#Campúsian-15
#Standard-9
মহানবী (সা:)-এর অর্থনৈতিক জীবন
মানবতার মুক্তির দিশারি মুহাম্মদ (সা.) জাহেলিয়াতের সব অন্যায়-অত্যাচার, অবিচার-অশামিত্ম, অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক কর্মকা- বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তিনি বিশ্বমানবতার জন্য একটি পরিপূর্ণ আদর্শ জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
একটি গুরম্নত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে সামাজিক অর্থনীতি সুস্থ রাখার লক্ষ্যে তিনি যেসব আদর্শ ও মূলনীতি প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেগুলো একেকটি অমূল্য শিক্ষা। অর্থনীতি সুষ্ঠু ও বৈষম্যহীন করতে হলে সেগুলোর বিকল্প নেই।
তিনি মোট ব্যাবসা কে দুভাগে ভাগ করেছেন,
১)বিশেষ করে মানব নিষ্পেষণ ও সমাজবিধ্বংসী অন্যতম মাইন সুদ, ঘুষ, লটারি ও মজুদদারি প্রভৃতি তিরোহিত করেন। আল্লাহ প্রেরিত অহির আলোকে তিনি হালাল ব্যবসাভিত্তিক একটি সর্বোত্তম, অভূতপূর্ব আদর্শ সমাজ বিনির্মাণ করেছিলেন।
২)রাসূল সাঃ ব্যবসা করেছেন। অন্যদের ব্যবসা করতে উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি যে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেই মক্কা শহর আরব উপদ্বীপের মধ্যে বিশিষ্ট ব্যবসার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। হজরত ইব্রাহিম (আ.) দোয়া করেছিলেন, ‘অতএব, হে আল্লাহ আপনি লোকদের মনকে তাদের প্রতি আগ্রহী বানিয়ে দিন এবং তাদের রিজিক দিন নানা ধরনের ফলমূল দিয়ে, যেন তারা শোকর করতে পারে।’ (সূরা ইব্রাহিম : ৩৭)। এ দোয়াও মক্কাবাসীর জন্য খুবই কল্যাণকর প্রমাণিত হয়েছে।
🍀🍀 মুহাম্মাদ সাঃ এর বাল্যকাল;
ইসলাম আগমনের পূর্বে আরবদেশে পোশাক শিল্প, চর্মকার ও রাখালের পেশা ইত্যাদি যৎসামান্য কিছু কর্ম ছাড়া তেমন কোনো শিল্পের প্রসার ছিল না। ব্যবসাই ছিল আরবদের আয়-উপার্জনের সর্বপ্রধান অবলম্বন। কিন্তু তাদের চিরায়ত আত্মকলহ ও ডাকাত দলের হানা তাদের ব্যবসার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াত। তাই তাদের ব্যবসা শুধু পবিত্র মাসগুলোতেই জমে উঠত। চড়া সুদ নিছক ব্যবসা হিসেবে তাদের জীবন প্রবাহের একটি অংশে পরিণত হয়েছিল।[১]
রাসুলুল্লাহ্ (সা.) শিশুকাল কাটিয়েছিলেন পবিত্র নগরী মক্কায়। কোরাইশের শীতকালে ইয়েমেন ও গ্রীষ্মে সিরিয়া ভ্রমণ ছিল দুটি অপরিহার্য বাণিজ্যিক ভ্রমণ। সর্দার হাশিম ইবনে আবদে মানাফ কোরাইশের ধনী-দরিদ্র সকলের মাঝে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বন্ধন সৃষ্টি করার আহ্বান জানান। ঠিক এই সময় এসে পড়ে ইসলামের বাণী। এছাড়াও কোরাইশের আকাশে ছিল তখন ধনাঢ্যতা ও শৌর্য-বীর্যের ফকফকা রোদ। এমন খাঁটি বাণিজ্যিক পরিবেশেই বেড়ে উঠেন মহানবী (সা.)।[২]
🍀🍀 মুহাম্মাদ সাঃ এর কিশোর কাল;
বার বছর বয়সে রাসুলুল্লাহ (সা.) চাচা আবু তালিবের সাথে সিরিয়ার পথে একটি বাণিজ্যিক কাফেলায় অংশগ্রহণ করেন। পথিমধ্যে ‘বুহাইরা’ নামক এক খৃস্টান পাদ্রীর সাথে দেখা হলে তিনি শিশু মুহাম্মদকে ইহুদিদের থেকে সাবধানে রাখার পরামর্শ দেন। তাই আবু তালিব দ্রুত তাকে নিয়ে মক্কায় ফিরে আসেন। [৩]
মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে তিনি কনিষ্ঠ চাচা হযরত জুবায়ের (রাজিআল্লাহু তায়ালা আনহু) এবং কয়েকজন যুবককে নিয়ে ‘হিলফুল ফুজুল’ নামে একটি সমাজসেবামূলক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।[৪]
🍀🍀যৌবনে মুহাম্মাদ সাঃ;
মূর্খতার যুগ পেরিয়ে আসা এক পথবিচ্যূত সমাজের মাঝে নবুওয়তের এমন নতুন দাওয়াত নিয়ে দাঁড়ানোর জন্য বহু অর্থেরও প্রয়োজন ছিল।
নবুওয়তের গুরুদায়িত্ব বহনের পর রাসুলুল্লাহ্ (সা.) ব্যবসা-বাণিজ্যে মনোনিবেশ করতে পারছিলেন না। তথাপি তাঁর নিজস্ব ও খাদিজা (রা.) হতে প্রাপ্ত পুঁজি দ্বারা নতুন ধর্মের প্রচার করতে লাগলেন। নও-মুসলিম সাহাবিগণের মাঝে যারা সামর্থ্যহীন তাদের খরচাদি রাসুল (সা.) নিজেই বহন করেছিলেন।
যৌবনে উপনীত হবার পর মেষ চরানো এবং পরে ব্যবসার মাধ্যমে শুরু হয় মহানবীর (সা.) অর্থনৈতিক জীবন। তাঁর ব্যবসায়িক সুনাম ও ‘আল-আমিন’ উপাধিতে ভূষিত হওয়ার কারণে খাদিজা (রাজিআল্লাহু তায়ালা আনহা) তাকে প্রথমত ব্যবসা ও দ্বিতীয়ত স্বামী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। সততা ছাড়াও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মধ্যে বুদ্ধিমত্তা, দৈহিক শক্তি ও বিচক্ষণতা ইত্যাদি গুণের সমাবেশ ঘটেছিল।
হযরত খাদিজা (রা.) ছিলেন একজন ধনবতী, ভদ্র ও সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী মহিলা। তিনি তার পুঁজি দিয়ে লাভ-ক্ষতির অংশীদারিত্বভিত্তিক যৌথ ব্যাবসা করতেন।[৫]
🌺🌺 বিশ্বস্ততা: খাদিজা (রা.) মহানবীর (সা.) সততা ও উত্তম চরিত্রের কথা জানতে পেরে তাঁকে পুঁজি নিয়ে সিরিয়ায় ব্যবসায়িক সফরে যাওয়ার জন্য আবেদন জানালেন। মহানবী (সা.) তার প্রস্তাব গ্রহণ করলেন এবং দ্বিগুণ পুঁজি ও বিনিময় নিয়ে খাদিজার ক্রীতদাস ‘মায়সারাহ’র সঙ্গে সিরিয়ার পথে বাণিজ্যিক সফরে বের হলেন। বিগত সফরসমূহের তুলনায় এবার সফরে দ্বিগুণ লাভ হলো। ‘মায়সারাহ’ খাদিজার নিকট রাসুল (সা.)-এর বিশ্বস্ততা ও মহান চরিত্রের বর্ণনা দিল। খাদিজা (রা.) বিশেষত রাসুল (সা.)-এর সংস্পর্শে আসার পর তার সম্পদে যে সমৃদ্ধির চিহ্ন ফুটে উঠেছে তা দেখে বিস্মিত হলেন। তিনি তার বান্ধবী ‘নাফিসাহ’র মাধ্যমে রাসুল (সা.)-এর নিকট বিবাহের প্রস্তাব পেশ করেন। রাসুল (সা) এ ব্যাপারে তাঁর চাচাদের সঙ্গে মতবিনিময় করলে তারা বিবাহ সম্পন্ন করেন। [৬]
স্বামী হিসেবে রাসুলুল্লাহ (সা.) খাদিজার ব্যবসার তত্ত্বাবধান করতেন। সাথে সাথে নিজেও খাদিজার পুঁজি নিয়ে পুরোদমে ব্যবসা করছিলেন। তিনি ছিলেন বাণিজ্য নগরী মক্কার সর্বাধিক পুঁজিবান ব্যবসায়ী। নিঃসন্দেহে এই দীর্ঘ ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতাই তাঁর জন্য মদিনায় অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটাতে সহায়ক প্রমাণিত হয়েছিল।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনাড়ম্বর জীবনচরিত দেখে একথা ভুলে গেলে চলবে না, তিনি ছিলেন মক্কার সবচেয়ে বলিষ্ঠ, বুদ্ধিমান ও অধিক পুঁজিবান ব্যবসায়ী।
।।।
🍁🍁 নবুওতের দাওয়াতের পর:
যখন নবী হলেন, সহজে রাসুল (সা.)কে বধ করতে না পেরে কোরাইশ বনু হাশিম ও বনু আবদুুল মুত্তালিবকে হুমকি দিল যে, তাদের হাতে মুহাম্মদকে (সা.) সমর্পণ না করলে তাদেরকে বয়কট করা হবে। কোরাইশ তিন বছর (মতান্তরে দুই বছর) এ নির্বাসনে অটল থাকল। রাসুল (সা.) ও মুসলমানগণ মর্মান্তিক কষ্টের সম্মুখীন হলেন। [৭]
🍀🍀 মদিনায় হিজরত:
হিজরত ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি ইসলামি রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন এবং তথায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অর্থনৈতিক কাঠামো রচনার পটভূমি। মক্কায় মুসলমানদের অর্থনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ ছিল না। সেখানে আবু বকর (রা.) এবং ধনী সাহাবিগণ কোনো কোনো মুসলমানকে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে তাদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করেছিলেন মাত্র। খাদিজা (রা.) ও আবু বকর (রা.)-এর মত ধনী ব্যবসায়ীগণও অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছিলেন। হিজরতপূর্ব সময়ে তারা একপ্রকার নির্বাসনের পরিবেশেই জীবন-যাপন করছিলেন।
🍀🍀 মুহাজিরদের অবস্থা 🍀🍀
অর্থনৈতিকভাবে নিগৃহীত মুহাজিরগণ ছিলেন ভীষণ দুর্বল। কারণ, তারা আপন ধন-সম্পদ মাতৃভূমি মক্কায় রেখে এসেছিলেন। এই মুহূর্তে রাসুল (সা.) তাদের ও আনসারদের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করে তাঁর অসীম প্রজ্ঞার পরিচয় দেন। উল্লেখ্য, মুহাজিরগণ কৃষিকাজ জানতেন না। ব্যবসাই ছিল তাদের প্রধান অর্থনৈতিক অবলম্বন। তাই রাসুল (সা.) মসজিদ নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার সাথেসাথেই বাজার প্রতিষ্ঠা করা শুরু করেছিলেন।
মুহাজিরগণ স্বনির্ভর জীবন-যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়-সম্বলের অধিকারী ছিলেন না। এমতাবস্থায় তাদের ও আনসারদের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন প্রতিষ্ঠা করার কোনো জুড়ি ছিল না। ভ্রাতৃত্ব-বন্ধন ছিল নতুন ইসলামি অর্থনৈতিক বিপ্লবের ভিত্তিপ্রস্তর স্বরূপ। এই বন্ধন সকল সংকটের উপর্যুপরি সমাধান প্রমাণিত হয়। এই ভ্রাতৃত্ব রক্তের বন্ধনের চেয়েও বেশি অটুট ও মজবুত ছিল।
বদর যুদ্ধ পর্যন্ত উত্তরাধিকারের বিধানও বলবৎ ছিল। পরে উত্তরাধিকার রহিত হলেও কিন্তু ভ্রাতৃত্ব চিরকালের জন্য রয়ে গেল। যার সাথে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিষয়টি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
গোত্রে গোত্রে বিভেদই ছিল হিজরতের পূর্বে মদিনার সার্বিক উন্নতির প্রধান অন্তরায়। এই ভ্রাতৃত্ব সকল বিভেদের অবসান ঘটিয়ে এক নতুন সমাজ উপহার দিতে সক্ষম হয়েছিল। এছাড়াও মদিনার অর্থনৈতিক জীবনের ছড়ি ঘুরাচ্ছিল ইহুদিরাই। এ ভ্রাতৃত্বের বন্ধন না হলে নিঃস্ব মুহাজিরগণের পক্ষে অর্থনৈতিকভাবে ইহুদিদের মোকাবেলা করা ছিল দুষ্কর। [৮]
🍀🍀মদীনার ব্যাবসা:🍀🍀
হিজরতের পর মদিনা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলো। রাসূল (সা.) ছিলেন সে রাষ্ট্রের কর্ণধার। চাইলেই তিনি সাহাবিদের সম্পদ থেকে চাঁদা দাবি করে আয়েশি জীবনযাপন করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে সীমাহীন অভাব-অনটন সহ্য করেছেন। নবুয়ত ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব কাঁধে থাকায় তখন আর সক্রিয় ব্যবসা করা সম্ভব হয়নি। মাসের পর মাস তাঁর ঘরে চুলা জ্বলেনি। তবে তাঁর অর্থনৈতিক কর্মকা- থেমে থাকেনি।
ঝর্ণাধারা ও কূপসমূহের আধিক্যের কল্যাণে মদিনার অর্থনৈতিক জীবন ছিল কৃষিনির্ভর। এছাড়াও গহনাদি ও অস্ত্রশস্ত্র তৈরি, খনিজ ও বয়ন শিল্প বহুল সমাদৃত ছিল। ব্যাপক হারে সুদের আদান-প্রদান চলতো। কিন্তু গোত্র-বিভেদ ও সঙ্ঘাতের কারণে মদিনার অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল চরম অবনতির শিকার।
ঐতিহাসিক হিজরত মুহাজির-আনসার সকলের জীবন প্রবাহকে আগাগোড়া পাল্টে দিয়েছিল। হিজরতের পরপরই মহানবী (সা.) সাহাবিদেরকে শ্রমের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করলেন। মদিনায় প্রবেশের পর স্বয়ং নবী করিম (সা.) সশরীরে মসজিদ নির্মাণে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
🌎🌎 অর্থনৈতিক ক্ষেত্র:
রাসুলুল্লাহ্ (সা.) কার্যত শ্রমের যে আদর্শ পেশ করেছিলেন তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুহাজিরগণও আনসারদের ওপর বোঝা সৃষ্টি না করে কাজে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। এভাবেই গড়ে উঠছিল একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক বন্ধন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় প্রবেশের পর আনসারগণ তাদের জমি-জমা ও ধন-সম্পদ থেকে উদ্বৃত্ত সবকিছু তাঁর কাছে সমর্পণ করতে শুরু করলেন। যাতে ইসলামি রাষ্ট্রে নবাগত মুহাজিরগণ শক্তপায়ে দাঁড়াতে পারেন। স্বাভাবিকভাবে রাসুলকেও (সা.) মুহাজিরদের ব্যয়ভার নির্বাহে অংশগ্রহণ করতে হয়েছিল।
রাষ্ট্রের জন্যে অর্থনৈতিক পদক্ষেপ:
🍂🍂জাকাত,
🍂🍂উশর,
🍂🍂ফাই (সন্ধিসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ),
🍂🍂জিযয়াহ্ (কর),
🍂🍂খারাজ (টেক্স)
🍂🍂খুমুস (যুদ্ধলব্ধ সম্পদের এক-পঞ্চমাংশ) ইত্যাদি প্রচলন করে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভিতকে মজবুত করেছিলেন।
🍂🍂ফসলি জমির মালিক আনসারগণ রাসুল (সা.) এর নিকট তাদের জমি-জমাও ভাগ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করলে রাসুল (সা.) বলেন, ফসলের একটি অংশ তাদেরকে প্রদান করাটাই যথেষ্ট। ‘যে ব্যক্তি কোন পরিত্যক্ত জমিকে আবাদ করবে সে তার মালিক’- এ ভিত্তিতে সম্মিলিতভাবে মুসলমানরা পরিত্যক্ত ফসলি জমিসমূহকে আবাদ করা শুরু করেন। স্বয়ং রাসুল (সা.) হযরত বেলালকে (রা.) এক টুকরো খনিজ সম্পদসহ জমি ও হযরত আলিকে (রা) চাষ করার জন্য চার খন্ড জমি দিয়েছিলেন।
🍂🍂‘মাহযুর’ ও ‘লিহ্’ ইত্যাদি উপত্যকার ব্যাপারে তিনি আদেশ দেন, যেন উঁচু জমিতে দুই হাঁটু পরিমাণ পানি হওয়ার পর নিচু জমির দিকে পানি ছেড়ে দেওয়া হয়। রাসুল (সা.) বিশেষভাবে এ সেচ-পদ্ধতির প্রতি লক্ষ্য রাখতেন।
🍂🍂সামাজিক বন্ধন রক্ষার্থে তিনি শক্তিশালীকে দুর্বলের সহযোগিতা করার নির্দেশ দেন। যেহেতু ব্যবসায়ীগণ কৃষক ও অন্যান্য শ্রমিক শ্রেণির তুলনায় গুনাহর অধিক নিকটবর্তী তাই তিনি তাদের প্রতি বহু হাদিসে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। এছাড়াও রাসুল (সা.) তাদেরকে সহিঞ্চুতার আদেশ দেন।
পবিত্র ব্যবসায়িক পেশা মনোপ্রবৃত্তির শিকার না হওয়ার জন্য তিনি ঋণ ও ক্রয়-বিক্রয় লিখে রাখার আদেশ দিতেন।
সততার প্রতি জোর দিয়ে মহানবী (সা.) বলেন : ‘ক্রেতা-বিক্রেতা যদি সত্য বলে তাহলে তাদের কর্ম বরকত প্রাপ্ত হয়। যদি তারা মিথ্যাচারিতার আশ্রয় নেয় তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।’ তিনি মজুতদারি, মিথ্যা হলফ, অনিশ্চয়তামূলক ও ফটকামূলক সকল আদান-প্রদান নিষিদ্ধ করেন।[৯,১০,১১]
রাসুল (সা)-এর বিনিময়-বৈষম্য দূরীকরণ, ধনী-গরিবের মধ্যকার দূরত্ব সংকোচন, বাগান চাষ ও পরিবার পরিপালন ইত্যাদি কর্মকান্ডের বিস্তারিত বর্ণনা সিরাতগ্রন্থসমূহে বিশদভাবে উল্লেখিত আছে।
অধুনা অর্থনীতিবিদদের মতে, রাসুল (সা.) যে অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলেছিলেন তা নিম্নোক্ত মূলনীতি সমূহের অন্তর্ভুক্ত ।
🌳🌳সেবামূলক কার্যক্রম।
🌳🌳মধ্যস্বত্বভোগ সীমাবদ্ধ করা।
🌳🌳সুদকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা
🌳🌳ব্যক্তি মালিকানার সাথে সামাজিক দায়িত্ববোধের সমন্বয়।
🌳🌳সাম্যের নীতি প্রতিষ্ঠা ।
🍀🍀 মিতব্যয়ী মুহাম্মাদ সাঃ 🍀🍀
রাসুলুল্লাহ্ (সা) পানাহার ও পোশাক-পরিচ্ছদের বেলায় অতিমাত্রায় বিলাসিতা ও শৌখিনতা পছন্দ করতেন না। তিনি ছিলেন মিতব্যয়ী ও মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী।
🏵️🏵️মহানবী (সা.) বলেন: ‘মিতব্যয় জীবন-যাপনে সফলতার অর্র্ধেক’।
‘জীবন-যাপনে মধ্যপন্থী হওয়া ব্যক্তির গভীর জ্ঞানের পরিচায়ক।’
🏵️🏵️মহানবী (সা.) চাটাইতে বসতেন এবং শুতেন। এ থেকে বোঝা যায়, তিনি বিলাসপরায়ণ ছিলেন না। আর এটি সুস্থ অর্থনীতি ও সুন্দর জীবনের বুনিয়াদ স্বরূপ।
🏵️🏵️রাসুল (সা.) ব্যাপকভাবে খাদ্য ও পোশাকসহ যাবতীয় কর্মে অপব্যয় থেকে বারণ করেছেন। এ ব্যপারে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন : ‘আল্লাহ্র কসম! রাসুলুল্লাহ্ (সা.) একই দিনে দুবার রুটি ও গোশত দ্বারা পরিতৃপ্ত হননি।
🏵️🏵️সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) অযু করা অবস্থায় মহানবী (সা.) তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় বললেন, ‘অপচয় করো না!’। সাদ (রা.) বললেন: পানির মাত্রাতিরিক্ত খরচও কি অপচয়ের অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেন: হ্যাঁ, যদিও তুমি প্রবাহমান নদীতে অবস্থান কর। [১২]
🏵️🏵️খাদ্য সঞ্চয়ের ব্যপারে রাসুলের (সা.) নীতি ছিল আলোকোজ্জ্বল। একদা নবী করিম (সা.) বেলালের (রা.) নিকট প্রবেশ করলেন। তার নিকট এক থলে খেজুর ছিল। রাসুল (সা.) বললেন: এটা কি হে বেলাল? বেলাল (রা.) বললেন: এগুলো আমি আপনাকে আপ্যায়নের জন্য প্রস্তুত রাখি। হুজুর (সা.) বললেন, তুমি কি জাহান্নামের ধোঁয়ার ভয় কর না?..। আরেকবার হুজুর (সা.) আনাসকে (রা.) বলেছিলেন, আমি কি তোমাকে দ্বিতীয় দিনের জন্য কিছু অবশিষ্ট রাখতে নিষেধ করিনি? ডনশ্চয়ই আল্লাহ আগামীর খাবারের ব্যবস্থা করেন...।
উল্লেখ্য, যেসব দ্রব্য নির্দিষ্ট কয়েকটি মওসুমে সঞ্চয় করে পরবর্তীতে ভোগ করার রীতি রয়েছে তা রাসুলের (সা.) অর্থনীতির আলোকে বৈধ। রাসুলুল্লাহ্ (সা.) তাঁর পরিবারের জন্য এক বছরের খেজুর ও অন্যান্য দ্রব্য মজুত রাখতেন। দ্রব্যমূল্য বাড়ার আশঙ্কা না থাকলে মনীষীগণ সঞ্চয় করাকে বৈধ বলেছেন।
🍀🍀 সনির্ভর মুহাম্মাদ সাঃ 🍀🍀
রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন স্ব-নির্ভর। হিজরতের সময়ও তিনি নিজেই দুটি উটের ব্যবস্থা করেন। হিজরতের পরেও রয়েছে তাঁর দুই শ’ উট ক্রয় করার ঘটনা। এমনিভাবে রয়েছে তাঁর স্ব-নির্ভরতার বহু প্রমাণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সহজ-সরল জীবন-যাপনে অভ্যস্ত। তিনি সাহাবিগণকে অনাড়ম্বর জীবন-যাপনের উপদেশ দিতেন। তিনি পেট ভরে সে পরিমাণ সিরকা পর্যন্ত পেতেন না।
সংকটাবস্থার জন্য সঞ্চয় করার আদেশ দিয়ে মহানবী (সা.) বলেছেন : ‘আল্লাহ অনুগ্রহ করুক ঐ ব্যক্তিকে যে হালাল উপার্জন করে, পরিমিত ব্যয় করে এবং প্রয়োজনের জন্য কিছু অবশিষ্ট রাখে।’
এ ছাড়াও রাসুল (সা.) অর্থ সংকটের সময় তার সাহাবি ও পরিবারবর্গকে দোয়া করার আহ্বান জানাতেন। একদা ফাতেমার (রা.) মুখমণ্ডল ক্ষুধার কারণে রক্তশূন্য হয়ে হলদে বর্ণ ধারণ করেছিল। হুজুর (সা.) তার নিকটবর্তী হয়ে তার জন্য দোয়া করেছিলেন।
স্বেচ্ছায় বরণকৃত এই আর্থিক সংকটকে সামনে রেখেই মহানবীর (সা.) ইন্তেকাল হয়েছিল।
রাসুলুল্লাহ (সা.) পুঁজিবাদী সর্বস্ব ও মানবতাবিরোধী অর্থনীতির পরিবর্তে অত্যন্ত কল্যাণমূখী এবং মধ্যপন্থী অর্থনৈতিক জীবনের মহান আদর্শ তাঁর ব্যক্তিগত জীবন, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালা আলিহি ওয়াসাল্লাম।
তথ্যসূত্র রেফারেন্স:
1️⃣http://alhassanain.org/m/bengali/?com=content&id=698
2️⃣দালায়েলুন নাবুওয়াহ: ৩/৩৪। ইবন হিশাম ফিস সীরাহ, ১/৬২৫; ইবন কাসীর, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়াহ: ২/৩৯৫।
সীরাতে ইবন হিশাম: ১/৬২০; বিদায়া ওয়ান নিহায়া: ৩/১৬৭; যাদুল মা‘আদ ৩/১৭৫।
3️⃣ইবনে হিশাম, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৭৭
https://bn.m.wikipedia.org/…/%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%B9%E0…
4️⃣https://bn.m.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A6%AB%E0%A7%81%E0%A6%B2_%E0%A6%AB%E0%A7%81%E0%A6%9C%E0%A7%81%E0%A6%B2
5️⃣ইসলামী বিশ্বকোষ, দ্বিতীয় খণ্ড, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ২৯৩-২৯৪
6️⃣সূত্র : মাওলানা মমতাজ উদ্দীন আহমাদ : নবী পরিচয়, ইউপিএল, ঢাকা, ২০০০ (প্রথম প্রকাশ ১৯৬২), পৃষ্ঠা ৪১-৪২
7️⃣https://www.google.com.bd/amp/s/nobiji.wordpress.com/2012/10/22/%25E0%25A6%25B6%25E0%25A6%25BF%25E0%25A7%259F%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25AC%25E0%25A7%2587-%25E0%25A6%2586%25E0%25A6%25AC%25E0%25A7%2581-%25E0%25A6%25A4%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B2%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25AC%25E0%25A7%2587-%25E0%25A6%2586%25E0%25A6%259F%25E0%25A6%2595/amp/
8️⃣ রাহিকুল মাখতুম ,অধ্যায়: মদীনার জীবন দাওয়াত, জিহাদ ও পরিত্রাণের যুগ . العهد المدنى عهد الدعوة والجهادوالنجاح.
9️⃣ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭৯৩
1️⃣0️⃣মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৭৯৪।
1️⃣1️⃣মুসলিম ১৫১৩,১৫২২
1️⃣2️⃣https://www.masrawy.com/islameyat/sera-hdi_nabawy/details/2014/11/23/394777/%D8%A7%D9%84%D9%82%D9%86%D8%A7%D8%B9%D8%A9-%D9%81%D9%8A-%D8%AD%D9%8A%D8%A7%D8%A9-%D8%A7%D9%84%D9%86%D8%A8%D9%8A-%EF%B7%BA-
1️⃣3️⃣মুসলিম হা/৪২০৬।
বুখারী, মুসলিম, রিয়াযুছ ছালেহীন, হা/১৫৮১
#Standard-9
মহানবী (সা:)-এর অর্থনৈতিক জীবন
মানবতার মুক্তির দিশারি মুহাম্মদ (সা.) জাহেলিয়াতের সব অন্যায়-অত্যাচার, অবিচার-অশামিত্ম, অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক কর্মকা- বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তিনি বিশ্বমানবতার জন্য একটি পরিপূর্ণ আদর্শ জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
একটি গুরম্নত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে সামাজিক অর্থনীতি সুস্থ রাখার লক্ষ্যে তিনি যেসব আদর্শ ও মূলনীতি প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেগুলো একেকটি অমূল্য শিক্ষা। অর্থনীতি সুষ্ঠু ও বৈষম্যহীন করতে হলে সেগুলোর বিকল্প নেই।
তিনি মোট ব্যাবসা কে দুভাগে ভাগ করেছেন,
১)বিশেষ করে মানব নিষ্পেষণ ও সমাজবিধ্বংসী অন্যতম মাইন সুদ, ঘুষ, লটারি ও মজুদদারি প্রভৃতি তিরোহিত করেন। আল্লাহ প্রেরিত অহির আলোকে তিনি হালাল ব্যবসাভিত্তিক একটি সর্বোত্তম, অভূতপূর্ব আদর্শ সমাজ বিনির্মাণ করেছিলেন।
২)রাসূল সাঃ ব্যবসা করেছেন। অন্যদের ব্যবসা করতে উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি যে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেই মক্কা শহর আরব উপদ্বীপের মধ্যে বিশিষ্ট ব্যবসার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। হজরত ইব্রাহিম (আ.) দোয়া করেছিলেন, ‘অতএব, হে আল্লাহ আপনি লোকদের মনকে তাদের প্রতি আগ্রহী বানিয়ে দিন এবং তাদের রিজিক দিন নানা ধরনের ফলমূল দিয়ে, যেন তারা শোকর করতে পারে।’ (সূরা ইব্রাহিম : ৩৭)। এ দোয়াও মক্কাবাসীর জন্য খুবই কল্যাণকর প্রমাণিত হয়েছে।
🍀🍀 মুহাম্মাদ সাঃ এর বাল্যকাল;
ইসলাম আগমনের পূর্বে আরবদেশে পোশাক শিল্প, চর্মকার ও রাখালের পেশা ইত্যাদি যৎসামান্য কিছু কর্ম ছাড়া তেমন কোনো শিল্পের প্রসার ছিল না। ব্যবসাই ছিল আরবদের আয়-উপার্জনের সর্বপ্রধান অবলম্বন। কিন্তু তাদের চিরায়ত আত্মকলহ ও ডাকাত দলের হানা তাদের ব্যবসার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াত। তাই তাদের ব্যবসা শুধু পবিত্র মাসগুলোতেই জমে উঠত। চড়া সুদ নিছক ব্যবসা হিসেবে তাদের জীবন প্রবাহের একটি অংশে পরিণত হয়েছিল।[১]
রাসুলুল্লাহ্ (সা.) শিশুকাল কাটিয়েছিলেন পবিত্র নগরী মক্কায়। কোরাইশের শীতকালে ইয়েমেন ও গ্রীষ্মে সিরিয়া ভ্রমণ ছিল দুটি অপরিহার্য বাণিজ্যিক ভ্রমণ। সর্দার হাশিম ইবনে আবদে মানাফ কোরাইশের ধনী-দরিদ্র সকলের মাঝে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বন্ধন সৃষ্টি করার আহ্বান জানান। ঠিক এই সময় এসে পড়ে ইসলামের বাণী। এছাড়াও কোরাইশের আকাশে ছিল তখন ধনাঢ্যতা ও শৌর্য-বীর্যের ফকফকা রোদ। এমন খাঁটি বাণিজ্যিক পরিবেশেই বেড়ে উঠেন মহানবী (সা.)।[২]
🍀🍀 মুহাম্মাদ সাঃ এর কিশোর কাল;
বার বছর বয়সে রাসুলুল্লাহ (সা.) চাচা আবু তালিবের সাথে সিরিয়ার পথে একটি বাণিজ্যিক কাফেলায় অংশগ্রহণ করেন। পথিমধ্যে ‘বুহাইরা’ নামক এক খৃস্টান পাদ্রীর সাথে দেখা হলে তিনি শিশু মুহাম্মদকে ইহুদিদের থেকে সাবধানে রাখার পরামর্শ দেন। তাই আবু তালিব দ্রুত তাকে নিয়ে মক্কায় ফিরে আসেন। [৩]
মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে তিনি কনিষ্ঠ চাচা হযরত জুবায়ের (রাজিআল্লাহু তায়ালা আনহু) এবং কয়েকজন যুবককে নিয়ে ‘হিলফুল ফুজুল’ নামে একটি সমাজসেবামূলক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।[৪]
🍀🍀যৌবনে মুহাম্মাদ সাঃ;
মূর্খতার যুগ পেরিয়ে আসা এক পথবিচ্যূত সমাজের মাঝে নবুওয়তের এমন নতুন দাওয়াত নিয়ে দাঁড়ানোর জন্য বহু অর্থেরও প্রয়োজন ছিল।
নবুওয়তের গুরুদায়িত্ব বহনের পর রাসুলুল্লাহ্ (সা.) ব্যবসা-বাণিজ্যে মনোনিবেশ করতে পারছিলেন না। তথাপি তাঁর নিজস্ব ও খাদিজা (রা.) হতে প্রাপ্ত পুঁজি দ্বারা নতুন ধর্মের প্রচার করতে লাগলেন। নও-মুসলিম সাহাবিগণের মাঝে যারা সামর্থ্যহীন তাদের খরচাদি রাসুল (সা.) নিজেই বহন করেছিলেন।
যৌবনে উপনীত হবার পর মেষ চরানো এবং পরে ব্যবসার মাধ্যমে শুরু হয় মহানবীর (সা.) অর্থনৈতিক জীবন। তাঁর ব্যবসায়িক সুনাম ও ‘আল-আমিন’ উপাধিতে ভূষিত হওয়ার কারণে খাদিজা (রাজিআল্লাহু তায়ালা আনহা) তাকে প্রথমত ব্যবসা ও দ্বিতীয়ত স্বামী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। সততা ছাড়াও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মধ্যে বুদ্ধিমত্তা, দৈহিক শক্তি ও বিচক্ষণতা ইত্যাদি গুণের সমাবেশ ঘটেছিল।
হযরত খাদিজা (রা.) ছিলেন একজন ধনবতী, ভদ্র ও সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী মহিলা। তিনি তার পুঁজি দিয়ে লাভ-ক্ষতির অংশীদারিত্বভিত্তিক যৌথ ব্যাবসা করতেন।[৫]
🌺🌺 বিশ্বস্ততা: খাদিজা (রা.) মহানবীর (সা.) সততা ও উত্তম চরিত্রের কথা জানতে পেরে তাঁকে পুঁজি নিয়ে সিরিয়ায় ব্যবসায়িক সফরে যাওয়ার জন্য আবেদন জানালেন। মহানবী (সা.) তার প্রস্তাব গ্রহণ করলেন এবং দ্বিগুণ পুঁজি ও বিনিময় নিয়ে খাদিজার ক্রীতদাস ‘মায়সারাহ’র সঙ্গে সিরিয়ার পথে বাণিজ্যিক সফরে বের হলেন। বিগত সফরসমূহের তুলনায় এবার সফরে দ্বিগুণ লাভ হলো। ‘মায়সারাহ’ খাদিজার নিকট রাসুল (সা.)-এর বিশ্বস্ততা ও মহান চরিত্রের বর্ণনা দিল। খাদিজা (রা.) বিশেষত রাসুল (সা.)-এর সংস্পর্শে আসার পর তার সম্পদে যে সমৃদ্ধির চিহ্ন ফুটে উঠেছে তা দেখে বিস্মিত হলেন। তিনি তার বান্ধবী ‘নাফিসাহ’র মাধ্যমে রাসুল (সা.)-এর নিকট বিবাহের প্রস্তাব পেশ করেন। রাসুল (সা) এ ব্যাপারে তাঁর চাচাদের সঙ্গে মতবিনিময় করলে তারা বিবাহ সম্পন্ন করেন। [৬]
স্বামী হিসেবে রাসুলুল্লাহ (সা.) খাদিজার ব্যবসার তত্ত্বাবধান করতেন। সাথে সাথে নিজেও খাদিজার পুঁজি নিয়ে পুরোদমে ব্যবসা করছিলেন। তিনি ছিলেন বাণিজ্য নগরী মক্কার সর্বাধিক পুঁজিবান ব্যবসায়ী। নিঃসন্দেহে এই দীর্ঘ ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতাই তাঁর জন্য মদিনায় অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটাতে সহায়ক প্রমাণিত হয়েছিল।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনাড়ম্বর জীবনচরিত দেখে একথা ভুলে গেলে চলবে না, তিনি ছিলেন মক্কার সবচেয়ে বলিষ্ঠ, বুদ্ধিমান ও অধিক পুঁজিবান ব্যবসায়ী।
।।।
🍁🍁 নবুওতের দাওয়াতের পর:
যখন নবী হলেন, সহজে রাসুল (সা.)কে বধ করতে না পেরে কোরাইশ বনু হাশিম ও বনু আবদুুল মুত্তালিবকে হুমকি দিল যে, তাদের হাতে মুহাম্মদকে (সা.) সমর্পণ না করলে তাদেরকে বয়কট করা হবে। কোরাইশ তিন বছর (মতান্তরে দুই বছর) এ নির্বাসনে অটল থাকল। রাসুল (সা.) ও মুসলমানগণ মর্মান্তিক কষ্টের সম্মুখীন হলেন। [৭]
🍀🍀 মদিনায় হিজরত:
হিজরত ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি ইসলামি রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন এবং তথায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অর্থনৈতিক কাঠামো রচনার পটভূমি। মক্কায় মুসলমানদের অর্থনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ ছিল না। সেখানে আবু বকর (রা.) এবং ধনী সাহাবিগণ কোনো কোনো মুসলমানকে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে তাদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করেছিলেন মাত্র। খাদিজা (রা.) ও আবু বকর (রা.)-এর মত ধনী ব্যবসায়ীগণও অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছিলেন। হিজরতপূর্ব সময়ে তারা একপ্রকার নির্বাসনের পরিবেশেই জীবন-যাপন করছিলেন।
🍀🍀 মুহাজিরদের অবস্থা 🍀🍀
অর্থনৈতিকভাবে নিগৃহীত মুহাজিরগণ ছিলেন ভীষণ দুর্বল। কারণ, তারা আপন ধন-সম্পদ মাতৃভূমি মক্কায় রেখে এসেছিলেন। এই মুহূর্তে রাসুল (সা.) তাদের ও আনসারদের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করে তাঁর অসীম প্রজ্ঞার পরিচয় দেন। উল্লেখ্য, মুহাজিরগণ কৃষিকাজ জানতেন না। ব্যবসাই ছিল তাদের প্রধান অর্থনৈতিক অবলম্বন। তাই রাসুল (সা.) মসজিদ নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার সাথেসাথেই বাজার প্রতিষ্ঠা করা শুরু করেছিলেন।
মুহাজিরগণ স্বনির্ভর জীবন-যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়-সম্বলের অধিকারী ছিলেন না। এমতাবস্থায় তাদের ও আনসারদের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন প্রতিষ্ঠা করার কোনো জুড়ি ছিল না। ভ্রাতৃত্ব-বন্ধন ছিল নতুন ইসলামি অর্থনৈতিক বিপ্লবের ভিত্তিপ্রস্তর স্বরূপ। এই বন্ধন সকল সংকটের উপর্যুপরি সমাধান প্রমাণিত হয়। এই ভ্রাতৃত্ব রক্তের বন্ধনের চেয়েও বেশি অটুট ও মজবুত ছিল।
বদর যুদ্ধ পর্যন্ত উত্তরাধিকারের বিধানও বলবৎ ছিল। পরে উত্তরাধিকার রহিত হলেও কিন্তু ভ্রাতৃত্ব চিরকালের জন্য রয়ে গেল। যার সাথে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিষয়টি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
গোত্রে গোত্রে বিভেদই ছিল হিজরতের পূর্বে মদিনার সার্বিক উন্নতির প্রধান অন্তরায়। এই ভ্রাতৃত্ব সকল বিভেদের অবসান ঘটিয়ে এক নতুন সমাজ উপহার দিতে সক্ষম হয়েছিল। এছাড়াও মদিনার অর্থনৈতিক জীবনের ছড়ি ঘুরাচ্ছিল ইহুদিরাই। এ ভ্রাতৃত্বের বন্ধন না হলে নিঃস্ব মুহাজিরগণের পক্ষে অর্থনৈতিকভাবে ইহুদিদের মোকাবেলা করা ছিল দুষ্কর। [৮]
🍀🍀মদীনার ব্যাবসা:🍀🍀
হিজরতের পর মদিনা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলো। রাসূল (সা.) ছিলেন সে রাষ্ট্রের কর্ণধার। চাইলেই তিনি সাহাবিদের সম্পদ থেকে চাঁদা দাবি করে আয়েশি জীবনযাপন করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে সীমাহীন অভাব-অনটন সহ্য করেছেন। নবুয়ত ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব কাঁধে থাকায় তখন আর সক্রিয় ব্যবসা করা সম্ভব হয়নি। মাসের পর মাস তাঁর ঘরে চুলা জ্বলেনি। তবে তাঁর অর্থনৈতিক কর্মকা- থেমে থাকেনি।
ঝর্ণাধারা ও কূপসমূহের আধিক্যের কল্যাণে মদিনার অর্থনৈতিক জীবন ছিল কৃষিনির্ভর। এছাড়াও গহনাদি ও অস্ত্রশস্ত্র তৈরি, খনিজ ও বয়ন শিল্প বহুল সমাদৃত ছিল। ব্যাপক হারে সুদের আদান-প্রদান চলতো। কিন্তু গোত্র-বিভেদ ও সঙ্ঘাতের কারণে মদিনার অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল চরম অবনতির শিকার।
ঐতিহাসিক হিজরত মুহাজির-আনসার সকলের জীবন প্রবাহকে আগাগোড়া পাল্টে দিয়েছিল। হিজরতের পরপরই মহানবী (সা.) সাহাবিদেরকে শ্রমের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করলেন। মদিনায় প্রবেশের পর স্বয়ং নবী করিম (সা.) সশরীরে মসজিদ নির্মাণে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
🌎🌎 অর্থনৈতিক ক্ষেত্র:
রাসুলুল্লাহ্ (সা.) কার্যত শ্রমের যে আদর্শ পেশ করেছিলেন তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুহাজিরগণও আনসারদের ওপর বোঝা সৃষ্টি না করে কাজে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। এভাবেই গড়ে উঠছিল একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক বন্ধন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় প্রবেশের পর আনসারগণ তাদের জমি-জমা ও ধন-সম্পদ থেকে উদ্বৃত্ত সবকিছু তাঁর কাছে সমর্পণ করতে শুরু করলেন। যাতে ইসলামি রাষ্ট্রে নবাগত মুহাজিরগণ শক্তপায়ে দাঁড়াতে পারেন। স্বাভাবিকভাবে রাসুলকেও (সা.) মুহাজিরদের ব্যয়ভার নির্বাহে অংশগ্রহণ করতে হয়েছিল।
রাষ্ট্রের জন্যে অর্থনৈতিক পদক্ষেপ:
🍂🍂জাকাত,
🍂🍂উশর,
🍂🍂ফাই (সন্ধিসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ),
🍂🍂জিযয়াহ্ (কর),
🍂🍂খারাজ (টেক্স)
🍂🍂খুমুস (যুদ্ধলব্ধ সম্পদের এক-পঞ্চমাংশ) ইত্যাদি প্রচলন করে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভিতকে মজবুত করেছিলেন।
🍂🍂ফসলি জমির মালিক আনসারগণ রাসুল (সা.) এর নিকট তাদের জমি-জমাও ভাগ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করলে রাসুল (সা.) বলেন, ফসলের একটি অংশ তাদেরকে প্রদান করাটাই যথেষ্ট। ‘যে ব্যক্তি কোন পরিত্যক্ত জমিকে আবাদ করবে সে তার মালিক’- এ ভিত্তিতে সম্মিলিতভাবে মুসলমানরা পরিত্যক্ত ফসলি জমিসমূহকে আবাদ করা শুরু করেন। স্বয়ং রাসুল (সা.) হযরত বেলালকে (রা.) এক টুকরো খনিজ সম্পদসহ জমি ও হযরত আলিকে (রা) চাষ করার জন্য চার খন্ড জমি দিয়েছিলেন।
🍂🍂‘মাহযুর’ ও ‘লিহ্’ ইত্যাদি উপত্যকার ব্যাপারে তিনি আদেশ দেন, যেন উঁচু জমিতে দুই হাঁটু পরিমাণ পানি হওয়ার পর নিচু জমির দিকে পানি ছেড়ে দেওয়া হয়। রাসুল (সা.) বিশেষভাবে এ সেচ-পদ্ধতির প্রতি লক্ষ্য রাখতেন।
🍂🍂সামাজিক বন্ধন রক্ষার্থে তিনি শক্তিশালীকে দুর্বলের সহযোগিতা করার নির্দেশ দেন। যেহেতু ব্যবসায়ীগণ কৃষক ও অন্যান্য শ্রমিক শ্রেণির তুলনায় গুনাহর অধিক নিকটবর্তী তাই তিনি তাদের প্রতি বহু হাদিসে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। এছাড়াও রাসুল (সা.) তাদেরকে সহিঞ্চুতার আদেশ দেন।
পবিত্র ব্যবসায়িক পেশা মনোপ্রবৃত্তির শিকার না হওয়ার জন্য তিনি ঋণ ও ক্রয়-বিক্রয় লিখে রাখার আদেশ দিতেন।
সততার প্রতি জোর দিয়ে মহানবী (সা.) বলেন : ‘ক্রেতা-বিক্রেতা যদি সত্য বলে তাহলে তাদের কর্ম বরকত প্রাপ্ত হয়। যদি তারা মিথ্যাচারিতার আশ্রয় নেয় তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।’ তিনি মজুতদারি, মিথ্যা হলফ, অনিশ্চয়তামূলক ও ফটকামূলক সকল আদান-প্রদান নিষিদ্ধ করেন।[৯,১০,১১]
রাসুল (সা)-এর বিনিময়-বৈষম্য দূরীকরণ, ধনী-গরিবের মধ্যকার দূরত্ব সংকোচন, বাগান চাষ ও পরিবার পরিপালন ইত্যাদি কর্মকান্ডের বিস্তারিত বর্ণনা সিরাতগ্রন্থসমূহে বিশদভাবে উল্লেখিত আছে।
অধুনা অর্থনীতিবিদদের মতে, রাসুল (সা.) যে অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলেছিলেন তা নিম্নোক্ত মূলনীতি সমূহের অন্তর্ভুক্ত ।
🌳🌳সেবামূলক কার্যক্রম।
🌳🌳মধ্যস্বত্বভোগ সীমাবদ্ধ করা।
🌳🌳সুদকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা
🌳🌳ব্যক্তি মালিকানার সাথে সামাজিক দায়িত্ববোধের সমন্বয়।
🌳🌳সাম্যের নীতি প্রতিষ্ঠা ।
🍀🍀 মিতব্যয়ী মুহাম্মাদ সাঃ 🍀🍀
রাসুলুল্লাহ্ (সা) পানাহার ও পোশাক-পরিচ্ছদের বেলায় অতিমাত্রায় বিলাসিতা ও শৌখিনতা পছন্দ করতেন না। তিনি ছিলেন মিতব্যয়ী ও মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী।
🏵️🏵️মহানবী (সা.) বলেন: ‘মিতব্যয় জীবন-যাপনে সফলতার অর্র্ধেক’।
‘জীবন-যাপনে মধ্যপন্থী হওয়া ব্যক্তির গভীর জ্ঞানের পরিচায়ক।’
🏵️🏵️মহানবী (সা.) চাটাইতে বসতেন এবং শুতেন। এ থেকে বোঝা যায়, তিনি বিলাসপরায়ণ ছিলেন না। আর এটি সুস্থ অর্থনীতি ও সুন্দর জীবনের বুনিয়াদ স্বরূপ।
🏵️🏵️রাসুল (সা.) ব্যাপকভাবে খাদ্য ও পোশাকসহ যাবতীয় কর্মে অপব্যয় থেকে বারণ করেছেন। এ ব্যপারে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন : ‘আল্লাহ্র কসম! রাসুলুল্লাহ্ (সা.) একই দিনে দুবার রুটি ও গোশত দ্বারা পরিতৃপ্ত হননি।
🏵️🏵️সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) অযু করা অবস্থায় মহানবী (সা.) তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় বললেন, ‘অপচয় করো না!’। সাদ (রা.) বললেন: পানির মাত্রাতিরিক্ত খরচও কি অপচয়ের অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেন: হ্যাঁ, যদিও তুমি প্রবাহমান নদীতে অবস্থান কর। [১২]
🏵️🏵️খাদ্য সঞ্চয়ের ব্যপারে রাসুলের (সা.) নীতি ছিল আলোকোজ্জ্বল। একদা নবী করিম (সা.) বেলালের (রা.) নিকট প্রবেশ করলেন। তার নিকট এক থলে খেজুর ছিল। রাসুল (সা.) বললেন: এটা কি হে বেলাল? বেলাল (রা.) বললেন: এগুলো আমি আপনাকে আপ্যায়নের জন্য প্রস্তুত রাখি। হুজুর (সা.) বললেন, তুমি কি জাহান্নামের ধোঁয়ার ভয় কর না?..। আরেকবার হুজুর (সা.) আনাসকে (রা.) বলেছিলেন, আমি কি তোমাকে দ্বিতীয় দিনের জন্য কিছু অবশিষ্ট রাখতে নিষেধ করিনি? ডনশ্চয়ই আল্লাহ আগামীর খাবারের ব্যবস্থা করেন...।
উল্লেখ্য, যেসব দ্রব্য নির্দিষ্ট কয়েকটি মওসুমে সঞ্চয় করে পরবর্তীতে ভোগ করার রীতি রয়েছে তা রাসুলের (সা.) অর্থনীতির আলোকে বৈধ। রাসুলুল্লাহ্ (সা.) তাঁর পরিবারের জন্য এক বছরের খেজুর ও অন্যান্য দ্রব্য মজুত রাখতেন। দ্রব্যমূল্য বাড়ার আশঙ্কা না থাকলে মনীষীগণ সঞ্চয় করাকে বৈধ বলেছেন।
🍀🍀 সনির্ভর মুহাম্মাদ সাঃ 🍀🍀
রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন স্ব-নির্ভর। হিজরতের সময়ও তিনি নিজেই দুটি উটের ব্যবস্থা করেন। হিজরতের পরেও রয়েছে তাঁর দুই শ’ উট ক্রয় করার ঘটনা। এমনিভাবে রয়েছে তাঁর স্ব-নির্ভরতার বহু প্রমাণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সহজ-সরল জীবন-যাপনে অভ্যস্ত। তিনি সাহাবিগণকে অনাড়ম্বর জীবন-যাপনের উপদেশ দিতেন। তিনি পেট ভরে সে পরিমাণ সিরকা পর্যন্ত পেতেন না।
সংকটাবস্থার জন্য সঞ্চয় করার আদেশ দিয়ে মহানবী (সা.) বলেছেন : ‘আল্লাহ অনুগ্রহ করুক ঐ ব্যক্তিকে যে হালাল উপার্জন করে, পরিমিত ব্যয় করে এবং প্রয়োজনের জন্য কিছু অবশিষ্ট রাখে।’
এ ছাড়াও রাসুল (সা.) অর্থ সংকটের সময় তার সাহাবি ও পরিবারবর্গকে দোয়া করার আহ্বান জানাতেন। একদা ফাতেমার (রা.) মুখমণ্ডল ক্ষুধার কারণে রক্তশূন্য হয়ে হলদে বর্ণ ধারণ করেছিল। হুজুর (সা.) তার নিকটবর্তী হয়ে তার জন্য দোয়া করেছিলেন।
স্বেচ্ছায় বরণকৃত এই আর্থিক সংকটকে সামনে রেখেই মহানবীর (সা.) ইন্তেকাল হয়েছিল।
রাসুলুল্লাহ (সা.) পুঁজিবাদী সর্বস্ব ও মানবতাবিরোধী অর্থনীতির পরিবর্তে অত্যন্ত কল্যাণমূখী এবং মধ্যপন্থী অর্থনৈতিক জীবনের মহান আদর্শ তাঁর ব্যক্তিগত জীবন, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালা আলিহি ওয়াসাল্লাম।
তথ্যসূত্র রেফারেন্স:
1️⃣http://alhassanain.org/m/bengali/?com=content&id=698
2️⃣দালায়েলুন নাবুওয়াহ: ৩/৩৪। ইবন হিশাম ফিস সীরাহ, ১/৬২৫; ইবন কাসীর, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়াহ: ২/৩৯৫।
সীরাতে ইবন হিশাম: ১/৬২০; বিদায়া ওয়ান নিহায়া: ৩/১৬৭; যাদুল মা‘আদ ৩/১৭৫।
3️⃣ইবনে হিশাম, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৭৭
https://bn.m.wikipedia.org/…/%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%B9%E0…
4️⃣https://bn.m.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A6%AB%E0%A7%81%E0%A6%B2_%E0%A6%AB%E0%A7%81%E0%A6%9C%E0%A7%81%E0%A6%B2
5️⃣ইসলামী বিশ্বকোষ, দ্বিতীয় খণ্ড, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ২৯৩-২৯৪
6️⃣সূত্র : মাওলানা মমতাজ উদ্দীন আহমাদ : নবী পরিচয়, ইউপিএল, ঢাকা, ২০০০ (প্রথম প্রকাশ ১৯৬২), পৃষ্ঠা ৪১-৪২
7️⃣https://www.google.com.bd/amp/s/nobiji.wordpress.com/2012/10/22/%25E0%25A6%25B6%25E0%25A6%25BF%25E0%25A7%259F%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25AC%25E0%25A7%2587-%25E0%25A6%2586%25E0%25A6%25AC%25E0%25A7%2581-%25E0%25A6%25A4%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B2%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25AC%25E0%25A7%2587-%25E0%25A6%2586%25E0%25A6%259F%25E0%25A6%2595/amp/
8️⃣ রাহিকুল মাখতুম ,অধ্যায়: মদীনার জীবন দাওয়াত, জিহাদ ও পরিত্রাণের যুগ . العهد المدنى عهد الدعوة والجهادوالنجاح.
9️⃣ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭৯৩
1️⃣0️⃣মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৭৯৪।
1️⃣1️⃣মুসলিম ১৫১৩,১৫২২
1️⃣2️⃣https://www.masrawy.com/islameyat/sera-hdi_nabawy/details/2014/11/23/394777/%D8%A7%D9%84%D9%82%D9%86%D8%A7%D8%B9%D8%A9-%D9%81%D9%8A-%D8%AD%D9%8A%D8%A7%D8%A9-%D8%A7%D9%84%D9%86%D8%A8%D9%8A-%EF%B7%BA-
1️⃣3️⃣মুসলিম হা/৪২০৬।
বুখারী, মুসলিম, রিয়াযুছ ছালেহীন, হা/১৫৮১