মৃত ব্যক্তির জন্য আমাদের করণীয় এবং বর্জনীয়/মৃত ব্যক্তির জন্য যে সব কাজ করা নাজায়েয ও বিদ’আত
.নিম্নে কয়েকটি আমলের কথা উল্লেখ করব যা দ্বারা মৃত ব্যক্তি উপকৃত হবে অথচ সে এসব আমল করে যায়নি,,
--------------------------
(১)মৃত ব্যক্তির জন্য মুসলমানদের দু‘আ এবং আল্লাহর নিকট তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করাঃ -
এব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে অনেক দলীল রয়েছে। আল্লাহ তায়া‘লা বলেন:
• “তারা (মু’মিনগণ) বলে: “হে আমাদের পালনকর্তা আমাদেরকে এবং আমাদের পূর্বে যারা ঈমান এনেছে, তাদেরকে ক্ষমা করো। আর ঈমানদারদের বিরোদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখো না।” (সূরা হাশরঃ ১০)
আল্লাহ তায়ালা মৃত বা জীবিত পিতা-মাতা ও মুমিদের জন্য দু‘আ করার পদ্ধতি শিক্ষা দিয়ে বলেনঃ
• “হে আমাদের প্রভু! রোজ কিয়ামতে আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সকল মুমিনকে ক্ষমা করে দিন।” (সুরা ইবরাহীমঃ৪১)
এছাড়া আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পিতা-মাতার জন্য দূ‘আ করার বিশেষ নিয়ম শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেনঃ
• “এবং তুমি বল, হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।” (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ২৪)
মা-বাবা এমন সন্তান রেখে যাবেন যারা তাদের জন্য দোয়া করবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ ».
অর্থ: মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩ টি আমল বন্ধ হয় না-১. সদকায়ে জারিয়া ২. এমন জ্ঞান-যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় ৩. এমন নেক সন্তান- যে তার জন্য দু‘আ করে [সহিহ মুসলিম: ৪৩১০]
হাদীসে যে সমস্ত দলীল রয়েছে তা থেকে আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত উসমান বিন আফফান (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
# উসমান (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সাঃ) মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার কবরের পার্শ্বে দাঁড়াতেন এবং বলতেন, “তোমরা তোমাদের ভায়ের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার জন্য ঈমানের উপর অবিচলতা ও দৃঢ়তা কামনা কর, কেননা এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে।”
তাই সুন্নাত হচ্ছে, মৃত ব্যক্তিকে কবরে দেয়ার পর তার কবরের পার্শ্বে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তার জন্য প্রশ্নোত্তর সহজ করে দেয়া, প্রশ্নোত্তর দিতে সমর্থ হওয়ার জন্য দো‘আ করা।
"“হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ্ আপনি তাকে (প্রশ্নোত্তরের সময়) স্থির রাখুন।”
এছাড়া কবর যিয়ারতের ব্যাপারে যে সমস্ত দু‘আ হাদীসে এসেছে, তাতে একথারই প্রমাণ রয়েছে যে, মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ করলে সে দু‘আর মাধ্যমে সে উপকৃত হবে।
মূলত: জানাযার নামায প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ স্বরূপ।
(২) মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে রোজা রাখাঃ
তবে এক্ষেত্রে ফরযের এবং মানতের রোজা উদ্দেশ্য। তার পক্ষ থেকে নফল রোজা রাখার পক্ষে কোন দলীল নাই। মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে রোজা রাখা বৈধ হওয়ার দলীল হলো
‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সওমের কাযা যিম্মায় রেখে যদি কোন ব্যক্তি মারা যায় তাহলে তার অভিভাবক তার পক্ষ হতে সওম আদায় করবে।
[সহিহ বুখারি:১৯৫২, মুসলিম ১৩/২৭, হাঃ ১১৪৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৮১২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১৮২৫]
# আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করল এমতাবস্থায় যে তার উপর রোজা ওয়াজিব ছিল। তবে তার পক্ষ থেকে তার ওয়ারিসগণ রোজা রাখবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
মা-বাবার রোজা কাযা থাকলে এবং রোজা রাখার মান্নত করে গেলে সন্তান তার পক্ষ থেকে পূরণ করবে। ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,
# কোন মহিলা রোজা রাখার মান্নত করেছিল, কিন্তু সে তা পূরণ করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করল। এরপর তার ভাই এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলে তিনি বলরেন, তার পক্ষ থেকে সিয়াম পালন কর। [সহীহ ইবন হিববান:২৮০]
(৩)মৃত ব্যাক্তির পক্ষ থেকে মান্নত হজ্জ করাঃ
মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে হজ্জ করলে তা আদায় হবে এবং মৃত ব্যক্তি উপকৃত হবে। ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,
# জুহাইনা গোত্রের একজন মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আগমণ করে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা হজ্জ করার মানত করেছিলেন কিন্তু তিনি হজ্জ সম্পাদন না করেই মারা গেছেন। এখন আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করতে পারি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি তোমার মায়ের পক্ষ থেকে হজ্জ কর। তোমার কি ধারণা যদি তোমার মার উপর ঋণ থাকতো তবে কি তুমি তা পরিশোধ করতে না ? সুতরাং আল্লাহর জন্য তা আদায় কর। কেননা আল্লাহর দাবী পরিশোধ করার অধিক উপযোগী’’ [সহীহ বুখারী: ১৮৫২]
তবে মা-বাবার পক্ষ থেকে যে লোক হজ্জ করতে চায় তার জন্য শর্ত হলো সে আগে নিজের হজ্জ করতে হবে।
(৪)ঋণ পরিশোধ করা
মা-বাবার কোন ঋণ থাকলে তা দ্রুত পরিশোধ করা সন্তানদের উপর বিশেষভাবে কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋণের পরিশোধ করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
# ‘‘মুমিন ব্যক্তির আত্মা তার ঋণের সাথে সম্পৃক্ত থেকে যায়; যতক্ষণ তা তা তার পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হয়”। [সুনান ইবন মাজাহ:২৪১৩]
ঋণ পরিশোধ না করার কারণে জান্নাতের যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়; এমনকি যদি আল্লাহর রাস্তায় শহীদও হয় । হাদীসে আরো এসেছে,
# যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দার ঋণ পরিশোধ না করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। [নাসায়ী ৭/৩১৪; তাবরানী ফিল কাবীর ১৯/২৪৮; মুস্তাদরাকে হাকিম ২/২৯]
(৫) মা-বাবার ভাল কাজসমূহ জারী রাখা
মা-বাবা যেসব ভাল কাজ অর্থাৎ মসজিদ তৈরী করা, মাদরাসা তৈরী করা, দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরীসহ যে কাজগুলো করে গিয়েছেন সন্তান হিসাবে তা যাতে অব্যাহত থাকে তার ব্যবস্থা করা। কেননা এসব ভাল কাজের সওয়াব তাদের আমলনামায় যুক্ত হতে থাকে। হাদীসে এসেছে,
# ‘‘ভাল কাজের পথপ্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে’’। [সুনান আততিরমীযি : ২৬৭০]
# যে ব্যক্তির ইসলামের ভাল কাজ শুরু করল, সে এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে। অথচ তাদেও সওয়াব থেকে কোন কমতি হবে না’’ [সহীহ মুসলিম:২৩৯৮]।
(৬) কবর যিয়ারত করা
সন্তান তার মা-বাবার কবর যিয়ারত করবে। এর মাধ্যমে সন্তান এবং মা-বাবা উভয়ই উপকৃত হবে। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
# আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম,অত:পর মুহাম্মাদের মায়ের কবর যিয়ারতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখন তোমরা কবর যিয়রাত কর, কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয় [সুনান তিরমীযি :১০৫৪]।
# যিয়রাত কর, কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয় [সুনান তিরমীযি :১০৫৪]।
কবর যিয়ারত কোন দিনকে নির্দিষ্ট করে করা যাবে না। কবর যিযারত করার সময় বলবে,
# কবরবাসী মুমিন-মুসলিম আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক । নিশ্চয় আমরা আপনাদের সাথে মিলিত হবো। আমরা আল্লাহর কাছে আপনাদের এবং আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। [সুনান ইবন মাজাহ :১৫৪৭]
(৭)কোন গুনাহের কাজ করে গেলে তা বন্ধ করা
মা-বাবা বেচে থাকতে কোন গুনাহের কাজের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে তা বন্ধ করবে বা শরীয়াহ সম্মতভাবে সংশোধন করে দিবে। কেননা আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
# এবং যে মানুষকে গুনাহের দিকে আহবান করবে, এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ গুনাহ তার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাদের গুনাহ থেকে কোন কমতি হবে না’’ [সহীহ মুসলিম:৬৯৮০]।
(৮)মা-বাবার পক্ষ থেকে মাফ চাওয়া
মা-বাবা বেচে থাকতে কারো সাথে খারাপ আচরণ করে থাকলে বা কারো উপর যুলুম করে থাকলে বা কাওকে কষ্ট দিয়ে থাকলে মা-বাবার পক্ষ থেকে তার কাছ থেকে মাফ মাফ চেয়ে নিবে অথবা ক্ষতি পূরণ দিয়ে দিবে। কেননা হাদীসে এসেছে,
# আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি জান নিঃস্ব ব্যক্তি কে? সাহাবীগণ বললেন, আমাদের মধ্যে যার সম্পদ নাই সে হলো গরীব লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সে হলো গরীব যে, কিয়ামতের দিন নামায, রোযা ও যাকাত নিয়ে আসবে অথচ সে অমুককে গালি দিয়েছে, অমুককে অপবাদ দিয়েছে, অন্যায়ভাবে লোকের মাল খেয়েছে, সে লোকের রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। কাজেই এসব নির্যাতিত ব্যক্তিদেরকে সেদিন তার নেক আমল নামা দিয়ে দেয়া হবে। এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। [সুনান আততিরমিযি :২৪২৮]
সুতরাং এ ধরনের নিঃস্ব ব্যক্তিকে মুক্ত করার জন্য তার হকদারদের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়া সন্তানের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে মা বাবা এবং অন্যান্য মৃত স্বজনদের জন্য আমলগুলো করার তাওফীক দান করুক।
বিস্তারিত, https://www.youtube.com/watch?v=Zx1jlek81qA
বিস্তারিত, দেখতেঃhttps://www.youtube.com/watch?v=xsg91DX8E5E
মৃত ব্যক্তির জন্য যে সব কাজ করা নাজায়েয ও বিদ’আত
.
কোনো
ব্যক্তির মৃত্যুর পর থেকে দাফন করা ও দাফনের পর যত সব কাজ কালক্রমে নতুন
নতুন উদ্ভাবিত হয়েছে তা সবই বিদ’আত ও নাজায়েয। এ সকল কাজ ব্যক্তি বিশেষ
কর্তৃক সম্পূর্ণ নব উদ্ভাবিত। এসব কাজের কোন শারঈ ভিত্তি নেই। অর্থ্যাৎ
আল্লাহর রাসূল যেমন এসব কাজ করেছেন বলে কোন প্রমাণ নেই তেমনি সাহাবায়ে
কেরাম এসব কাজ করেছেন বলে কোন ভিত্তি নেই। উল্লেখ্য যে কাজ আল্লাহর রাসূল
কিংবা তাঁর সাহাবাগণ হতে পাওয়া যাবে না তা কোন শারঈ কাজ বলে গণ্য হবে না।
মৃত ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে যে সমস্ত বিদ’আত সমাজে প্রচলিত আছে তা নিম্নে
বর্ণনা করা হলঃ
.
১) মৃত ব্যক্তির জন্য মাগফিরাত কামনার নামে তাহলীল পড়ানো।
.
২) কুরআন খতম পড়ানো অথবা মৃত ব্যক্তির চার পাশে বসে কুরআন পাঠ করা।
.
৩) গোসলের গরম পানি দেওয়ার জন্য পাক ঘরের চুলা বাদ দিয়ে বাইরে চুলা তৈরি করে গরম পানি দেয়া।
.
৪)
মৃত ব্যক্তিকে যেখানে গোসল দেওয়া হয় সে স্থান ৪ দিন কিংবা ৪০ দিন পর্যন্ত
বেড়া দিয়ে সংরক্ষণ করা এবং রাতের বেলায় সেখানে মোম, হ্যারিকেন বা
বৈদ্যুতিক বাতি দিয়ে আলোকিত করে রাখা।
.
৫) জানাযা নিয়ে যাওয়ার সময় আল্লাহু রাব্বী, মুহাম্মাদুন নাবী কিংবা কালিমা শাহাদাত পাঠ করা।
.
৬) জানাযা কবর স্থানে নিয়ে যাওয়ার সময় খাটিয়ার উপর আগর বাতি জ্বালানো এবং জানাযার যাত্রীদের উপর গোলাপ জল ছিটানো।
.
৭) কবর স্থানে জানাযা নেয়ার সময় খাটিয়াকে ছাতা বা কোনো আচ্ছাদন দিয়ে ছায়াদান করে নিয়ে যাওয়া।
.
৮) জানাযার সালাত শেষে “এ মানুষটি কেমন ছিল” এরূপ প্রশ্ন করা এবং উপস্থিত সবাই “বেশ ভালো ছিল” এরূপ কথা বলা।
.
৯) জানাযার সালাতের পূর্বে মৃত ব্যক্তির স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেয়া।
.
১০) জানাযা পড়ানোর সময় ইমামের একখন্ড সাদা কাপড় জায়নামায হিসেবে ব্যবহার করা যা মূলত কাফনের কাপড়ের অংশ বিশেষ।
.
১১) জানাযার সালাত পড়ার পর পুনরায় খাটিয়ার সামনে সম্মিলিত দুআ করা, কিয়াম করা, সালাত ও সালাম পেশ করা।
.
১২) জানাযার সালাতের পর মৃত ব্যক্তিকে শেষ বারের মত দেখার জন্য মুখের কাফন খোলা।
.
১৩) কাফনের উপর যে কোনো রকমের দুআ লিখে দেয়া কিংবা দুআ লিখিত কাপড় খন্ড কাফনের সাথে লাগিয়ে দেয়া।
.
১৪) কোনো কাপড় খন্ডের উপর কালিমা লিখে ঐ কাপড় খন্ড কবরের ভেতর মৃতের ডান পাশে মুখ বরাবর কবরের দেয়ালে টাঙ্গিয়ে দেয়া।
.
১৫) কবরের উপর পুস্পস্তবক অর্পণ করা।
.
১৬) দাফন করার সময় প্রথম তিন অঞ্জলি মাটি দেওয়ার ক্ষেত্রে “মিনহা খলাক নাকুম ওয়া ফিহা নুয়িদূকুম” কুরআন মাজিদের এ আয়াত পাঠ করা।
.
১৭)
দাফনের পর দুআ করার পূর্বে একবার সূরা ফাতিহা, তিনবার সূরা ইখলাস, একবার
সূরা ফালাক, একবার সূরা নাস এভাবে কুরআন মাজীদ থেকে কোনো সূরা বা আয়াত পাঠ
করা।
.
১৮) দাফন ও দুআ শেষে সবাই চলে আসার পর একজন বসে কবর তালক্বীন করা।
.
১৯) কবর পাকা করা ও তাতে মৃত ব্যক্তির নাম ফলক করা।
.
২০) কবরের উপর ঘর তৈরি করা বা মাযার নির্মাণ করা।
.
২১) মৃত্যুর পর চার দিন পর্যন্ত কিংবা চল্লিশ দিন পর্যন্ত বিভিন্ন ফাতিহা পড়ানো।
.
২২) মৃত ব্যক্তির বাড়িতে তিন দিন পর্যন্ত আত্মীয় স্বজন কর্তৃক পালাক্রমে খানা পাঠানো।
.
২৩) মৃত্যুর পর চার দিন বা চল্লিশ দিন পর্যন্ত প্যান্ডেল টাঙ্গিয়ে কবর পাহারা দেয়া।
.
২৪) মৃত ব্যক্তির বাড়িতে তিন পর্যন্ত চুলা না জ্বালানো ও খানা পাক না করা।
.
২৫)
মৃত ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিত্ব কিংবা জাতীয় নেতা নেত্রী হলে অথবা
সামরিক ব্যক্তি হলে দাফনের সময় তোপধ্বনি করা ও যুদ্ধের বাজনা বাজানো।
.
২৬) জানাযার সালাতের সময় জুতা বা স্যান্ডেল পাক থাকলেও খুলে রাখা। বরং জুতা স্যান্ডেল খুলে না রাখাটাই হল সুন্নাহ।
.
২৭) মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার সময় আযান দেয়া।
.
২৮) নেককার বা বুযুর্গ ব্যক্তি হিসেবে কোন কবরে বিছানা বালিশ দেয়া।
.
২৯) মৃত্যুর পূর্বেই কবর খনন করে রাখা।
.
৩০)
মৃত ব্যক্তির কাযা নামায থাকলে কিংবা মৃত ব্যক্তি বেনামাযী হলে তার
নামাযের আর্থিক কাফফারা হিসাব করে কাফফারা আদায় করা এবং মৃত ব্যক্তি গরীব
লোক হলে কাফফারার পরিবর্তে একটি কুরআন মাজীদ কাউকে হাদীয়া প্রদান করে
কাফফারা দূরীভূত করা।
.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর এক খুতবায় বলেছেনঃ
.
“নিশ্চয়ই
সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মাদের আদর্শ। আর
সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল (দ্বীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব
উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদ’আত এবং প্রত্যেক বিদ’আত হল ভ্রষ্টতা এবং
প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম”।
.
সূত্রঃ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৩৫ ।। সুনান আন নাসায়ী, হাদীস নং ১৫৬০।(https://medium.com/@umarbinkhattab/)
আমাদের সমাজে যত বিদআত প্রচলিত তার অধিকাংশই মৃত ব্যক্তি কেন্দ্রিক । আজ আমরা মৃত ব্যক্তি কেন্দ্রিক বিদআত গুলোকে সংক্ষেপে তুলে ধরা ।
১. মৃত্যু শয্যায় শায়িত ব্যক্তির মাথার নিকট কুরআন রাখা ।
২. মৃত্যু শয্যায় শায়িত ব্যক্তিকে কিবলামুখী করা ।
৩. মৃত্যু শয্যায় শায়িত ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন বা অন্য কোন সূরা পাঠ করা ।
৪. মৃতব্যক্তির নিকট কুরআন তিলাওয়াত করা ।
৫. মৃত ব্যক্তির নখ ও নাভির নীচের চুল কাটা ।
৬. মৃত ব্যক্তির পায়ুপথে , নাকে তুলা বা মাটি বা অন্য কিছু দিয়ে দেয়া । তবে কারণবশতঃ দেয়া যেতে পারে ।
৭. মৃত ব্যক্তির দু’চোখে মাটি রাখা ।
৮. মৃত ব্যক্তি দাফন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তার পরিবারের খানা-পিনা না করা ।
৯. নির্দিষ্ট সময়ে ক্রন্দন করা ।
১০. মৃত ব্যক্তির জন্য চিন্তিত হয়ে দাড়ি ছেড়ে দেয়া , অতঃপর পূনরায় কেটে ফেলা ।
১১. গোসল দানকারী কর্তৃক প্রত্যেকটি অংগ গোসল দেয়ার সময় যিকির করা ।
১২. কাফন পরানোর সময় ও খাটলিতে করে নেয়ার সময় আওয়াজ করে যিকির করা , কুরআন তিলাওয়াত করা ।
১৩. যেখানে গোসল দেয়া হয়েছে তিন বা সাত রাত সূর্যাস্তের সময় থেকে সূর্য উদয় পর্যন্ত বাতি বা চেরাগ জ্বালিয়ে রাখা ।
১৪. মহিলার ক্ষেত্রে তার দু’স্তনের মাঝে চুল রেখে দেয়া ।
১৫. কাফনের উপর দোয়া লিখা ।
১৬. খাটলির প্রতিটি কোনকে দশ কদম করে বহন করা ।
১৭. খাটলির পেছনে উচ্চঃস্বরে দুআ করার জন্য আহবান করা ।
১৮. ফুলের তোড়া বা ফুল অথবা মৃত ব্যক্তির ছবি বহন করা ।
১৯. এরুপ বিশ্বাস রাখা যে , সৎ ব্যক্তি হলে তার কফিন হালকা হয় ।
২০. দাফনের পূর্বে মানুষের ধারণায় মর্যাদা সম্পন্ন স্থানে কফিন রাখা এবং পবিত্র স্থান মনে করে দাফনের পূর্বে কোন স্থানে রেখে ফুল দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করা ।
২১. কফিন বের করার সাথে সাথে কিছু সাদাকাহ বের করা ।
২২. কফিনের পিছনে চিৎকার করে এরুপ বলা – আপনারা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন , আল্লাহ আপনাদেরকে ক্ষমা করবেন ।
২৩. জানাযার সালাতের পূর্বে বা পরে বা দাফনের পরক্ষণে মৃতের প্রশংসা মূলক কিছু বর্ণনা করা ।
২৪. নাপাকি না থাকা সত্ত্বেও জানাযার সালাতের সময় জুতা খুলে রাখা । অতঃপর তার উপরে দাঁড়ানো ।
২৫. ইমাম সাহেব কর্তৃক পুরুষদের মাঝ বরাবর আর মহিলাদের বুক বরাবর দাঁড়ানো ।
২৬. জানাযার সালাত আদায় করা হয়েছে তা জানার পরেও পুনরায় গায়েবানা জানাযা আদায় করা ।
২৭. সানা (জানাযার সালাত আরম্ভের দুআ পড়া) পাঠ করা ।
২৮. জানাযার সালাতে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পাঠ করা হতে বিরত থাকা ।
২৯. দাফনের পূর্বে মৃতের খাটলির চারদিকে যিকির করা ।
৩০. কবরে প্রবেশ করানোর সময় আযান দেয়া ।
৩১. কবরে নামানোর সময় কবরের মাথার (উত্তর) দিক হতে বা সাইড দিয়ে নামানো ।বরং কবরের পায়ের দিক দিয়ে নামাতে হবে ।
৩২. কবরে মৃতের মাথার নিচে বালিশ বা অন্য কিছু দেয়া ।
৩৩. কবরে রাখার পর তার উপর গোলাপ জল ছিটিয়ে দেয়া ।
৩৪. সূরা ফাতিহা , আন-নাস , আল-ফালাক , আল-ইখলাস , আন-নাসর , আল-কাফেরুন , আল-ক্বদর পাঠ করা ।
৩৫. মৃতের মাথার নিকট সূরা ফাতিহা পাঠ করা এবং তার পায়ের নিকট সূরা বাক্বারার প্রথম অংশ পাঠ করা ।
৩৬. জানাযার সালাত আদায়ের পর বা পূর্বে ভাল লোক ছিলেন মর্মে উপস্থিত ব্যক্তিদের থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ করা ।
৩৭. কবরে রাখার সময় অথবা মাটি দেয়ার সময় এই আয়াত পাঠ করা – মিনহা খলাক্বনাকুম , ওয়া ফিহা নুঈদুকুম , ওয়া মিনহা নুখুরজুকুম তা-র-তান উখ-র ।
৩৮. কবরের নিকটে সাদাকাহ করা ।
৩৯. মাথার দিক দিয়ে কবরে পানি ঢালা ।অতঃপর চক্কর দিয়ে অতিরিক্ত পানি তার মধ্যখানে ঢেলে দেয়া ।
৪০. মহিলার কবরের উপরে দুটি পাথর পুঁতে দেয়া ।
৪১. মৃতের পরিবারের নিকট হতে মেহমানদারী গ্রহণ করা ।
৪২. শোক বা সমবেদনা জানানোর জন্য কবর বা অন্য কোন স্থানে একত্রিত হওয়া ।
৪৩. মৃত্যুর পূর্বে এরুপ অসিয়্যত করে যাওয়া যে , তার মৃত্যুর পরে যেন খানা তৈরি করে মেহমানদারী করা হয় ।
৪৪. মৃত্যুর প্রথম দিন বা চতুর্থ দিনে বা সপ্তম দিনে বা চল্লিশ দিন বা বছর পুর্তিতে কোন আয়োজন করা এবং মেহমানদারী গ্রহণ করা ।
৪৫. মৃতের পরিবারের নিকট হতে প্রথম বৃহস্পতিবারে খাদ্য গ্রহণ করা ।
৪৬. মৃতের পরিবারের মৃত্যু কেন্দ্রিক খানা-পিনার দাওয়াত গ্রহণ করা ।
৪৭. কিছু মাদ্রাসার ছাত্র বা মৌলভী সাহেবদেরকে দাওয়াত দিয়ে কুরআন খতম করানো । অতঃপর তাদেরকে হাদীয়া হিসেবে টাকা প্রদান করা , অথবা কবরের নিকট কুরআন খতম করানো ।
৪৮. মৃত ব্যক্তির পছন্দের খাদ্য সাদাকাহ করা ।
৪৯. কবরের উপর খিমা টাঙ্গানো ।
৫০. কবরের নিকট চল্লিশ দিন-রাত্রি যাপন করা ।
৫১. মৃত্যুর পূর্বেই কবর খনন করা ।
৫২. সময় নির্দিষ্ট করে কবর যিয়ারাত করা ।
৫৩. প্রতি জুমআর দিনে মাতা-পিতার কবর যিয়ারাত করা ।
৫৪. আশুরার দিনে কবর যিয়ারাত করা ।
৫৫. ১৫ই শাবানের রাতে কবর যিয়ারাত করা এবং কবরের নিকট আলো জ্বালানো ।
৫৬. দু’ঈদ , রাজাব , শাবান ও রামাদ্বান মাসে (বিশেষ করে সাতাশে রাতে) খাস করে কবরস্থানে যাওয়া ।
৫৭. উদ্দেশ্যমূলকভাবে সোম ও বৃহস্পতিবারে কবর যিয়ারাত করা ।
৫৮. যিয়ারাতের জন্য তায়াম্মুম করা ।
৫৯. কবরস্থানে সূরা ইয়াসীন পাঠ করা ।
৬০. কবরের নিকট ১১ বার সূরা ইখলাস পাঠ করা ।
৬১. কবরের মাঝে লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ আওয়াজ করে বলা ।
৬২. নাবীগণের কবরের উদ্দেশ্যে অন্যের মাধ্যমে সালাম প্রেরণ করা ।
৬৩. অজ্ঞাত ব্যক্তি বা অজ্ঞাত শহীদের কবর যিয়ারাত করা ।
৬৪. কবরের নিকটে কুরআন রাখা ।
৬৫. কবরের উপরে ঘর নির্মাণ করা।
৬৬. সালাত ও কুরআন তেলাওয়াতের ন্যায় ইবাদাতের সাওয়াব মুসলিম মৃত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে হাদীয়া দেয়া ।
৬৭. নাবী ও নেককারদের কবরের নিকট দুআ কবুল করা হয় এরুপ বিশ্বাস করা ।
৬৮. দুআ কবুল হবে এই আশায় কবরের নিকট যাওয়া ।
৬৯. কবরের আশ-পাশের গাছ ও পাথরকে পবিত্র মনে করা এবং এরুপ বিশ্বাস রাখা যে , যে ব্যক্তি সেগুলোর ক্ষতি সাধন করবে তার বিপদ হবে ।
৭০. নাবী ও নেককারদের কবর যিয়ারাতের উদ্দেশ্যে সফর করা ।
৭১. কবরকে কারুকার্য করা ।
৭২. কবরস্থানে কুরআন বহন করে নিয়ে যাওয়া এবং তা থেকে মৃতের জন্য পাঠ করা ।
৭৩. কবরের পার্শ্ব দিয়ে প্রাচীর নির্মাণ করা ।
৭৪. বরকত নেয়ার উদ্দেশ্যে কবরের উপর বাতি , কাপড় নিক্ষেপ করা ।
৭৫. কবরকে চুমু দেয়া ও স্পর্শ করা ।
৭৬. কবরের মাটি পেট ও পিঠের সাথে লাগানো ।
৭৭. কবরের নিকট যবেহ করা বা কুরবানী করা ।
৭৮. কবরের নিকট সালাত আদায় করা ।
৭৯. কবরের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করা ।
৮০. কবর হতে প্রত্যাবর্তনের সময় (পেছন না দেখিয়ে) উল্টাভাবে হেঁটে আসা ।
৮১. কবরবাসীকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য অসিলা ধরা ।
৮২. মৃত ব্যক্তির নিকট হতে সাহায্য প্রার্থনা করা ।
৮৩. কবরের উপর মৃত ব্যক্তির নাম ও মৃত্যুর তারিখ লিখা ।
৮৪. মসজিদে মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা বা কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করা ।
৮৫. রাসূল (সাঃ) কে অসিলা ধরে কিছু প্রার্থনা করা ।
৮৬. কবরে বা মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার পর যমযমের পানি ছিটিয়ে দেয়া ।
৮৭. কবরের চার কর্ণারে দাঁড়িয়ে চার (সূরা) কুল পাঠ করা ।
৮৮. কবরকে একত্রিত হওয়ার স্থান বানিয়ে নেয়া ।
৮৯. কবরের উপরে মোমবাতি জ্বালানো ।
৯০. নাবী (সাঃ) এর কবর যিয়ারাতের সময় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা ।
৯১. কবরের উপরে খেঁজুর ডাল পুঁতে দেয়া অথবা প্রচলিত নিয়মে ফুল দেয়া ।
৯২. কবরের চার কোনে চারজন দাঁড়িয়ে আযান দেয়া যেমন আমাদের দেশের কোন কোন এলাকায় রেওয়াজ চালু হয়েছে বলে শুনা যায় । ইত্যাদি , ইত্যাদি …. ।
আল্লাহ সুবানাহুতালা আমাদের সকলকে ইসলামের সঠিক রীতি-নীতি জেনে বুঝে আমল করার তাওফীক দান করুন । আমীন ।(https://www.facebook.com/QuranAndSunnahTheWayToJannah/posts/628911783844474/)
আমাদের সমাজে এখনো অনেক স্থানে
মৃত মানুষকে ঘিরে জাহেলিয়াতের আচার অনুষ্ঠান করে থাকে, যা জানা প্রয়োজন এবং
এই ধরনের অনুষ্ঠান থেকে দূরে থাকা অত্যাবশ্যক। মহান আল্লাহ সামাজিক
সম্পর্ককে সুন্দর ও পবিত্র ধারা রাখার জন্য জীবনের শেষ অধ্যায় পর্যন্ত
সুষ্ঠ নীতিমালা দিয়ে রেখেছেন যা আমরা কুর’আন ও রাসূল স. এর সুন্নাহ থেকে জানতে পারি।
যে কাজগুলো করা থেকে দূরে থাকতে হবে—
১। রাসূল সা বলেন:
“বিলাপ করা (কারও মৃত্যুতে চিৎকার করে কান্নাকাটি করা, মৃত ব্যক্তির বিভিন্ন গুণের কথা উল্লেখ করে মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি করা, শরীরে আঘাত করা, জামা-কাপড় ছেঁড়া ইত্যাদি) জাহেলী যুগের কাজ। ” আল্লামা আলাবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন: দেখুন: সহীহ ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১২৮৬,
মৃতের জন্য বিলাপ করা কাবীরা গুনাহ। কেননা নবী সা. বিলাপকারীনী ও বিলাপ শ্রবণকারীনীকে লা‘নত করেছেন। তিনি বলেন,
“উচ্চস্বরে বিলাপ করে ক্রন্দনকারীনী যদি মৃত্যুর পূর্বে তওবা না করে, তবে ক্বিয়ামত দিবসে এমনভাবে উত্থিত করা হবে যে, তার গায়ে আলকাতরার একটি পায়জামা পরানো হবে এবং পরানো হবে খুঁজলী যুক্ত চাদর।” (আমরা আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি)
এরকম সবধরণের বিদআত থেকে সাবধান হয়। কেননা বিদআত পরিত্যাগে যেমন কল্যাণ আছে, তেমনি উপকার আছে মৃত ব্যক্তির। কেননা নবী স. বলেছেন।
“নিশ্চয় মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হবে তার পরিবারের লোকদের ক্রন্দন ও বিলাপের কারণে।”
এখানে ‘শাস্তি দেয়া হবে’ একথার অর্থ হচ্ছে, মৃত ব্যক্তি এই ক্রন্দন ও বিলাপের কারণে ব্যথিত হয় কষ্ট পায়। যদিও বিলাপকারীর শাস্তি তাকে দেয়া হবে না। কেননা আল্লাহ্ তা’আলা বলেন,
“একজন অন্যজনের পাপের বোঝা বহণ করবে না।” (সূরা আনআমঃ ১৬৪)
আর শাস্তি মানেই দন্ডিত হওয়া নয়। কেননা হাদীসে বলা হয়েছেঃ সফর শাস্তির একটি অংশ। অথচ এখানে কোন দন্ড নেই; বরং এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে, দুঃখ, চিন্তা, মনোকষ্ট প্রভৃতি।
উৎস : ফতোয়া আরকানুল ইসলাম, নামায অধ্যায়॥ মূল: আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উছাইমীন (রাহ:)
বিলাপকারীর কাছে বসে মনোযোগসহ বিলাপ শোনা, তাকে প্রেরণা দেয়া ও প্ররোচিত করা। এটাও নিষেধ, কারণ তার কাছে বসা তাকে প্রেরণা দেয়ারই নামান্তর। তাই তার বিলাপ শোনাও বৈধ নয়। বিলাপকারী যদি চুপ না করে, তবে তাকে ত্যাগ করা, তার সাথে না বসাই শ্রেয়। এটা এক অর্থে তাকে বাধা দেয়া। অনুরূপ তার বিলাপ শুনতে বসা এক প্রকার প্রেরণা দেয়া ও তাকে প্ররোচিত করা। অতএব, আপনার জন্য বিলাপকারীর বিলাপ শোনা জায়েজ নয়, বরং তাকে নিষেধ করুন ও তাকে বাধা দিন। যদি সে মেনে নেয় ভাল কথা, অন্যথায় তাকে ত্যাগ করুন, তার কথা শ্রবণ করার জন্য বসবেন না।
২। কুরআন তিলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদাতের সাওয়াব কি মৃতদের নিকট পৌঁছায়? মৃত ব্যক্তির সন্তান বা যার পক্ষ থেকেই হোক?
রাসূলুল্লাহ সা কুরআন তিলাওয়াত করে নিকট আত্মীয় বা অন্য কোন মৃত ব্যক্তির জন্য ঈসালে সাওয়াব করেন নি। তিলাওয়াতের সাওয়াব যদি মৃত ব্যক্তির নিকট পৌঁছত বা এর দ্বারা সে কোনভাবে উপকৃত হত, তাহলে অবশ্যই তিনি তা করতেন, উম্মতকে বাতলে দিতেন, যেন তাদের মৃতরা উপকৃত হয়। তিনি ছিলেন মুমিনদের উপর দয়ালু ও অনুগ্রহশীল। তার পরবর্তীতে খুলাফায়ে রাশেদিন ও সকল সাহাবায়ে কেরাম তার যথাযথ অনুসরণ করেছেন, আল্লাহ তাদের সকলের উপর সন্তুষ্ট হোন, আমাদের জানা মতে তারা কেউ কুরআন তিলাওয়াত করে ঈসালে সাওয়াব করেন নি। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সা. ও তার সাহাবাদের আদর্শ অনুসরণ করাই আমাদের জন্য কল্যাণ। কারণ, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন :
“খবরদার! তোমরা নতুন আবিষ্কৃত বস্তু থেকে সতর্ক থেকো, কারণ প্রত্যেক নতুন আবিষ্কৃত বস্তু বিদ‘আত, আর প্রত্যেক বিদ‘আত গোমরাহী ও পথভ্রষ্টতা।” আবু দাউদ: ৩৯৯৩
“যে আমাদের এ দ্বীনে এমন কিছু আবিষ্কার করল, যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়, তা পরিত্যক্ত।” বুখারি: ২৫১২, মুসলিম: ৩২৪৮
মৃতদের জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা বা করানো জায়েয নয়, এর সাওয়াব তাদের নিকট পৌঁছে না, বরং এটা বিদ‘আত। এ ছাড়া যেসব ইবাদাতের সাওয়াব মৃতদের নিকট পৌঁছে মর্মে বিশুদ্ধ দলিল রয়েছে তা অবশ্য গ্রহণীয়। যেমন মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে সদকা ও হজ করা মর্মে বিশুদ্ধ দলিল রয়েছে। আর যে সব বিষয়ে কোন দলিল নেই তা বৈধ নয়। তাই প্রমাণিত হল, কুরআন তিলাওয়াত করে মৃতদের ঈসালে সাওয়াব করা বৈধ নয়, তাদের নিকট এর সাওয়াব পৌঁছায় না, বরং এটা বিদ‘আত। এটাই আলেমদের বিশুদ্ধ অভিমত। আর আল্লাহই ভালো জানেন।
সূত্র : [আল-লাজনাতুদ দায়েমাহ্ লিল বুহুসিল ইলমিয়াহ ওয়াল ইফতা] “ইলমি গবেষণা ও ফতোয়ার স্থায়ী পরিষদ” সদস্য আব্দুল্লাহ ইবন গুদাইয়ান, ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক আফিফী, চেয়ারম্যান-আব্দুল আযিয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায
৩। কবর পাকা করা, কবরের উপর বিল্ডিং তৈরী করা ও কবরে চুনকাম করা:
পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে কবর পাকা করা, চুনকাম করা, কবর উঁচু করার প্রবনতা দেখা যায়। দেখা যায় করবস্থানে, রাস্তার আশে-পাশে, চৌরাস্তায় ও বটগাছ তলায় কবর পাকা করে, চুনকাম করে, তাতে উন্নত নেমপ্লেট ব্যবহার করে মৃত ব্যক্তির জন্ম ও মৃত্যু তারিখ ও বিভিন্ন বাণী লিখে রাখা হয়। এ কাজগুলো সম্পূর্ণ বিদয়াত। বিশিষ্ট সাহাবী জাবের রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
“রাসূল সা. কবরে চুনকাম করা, তার উপর বসা এবং তার উপর বিল্ডিং নির্মান করতে নিষেধ করেছেন।” ” সহিহ মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুল জানায়েয
এ হাদীস দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণ হল যে,কবরে প্লাস্টার করা, চুনকাম করা,পাকা করা,কবরের উপর বিল্ডিং ও গম্বুজ নির্মাণ করা হারাম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ ওয়া সাল্লাম এর যুগে বদর, উহুদ, খন্দক, তাবুক যুদ্ধ ছাড়াও যে সকল সাহাবী শহীদ হয়েছেন অথবা মৃত্যু বরণ করেছেন তাঁদের কারও কবর উঁচু করা হয় নি। তাঁদের কারও কবর পাকা ও চুনকামও করা হয়নি এবং তাতে নামও লিখা হয়নি। তাঁদের কারও কবর মোজাইক অথবা পাথর দ্বারা বাঁধানো হয়নি বরং এ সকল কাজ যেমন রাসূল সা. নিষেধ করেছেন, তাঁর পরে স্বর্ণ যুগের খোলাফায়ে রাশেদীন কঠোর হস্তে দমন করেছেন। এর একটি উজ্জল উদাহরণ হল, প্রখ্যাত তাবেয়ী আবুল হাইয়াজ আল আসাদী বলেন,আমাকে আলী রা. বললেন,
“তোমাকে কি আমি এমন একটি কাজ দিয়ে পাঠাবো না যে কাজ দিয়ে আমাকে পাঠিয়েছিলেন রাসূলুল্লাহ সা.? তা হল কোন প্রতিকৃতি পেলে তা মুছে দিবে আর কোন উচুঁ কবর পরিলক্ষিত হলে তা সাধারণ কবরের সমান করে দিবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, কোন ছবি পেলে তা নিশ্চিহ্ন করে দিবে।” মুসলিম: ১৬১৫
৪। আমাদের অনেকেই নিচে উল্লেখিত হাদীসটি জেনে আমল করার উদ্যোগ নিয়ে থাকি, চলুন জেনে নেই আসলেই কি এই আমলটা ঠিক?
‘দু’জন ব্যক্তিকে ক্ববরে শাস্তি দেওয়া হচ্ছিল। ফলে শাস্তি মাফের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ক্ববরে খেজুরের ডাল পুঁতে দিলেন’ বুখারী, ‘অযূ’ অধ্যায়, হা/২১৬।
ক্ববরের উপরে গাছের কাঁচা ডাল বা ঐ জাতীয় কিছু পোঁতা সুন্নাত নয়; বরং ইহা একদিকে যেমন বিদ‘আত, অন্যদিকে তেমনি মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণের শামিল। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব ক্ববরে এরূপ রাখতেন না। শুধুমাত্র ঐ ক্ববর দু’টিতে তিনি রেখেছিলেন। কারণ তিনি জানতে পেরেছিলেন যে, তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। অতএব, ক্ববরের উপরে খেজুর ডাল পোঁতা মৃতের প্রতি অন্যায় এবং তার সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ বৈ কিছুই নয়। আর কেউ তার মুসলিম ভাই সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করতে পারে না। কেননা কেউ কারো ক্ববরের উপর খেজুরের ডাল পোঁতার অর্থই হচ্ছে, সে বিশ্বাস করে যে, ঐ ক্ববরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যক্তিদ্বয়কে শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন বলেই তো তাদের ক্ববরের উপরে খেজুরের ডাল পুঁতেছিলেন।
সংক্ষিপ্তভাবে বলা যায়, ক্ববরের উপরে খেজুরের ডাল বা এ জাতীয় কিছু পোঁতা বিদ‘আত এবং মৃতব্যক্তি সম্পর্কে কু–ধারণা পোষণ। কেননা যে ডাল পুঁতে, সে মনে করে ক্ববরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। আর সেজন্যই তো সে তার শাস্তি লাঘব করতে চায়। এখানে আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আল্লাহ ঐ ব্যক্তিদ্বয়ের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর সুপারিশ ক্ববূল করেছিলেন; কিন্তু তিনি মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে আমাদের সুপারিশ ক্ববূল করবেন কিনা তা তো আমরা জানি না। (শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন রহ).
এছাড়া যেকাজগুলো করা বিদয়াত তা হলো—
১- কুলখানি ২- ফাতেহা পাঠ ৩-চেহলাম ৪- মাটিয়াল ৫-মীলাদ ৭- খতমে তাহলীল
৮- কুরআন খতম বা কুরআনখানি ৯- কাঙ্গালীভোজ ১০-ওরস ১১- ইছালে ছাওয়াব মাহফিল
১২- উরসে-কুল ১৩- কবরে ও কফিনে ফুল দেয়া বা পুষ্পস্তবক অর্পণ
১৪- এক মিনিট নীরবতা পালন
১৫- মৃত ব্যক্তির জায়নামাজ ও পোশাক দান করা (ওয়ারীসদের সকলের অনুমতি সাপেক্ষে দেয়া যেতে পারে)। ব্যক্তি যখন ইন্তেকাল করল তখন থেকে তার ছোট বড় সকল সম্পদের মালিক তার উত্তরাধিকারীগণ। সম্পদ তাদের মধ্যে বণ্টন করার পূর্ব-পর্যন্ত এগুলো কাউকে দান করা যাবে না—তবে কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া। এগুলো হল :
এক. মৃত ব্যক্তি যদি জীবদ্দশায় অসীয়ত করে যান যে, আমার অমুক বস্তুটি অমুককে দান করে দেবে, তবে অসীয়তের যাবতীয় নিয়ম মান্য করে দান করা যেতে পারে।
দুই. ইন্তেকালের পর তার সকল ওয়ারিশগণ যদি সন্তুষ্টচিত্তে কোন বস্তু কাউকে দান করার সিদ্ধান্তে একমত হন, তবে তাতে দোষ নেই।
১৬- লাশ ও কবরের কাছে কুরআন তিলাওয়াত
১৭- জানাযা নামাজ শেষে সম্মিলিতভাবে দুআ-মুনাজাত-সউদী আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটি (একাকী হাত তুলে দু’আ করতে পারবে)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাকী গোরস্থান যিয়ারতে গিয়ে কবরবাসীদের জন্য দুহাত তুলে দু’আ করলেন।” (সহীহ মুসলিম, জানাযা অধ্যায় হা/৯৭৪)
১৮- মৃত্যু-দিবস পালন
মৃতকে কেন্দ্র করে প্রচলিত আরও কিছু কুসংস্কার ও গর্হিত কাজ:
১) জানাযার খাট বহন করার সময় তার পেছনে পেছনে উচ্চস্বরে তাকবীর দেয়া ও যিকির করা।
২) কবরে গোলাপ জল ছিটানো।
৩) আয়াতুল কুরসী বা কুরআনের আয়াত লেখা চাদর দ্বারা মৃত দেহ আবৃত করা।
৪) মরদেহ বহন করে নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় দু বার খাট রাখা।
৫) চার কুল পড়ে কবরের চার কোনায় খেজুরের ডাল পোঁতা।
৬) কবর যিয়ারত করতে গিয়ে সাতবার সুরা ফাতিহা, তিনবার সুরা ইখলাছ,সাতবার দরূদ ইত্যাদি পাঠ করা।
৭) নির্দিষ্ট করে ২৭ রামাযান, দু ঈদের দিন কিংবা জুম’আর দিন কবর যিয়ারত করতে যাওয়া।
৮) তথাকথিত শবেবরাত, শবে মেরাজ ইত্যাদি রাতে কবর যিয়ারত করা।
৯) লাশ দেখার জন্য মহিলাদের ভিড় করা।
১০) মৃত ব্যক্তির নামে ভারতের আজমীরে কিংবা বিভিন্ন খানকা,দরবার ও মাযারের উদ্দেশ্যে টাকা-পয়সা,গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পাঠানো।
১১) অনুরূপ লাশ জানাযা-দাফনের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার পর সামাজিক, রাজনৈতিক বা দলীয় প্রথা পালনের উদ্দেশ্যে লাশকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করা যেমন,লাশকে স্থানে স্থানে নিয়ে প্রদর্শন করা, শ্রদ্ধা নিবেদন করা, লাশের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা, ভিডিও করা, লাশকে সামনে রেখে দীর্ঘ সময় ধরে জীবনালোচনা করা, বিভিন্নমুখী ভাষণ-বক্তৃতা দেওয়া ইত্যাদি সবই গর্হিত কাজ।
এগুলোর মধ্যে জীবিত-মৃত কারোরই কোনো কল্যাণ নেই। এসব অনর্থক কর্মকাণ্ড পরিহার করা সকলের জন্য জরুরি।(http://sistersforuminislam.com/articles/)
২. মৃত্যু শয্যায় শায়িত ব্যক্তিকে কিবলামুখী করা ।
৩. মৃত্যু শয্যায় শায়িত ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন বা অন্য কোন সূরা পাঠ করা ।
৪. মৃতব্যক্তির নিকট কুরআন তিলাওয়াত করা ।
৫. মৃত ব্যক্তির নখ ও নাভির নীচের চুল কাটা ।
৬. মৃত ব্যক্তির পায়ুপথে , নাকে তুলা বা মাটি বা অন্য কিছু দিয়ে দেয়া । তবে কারণবশতঃ দেয়া যেতে পারে ।
৭. মৃত ব্যক্তির দু’চোখে মাটি রাখা ।
৮. মৃত ব্যক্তি দাফন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তার পরিবারের খানা-পিনা না করা ।
৯. নির্দিষ্ট সময়ে ক্রন্দন করা ।
১০. মৃত ব্যক্তির জন্য চিন্তিত হয়ে দাড়ি ছেড়ে দেয়া , অতঃপর পূনরায় কেটে ফেলা ।
১১. গোসল দানকারী কর্তৃক প্রত্যেকটি অংগ গোসল দেয়ার সময় যিকির করা ।
১২. কাফন পরানোর সময় ও খাটলিতে করে নেয়ার সময় আওয়াজ করে যিকির করা , কুরআন তিলাওয়াত করা ।
১৩. যেখানে গোসল দেয়া হয়েছে তিন বা সাত রাত সূর্যাস্তের সময় থেকে সূর্য উদয় পর্যন্ত বাতি বা চেরাগ জ্বালিয়ে রাখা ।
১৪. মহিলার ক্ষেত্রে তার দু’স্তনের মাঝে চুল রেখে দেয়া ।
১৫. কাফনের উপর দোয়া লিখা ।
১৬. খাটলির প্রতিটি কোনকে দশ কদম করে বহন করা ।
১৭. খাটলির পেছনে উচ্চঃস্বরে দুআ করার জন্য আহবান করা ।
১৮. ফুলের তোড়া বা ফুল অথবা মৃত ব্যক্তির ছবি বহন করা ।
১৯. এরুপ বিশ্বাস রাখা যে , সৎ ব্যক্তি হলে তার কফিন হালকা হয় ।
২০. দাফনের পূর্বে মানুষের ধারণায় মর্যাদা সম্পন্ন স্থানে কফিন রাখা এবং পবিত্র স্থান মনে করে দাফনের পূর্বে কোন স্থানে রেখে ফুল দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করা ।
২১. কফিন বের করার সাথে সাথে কিছু সাদাকাহ বের করা ।
২২. কফিনের পিছনে চিৎকার করে এরুপ বলা – আপনারা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন , আল্লাহ আপনাদেরকে ক্ষমা করবেন ।
২৩. জানাযার সালাতের পূর্বে বা পরে বা দাফনের পরক্ষণে মৃতের প্রশংসা মূলক কিছু বর্ণনা করা ।
২৪. নাপাকি না থাকা সত্ত্বেও জানাযার সালাতের সময় জুতা খুলে রাখা । অতঃপর তার উপরে দাঁড়ানো ।
২৫. ইমাম সাহেব কর্তৃক পুরুষদের মাঝ বরাবর আর মহিলাদের বুক বরাবর দাঁড়ানো ।
২৬. জানাযার সালাত আদায় করা হয়েছে তা জানার পরেও পুনরায় গায়েবানা জানাযা আদায় করা ।
২৭. সানা (জানাযার সালাত আরম্ভের দুআ পড়া) পাঠ করা ।
২৮. জানাযার সালাতে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পাঠ করা হতে বিরত থাকা ।
২৯. দাফনের পূর্বে মৃতের খাটলির চারদিকে যিকির করা ।
৩০. কবরে প্রবেশ করানোর সময় আযান দেয়া ।
৩১. কবরে নামানোর সময় কবরের মাথার (উত্তর) দিক হতে বা সাইড দিয়ে নামানো ।বরং কবরের পায়ের দিক দিয়ে নামাতে হবে ।
৩২. কবরে মৃতের মাথার নিচে বালিশ বা অন্য কিছু দেয়া ।
৩৩. কবরে রাখার পর তার উপর গোলাপ জল ছিটিয়ে দেয়া ।
৩৪. সূরা ফাতিহা , আন-নাস , আল-ফালাক , আল-ইখলাস , আন-নাসর , আল-কাফেরুন , আল-ক্বদর পাঠ করা ।
৩৫. মৃতের মাথার নিকট সূরা ফাতিহা পাঠ করা এবং তার পায়ের নিকট সূরা বাক্বারার প্রথম অংশ পাঠ করা ।
৩৬. জানাযার সালাত আদায়ের পর বা পূর্বে ভাল লোক ছিলেন মর্মে উপস্থিত ব্যক্তিদের থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ করা ।
৩৭. কবরে রাখার সময় অথবা মাটি দেয়ার সময় এই আয়াত পাঠ করা – মিনহা খলাক্বনাকুম , ওয়া ফিহা নুঈদুকুম , ওয়া মিনহা নুখুরজুকুম তা-র-তান উখ-র ।
৩৮. কবরের নিকটে সাদাকাহ করা ।
৩৯. মাথার দিক দিয়ে কবরে পানি ঢালা ।অতঃপর চক্কর দিয়ে অতিরিক্ত পানি তার মধ্যখানে ঢেলে দেয়া ।
৪০. মহিলার কবরের উপরে দুটি পাথর পুঁতে দেয়া ।
৪১. মৃতের পরিবারের নিকট হতে মেহমানদারী গ্রহণ করা ।
৪২. শোক বা সমবেদনা জানানোর জন্য কবর বা অন্য কোন স্থানে একত্রিত হওয়া ।
৪৩. মৃত্যুর পূর্বে এরুপ অসিয়্যত করে যাওয়া যে , তার মৃত্যুর পরে যেন খানা তৈরি করে মেহমানদারী করা হয় ।
৪৪. মৃত্যুর প্রথম দিন বা চতুর্থ দিনে বা সপ্তম দিনে বা চল্লিশ দিন বা বছর পুর্তিতে কোন আয়োজন করা এবং মেহমানদারী গ্রহণ করা ।
৪৫. মৃতের পরিবারের নিকট হতে প্রথম বৃহস্পতিবারে খাদ্য গ্রহণ করা ।
৪৬. মৃতের পরিবারের মৃত্যু কেন্দ্রিক খানা-পিনার দাওয়াত গ্রহণ করা ।
৪৭. কিছু মাদ্রাসার ছাত্র বা মৌলভী সাহেবদেরকে দাওয়াত দিয়ে কুরআন খতম করানো । অতঃপর তাদেরকে হাদীয়া হিসেবে টাকা প্রদান করা , অথবা কবরের নিকট কুরআন খতম করানো ।
৪৮. মৃত ব্যক্তির পছন্দের খাদ্য সাদাকাহ করা ।
৪৯. কবরের উপর খিমা টাঙ্গানো ।
৫০. কবরের নিকট চল্লিশ দিন-রাত্রি যাপন করা ।
৫১. মৃত্যুর পূর্বেই কবর খনন করা ।
৫২. সময় নির্দিষ্ট করে কবর যিয়ারাত করা ।
৫৩. প্রতি জুমআর দিনে মাতা-পিতার কবর যিয়ারাত করা ।
৫৪. আশুরার দিনে কবর যিয়ারাত করা ।
৫৫. ১৫ই শাবানের রাতে কবর যিয়ারাত করা এবং কবরের নিকট আলো জ্বালানো ।
৫৬. দু’ঈদ , রাজাব , শাবান ও রামাদ্বান মাসে (বিশেষ করে সাতাশে রাতে) খাস করে কবরস্থানে যাওয়া ।
৫৭. উদ্দেশ্যমূলকভাবে সোম ও বৃহস্পতিবারে কবর যিয়ারাত করা ।
৫৮. যিয়ারাতের জন্য তায়াম্মুম করা ।
৫৯. কবরস্থানে সূরা ইয়াসীন পাঠ করা ।
৬০. কবরের নিকট ১১ বার সূরা ইখলাস পাঠ করা ।
৬১. কবরের মাঝে লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ আওয়াজ করে বলা ।
৬২. নাবীগণের কবরের উদ্দেশ্যে অন্যের মাধ্যমে সালাম প্রেরণ করা ।
৬৩. অজ্ঞাত ব্যক্তি বা অজ্ঞাত শহীদের কবর যিয়ারাত করা ।
৬৪. কবরের নিকটে কুরআন রাখা ।
৬৫. কবরের উপরে ঘর নির্মাণ করা।
৬৬. সালাত ও কুরআন তেলাওয়াতের ন্যায় ইবাদাতের সাওয়াব মুসলিম মৃত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে হাদীয়া দেয়া ।
৬৭. নাবী ও নেককারদের কবরের নিকট দুআ কবুল করা হয় এরুপ বিশ্বাস করা ।
৬৮. দুআ কবুল হবে এই আশায় কবরের নিকট যাওয়া ।
৬৯. কবরের আশ-পাশের গাছ ও পাথরকে পবিত্র মনে করা এবং এরুপ বিশ্বাস রাখা যে , যে ব্যক্তি সেগুলোর ক্ষতি সাধন করবে তার বিপদ হবে ।
৭০. নাবী ও নেককারদের কবর যিয়ারাতের উদ্দেশ্যে সফর করা ।
৭১. কবরকে কারুকার্য করা ।
৭২. কবরস্থানে কুরআন বহন করে নিয়ে যাওয়া এবং তা থেকে মৃতের জন্য পাঠ করা ।
৭৩. কবরের পার্শ্ব দিয়ে প্রাচীর নির্মাণ করা ।
৭৪. বরকত নেয়ার উদ্দেশ্যে কবরের উপর বাতি , কাপড় নিক্ষেপ করা ।
৭৫. কবরকে চুমু দেয়া ও স্পর্শ করা ।
৭৬. কবরের মাটি পেট ও পিঠের সাথে লাগানো ।
৭৭. কবরের নিকট যবেহ করা বা কুরবানী করা ।
৭৮. কবরের নিকট সালাত আদায় করা ।
৭৯. কবরের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করা ।
৮০. কবর হতে প্রত্যাবর্তনের সময় (পেছন না দেখিয়ে) উল্টাভাবে হেঁটে আসা ।
৮১. কবরবাসীকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য অসিলা ধরা ।
৮২. মৃত ব্যক্তির নিকট হতে সাহায্য প্রার্থনা করা ।
৮৩. কবরের উপর মৃত ব্যক্তির নাম ও মৃত্যুর তারিখ লিখা ।
৮৪. মসজিদে মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা বা কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করা ।
৮৫. রাসূল (সাঃ) কে অসিলা ধরে কিছু প্রার্থনা করা ।
৮৬. কবরে বা মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার পর যমযমের পানি ছিটিয়ে দেয়া ।
৮৭. কবরের চার কর্ণারে দাঁড়িয়ে চার (সূরা) কুল পাঠ করা ।
৮৮. কবরকে একত্রিত হওয়ার স্থান বানিয়ে নেয়া ।
৮৯. কবরের উপরে মোমবাতি জ্বালানো ।
৯০. নাবী (সাঃ) এর কবর যিয়ারাতের সময় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা ।
৯১. কবরের উপরে খেঁজুর ডাল পুঁতে দেয়া অথবা প্রচলিত নিয়মে ফুল দেয়া ।
৯২. কবরের চার কোনে চারজন দাঁড়িয়ে আযান দেয়া যেমন আমাদের দেশের কোন কোন এলাকায় রেওয়াজ চালু হয়েছে বলে শুনা যায় । ইত্যাদি , ইত্যাদি …. ।
আল্লাহ সুবানাহুতালা আমাদের সকলকে ইসলামের সঠিক রীতি-নীতি জেনে বুঝে আমল করার তাওফীক দান করুন । আমীন ।(https://www.facebook.com/QuranAndSunnahTheWayToJannah/posts/628911783844474/)
মৃত ব্যক্তিকে উপলক্ষ্য করে সমাজে প্রচলিত আনুষ্ঠানিকতার বর্জনীয় দিক
যে কাজগুলো করা থেকে দূরে থাকতে হবে—
১। রাসূল সা বলেন:
“বিলাপ করা (কারও মৃত্যুতে চিৎকার করে কান্নাকাটি করা, মৃত ব্যক্তির বিভিন্ন গুণের কথা উল্লেখ করে মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি করা, শরীরে আঘাত করা, জামা-কাপড় ছেঁড়া ইত্যাদি) জাহেলী যুগের কাজ। ” আল্লামা আলাবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন: দেখুন: সহীহ ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১২৮৬,
মৃতের জন্য বিলাপ করা কাবীরা গুনাহ। কেননা নবী সা. বিলাপকারীনী ও বিলাপ শ্রবণকারীনীকে লা‘নত করেছেন। তিনি বলেন,
“উচ্চস্বরে বিলাপ করে ক্রন্দনকারীনী যদি মৃত্যুর পূর্বে তওবা না করে, তবে ক্বিয়ামত দিবসে এমনভাবে উত্থিত করা হবে যে, তার গায়ে আলকাতরার একটি পায়জামা পরানো হবে এবং পরানো হবে খুঁজলী যুক্ত চাদর।” (আমরা আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি)
এরকম সবধরণের বিদআত থেকে সাবধান হয়। কেননা বিদআত পরিত্যাগে যেমন কল্যাণ আছে, তেমনি উপকার আছে মৃত ব্যক্তির। কেননা নবী স. বলেছেন।
“নিশ্চয় মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হবে তার পরিবারের লোকদের ক্রন্দন ও বিলাপের কারণে।”
এখানে ‘শাস্তি দেয়া হবে’ একথার অর্থ হচ্ছে, মৃত ব্যক্তি এই ক্রন্দন ও বিলাপের কারণে ব্যথিত হয় কষ্ট পায়। যদিও বিলাপকারীর শাস্তি তাকে দেয়া হবে না। কেননা আল্লাহ্ তা’আলা বলেন,
“একজন অন্যজনের পাপের বোঝা বহণ করবে না।” (সূরা আনআমঃ ১৬৪)
আর শাস্তি মানেই দন্ডিত হওয়া নয়। কেননা হাদীসে বলা হয়েছেঃ সফর শাস্তির একটি অংশ। অথচ এখানে কোন দন্ড নেই; বরং এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে, দুঃখ, চিন্তা, মনোকষ্ট প্রভৃতি।
উৎস : ফতোয়া আরকানুল ইসলাম, নামায অধ্যায়॥ মূল: আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উছাইমীন (রাহ:)
বিলাপকারীর কাছে বসে মনোযোগসহ বিলাপ শোনা, তাকে প্রেরণা দেয়া ও প্ররোচিত করা। এটাও নিষেধ, কারণ তার কাছে বসা তাকে প্রেরণা দেয়ারই নামান্তর। তাই তার বিলাপ শোনাও বৈধ নয়। বিলাপকারী যদি চুপ না করে, তবে তাকে ত্যাগ করা, তার সাথে না বসাই শ্রেয়। এটা এক অর্থে তাকে বাধা দেয়া। অনুরূপ তার বিলাপ শুনতে বসা এক প্রকার প্রেরণা দেয়া ও তাকে প্ররোচিত করা। অতএব, আপনার জন্য বিলাপকারীর বিলাপ শোনা জায়েজ নয়, বরং তাকে নিষেধ করুন ও তাকে বাধা দিন। যদি সে মেনে নেয় ভাল কথা, অন্যথায় তাকে ত্যাগ করুন, তার কথা শ্রবণ করার জন্য বসবেন না।
২। কুরআন তিলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদাতের সাওয়াব কি মৃতদের নিকট পৌঁছায়? মৃত ব্যক্তির সন্তান বা যার পক্ষ থেকেই হোক?
রাসূলুল্লাহ সা কুরআন তিলাওয়াত করে নিকট আত্মীয় বা অন্য কোন মৃত ব্যক্তির জন্য ঈসালে সাওয়াব করেন নি। তিলাওয়াতের সাওয়াব যদি মৃত ব্যক্তির নিকট পৌঁছত বা এর দ্বারা সে কোনভাবে উপকৃত হত, তাহলে অবশ্যই তিনি তা করতেন, উম্মতকে বাতলে দিতেন, যেন তাদের মৃতরা উপকৃত হয়। তিনি ছিলেন মুমিনদের উপর দয়ালু ও অনুগ্রহশীল। তার পরবর্তীতে খুলাফায়ে রাশেদিন ও সকল সাহাবায়ে কেরাম তার যথাযথ অনুসরণ করেছেন, আল্লাহ তাদের সকলের উপর সন্তুষ্ট হোন, আমাদের জানা মতে তারা কেউ কুরআন তিলাওয়াত করে ঈসালে সাওয়াব করেন নি। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সা. ও তার সাহাবাদের আদর্শ অনুসরণ করাই আমাদের জন্য কল্যাণ। কারণ, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন :
“খবরদার! তোমরা নতুন আবিষ্কৃত বস্তু থেকে সতর্ক থেকো, কারণ প্রত্যেক নতুন আবিষ্কৃত বস্তু বিদ‘আত, আর প্রত্যেক বিদ‘আত গোমরাহী ও পথভ্রষ্টতা।” আবু দাউদ: ৩৯৯৩
“যে আমাদের এ দ্বীনে এমন কিছু আবিষ্কার করল, যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়, তা পরিত্যক্ত।” বুখারি: ২৫১২, মুসলিম: ৩২৪৮
মৃতদের জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা বা করানো জায়েয নয়, এর সাওয়াব তাদের নিকট পৌঁছে না, বরং এটা বিদ‘আত। এ ছাড়া যেসব ইবাদাতের সাওয়াব মৃতদের নিকট পৌঁছে মর্মে বিশুদ্ধ দলিল রয়েছে তা অবশ্য গ্রহণীয়। যেমন মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে সদকা ও হজ করা মর্মে বিশুদ্ধ দলিল রয়েছে। আর যে সব বিষয়ে কোন দলিল নেই তা বৈধ নয়। তাই প্রমাণিত হল, কুরআন তিলাওয়াত করে মৃতদের ঈসালে সাওয়াব করা বৈধ নয়, তাদের নিকট এর সাওয়াব পৌঁছায় না, বরং এটা বিদ‘আত। এটাই আলেমদের বিশুদ্ধ অভিমত। আর আল্লাহই ভালো জানেন।
সূত্র : [আল-লাজনাতুদ দায়েমাহ্ লিল বুহুসিল ইলমিয়াহ ওয়াল ইফতা] “ইলমি গবেষণা ও ফতোয়ার স্থায়ী পরিষদ” সদস্য আব্দুল্লাহ ইবন গুদাইয়ান, ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক আফিফী, চেয়ারম্যান-আব্দুল আযিয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায
৩। কবর পাকা করা, কবরের উপর বিল্ডিং তৈরী করা ও কবরে চুনকাম করা:
পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে কবর পাকা করা, চুনকাম করা, কবর উঁচু করার প্রবনতা দেখা যায়। দেখা যায় করবস্থানে, রাস্তার আশে-পাশে, চৌরাস্তায় ও বটগাছ তলায় কবর পাকা করে, চুনকাম করে, তাতে উন্নত নেমপ্লেট ব্যবহার করে মৃত ব্যক্তির জন্ম ও মৃত্যু তারিখ ও বিভিন্ন বাণী লিখে রাখা হয়। এ কাজগুলো সম্পূর্ণ বিদয়াত। বিশিষ্ট সাহাবী জাবের রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
“রাসূল সা. কবরে চুনকাম করা, তার উপর বসা এবং তার উপর বিল্ডিং নির্মান করতে নিষেধ করেছেন।” ” সহিহ মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুল জানায়েয
এ হাদীস দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণ হল যে,কবরে প্লাস্টার করা, চুনকাম করা,পাকা করা,কবরের উপর বিল্ডিং ও গম্বুজ নির্মাণ করা হারাম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ ওয়া সাল্লাম এর যুগে বদর, উহুদ, খন্দক, তাবুক যুদ্ধ ছাড়াও যে সকল সাহাবী শহীদ হয়েছেন অথবা মৃত্যু বরণ করেছেন তাঁদের কারও কবর উঁচু করা হয় নি। তাঁদের কারও কবর পাকা ও চুনকামও করা হয়নি এবং তাতে নামও লিখা হয়নি। তাঁদের কারও কবর মোজাইক অথবা পাথর দ্বারা বাঁধানো হয়নি বরং এ সকল কাজ যেমন রাসূল সা. নিষেধ করেছেন, তাঁর পরে স্বর্ণ যুগের খোলাফায়ে রাশেদীন কঠোর হস্তে দমন করেছেন। এর একটি উজ্জল উদাহরণ হল, প্রখ্যাত তাবেয়ী আবুল হাইয়াজ আল আসাদী বলেন,আমাকে আলী রা. বললেন,
“তোমাকে কি আমি এমন একটি কাজ দিয়ে পাঠাবো না যে কাজ দিয়ে আমাকে পাঠিয়েছিলেন রাসূলুল্লাহ সা.? তা হল কোন প্রতিকৃতি পেলে তা মুছে দিবে আর কোন উচুঁ কবর পরিলক্ষিত হলে তা সাধারণ কবরের সমান করে দিবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, কোন ছবি পেলে তা নিশ্চিহ্ন করে দিবে।” মুসলিম: ১৬১৫
৪। আমাদের অনেকেই নিচে উল্লেখিত হাদীসটি জেনে আমল করার উদ্যোগ নিয়ে থাকি, চলুন জেনে নেই আসলেই কি এই আমলটা ঠিক?
‘দু’জন ব্যক্তিকে ক্ববরে শাস্তি দেওয়া হচ্ছিল। ফলে শাস্তি মাফের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ক্ববরে খেজুরের ডাল পুঁতে দিলেন’ বুখারী, ‘অযূ’ অধ্যায়, হা/২১৬।
ক্ববরের উপরে গাছের কাঁচা ডাল বা ঐ জাতীয় কিছু পোঁতা সুন্নাত নয়; বরং ইহা একদিকে যেমন বিদ‘আত, অন্যদিকে তেমনি মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণের শামিল। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব ক্ববরে এরূপ রাখতেন না। শুধুমাত্র ঐ ক্ববর দু’টিতে তিনি রেখেছিলেন। কারণ তিনি জানতে পেরেছিলেন যে, তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। অতএব, ক্ববরের উপরে খেজুর ডাল পোঁতা মৃতের প্রতি অন্যায় এবং তার সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ বৈ কিছুই নয়। আর কেউ তার মুসলিম ভাই সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করতে পারে না। কেননা কেউ কারো ক্ববরের উপর খেজুরের ডাল পোঁতার অর্থই হচ্ছে, সে বিশ্বাস করে যে, ঐ ক্ববরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যক্তিদ্বয়কে শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন বলেই তো তাদের ক্ববরের উপরে খেজুরের ডাল পুঁতেছিলেন।
সংক্ষিপ্তভাবে বলা যায়, ক্ববরের উপরে খেজুরের ডাল বা এ জাতীয় কিছু পোঁতা বিদ‘আত এবং মৃতব্যক্তি সম্পর্কে কু–ধারণা পোষণ। কেননা যে ডাল পুঁতে, সে মনে করে ক্ববরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। আর সেজন্যই তো সে তার শাস্তি লাঘব করতে চায়। এখানে আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আল্লাহ ঐ ব্যক্তিদ্বয়ের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর সুপারিশ ক্ববূল করেছিলেন; কিন্তু তিনি মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে আমাদের সুপারিশ ক্ববূল করবেন কিনা তা তো আমরা জানি না। (শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন রহ).
এছাড়া যেকাজগুলো করা বিদয়াত তা হলো—
১- কুলখানি ২- ফাতেহা পাঠ ৩-চেহলাম ৪- মাটিয়াল ৫-মীলাদ ৭- খতমে তাহলীল
৮- কুরআন খতম বা কুরআনখানি ৯- কাঙ্গালীভোজ ১০-ওরস ১১- ইছালে ছাওয়াব মাহফিল
১২- উরসে-কুল ১৩- কবরে ও কফিনে ফুল দেয়া বা পুষ্পস্তবক অর্পণ
১৪- এক মিনিট নীরবতা পালন
১৫- মৃত ব্যক্তির জায়নামাজ ও পোশাক দান করা (ওয়ারীসদের সকলের অনুমতি সাপেক্ষে দেয়া যেতে পারে)। ব্যক্তি যখন ইন্তেকাল করল তখন থেকে তার ছোট বড় সকল সম্পদের মালিক তার উত্তরাধিকারীগণ। সম্পদ তাদের মধ্যে বণ্টন করার পূর্ব-পর্যন্ত এগুলো কাউকে দান করা যাবে না—তবে কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া। এগুলো হল :
এক. মৃত ব্যক্তি যদি জীবদ্দশায় অসীয়ত করে যান যে, আমার অমুক বস্তুটি অমুককে দান করে দেবে, তবে অসীয়তের যাবতীয় নিয়ম মান্য করে দান করা যেতে পারে।
দুই. ইন্তেকালের পর তার সকল ওয়ারিশগণ যদি সন্তুষ্টচিত্তে কোন বস্তু কাউকে দান করার সিদ্ধান্তে একমত হন, তবে তাতে দোষ নেই।
১৬- লাশ ও কবরের কাছে কুরআন তিলাওয়াত
১৭- জানাযা নামাজ শেষে সম্মিলিতভাবে দুআ-মুনাজাত-সউদী আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটি (একাকী হাত তুলে দু’আ করতে পারবে)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাকী গোরস্থান যিয়ারতে গিয়ে কবরবাসীদের জন্য দুহাত তুলে দু’আ করলেন।” (সহীহ মুসলিম, জানাযা অধ্যায় হা/৯৭৪)
১৮- মৃত্যু-দিবস পালন
মৃতকে কেন্দ্র করে প্রচলিত আরও কিছু কুসংস্কার ও গর্হিত কাজ:
১) জানাযার খাট বহন করার সময় তার পেছনে পেছনে উচ্চস্বরে তাকবীর দেয়া ও যিকির করা।
২) কবরে গোলাপ জল ছিটানো।
৩) আয়াতুল কুরসী বা কুরআনের আয়াত লেখা চাদর দ্বারা মৃত দেহ আবৃত করা।
৪) মরদেহ বহন করে নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় দু বার খাট রাখা।
৫) চার কুল পড়ে কবরের চার কোনায় খেজুরের ডাল পোঁতা।
৬) কবর যিয়ারত করতে গিয়ে সাতবার সুরা ফাতিহা, তিনবার সুরা ইখলাছ,সাতবার দরূদ ইত্যাদি পাঠ করা।
৭) নির্দিষ্ট করে ২৭ রামাযান, দু ঈদের দিন কিংবা জুম’আর দিন কবর যিয়ারত করতে যাওয়া।
৮) তথাকথিত শবেবরাত, শবে মেরাজ ইত্যাদি রাতে কবর যিয়ারত করা।
৯) লাশ দেখার জন্য মহিলাদের ভিড় করা।
১০) মৃত ব্যক্তির নামে ভারতের আজমীরে কিংবা বিভিন্ন খানকা,দরবার ও মাযারের উদ্দেশ্যে টাকা-পয়সা,গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পাঠানো।
১১) অনুরূপ লাশ জানাযা-দাফনের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার পর সামাজিক, রাজনৈতিক বা দলীয় প্রথা পালনের উদ্দেশ্যে লাশকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করা যেমন,লাশকে স্থানে স্থানে নিয়ে প্রদর্শন করা, শ্রদ্ধা নিবেদন করা, লাশের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা, ভিডিও করা, লাশকে সামনে রেখে দীর্ঘ সময় ধরে জীবনালোচনা করা, বিভিন্নমুখী ভাষণ-বক্তৃতা দেওয়া ইত্যাদি সবই গর্হিত কাজ।
এগুলোর মধ্যে জীবিত-মৃত কারোরই কোনো কল্যাণ নেই। এসব অনর্থক কর্মকাণ্ড পরিহার করা সকলের জন্য জরুরি।(http://sistersforuminislam.com/articles/)
0 Comments
Thanks for your comment