সর্বশেষ

2/recent/ticker-posts

কুরআনে মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য কি!? পুরো কুরআন জুড়ে মুহাম্মাদ সা এর পার্সোনাল সমস্যার সমাধান দেওয়া হয়েছে! কোরআন সমগ্র মানবজাতির জন্য পাঠানো কিতাব কিভাবে হয়?

#ফারিস_সিরিজ-১৪
#Counter_post-3
#Qn: কুরআনে মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য কি!? পুরো কুরআন জুড়ে মুহাম্মাদ সা এর পার্সোনাল সমস্যার সমাধান দেওয়া হয়েছে! কোরআন সমগ্র মানবজাতির জন্য পাঠানো কিতাব কিভাবে হয়??
“কোরআনের (৫১:৫৬) তে মানুষ সৃষ্টির কারণ বলা হয়েছে, কেবল আল্লাহর ইবাদত। কিন্তু ৭:১৫৮- তে বলা হয়েছে মুহাম্মাদের সুন্নাহ অনুসরণের কথা। তাহলে মানব সৃষ্টির প্রকৃত উদ্দেশ্য কি? আল্লাহর ইবাদত নাকি মুহাম্মাদের সুন্নাহ অনুসরণ?”
#Qnr: ফেরাউন ইসলাম দাদা।
.
#Ans: মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য কি? স্রষ্টার ইবাদত? নাকি মুহাম্মাদের (ﷺ) সুন্নাহ অনুসরণ? আমাদেরকে সৃষ্টি করার একমাত্র উদ্দেশ্য হল, মহান আল্লাহর ইবাদত করা। অন্য সমস্ত সৃষ্টির ইবাদত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া। এককথায় নিজেকে শত ইলাহের গোলামী থেকে মুক্ত করে এক আল্লাহর গোলামীতে লিপ্ত করা।
- কিন্তু কোরআন তো অন্যকিছু বলছে।
- লেট মি ফিনিস ব্রাদার। কোরআন কারীমের সূরা আন-নাজমের ২-৪ আয়াতে আল্লাহ আযযা ওয়া জাল বলেন, “তোমাদের সঙ্গী বিভ্রান্ত নয়, বিপথগামীও নয়। এবং সে মনগড়া কথাও বলে না। এটাতো ওহী যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ হয়”।
সূরা আহকাফের ৯ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে, “আমি আমার প্রতি যা ওহী করা হয় শুধু তারই অনুসরণ করি। আমি এক স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র”।
এসব আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি, রাসূল (ﷺ) নিজ থেকে বানিয়ে-বানিয়ে কোন কথা প্রচার করেন নি। কোন শিক্ষা দেন নি। তিনি যা প্রচার করেছেন, যা শিখিয়েছেন তা আল্লাহ আযযা ওয়া জাল তাকে শিক্ষা দিয়েছেন।
আল্লাহ তায়ালা সূরা আল-হাক্কাহ এর ৪৪-৪৬ আয়াতে আরও স্পষ্ট করে বলেছেন, “সে যদি আমার নামে কিছু রচনা করে চালাতে চেষ্টা করত – আমি অবশ্যই তাঁর ডান হাত ধরে ফেলতাম। কেটে দিতাম তাঁর জীবন-ধমনী”।
এখন বলুন, মুহাম্মাদের (ﷺ) সুন্নাহ প্রকৃতপক্ষে কার শি?
"আল্লাহর শিক্ষা। আর তুমি কোরআন পড়লে দেখবে কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহ আযযা ওয়া জাল মুহাম্মাদের (ﷺ) সুন্নাহ অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। কোরআন কারীমের সূরা আলে-ইমরানের ৩১ আয়াতে আল্লাহ আযযা ওয়া জাল মুহাম্মাদকে (ﷺ) লক্ষ্য করে বলেছেন, “তুমি বলঃ যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”।
আমরা মুসলিমরা মুহাম্মাদের (ﷺ) সুন্নাহ এই জন্যে অনুসরণ করি না যে, তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ছিলেন। আমরা অনুসরণ করি এই জন্যে যে, আল্লাহ আমাদেরকে তার অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ যদি মুহাম্মাদের (ﷺ) সুন্নাহ অনুসরণ করার নির্দেশ না দিতেন, তাহলে আমরা কখনোই করতাম না।
মনে করেন,আপনি আপনার কোন প্রিয় লোককে ট্রেইনার হিসেবে কোথাও পাঠালেন। তাকে সেখানে গিয়ে কি কি করতে হবে তা আপনি নিজ হাতে শিখিয়ে দিলেন। এরপর বললেন যে, ‘আমি যেভাবে বললাম ঠিক সেভাবেই মানুষকে শিক্ষা দিবেন’। সে তাঁর দায়িত্ব বুঝে নিয়ে চলে গেল।
লোকটা নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে মানুষকে বললো, ‘আমাকে আমার বস মিঃ জনি এখানে পাঠিয়েছেন। আর তোমাদেরকে এই এই জিনিস গুলো শিক্ষা দিতে বলেছেন’।আপনি তাকে যেখানে পাঠালে সেখানকার মানুষ তাঁর কথাগুলো ঠিক সেভাবেই মানলো, যেভাবে তুমি তাকে শিখিয়েছিলে। এখন সেখানকার লোকজন যদি তোমার পাঠানো লোকের কথা অনুসরণ করে, তাহলে আলটিমেটলি ব্যাপারটা কি দাঁড়ায়? লোকজন কি তোমার পাঠানো লোকটার অনুসরণ করছে? নাকি ইনডাইরেকটলি তোমাকেই ফলো করছে? তোমার কথার আনুগত্য করছে?
অবশ্যই আমার কথার আনুগত্য করছে। কেননা আমার পাঠানো লোকটাকে তো আমিই শিক্ষা দিয়েছি। আর সে আমার শিক্ষার বিপরীতে কোন কথা প্রচার করে নি।
আমরা মুসলিমরাও মুহাম্মাদের (ﷺ) সুন্নাহ অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহর আদেশ পালন করি। কেননা আল্লাহ আযযা ওয়া যাল তাকে অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। মুহাম্মাদ তার জীবনে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সত্যেরই দাওয়াত দিয়েছেন। নিজে থেকে বানিয়ে কিছু প্রচার করে নি। তিনি তাই বলেছেন, যা আল্লাহ তাকে বলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি মানুষকে তাই করতে বলেছেন, যা আল্লাহ তাকে শিখিয়েছেন। তাই তাঁর সুন্নাহ অনুসরণ মানে আল্লাহর হুকুমের অনুসরণ। আর আল্লাহর হুমুক পালনের জন্যেই আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদতের জন্যে।
.
আল্লাহ আযযা ওয়া জাল কোরআন কারীমের বিভিন্ন আয়াতের মাধ্যমে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে আমাদের সকল কর্মের মডেল বানিয়েছেন।
সূরা আন-নূরের ৫৪ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘বল, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর; অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে তার উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য সে দায়ী এবং তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরা দায়ী; এবং তোমরা তার আনুগত্য করলে সৎ পথ পাবে। রাসূলের দায়িত্বতো শুধু স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া’।
এছাড়া আরও অন্যান্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা রাসুলের (ﷺ) আনুগত্য করার, তার সুন্নাহকে অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন”।
.
ইসলাম এমন একটা দ্বীন যা, থিয়োরীর পাশাপাশি মানুষকে প্রাক্টিক্যাল শিক্ষা দেয়। ইসলাম শুধু তাঁর কোন বিধান বর্ণনা করেই ক্ষান্ত হয় নি। বরং প্রত্যেকটি মৌলিক বিধান হাতে কলমে শিক্ষা দিয়েছে। আর হাতে কলমে শিক্ষা দেয়ার জন্য আল্লাহ তাঁর রাসূলকে (ﷺ) দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। যিনি একাধারে মানুষকে ওহীলব্ধ জ্ঞানের শিক্ষা দিয়েছেন। পাশাপাশি নিজের জীবনে তা পরিপূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করেছেন। প্রত্যেকটি কর্মের ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা রাসূলকে মডেল বানিয়েছেন। আদর্শিক পুরুষ বানিয়েছেন। কোরআন কারীমের মধ্যে রাসূলে (ﷺ) পার্সোনাল সমস্যার সমাধান এ জন্য দিয়েছেন, যাতে মানুষ তাদের জন্যে প্রেরিত মডেলের জীবনী থেকে শিক্ষা নিতে পারে। যাতে মানুষ জানতে পারে, তাদের আদর্শিক পুরুষ জীবনের সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান করেছেন। মানুষ যাতে আল্লাহকে এই অপবাদ না দিতে পারে যে, আল্লাহ যাকে মডেল বানালেন তার কর্ম গুলোকে আমাদের সামনে আনলেন না কেন?
মনে করুণ, আমি কোন সমস্যায় পরলাম। এখন এই সম্যসার সমাধান আমি তাঁর মধ্যে খুঁজে পেলাম না, যাকে আল্লাহ আমার জন্য আদর্শ হিসেবে নির্ধারণ করেছিলেন। তাহলে ব্যাপারটা কেমন হত? এজন্যেই রাসূলের (ﷺ) পার্সোনাল কিংবা পারিবারিক সমস্যার সমাধানগুলোও কোরআনে তুলে ধরা হয়েছে। আর আমাদের সমস্যার সমাধানও সেভাবে করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যেভাবে রাসূল (ﷺ) তাঁর সমস্যাবলির সমাধান করেছেন।