সর্বশেষ

2/recent/ticker-posts

যৌনতা একটি সংক্রামক ব্যধি ।

#ফারিস_সিরিজ-২
#উপলব্ধিঃ যৌনতা একটি সংক্রামক ব্যধি ।
চিন্তার অবাধ স্বাধীনতাটুকু ধর্ম মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। ধর্ম মানুষকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রেখেছে। মানুষকে দাসত্বমনা করে রেখেছে। তাই ধর্ম নামক দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে এসে আমাদেরকে মুক্তমনা হতে হবে।
“ইসলাম মানুষের কাছ থেকে চিন্তা ও কর্মের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। কর্মক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মেলামেশাকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে, বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ককে অবৈধ ঘোষণা করেছে। নারীর জন্য পর্দাকে আবশ্যক করে তাকে গৃহকোণে বন্দী করে রেখেছে। সর্বোপরি ইসলাম মানুষের কাছ থেকে তার যৌন স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। অপরপক্ষে পাশ্চাত্য এই সব পুরাতন ধ্যান ধারনা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পেরেছে। তাই আজ তারা উন্নতির চরম শিখরে পৌছাতে পেরেছে”।
.
আচ্ছা প্রাচীন গ্রীক সভ্যতার ইতিহাস পড়েছেন!কেন গ্রীক সভ্যতার বিলুপ্তি ঘটেছিল?
গ্রীক সভ্যতার শুরু থেকেই নারীদেরকে বেশ সম্মানের চোখে দেখা হত। কিন্তু পতিতাবৃত্তির প্রচলন ছিল। পতিতাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করাকে তারা খারাপ মনে করত না। কালের আবর্তনে প্রবৃত্তি পূজা ও কামোদ্দীপনা তাদের মধ্যে মারাত্মক ভাবে ছড়িয়ে পরে। পতিতারা তাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়। তারা এতটাই সম্মানিত বলে বিবেচিত হতে লাগল যে, কেবল সাহিত্য কিংবা জ্ঞান বিজ্ঞানের সামাবেশে নয় বরং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক আলোচনাতেও তারা সভানেত্রীর আসন গ্রহণ করতে লাগল। এমনকি যেসব সমস্যা তাদের জীবন মরণ সংশ্লিষ্ট ছিল সেগুলোতেও পতিতাদের মতামতকেই চূড়ান্ত হিসেবে ধরা হত। হোমার ও হিসিউড এর শাসনামলে সংস্কৃতির উন্নতি, সাহিত্য চর্চা, মুক্তচিন্তা ও রসবিজ্ঞানের নামে নগ্নতা, অশ্লীলতা ও অবাধ যৌনাচার তাদের সমাজ, পরিবার ও রাষ্ট্রে প্রবলভাবে বিস্তারলাভ করে। অবশেষে তাদের মানসিকতা এই পর্যায়ে পৌছালো যে যৌনতার কামাগ্নি তাদের সামাজিক ও জাতীয় জীবনকে ভস্মীভূত করে দিল। যার পরিণাম পরবর্তীতে বেবিলন শুধু অতীত কাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে রইলো এবং জগতে তার অস্তিত্ব চিরতরে বিলিন হয়ে গেল।
.
প্রাচীন রোমান সভ্যতার নাম শুনেছেন!রোমান সভ্যতার বিলুপ্তি কীভাবে হয়েছিল?
রোমান সভ্যতার শুরুর দিকটাও ভালোই ছিল। বিয়ে ছাড়া যৌনমিলনকে সে সমাজে খারাপ দৃষ্টিতে দেখা হত। কিন্তু কালের আবর্তনে নারী ও পুরুষের অবাধ মেলামেশার মাধ্যমে তাদের মধ্যেও অশ্লীলতা বিস্তার লাভ করল।
- কিভাবে?
তাদের সমাজ নারীদের জন্য একটি নতুন আইন প্রণয়ন করল। এই আইন নারীকে তার পিতা ও স্বামীর কর্তৃত্ব হতে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিল। নারীরা শুধুমাত্র পারিবারিক ক্ষেত্রেই স্বাধীনতা লাভ করলো না বরং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও তারা বিরাট একটি অংশের মালিকানা লাভ করল।
.
মনে হলো, এটা তো সে যুগের যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল। আর এই আইনের মাধ্যমে নারীদেরকে মর্যাদার আসনে সমাসীন করা হয়। তাহলে এই আইন নিয়ে সমস্যা থাকার কথা নয়।
- এই আইনের ফলে সে সমাজে নারীরা এতটাই অর্থনৈতিক অধিকার লাভ করল যে, স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের অলিখিত দাসে পরিণত হল।
- কেন?
- কারণ নারীরা সম্পত্তিতে গড়ে পুরুষদের থেকে বেশি অধিকার লাভ করত। আরও মজার বিষয় হল, পুরুষদের যখন অর্থাভাব দেখা দিত তখন স্ত্রীরা তাদের স্বামীদেরকে উচ্চাহারে সুদ দিত।
.
- হুম, ভেরি ষ্ট্রেইঞ্জ। আর নারীদের বহুগামীতা ও তালাক এতটাই সহজলভ্য হয়ে পড়লো যে, কথায় কথায় নারীরা তালাক দেয়া শুরু করলো।
এটা আমার বানানো কোন কথা নয়, বিখ্যাত রোমান দার্শনিক পণ্ডিত স্নীকা বেশ অনুতাপ করে বলেছিলেনঃ “রোমে আজকাল তালাক কোন লজ্জার ব্যাপার নয়। নারী তার স্বামীর সংখ্যা গণনার দ্বারাই নিজের বয়স গনণা করে”।
আরেক দার্শনিক মার্শাল একটি নারীর কথা উল্লেখ করে বলছেন যে, সে ১০জন স্বামী গ্রহণ করেছিল। দার্শনিক জুদনিয়েল একজন নারী সম্পর্কে বলছেন যে, সে ৫ বছরে ৮জন স্বামী গ্রহণ করেছিল। সেন্ট জুরুম এমন নারীর বর্ণনা দিয়েছেন যে, সে তার জীবনে ৩২জন স্বামী গ্রহণ করেছে এবং সে ছিল তার স্বামীর ২১ তম পত্নী।
.
- বিয়ে বহির্ভূত নারী-পুরুষের সম্পর্ক যে দূষণীয় হতে পারে, এই ধারণা ক্রমেই তাদের মধ্য থেকে বিলুপ্ত হল। এমনকি তাদের সমাজের বড় বড় বুদ্ধিজিবীরাও ব্যাভিচারকে যৌন স্বাধীনতা হিসেবে বিবেচনা করতে লাগল। ফ্লোরা নামে একটি খেলা সেকালে বেশ জনপ্রিয় ছিল।
- সে খেলায় উলঙ্গ দৌড় প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হত। নারী ও পুরুষ একসাথে উলঙ্গ হয়ে দৌড়াত। পাশাপাশি রোমানদের সাহিত্যের মান এতটাই নীচে নেমে গেল যে, সাহিত্যের মধ্যে নগ্নতা আর অশ্লীলতা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট রইলো না। ক্রমান্বয়ে তাদের সমাজে নগ্নতা, অশ্লীলতা, ব্যাভিচার ও যৌন উদ্দীপক জিনিসগুলো সহজলভ্য হয়ে দাড়ালো। অবশেষে নৈতিকতা ও সামাজিক চরিত্রের এতটাই পদস্খলন ঘটলো যে, নগ্নতা ও অশ্লীলতার প্লাবনে রোম সাম্রাজ্য ছেয়ে গেল। পাশবিক প্রবৃত্তির দ্বারা বশীভূত হবার পর রোম সাম্রাজ্যের গৌরবজ্জল অট্টালিকা এমনভবে ধূলিস্মাৎ হয়ে পড়ল, তার শেষ ইটটির অস্তিত্বও আর অবশিষ্ট রইলো না।
আচ্ছা আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতার শুরুটা কি দিয়ে হয়েছিল জানিস?শিল্প বিপ্লব।শিল্প বিপ্লবের পরে ফরাসি জাতির সামাজিক অবস্থা কেমন ছিল ?
.
খুব গর্ব করে বলতে পারেন, শিল্প বিপ্লবের ফলে ফ্রান্সে কলকারখানা স্থাপিত হয়, নগরায়ন হয়, শিল্পায়ন হয়, দরিদ্রতা কমে যায়, মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। আর সব মিলিয়ে সে সময়ে ফ্রান্সের অবস্থা নিশ্চয় ভালই ছিল।
এবার আমি একটু বলি,কেমন ভাল ছিল ?
শিল্প বিপ্লবের ফলে ফ্রান্সে যখন প্রচুর পরিমাণে কল-কারখানা স্থাপিত হল তখন কর্মক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের অবাধ মেলামেশা বেড়ে গেল। কালক্রমে নারী ও পুরুষের অবাধ মেলামেশা যখন অবাধ যৌনাচারে পরিবর্তিত হল তখন নারীদের বুঝানো হল, এটি অধঃপতন নয় বরং সত্যিকার উন্নতি ও মুক্তি। নগ্নতা ও কামোদ্দীপনতা সে সমাজে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ল। কিছু সংখ্যক লোক আবার নারীদের জীবিকার নামে তাদের ভাড়া খাটাতে শুরু করল। পর্যায়ক্রমে পতিতাবৃত্তি একটি আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ে পরিণত হল। তাদের রাস্তাঘাট, হোটেল, বাজার ইত্যাদি নারীমূর্তিতে এমনভাবে ছেয়ে গেল যেন পুরুষের সেইসব দিকে আকৃষ্ট হওয়া ছাড়া আর উপায়ন্তর না থাকে। উনবিংশ শতাব্দীতে এসে ফ্রান্সের জনগণের দৃষ্টিভঙ্গির এতটাই পরিবর্তন ঘটলো; ব্যাভিচারকে তারা একটি নিছক প্রাকৃতিক বিষয় বলে মনে করা শুরু করল। তাদের সামরিক বাহিনীতে যৌনতা এমনভাবে ছড়াল, পতিতালয়ে সামরিক বাহিনীর সশস্ত্র অফিসারদের কারণে সাধারণ সৈনিকেরা যাওয়ারই চান্সই পেত না।
.
তাদের সামরিক বাহিনীর এই অবস্থা দেখে ১৯১৯ সালে ফরাসী ১২৭ ডিভিশনের উইং কমান্ডার সৈনিকদের নামে জারীকৃত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন,
“জানতে পারা গেল যে, সামরিক বেশ্যালয়ে সশস্ত্র সৈনিকদের ভিড় হওয়ার কারণে সাধারণ অশ্বারোহী ও পদাতিক সৈনিকদের পক্ষ হতে অভিযোগ করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ এই যে সশস্ত্র সৈনিকেরা ঐ স্থানে তাদের ইজারা কায়েম করেছে এবং অন্যদের তার সুযোগ প্রদান করা হচ্ছে না। সৈনিকদের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পতিতার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য হাইকমান্ড চেষ্টা করছেন। কন্তু যতদিন তার ব্যবস্থা না হচ্ছে, ততদিন এতদ্বারা সশস্ত্র সৈনিকদের জানানো যাচ্ছে যে, তারা যেন বেশীক্ষণ ভিতরে না থাকে। প্রত্যেকেই আপন কাম চরিতার্থ করতে যেন একটু তাড়াতাড়ি করে”।
.
এই ধরণের সেনাবাহিনী যদি কোন দেশের নিয়ন্ত্রণ নেয় তো সে দেশের অবস্থা কি হবে? পুরো দেশটাকেই তো তারা একটি পতিতালয় বানিয়ে ফেলবে।
সময়ের আবর্তনে শিল্প বিপ্লবের সূতিকাগার ফ্রান্স যৌনতার এমন এক অতল সাগরে ডুবে গেল যে, বড় বড় শহরগুলিতে নিকটতম আত্নীয়ের মধ্যে এমনকি পিতা ও কণ্যা এবং ভাই ও বোনের মধ্যে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ঘটনা বিরল ছিল না। পাশাপাশি অশ্লীলতার কালো হাত তাদের সাহিত্যকেও আক্রমণ করলো। ক্রমান্বয়ে পতিতাবৃত্তি ফ্রান্সে এক লাভজনক ব্যবসায়ে পরিণত হল। ফরাসী সিনেটের জনৈক সদস্য পতিতাবৃত্তি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেনঃ “পতিতাবৃত্তি এখন আর ব্যক্তিগত ব্যপার নয়। এর এজেন্সীর মাধ্যমে প্রাপ্ত আর্থিক লাভের কারণে পতিতাবৃত্তি একটি ব্যবসা ও সুসংগঠিত একটি শিল্পে পরিণত হয়েছে”।
এভাবে ক্রমান্বয়ে ফরাসী সভ্যতার অভ্যন্তরে যৌনতার ছড়াছড়ি ঘটে এবং কালের আবর্তনে তা ইতিহাস হয়ে রয়ে যায়।
.
হুট করেই বলবেন, অতীত ইতিহাসের কথা বাদ দাও বন্ধু। আধুনিক ইউরোপ আর আমেরিকার দিকে তাকাও।
তাকালে কি দেখব।ওদের উন্নতি দেখবি। প্রগতি দেখবি। পাশ্চাত্যের সভ্যতা আমাদের থেকে অনেক উন্নত। তাদের দেশে নারীদের পর্যাপ্ত স্বাধীনতা আছে। কর্মক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সহাবস্থান আছে। পোশাকের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের নিজস্ব স্বাধীনতা আছে। ওরা ওদের নারীদেরকে ইসলামের মত গৃহকোণে বন্দী করে রাখে নি। যার ফলে আজ তারা উন্নতির চরম শিখরে পৌছে গেছে।
.
- পাশ্চাত্যের সঠিক তথ্য আপনার কাছে নেই বলে এই ধরণের কথা বলতে পারলেন। কেবল বাইরে থেকে ওদের চাকচিক্কটাই দেখেঁ কিন্তু ওদের ভিতরটা যে কতটা অসাড় তা দেখেন নি।
- United States Department of Justice এর দেয়া তথ্যমতে শুধুমাত্র ২০০৫ সালে তোর নারী স্বাধীনতার দেশ আমেরিকায় ১ লক্ষ ৯১ হাজার ৬৭০ জন নারী ধর্ষণের স্বীকার হয়। ২০১৫ সালে এসে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লক্ষেরও উপরে।
.
আমেরিকায় প্রত্যেক মাসে গড়ে ২৫০০০ হাজার, দিনে ৮২২ টি এবং প্রতি ঘণ্টায় ৩৪ টি রেইপ হয়।
২০১৫ সালে British Crime Survey কর্তৃক পরিচালিত অপরাধ বিষয়ক একটি অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাজ্যে জানুয়ারী ২০১৫ থেকে ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত ৩৪,০০০ জন নারী ধর্ষিত হয়। আরও মজার ব্যাপার কি জানিস?
- কি?
- এই সংখ্যাটা পুলিশের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরিকৃত। অথচ যুক্তরাজ্যে যত ধর্ষণ হয় তার মধ্যে মাত্র ১৫% পুলিশের নথিভুক্ত থাকে বাকি ৮৫% ই পুলিশের কাছে নথিভুক্ত থাকে না। ধর্ষনের মাত্রা তাদের দেশে এতটাই বেশি, ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবরে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অভ্যন্তরেই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। কিন্তু গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জামিনে ছাড়া পেয়ে যায় অভিযুক্ত।
- কেন?
- কারণ অভিযুক্ত আসামী স্যাম আর্মস্ট্রং ছিল দক্ষিণ থানেটের এমপি ক্রেগ ম্যাকিনলির সহযোগী।
.
যৌনবাহিত রোগের মধ্যে সবচেয়ে মারাক্তক রোগ কোনটি?এইডস।
বিশ্বের কোন দেশ এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার দিক থেকে ২য় অবস্থানে আছে?
Centers for Disease Control এর রিপোর্ট হতে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৭ সালে ১২,১৮,৪০০ জন লোক এইডসে আক্রান্ত। যাদের মধ্যে ১৫৬,৩০০ জনই তাদের সংক্রমণ সম্পর্কে অসচেতন। UNAIDS এর ২০০৯ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা যায় যে যুক্তরাষ্ট্রে ১,২০০,০০০ জন লোক HIV নিয়ে বসবাস করছে, তাদের মধ্যে ৩১০,০০০ জন হল নারী। শুধুমাত্র New York City-তে এর সংখ্যা হল ৯২,৬৬৯ জন।
.
এর পরেই আছে আরেক নারী স্বাধীনতার দেশ যুক্তরাজ্য। Centers for Disease Control এর একটি রিপোর্ট বলছে, যুক্তরাজ্যে ২০০৯ সালে ৮৬,৫০০ জন লোক এইডসে আক্রান্ত হয় ৫১৬ জন মানুষের মৃত্যু ঘটে। এছাড়াও ২০১৩ সালে CDE অনুমান করে যে যুক্তরাজ্যে ৮২০,০০০ জনেরও বেশি লোক গনোরিয়া রোগ জনিত প্রভাবের স্বীকার হয়। শুধু এইডস কিংবা গনোরিয়া নয় সিফিলিস, ক্ল্যামাইডিয়া সহ বিভিন্ন যৌনবাহিত রোগগুলোও তাদের দেশে এতটাই মারাক্তক আকার ধারণ করছে যে, তাদের সরকার তা নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। শত প্রযুক্তি, শত ডাক্তার তাদের কোন কাজে আসছে না। কেন?
- যৌনতা। যৌনাকর্ষণবোধ। যৌনতা একটি সংক্রামক ব্যাধির ন্যায় তাদের দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
- কিভাবে ছড়াল?
মানুষের যৌন চাহিদা অপ্রতিরোধ্য এবং সীমাহীন। এমনকি অন্য যে কোন প্রাণীর থেকেও মানুষের মধ্যে যৌনাকর্ষণবোধটা অনেক বেশি। দৈহিক গঠন, চালচলনে, স্পর্শ ইন্দ্রিয়, কথা বার্তা ইত্যাদির মধ্যে বিপরীত লিঙ্গের আকর্ষণের উপাদান মানুষের মধ্যে যা রয়েছে, তা পশু প্রাণীতে নিছক সামান্য। পশুদের মধ্যে যৌন চাহিদা সীমিত আকারে থাকে বলেই তারা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি যৌন সহিংসতা ঘটায় না, যা মানুষ করে থাকে। মানুষের পারস্পরিক যৌন চাহিদা তাকে এতটাই প্রভাবিত করে যে, যদি তার লাগাম না টেনে ধরা যায় তাহলে সে তার গর্ভধারিণী মাতাকেও তার যৌন সঙ্গী করতে দ্বিধাবোধ করে না। যা পাশ্চাত্যে অহরহ ঘটছে।
আচ্ছা, মানুষের মধ্যে এই আকর্ষণ এত প্রবল মাত্রায় থাকার কারণ কি? বংশবৃদ্ধি? নাকি পারস্পরিক চাহিদা মেটানো?
- এর কোনটিই মুখ্য কারণ নয়।
- তাহলে?
- মানুষের অত্যাধিক যৌন বাসনা প্রদানের কারণ এটা নয় সে পশুদের তুলনায় অধিক যৌন ক্রিয়া করবে অথবা বংশবৃদ্ধি করবে বরং এই চাহিদা প্রদান করা হয়েছে পারস্পরিক চিরন্তন সঙ্গলাভ, আন্তরিক সংযোগ এবং আত্মিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য। একে অপরকে অন্তর দিয়ে ফিল করার জন্য। মানুষ পশুদের থেকে অধিক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা সত্বেও তাদের চেয়ে কম সন্তান জন্ম দেয়। আর কম সন্তান জন্ম দেয়া সত্বেও তারা পৃথিবীতে টিকে আছে কিন্তু অনেক পশুই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
এজ এ স্টুডেণ্ট অফ মেডিক্যাল সাইন্স ইউ নো, মানুষের মধ্যে যতটা যৌন চাহিদা দেয়া হয়েছে তার সবটুকু যদি সে ব্যবহার করে তাহলে তার শরীর ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়েবে। যৌনতা একটি সংক্রামক ব্যাধি, যা নিয়ন্ত্রণে না রাখলে তা মহামারী আকারে সমাজে প্লেগ রোগের মত ছড়িয়ে পড়বে। ধ্বংস করবে গ্রাম, নগর, বন্দর ও সভত্যার বিকাশকে।
আর ইসলাম এইদিকটা পাশ্চাত্যের অনেক আগেই অনুধাবন করতে পেরেছে। তাই ইসলাম নারী ও পুরুষের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব মেইনটেইন করতে বলেছে। শুধু শিক্ষা কিংবা প্রযুক্তি সমাজ থেকে ধর্ষণ, ইভটিজিং কিংবা নারী নির্যাতন কমাতে পারে না। যদি তাই হত তাহলে পাশ্চাত্যের এই দশা হত না।
- নারীকে আকর্ষণীয় ক্ষমতা, রূপ, লাবণ্য পুরুষদের তুলনায় অধিকমাত্রায় দেয়া হয়েছে। সেই সাথে তাকে দেয়া হয়েছে বেশি লজ্জা ও পুরুষদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম দৈহিক শক্তি। পক্ষান্তরে পুরুষকে আকর্ষণীয় ক্ষমতা ও রূপ-লাবণ্য নারীর তুলনায় কম দেয়া হয়েছে পাশাপাশি দৈহিক শক্তি দেয়া হয়েছে বেশি। নারীরা স্বাভবতই পুরুষদের দৈহিক ক্ষমতার কাছে অসহায়। পুরুষের হিংস্রতার সাথে মোকাবেলা করার মত শক্তি তার নেই। তাই ধর্ষণের সময় নিজের শত প্রচেষ্টা সত্বেও সে একাকী পুরুষের সাথে মোকবেলা করতে ব্যর্থ হয়। তাই ইসলাম এক ভারসাম্যপূর্ণ বিধিব্যবস্থার মাধ্যমে নারীদেরকে সংরক্ষণ করেছে। ইসলাম এমন একটি ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছে যার মাধ্যমে নারী ও পুরুষ একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে সমাজে অবস্থান করে সমাজকে টিকিয়ে রাখবে। সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবে সামনের দিকে। তারা শুধুমাত্র পারষ্পরিক যৌন চাহিদা মিটিয়েই ক্ষান্ত হবে না বরং তাদের মধ্যে এক আত্মিক বন্ধন স্থাপিত হবে। আর আত্নিক বন্ধন স্থাপনের মাধ্যম ফ্রি সেক্স নয় বরং মেরিজ।
.
ব্যাপারটা কি এমন! ইসলাম নারী ও পুরুষের নিজেকে কন্ট্রোল করার সক্ষমতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে?
কাম টু দ্যা পয়েন্ট। আপনি তো ঘরের দরজায় তালা ব্যবহার করেন তাই না?
- তার মানে কি আমি এটা মনে করব, সমাজের সব লোককেই চুর মনে করেন?
- না। অবশ্যই না।
- সরকারের পুলিশ বাহিনী আছে জানিস তো?
- জানবো না কেন? এটা তো সবাই জানে।
- সরকার পুলিশ বাহিনী গঠন করেছে তার মানে কি এটা মনে করবেন যে, সরকার তার সব জনগণকেই চোর মনে করেছে?
.
বলতে পারেন, কিন্তু যদি আইনের মাধ্যমে নৈতিকতাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে নারী ও পুরুষের অবাধ মেলামেশাতে ইসলামের অসুবিধা কোথায়?
আপনার আইডিয়াটা কেমন হল! ট্রেনে টিকিট কাটাকে বাধ্যতামূলক করলি, আবার কেউ বিনা টিকিটে ভ্রমণ করলে তাকে বাধাপ্রদানও করলি না।
আইনের মাধ্যমেই যদি নৈতিকতাকে নিয়ন্ত্রণ করা যেত তো পাশ্চাত্যের অবস্থা কি এমন হত? পাশ্চাত্যে কি আইন কম আছে? পুলিশ কম আছে? গ্রীকদের কি আইন কম ছিল? রোমানদের কি আইন কম ছিল? ফ্রান্সে কি কোন আইনই ছিল না? তা সত্ত্বেও ওদের অবস্থা কেন এতটা শোচনীয় হয়েছে?
কিন্তু ইসলাম শুধু কেন নারীকে পর্দা করতে বলেছে?
.
- ইসলাম কেবল নারীদের জন্য পর্দার বিধান নাযিল করেন নি। বরং কোরআনের সূরা নূরের ৩০ নাম্বার পড়লে দেখবি ইসলাম নারীদের আগে পুরুষদের জন্যে পর্দার কথা বলেছে। এই আয়াতে আল্লাহ প্রথমে মু’মিন পুরুষদেরকে পর্দা এবং যৌনাঙ্গের হিফাযত করতে বলেছেন। এরপর ৩১ নাম্বার আয়াতে মু’মিন নারীদেরকে পর্দা এবং যৌনাঙ্গের হিফাযত করতে বলেছেন। ইসলাম যেমন নারীদের জন্য তাদের মাহরাম ব্যতীত অন্যদের সামনে পর্দা করাকে আবশ্যক করেছে, ঠিক তেমনি আবশ্যক করেছে পুরুষদের জন্যেও। ইসলাম যেমন চায় না কোন পুরুষ বেগানা নারীর সাথে সহবস্থান করুক, ঠিক তেমনি ইসলাম এটাও চায় না যে কোন নারী বেগানা যুবকের সাথে সহবস্থান করুক। ইসলাম যেমন নারীদের পোশাকের জন্য নির্দিষ্ট বিধান প্রণয়ন করেছে, ঠিক তেমনি বিধান প্রণয়ন করেছে পুরুষদের জন্যে। ইসলামে যেমন নারীদের পোশাকের ধরণ, রং, মাত্রা ইত্যাদি নির্ধারিত, ঠিক তেমনি নির্ধারিত রয়েছে পুরুষদের জন্য। ইসলাম বিদ্বেষীদের প্রায়শই মুসলিম নারীদের পর্দা নিয়ে সমালোচনা করতে দেখা যায়। কিন্তু তারা অন্যান্য ধর্মের নারীদের বিধান নিয়ে সমালোচনা করেন না।
আচ্ছা খৃষ্ট ধর্মের মহিলা নানদের দেখেছেন,
- তাদের পোশাক কেমন!তারা কেবলমাত্র মুখমণ্ডল, হাতের কব্জি ব্যতীত সর্বাঙ্গ ঢেকে রাখে।
- তাহলে তোরা খৃষ্টান মহিলা নানদের এই পোশাক নিয়ে আপনারা কেন সমালোচনা কররেন না? সমস্যা কি কেবল ইসলাম নিয়ে? ইসলামের পর্দার বিধান নিয়ে?
.
যখন নারী পুরুষের মধ্যে অবাধ মেলামেশা কিংবা বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ককে বৈধতা দিবে তখন সমাজে ভ্রূন হত্যা শুরু হবে নয়ত জারজ সন্তানের পরিমাণ বেড়ে যাবে।
- কেন?
- কারণ সন্তান প্রতিপালন ছেলেখেলা নয়। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। এজন্য একজন নারীর হৃদয়ে অতিমাত্রায় সন্তানের প্রতি ভালোবাসা, মমত্ববোধ এবং প্রচুর পরিমাণে কষ্ট স্বীকার করতে হয়। কিন্তু পাশ্চাত্যের তথাকথিত আধুনিক সমাজে নারী ও পুরুষের অবাধ মেলামেশার ঘোড়া এতটাই লাগামহীন হয়ে পড়েছে যে, তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে একে তো অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলছেই অপরদিকে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। আর তাদের অনিয়ন্ত্রিত যৌন সম্পর্কের ফলে যে সন্তান দুনিয়াতে আসছে, হয় তারা ভ্রূনাবস্থাতেই সে নবজাতকে হত্যা করছে, নয়ত সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সরকারের আশ্রয়ে পিতামাতা ছাড়া জারজ সন্তান হিসেবে বেড়ে উঠছে। রাশিয়ায় প্রতি ১০০ টি শিশু জন্মগ্রহণের পাশাপাশি গর্ভ পাতের ঘটনা ঘটছে ২১৭ টি। সম্প্রতি পোল্যান্ডে সরকার আইন করেছিল গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার। কিন্তু সে দেশের নারীরা তার তীব্র প্রতিবাদ জানায়। গত ৩রা অক্টোবর ২০১৬ খৃষ্টাব্দে নারীরা এই আইনের প্রতিবাদ স্বরূপ পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ এ কালো কাপড় বেধে মিছিল করেন। তারা এই দিনটির নাম প্রদান করেন ব্ল্যাক মানডে। সেইদিন নারীরা সমগ্র রাজধানী জুড়েই ধর্মঘট পালন করে। যাতে এই আইনকে বাতিল করা হয়।
নারী স্বাধীনতা ভাল। কিন্তু স্বাধীনতার নামে নারীকে ভোগ্য পণ্য বানানোটা বেশ লজ্জাজনক বৈকি।
.
- নারী ও পুরুষের মধ্যে আকর্ষণবোধটা স্বভাবজাত। আমরা যদি নারী স্বাধীনতা কিংবা যৌন স্বাধীনতার নামে সেটাকে অভারটেক করতে চাই তাহলে তার পরিণতি হবে সত্যিই মারাত্মক। যৌনতার পাগলা ঘোড়া যদি একবার লাগামহীন হয়ে যায়, তাহলে তাকে বাগে আনাটা অসাধ্যই বৈকি। আর পাগলা ঘোড়া যাতে লাগামহীন না হয় তার জন্যেই স্রষ্টা পর্দার বিধান দিয়েছেন এবং অবাধ মেলামেশাকে অবৈধ করেছেন।
.
ফারিস সিরিজ-০২/ জাকারিয়া মাসুদ
.
_____________________________
তথ্যসূত্রঃ
1) “A brief cultural history of sex”. London: Independent. co.uk. 23 September 2008. Retrieved 22 July 2012.
http://www.independent.co.uk/…/a-brief-cultural-history-of-…
2) Forrest Wickman (6 March 2012).“Rush Limbaugh calls Sandra Fluke a “prostitute": Is prostitution really the world's oldest profession?". http://www.slate.com/…/rush_limbaugh_calls_sandra_fluke_a_p…
3) বি.বি.সি, সোমবার, ৩/১০/২০১৬ ।
4) http://m.dailynayadiganta.com/detail/news/162362
5) "Prevalence, Incidence, and Consequences of Violence Against Women: Findings of the National Violence Against Women Survey"(PDF). National Institute of Justice. November 1998. Retrieved2014-02-01. https://www.ncjrs.gov/pdffiles/172837.pdf
6) "Crime in England and Wales: Year ending December 2015 - Sexual offenses". Office for National Statistics. December 2015. Retrieved May 2016 http://www.ons.gov.uk/…/crimeinengl…/yearendingdecember2015…
7) NSPCC. "Sexual abuse". NSPCC. Retrieved 2016-05-24. https://www.nspcc.org.uk/…/child-abuse-…/child-sexual-abuse/
8) “HIV in the United States”. Center for Disease Control. September 29, 2015. Retrieved June 29, 2016.
9) United States”. HIV/AIDS Knowledge Base. University of California, San Francisco. Retrieved November 25, 2011.
10) “December 2008 Monthly HIV/AIDS Statistics” (PDF). California Department of Public Health Office of AIDS. July 9, 2009. Retrieved March 21, 2010. “The HIV/AIDS Epidemic in the United States”. Kaiser Family Foundation. March 22, 2013. Retrieved June 2, 2012.
11) Centers for Disease Control and Prevention, (CDC) (June 3, 2011). “HIV surveillance—United States, 1981–2008”. MMWR. Morbidity and mortality weekly report. 60 (21): 689–93. PMID 21637182. Health Protection Agency (2010). HIV in the United Kingdom: 2010 Report. Surveillance; riques, Risk Assessment Division = Le VIH et le sida au Canada: rapport de surveillance en date du 31 décembre 2009 / Division de la surveillance et de l'évaluation des (2010). HIV and AIDS in Canada : surveillance report to December 31, 2009 (PDF). Ottawa: Public Health Agency of Canada, Centre for Communicable Diseases and Infection Control, Surveillance and Risk Assessment Division. ISBN 978-1-100-52141-1.