খারেজি ফির্কা
ফির্কার নামঃ খারেজি ফির্কা
উৎত্তির সময়ঃ খারেজি একটি স্বতন্ত্র দল ও মতবাদরূপে আত্মপ্রকাশ ঘটে ৩৭ হিজরিতে
সিফ্ফীনের যুদ্ধকালে। তবে জ্ঞানীদের অনেকের ধারণা যে,
খারেজীর আবির্ভাব রাসূল (সাঃ) এর যুগেই হয়েছিল কিন্তু তা ছিল
ব্যক্তি পর্যায়ের ঘটনা। এর প্রমাণ স্বরূপ তারা যুল খুআয়সারার ঘটনা উল্লেখ করেন।
আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একদা আমরা
রাসূল (সাঃ) এর নিকট ছিলাম। তিনি কিছু সম্পদ বন্টন করছিলেন। এমতাবস্থায় তামীম
গোত্রের এক ব্যক্তি যুল খুআয়সারা আসলো এবং বললঃ আল্লাহর রাসূল ন্যায় করেন। নবী
(সাঃ) বলেনঃ তোমার ধ্বংশ হোক, আমি ইনসাফ না করলে কে করবে। (বুখারী-৩৬১০)।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, নবী (সাঃ) বলেনঃ এর প্রজন্ম থেকে এমন এক সম্প্রদায় জন্ম নিবে, যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করবে কিন্তু তা তাদের কন্ঠনালী পার হবে না। তারা দ্বীন থেকে এমন ভাবে বের হয়ে যাবে যেমন তীর শিকার থেকে বের হয়ে যায়। বর্ণনাকারী বলেনঃ আমার মনে হচ্ছে, তিনি (সাঃ) বলেনঃ যদি আমি তাদের পেয়ে যাই তাহলে আমি তাদের সামূদ কাওমের ন্যায় হত্যা করবো।(বুখারী – ৪৩৫১)।
এই ব্যক্তি ছিল প্রথম খারেজী যে, সবচেয়ে বড় ইনসাফপরায়ণ ইমাম নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর বন্টনের প্রতি প্রকাশ্যে আঙ্গুল তোলে এবং নিজ রায়কে প্রাধান্য দেয়।
অন্য দিকে উসমান (রাযিঃ) এর হত্যার ষড়যন্ত্রকারী এবং পরে অন্যায় ভাবে তাঁকে হত্যাকারী উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ও ত্বাবারী ও ইবনে কাসীর (রাহেঃ) খারেজী বলে অভিহিত করেছেন। (আল্ বিদায়া ওয়ান নিহায়া,১০/২৭০-২৯৪)। কিন্তু এই সময় পর্যন্তও খারেজী একটি সম্পূর্ণ দল ও মতবাদ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে নি। দল হিসারে ৩৭ হিজরির দিকে আবির্ভান ঘটে ছিল।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, নবী (সাঃ) বলেনঃ এর প্রজন্ম থেকে এমন এক সম্প্রদায় জন্ম নিবে, যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করবে কিন্তু তা তাদের কন্ঠনালী পার হবে না। তারা দ্বীন থেকে এমন ভাবে বের হয়ে যাবে যেমন তীর শিকার থেকে বের হয়ে যায়। বর্ণনাকারী বলেনঃ আমার মনে হচ্ছে, তিনি (সাঃ) বলেনঃ যদি আমি তাদের পেয়ে যাই তাহলে আমি তাদের সামূদ কাওমের ন্যায় হত্যা করবো।(বুখারী – ৪৩৫১)।
এই ব্যক্তি ছিল প্রথম খারেজী যে, সবচেয়ে বড় ইনসাফপরায়ণ ইমাম নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর বন্টনের প্রতি প্রকাশ্যে আঙ্গুল তোলে এবং নিজ রায়কে প্রাধান্য দেয়।
অন্য দিকে উসমান (রাযিঃ) এর হত্যার ষড়যন্ত্রকারী এবং পরে অন্যায় ভাবে তাঁকে হত্যাকারী উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ও ত্বাবারী ও ইবনে কাসীর (রাহেঃ) খারেজী বলে অভিহিত করেছেন। (আল্ বিদায়া ওয়ান নিহায়া,১০/২৭০-২৯৪)। কিন্তু এই সময় পর্যন্তও খারেজী একটি সম্পূর্ণ দল ও মতবাদ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে নি। দল হিসারে ৩৭ হিজরির দিকে আবির্ভান ঘটে ছিল।
পেক্ষাপটঃ সিফ্ফীনের
যুদ্ধকালে, যখন আলী ও মুআবিয়া (রাযিঃ) উভয়ের পক্ষ থেকে সমস্যার সামাধানার্থে দুই
জন বিচারক নির্ধারণ করেন। এই মর্মে যে তারা দু’জনে মুসলিম উম্মার জন্য যা কল্যাণকর মনে করবেন, তা
ফয়সালা করবেন এবং উভয় পক্ষ তাদের সালিস মেনে নিবে। তাই আলী (রাযিঃ) এর পক্ষ থেকে
আবু মুসা আল আশআরী (রাযিঃ) এবং মুআবিয়া (রাযিঃ) এর পক্ষ থেকে আমর বিন আস (রাযিঃ)
কে নির্ধারণ করা হয়। সালিসি চুক্তির পর
আশআছ ইবনে কাইস তামিম গোত্রের নেত্রীস্থানিয় লোকদের সালিসের ফয়সালা পড়ে শুনান।
সেখানে ছিল বারিয়া ইবনে হানজালা বংশের সন্তান উরওয়া ইবনে উযায়ন (মাতার নাম)। সে
দাড়িয়ে বলল তোমরা কি ধর্মিয় বিষয় ফয়সালার জন্য মানুষ কে বিচারক মানছ? এ কথা বলেই
সে আশআছ ইবনে কাইস তাহনের পিছে আঘাত করে। এতে আশআছ ইবনে কাইস তার গোত্রের লকেরা
ভীষন বাগান্নিত হন। পরে তার কাজের জন্য ক্ষমা চাইলে ক্ষামা করা হয়। আলী (রাযিঃ)
পক্ষের কিছু লোক যারা কুররা নামে পরিচিত ছিল তারাও ঐ ব্যক্তির কথায় উদ্ভদ্দ হয়।
এবং ঘোষনা দেন “লা হুকমা ইল্লা লিল্লাহ” (আল্লাহ্র বিধান ছাড়া কারো বিধান মানি না, মানব না)। এর
পর মুয়াবিয়া সিরিয়ার দিকে আর আলী কুফার দিকে রওয়ানা দেন কুফা দ্বার প্রান্তে এসে
বার হাজার লোক তার থেকে আলাদা হয়ে যায়। ইতিহাসে এরাই খারেজি নামে পরিচিতি লাভ করে।
এরা আলী সাথে কুফা তাকতে অস্বীকৃতি জানায়। অতঃপর তারা যেমন ইমাম আলী (রাযিঃ) কে
পরিত্যাগ করে, তেমন মুসলিম
জামাআতকেও পরিত্যাগ করে হারূরা নামক স্থানে বসবাস শুরু করে। প্রথমে আলী (রাযিঃ)
ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) তাদের নিকট প্রেরণ করেন এবং তাঁদের সাথে মুনাযারা করেন,
যার ফলে কিছু লোক তাদের ভ্রান্ত ধারণা থেকে ফিরে আসে। অতঃপর বাকিদের
সাথে আলী (রাযিঃ) যুদ্ধ করেন, যা নাহারওয়ান যুদ্ধ নামে
প্রসিদ্ধ। খারেজীদের অধিকাংশই সেই যুদ্ধে নিহত হয়। (আল্ বিদায়া ওয়ান্নিহায়া
খন্ড-৭, পৃষ্ঠা-৫০৩, প্রকাশনি ইসরামি ফাউন্ডেশন ২০০৫)।
অন্য এক বর্নণায়, সিফফীন যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর শাম ও ইরাকের সকল সাহাবীদের
ঐক্যমত্যে বিচারব্যবস্থা পৃথকীকরণ এবং আলী (রা:) এর কূফায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত
গৃহীত হয়। তখনই খারেজী সম্প্রদায় আলী (রা:) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হারূরা
প্রান্তরে এসে বসতি স্থাপন করে। সেনাবাহিনীতে তাদের সংখ্যা আট হাজার ছিল। কারো
কারো মতে ষোল হাজার। বিচ্ছিন্নতার সংবাদ পেয়ে হযরত আলী (রা:) ইবনে আব্বাস
(রা:)-কে তাদের কাছে পাঠান। ইবনে আব্বাস (রা:) বুঝিয়ে শুনিয়ে তাদের থেকে দুই
হাজারকে আলী (রা:) এর অনুসরণে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন। অতঃপর আলী (রা:) কুফার
মসজিদে দাড়িয়ে দীর্ঘ ভাষণ দিলে মসজিদের এক কোনায়- “লা হুকমা ইল্লা লিল্লাহ” (আল্লাহ্র বিধান ছাড়া
কারো বিধান মানি না, মানব না) স্লোগানে তারা মসজিদ ভারী করে
তুলে। আলী (রা:) এর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়- “আপনি
বিচারব্যবস্থা মানুষের হাতে তুলে দিয়েছেন?! আল্লাহ্র
বিধানে অবজ্ঞা প্রদর্শনের দরুন আপনি মুশরেক হয়ে গেছেন…!!”
তখন আলী (রা:) বললেন-
তোমাদের ব্যাপারে আমরা তিনটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি:
১. মসজিদে আসতে তোমাদের আমরা বারণ করব না।
২. রাষ্ট্রীয় সম্পদ থেকে তোমাদের বঞ্চিত করব না।
৩. আগে-ভাগে কিছু না করলে আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না।
১. মসজিদে আসতে তোমাদের আমরা বারণ করব না।
২. রাষ্ট্রীয় সম্পদ থেকে তোমাদের বঞ্চিত করব না।
৩. আগে-ভাগে কিছু না করলে আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না।
তারাই
সর্বপ্রথম সুন্নাহ ও জামা‘আত থেকে বের হয়, সাহাবিগণ তাদের সাথে বিতর্ক
ও তাদের মতামতের বিরুদ্ধে দলিল-প্রমাণাদি পেশ করেন, ফলে তাদের কতক তওবা করে, যারা
তওবা করে নি। কিছুদিন পর
সাধারণ মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ করত: তারা আব্দুল্লাহ্ বিন খাব্বাব বিন আরিত
(রা:)-কে হত্যা করে তার স্ত্রীর পেট ফেড়ে দু-টুকরা করে দেয়। আলী (রা:) জিজ্ঞাস
করেন, আব্দুল্লাহ্কে কে হত্যা করেছে? জবাবে তারা- আমরা সবাই মিলে হত্যা করেছি- স্লোগান দিতে থাকে। এরপর আলী
(রা:) তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। নাহরওয়ান অঞ্চলে তাদের সাথে সাহাবীদের তুমুল যুদ্ধ হয়। এবং তাদের হাজারো লোককে হত্যাও করেন।
যুদ্ধ সমাপ্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে খারেজী সম্প্রদায়ের ফেতনাও সাময়িক ভাবে খতম হয়ে
যায়।
শাখা সমূহঃ খারিজিয়াহ সম্প্রদায় বিশের
মত শাখায় বিভক্ত।
খারিজী দলের
প্রধাণ উপদলগুলো হল এইঃ-
১। আযারিক্বা ২। নাজদাত ৩। ইবাদ্বিয়া ৪। মুহাকামিয়া ৫। আজারিদা ৬। ছাআলিবা ৭। যিয়াদিয়া ৮। বায়হাসিয়্যা। (ইসলামি আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ পৃষ্টা-২৪০)।
১। আযারিক্বা ২। নাজদাত ৩। ইবাদ্বিয়া ৪। মুহাকামিয়া ৫। আজারিদা ৬। ছাআলিবা ৭। যিয়াদিয়া ৮। বায়হাসিয়্যা। (ইসলামি আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ পৃষ্টা-২৪০)।
তাফসীরে
কামালাইনে খারিজিদের বারটি দলের নাম উল্লেখ করিছেন যথা:
১। আযারিয়া ২।
আবাখানিয়া ৩। তাগলিবিয়া ৪। হারিসিয়া ৫। খালাফিয়া ৬। কুযিয়া
৭। মু'তাযিলা ৮। মায়মুনিয়া ৯। কানযিয়া ১০। মাহকামিয়া ১১। উখতিয়া ১২। শারাফিয়া।
৭। মু'তাযিলা ৮। মায়মুনিয়া ৯। কানযিয়া ১০। মাহকামিয়া ১১। উখতিয়া ১২। শারাফিয়া।
খারেজিদের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ফির্কার পরিচিতি:
খারেজিরা অনেক ফেরকায় বিভক্ত, আমরা তার গুরুত্বপূর্ণ কতক ফেরকা উল্লেখ
করবো, দীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি বা সীমালঙ্ঘনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে। সীমালঙ্ঘন বিবেচনায় তাদের চরমপন্থি ফেরকা হচ্ছে
‘আযা-রিকা’, অতঃপর ‘নাজদা-ত’ এবং সবচেয়ে নমনীয় ফেরকা হচ্ছে ‘ইবাদ্বিয়া’।
১. ‘আযারিক্বাঃ আবু রশীদ নাফে ইবনে আযরাক্বের অনুসারীদের আযারিক্বা বলা
হয়, যার বিষয়টি আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর যুগে আত্মপ্রকাশ করে।বনু হানিফা গোত্রে জম্ম বলে তাকে
হানাফি ও বলা হয়। খারেজিদের মধ্যে এরাই হল সর্বাধিক ভন্ড ও দুর্দান্ত।সংখ্যার দিক
দিয়ে তারা খারেজিদের শীর্ষ দল।
তাদের গুরুত্বপূর্ণ আকিদা:
ক. উসমান ও আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে কাফির
বলা।
খ. কবিরা গুণাহকারীকে কাফির ও চিরস্থায়ী জাহান্নামী বলা।
গ. মুসলিমদের থেকে যারা তাদের বিরোধিতা করে তাদেরকে কাফির বলা, বরং তাদের নিকট
যে হিজরত করে চলে আসে নি সেও কাফির, যদিও সে তাদের মাযহাবের অনুসারী হয়।
ঘ. তাদের বিরোধী মুসলিম দেশকে দারুল কুফর (কাফির রাষ্ট্র) হিসেবে ফতোয়া
প্রদান করা।
ঙ. বিবাহিতের যিনা-ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে পাথর
নিক্ষেপ অনুরূপভাবে অপবাদ আরোপের শাস্তি রহিত করা। (বিভিন্ন ফের্কা, ধর্ম ও মতবাদের মূলনীতি: ড. সফর ইবনে আব্দুর রহমান আল-হাওয়ালি)।
২. নাজদাতঃ নাজদাহ ইবনে আমির আল-হানাফির অনুসারীদের নাজদাত বলা হয়,
সে মূলত নাফে ইবনে আযরাক্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয় এবং তার কতক বাড়াবাড়ি শিথিল করে। সে ইয়ামামা অঞ্চলে বিদ্রোহ করেছিল।
তারই অনুসারিরা তাকে ৬৯ হিজরিতে হত্যা করে।
তাদের গুরুত্বপূর্ণ আকিদা:
ক. মুসলিমদের থেকে তাদের বিরোধীকে কাফির বলা। এমনকি তাদের পূর্বসূরী আযারিক্বা ফেরকাও এদের মতে কাফের। তবে মূর্খ ব্যতীত, মূর্খের ওযর তারা গ্রহণ করে যতক্ষণ না তার উপর প্রমাণ
প্রতিষ্ঠিত করা না হয়।
খ. তাদের বিরোধীদের দেশকে নেফাকের দেশ বলা, কুফরি দেশ নয়।
গ. অপরাধী ও শাস্তি উপযোগীদের পক্ষ নেওয়া, যদি তারা তাদের মাযহাব অনুসারী
হয়, অবশ্য এটা বলে যে তারা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামী।
ঘ. মুমিন ব্যক্তিকে অর্থাৎ তাদের মাযহাবের অনুসারীকে শুধু কবিরা গুনাহের কারণে কাফির না বলা, যেরূপ আযারিক্বা ফেরকা বলে থাকে।
বরং কুফরি তখনই হবে, যখন পাপে অবিচল থাকবে, সে পাপ বড় হোক বা ছোট হোক।(বিভিন্ন ফের্কা, ধর্ম ও মতবাদের মূলনীতি: ড. সফর ইবনে আব্দুর রহমান
আল-হাওয়ালি)।
ঙ. মদ পানের হদ কে সে
বাতিল করেছে্।
চ. তার মতের বিরোধাতাকারি
জাহান্নামি। (ইসলামি আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ
পৃষ্টা-২৪০)।
৩. ইবাদ্বিয়াঃ আব্দুল্লাহ ইবনে আবাদ্ব আত-তামিমির অনুসারীদের ইবাদ্বিয়া বলা হয়।
সেও নাফে ইবনে আযরাক্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। একজন তাবেয়ী আবুশ শা‘শা জাবের ইবনে যায়েদকে তারা খুব সম্মান করে এবং তার
সাথে তারা নিজেদের মাযহাবকে সম্পৃক্ত করে।
খারেজিদের থেকে একমাত্র ইবাদ্বিয়া ফেরকা বর্তমান পর্যন্ত চলমান আছে। প্রথম শতাব্দী শেষে যেসব ফেরকা ও বিদ‘আত সৃষ্টি হয়,
তার দ্বারা তারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়, বিশেষভাবে মু‘তাযিলাদের
দ্বারা।
তাদের গুরুত্বপূর্ণ আকিদা:
ক. আল্লাহর সিফাৎ অস্বীকার করা, এ ব্যাপারে তারা মু‘তাযিলাদের মাযহাব অনুসরণ করে।
খ. কুরআনুল কারিম মাখলুক বা সৃষ্ট।
গ. কবিরা গুণাকারী চিরস্থায়ী জাহান্নামী, তা থেকে সে কখনো বের হবে না, তবে
এ কারণে তারা তাকে বড় কুফরিতে লিপ্ত বলে না।
ঘ. আখিরাতে আল্লাহর দীদার বা দর্শন সাব্যস্তকারী কাফির।
ঙ. শরীয়তের বিধি-বিধানের অপব্যাখ্যা করা, সুতরাং তারা আল্লাহর সিফাত বা
গুণাবলীকে অপব্যাখ্যা করে, অনুরূপভাবে তারা ব্যাখ্যা করে সিরাত ও মীযানকে। (বিভিন্ন ফের্কা, ধর্ম ও মতবাদের মূলনীতি: ড. সফর ইবনে আব্দুর রহমান
আল-হাওয়ালি)।
৪। মুহাকামিয়াঃ এরাই সেই দল যারা আলী (রা:) সালিসীর বিরুদ্ধে
বিদ্রোহ করে। আলী (রা:) কূফায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে তখন তারা আলী (রা:) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হারূরা
প্রান্তরে এসে বসতি স্থাপন করে।
তাদের গুরুত্বপূর্ণ আকিদা:
ক. ক. উসমান ও আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে কাফির বলা।
খ. আমিরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও তার অনসারিদেরকে কাফির বলা।
গ. কবিরা গুণাহকারীকে কাফির ও চিরস্থায়ী জাহান্নামী বলা।
ঘ. তার মতের বিরোধাতাকারি
জাহান্নামি।
ঙ. জঙ্গে জামালে অংশগ্রহন
কারি সকলে কাফির।(ইসলামি আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ
পৃষ্টা-২৩৯)।
৫. আজারিদাঃ আব্দুল করিম ইবনুল
আজারিদের অনুসারী। সে ছিল আতিয়্যা ইবনুল আসওয়াদ আল হানাফির এক জন অনুসারী।
আতিয়্যা খারিজিদের একটি দল নাজদার
বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। অতপর সে নাজদার ছোট একটি দল নিয়ে সিজিস্থানে
চলে যায়। (ইসলামি আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ
পৃষ্টা-২৪০)।
খারিজিদের আকিদাসমূহ একত্র করলে তাদের আকিদা দাড়ায়ঃক. কবীরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি কাফের। যেমন, যিনাকারী, মদ্য পানকারী। এরকম কবীরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি চিরকাল জাহান্নামে থাকবে।
খ. উসমান, আলী
মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে কাফির
বলে। তারা
হযতর আলী এবং মুয়াবিয়া
রাদিয়াল্লাহু সহ যে সকল সাহাবায়ে কেরাম বিচারব্যবস্থা
পৃথকীকরণ বিষয়ে একমত হয়েছেন, তাদেরকে
কাফের বলে আখ্যায়িত করে থাকে (নাঊযুবিল্লাহ)। জঙ্গে জামালে অংশগ্রহন কারি সকলে কাফির বলে।
গ.
তাদের বিরোধী মুসলিম দেশকে দারুল কুফর (কাফির রাষ্ট্র)
হিসেবে ফতোয়া প্রদান করা। গুনাহে লিপ্ত
মুসলিম শাসনকর্তা অপসারণে বিদ্রোহ করাকে তারা জায়েয মনে করে। মুসলিমদের থেকে যারা তাদের বিরোধিতা করে তাদেরকে কাফির বলা, বরং তাদের
নিকট যে হিজরত করে চলে আসে নি সেও কাফির, যদিও সে তাদের মাযহাবের অনুসারী হয়।
ঘ. বিবাহিতের যিনা-ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে পাথর নিক্ষেপ
অনুরূপভাবে অপবাদ আরোপের শাস্তি রহিত করা। মদ পানের হদ কে সে বাতিল করেছে্।
ঙ. আল্লাহর সিফাৎ অস্বীকার করা, এ ব্যাপারে তারা মু‘তাযিলাদের মাযহাব অনুসরণ করে।
চ. কুরআনুল কারিম মাখলুক বা সৃষ্ট।
ছ. আখিরাতে আল্লাহর দীদার বা দর্শন সাব্যস্তকারী কাফির।
৬৪৮-(৬৭/৩৩৫) আবূ রাবী' আয যাহরানী ও হাম্মদ
(রহঃ) ..... মুআযাহ্ (রহঃ)
থেকে বর্ণিত। জনৈক মহিলা আয়িশাহ (রাযিঃ) কে প্রশ্ন করল,
আমাদের কেউ কি তার হায়িযের দিনগুলোর সালাত কাযা করবে? আয়িশাহ (রাযিঃ) বললেন,
তুমি কি হারূরিয়্যাহ’* (খারিজীয়া)? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে আমাদের কারো হায়িয হলে
পরে তাকে (সালাত) কাযা করার নির্দেশ দেয়া
হতো না। (ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৬৫২, ইসলামিক সেন্টারঃ ৬৬৭)
(হরূরী) হারূরা কুফা নগরের নিকটবর্তী একটি গ্রামের
নাম। প্রথমে খারিজীরা এ গ্রামে
এসে একত্রিত ছিল এজন্য তাদেরকে হারুরী বলা হয়েছে। এ খারিজীরা সহীহ হাদীস এবং মুসলিমদের
ঐকমত্যের বিরোধিতা করে বলে হায়িযা অর্থাৎ ঋতুবতী মহিলাদের সালাত কাযা করতে হবে। (নবাবী)
বর্তমান আবস্থাঃ বর্তমানে
তারা ওমান এবং অন্যান্য দেশে বসবাস করে।
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ
ইস্রাফিল হোসাইন।
0 Comments
Thanks for your comment