উপমহাদেশের ফির্কাবাজি বা দলাদলি
উপমহাদেশের ফির্কাবাজি বা দলাদলি
পৃথিবীতে বর্তমানে যে দেড়শত কোটি মুসলিম বাস করে। তাদের পূর্ব যুগের দলাদলি
আলোচনা করা হইয়াছে। আধুনিক কালের ফির্কাসমুহের পর্যালোচনা করলে দেখা যায় আজ মুসলিম
বিশ্ব দুটি ধারায় বিভক্ত। তাদের একটি হল শিয়া আর অপরটি হল সুন্নী। উভয়ই ধারাই
ইসলামের মূল ধারা হিসাবে দাবি করে থাকে। কিন্তু আমরা পূর্বেন আলোচনায় দেখেছি।
শিয়াদের সাথে ইসলামের নুন্যতম সম্পর্ক নেই। তাদের আকিদা বিশ্বাস ইসলাম থেকে জোযন বিয়োজন দুরে। ইসলামের শুরু
থেকে অদ্যবধী মক্কা মদিনায় ইসলামের মুলধারা বিদ্যমান আছে। সুদুর পারশ্যে (বর্তমান
ইরান) ইসলামের নামে কি হচ্ছে, কি আকিদা পোষন করছে , কি ইবাদত তৈরি করছে, কি
অনুষ্ঠান পালন করছে? তাতে ইসলামের কি আসে যায়। তবে যখন ঐ কাজগুলি ইসলাম বলে
চালিদেয় তখন তো ইসলামে আত্ম মর্জাদার জন্য অবশ্যই হানিকর।
শিয়ারা যে
বাতিল ফির্কা তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। কিন্তু আমরা যারা সুন্নী দাবি করি
তারাও আজ শত শত ফির্কায় বিভক্ত। সবাই আজ নিজেদের “আহলে সুন্নাত ওয়াল’জামাতেন”
অন্তর ভুক্ত দাবি করছি।
কারন
হাদিসে এসেছে।
মু‘আবিয়া (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেন, “তোমরা জেনে রাখ! তোমাদের পূর্ববর্তী কিতাবীগণ (ইহূদী ও খৃস্টানগণ) ৭২ দলে
বিভক্ত হয়েছিল। আর এ উম্মাত ৭৩ দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। এদের মধ্যে ৭২ দল জাহান্নামে
এবং একটি দলই জান্নাতে। তারা জামা‘আত।” (আবূ দাউদ ৪/১৯৮; হাকিম, আল-মুসতাদরাক
১/২১৮। হাকিম ও যাহাবী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। ইবনু হাজার হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।
আলবানী, সাহীহাহ ১/৪০৪-৪১৪)
অন্য হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একমাত্র আমি এবং আমার সাহাবিদের মতের অনুসারী দল (“আহলে সুন্নাত ওয়াল’জামাতেন”) ব্যতীত সকলেই জাহান্নামে যাবে। (তিরমিযি হাসিসের মান হাসান)।
অন্য হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একমাত্র আমি এবং আমার সাহাবিদের মতের অনুসারী দল (“আহলে সুন্নাত ওয়াল’জামাতেন”) ব্যতীত সকলেই জাহান্নামে যাবে। (তিরমিযি হাসিসের মান হাসান)।
বর্তমানে
বিশ্বের “আহলে সুন্নাত ওয়াল’জামাতেন” বিভক্তির খতিয়ান বেশ লম্বা। তাই শুধু ভারত উপমহাদেশের
“আহলে সুন্নাত ওয়াল’জামাতেন” দাবিদার মুসলিমদের ফির্কাসমুহ সম্পর্কে আলোচনা সীমা
বদ্ধ থাকব আশা করছি। (ইনশাআল্লাহ)।
উপমহাদেশের
শিয়া ও তাদের শাখাসমুহ ব্যতিত, যারা “আহলে
সুন্নাত ওয়াল’জামাতেন” দাবিদার তারা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ফির্কায় বিভক্ত।
যেমন:
(১) আকিদা
অনুসারে ০৫ ভাগে বিভক্ত।
(২) মাজহাব
অনুসারে ০৪ ভাগে বিভক্ত।
(৩) তরিকা
অনুসারে ০৬ ভাগে বিভক্ত।
আকিদা
অনুসারে ০৫ ভাগে বিভক্ত।
ক.
কাদিয়ানি
খ.
বেরে্লভী বা রিজভী
গ.
দেওবন্দী (তাবলীগ এদেরই একটি শাখা)
ঘ.
জামায়াতে ইসলামি
ঙ.
আহলে হাদিস
মাজহাব
অনুসারে ০৪ ভাগে বিভক্ত।
খ.
হানাফি মাজহাব
গ.
শাফিঈ মাজহাব
ঘ.
মালেকি মাজহাব
ঙ. হাম্ভলি
মাজহাব
তরিকা
অনুসারে ০৫ ভাগে বিভক্ত।
ঘ. নকশবন্দিয়া তরিকা (প্রতিষ্ঠাতা হযরত খাজা বাহাউদ্দিন)।
ঙ. মুজাদ্দিদিয়া তরিকা (প্রতিষ্ঠিত
হযরত নকশবন্দী হযরত মুজাদ্দিদ-ই-আলফে সানি)।এবং
চ. সুহ্রাওয়ার্দিয়া তরিকা (প্রতিষ্ঠাতা হযরত )।
এছাড়া মাদারিয়া,
আহমদিয়া ও কলন্দরিয়া নামে আরও কয়েকটি তরিকার উদ্ভব ঘটে।
আকিদা
অনুসারে, মাজহাব অনুসারে এবং তরিকা
অনুসারে যে ভাগে বিভক্ত করছি ইনশা আল্লাহ প্রতি ভাগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করর।
আকিদা অনুসারে উপমহাদেশের বিভক্তি
সবচেয়ে
মজার ঘটনা হল আকিদা অনুসারে যে ৫ টি ভাগের কথা উল্লেখ করেছি, তার প্রতিটি ফির্কার
সৃষ্টি হয়েছে ইংরেজ আমলে (১৭৫৭ খৃষ্টাব্দ থেকে ১৯৪৭ খৃষ্টাব্দ) এবং ভারতে। প্রতিটি
ফির্কা সম্পর্কে নিরপেক্ষভাবে আলোচনার চেষ্টা করব (ইনশাআল্লাহ)। আমার এ আলোচনার
মূল উদ্দ্বেশ্য ভূল ধরা নয়। সকলে জানুক আমাদের কারা কি আকিদা পোষন করি। চেষ্টা কবর
তাদের লেখা থেকে রেফারেন্স দিতে। আমি যা বুঝেছি তাতে মনে হয়েছে কাদিয়ানি একটি
বাতিল ফির্কা, বেরে্লভী বা রিজভী নিজেদের
সুন্নী নাম দিলেও আকিদায় অনেক ষ্পষ্ট ভ্রান্তি লক্ষণীয়, বাকি তিনটির (দেওবন্দী,
জামায়াতে ইসলামি ও আহলে হাদিস) মধ্যে কম বেশী ভুল ভ্রান্তি আছে। কিন্তু একে অপরের
সম্পর্ক এতই খারাপ যে একটি অন্যটিকে বাতিল জানে। কেউ কেউ আবার একে অপরকে কাফির,
মুসরিক, মুনাফিক, মুরদাত ইত্যাদি নামে ফতোয়া দিয়ে জর জরিত করছে। দেওবন্দী,
জামায়াতে ইসলামি ও আহলে হাদিস এই তিনটি ফির্কার মধ্যে আকিদায় সামান্য অমিল থাকলেও
ফিকহি মাসয়ালা মাসায়েলে বেশ পার্থক্য আছে। সবাই এ কথা স্বীকার করে যে, ফিকহি
মাসয়ালা মাসায়েলে এক বা একাধিক মতামত থাকেই পারে, এবং এতে দোষের কিছু নেই। যেমন
প্রখ্যাত চার মাজহাবের চার ইমাম একই মাসায়েলে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রদান করছেন। তাই
বলে কি তারা একে অপরকে কাফির, মুসরিক, মুনাফিক, মুরদাত বলে গালি দিয়েছেন।
(নাউজুবিল্লাহ)। কিন্তু ফিকহি মাসায়েল নিয়ে এদের বাড়াবড়ির কোন সীমা পরিসীমা পাওয়া
যায় না। এই ফিকহি মাসায়েল দিয়েই একে অপরকে কাফির, মুসরিক, মুনাফিক, মুরদাত বলছে
অথচ দুটিমত সঠিক বা সঠিকের কাছকাছি। অথবা ঐ ফিকহি মাসায়েল আমল না করলেও তার ঈমানের
উপর আঘাত আসে না। কাজেই এ লেখায় ফিকহি বিষয়গুলির কোন আলোচনাই আনবনা। শুধু
ফির্কাগুলির প্রতিষ্ঠার পেক্ষাপট ও বর্তমান অবস্থান, তাদের আকিদা, কার্যকালাফ
ইত্যাদি। তাহলেই পাঠকগন উপমহাদেশের ইসলামের এটা ধারনা পাবেন।
দ্বীন প্রচরের
জন্য মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর নিকট হারূন আলাইহিস সালাম মাধ্যমে ফরিয়াদ জানাল
ঠিক এভাবে, কুরআনের ভাষায় মহান আল্লাহ বলেন,
وَٱجۡعَل
لِّى وَزِيرً۬ا مِّنۡ أَهۡلِى (٢٩) هَـٰرُونَ
أَخِى (٣٠) ٱشۡدُدۡ
بِهِۦۤ أَزۡرِى (٣١) وَأَشۡرِكۡهُ
فِىٓ أَمۡرِى (٣٢)
আর আমার জন্য নিজের পরিবার
থেকে সাহায্যকারী হিসেবে নিযুক্ত করে দাও। আমার ভাই হরুনকে৷ তার মাধ্যমে আমার হাত মজবুত করো ।এবং তাকে আমার কাজে
শরীক করে দাও। (সুরা ত্বহা ২০:২৯-৩২)।
এই
দুয়া কবুল করলেন আর হারূন আলাইহিস সালাম কে পূর্ন নবী করলেন। কোর প্রকার ছায়ানবী
বা উপনবী বানালেন না।
আল্লাহ বলেন,
وَوَهَبۡنَا لَهُ ۥ مِن رَّحۡمَتِنَآ
أَخَاهُ هَـٰرُونَ نَبِيًّ۬ا (٥٣)
আর নিজ অনুগ্রহে তার ভাই হারুণকে নবী বানিয়ে তাকে সাহায্যকারী
হিসেবে দিলাম৷ (সুরা মারইয়াম
১৯:৫৩)।
তাই বলা যায়
ইসলামে কোর প্রকার ছায়ানবী বা উপনবী বানানোর পদ্দতি থাকলে হারূন আলাইহিস সালাম কে বানাতেন।
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল
হোসাইন।
0 Comments
Thanks for your comment