাদের মাঝে আগমণ করবেন। তিনি ক্রুশচিহ্ন ভেঙ্গে
ফেলবেন, শুকর হত্যা করবেন এবং জিযইয়া প্রত্যাখ্যান করবেন।
ধন-সম্পদ প্রচুর হবে এবং তা নেয়ার মত কোন লোক পাওয়া যাবেনা। এমনকি মানুষের কাছে
একটি সেজদা দুনিয়া এবং তার মধ্যকার সমস্ত বস্ত্ত হতে শ্রেষ্ঠ হবে। আবু হুরায়রা
(রাঃ) বলেনঃ তোমরা চাইলে আল্লাহর এই বাণীটি পাঠ কর,
وَإِن
مِّنۡ أَهۡلِ ٱلۡكِتَـٰبِ إِلَّا لَيُؤۡمِنَنَّ بِهِۦ قَبۡلَ مَوۡتِهِۦۖ وَيَوۡمَ
ٱلۡقِيَـٰمَةِ يَكُونُ عَلَيۡہِمۡ شَہِيدً۬ا (١٥٩)
আর
আহলি কিতাবদের মধ্য থেকে এমন একজনও হবে না৷ যে তার মৃত্যুর পূর্বে তার ঈমান আনবে না, এবং কিয়ামতের
দিন সে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ দেবে৷ (সুরা নিসা ৪:১৫৯)।
(বুখারী, অধ্যায়ঃ
কিতাবু আহাদীছুল আম্বীয়া। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ঈসা (আঃ)এর অবতরণ)।
এখানে আবু হুরায়রা (রাঃ) বুঝাতে চাচ্ছেন যে, আহলে কিতাবের লোকেরা অচিরেই ঈসা (আঃ)এর মৃত্যুর পূর্বেই তাঁর উপর ঈমান আনবে। আর সেটি হবে আখেরী যামানায় তাঁর অবতরণের পর।
এখানে আবু হুরায়রা (রাঃ) বুঝাতে চাচ্ছেন যে, আহলে কিতাবের লোকেরা অচিরেই ঈসা (আঃ)এর মৃত্যুর পূর্বেই তাঁর উপর ঈমান আনবে। আর সেটি হবে আখেরী যামানায় তাঁর অবতরণের পর।
০২। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘আমার উম্মতের ভিতরে ন্যায় বিচারক শাসক এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী নেতা হয়ে
ঈসা (আঃ) আগমণ করবেন। তিনি খৃষ্টান ধর্মের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত ক্রুশচিহ্ন
ভেঙ্গে ফেলবেন, শুকর হত্যা করবেন, ইহুদী-খৃষ্টানদের
থেকে জিয্য়া গ্রহণ প্রত্যাখ্যান করবেন। সাদকা গ্রহণ প্রত্যাখ্যান করা হবে। অর্থাৎ
কোন অভাবী মানুষ থাকবেনা। সবাই আল্লাহর ফজলে ধনী হয়ে যাবে। কাজেই সাদকা নেয়ার মত
কোন লোক খুঁজে পাওয়া যাবেনা। উট, ছাগল বা অন্য কোন চতুষ্পদ
জন্তুর প্রতি যত্ন নেয়া হবেনা। মানুষে-মানুষে হিংসা-বিদ্বেষ উঠে যাবে। বিষাক্ত
সাপের বিষ চলে যাবে। শিশু বাচ্চারা বিষাক্ত সাপের মুখে হাত ঢুকিয়ে দিবে। কিন্তু
সাপ শিশুকে কামড় দিবেনা। এমনিভাবে শিশু ছেলে সিংহের পিঠে উঠে বসবে, কিন্তু সিংহ ছেলের কোন ক্ষতি করবেনা। ছাগল এবং নেকড়ে বাঘ এক সাথে মাঠে চরে
বেড়াবে। অর্থাৎ বাঘ ছাগলের রাখালের মত হয়ে থাকবে। পানির মাধ্যমে
গ্লাস যেমন পরিপূর্ণ হয়ে যায় পৃথিবীও তেমনিভাবে শান্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। সকলের
কথা একই হবে। পৃথিবীতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো এবাদত করা হবেনা। যুদ্ধ-বিগ্রহ ন্ধ
হয়ে যাবে। কুরাইশদের রাজত্ব ছিনিয়ে নেয়া হবে। যমীন একেবারে খাঁটি রৌপ্যের মত
পরিস্কার হয়ে যাবে। আদম (আঃ)এর যামানা থেকে শুরু করে তখন পর্যন্ত সকল প্রকার ফল ও
ফসল উৎপন্ন হবে। অন্য বর্ণনায় আছে পাহাড়ের উপরে বীজ ছিটিয়ে দিলে সেখানেও ফসল
উৎপন্ন হবে। একটি আঙ্গুরের থোকা এমন বড় হবে যে, একদল মানুষ তা খেয়ে পরিতৃপ্ত হয়ে যাবে। একটি ডালিম একদল মানুষের জন্য
যথেষ্ট হবে। বলদ গরুর দাম বেড়ে যাবে এবং কয়েক পয়সা দিয়ে ঘোড়া ক্রয় করা যাবে। (ইবনে
মাজাহ, কিতাবুল ফিতান। সহীহুল জামে আস্ সাগীর, হাদীছ নং- ৭৭৫২)।
০৩।
আবু খায়সামা যুহায়র ইবন হারব (অন্য সনদে)
মুহাম্মাদ ইবন মিহরান রাবী (র)......নাওয়াস ইবন সামআন (রাঃ) থেকে বর্ণিত
। তিনি বলেন, একদা সকালে রাসুলুল্লাহ (সা) দাজ্জাল
সম্পর্কে আলোচনা করলেন । আলোচনা
কালে তিনি কখনো আওয়াজ ছোট করলেন, আবার কখনো আওয়াজ বড়
করলেন । ফলে আমরা
মনে করলাম যে, দাজ্জাল বৃক্ষরাজির এ ঝাড়ের মধ্যেই বুঝি এসে
পড়েছে । অতঃপর
আমরা সন্ধ্যায় আবার তাঁর নিকট গেলাম । তিনি আমাদের
মাঝে এর কিছু আলামত দেখতে পেয়ে বললেন, তোমাদের কি অবস্হা?
আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা) ! আপনি সকালে দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং
এতে আপনি কখনো আওয়াজ ছোট করেছেন, আবার কখনো বড় করেছন । ফলে আমরা মনে করেছি যে, দাজ্জাল বুঝি এ ঝাড়ের মধ্যেই বিদ্যমান । এ কথা শুনে তিনি বললেন, দাজ্জাল নয়, বরং তোমাদের ব্যাপারে অন্য কিছুর আমি অধিক
আশংকা করছি । শোন, আমি তোমাদের মাঝে বিদ্যমান থাকা অবস্হায় যদি দাজ্জালের আবির্ভাব হয় তবে আমি
নিজেই তাকে প্রতিহত করব । তোমাদের
প্রয়োজন হবে না । আর যদি
আমি তোমাদের মাঝে না থাকা অবস্হায় দাজ্জালের আবির্ভাব হয়, তবে প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তি নিজের পক্ষ হতে একে প্রতিহত করবে । প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আল্লাহ তাআলাই
হলেন আমার পক্ষ হতে তত্ত্বাবধায়ক । দাজ্জাল
যুবক এবং কোঁকড়া চুল বিশিষ্ট হবে । তার চক্ষু
হবে স্ফীত আঙ্গূরের ন্যায় । আমি তাকে
কাফির আবদুল উযযা ইবন কুতনের সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে করছি । তোমাদের যে কেউ দাজ্জালের সময়কাল পাবে
সে যেন সূড়া কাহফের প্রথমোক্ত আয়াত সমুহ পাঠ করে । সে ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যপথ হতে আবির্ভূত
হবে । সে ডানে-বামে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে । হে আল্লাহর
বান্দাগণ! অবিচল থাকবে । আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা) ! সে পৃথিবীতে
কত দিন অবস্হান করবে? উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন, চল্লিশ দিন পর্যন্ত । এর প্রথম
দিনটি এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন এক মাসের সমান এবং তৃতীয়
দিন এক সপ্তাহের সমান হবে । অবশিষ্ট
দিনগুলো তোমাদের দিনসমূহের মতই হবে । আমরা জিজ্ঞেস
করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! যেদিন এক বছরের
সমান হবে, উহাতে এক দিনের সালাতই কি আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে?
জবাবে তিনি বললেন, না, বরং
তোমলা এদিন হিসাবে ঐ দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করে নিবে । আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা) ! দাজ্জাল
পৃথিবীতে কেমন করে চলবে? তিনি বললেন, বাতাসে
পরিচালিত মেঘের ন্যায় । সে এক
সম্প্রদায়ের নিকট এসে তাদেরকে কুফরীর দিকে আহবান করবে । তারা তার উপর ঈমান আনহান করবে এবং
তার ডাকে সাড়া দিবে । অতঃপর
সে আকাশকে হুকুম করবে । আকাশ বৃষ্টি
বর্ষণ করবে এবং ভূমিকে নির্দেশ দিরে, ভূমি গাছ-পালা ও শষ্য উদগত করবে । এরপর সন্ধ্যায়
তাদের গবাদী পশুগুলো পূর্বের তূলনায় অধিক লম্বা, কুজ, প্রশস্ত স্তন এবং উদরপূর্ণ অবস্হায় তাদের নিকট ফিরে আসবে । অতঃপর দাজ্জাল অপর এক সম্প্রদায়ের
নিকট আসবে এবং তাদেরকে কুফুরীর প্রতি আহবান করবে । তারা তার কথাকে উপেক্ষা করবে । ফলে সে তাদের নিকট হতে ফিরে চলে যাবে
। অমনি তাদের
মাঝে দুর্ভিক্ষ ও পানির অনটন দেখা দিবে এবং তাদের হাতে তাদের ধন-সম্পদ থাকবে না । তখন দাজ্জাল এক পতিত স্থান অতিক্রমকালে
উহাকে সম্মোধন করে বলবে, তুমি তোমার গুপ্তধন বের করে দাও । তখন যমীনের ধন-ভাণ্ডার বের হয়ে তার চতূস্পার্শে একত্রিত হতে থাকবে, যেমন মধু মক্ষিকা তাদের সর্দারের চারিপাশে সমবেত হয় । তৎপর দাজ্জাল এক যুবক ব্যক্তিকে ডেকে
আনবে এবং তাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করে তীরের লক্ষ্যস্হলের ন্যায় দু-ফাক করে ফেলবে । অতঃপর
সে পূনরায় তাকে ডাকবে । যুবক দীপ্তমান
হাস্যোজ্জল চেহারায় তার দিকে এগিয়ে আসবে । এ সময়
আল্লাহ রাববুল আলামীন মারইয়াম তনয় ঈসা (আঃ)-কে প্রেরণ করবেন । তিনি দুই
ফিরিশতার কাধের উপর ভর করে গোলানা রং এর জোড়া পরিহিত অবস্হায় দামেশক নগরীর পূর্ব
দিকের শুভ্র মিম্বারের উপর অবতরণ করবেন । যখন তিনি
তার মাথা ঝুঁকাবেন তখন বিন্দু বিন্দু ঘাম তাঁর শরীর থেকে গড়িযে পড়বে । তিনি যে কোন কাফিরের নিকট খাবেন সেই
তাঁর শ্বাসের বাতাসে ধ্বংস হয়ে যাবে । তাঁর যতটৈ পর্যন্ত যাবে তাঁর শ্বাসও ততাদূর পর্যন্ত পৌছবে । তিনি দাজ্জালকে তালাশ করতে থাকবেন
। অবশেষে
তাকে লুদ- নামক স্থানে গিয়ে পাকড়াও করবেন এবং তাকে হত্যা
করবেন । অতঃপর
ঈসা (আঃ) ঐ সম্প্রদায়ের নিকট যাবেন,
যাদেরকে আল্লাহ তাআলা দাজ্জালের ফিতনা থেকে হিফাযত করেছেন । তাদের নিকট গিয়ে তিনি তাদের চেহারায়
হাত বুলিয়ে জান্নাতে তাদের স্থানসমূহ সম্পর্কে সংবাদ দিবেন । এমতাবস্হায় আল্লাহ তাআলা ঈসা (আঃ)-এর প্রতি এ মর্মে অহী নাযিল করবেন যে, আমি আমার বান্দাদেরকে নাযিল করেছি, যাদের সাথে কারোই
যুদ্ধ করার ক্ষমতা নেই । সুতরাং
তুমি তাদেরকে নিয়ে ভূর পর্বতে চলে যাও । তখন আল্লাহ
তাআলা ইয়াজুয-মাযুয সম্প্রদায়কে প্রেরণ করবেন । তারা প্রতি উচু ভূমি হতে ছুটে আসবে
। তাদের
প্রথম দলটি তবরিস্তান সমুদ্রের নিকট এসে এর সমুদয় পানি পান করে নিঃশেষ করে দিবে । অতঃপর তাদের সর্বশেষ দলটি এ স্হান
দিয়ে যাত্রাকালে বলবে, এ সমুদ্রে এক সময় অবশ্যই পানি ছিল । তারা আল্লাহর নবী (সা) ঈসা (আঃ) এবং তাঁর সঙ্গীদেরকে অবরোধ করে রাখবে । ফলে তাদের নিকট একটি বলদের মাথা বর্তমানে
তোমাদের নিকট একশ দীনারের মূল্যের চেয়েও অধিক মূল্যবান প্রতিপন্ন হবে । তখন আল্লাহর নবী (সা) ঈসা (আঃ) এবং তাঁর সঙ্গীগণ আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবেন । ফলে আল্লাহ তা’আলা ইয়াজুয-মাজুজ সম্প্রদায়ের প্রতি আযাব প্রেরণ করবেন
। তাদের
ঘাড়ে এক প্রকার পোকা হবে । এতে একজন
মানুষের মৃত্যুর ন্যায় তালাও সবাই মরে খতম হয়ে যাবে । অতঃপর ঈসা (আ) ও তাঁর সঙ্গীগণ পাহাড় হতে যমীনে বেরিয়ে আসবেন । কিন্তু
তারা অর্ধ হাত জায়গাও এমন পাবেন না যথায় তাদের পঁচা লাশ ও লাশের দুর্গন্ধ নেই । অতঃপর ঈসা (আঃ) এবং তাঁর সঙ্গীগণ পূনরায় আল্লাহর নিকট প্রার্থনা
করবেন । তখন আল্লাহ
তাআলা উটের ঘাড়ের ন্যায় লহল এক ধরনের পাখি প্রেরণ করবেন । তারা তাদেরকে বহন করে আল্লাহর ইচ্ছা
মাফিক স্থানে নিয়ে ফেলবে । এরপর আল্লাহ
এমন মুষলধারে বৃষ্টি বর্যণ করবেন যার ফলে কাচা-পাকা কোন ঘরই আর বাকী
থাকবে না । এতে যমীন
বিধৌত হয়ে উদ্ভিদ শূন্য মৃত্তিকায় পরিণত হবে । অতঃপর
পূনরায় যমীনকে এ মর্মে নির্দেশ দেয়া হবে যে, হে যমীন! তুমি আবার মৃত্তিকায় পরিণত হবে । অতঃপর
পুনরায় যমীনকে এ মর্মে নির্দেশ দেয়া হবে যে, হে যমীন! তুমি আবার শস্য উৎপন্ন কর এবং তোমার বরকত ফিরিয়ে দাও । সেদিন একদল মানুষ একটি ডালিম ভক্ষণ
করবে এবং এর বাকলের নীচে লোকেরা ছায়া গ্রহণ করবে । দুধের মধ্যে বরকত হবে । ফলে দুগ্নবতী একটি উটই একদল মানুষের
জন্য যথেষ্ট হবে, দুগ্ধবতী একটি গাভী একগোত্রীয় মানুষের জন্য
যথেষ্ট হবে এবং যথেষ্ট হবে দুগ্ধবতী একটি বকরী এক দাদার সন্তানের জন্য । এ সময় আল্লাহ তায়াআলা অত্যন্ত আরামদায়ক
একটি বাতাস প্রেরণ করবেন । এ বাতাস
সমস্ত ঈমানদার লোকদের বগলে গিয়ে লাগবে এবং সমস্ত মুমিন মুসলমানদের রুহ কবয করে নিয়ে
যাবে । তখন একমাত্র
মন্দ লোকেরাই এ পৃথিবীতে বাকী থাকবে । তারা গাধার
ন্যায় পরস্পর একে অন্যের সাথে ব্যাক্তিচারে লিপ্ত হবে । এদের উপরই কিয়ামত কায়িম হবে । (সহিহ মুসলিম হাদিস – ৭০১৫, অধ্যয় বিভিন্ন
ফিৎনা ও কিয়ামতের নিদর্শন)।
০৪।
ওসমান বিন আবিল আস বলেন, আমি রসূলুল্লহা
(সা) কে এ কথা বলতে শুনেছি, ….. এবং ঈসা বিন মরিয়াম (আ) ফজরের সময়
নেমে আসবেন। মুসলমানদের আমীর তাঁকে বলবেন, হে রুহুল্লাহ!
আপনি নামায পড়ান। তিনি বলবেন, এ উম্মতের লোক স্বয়ং
একে অপরের আমীর। তখন মুসলমানদের আমীর সামনে গিয়ে নামায পড়াবেন। নামায শেষে ঈসা
(আ) তাঁর অস্ত্র নিয়ে দাজ্জালের দিকে ধাবিত হবেন।
সে তাকে হত্যা করবেন। তার সাথী পরাজিত হয়ে পালিয়ে যাবে। কিন্তু কোথাও তার আশ্রয় মিলবে
না। গাছপালা চিৎকার করে বলবে, হে মুমিন! কাফের এখানে”।–(মুসনাদে আহমদ, তাবরানারী, হাকেম)
০৫। ইমরান বিন হাসীর
(রা) বলেন, নবী (সা) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে
সর্বদা এমন একদল থাকবে যারা হকেরওপর অবিচল থাকবে এবং বিরোধীদের জন্যে অসহনীয় হবে। অতপর
মহান আল্লাহ তায়ালার সিদ্ধান্ত এসে যাবে এবং ঈসা বিন মরিয়াম নাযিল হবেন”।–(মুসনাদে আহমদ)
৬।
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘আমার উম্মতের একটি দল হকের উপর প্রতিষ্ঠিত
থেকে কিয়ামত পর্যন্ত লড়াই করে বিজয়ী থাকবে। অতঃপর ঈসা (আঃ) আগমণ করবেন। সেদিন
মুসলমানদের আমীর তাঁকে লক্ষ্য করে বলবেনঃ আসুন! আমাদের ইমামতি করুন। তিনি বলবেনঃ
না; বরং তোমাদের একজন অন্যজনের আমীর। এ কারণে যে, আল্লাহ এই উম্মতকে সম্মানিত করেছেন’’। (মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল
ঈমান)।
০৭। হুযায়ফা বিন আসিদ
আল গিফারী (রা) বলেন, একবার নবী পাক (সা) আমাদের মধ্যে
তশরিফ আনলেন। আমরা তখন নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছিলাম। তিনি বললেন, কি কথা হচ্ছে? বললাম, আমরা কেয়ামতের
বিষয় আলোচনা করছি। নবী (সা) বললেন,
কেয়ামত কিছুতেই হবে না যতক্ষণ না দশটি আলামত জাহির হয়। তারপর তিনি বলেন,
দশটি আলামত এই –(১) ধূঁয়া,
(২) দাজ্জাল, (৩)
দাব্বাতুল আরদ, (৪) পশ্চিমাকাশ
থেকে সুর্যোদয়, (৫) ঈসা বিন মরিয়ামের অবতরণ,
(৬) ইয়াজুজ-মাজুজ,
(৭) তিনটি বড় বড় ভূমিধস-একটি
পূর্বে, (৮) একটি পশ্চিমে, (৯) একটি আরবে, সবশেষে (১০) একটি বিরাট আগুন যা ইয়েমেন তেকে উঠবে এবং লোকদেরকে
তাড়িয়ে হাশরের মাঠের দিকে নিয়ে যাবে”।–(মুসলিম, আবু দাউদ)
৮।
হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন, নবী (সা) বলেছেন, ঈসা ইবনে মরিয়াম নাযিল হবেন। অতপর তিনি শূকর
নিহত করে ফেলবেন এবং ক্রুশ নির্মূল করবেন। তাঁর জন্যে নামায জমা করা হবে এবং তিনি এত
অর্থ বিতরণ করবেন যে, গ্রহণ করার লোক থাকবে না। তিনি খেরাজ বন্ধ
করে দেবেন এবং রাওহা-[‘রাওহা’ মদীনা থেকে
৩৫ মাইল দূরে অবস্থিত একটি স্থান] নামক স্থানে অবস্থান করে হজ্ব
অথবা ওমরা করবেন অথবা উভয়টি করবেন”(রাবীর স্মরণ নেই যে,
নবী (সা) কোন কথা বলেছিলেন)। (মুসনাদে আহমদ, মুসলিম)
বিঃদ্রঃ
এখানে উল্লেখ যে, এ যুগে মির্জা গোলাম
আহম্মেদ যিনি নিজেকে হযরত ঈসা (আ)-এর সাদৃশ
দাবি করছে , সে জীবনে না হজ্ব করেছেন, না
ওমরাহ।
ঈসা আলাইহিস সালাম কিভাবে
কোন পোশাকে কোথায় এবং কখন অবতরণ করবেন?
০১। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,‘‘সে (দাজ্জাল) যখন মুসলমানদের ঈমান ধ্বংসের
কাজে লিপ্ত থাকবে আল্লাহ তাআলা তখন ঈসা ইবনে মারিয়াম (আঃ)কে পাঠাবেন। জাফরানের
রঙ্গিন দু’টি পোষক পরিহিত হয়ে এবং দু’জন
ফেরেশতার পাখার উপর হাত রেখে দামেস্ক শহরের পূর্বে অবস্থিত সাদা মিনারের উপরে তিনি
অবতরণ করবেন। তিনি যখন মাথা নিচু করবেন তখন সদ্য গোসলখানা থেকে বেরিয়ে আসা
ব্যক্তির মাথা থেকে যেভাবে পানি ঝরতে থাকে সেভাবে তাঁর মাথা থেকে পানির ফোটা ঝরতে
থাকবে এবং যখন মাথা উঁচু করবেন তখন অনুরূপভাবে তাঁর মাথা হতে মণি-মুক্তার মত চকচকে
পানির ফোটা ঝরতে থাকবে। কাফেরের শরীরে তাঁর নিঃশ্বাস পড়ার সাথে সাথেই কাফের মৃত্যু
বরণ করবে। চোখের দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত গিয়ে তাঁর নিঃশ্বাস শেষ হবে। তিনি দাজ্জালকে
ফিলিস্তীনের লুদ্দ শহরের গেইটে পাকড়াও করে হত্যা করবেন। অতঃপর তাঁর নিকট এমন কিছু
লোক আসবেন যাদেরকে আল্লাহ তাআলা দাজ্জালের ফিতনা হতে হেফাযত করেছেন। তিনি তাদের
চেহারায় হাত বুলাবেন এবং বেহেশতের মধ্যে তাদের উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে সংবাদদিবেন। (মুসলিম,অধ্যায়ঃকিতাবুলফিতান)।
০২। হযরত নাওয়াস বিন
সাময়ান কেলাবী দাজ্জালের কাহিনী বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন,
দাজ্জাল যখন এসব করতে থাকবে আল্লাহ তায়ালা মাসিহ-বিন-মরিয়ামকে পাঠাবেন। তিনি দামেশকের পূর্বাঞ্চলে সাদা
মিনারের ধারে হলুদ রঙের দু’টি কাপড় পরিধান করে দু’ফেরেশতার বাহুতে হাত রেখে নামবেন। যখন তিনি মাথা নাড়বেন, তখন মনে হবে যেন টপটপ করে পানি পড়ছে। যখন মাথা তুলবেন তখন পানির ফোঁটা-গুলোকে মুক্তার মত ঝকমক করতে দেখা যাবে। তাঁর নিঃশ্বাস তাঁর দৃষ্টির শেষসীমা
পর্যন্ত প্রবাহিত হবে এবং যে কাফেরের ওপর তা পড়বে সে আর বেঁচে থাকবে না। তারপর মরিয়াম
পুত্র দাজ্জালকে ধাওয়া করে লুদ ফটকের ওপর ধরে ফেলবেন এবং হত্যা করবেন?”-(মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযি,
ইবনে মাজাহ)।
উল্লেখ্য
যে, ফিলিস্তিনে ইসরাঈল রাষ্ট্রের রাজধানী তেলআবিবে
কয়েক মাইল দূরে ‘লূদ’ অবস্থিত। ইহুদীরা
সেখানে বিরাট বিমান ঘাটি তৈরী করেছে।
০৩। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘মুসলমানগণ দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে প্রস্ত্ততি গ্রহণ করতে থাকবে এবং কাতারবন্দী হতে থাকবে। ইতিমধ্যেই যখন নামাযের ইকামত হয়ে যাবে তখন ঈসা (আঃ) অবতরন করবেন। আল্লাহর শত্রু দাজ্জাল ঈসা (আঃ)কে দেখেই পানিতে লবণ গলার ন্যায় গলতে থাকবে। ঈসা (আঃ) যদি তাকে ছেড়েও দেন তথাপিও সে মৃত্যু পর্যন্ত গলতে থাকবে। কিন্তু তিনি তাকে নিজ হাতে হত্যা করবেন এবং মুসলমানদেরকে তাঁর লৌহাস্ত্রে দাজ্জাল হত্যার আলামত হিসেবে রক্ত দেখাবেন’’। (মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান)।
০৪। হযরত আবু হুরায়রা
(রা) থেকে বর্ণিত আছে, নবী
(সা) বলেছেন, আমি এবং তাঁর
(অর্থাৎ হযরত ঈসা) মাঝখানে কোনো নবী নেই। আর তিনি
নাযিল হবেন।অতএব যখন তোমরা তাঁকে দেখবে তখন তাঁকে চিনে নিও। তিনি হবেন মধ্যম আকৃতির
লোক। লাল ও সাদা মিশ্রিত রং হবে তাঁর। দু’টি হলুদ রঙের কাপড় পরিধান
করে থাকবেন। তাঁর মাথার চুল এমন হবে যেন পানি টপকিয়ে পড়ছে। অথচ তাঁর শরীর ভেজা হবে
না। তিনি ইসলামের জন্যে লোকের সাথে যুদ্ধ করবেন। ক্রুশ ছিন্নভিন্ন করবেন। শূকর ধ্বংস
করবেন। জিযিয়া রহিত করবেন। আল্লাহ তায়ালা ইসলাম ছাড়া অন্য সব মতবাদপন্থী মিল্লাত নির্মূল
করবেন। তিনি দাজ্জালকে নিহত করবেন। তিনি চল্লিশ বছর দুনিয়ায় অবস্থান করবেন। অতপর তাঁর
ইন্তেকাল হবে এবং মুসলমানগণ তাঁর জানাযার নামায পড়বে”।–(আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ)।
০৫। আবু উমামা বাহেলী
এক দীর্ঘ হাদীসে দাজ্জালের উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, ঠিক যখন মুসলমানদের ইমাম সকালের নামায পড়াবার জন্যে সামনে অগ্রসর হবেন,
ঈসা বিন মরিয়াম এমন সময়ে সেখানে নেমে আসবেন। ইমাম পেছনে হটে যাবেন যাতে
করে ঈসা সামনে অগ্রসর হতে পারেন কিন্তু ঈসা (আ) তাঁর দু’বাহুর মাঝখানে হাত রেখে বলবেন, না আপনি পড়ান। কারণ আপনার জন্যেই এ নামায দাঁড়িয়ে গেছে। অতএব তিনিই
(পূর্বের ইমাম) নামায পড়াবেন। তারপর ঈসা
(আ) বলবেন, দরজা খুলুন। দরজা
খোলা হবে এবং দেখতে পাওয়া যাবে সত্তর হাজার সশস্ত্র ইহুদীদের সাথে দাজ্জাল দাঁড়িয়ে
রয়েছে। যে মাত্রই হযরত ঈসার ওপর তার নজর পড়বে সে গলতে শুরু করবে লবণ যেমন পানিতে গলে।
সে তখন পালাতে থাকবে। ঈসা (আ) বলবেন,
আমার হাত তোর এমন মার রয়েছে যে বাঁচতে পারবিন না। অতপর তিনি তাকে লুদের
পূর্ব দরজার ওপর ধরে ফেলবেন। তারপর আল্লাহ তায়ালা ইহুদীদেরকে পরাজিত করিয়ে দেবে….
এবং দুনিয়া মুসলমানদের দ্বারা এমনভাবে পরিপূর্ণ হবে যেমন পাত্র পানিতে
পূর্ণ হয়ে যায়। তখন গোটা দুনিয়ার কালেমা এক হবে এবং আল্লাহ ছাড়া আর কারও দাসত্ব-আনুগত্য করা হবে না”।–(ইবনে মাজাহ)
০৬। নবী পাক
(সা) –এর মুক্ত করা গোলাম শাফিনাহ (দাজ্জালের কাহিী প্রসঙ্গে) বর্ণনা করেন, তারপর ঈসা (আ) নাযিল হবেন এবং আল্লাহ
তায়ালা দাজ্জালকে আফিকের-[আফিক –যার বর্তমান
নাম ‘কায়েক’ –সিরিয়া ও ইসরাঈলী সীমান্তে
অবস্থিত সিরিয়ার শেষ শহর। তার সামনে পশ্চিম দিকে কয়েক মাইল দূরে তাবারিয়া নামে একটি
ঝিল আছে যার থেকে জর্দান নদী বেরিয়েছে। তার দক্ষিণ পশ্চিম দিকে পাহাড়ের মধ্য দিয়ে একটা
ঢালু পথ দেড়-দু’হাজার ফুট গভীরে এমন এক
স্থান পৌঁছেছে যেখান থেকে তারাবিয়ার মধ্য হতে জর্দান নদী বেরুচ্ছে। এ পাহাড়ী আকাবায়ে
আফিক বা আফিক ঘাঁটি বলে।] ঘাঁটির সন্নিকটে ধ্বংস করবেন”।–(মুসনাদে আহমদ)
ঈসা
আলাইহিস সালামের সাথে দাজ্জালের সাক্ষাত
০১। হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন, দাজ্জাল আবির্ভাবের উল্লেখ
করার পর নবী (সা) বলেছেন, মুসলমানগণ দাজ্জালের সাথে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকবে এবং নামাযের জন্যে
কাতারবন্দী হওয়ার পর তকবীর দেয়া হতে থাকবে, এমন সময় ঈসা ইবনে
মরিয়অম নাযিল হবেন এবং নামাযে মুসলমানদের ইমামতি করবেন। আল্লাহর দুশমত (অর্থাৎ দাজ্জাল) তাঁকে দেখামাত্র গলেযেতে থাকবে যেমন
পানিতে লবণ গলে যায়। যদি হযরত ঈসা (আ) তাকে
ঐ অবস্থায় থাকতে দেন তো সে গলিত গয়ে মৃত্যুবরণ করবে কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাঁর হাতে
দাজ্জালকে নিহত করাবেন এবং তিনি তাঁর অস্ত্রে তার খুন মুসলমানদেরকে দেখাবেন”।–(মিশকাত, মুসলিমের বরাতসহ)
০২।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,‘‘মুসলমানদের ইমাম যখন তাদেরকে নিয়ে ফজরের নামায পড়ার জন্য সামনে চলে যাবেন
তখন ঈসা ইবনে মারইয়াম অবতরণ করবেন। ইমাম যখন ঈসা (আঃ)এর আগমণ অনুভব করবেন তখন তিনি
পিছিয়ে আসতে চেষ্টা করবেন যাতে ঈসা (আঃ) সামনে গিয়ে মানুষের ইমামতি করেন। ঈসা (আঃ)
ইমামের কাঁধে হাত রেখে বলবেনঃ তুমিই সামনে যাও এবং তাদের নামায পড়াও। কারণ তোমার
জন্যই এ নামাযের ইকামত দেয়া হয়েছে। অতঃপর তিনি (বিশুদ্ধ মতে ইমাম মাহদী) ইমামতি
করবেন। নামায শেষে তিনি দরজা খুলতে বলবেন। তারা দরজা খুলে দিবে। পিছনে তিনি
দাজ্জালকে দেখতে পাবেন। তার সাথে থাকবে অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত সত্তুর হাজার ইহুদী।
দাজ্জাল ঈসা (আঃ)কে দেখেই পানিতে লবন গলার ন্যায় গলতে থাকবে এবং পালাতে চেষ্টা
করবে। ঈসা (আঃ) তাকে লক্ষ্য করে বলবেনঃ তোমাকে আমি একটি আঘাত করবো যা থেকে তুমি
কখনো রেহাই পাবেনা। ঈসা (আঃ) লুদ্দ শহরের পূর্ব গেইটে তাকে বর্শা দিয়ে আঘাত করে
হত্যা করবেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা ঈসা (আঃ)এর মাধ্যমে ইহুদীদেরকে পরাজিত করবেন।
আল্লাহর কোন সৃষ্টির অন্তরালে ইহুদীরা পালাতে চাইলে আল্লাহ সেই সৃষ্টিকে কথা বলার
শক্তি দিবেন। পাথর, গাছ, দেয়াল কিংবা
চতুষ্পদ জন্তুর আড়ালে পলায়ন করলে সকলেই বলবেঃ হে মুসলিম! হে আল্লাহর বান্দা! আমার
পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা করো। তবে গারকাদ নামক গাছের
পিছনে লুকালে গারকাদ গাছ কোন কথা বলবেনা। এটি ইহুদীদের গাছ বলে পরিচিত। (ইবনে
মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। সহীহুল জামে আস্ সাগীর,
হাদীছ নং- ১৩৮৩৩)।
“মুজাম্মে বিন জারিয়া আনসারী বলেন, আমি নবী করীম (সা)-কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, মরিয়াম পুত্র দাজ্জালকে লুদ ফটকে হত্যা করবে”।–(মুসনাদে আহমদ, তিরমিযি)
“মুজাম্মে বিন জারিয়া আনসারী বলেন, আমি নবী করীম (সা)-কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, মরিয়াম পুত্র দাজ্জালকে লুদ ফটকে হত্যা করবে”।–(মুসনাদে আহমদ, তিরমিযি)
০৩। সামুরাহ বিন জুদ্দুর
(রা) বলেন, নবী (সা) বলেছেন, অতপর সকাল বেলা ঈসা
বিন মরিয়াম মুসলমানদের মধ্যে এসে পড়বেন। আল্লাহ দাজ্জাল এবং তার সৈন্য-সামন্তকে পরাজিত করবেন। এমনকি দেয়াল এবং গাছের মূল চিৎকার করে বলবে,
হে মুমিন কাফের আমার পেছনে লুকিয়ে আছে, আসুন তাকে
মেরে ফেলুন”।–(মুসনাদে আহমদ, হাকেম)
ঈসা আলাইহিস সালামের অবস্থান কালে পৃথিবীর অবস্থা
আবদুল্লাহ বিন আমর
বিন আস (রা) বলেন, রসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন,
দাজ্জাল আমার উম্মতের মধ্য থেকে বের হবে এবং চল্লিশ, (আমি জানি না চল্লিশ দিন, না চল্লিশ মাস, না চল্লিশ বছর)-[এ হযরত আবদুল্লহা বিন আমর বিন আ’সের নিজের কথা।] থাকবে। তাপর আল্লাহ তায়ালা ঈসা বিন মরিয়ামকে
পাঠাবেন। তাঁকে ওরওয়া বিন মাসউদের (এক সাহাবীর) মতো দেখাবে। তিনি দাজ্জালের পেছনে ধাওয়া করে তাকে হত্যা করবেন। তারপর সাত বছর
এমনভাবে অতিবাহিত হবে যে, দু’জন লোকের মধ্যেও
কোনো শত্রুতা হবে না”। (মুসলিম)
ঈসা আলাইহিস
সালামের পৃথিবীর অবস্থান কাল
০১। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘অতঃপর তিনি চল্লিশ বছর পৃথিবীতে অবস্থান করে মৃত্যু বরণ করবেন। মুসলমানেরা
তাঁর জানাযা নামায পড়ে দাফন করবে। (মুসনাদে আহমাদ ও সুনানে আবু দাঊদ। সহীহুল জামে
আস্ সাগীর, হাদীছ নং- ৫২৬৫)।
০২। “হযরত আয়েশা (রা) দাজ্জালের কাহিনী প্রসঙ্গে বলেন, ঈসা (আ) নাযিল হবেন এবং তাকে হত্যা করবেন। অতপর তিনি দুনিয়ায় চল্লিশ বছর ন্যায়পরায়ণ ইমাম এবং ন্যায়নিষ্ঠ শাসক হিসেবে অবস্থান করবেন”।–(মুসনাদে আহমদ)
০২। “হযরত আয়েশা (রা) দাজ্জালের কাহিনী প্রসঙ্গে বলেন, ঈসা (আ) নাযিল হবেন এবং তাকে হত্যা করবেন। অতপর তিনি দুনিয়ায় চল্লিশ বছর ন্যায়পরায়ণ ইমাম এবং ন্যায়নিষ্ঠ শাসক হিসেবে অবস্থান করবেন”।–(মুসনাদে আহমদ)
০৩। মুসলিম শরীফে আছে, ‘‘অতঃপর মানুষেরা পৃথিবীতে সাত বছর শান্তিতে বসাবাস করবে। পরস্পরের মধ্যে
কোন প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ থাকবেনা’’। (সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ দাজ্জালের আলোচনা)।
বি: দ্র: আলোচিত
কুরআন হাদিস সাক্ষ্যদেয় ঈসা আলাইহিস সালামকে বরং আল্লাহ তাকে নিজের দিকে উঠিয়ে নিয়েছেন। তিনি মারা যাননি। পৃথিবীতে পুণরায়
অবতরনের পর তিনি মারা যাবেন।
নবী থেকে রূপক নবী, ঈসা আলাইহিস সালাম থেকে রূপক
ঈসা
কাদিয়ানি যখন দেখল
প্রকৃত ঈসা আলাইহিস সালামের সাথে তার কোন মিল নেই। সাধারন মুসলমান ও তার এ ভন্ডামি
ও ধোকবাজি বুঝেফেলেছে তখন সে দাবি করল, আমি প্রকৃত ঈসা নই। আমি হলাম রূপক ঈসা। প্রথমে নবী থেকে রূপক নবী এবার ঈসা
থেকে রূপক ঈসা। কি চমৎ দাবি! আমি কাদিয়ানি। এই রূপক ঈষা সাজতে গিয়ে, কুরআন
সুন্নাহর বিপরীত গিয়ে, জীবিত ‘ঈসা
আলাইহিস
সালাম’ মৃত্যু বরণের ধারনা দিলেন।
আর নানামুখি যুক্তির অবতারন করলেন। শুধু ধারনা দিয়েই বিরত থাকেন নি। প্রমান
উপস্থাপণে কুরআন হাদিসে যে নানামুখি অপব্যাখ্যা প্রদান করছেন তারই একটা নমুনা হল
এই শিরোনাম “পবিত্র কুরআনের ত্রিশটি আয়াতের আলোকে হযরত ঈসা
(আ.)-এর মৃত্যুর প্রমান”।
উপরের
আলোচনা নয়, কোন যুক্তির ও অবতারনা নয়। কুরআর আর
সহিত হাদিস সাক্ষ্য দিচ্ছে ঈসা ইবনে মরিয়ম (মসীহ)আলাইহিস
সালামের প্রতিরূপ হওয়ার ধারণা ভ্রান্ত
ও বানোয়াট। রূপক ঈসা কাদিয়ানির নব আবিস্কৃত এক মতবাদ মাত্র। যাঁরাই এই
কুনআন ও সহিত হাদীসগুলো অধ্যয়ন করবেন, তারা স্বয়ং দেখতে পাবেন যে, এসবের মধ্যে কোনো ‘প্রতিশ্রুত মসীহ’ অথবা ‘মসীহের প্রতিরূপ’ অথবা ‘মসীহের আত্মপ্রকাশ’ প্রভৃতি আদতেই কোনো শব্দই
উল্লেখ নেই। হাদীসগুলো সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীনভাবে সেই ঈসা (আ)-এর অবতীর্ণ হওয়ার সুসংবাদ দিচ্ছে যিনি আজ থেকে দু’হাজার বছর আগেমরিয়াম
আলাইহিস সালামের গর্ভে আল্লাহর
ইচ্ছায় বিনা পিতায় গতানিগতিক ধারার বাহিরে জন্মগ্রহণ করে
আতুর ঘরে বসেই নিজের নবুয়তের সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।
তাদের যুক্তি হল, ঈসা
(আঃ)-এর আগমনের ভবিষ্যদ্বানী ছিল সত্য কিন্তু তিনি আসল ঈসা নন।
তিনি হলেন ঈসা (আঃ)-এর গুনে গুনান্বিত । তিনি হবেন একজন রূপক ঈসা।
আর ‘রূপক ঈসা’ মির্যা গোলাম আহমদ
কাদিয়ানী। কেমন পাগলের প্রলাপ
একবার বলছেন মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী হল ‘নবী’, একবার বলছেন ‘ছায়া বা ঝিল্লি নবী’, একবার বলছেন ‘ঈসা (আঃ)’,একবার বলছেন ‘রূপক ঈসা’ আবার বলছেন ‘ইমাম মাহদি’। এই স্ববিরোধিতার যাঁতাকলে
পড়ে কাদিয়ানীরা ও দ্বিধা বিভক্ত। পাকিস্তানের কাদিয়ানীরা বলেন তিনি একজন ইমাম
ছিলেন, ভারতীয় কাদিয়ানীরা বলেন
তিনি একজন নবী ছিলেন, বাংলাদেশের
কাদিয়ানীরা বলেন মোহাম্মাদ (সাঃ) কে তারাও নবী হিসেবে মানে। মূলত প্রতিকূল অবস্থা সামাল
দিতেই কাদিয়ানীরা এই পদ্ধতির অবলম্বন করে।
মির্জা গোলাম
আহমেদ নিজেকে একই সাথে ‘মসীহ’ কখনও ‘ইমাম মাহদী’ দাবী
করেছেন। মসিহ হল ঈসা ইবনে মরিয়ম আর ইমাম মাহদি হল ঈসা আলাইহিস সালাম অবতরনের পর
যার পিছনে নামাজ পড়বেন তিনি। তাহলে সহজে বুঝাগেল তারা দুজন একজন নন। ঈসা আলাইহিস
সালামের আগমন সম্পর্কে জানতে পারলাম। এবার
হলে ইমাম মাহদি সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করা যাক।
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)
ইসলামের দৃষ্টিতে দলাদলি-১৯
কাদিয়ানিদের ধর্মীয় বিশ্বাস কি?-০৩
ইমাম মাহদী
আলাইহিস সালাম
সহীহ হাদীছের
বিবরণ থেকে জানা যায় কিয়ামতের বড় আলামতের মধ্যে আখেরী যামানায় ইমাম মাহদী নামে
একজন মহান ইমামের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। তিনি যখন উম্মাতের নের্তৃত্বের দায়িত্বভার
গ্রহণ করবেন তখন ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর ইচ্ছায় অবতরণ করবেন। কিন্তু ইমামতির
ভার তাকেই দিবেন। তিনি ইসলামী শরীয়তের মাধ্যমে বিচার-ফয়সালা করবেন। পৃথিবী হতে
জুলুম-নির্যাতন দূর করে ন্যায়-ইনসাফ কায়েম করবেন। উম্মতে মুহাম্মাদী তাঁর আমলে
বিরাট সফলতা দেখতে পাবে। তাকে হত্যা করার চেষ্টা করেও কৃতকার্য হবে না। মিষ্টার মির্জা
কাদিয়ানি এ খবর জেনে সজ্ঞানে ইমাম মাহদি হওয়ার দাবি করেন। তিনি যে আসবেন এ কথা
সত্য যেনেই কাদিয়ানির এই প্রতারনা।
সহিহ হাদিসের
আলোকে একটু পর্যালোচনা করি।
মহান ইমামের
নাম ও বংশ পরিচয় কি?
১। উম্মে
সালামা (রাঃ) বলেনঃ ‘‘আমি রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ মাহদীর আগমণ হবে আমার পরিবারের
ফাতেমার বংশধর হতে। (
আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ। ইমাম আলবানী (রঃ) সহীহ বলেছেন। সহীহুল জামেউ,
হাদীছ নং- ৬৬১২)।
২। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘ততদিন দুনিয়া ধ্বংস হবেনা যতদিন না আমার পরিবারের একজন লোক আরবদের বাদশা
হবেন। তাঁর নাম হবে আমার নামে এবং তাঁর পিতার নাম হবে আমার পিতার নামের অনুরূপ (অর্থাৎ তাঁর নাম হবে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ)। (মুসনাদে আহমাদ,
সহীহুল জামেউস্ সাগীর, হাদীছ নং- ৫১৮০)।
৩। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘মাহদী আসবেন আমার বংশধর হতে। তাঁর কপাল হবে উজ্জল এবং নাক হবে উঁচু।
পৃথিবী হতে যুলুম-নির্যাতন দূর করে দিয়ে ন্যায়-ইনসাফ দ্বারা তা ভরে দিবেন। সাত বছর
পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করবেন’’। (আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাহদী, সহীহুল জামে আস্ সাগীর, হাদীছ নং- ৬৬১২)।
৪। জাবের (রাঃ)
বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ঈসা (আঃ) যখন অবতরণ করবেন
তখন মুসলমানদের আমীর তাঁকে বলবেনঃ আসুন! আমাদের নামাযের ইমামতি করুন। ঈসা (আঃ)
বলবেন, বরং তোমাদের আমীর তোমাদের মধ্যে হতেই। এই উম্মতের সম্মানের কারণেই তিনি এ
মন্তব্য করবেন। (আল-মানারুল
মুনীফ, (পৃষ্ঠা নং-১৪৭-১৪৮) ইমাম ইবনুল কায়্যিম বলেনদ,
হাদীছের সনদ ভাল)।
উপরের
হাদিসগুলি পর্যালোচনা করলে ইমাম কাসিরের মতামতে সাতে মতভাগ মিলে যায়। তিনি বলেন,
সেই মহান নেতার নাম হবে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর নামের মতই
এবং তাঁর পিতার নাম হবে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর পিতার নামের
মতই। তিনি হবেন হাসান বিন আলী (রাঃ) এর বংশ থেকে। এবং ‘‘তিনি হলেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল-ফাতেমী আল-হাসানী’’। (নিহায়া,
অধ্যায়ঃ আল- তান ওয়াল মালাহিম।
ইমাম
মাহদি কোথায় আগমণ করবে?
০১। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের গুপ্তধনের নিকট তিনজন লোক ঝগড়া
করবে। প্রত্যেকেই হবে খলীফার পুত্র। কেউ তা দখল করতে পারবেনা। অতঃপর পূর্বের দিক
থেকে কালো পতাকাধারী একদল সৈনিক আসবে। তারা ব্যাপক হত্যাকান্ড চালাবে। হাদীছের বর্ণনাকারী বলেন, ‘‘এরপর নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন কিছু বিষয়ের কথা বর্ণনা করলেন যা আমি স্মরণ রাখতে
পারিনি। তোমরা যখন তাদেরকে দেখতে পাবে তখন তাদের নেতার হাতে বায়আত করবে। যদিও
বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে উপস্থিত হতে হয়। কেননা তিনি হলেন আল্লাহর খলীফা মাহদী’’। ( ইবনে মাজাহ,
অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। ইমাম আলবানী বলেনঃ ‘আল্লাহর
খলীফা’ কথাটি ব্যতীত হাদীছের বাকী অংশ সহীহ)।
ইমাম ইবনে কাছীর (রঃ) বলেন, ‘‘উল্লেখিত হাদীছে যে ধন-ভান্ডারের কথা বলা হয়েছে তা হল কা’বা ঘরের ধন-ভান্ডার।
ইমাম ইবনে কাছীর (রঃ) বলেন, ‘‘উল্লেখিত হাদীছে যে ধন-ভান্ডারের কথা বলা হয়েছে তা হল কা’বা ঘরের ধন-ভান্ডার।
মাহদি আগমণের হাদিসসমূহ:
০১।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘সেদিন কেমন হবে তোমাদের অবস্থা যেদিন তোমাদের মধ্যে ঈসা ইবনে মারইয়াম নেমে
আসবেন এবং তোমাদের মধ্যে হতেই একজন ইমাম হবেন’’। (বুখারী,
অধ্যায়ঃ আহাদীছুল আম্বীয়া, মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান)।
২) জাবের (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘আমার উম্মাতের একটি দল হকের উপর বিজয়ী থেকে কিয়ামত পর্যন্ত লড়াই করতে থাকবে। অতঃপর ঈসা ইবনে মারইয়াম অবতরণ করবেন। তাকে দেখে মুসলমানদের আমীর বলবেনঃ আসুন! আমাদেরকে নিয়ে নামাযের ইমামতি করুন। ঈসা (আঃ) বলবেনঃ না; বরং তোমাদের আমীর তোমাদের মধ্যে হতেই। এই উম্মাতের সম্মানের কারণেই তিনি এ মন্তব্য করবেন’’। ( মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান)।
৩। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘আখেরী যামানায় আমার উম্মাতের মধ্যে একজন খলীফা হবেন যিনি মানুষের মধ্যে মুক্ত হস্তে অগণিতভাবে ধন-সম্পদ বিতরণ করবেন’’। ( মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান)।
২) জাবের (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘আমার উম্মাতের একটি দল হকের উপর বিজয়ী থেকে কিয়ামত পর্যন্ত লড়াই করতে থাকবে। অতঃপর ঈসা ইবনে মারইয়াম অবতরণ করবেন। তাকে দেখে মুসলমানদের আমীর বলবেনঃ আসুন! আমাদেরকে নিয়ে নামাযের ইমামতি করুন। ঈসা (আঃ) বলবেনঃ না; বরং তোমাদের আমীর তোমাদের মধ্যে হতেই। এই উম্মাতের সম্মানের কারণেই তিনি এ মন্তব্য করবেন’’। ( মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান)।
৩। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘আখেরী যামানায় আমার উম্মাতের মধ্যে একজন খলীফা হবেন যিনি মানুষের মধ্যে মুক্ত হস্তে অগণিতভাবে ধন-সম্পদ বিতরণ করবেন’’। ( মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান)।
৪। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে আরও বর্ণিত
আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘আমি তোমাদেরকে মাহদীর
আগমণ সম্পর্কে সুসংবাদ দিচ্ছি। মানুষেরা যখন মতবিরোধে লিপ্ত হবে তখন তিনি প্রেরিত
হবেন। পৃথিবী হতে জুলুম-নির্যাতন দূর করে ন্যায়-ইনসাফ দ্বারা তা ভরে দিবেন।
আসমান-যমীনের সকল অধিবাসী তার উপর সন্তুষ্ট হবেন। তিনি মানুষের মাঝে সমানভাবে
প্রচুর সম্পদ বিতরণ করবেন’’। (মুসনাদে আহমাদ। ইমাম হায়ছামী বলেনঃ হাদীছের বর্ণনাকারীগন নির্ভরযোগ্য।
মাজমাউ য্ যাওয়ায়েদ (৭/৩১৩-৩১৪)।
মাহদি
আসআর পর মহান আল্লাহ তাকে বিপদে সাহায্য করবেন ও পৃথিবী শান্তিতে ভরে যাবে:
১। উম্মে সালামা
(রাঃ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘কা’বা ঘরের পাশে একজন লোক আশ্রয় নিবে। তাঁর বিরুদ্ধে
একদল সৈনিক প্রেরণ করা হবে। সৈন্যরা যখন ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছবে তখন যমিন তাদেরকে গ্রাস করে ফেলবে। উম্মে সালামা বলেনঃ
আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম অপছন্দ সত্ত্বেও যারা
তাদের সাথে যাবে তাদের অবস্থা কি হবে? উত্তরে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তাকে সহ যমিন ধসে যাবে। তবে কিয়ামতের দিন
সে আপন নিয়তের উপরে পুনরুত্থিত হবে’’। ( মুসলিম,
অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান)।
২। হাফসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘অচিরেই এই ঘরের অর্থাৎ কা’বা ঘরের পাশে একদল লোক আশ্রয় গ্রহণ করবে। শত্রুর সাথে মোকাবেলা করার মত তাদের কোন উল্লেখযোগ্য সৈনিক কিংবা অস্ত্র-শস্ত্র বা প্রস্ত্ততি থাকবেনা। তাদেরকে হত্যা করার জন্য একদল সৈনিক প্রেরণ করা হবে। সৈন্যরা যখন ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছবে তখন যমিন তাদেরকে গ্রাস করে ফেলবে’’। (মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান)।
০৩। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ ‘‘একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুমের ঘোরে এলোমেলো কিছু কাজ করলেন। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ জাগ্রত হলে আমরা তাঁকে বললামঃ ঘুমের মধ্যে আপনি আজ এমন কিছু কাজ করেছেন যা অতীতে কখনও করেন নি। তিনি বললেনঃ আমার উম্মাতের একদল লোক কা’বার পাশে আশ্রয় গ্রহণকারী কুরাইশ বংশের একজন লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। তারা যখন ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছবে তখন তাদেরকে নিয়ে যমিন ধসে যাবে। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! তখন তো রাস্তায় বিভিন্ন ধরণের লোক থাকবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তাদের ভিতর এমন লোক থাকবে যারা নিজেদেরকে গোমরাহ জেনেও বের হবে, কাউকে বল প্রয়োগ করে আনা হবে এবং তাদের মধ্যে মুসাফিরও থাকবে। তারা সকলেই ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে সকলকেই আল্লাহ তা’আলা নিয়তের উপর পুনরুত্থিত করবেন। (মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান)।
০৪। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, ‘‘আখেরী যামানায় আমার উম্মাতের ভিতরে মাহদীর আগমণ ঘটবে। তাঁর শাসনকালে আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে, যমিন প্রচুর ফসল উৎপন্ন করবে, তিনি মানুষের মাঝে সমানভাবে প্রচুর সম্পদ বিতরণ করবেন, গৃহপালিত পশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং উম্মাতে মুহাম্মাদীর সম্মান বৃদ্ধি পাবে। তিনি সাত বছর কিংবা আট বছর জীবিত থাকবেন’’। (মুস্তাদরাকুল হাকিম। ইমাম আলবানী (রঃ) হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন। সিলসিলায়ে সাহীহা, হাদীছ নং- ৭১১)।
২। হাফসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘অচিরেই এই ঘরের অর্থাৎ কা’বা ঘরের পাশে একদল লোক আশ্রয় গ্রহণ করবে। শত্রুর সাথে মোকাবেলা করার মত তাদের কোন উল্লেখযোগ্য সৈনিক কিংবা অস্ত্র-শস্ত্র বা প্রস্ত্ততি থাকবেনা। তাদেরকে হত্যা করার জন্য একদল সৈনিক প্রেরণ করা হবে। সৈন্যরা যখন ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছবে তখন যমিন তাদেরকে গ্রাস করে ফেলবে’’। (মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান)।
০৩। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ ‘‘একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুমের ঘোরে এলোমেলো কিছু কাজ করলেন। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ জাগ্রত হলে আমরা তাঁকে বললামঃ ঘুমের মধ্যে আপনি আজ এমন কিছু কাজ করেছেন যা অতীতে কখনও করেন নি। তিনি বললেনঃ আমার উম্মাতের একদল লোক কা’বার পাশে আশ্রয় গ্রহণকারী কুরাইশ বংশের একজন লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। তারা যখন ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছবে তখন তাদেরকে নিয়ে যমিন ধসে যাবে। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! তখন তো রাস্তায় বিভিন্ন ধরণের লোক থাকবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তাদের ভিতর এমন লোক থাকবে যারা নিজেদেরকে গোমরাহ জেনেও বের হবে, কাউকে বল প্রয়োগ করে আনা হবে এবং তাদের মধ্যে মুসাফিরও থাকবে। তারা সকলেই ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে সকলকেই আল্লাহ তা’আলা নিয়তের উপর পুনরুত্থিত করবেন। (মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান)।
০৪। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, ‘‘আখেরী যামানায় আমার উম্মাতের ভিতরে মাহদীর আগমণ ঘটবে। তাঁর শাসনকালে আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে, যমিন প্রচুর ফসল উৎপন্ন করবে, তিনি মানুষের মাঝে সমানভাবে প্রচুর সম্পদ বিতরণ করবেন, গৃহপালিত পশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং উম্মাতে মুহাম্মাদীর সম্মান বৃদ্ধি পাবে। তিনি সাত বছর কিংবা আট বছর জীবিত থাকবেন’’। (মুস্তাদরাকুল হাকিম। ইমাম আলবানী (রঃ) হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন। সিলসিলায়ে সাহীহা, হাদীছ নং- ৭১১)।
উপরের
বিস্তারিত আলোচনা থেকে ইমাম মাহদী সম্পর্কে আমরা যা অবগত হলাম তার সংক্ষিপ্ত কথা
হলঃ
ক.
তিনি আখেরী যামানায় উম্মতি মুহম্মদের মধ্যে একজন সৎ নেতা হবে। তার জম্ম হবে নবী
বংশে হবে।
খ.
তার শ্বাষন আমলে মুসলমানদের খলীফা হয়ে তিনি ন্যায় বিচার-ফয়সালা করবেন।
গ.তার
সময় মুসলমানদের মাঝে চরম সুখণ্ডশান্তি ও নেয়া'মত বিরাজ করবে।
ঘ. তিনি মাকামে ইবরাহীম এবং রুকনে ইয়ামানীর
মধ্যবর্তী স্থানে মুসলমানগণ তাঁর হাতে বায়আত গ্রহণ করবে। তাঁকে হত্যা করার জন্য সিরিয়া থেকে একদল
সৈন্য পাঠালে আল্লাহর গজবে সৈন্যদলটি মক্কার পথে ‘বায়দা’ নামক স্থানে হালাক হয়ে যাবে।
ঙ. তিনি দামেস্কের মসজিদে ফজরের নামাযের সময় ঈসা
(আঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করবেন। প্রথমে তিনি ঈসা (আঃ) কে নামাযের ইমামতি করার অনুরোধ
জানাবেন। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করলে স্বয়ং ইমাম মাহদী ইমামতি করবেন।
চ.
তিনি এবং ঈসা (আঃ) দুজে মিলে দাজ্জালের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বের হবেন এবং দাজ্জাল হত্যার কাজে ঈসা (আঃ) কে সহায়তা
করবেন।
উম্মতের
ইজমাহল ঈসা আলাইহিস সালাম এবং ইমাম মাহদি দু ব্যক্তি। কিন্তু সকল মুসলিম বুঝলেও
কাদিয়ানিরা বুঝল না। না কি জেনে শুনে এমন প্রতারনা। দেখুন দুজনকে তুলনা করলে
অবশ্যই আলাদা ব্যক্তি হবে।
ঈসা ইবনে
মরিয়ম আলাইহিস সালাম
|
ইমাম মাহদী
আলাইহিস সালাম
|
তিনি
একজন আল্লাহর রাসুল ও নবী
|
তিনি
একজন জগৎবিখ্যাত ঈমাম হবেন
|
তিনি
মহান আল্লাহর নির্দেশে তাকে তার দিকে উন্নীত করা হইয়াছে
|
ইমাম
মাহদী এখন ও দুনিয়াতে আসেন নাই
|
দ্বিতীয়
বার আর জম্ম গ্রহন করবেন না, সরাসরি আল্লাহর নির্দেশে পৃথিবীতে আসবে।
|
তার
জম্ম হবে নবী বংশে হবে। এবং এক জন সাধারণ মানব শিশুর মত লালিত পালিত হবেন।
|
তিনি
যখন অবতরণ করবেন
|
ইনি
তখন সালাত পড়ানোর প্রস্ততি নিবেন
|
মুছল্লি
হয়ে ইমাম মাহদির পিছনে সালাত আদায় করবেন।
|
ঈসা
আঃ উপস্থিত থাকা অবস্থায় ইমামতি করবেন
|
এক
জন রাসূল তার মর্জাদা সাধারন ইমামের চেয়ে অনেক বেশী
|
ইমামের
সাথে রাসুলে তুলনা চলে না।
|
তাহলে পাঠকই বলুন দুই ব্যক্তি কি করে এক জন হয়ে একা সাথে ভারতে
আসলেন। অনেক দাবি আসে যা সত্য না হলেও অনেক সময় যুক্তির কাছে হার মানতে হয়। কিন্তু
এটা কেমন দাবি, যার না আসে সত্যতা, না আসে যৌক্তিক কোন কারন। তাহলে তিনি আর কোন
অবস্থাতেই ইমাম মাহদী হতে পারেন না।
৪। মির্জা গোলাম আহমেদ জনগনের নিকট থেকে বায়াআত গ্রহন শুরু করেন ও নিজেকে
উম্মতের আওলিয়া দরবেশের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে দাবি করেন
১৮৮৯
সন।
এবং এ বছরই মির্জা গোলাম আহমদ ঘোষণা করেন যে, তিনি একটি ঐষিবাণী পেয়েছেন, যাতে তাঁকে এ মতবাদে
বিশ্বাসীদের আনুগত্য গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। তিনি তার দৈব প্রাপ্ত ধর্মমতের প্রচার
শুরু করেন।
মির্জা গোলাম আহমেদ আবার দাবী করেছেন তিনি
একজন সংস্কারক বা মুজাদ্দিদ। তিনি একজন আল্লাহ খাস বান্দা ও ইমাম, তার কাছে
আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী এসেছিল। পৃথিবীতে অনেক আল্লাহে খাস বান্দা ও ইমাম অতিবাহিত
হয়েছেন। ইসলামের ইতিহাসে অনেক খ্যাতিমান ইমাম মুহাদ্দিস জম্ম গ্রহন করেছেন। ইমাম
বুখারী, ইমাম মুসলিম, ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক, ইমাম গাজ্জালী সহ বহু ইমাম গত হয়েছেন। তারা কেই কি দাবি
করেছেন আমার নিকট ওহী বা ঐষি বাণী আসে। এমনি অনেক ভন্ড অলী ও এমন দাবি করেনি।
বাস্তবে নবী রসূল ছাড়া কারো নিকট ওহী আসে না। সুতরাং তার প্রতিটি দাবী একটির সাথে
অন্যটি সাংঘার্ষিক এবং সরাসরি স্ববিরোধী। অথচ পৃথিবীর কোন রাসুল এবং নবীদের কথা
বার্তার একটি অক্ষরও স্ববিরোধী এবং সাংঘার্ষিক ছিলনা। তার মিথ্যা কথার জবাব একদিন
তাকে দিতে হবে। স্বয়ং মহান
আল্লাহই তার শাস্তির বিধান করেছেন। তাইতো মহান আল্লাহ বলেন:
وَمَنۡ
أَظۡلَمُ مِمَّنِ ٱفۡتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا أَوۡ قَالَ أُوحِىَ إِلَىَّ
وَلَمۡ يُوحَ إِلَيۡهِ شَىۡءٌ۬ وَمَن قَالَ سَأُنزِلُ مِثۡلَ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُۗ
وَلَوۡ تَرَىٰٓ إِذِ ٱلظَّـٰلِمُونَ فِى غَمَرَٲتِ ٱلۡمَوۡتِ وَٱلۡمَلَـٰٓٮِٕكَةُ
بَاسِطُوٓاْ أَيۡدِيهِمۡ أَخۡرِجُوٓاْ أَنفُسَڪُمُۖ ٱلۡيَوۡمَ تُجۡزَوۡنَ عَذَابَ
ٱلۡهُونِ بِمَا كُنتُمۡ تَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ غَيۡرَ ٱلۡحَقِّ وَكُنتُمۡ عَنۡ
ءَايَـٰتِهِۦ تَسۡتَكۡبِرُونَ (٩٣)
অর্থ: আর সে ব্যক্তির চেয়ে বড় জালেম আর কে হবে যে আল্লাহর সম্পর্কে
মিথ্যা অপবাদ রটায় অথবা বলে আমার কাছে অহী এসেছে অথচ তার ওপর কোন অহী নাযিল করা
হয়নি অথবা যে আল্লাহর নাযিল করা জিনিসের মোকাবিলায় বলে, আমিও এমন জিনিস নাযিল করে দেখিয়ে দেবো ? হায় !
তুমি যদি জালেমদেরকে সে অবস্থায় দেখতে পেতে যখন
তারা মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকবে এবং ফেরেশতারা হাত বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলতে থাকবে
৷ নাও, তোমাদের প্রাণ বের করে দাও৷ তোমরা আল্লাহর প্রতি
অপবাদ আরোপ করে যেসব অন্যায় ও অসত্য কথা বলতে এবং তাঁর আয়াতের বিরুদ্ধে যে ঔদ্ধত্য
প্রকাশ করতে তারি শাস্তি স্বরূপ আজ তোমাদের অবমাননাকর শাস্তি দেয়া হবে৷ ( সূরা আনআম ৬:৯৩)।
১. আল্লাহর সম্পর্কে কাদিয়ানিদের বিশ্বাস:
ক. মীর্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী আল্লাহ তা‘আলার সাথে নিজেকেও সবকিছুর স্রষ্টা ও মালিক বলে দাবী করেছে। এ ব্যাপারে তার মতামত হলো: সে এ মর্মে ওহী বা বাণী পেয়েছে যে, তাকে বলা হচ্ছে, “আমার যেমন আকাশ ও ভুমণ্ডলের মালিকানা রয়েছে তেমনি তা তোমারও। ( Ahmadiet Movement: Mirja Bashiruddin . p. 118)।
খ. আরও বলছে: “আমার রব চৌকিদারের মত আমার সামনে সামনে হাঁটে। ( مواهب الرحمن পৃ.২৩)আল্লাহর সাথে
গ. কথোপকথনের সময় তার কাছে নাকি এ মর্মে বাণী এসেছে যে, “তোমার সাথে আমার সম্পর্ক পিতা পুত্রের সম্পর্ক, তুমি আমার পুত্রতুল্য। ( الاستفتاءপৃ: ৯১)
ঘ. তার কাছে নাকি ওহী এসেছে এই বলে যে, “হে আল্লাহর নবী! আমি তোমাকে চিনতে পারি নি। ( . الاستفتاءপৃ: ৯৫)।
ঙ. সে তার আরবী গ্রন্থ (الاستفتاء) তে তার দাবী মোতাবেক আল্লাহর সাথে কথোপকথনের সময় আল্লাহ তা‘আলা নাকি তাকে বলছে (!) “তুমি আমার থেকে, আর আমি তোমার থেকে। ( . الاستفتاءপৃ: ৮১)।
২. ফেরেশতার সম্পর্কে কাদিয়ানিদের বিশ্বাস:
ফেরেশতা জগত সম্পর্কে ভণ্ড নবুওয়াতের দাবীদার গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর আক্বীদা ও বিশ্বাস হলো ফেরেশতা ও আল্লাহ একই বস্তু। তাই সে তার আরবী গ্রন্থ (حمامة البشرى) তে ফেরেশতাদের সম্পর্কে বলছে: “এদেরকে আল্লাহ তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ রূপে তৈরী করেছেন”। ( حمامة البشرى পৃ: ২২১)।
৩. রাসূল সম্পর্কে কাদিয়ানিদের বিশ্বাস:
ক. সে তার উর্দু বই (কিসতিয়ে নুহ) তে মরিয়াম (আ) সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলছে, “সে তার গর্ভসহ বিবাহ বসতে বাধ্য হয়েছিল, কারণ তার স্বজাতীয় মুরব্বীরা তাকে বিবাহের জন্য পীড়াপীড়ি করছিল:। (কিসতিয়ে নূহ: পৃ: ২১)।
খ. তারপর তার নবুওয়াতের দাবীর দ্বিতীয় পর্যাযে সে যখন নিজকে ঈসা (আ) এর অনুরূপ বা স্বদৃশ্য (Analogous) বলে বর্ণনা করত, তখন বলত “ঈশার সদৃশ ব্যক্তি ঈশা থেকেও উত্তম”। ( Our teaching- p.17)।
৪. তাকদীর বা ভাগ্যের উপর কাদিয়ানিদের বিশ্বাস:
ক. এ ব্যাপারে সে তার আরবী বই (الاستفتاء) তে বলছে যে, আল্লাহ নাকি তাকে প্রেমের ভান বা ছিনালি করে বলছে “হে আল্লাহর নবী! আমি তোমাকে চিনতে পেরেছিলাম না। (না‘উযুবিল্লাহ)। ((الاستفتاء) পৃ: ৯৫)
খ. অনুরূপভাবে পূর্ববর্তী বইতেই সে বলছে যে, আল্লাহ তাকে বলছে “কোন কিছু করার ইচ্ছা করলে তখন তোমার শুধুমাত্র হও বলতে হবে, তাতেই তা হয়ে যাবে। (.(الاستفتاء) পৃষ্ঠা : ৯৬)
গ. সে তার আরবী বই তে বলছে “কখনো কখনো আল্লাহ তার অমোঘ ইচ্ছাকে ত্যাগ করে তার বান্দার প্রার্থনা শুনেন। (سفينة نوح)পৃষ্টা: ২৪)।
২. নামাজ কায়েম করা সম্পর্কে তাদের মতামত:
ইসলামের এ বিশেষ নিদর্শনের ব্যাপারে গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী যে সব প্রকাশ্য বিরোধিতায় লিপ্ত তা হলো:
ক. আরবী জানা সত্বেও যে কোন ভাষায় নামাজ পড়লেই শুদ্ধ হবে। (ملفوظات المسيح الموعود) পৃ: ১৩, অনুবাদ, ১৩,১৮, ২০, পৃ: ১৯ এর ২৩ অনুচ্ছেদ)।
খ. মাহিলাদের উপর জুমা ওয়াজিব, জুমা ওয়াজিব হওয়ার জন্য দুইজন লোকই যথেষ্ঠ; এমনকি কোন লোক তার স্ত্রী ব্যতীত কাউকে না পেলে স্ত্রীকে সাথে নিয়ে জুমা পড়া তার উপর ওয়াজিব। ( (ملفوظات المسيح الموعود) পৃ: ৩৫ =৫৭, ও পৃ: ৩৭ অনু: ৬২) ।
গ. অনুরূপভাবে সে সুফীবাদে বিখ্যাত নিরবিচ্ছিন্ন অনবরত চল্লিশ দিনের নির্জন বাস বা বদ্ধ ঘরে একাকীত্বে থাকাকে মনে প্রাণে সমর্থন দেয়, এবং এটাকে বিরাট পূণ্যের কাজ বলে মনে করে। (. AHMADIATS. MOVEMENT.P.39. الأحمدية ولادة جديدة للإسلام পৃ. ৩৫, ৩৬, (ইংরেজি সংস্করণ)}।
৪. রমজানের রোজা সম্পর্কে তাদের মতামত:
ক. ফরজ রোজার ব্যাপারে উদাসীনতা স্বত্বেও সে সুফীদের থেকে ধার করে অনবরত ৮ মাস পর্যন্ত (১৮৭৫-১৮৭৬) নফল রোজা রাখার পদ্ধতি আবিস্কার করে। ( حضرة أحمد পৃ: ৫ (ইংরেজী সংস্করণ))।
খ. তার আরেক অনুসারী তার এ অন্তরীন থাকার ঘটনাকে ফলাও করে প্রচার করতে গিয়ে কিভাবে চল্লিশ দিন পর্যন্ত সুফীদের নির্জনবাসে অবস্থান করে ধন্য হয়েছে তা বিস্তারিত বর্ণনা করেছে। (.(الحركة الأحمدية) পৃ: ৩৫, (ইংরেজী সংস্করণ)।
৫. হজ্জ সম্পর্কে তাদের মতামত:
ক. জন্য তার আকাংখা প্রকাশ না পাওয়ার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে তার মুখপাত্র (মৌলবী সায়ফী কাদিয়ানী তার ইংরেজী বই (ملفوظات المسيحالموعود) এ বলছে, “যার পড়শী ক্ষুধার্ত থাকবে, ফকির থাকবে, তার জন্য হজ্জ করা হারাম, বরং গরিবের প্রতি সমবেদনা এবং পড়শীর রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বকে ইসলাম ফরয হজ্জের উপর স্থান দেয়”। ((ملفوظات المسيح الموعود) পৃ: ৩৮, ফতোয়া ৬৪ (ইংরেজী সংস্করণ)।
খ. ১৩১১ হি: (মোতাবেক ১৮৯৩) সালে তার সাথীরা তাকে নিজে স্বয়ং হজ্জ পালন করতে বললে সে শস্তা দামের জবাব দিল (حتى يأذن الله)]অর্থাৎ তার উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে হুকুম হয় নি। ((حمامة البشرى) পৃ: ১২)।
গ. সে নিজেই তার অন্য বইতে তা লিখছে। “তিনি অর্থাৎ আল্লাহ হিন্দুস্তানের দিকে তাকিয়ে এ (কাদীয়ান)কেই একমাত্র খিলাফতের কেন্দ্রস্থল হিসাবে পেলেন। (. (الاستفتاء) ২৮, ১২)।
ঘ. কাদিয়ানি বলছে “নিশ্চয়ই আমিই হচ্ছি হাজরে আসওয়াদ বা কৃষ্ণ পাথর। যমিনের উপর আমাকে গ্রহণ যোগ্য করা হয়েছে আমার স্পর্শতায় সবার জন্য বরকত নিহিত। (.( الاستفتاء) পৃ: ৪৫)
মির্জা গোলাম আহমেদ
কাদিয়ানির নিজেস্ব কিছু উক্তি তুলে ধরছি পাঠক নিজেই বিচার করবেন। সে কি কোন সুস্থ
মস্তিস্কের লোক ছিল, না কি নির্লজ্জ পাগল ছিল।
০১। অনেক
নবী আগমন করেছে্ কিন্তু কেহই আল্লাহর মারেফাত আমার অগ্রগামী হতে পারেনি। সকল
নবীগণকে যা কিছু দেওয়া হয়েছে তা একাই আমাকে দেয়া হয়েছে। (গোলামের দুরের ছামীন
পৃষ্ঠা ১৮৭ ও ১৮৮)
০২। মির্জা গোলাম আহমেদ কাদিয়ানি বলেন, যে ব্যক্তি আমাকর
বিশ্বাস করেনা সে আল্লাহ ও রাসূল কে বিশ্বাস করে না। (গোলাম আহমেদের হাকিকাতুল অহী
পৃষ্ঠা ১৬৩)।
৩। আমি ঐ আল্লাহর কসম করে বলছি,
যার হাতে আমার প্রাণ, তিনিই আমাকে পাঠিয়েছেন
এবং আমাকে ‘নবী’ বলে নাম দিয়েছেন।
(হাকীকাতুন নুবুওয়াহ, পৃ. ৬৮)
৪। গোলাম আহমেদকে অস্বীকারকারী ব্যক্তি কাফির হোওয়া অনিবার্য
হয়ে পড়ে এবং সে আল্লাহর ঐ বাণীর অন্তর ভুক্ত “এরাই প্রকৃত কাফির”। (বশীর আহমদ
কর্তৃক লিখিত কালিমাতুল ফাছল পৃষ্ঠা ১২০ ও ১৪৭ এবং রিভিউ অফ রিলি-জিওন্স” মাসিক
পত্রিকায় সন্নিবেশিত)।
৫. সুতরাং এতে কোনো সন্দেহ নেই যে,
আমার ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী পৃথিবীতে ভূমিকম্প হওয়া এবং নানান
প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেওয়া আমার নবুওতের নিদর্শন। স্মরণ রাখা উচিৎ, পৃথিবীর এক এলাকাতে আল্লাহর কোনো রূলকে মিথ্যুক সাব্যস্ত করা হলে অন্য
এলাকার অপরাধীরাও তখন পাকড়াও-এর শিকার হয়। (গোলাম আহমেদের হাকিকাতুল অহী পৃষ্ঠা
১৬২।
৬। ভন্ড গোলাম আহমেদের কাদিয়ানি নিজর
বলেন, আমার মাধ্যমে ঈসার রূহ ফুকে দেয়া হয়েছে, যেমন মরিয়মের ফুকে দেয়া হয়েছিল।
রূপকভাবে আমি গর্ভবতী হই। কয়েক মাস পরই যা দশ মাসের উর্ধে্ নহে মরিয়াম হতে
পরিবর্তিত হয়ে ঈসা হয়ে গেলাম। এ পদ্দতিতে আমি মরিয়াম হয়ে গেলাম। (গোলাম কাদিয়ানি
“সফিনায়ে নূহ” পৃষ্ঠা – ৪৭)।
৭. আল্লাহ তাআলা তাঁর নিয়ম অনুযায়ী
কোনো নবী প্রেরণ করার আগ পর্যন্ত আজাব মূলতবি করে রাখেন। …
এখন সে নবীর আগমন হয়ে গেছে। তাই তাদেরকে অপরাধের শাস্তি দান করার
সময়ও এসে গেছে। (তাতিম্মা হাকীকাতুল ওহী, পৃ. ৫২)
৮. আল্লাহ তাঁর নবীকে বিনা সাক্ষ্যে
ছেড়ে দিতে চাননি।-দাফেউল বালা, পৃ.৮ ।
৯. আল্লাহ তাআলা ‘কাদিয়ান’ অঞ্চলকে প্লেগ মহামারী থেকে রক্ষা করবেন।
কেননা এটি তার প্রিয় রাসূলের বিচরণ ক্ষেত্র!-প্রাগুক্ত, পৃ.
১০
১০. প্রকৃত খোদা তিনি,
যিনি কাদিয়ানে আপন রাসূলকে প্রেরণ করেছেন। (দাফেউল বালা, পৃ. ১১; মির্জা মাহমুদকৃত হাকীকাতুন নুবুওয়াহ-এর
সূত্র অবলম্বনে, পৃ. ২১২, ২১৪)
মির্জা সাহেব এগুলি নিজের ভাষায়
ব্যক্ত করেছেন। পাঠক! ইনসাফের সাথে ভেবে দেখুন এবং এসব বাক্যে ভিন্ন কোনো
ব্যাখ্যার অবকাশ আছে কি না নিজেই বিচার করুন।
নতুন ধর্মমত সৃষ্টির কারন কি?
ব্রিটিশেরা ভারতে
মুসলমানদের থেকেই ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল ১৭৫৭ সালে। নবাব
সিরাজদ্দৌলার পতনের পরও মুসলমানগন নানাভাবে নির্জাতিত হয়। কিন্ত তাদের দমিয়ে রাখা
যায়নি। ইংরেজদের বিরুদ্ধে যদগুলি বিদ্রোহ হয়েছে তার মুলে ছিল মুসলিম। তাই তো
ইংরেইজদের পরিপূর্ণ ক্ষমতার সাধ পেতে আরো একশত বছর লেগেছিল। ১৮৫৭ সালের সিপাহী
বিপ্লব মূলত মুসলমানেরাই ঘটিয়েছিল। সেই বিপ্লবের ফলে হাজার হাজার মুসলিম আলেম
শাহাদাত বরণ করেন। যার কারণে মুসলমানদের নিয়ে ব্রিটিশ তেমন স্বস্তিতে ছিলনা।
ফলে এসব সমস্যা পর্যবেক্ষণ করে ব্রিটিশ সরকারকে পরামর্শ দিতে,
স্যার উইলিয়াম হান্টার (১৮৪০-১৯০০খৃ) কে দিয়ে একটি কমিশন গঠন করে
ভারতে পাঠানো হয়। হান্টার কমিশন ব্রিটিশ সরকারকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছিল তার
মধ্যে একটি বড় অধ্যায় ছিল মুসলমানদের কে নিয়ে। তিনি তাঁর লিখিত গ্রন্থ ‘দি ইন্ডিয়ান মুসলমানস’ বইয়ে স্বীকার করেছেন,
‘যখন আমরা অস্ত্রবলে মুসলমানদের নির্মূল করতে চেয়েছি, তখন তারা আমাদের নেতাদের হতবুদ্ধি করে দিয়েছে এবং আমাদের সেনাবাহিনীর
ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে’। তিনি অন্যত্র বলেছেন ‘ভারতে ব্রিটিশ শাসনের জন্য মুসলমানেরা হল স্থায়ী বিপদ স্বরূপ’। হান্টার
কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়, "ভারতীয়
মুসলমানরা কঠোরভাবে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে। তাদের ধর্মগ্রন্থ কোরআনেই নির্দেশ
রয়েছে বিজাতীয়দের শাসন মানা যাবে না এবং শাসকদের জুলুমের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে
জিহাদ করতে হবে”। কমিশন
বুঝতে পারেন জিদাহী চেতনার কারণেই মুসলমানদের পর্যদুস্ত করা যায়নি এবং কোনভাবে
তাদের মধ্যে বিবাদ ঢুকিয়ে দিতে পারলে তারা হীনবল হয়ে পড়বে।
এই জন্য উপমহাদেশে ব্রিটিশ
শাসনের মূল মন্ত্র হল “Divide and Rule” ভাগ
কর এবং শ্বাষন কর। এই জন্য তারা দুজন দালল কে পছন্দ করে। তাদের একজন তাদের হাতে
কেনা গোলাম মির্জ গোলাম আহম্মদ কদিয়ানি। অপর জন হল, মাজার পুজারি ইমাম আহমদ রেযা
খানের বা আলা হযরত নামে পরিচিত।
এই দুই জনই তখন
মুসলমানদের মধ্য অনেক আস্থা-ভাজন ছিল। তাই দুই জনের মাধ্যমে ইসলামে বিভেদ সৃষ্ট
করা খুবই সহজ ছিল। ইংরেজদে চয়েজ খুবই চাতুর্জপূর্ণ ও সময় উপযোগি ছিল। আর তার পূর্ণমাত্রায়
মহাগুদের আস্থার প্রতিফল দান করেন। এবং মুসলমানদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টিতে সহযোগিতা
করবেন”।মির্জা
গোলাম আহমেদ ব্রিটিশের সাজান ফাদে পা দিয়ে। শুধু ভারত উপমহাদেশ নয় গোটা ইসলামী জগৎ
কলংকিত করেছেন।
কেন প্রচার পেল?
১।
উপমহদেশের লোক পীর ভক্ত ছিল: উপমহাদেশের
সকল লোকই ধর্মভীরু। তারা উপমহাদেশে সাধারনত কোন এলাকায় ইসলাম প্রচারে কোন না কোন
ব্যক্তির একক ভুমিকা থাকে. যাকে তারা পীর বলে জানে। তার মৃত্যুর পর তাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়
নানান আজগোবি গল্প কাহিনী, হাজারও কেরামতি আর সরল মনা মানুষগুলি এই বানান আজগোবি
গল্প শুনে তার খাটি ভক্ত হয়ে যায়। আর তাকে দিয়ে শুরু হয় পীর পীর খেলা। এমন কোন অলী
পাওয়া যাবে না, যাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি নেই। পীর কেন্দ্রিক
অতিভক্তি জনিত শির্কি আকিদা হল, আল্লাহর অলীরা মরে না। তারা মানুষের ভাল মন্দ করার
ক্ষমতা রাখে। তারা গায়েব জানেন। তারা কবর থেকে ফয়েজ বরকত দান করে। এভাবে পূর্বের
অলীদের সম্পর্কে তাদের ধারনাও অনেকটা শির্কি। যেমন: হুসাইন বিন মানসুর হাল্লাজ আনবল হক বা আমি আল্লাহ বললেও
কাফির হন না। শামছে তিবরিজী মৃতকে ছেলেকে জীবিত করেছেন ‘আমার হুকুমে জীবিত হও বলে’। মইনুদ্দীন
চিশতি আনা সাগরের পানি শুকিয়ে ফেলেছেন। বড় পীর
মায়ের পেট থেকে ত্রিশপাড়া কুরআন মুখস্ত করে এসেছেন, এক ধমকে কন্যা সন্তান ছেলেতে রূপান্তর করেন এবং কবরে
ফিরিস্তাদের উল্টা প্রশ্ন করেন। হযরত রেফায়ীর
জন্যে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রওজা
থেকে হাত বের করে দিয়েছিলেন। খাজা বাকী
বিল্লাহ তার মুরিদের প্রতি খুশি হয়ে তার আরজি অনুযায়ী তাওয়াজ্জুহ দিয়ে চেহারা
নিজের মত বানিয়ে দিয়েছেন। জুনাইদ বাগদাদি
দুনিয়াতে বসেই জান্নাতের সার্টটিফিকেট দিতে পানতেন। এই সব শুনতে শুনতে তার মধ্যে এক ধরনের বাতির বিশ্বাস জম্ম নেয়। আর তখন
ভাল মন্দ বাছাই করার মত বোধ শক্তি হারিয়ে ফেলে। ঠিক তখনই কাদিয়ানির মত বাতিল
দাওয়াত কে হক মনে করে গ্রহন করে।
বর্তমানে
মুসলিমরা যে সকল শির্ক মিশ্রিত আকিদা ও আমলে জড়িত তার অন্যতম কারণ হচ্ছে সুফীবাদের
বিভ্রান্তি। এই পঁচা মতবাদের কারণেই মুসলিম জাতি শির্কের
মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে। আল্লাহর মনোনিত ইসলামের মূল বিশ্বাস
তাওহীদ থেকে সরে গিয়ে সুফীবাদের বেড়াজালে আটকে পড়ে শির্কি কাজে লিপ্ত। এই
মতবাদের কারনে হাজারও মানুষ আজ শির্ককে ইবাদাত মনে করছে।
হাজারও মানুষ ইবাদাতের জন্য কঠোর সাধনা করছে অথচ শির্ক মিশ্রিত আকিদা ও আমলে জন্য
পন্ডশ্রম হচ্ছে।
আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে অসংখ্য সুফী তরীকা আত্মপ্রকাশ। শুধু এদের তরিকা ভিন্ন ভিন্ন নয়, এদের আমল, জিকিরে বাক্য ও পদ্দতি ও ভিন্ন
ভিন্ন। অনেক ক্ষেত্র আকিদা ও ভিন্ন ভিন্ন। তাই কাদিয়ানির আগমনে মনে করছে এটাও মনে
হয় একটা তরিকা। সচেতণ আলেম সমাজ ছাড়া কাদিয়ানি মতবাদ বুঝ ছিল কষ্টকর।
২।
ইসলামেন জ্ঞানের অভাব: সঠিক জ্ঞান না থাকলে আসল বা নকল চেনার কায়দা নেই।
যে লোক নিজের খবর রাখে না সে কি করে অন্যের খবর নিবে। শির্কের মুল কারন এ সম্পর্কে
অজ্ঞতা।
বর্তমানে সমাজের অধিকাংশ মুসলিমের ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানের এতই অভাব যে, ইসলাম,
ঈমান, কুফর, নিফাক,
মুনাফেকি, ছোট শির্ক , বড় শির্কসহ ইসলামের মৌলিক বিষয় সম্পর্কে কবছুই জানেনা। ইসলামের কৃষ্টি কালচার, বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্য এত অনেক দুরের ব্যাপার। একজন মুসলিমের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অধিক প্রয়োজনীয় দিক হল ঈমান আর ঈমানের মূল বিষয়
হল তাওহীদ অপর পক্ষে তাওহীদের বিপরীত হল শির্ক যা ঈমান ভঙ্গের মূল উপাদান। হুদ আ: যখন আহক্বাফ বাসিদের আহবান করেছিলন। যখন
তারা নিজেদের অজ্ঞতার কারনে আজাব দাবি
করেছিল।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন:
قَالَ إِنَّمَا ٱلۡعِلۡمُ
عِندَ ٱللَّهِ وَأُبَلِّغُكُم مَّآ أُرۡسِلۡتُ بِهِۦ وَلَـٰكِنِّىٓ أَرَٮٰكُمۡ
قَوۡمً۬ا تَجۡهَلُونَ (٢٣)
অর্থ:
সে বললো,
এ ব্যাপারের জ্ঞান শুধু আল্লাহরই আছে৷ যে পয়গাম
দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে আমি সেই পয়গাম তোমাদের কাছে পৌছিয়ে দিচ্ছি৷ তবে আমি দেখছি, তোমরা
অজ্ঞতা প্রদর্শন করছো। (সুরা আহকাফ ৪৬:২৩)।
ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানের অভাবে মানুষ আল্লাহর আযাব ও দাবি করতে
পারে। এমনকি অসংখ্য অগণিত মুসলিমের অবস্থা এতই নাজুক, তারা কেবলই নামে মাত্র মুসলিম অথবা মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করছে বলে
মুসলিম। কিন্তু
ইসলাম কি তারা তা জানে না। শির্ক ও তাওহীদের মধ্যে পার্থক্যও তারা নির্ধারণ করতে পারে না। তাই
কাদিয়ানিদের দাওয়াত ইসলাম ভেবে গ্রহন করা অসম্ভব কিছু নয়। বাস্তবে তাই-ই ঘটেছে।
৩। ধর্মীয় শব্দ ব্যবহার এবং মুসলিম বলে পরিচয় দান করা:
কাদিয়ানী ধর্মমতের সাথে ইসলামী আকিদা বিশ্বাসের কোন মিল
নেই। কিন্তু ইসলামে পারিভাসিক
শব্দ যেমন: নামাজ, রোজা, হজ্জ, জাকাত. নবী, রাসূল, কুরআন, হাদিস
ইত্যাদি সবই কাদিয়ানি সম্প্রদায় ব্যবহার করে তাই সরল অজ্ঞ ও ইসলাম সম্পর্কে সঠিক
জ্ঞানের অভাবি মুসলমান সহজেই ইসলাম মনে করে কাদিয়ানি হয়েছে। মুসলমান যেমন ধর্মীয়
আচার আচরন পালন করে তারা ও তেমনি যেমন ধর্মীয় আচার আচরন পালন করে কাজেই না বুঝে
ইসলাম মনে করে কাদিয়ানি হওয়াটা স্বাভাবিক।
৪। ইংরেজদের পিষ্টপোষকতা: ব্রিটিশ
উপনিবেশবাদীদের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সাহায্যে মীর্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এ
দলটি প্রতিষ্ঠা করেছিল। যারা ১৮৮৯ সালে ব্রিটিশের আনুগত্যের প্রতি নিষ্ঠাবান বলে
সনদ লাভ করে। পূর্বেই তার জেনেছি, সে
জীবনের সব সময়ই সে বিভিন্ন নতুন নতুন দাবী নিয়ে বের হত,
কখনো, ঈসা, আবার কখনো
মাহদী, আবার কখনো নবী, আবার কখনো ধর্ম
সংস্কারক, আবার কখনো বা সকল ধর্মের বিচারক ইত্যাদি দাবীতে সে
মুখরিত ছিল।
বহু বিতর্ক সভা হয়েছে সর্বত্র তারা পরাজিত হয়েছে। কয়েকবার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা
সংগঠিত হয়েছে। প্রত্যেক বারই ব্রিটিশ সরকার তাদের রক্ষার্থে জোরালো ভূমিকা
রেখেছে।যেহেতু কাদিয়ানি ব্রিটিশদের
বিরুদ্ধে জ্বিহাদ বা আযাদী আন্দোলন কে হারাম ঘোষনা দিয়ে দিল। আবার ব্রিটিশ
সরকার মুসলিম এবং কাদিয়ানীদের সংঘাতের মধ্যে বরাবরই কাদিয়ানীর পক্ষ নিয়েছে।তান
ফলোআপে আমরা এখনও দেখি ব্রিটিশের অনুসরণে কাদিয়ানীদের কে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ সকল
খৃষ্টান সম্প্রদায় তাদের পক্ষ নিচ্ছে। আলেমগণ তাকে মাতাল জ্ঞানে ত্যাগ করাই
সমীচিন ছিল, বরং তাকে শরীয়তের
কাঠগড়ায় আসামী করে শরীয়তের হুকুম অনুসারে তার ফয়সালা করা জরুরী ছিল কিন্তু তখন
ছিল উপনিবেশবাদী ব্রিটিশ সরকারের রাজত্ব, মূলত তারাই তাকে
এগুলো বলতে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং তারা তাকে সব রকম সহযোগিতা ও সহানুভূতি দ্বারা
সর্বদা রক্ষা করেছে সেহেতু আলেমগণ তার বিরুদ্ধে মোনাজেরা
বা বিতর্কে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন পথ পাননি। ফলে সে
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে জ্বিহাদ বা আযাদী
আন্দোলন কে হারাম ঘোষনা দিয়ে দিল। এবং ১৯০০ সাথে ভারতস্থ ব্রিটিশ শাসনের অধীন ধর্মীয় দল হিসাবে
নিবন্ধিত হয়।
সিদ্ধান্ত: কাদিয়ানিরা অমুসলিম এ বিষয়ে মুসলিম বিশ্ব একমত।
বিশ্বের ১৪৪টি দেশের ইসলামী সংগঠন ‘রাবেতায়ে-আলমে-আল-ইসলামি’’ ঊনিশ এপ্রিল ঊনিশ শত চুয়াত্তর সালে ‘মক্কা ঘোষণায়’’ কাদিয়ানীদের ‘কাফের’ সাব্যস্ত করেছে। ইসলামি সম্মেলন
সংস্থা (ওআইসি) ১৯৮৮ সালের ‘বাগদাদ ঘোষণায়’ কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষণা
করেছে। পৃথিবীর অপরাপর ৪৮ টি দেশ, রাবেতা, এবং
ওআইসির ন্যায়
কাদিয়ানীদের অমুসলিম ও স্বতন্ত্র ধর্মের অনুসারী হিসাবে ঘোষণা করাই যথেষ্ট বলে
বিবেচিত হবে।
0 Comments
Thanks for your comment