সর্বশেষ

2/recent/ticker-posts

শিয়া ফির্কা

শিয়া ফির্কা

ফির্কার নামঃ শিয়া ফির্কা
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। 

          ‘শীয়া একটি আরবি শব্দ যার আভিধানিক অর্থ অনুসারী (followers) বা দল (Party) কুরআন মজিদে এসেছে, وَإِنَّ مِن شِيعَتِهِۦ لَإِبۡرَٲهِيمَ (٨٣)) অর্থ- ইব্রাহিম ছিলেন (নূহের) একজন অনুসারী(সুরা সাফফাত :৮৩)। এখানে শিয়া শব্দটি অনুসারী অর্থে ব্যবহার করা হইয়াছে। মুসলিম বিশ্বের তৃতীয় খলিফার উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু সময় যখন ফিতনার সূচনা হ এবং তাকে নির্মমভাবে শহীদ করা হয়, তখন যারা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সমর্থন দেয় ও তার পক্ষে যুদ্ধ করে তাদের কে ‘শিয়ায়ে আলি’ বা আলির অনুসারী বলা হত। তাই তখন ‘শিয়া’ বলতে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর অনুসারীদের  বুঝান হত বর্তমানে শিয়া বলা হয় এ ব্যক্তিকে যে আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও আহলে বাইয়াত সম্পর্কে বিশেষ আকিদা পোষন করে। ইমামতে বিশ্বাসি। আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর উপর অধিত মর্যাদা দিয়ে থাকেন।
প্রথম যুগের শিয়াদের সম্পর্কে হযরত ইবনে তাইমিয়া রাহিমা হুল্লাহ বর্ননা করেন, "প্রাথমিক যুগের শিয়ারা যারা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু কে সমর্থন করেছিল বা ঐযুগে ছিল তারা হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর উচ্চ মর্যাদা নিয়ে কোন মতবিরোধে ছিলেন না, তবে তাদের মধ্যে মতবিরোধ ছিল আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু  নাকি উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বেশী মর্যাদা সম্পন্ন। (মিনহাজ আস-সুন্নাহ,১/১৩)।
পরবর্তীতে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু খেলাফত কালে, মুসলিমদের বিশাল অংশ আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু সমর্থনে ছিল। এর মধ্যে অনেক বদরী সাহাবা, আনসার ছিলেন। এই তালিকা বিশাল। কিন্তু তারা কখনই আলাদা আকিদাহ বিশিষ্ট দল নন। তারা শধু মাত্র হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু জীবিত কালেই ছিলেন।
অতঃপর কালের আবর্তে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে নিয়া বাড়াবাড়ি করার ফলে নতুন নতুন আকিদা সৃষ্টি করে, যে ফেরকার সৃষ্টি হয় তারাই পরবর্তিতে “শিয়া” নামে পরিচিতি লাভ করেতারা বিশ্বাস করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর আগে গাদির খুম নামক স্থানে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু কে নিজের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রতিনিধি এবং খলিফা নির্ধারণ করে যান। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর সাহাবিগণ আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহু নিকট সর্বসম্মতিতে বায়‘আত গ্রহণ করেন, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু কিংবা কেউ তাতে বিরোধিতা করেন নি
অনুরূপ ঐকমত্য গঠন হয় ওমরের খিলাফত সম্পর্কে, অতঃপর উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফত সম্পর্কে। ঘটনাটি ছিল এমন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর মৃত্যুর পর মদীনার কিছু লোক ‘সাকিফাহ’ নামক ঘরে সমাবেত হয় রাজনৈতিক শূন্যতা পূরনের লক্ষ্যে। এই খবর আবু বকর সিদ্দীকী রাদিয়াল্লাহু আনহু কাছে পৌছালে তিনি, হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু, এবং হযরত আবু উবায়দাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু সেখানে পৌছান যেন মানুষ কোন ভুল সিদ্ধান্তে উপনিত না হয়। তখন হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাফন কার্যের দায়িত্বে ছিলেন। "সাকিফাহ"-য় সমেবেত জনতা হযরত আবু বকর সিদ্দিকী রাদিয়াল্লাহু আনহু কে খলিফা হিসাবে বায়াত করে।
কিছু লোক হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু কে খলিফা হিসাবে দেখতে চাইতো। তাদের যুক্তি ছিল নিম্মরূপ।

খ. তারা  কেউ কেউ আব্দুল মোত্তালিব কে মক্কার শাষক তথা আরবের শাষক মনে করত। কারণ মক্কা ছিল আরবের কেন্দ্রভূমি। সেই কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল মোত্তালিবের বংশ হিসাবে নিজেই শাষকে পরিনত হন এবং এই ধারায় হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্থলাভিষিক্ত হওয়া উচিত।
খ. আবার কেউ কেউ হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছেলের মত মনে করতেন। কারণ, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পালিত ছিলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেয়ের জামাতা ছিলেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সরাসরি বংশ হাসান এবং হোসেনে রাদিয়াল্লাহু আনহুর পিতা ছিলেন। আবার কোন কোন সময় বড় ভাই এবং ছোট ভাইয়ের (যদিও হযরত আলী রাঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচাতো ভাই) বয়স বেশী পার্থক্য হল, ঐ সম্পর্ককেও পিতা-ছেলের সম্পর্কের মত ধরা হয়
গ. আবার কেউ কেউ হয়ত ছিলেন এ রকম, তারা জাস্ট মনে করতেন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু শাষক হিসাবে ভাল হবেন।
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু  কে খলিফা দেখতে চান এমন লোকদের বর্নিত প্রথম দুই ধারার ব্যাক্তিদের চিন্তা ধারা এক প্রকার রাজতন্ত্রীক। এবং হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু  কে রাজতন্ত্রীয় চিন্তা ধারার মোকাবেলা করতে হয়েছিল। যাইহোক, তারা সকলেই হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং পরবর্তিতে হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কে মেনে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ থেকে ছিলেন। তারা কখনই আলাদা ধর্মিয় দল নন, এটা শুধু সমর্থন ও মতামতের ব্যাপার। মতভেদ থাকা সত্বেও সবাই হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু, উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু, উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু, এবং আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে খেলাফতে রাশিদিন হিসাবে গন্য করে থাকেন। তারা এই চার জনই হকের উপর থেকে খেলাফতের মহান দায়ুত্ব সম্পন্ন করেছেন, এ ব্যাপারে শিয়া জাতী ছাড়া কেউই অস্বীকার করে না।

উৎত্তির সময়ঃ  উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুআমলে পারস্য জয় করে মুসলিমরা। তখন পারস্য বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন হরমুযানতাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের হুকুম দান করা হয়। এবং তার শেষ ইচ্ছ্ জানতে চাওয়া হয়। সে তার মৃত্যুদণ্ড এড়াতে ছলনার আশ্রয় নেয়। পানি চেয়ে বলে এটাই তাঁর শেষ ইচ্ছা যে, এ পানি পান না করা পর্যন্ত তাঁকে হত্যা করা হবে না, আর পরে সে এ পানি ফেলে দেয়। কিন্তু উমার (রা) তাকে হত্যা করেন নি। উমর রা: মহানুভবতা দেখে হরমুজান ইসলাম গ্রহণকরে। আসলে, কিন্তু অতি দুঃখের ব্যাপার, সেটা লোকদেখানো ছিল। 
মুক্তি পেয়ে হরমুজান বাস করতে থাকে মদিনায়। এবং, উমার
রাদিয়াল্লাহু আনহু কে হত্যা করার পরিকল্পনা সাজাতে থাকে। তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয় জাফিনা আল খালিল (খ্রিস্টান) এবং সাবা ইবনে শামুন (ইহুদী)তারা একসাথে মিলে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়ন্ত্রের পরিকল্পনা সাজাতে থাকে। কারন, হরমুজানের পারস্য বাহিনী এবং  জাফিনার রোমান বাহিনীকে মুসলিমরা পরাজিত করে সমুলে উৎখাত করেছে। অপর পক্ষে সাবার ইহুদী গোষ্ঠীকে মদিনা থেকে বহিষ্কার করেছে মুসলিমরা। সকলের একটাই লক্ষ মুসলমানদের বিরুদ্ধ প্রতিশোধ
আর নতুন ধর্ম ইসলামের প্রতি সম্মিলিত বিতৃষ্ণা তো আছেই। তাই তো, ৭ নভেম্বর ৬৪৪ সালে রোম নিবাসি অগ্নিপূজক আবু লুলু ফিরোজ নামের এক আততায়ীকে দিয়ে উমার
রাদিয়াল্লাহু আনহুকে হত্যা করা হয়। আবু লুলু ফিরোজ ৬ বার মতান্তরে ৩ বার ছুরিকাঘাত করে। সাহিহ বুখারি মতে, আবু লুলু ফিরোজ ধরা পড়ার পর আত্মহত্যা করে। কিন্তু, শিয়ারা তা মানে না। 
উমার (রা) এর ছেলে উবাইদুল্লাহ হরমুযান আর জাফিনাকে হত্যা করেন। অবশ্যই, ইহুদী সাবা বেঁচে যায়। (আড়ালে কাজ করেছিল সাবা) পরে, উবাইদুল্লাহকে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। তাঁকে উপস্থিত করা হয় নতুন খলিফা উসমান (রা) এর সামনে। উযির আলি (রা) বললেন, উবাইদুল্লাহ বিনা প্রমাণে তৎক্ষণাৎ হত্যা করেছে, যেটা ইসলাম মানে না। এটা তাঁর করা উচিত হয়নি। আলি (রা) এর পক্ষে সমর্থন দেন অনেকে। আবার উবাইদুল্লার প্রতিও অনেকে সমর্থন দেন। তখন তারা ২ ভাগ হয়ে যান। পরে, উসমান (রা) উবাইদুল্লাহ এর পক্ষ হতে জরিমানা প্রদান করেন।
 
কিন্তু, ততদিনে বিভেদ যা হবার হয়ে গেছে। ইহুদী পরিকল্পনা সফল হতে শুরু করেছে। ইহুদী সাবা তখন যেটা করলেন, তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা কে বললেন, মুসলিমদের দেখিয়ে ইসলাম গ্রহণ কর, যেন এরপর থেকে সহজেই আমরা মুসলিমদের গোপন খবর পেতে পারে। ভিতর থেকে বিভেদ সৃষ্টি করতে একজনের খুবই দরকার
 তাইতো মুসলিম বিশ্বের তৃতীয় খলিফার উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু খেলাফতকালে ইয়েমেনের অধিবাসি এই ইয়াহুদি সাবা, তার সন্তান আব্দুল্লাহ ইবনে সাবাকে ইসলাম ধর্মে বিভক্তি আর ধ্বংশের প্রত্যয় নিয়ে ইসলাম গ্রহণ করান। আব্দুল্লাহ ইবনে সাবাহ মদিনায় কিছু দিন কাজ করে সফল না হয়ে বসরা যান। এক সময় সিরিয়াও গিয়ে ছিলন। এই সব জায়গা পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করতে না পেরে অবশেষে মিশর গমন করেন। এখানে সে তার দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নের জন্য কিছু সাহায্য কারি পেয়ে যায়।
এরই সুযোগে সে প্রচার করে যে, মুসলানদের প্রতি আমার আশ্চর্য লাগে, যারা পৃথিবীতে ঈসা আঃ এর পুনরায় আগমনের কথা বিশ্বাস করে বিন্তু  মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পুনরায় আগমনের কথা বিশ্বাস করে না। অথচ মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  ঈসা আঃ এর চেয়ে শ্রেষ্ট। তার এই কথা অনেক অজ্ঞলোক মেনে নেয়।

এই ষড়যন্ত্রকারী ইয়াহূদী আব্দুল্লাহ ইবনে সাবাহ  ইসলামকে বিভক্তি ও ধ্বংসে দার প্রান্তে পৌছেদেয়। তার সৃষ্ট ভ্রান্ত মতবাদের দায়ভার আজও মুসলিম জাতী জীবন দিয়ে বহন করছে। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর উপর ফেতনার আগুন প্রজ্বলিত ও তার জীবন নিঃশেষ করার সূচনায় ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা। অনুরূপ জামাল তথা উষ্ট্রীর যুদ্ধের দিন মুসলিমদের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠার পর আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা ও তার অনুসারীরা পুনরায় যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেয়।
পরিকল্পনামত, আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা তাই করলেন। তিনি নিজেকে অতীব ধর্মপ্রাণ মুসলিম হিসেবে প্রকাশ করলেন। আর বললেন, মুহাম্মাদ (সা) এর আপন আত্মীয় হিসেবে খেলাফত সবচেয়ে বেশি প্রাপ্য আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর
তারা কন্ঠ খুবই ভাল ছিল । সে বিভিন্ন স্থা্নে তিনি আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর পক্ষে প্রচারনা করা শুরু করলেন। আর, উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিরুদ্ধে অপপ্রচার। শুধু উসমানই নন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু, উমাররাদিয়াল্লাহু আনহু এবং উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু ৩ জনের নামের বিরুদ্ধেই তিনি কুৎসা ছড়াতে লাগলেন। জনতা ক্ষিপ্ত হতে লাগল উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু উপর। ইবনে সাবা হয়ে উঠলেন জনপ্রিয়ফল কী দাঁড়ালো? ১৭ জুলাই ৬৫৬ সালে উসমান (রা) কে হত্যা করা হল। 
আর আলি(রা) এর অনুসারীরা দাবি করতে লাগল, আলি (রা) যেন খলিফা হন। তারা নিজেদের শিয়ানামে পরিচয় দিতে লাগল। শিয়া মানে আগেই বলেছি অনুসারীশিয়াতু আলিথেকে শিয়া”, মানে, আলির অনুসারী। 
যাই হোক, প্রথমে আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর রাজি হননি খলিফা হতে। পরে লোকজন গিয়ে সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর, তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহুর, জুবায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রমুখের কাছে গিয়ে খলিফা হবার প্রস্তাব দেন। কিন্তু তারাও রাজি হলেন না। শেষ পর্যন্ত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর এই বলে রাজি হলেন, সবাই তাঁকে মানলেই তিনি খলিফা হবেন। পরে সবাই তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু আর জুবায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু কে সভায় হাজির করল। তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হল, আপনারা আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর কে মানবেন? তারা নীরব রইলেন। পরে উপস্থিত একজন তরবারি বের করে হুমকি দিলে তারা শর্তসাপেক্ষে রাজি হলেন। অন্যদিকে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর মানলেন না তাঁর খেলাফতমুয়াবিয়ার দূত মদিনায় এলে সেই ইহুদী ইবনে সাবার লোক তাঁকে হত্যা করতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু, মনে হল, আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু চেষ্টা করেছেন। ফলে আলি আর মুয়াবিয়ার মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হল। তা দেখে এক পর্যায়ে, তালহা (রা) আর জুবায় রাদিয়াল্লাহু আনহু মদিনা ত্যাগ করলেন। 
অন্যদিকে আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহ হজ পালন শেষে মদিনা ফেরার পথে খবর পেলেন উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু কে গুপ্তহত্যা করা হয়েছে। তৎক্ষণাৎ তিনি তাঁর উটের উপর থেকে একটি উদ্দীপক ভাষণ দেন যে, উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর হত্যার প্রতিশোধ নিতেই হবে। উপস্থিত মানুষজন তাঁর কথায় উদ্দীপ্ত হয়ে আন্দোলন সৃষ্টি করে। তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু আর জুবায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহুর মক্কা পৌঁছে আন্দোলনে যোগ দেন। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত যুবায়ের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু প্রমূখ ছাহাবা হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার দাবী জানান। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, এই মূহূর্তে বিদ্রোহীগণ বিপুল শক্তির অধিকারী। এখন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। ইতিমধ্যে অনেকেই ভাবলেন হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইচ্ছা করে গড়িমসি করছেন (নাঊযুবিল্লাহ)। পরের ঘটনা, আলি (রা) আর আয়িশা (রা) এর বাহিনী মুখোমুখি হয়। কিন্তু আলি (রা) সংলাপে বসতে চাইলেন।  উভয় পক্ষই চাইল যুদ্ধ যেন না হয়।  পরবর্তীতে উভয় পক্ষ সালিসের মাধ্যমে নিস্পত্তি হয়ে যায়। এইদিকে মুনাফিক আবদুল্লাহ ইবনে সাবা এবং তার দল দেখল-সর্বনাশ! এইবার তাদের আর রেহাই নেইকারণ, সন্ধি হলে বিভেদ হবে না, তাঁর উদ্দেশ্য সফল হবে না। চক্রান্ত শুরু করলেন তিনি। তাই রাতের আঁধারে ইবনে সাবার দল আলির (রা) শিবিরে আক্রমন করে। কিন্ত মনে হল, প্রতিপক্ষ আয়িশা (রা) এর বাহিনী আক্রমন করেছে। তাই তারাও পাল্টা আক্রমণ চালাল। যুদ্ধ হল এবং যুদ্ধের এক পর্যায়ে আলি(রা) জুবায়ের (রা) এর কাছে গিয়ে বললেন, “মনে আছে? একদিন রাসুল বলেছিলেন তুমি ভবিষ্যতে অন্যায়ভাবে আলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে?” জুবায়ের বললেন, “! হ্যাঁ! তাই তো!” সাথে সাথে জুবায়ের (রা) যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে চলে গেলেন। ইবনে সাবার এক লোক জুবায়েরের পিছু নেয়। পরে জুবায়ের (রা) জোহোর এর নামায শুরু করতেই তাঁকে খুন করল। আনন্দের সাথে আলি (রা) এর কাছে এল খুনি, এরপর জুবায়েরের (রা) তরবারি, বর্ম পেশ করল। আলি(রা) তাঁকে জাহান্নামের সুসংবাদ দিলেন। সাথে সাথে, সেই লোক পেটে তরবারি ঢুকিয়ে আত্মহত্যা করল। অন্যদিকে তালহা (রা) যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করার সময় একটি তীরের আঘাতে মারা যান। আলি (রা) এ উভয়ের মৃত্যুর কথা শুনে মনবেদনায় কাতর হয়ে পড়লেন। 
        আলি (রা) বুঝতে পারলেন, যুদ্ধ সহজে শেষ হবে না। যতক্ষণ আয়িশা (রা) উটের উপর থেকে উৎসাহ দিবেন, ততক্ষণ চলবে যুদ্ধ। দশ হাজার মুসলিম মারা যাবার পর আলির(রা) বাহিনীর একজন উট পর্যন্ত পৌঁছে পা কেটে ফেলেন। ফলে উট বসে পড়ল। আর আয়িশার (রা) বাহিনীর মন ভেঙ্গে গেল। পরে, আলি(রা) আয়িশার(রা) হাওদাটি অদুরে নিয়ে গিয়ে পর্দা দিয়ে ঘিরে দেয়ার ব্যবস্থা করলেন। এরপর সেখানে ঢুকে কুশল জিজ্ঞেস করলেন। তারা পরস্পরের কাছে ক্ষমা চাইলেন। যুদ্ধ বন্ধ হল। এ যুদ্ধ জামাল (উট) যুদ্ধ নামে পরিচিত। কারণ, আয়িশা (রা) উটের উপর থেকে উৎসাহ দিচ্ছিলেন। মুসলিমদের যতই ক্ষতি হোক, লাভ হল ইসলামের শত্রুদের। এ যুদ্ধ সংঘটিত হয় ৩৬ হিজরী সনের জুমাদাল উখরা মাসে। (এই ঘটনা বিস্তারি জানান জন্য ইসলামি ফাইন্ডেসনের প্রকাশিত, ইবনে কাসির রহ. লিখিত “আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়ার ৭ম খন্ডদেখার অনুরোধ রইল)
হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু চাইছিলেন যে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সুসংহত হওয়ারপর হযরত উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর শহীদকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আর এই ব্যবস্থা নেয়াও এত সহজ ছিল না যেখানে শত শত ইবনে সাবার অনুসারী বিদ্রোহী জড়িত ছিল। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সুসংহত করার জন্য সিফ্‌ফিনের যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ল। ফলে সিফ্‌ফিনের প্রান্তরে উভয় পক্ষ সৈন্য সমাবেশ করলেন। ভিষন যুদ্ধ চলতে থাকল, বিপরীত পক্ষ যখন পরাজয় অত্যাসন্ন দেখলেন, তখন তাঁরা সন্ধির প্রস্তাব করলেন। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুও তা মেনে নিলেন। সন্ধির সর্ত সমূহও লিখা হল এবং স্থির হল দুজন সালিসের মাধ্যমে বিচার নিষ্পত্তি হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে সালিসের মাধ্যমে বিচার-নিষ্পত্তি হয়ে উঠেনি। পরে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পত্র বিনিময়ের মাধ্যমে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সঙ্গে সন্ধি করেন

        সৌদি আলেম ড. সফর ই়বনে আব্দুর রহমান আল-হাওয়ালি বিভিন্ন ফের্কা, ধর্ম ও মতবাদের মূলনীতি নামক গ্রন্থে লিখেন, আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর ব্যাপারে চরম সীমালঙ্ঘন করে যার কিছু নমুনা তুলে ধরা হলঃ
. ইবনে সাবা দাবি করে বর্তমান কুরআন প্রকৃত কুরআনের এক নবমাংশ, আলী ব্যতীত কেউ পূর্ণ কুরআন জমা করতে সক্ষম হয়নি। আলী ও তার পরিবারকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাতেনি ইলম দ্বারা ভূষিত করেছেন।
আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ইবনে সাবাকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কোনো ইলম দ্বারা খাস করেন নি। তিনি মিম্বারের দাঁড়িয়ে এ ঘোষণা দেন, যেমন ইমাম আহমদ ও বুখারি সহি সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
তিনি ইবনে সাবাকে ডেকে পাঠান এবং বলেন: “আল্লাহর কসম তিনি—অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—আমাকে একান্তে কিছু প্রদান করেন নি যা অন্যান্য মানুষ থেকে গোপন করেছেন। আমি তাকে বলতে শুনেছি কিয়ামতের পূর্বে ত্রিশ জন মিথ্যাবাদী হবে, তুমি অবশ্যই তাদের একজন”।
. আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর উলুহিয়াত মতবাদ প্রকাশ করে:
ইবনে সাবা এ কুফরি আবিষ্কার করে তার অনুসারীদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়, তাদের একদল আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর দরজায় এসে বলে:
আপনিই সে? তিনি বলেন: সে মানে? তারা বলল: আপনি আল্লাহ। তিনি তাদেরকে তিন দিন সময় দেন, অতঃপর তাদেরকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারেন।
. ইবনে সাবা শায়খাইন তথা আবু বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে গালমন্দ করার উক্তি প্রকাশ করে, সে ধারণা করে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করেন। যখন আলী পর্যন্ত এ কথা পৌঁছে, তিনি বলেন: “আমার সাথে ও এ কালো খবিসের সম্পর্ক কি? আল্লাহর নিকট পানাহ চাই, তাদের ব্যাপারে ভালো ব্যতীত খারাপ কিছু গোপন করা থেকে”। অতঃপর আব্দুল্লাহ ইবনে সাবাকে মাদায়েন নির্বাসনে পাঠানোর নির্দেশ দেন এবং বলেন: “আমার সাথে এক শহরে সে কখনো থাকতে পারে না” অতঃপর তিনি মিম্বারে দাঁড়ান, যখন মানুষেরা জড়ো হল, তিনি আবু বকর ও ওমরের অনেক প্রশংসা করেন, এবং জনগণকে শাসিয়ে তিনি এ বলে ভাষণ সমাপ্ত করেন: “জেনে রেখো, যার সম্পর্কে পৌঁছবে যে, সে আমাকে তাদের উপর প্রাধান্য দেয় আমি অবশ্যই তাকে অপবাদের দোররা মারব”।

আব্দুল্লাহ ইবনে সাবাহ পারশ্যে নির্বাসনঃ এই সব কার্যকালাপের দরুন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ইবনে সাবাকে হত্যা করার ইচ্ছা করেন, কিন্তু তিনি নিজের বাহিনীতে ফেতনার আশঙ্কা করলেন, কারণ ইবনে সাবার অনুসারীরা তার দলে ঘাপটি মেরে ছিল, তাই তাকে নির্বাসনে পারস্যরা নিক্ষেপ করেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে সাবাকে পারশ্যে নির্বাসনে পাঠাআলী রাদিয়াল্লাহু আনহু সাময়িক স্বস্ত্বি পেলেও, ইবনে সাবাহ পেয়ে যান তার মতলব হাসিলের সূবর্ণ সুযোগ। চতুর আব্দুল্লাহ ইবনে সাবাহ সুযোগের সৎব্যবহারের কোন কমতি করেনি।
তার ভ্রান্ত আকিদা প্রচারের সূযোগসমুহ হলঃ
১. নতুন ইসলাম দেশঃ পারশ্যে ছিল ইসলামে প্রবেশকারী নতুন অনারব দেশতাদের ইসলাম গ্রহনের বয়স দশ/বার বছর। ওমর সময়ে পারশ্য বিজয় হয়। তাতে বসবাসকারী সাধারণ লোকদের অন্তর সাবেক আকিদার ভ্রান্তি থেকে তখনো পুরোপুরি মুক্ত হয়নি, তারা যে কোনো দাওয়াত গ্রহণ করার জন্য উৎসুক ছিল। তারা ইবনে সাবার দাওয়াত কে আসল ইসলাম মনে করে অকপটে গ্রহণ করে। ইবনে সাবার তার ভ্রান্ত বিশ্বাস ছড়ানোর জন্য  সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যায়।
 ২. ক্ষমতাধরদের ইসলাম অপছন্দঃ পারস্যের ক্ষমতাধর লোকেরা ইসলাম ও তার অনুসারীদের অপছন্দ করত। কারন ইসলাম তাদের রাজতন্ত্রের পতন ঘটিয়েছে, তাদের ঐতিহ্য ধ্বংস করেছে ও তাদের অগ্নিপূজার ধর্ম নিশ্চিহ্ন করেছে।
৩. অগ্নিপূজারী ধর্মগুরুরা নাখোসঃ অগ্নিপূজারী ধর্মগুরুরা ইসলামের প্রতি নাখোস ছিল। তারাও ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে যে কোন কাজের সহযোগী ছিল।
৪.  পারস্যের জনগণের পুরান বিশ্বাসঃ পারস্যের জনগণের স্বভাব ছিল শাসক পরিবারকে নিষ্পাপ জানা, প্রভুর স্তরে তাদের আনুগত্য প্রদান করা, শাসক পরিবার থেকে পরম্পরায় রাজত্বের মালিক বানানো, এমন কি তাতে পুরুষ সদস্য না থাকলে নারীই রাজত্বের মালিক হত। এই বিশ্বাসের পালে হাওয়া দিয়ে আব্দুল্লাহ ইবনে সাবাহ  প্রচার করে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু নিষ্পাপ, ইলাহ ও রাজত্বের একক মালিক।

৫. ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতাঃ ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা ও অগ্নিপূজকদের পুরান বিশ্বাসের সূত্র ধরে। আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা ‘হুলুল’ আকিদা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে রচনা করে তার ব্যাপক প্রচার করে এমন কি যখন তার নিকট আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর হত্যার সংবাদ পৌঁছে, সে বলে: “যদি তোমরা একটি থলিতে তার মগজ নিয়ে আস আমি তার মৃত্যু বিশ্বাস করব না”। সে আরো বলে: “হত্যাকৃত ব্যক্তি আলী নয়, বরং শয়তান তার আকৃতি ধারণ করেছে, আলী আসমানে উঠে গেছে, সে মেঘে হাঁটে, বিদ্যুৎ চমক তার দোররা, মেঘের গর্জন তার আওয়াজ। অতিসত্বর সে জমিনে ফিরে আসবে, অতঃপর তা ইনসাফ দ্বারা ভরে দিবে, যেমন তা ফাসাদ দ্বারা পূর্ণ হয়ে গেছে”।
৬. অগ্নিপূজকদের হিংসাঃ অগ্নিপূজকদের হিংসাকে পুঁজি করে ইবনে সাবা তার অনুসারী পারস্যদের মাঝে সাহাবিদের বিদ্বেষ ও গালমন্দ করার বীজ বপন করতে সক্ষম হয়, বিশেষ করে আমিরুল মুমেনিন ওমর ইবনুল খাত্তাব সম্পর্কে, যার মুজাহিদ বাহিনী তাদের দেশ জয় ও তাদের রাজত্ব ধ্বংস করেছে। তাদের এক অগ্নিপূজক আবু লুলু ফিরোজ ওমরকে অতর্কিত হামলা করে শহীদ করে, যা সবার জানা যেমনি ভাবে ইবনে সাবা  উসমান, তালহা, যুবায়ের ও অনেক সাহাবিকে হত্যার ষড়যন্ত্রে ছিল ঠিক তেমনি ভারে প্রকাশ্যভাবে তাদের উপর লা‘নত করত। সবচেয়ে অবাক কাণ্ড, অগ্নিপূজক আবু লুলু ফিরোজের কর্মে গর্ব করে ও সম্মান দেখায়। এবং তাকে বীর-বাহাদুর উপাধি দেয়
এভাবে মূল ইসলামকে পাশ কাটিয়ে আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জামানায় তার সম্পর্কে যে ভ্রান্ত আকিদা সৃষ্টি হয় যা স্বয়ং আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও অপছন্দ করতেন, পরবর্তিতে আরও অনেক রঙ লাগিয়ে ভ্রান্ত আকিদার পাহাড় রচনা করা হয়, আর এই ভ্রান্ত আকিদার পাহাড়ের উপর দাড়িয়ে যে দলটি প্রতিষ্ঠিত হয় তার নাম হল “শিয়া”।
ড. সফর ই়বনে আব্দুর রহমান আল-হাওয়ালি বলেন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর যুগে যখন শিয়াদের উন্মেষ ঘটে তখন তারা তিন ভাগে বিভক্ত ছিল:
১. মুফাদ্দালাহ: (প্রাধান্য দানকারী), তারা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আবু বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমের উপর প্রাধান্য দিত।
২. সাব্বাবাহ: (গালমন্দকারী), তারা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে প্রাধান্য দেওয়ার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করে, এমন কি আবুবকর ও ওমরকে পর্যন্ত গালমন্দ করে।
৩. গুলাত: (সীমালঙ্ঘনকারী), তারা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইলাহ (উপাস্য) জানে, অর্থাৎ তার বিশ্বাস করে তিনি ইলাহ, অথবা তার মাঝে ইলাহের কোনো অংশ প্রবেশ করেছে, যেমন খ্রিস্টানরা ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বিশ্বাস করে। তারা যিন্দিক
তাদেরকে যিন্দিক বলার কারণ: তারা প্রকাশ্যভাবে ইসলামের ঘোষণা দেয়, কিন্তু অন্তরে কুফর গোপন করে।
শিয়াদের ব্যাপারে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর ফয়সালা:                 
১. মুফাদদালাহ: আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করতেন এবং ঘোষণা দিতেন যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর সর্বোত্তম উম্মত আবুবকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুম, যেমন সহি বুখারিতে তার সূত্রে বর্ণিত আছে।
সহি সূত্রে তার থেকে আরো প্রমাণিত, তিনি বলেছেন,
“আবুবকর ও ওমরের উপর আমাকে প্রাধান্য দানকারী ব্যক্তিকে যদি আমার নিকট উপস্থিত করা হয় আমি অবশ্যই তাকে মিথ্যা অপবাদের শাস্তি আশিটি বেত্রাঘাত করবো”।
২. সাব্বাবাহ: তাদেরকে হত্যা করা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর ফয়সালা ছিলতার দলের কতক লোক আবুবকর ও ওমরকে গালমন্দ করে, এরূপ কথা তার নিকট পৌঁছলে তিনি তাদেরকে হত্যার জন্য তলব করেন, কিন্তু তারা পলায়ন করে।
৩. গুলাত (যিন্দিক): তাদের ব্যাপারে তার সিদ্ধান্ত ছিল আগুনে পোড়ানো, তিনি পুড়িয়েছেনও, যেমন সহি বুখারিতে প্রমাণিত।
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদেরকে পোড়ানো নিয়ে আপত্তি করেন, কারণ আগুন দিয়ে পোড়ানোর ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাই তাদেরকে তিনি তলোয়ার দিয়ে হত্যা করতে বলেন।
শিয়ারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত তাদের দলের সংখ্যা সঠিকভাবে নিরুপন করা কঠিন।
দায়েরাতুল মাআরেফকিতাবে বর্ণিত আছে যে, “প্রসিদ্ধ তেহাত্তর দলের চাইতেও শিয়াদের দল উপদলের সংখ্যা আরো বেশী।(দায়েরাতুল মাআরেফ -/৬৭)
প্রসিদ্ধ রাফেযী মীর বাকের আল দাম্মামের বরাতে বলা হয়েছে, হাদীসে বর্ণিত তেহাত্তর দলের সবাই শিয়া, তাদের মধ্যে মুক্তি প্রাপ্ত দল শুধু ইমামিয়াহ্ (ইমামিয়াহ্ শিয়াদের একটি উপদল)মুকরেযী বলেন, তাদের দলের সংখ্যা তিনশোর মত।
শাহরাস্তানী বলেন, “রাফেযী শিয়ারা পাঁচ দলে বিভক্ত: () আল কিসানিয়াহ্ () আল যায়দিয়াহ্ () আল ইমামিয়াহ্ () আল গালিয়াহ্ () আল ইসমাঈলিয়াহ্।
বাগদাদী বলেন, “আলী রা. এর পরবর্তী যুগে রাফেযী শিয়ারা চার ভাগে বিভক্ত হয়: () যায়দিয়াহ্ () ইমামিয়াহ্ () কিসানিয়াহ্ () গুলাত।
তখন থেকে শিয়ারা এত বেশী দলাদলিতে বিভক্ত যে তাদের দলের সংখ্যা সঠিকভাবে নিরুপন করা কঠিন।
দায়েরাতুল মাআরেফকিতাবে বর্ণিত আছে যে, “প্রসিদ্ধ তেহাত্তর দলের চাইতেও শিয়াদের দল উপদলের সংখ্যা আরো বেশী।(দায়েরাতুল মাআরেফ -/৬৭)
৬ষ্ঠ হিজরী শতকের মুহম্মদ আব্দুল ক্বাদির জীলানী রহমতুল্লাহি আলাইহির লেখা কিতাব গুনিয়াতুত্ ত্বলিবীনকিতাবে আল্ আক্বায়িদ ওয়াল ফিরক্বুল ইসলামিয়্যাহঅধ্যায়ে ৭২টি বাতিল ও গোমরাহ ফিরক্বার নামের তালিকা সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, ৭২টি বাতিল, গোমরাহ ও জাহান্নামী ফিরক্বা মূলত ৯টি ফির্কার আলোচনা করছে তাদের মধ্যে শিয়াদের নাম ও আছে। তিনি শিয়াদেন ৩২ টি বাতিল ফির্কার আলোচনা করছেন ।                                                  
(ক) গালিয়াহ: যা ১২টি শাখায় বিভক্ত
(খ) যাইদিয়াহ: যা ৬টি শাখায় বিভক্ত
(গ) রাফিদ্বাহ্: যা ১৪টি শাখায় বিভক্ত।
(১) বায়ানিয়াহ (২) ত্বাইয়্যারিয়াহ (৩) মুগীরিয়াহ (৪) মানছূরিয়াহ (৫) খত্ত্বাবিয়াহ (৬) মুয়াম্মারিয়াহ (৭) বাযীয়িয়াহ (৮) মুফাদদ্বালিয়াহ্ (৯) মুতানাসিখাহ (১০) শারীয়িয়াহ (১১) সাবায়িয়াহ (১২) মুফাব্বিদ্বিয়াহ (মুফাব্বিদ্বাহ, মাফূদ্বাহ)।
(খ) যাইদিয়াহ: যার ৬টি শাখা:
(১) জারূদিয়াহ্ (২) সুলাইমানিয়াহ (৩) বাত্বরিয়াহ্ (৪) নঈমিয়াহ্ (৫) ইয়াকূবিয়াহ্ (৬) রাজয়িয়াহ (তানাসূখিয়াহ)।
(গ) রাফিদ্বাহ : যার ১৪টি শাখা:
(১) ক্বাত্বয়িয়াহ (২) কাইসানিয়াহ (৩) কারীবিয়াহ (৪) উমাইরিয়াহ (৫) মুহম্মদিয়াহ (৬) হুসাইনিয়াহ (৭) নাবিসিয়াহ (৮) ইসমাঈলিয়াহ্ (৯) ক্বারামিত্বাহ্ (১০) মুবারাকিয়াহ (১১)শামীত্বিয়াহ (১২) মামতূরিয়াহ (১৩) মূসাবিয়াহ (১৪) ইমামিয়াহ। আরো অতিরিক্ত ২টি শাখা হল: (১৫) মুয়াম্মারিয়াহ (আম্মারিয়াহ, আফত্বাহিয়াহ) (১৬) যারারিয়াহ।


বর্তমান যুগের শিয়াঃ বর্তমানেও শিয়ারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত। তাদের দলের সংখ্যা যেহেতু সঠিকভাবে নিরুপন করা যায় না। তাছাড়া প্রথমিক যুগের শিয়াদের সাথে বর্তমান যুগের শিয়াদের অনেক পার্থক্য আছে আবার মিল ও আছে। বর্তমান যুগের শিয়া দাবীকৃত দলগুলির সাহিত প্রথমিক যুগের শিয়ার কোন সম্পর্ক নেই যদিও আকিদায় অনেক মিল খুজে পাওয়া যায়প্রথমিক যুগের শিয়াদের আকিদাকে আরও ফুলিয়ে ফাপিয়ে, রংঙ লাগিয়ে, বিকৃত করা হইয়াছে। 
‘ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ’ গ্রন্থে বলা হয়েছে। সাবইয়্যা শিয়ারা ৩৯ টি উপদলে বিভক্ত। আর গুলাত বা চরমপন্থী শিয়ারা ২৪ টি উপদলে বিভক্ত। যাদের একটি দল হল ইমামিয়া। এই ইমামিয়া শিয়ারাই, শিয়াদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ট দল। তাদের প্রধান ও প্রসদ্ধ দল তিনটি।
১. ইছনা আশারিয়া (বার ইমাম পন্থী)
২. ইসমাঈলিয়াহ
৩. যায়দিয়াহ্
. ইছনা আশারিয়া (বার ইমাম পন্থী): এরা শিয়াদের সর্ব-বৃহত দলএরা ইরান, ইরাক এবং আজারবাইজানে সংখ্যা গরিষ্ট। ভারত ও পাকিস্থানে এদের সংখ্যা অনেক। বর্তমানে ইরানের ক্ষমতাশীলেরা এই দলের অন্তর ভুক্ত। বর্তমানে শিয়া বলতে এই ইছনা আশারিয়া বা ইমাম পন্থী শিয়াদেরই বোঝান হয়ে থাকে।

২. ইসমাঈলিয়াহ শিয়াঃ এরাও শিয়াদের মধ্যে একটি পড়িচিত দল। এই দলের দুটি নেতৃত্ব আছে। একটি দাওদিয়া বাহরা এবং অন্যটি আগা খান।

৩. যায়দিয়াহঃ তারা অন্যান্য শিয়াদের থেকে অনেকটা আলাদা। তারা জায়েদ বিন আলী বিন হুসাইন আল জয়নাল আবেদীনের অনুসারী। তারা মনে করেন, অত্যাচারী বাদশার বিপক্ষে যুদ্ধ করা ইমামদের দায়িত্ব। ১২১ হিজরীতে হিসামের বিপক্ষে যুদ্ধে, যারা যায়েদ বিন আলীর সৈন্যবাহিনীর অংশ হয়ে যুদ্ধ করে তাদেরকে যায়দিয়া বলা হয়। যারা তাকে ফেলে চলে যায় তাদেকে রাফিদি বলা হয়। আর এই রাফিদিরাই আবু বকর সিদ্দিকী রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি বিদ্দেষ ছড়ায়কিন্তু যায়দিয়াহ শিযারা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ও ভালবাসে। শুধু মাত্র হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু কে অন্যান্য সাহাবীদের থেকে উপরে স্থান দেয়।
ইউসুফ ইবন উমর এর নিকট গিয়ে তাকে এই যায়দ ইবন আলী ও তার কুফাবাসী সঙ্গীদের বিষয়টা অবহিত করে ৷ ফলে ইউসুফ ইবন উমর অনুসন্ধানে লোক প্রেরণ করেন ৷ বিষয়টি টের পেয়ে শীয়ারা যায়দ ইবন আলীর নিকট গিয়ে সমবেত হলো এবং বললং : মহান আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন ৷ আবু বাকর রাদিয়াল্লাহু আনহু উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ব্যাপারে আপন র অভিমত কী?
তিনি বলেন মহান আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন ৷ আমি আমার পরিবারের কাউকে তাদের থেকে নিঃসম্পর্ক হতে শুনিনি ৷ আর আমিও তাদের সম্পর্কে ভাল ছাড়া বলছি না ৷ তারা বলে তাহলে আপনি নবী পরিবারের রক্ত প্রত্যাশা করছেন কেন ? তিনি বলেন, তার কারণ এ বিষয়টির (ক্ষমতার) আমরা অধিকতর হকদার ৷ অথচ, মানুষ সে ক্ষেত্রে আমাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে এবং আমাদেরকে তা হতে সরিয়ে রেখেছে ৷ তবে আমাদের মতে তারা কুফরে উপনীত হয়নি ৷ ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে তারা ন্যায়বিচার করেছে এবং কুরআন ও সুন্নাহ্ অনুযায়ী আমল করেছে
তারা বলেঃ তাহলে আপনি এদের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন কেন?
 তিনিবললেন : এরা তো ওদের মত নয়৷ এরা জনগণের উপর এবং নিজেদের উপর যুলুম করেছেআর আমি মহান আল্লাহর কিতাব, মহান আল্লাহর নবীর সুন্নাহ্ জীৰিতকরণ ও বিদ্আত নির্মুলকরণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি৷ কাজেই তোমরা যদি আমার কথা মান্য কর, তবে তা তোমাদের জন্যও মঙ্গল হবে, আমার জন্যও ৷ আর যদি অস্বীকার কর, তাহলে আমি তোমাদের কোন যিম্মাদার নই৷ কিন্তু তারা তার বায়আত ভঙ্গ করে তাকে ত্যাগ করে চলে যায়৷ এ কারণেই সেদিন হতে তাদেরকে রাফেযী (ত্যাগকারী) নাম দেওয়া হয়পক্ষান্তরে, যারা যায়দ ইবন আলীর অনুসরণ করেছে, তারা আখ্যায়িত হয় যায়দিয়াহ্ নামে৷ কুফাবাসীদের
অধিকাংশই রাফেযী আর আজ অবধি পবিত্র মক্কাবাসীগণের বেশীর ভাগ মানুষ যায়দিয়্যাহ মতবাদের অনুসারী তাদের মতাদর্শের একটি সভা আছে তা হলো, আবুবকর
রাদিয়াল্লাহু আনহু ও উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু উভয়কে সতাপন্থী বলে বিশ্বাস করা৷ আবার একটি ভ্রান্তিও আছে ৷ তা হলো, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর উপর আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে প্রাধান্য দেওয়া ৷ অথচ, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের চেয়ে উপরে নন৷ এমনকি আহলুসৃ-সুন্নাহর সুপ্ৰতিষ্ঠিত অভিমত ও সাহাবীগণের থেকে বর্ণিত সঠিক বর্ণনা অনুপাতে উছমানও রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের উপর অপ্রগণ্য নন৷ উপরে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর ও উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাদিয়াল্লাহু আনহুর জীবন-চরিত অধ্যায়ে আমি বিষয়টি উল্লেখ করেছিতারপর যায়দ ইবন আলী৷ তার অবশিষ্ট সঙ্গীদের নিয়ে অভিযানে বের হওয়ার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেন ৷ তারপর এ বছরের পহেলা সফর তিনি তাদের থেকেও অঙ্গীকার নেন সংবাদটা ইউসুফ ইবন উমর-এর নিকট পৌছে যায়৷ তিনি পত্র লিখে  কুফার গভর্নর হাকাম ইবনু সাল্তকে সব মানুষকে জামি মসজিদে সমবেত করার নির্দেশ প্রদান করেন ৷ নির্দেশ মুতাবিক মুহাররম মাসের শেষ দিন মঙ্গলবার সমবেত হয় যায়দ-এর বের হওয়ার একদিন আগেযায়দ ইবন আলী বের হন বুধবার রাতে প্রচণ্ড শীতের মধ্যে তার সঙ্গীরা আগুন নিয়ে ইয়া মানসুর! ইয়া মানৃসুর! শ্লোগান তুলেপ্রভুষে দেখা গেল তার সঙ্গে সমবেত জনতার সংখ্যা দুইশত আঠারজনযায়দ বলতে শুরু করলেন সুবহানাল্লাহ্! মানুষ কোথায় ? বলা হলোঃ তারা তে৷ মসজিদে অবরুদ্ধ
এদিকে হাকাম ইউসুফ ইবন উমরকে পত্র লিখে যায়দ ইবন আলীর অভিযানের কথা অবহিত করেন৷ ইউসুফ ইবন উমর কুফা  অভিমুখে একটি বাহিনী প্রেরণ করেন
ইবন উমর কুফা অভিমুখে একটি বাহিনী প্রেরণ করেন
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)





















ইসলামের দৃষ্টিতে দলাদলি-০৫
শিয়া ফির্কার আকিদা-০১
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

ইমাম সম্পর্কে তাদের বিশ্বাস
০১. শিয়দের বিশ্বাসি মানব জাতীর হিদায়াতের জন্য বার ইমাম মনোনিত করেছেন।
শিয়াদের প্রধান আকিদা হল ইমামত সংক্রান্ত আকিদা। আল্লাহ তায়ালা মানুষ জাতীর হিদায়াতের জন্য সর্বশেষ রাসূল মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেরণ করেনতার মৃত্যুর পর যেহেতু আর কোন নবী বা রাসূল আসবেন না, তাই মানুষ জাতীর হিদায়াতের জন্য ইমাম মনোনিত করবেন। আর শিয়াদের মতে আল্লাহ তায়ালা বার জন ইমাম নিযুক্ত করছেন। কিয়ামত পর্যান্ত তারাই পৃথিবী বাসির হিদায়াতের জন্য কাজ করবেন। তাদের বিশ্বাসি বারতম ইমামের উপরই পৃথিবী লয় বা কিয়ামত হবে।  তাদের বারো ইমামের নাম সমুহঃ
 হযরত ইমাম হুসাইন ইবনে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু
 লী ইবনে হুসাইন ওরফে  জয়নুল আবেদীন 
মুহম্মদ ইবনে আলী ওরফে বাকের
জাফর ছাদিক্ব ইবনে বাকের
  মূসা কাযিম ইবনে জাফর ছাদিক্ব
আলী রেযা  ইবনে মূসা কাযিম
  মুহম্মদ ত্বক্বী ইবনে আলী রেযা ওরফে জাওয়াদ 
১০
।  আলী নক্বী ইবনে মুহম্মদ ত্বক্বী োওরফে হাদি।
১১
হাসান আসাকারী এবং আলী নক্বী ওরফে জাকি। এবং
১২
মুহম্মদ আল-মাহদী(অন্তর্হিত ইমাম মাহদি যিনি শিয়া আকিদা অনুযায়ী এখন থেকে প্রায় বার শত বছর আগে ২৫৫ অথেআ ২৫৬ হিজরিতে জম্ম গ্রহন করে ৪/৫ বছর বয়সে অলৌকিকভাবে লোক চক্ষুর অন্তরালে চলে যান এবং ‘সুররা মান রাআ’ নামক একটি গুহায় আত্মগোপন করে আছেন। শেষ যামানায় আসবেন) 

মন্তব্যঃ শিয়াদের এই ইমামত সংক্রান্ত আকিদা কুরআন সুন্নুহ বিরোধী মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর যেহেতু আর কোন নবী বা রাসূল আসবেন না, আলেমগনই এই মহান কাজের আনজাম দিবেন।  মানুষ জাতীর হিদায়াতের জন্য কোন ইমাম মনোনিত করার প্রমান কুরআন সুন্নুায় পাওয়া যায় না। বরং এটা মনগড়া আকিদা মাত্র।

০২. শিয়াদের বিশ্বাস হল, তাদের ইমামগন নিষ্পাপ
ক. শিয়াদের দাবি তাদের এই বার ইমাম নিষ্পাপউসুল কাফিতে অষ্টম ইমাম ইবনে মূসা রেজার একটা দীর্ঘ খুতরা রয়েছে যাতে ইমামদের শ্রেষ্টত্ব ও বৈশিষ্ট্য বর্ননা করা হইয়াছে যেখানে বার বার তাদের ইমামদেন নিষ্পাপপতার কথা বলা হইয়াছে। (ইসলামি আকিতা ও ভ্রানাত মতবাদ পৃষ্ঠা -২৫৬)

খ. আল-কুলাইনীউসুলুল কাফীগ্রন্থে উল্লেখ করেন, “ইমাম জাফার সাদেক বলেন, আমরা হলাম আল্লাহর ইলমের ভাণ্ডার। আমরা আল্লাহর নির্দেশাবলীর অনুবাদক। আমরা নিষ্পাপ কওম। আমাদের আনুগত্য করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং আমাদের ফরমানী থেকে নিষেধ করা হয়েছে। আসমানের নীচে ও যমীনের উপরে বিদ্যমান সকলের জন্য আমরা আল্লাহর পরিপূর্ণ হুজ্জাত তথা দলীল।

গ. শিয়া মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতাগণ প্রমাণ সাব্যস্ত করেছে যে, তাদের ইমামগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মত নিষ্পাপ এবং তারা নবীদের সকলের চেয়ে উত্তম। আর তাদের আনুগত্য করা এবং তাদের ইমামত তথা নেতৃত্বের উপর আস্থা রাখা বাধ্যতামূলক; যেমনিভাবে বাধ্যতামূলক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ও তাঁর আনুগত্য করা। আর তারা তাদের ইমামদের জন্য এমন সব গুণাবলী ও মর্যাদার কথা বলে, যা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও জন্য সাব্যস্ত হতে পারে না। সুতরাং তারা তাদের ইমামদের জন্য দাবি করে যে, যা হয়েছে এবং যা হবে, তারা সেই জ্ঞান রাখে। আর তারা তাদের মৃত্যুর সময় সম্পর্কেও জানে, এমনকি তারা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী মৃত্যুবরণ করে। (উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ১৫৮-১৫৯)
মন্তব্যঃ

০৩. জগতের একমাত্র পরিচালক মহান আল্লাহ তায়ালা, তার গুনের সমকক্ষ জ্ঞান করা শির্কের অন্তরভূক্ত। অথচ শিয়ারা আকিদা জগত পরিচালনার দায়িত্ব ইমামদের।

. খুমাইনীতাহরীরুল ওয়াসীলাহ্গ্রন্থে বলেন, “নিশ্চয় ইমামের প্রশংসিত স্থান উচ্চ মর্যাদা রয়েছে। জগত পরিচালনার খেলাফতও তার উপর ন্যাস্ত। তার নেতৃত্ব কর্তৃত্বের প্রতি জগতের সব কিছুই অনুগত।তিনি আরো বলেন, “নিশ্চয় আমাদের বারো ইমামের সাথে আল্লাহর কিছু বিশেষ মুহূর্ত রয়েছে। যা তার নৈকট্য লাভে ধন্য কোন ফেরেশ্তারও নেই। এমনকি কোন নবী রাসূলেরও নেই।

. আল খু-ইমিসবাহুল ফুকাহাগ্রন্থে বলেন, সমস্ত জগতের পরিচালার দায়িত্ব তাদের রয়েছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। বিভিন্ন সূত্র থেকে এরূপই প্রতীয়মান হয়। কারণ, তারাই হচ্ছেন সব কিছুর মিডিয়া অর্থাৎ তাদের দ্বারাই সব কিছুর অস্তিত্ব। তারাই সকল সৃষ্টির মূল কারণ। অতএব, যদি তারা না হতেন তাহলে কোন মানুষই সৃষ্টি হতো না। তাদের জন্যই সকল মানুষের সৃষ্টি। তাদের দ্বারাই সকলের অস্তিত্ব। এদের কারণেই সৃষ্টির শ্রীবৃদ্ধি। শুধু তা- নয় বরং সৃষ্টিকর্তা ব্যতীত তাদের হাতেই রয়েছে সৃষ্টিজগত পরিচালনার কর্তৃত্ব। আর সব পরিচালনার কর্তৃত্ব¡ আল্লাহর কর্তৃত্বের ন্যায়।

গ মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব আল-কুলাইনী উসুলুল কাফীগ্রন্থের মধ্যে গোটা পৃথিবীর মালিক ইমাম নামক অধ্যায়ে আবূ আবদিল্লাহ আ. (জাফর সাদিক) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: দুনিয়া ও আখেরাত ইমামের মালিকানায়, যেখানে ইচ্ছা তিনি তা রাখেন এবং আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কারস্বরূপ যার কাছে ইচ্ছা তা হস্তান্তর করেন(উসুলুল কাফী পৃষ্ঠা- ২৫৯; (ভারত প্রকাশনা)

মন্তব্যঃ আল্লাহ তাআলা তাঁর সুস্পষ্ট আয়াতে বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلۡأَرۡضَ لِلَّهِ يُورِثُهَا مَن يَشَآءُ  [سورة الأعراف: 128]
অর্থ: অযমীন তো আল্লাহরই। তিনি বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার উত্তরাধিকারী করেন (সূরা আরাফ: ১২৮)
﴿ وَلِلَّهِ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ  [سورة آل عمران: 189]
অর্থ: আসমান ও যমীনের সার্বভৌম ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই (সূরা আলে ইমরান: ১৮৯)
﴿ فَلِلَّهِ ٱلۡأٓخِرَةُ وَٱلۡأُولَىٰ ٢٥  [سورة النجم: 25]
অর্থ: বস্তুত ইহকাল ও পরকাল আল্লাহরই( সূরা আন-নাজম: ২৫)
﴿ لَهُ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ  [سورة الحديد: 2]
অর্থ: আসমান ও যমীনের সার্বভৌম ক্ষমতা একমাত্র তারই(সূরা আল- হাদীদ: ২)
﴿ تَبَٰرَكَ ٱلَّذِي بِيَدِهِ ٱلۡمُلۡكُ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٌ ١﴾ [سورة الملك: 1]
অর্থ: মহামহিমান্বিত তিনি, সর্বময় কর্তৃত্ব যাঁর নিয়ন্ত্রণে; তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান(সূরা আল-মুলক: ১)

০৪. শিয়াগণ আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু আল্লাহ তায়ালার সমক্ষ জ্ঞান করে উলুহিয়াতের মর্জাদা প্রদান করে থাকে।
ক.  হযরত আলী আলাইহিস সালাম তিনিই আল্লাহ পাক। (জিলা-উল-আইয়ুন, ২য় খন্ড, ৬৬ পৃষ্ঠা)
খ। আর শিয়াগণ লেখে: “আলী বলেন: ... আমিই প্রথম, আমিই শেষ, আমিই ব্যক্ত, আমিই উপরে আর আমিই নিকটে এবং আমিই যমিনের উত্তরাধিকারী (রিজালু কাশীপৃষ্ঠা-১৩৮ (ভারতীয় ছাপা)

মন্তব্যঃ এই আকিদা  থেকে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু পবিত্র ও মুক্ততিনি এই ধরনের জঘন্য মিথ্যা কথা বলতেই পারেন না।আর আল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿ هُوَ ٱلۡأَوَّلُ وَٱلۡأٓخِرُ وَٱلظَّٰهِرُ وَٱلۡبَاطِنُ  [سورة الحديد: 3]
তিনিই আদি, তিনিই অন্ত; তিনিই সবার উপরে এবং তিনিই সবার নিকটে ( সূরা আল- হাদীদ: ৩)

০৫. শিয়াদের বিশ্বাস তাদের ইমামগন গায়েবের খবর রাখেন, অথচ মহান আল্লাহ ছাড়া কেউই গায়ের জানেনা।
ক. আর আবূ আবদিল্লাহ আ. (জাফর সাদিক) থেকে বর্ণিত, আমীরুল মুমিনীন আ. বেশি বেশি বলতেন: জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে বণ্টনকারী ... আমাকে এমন কতগুলো বৈশিষ্ট্য দেয়া হয়েছে, যা আমার পূর্বে আর কাউকে দেয়া হয়নি; আমি জানি মৃত্যু, বালা-মুসিবত, বংশ এবং বক্তৃতা-বিবৃতির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সম্পর্কে। সুতরাং আমার পূর্বেকার কোন বিষয় আমার জানা থেকে বাদ পড়েনি এবং আমার নিকট থেকে যা অদৃশ্য, তাও আমার কাছ থেকে অজানা থাকে না। (উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ১১৭)
খ.  কুলাইনী তার গ্রন্থের কোন এক অধ্যায়ে উল্লেখ করেন: ইমামগণ যা হয়েছে এবং যা হবে, তার জ্ঞান রাখেন; আর তাদের নিকট কোন কিছুই গোপন নেই। আবূ আবদিল্লাহ আ. (জাফর সাদিক) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি অবশ্যই আসমান ও যমিনে যা কিছু আছে, তা জানি এবং আমি আরও জানি জান্নাত ও জাহান্নামে যা কিছু আছে আর যা হয়েছে এবং যা হবে, তাও আমি জানি। (উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ১৬০)
গ. কুলাইনী তার গ্রন্থের কোন এক অধ্যায়ে আরও উল্লেখ করেন: ইমামগণ জানেন যে, তারা কখন মারা যাবেন; আর তারা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী মারা যাবেন। আবূ আবদিল্লাহ আ. বলেন: কোন ইমাম যদি তার উপর আপতিত বিপদাপদ ও তার পরিণতি সম্পর্কে না জানে; তবে সে ইমাম আল্লাহর সৃষ্টির ব্যাপারে দলিল (হিসেবে গ্রহণযোগ্য) নয়। (উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ২৭৮ 

ঘ. কুলাইনী উল্লেখ করেন, “নিশ্চয় একজন ইমাম যখন জানার ইচ্ছা করেন তখনই তিনি তা জেনে যান, আর ইমামগণ কখন মৃত্যু বরণ করবেন, তাও তারা জানেন, তারা নিজেদের ইচ্ছা ব্যতীত মৃত্যু বরণ করেন না।

ঙ. কুলাইনী উসুলুল কাফী’ (এটা শিয়াদের মহাগ্রন্থ) গ্রন্থের ইমামগণ ফেরেশতা, নবী ও রাসূলগণের নিকট প্রেরিত সকল জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত নামক অধ্যায়ে আরও উল্লেখ করেন: সামাআ থেকে বর্ণিত, সে আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণনা করেছেন, সে বলল: ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলার নিকট দুই ধরনের জ্ঞান রয়েছে: এক প্রকারের জ্ঞান সম্পর্কে তাঁর ফেরেশতা, নবী ও রাসূলগণ অবহিত; সুতরাং যে বিষয়ে তাঁর ফেরেশতা, নবী ও রাসূলগণ অবহিত, তা আমরা জানি। আরেক প্রকার জ্ঞান হল যা একচেটিয়া তাঁর (আল্লাহর) নিজের জন্য; সুতরাং সেখান থেকে কোন বিষয়ে যখন আল্লাহর বোধোদয় হয়, তখন তিনি তা আমাদেরকে জানিয়ে দেন এবং আমাদের পূর্বে যেসব ইমাম ছিলেন, তাদের নিকট তা পেশ করেন।
মন্তব্যঃ আল্লাহ তাআলা বলেন:
 قُل لَّآ أَقُولُ لَكُمۡ عِندِى خَزَآٮِٕنُ ٱللَّهِ وَلَآ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ وَلَآ أَقُولُ لَكُمۡ إِنِّى مَلَكٌۖ إِنۡ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَىٰٓ إِلَىَّۚ قُلۡ هَلۡ يَسۡتَوِى ٱلۡأَعۡمَىٰ وَٱلۡبَصِيرُۚ أَفَلَا تَتَفَكَّرُونَ (٥٠) 
অর্থ: বল, "আমি তোমাদের বলি নাই যে, আমার নিকট আল্লাহ্‌র ধনভান্ডার রয়েছেআমি অদৃশ্য সম্বন্ধে জানি না আমি তোমাদের এ কথা বলি না যে, আমি একজন ফেরেশতাআমার নিকট যে প্রত্যাদেশ অবতীর্ণ হয়েছে, আমি শুধু তার অনুসরণ করিবল, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি এক হতে পারে? তোমরা কি বিবেচনা করবে না?  [আনাম ৬:৫০]
এ আয়াতে ও আল্লাহ তাআলা তার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পরিস্কার ভাবে ঘোষনা দিতে বললেন যে, আমি অদৃশ্য সম্বন্ধে জানি না
আল্লাহ তাআলা বলেন:
 يَسۡـَٔلُكَ ٱلنَّاسُ عَنِ ٱلسَّاعَةِۖ قُلۡ إِنَّمَا عِلۡمُهَا عِندَ ٱللَّهِۚ وَمَا يُدۡرِيكَ لَعَلَّ ٱلسَّاعَةَ تَكُونُ قَرِيبًا (٦٣) 
অর্থ: লোকে তোমাকে [ কেয়ামতের ] সময় সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে : বল, " ইহার জ্ঞান কেবল আল্লাহ্‌রই আছে "এবং তুমি তা কি ভাবে বুঝবে ? সম্ভবত : [কেয়ামতের ] সময় নিকটবর্তী[আহজাব ৩৩:৬৩]
উক্ত আয়াতে আল্লাহ্‌র ঘোষনা “কিয়ামতের সময় সম্বন্ধে জ্ঞান কেবল আল্লাহ্‌র”যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অদৃশ্যের সম্বন্ধে জ্ঞান নাই আল্লাহ্‌র প্রশ্ন "এবং তুমি তা কি ভাবে বুঝবে
আল্লাহ তাআলা বলেন:
 قُل لَّا يَعۡلَمُ مَن فِى ٱلسَّمَـٰوَٲتِ وَٱلۡأَرۡضِ ٱلۡغَيۡبَ إِلَّا ٱللَّهُۚ وَمَا يَشۡعُرُونَ أَيَّانَ يُبۡعَثُونَ (٦٥)
অর্থ: তাদেরকে বল, আল্লাহ ছাড়া পৃথিবীতে ও আকাশে কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখে না৷ এবং তারা জানেনা কবে তাদেরকে উঠিয়ে নেয়া হবে[নামল  ২৭:৬৫]
 আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّ ٱللَّهَ يَعۡلَمُ غَيۡبَ ٱلسَّمَـٰوَٲتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ وَٱللَّهُ بَصِيرُۢ بِمَا تَعۡمَلُونَ (١٨)
অর্থ:  নিশ্চয় আল্লাহ্‌ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সমস্ত গুপ্ত বিষয় জানেনএবং তোমরা যা কর আল্লাহ্‌ তা অবশ্য দেখেন"  [হুজুরাত ৪৯: ১৮]
কিন্তু শিয়াগণ তাদের ইমামদেরকে অদৃশ্যের জ্ঞানের ব্যাপারে আল্লাহর সাথে শরিক করে। লক্ষ্য করুন, তারা তাদের ইমামদেরকে তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী ফেরেশতা, নবী ও রাসূলগণের চেয়ে বেশি জ্ঞানী মনে করে। আর জ্ঞানের ক্ষেত্রে তারা তাদেরকে আল্লাহ তাআলার অংশীদার মনে করে। এই সবগুলোই মিথ্যা, বানোয়াট ও কুফরী।
০৬. শিয়াদের বিশ্বাস তাদের ইমামগন হালাল ও হারাম করার ক্ষমতা রাখেন।
উসুলুল কাফীগ্রন্থে উল্লেখ আছে: “তারা (ইমামগণ) যা ইচ্ছা করে, তা হালাল করতে পারে; আবার যা ইচ্ছা করে, তা হারামও করতে পারে। আর তারা কখনও কিছুর ইচ্ছা করেন না, যতক্ষণ না মহান আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা করেন( উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ২৭৮)
মন্তব্যঃ অথচ আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَآ أَحَلَّ ٱللَّهُ لَكَ  [سورة التحريم: 1]
হে নবী! আল্লাহ যা তোমার জন্য হালাল করেছেন, তা তুমি কেন হারাম করলে  (সূরা তাহরীম: )
সুতরাং আল্লাহ যখন তাঁর রাসূলকে হালাল জিনিসকে হারাম করার কারণে সতর্ক করে দিয়েছেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত অন্যের দ্বারা তা কি করে সম্ভব হতে পারে।

০৭. শিয়াদের বিশ্বাস ইমামগনের গর্ভ ও জম্ম হয় অদ্ভুদ প্রক্রিয়ায়।
আল্লামা মাজলিসী “হাক্কুল এয়াকিন” গ্রন্থে লিখেন একাদশতম ইমাম হাসান আসকারী থেকে রেওয়াত করেছেন যে, আমাদের ইমামগনের গর্ভ জনণির পেটে অর্থাত জরায়ুতে স্থির হয়না। বরং পার্শে থাকে আমরা জরায়ু থেকে বাইরে আসি না। বরং জননীর উরু থেকে জম্ম গ্রহন করি। কেননা আমরা আল্লাহর নুর। তাই আমাদের নোংরামি আবর্জনা থেকে দূরে রাখা হয়। (আল্লামা মাজলিসী “হাক্কুল এয়াকিন” পৃষ্ঠা ১২৬ ইরানি মুদ্রন; ইসলামি আকিতা ও ভ্রানাত মতবাদ পৃষ্ঠা -২৫৩)।

০৮. শিয়াদের বিশ্বাস নবী মুহাম্মাদ ব্যতীত সকল নবীর চেয়ে তাদের ইমামগন উত্তম
আল-মাজলেসীমিরআতুল উকুলগ্রন্থে উল্লেখ করেন, “ইমামগণ আমাদের নবী মুহাম্মাদ ব্যতীত সকল নবীর চেয়ে উত্তম ও অধিক সম্মানের অধিকারী।


৯। বর্তমান কুরআন সম্পর্কে  শিয়াদের বিশ্বাস

ক. বর্তমান কুরআন শরীফ অসম্পূর্ণ।
( উসুল কাফী, মুহম্মদ ইবনে ইয়াকুব আল কুলাইনী, ১ম খন্ড, ২২৮ পৃষ্ঠা)

. “শিয়াদের অধিকাংশ মুহাদ্দিছ বিশ্বাস করে যে, কুরআন শরীফ-এ অনেক পরিবর্তন করা হয়েছে।
 (উসূলুল কাফী, মুহম্মদ ইবনে ইয়াকুব আল কুলাইনী, ১ম খন্ড, ২৮৪ পৃষ্ঠা)

. “আউসিয়া তথা ওসীয়তকৃত ব্যক্তি বর্গ ব্যতীত কেউ দাবী করতে পারবে না যে, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ তার নিকট রয়েছে।
(উসূলুল কাফী, মুহম্মদ ইবনে ইয়াকুব আল কুলাইনী,২য় খন্ড, ৬৩৪ পৃষ্ঠা)

ঘ.হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি কুরআন শরীফ সংরক্ষনে বাধা দিয়েছিলেন।
 (কাশফুল আসরার, ১১১ পৃষ্ঠা)

ঙ. প্রকৃত কুরআন শরীফ হযরত ইমাম মাহাদী আলাইহিস সালাম উনার নিকট আছে।
 (উসুল কাফী, মুহম্মদ ইবনে ইয়াকুব আল কুলাইনী, ২য় খন্ড, ৬৩২ পৃষ্ঠা

. “যে ব্যক্তি দাবী করে যে মহান আল্লাহ পাক তিনি পূর্ণ কুরআন শরীফ যেভাবে নাযিল করেছেন, অনুরূপ সে তা একত্র করেছেন, তাহলে সে মিথ্যাবাদী। প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহ পাক তিনি যেভাবে কুরআন শরীফ নাযিল করেছেন, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম এবং উনার পরবর্তী ইমামগণ ছাড়া কেউই তা হুবহু একত্র ও সংরক্ষণ করতে সক্ষম হননি।
 (উসূলুল কাফী, মুহম্মদ ইবনে ইয়াকুব আল কুলাইনী, ১ম খন্ড, ২৮৫ পৃষ্ঠা)

. “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম যে কুরআন শরীফ নিয়ে আসেন তার আয়াত শরীফ সংখ্যা সতের হাজার।
 (মিরআতুল উকুল, শায়খ আল মাজলেসী)

. ইমাম ব্যতীত অন্য কেউই কুরআন শরীফ-এর পুনাঙ্গ জ্ঞান অর্জন করে পারবে না
 (উসূল কাফী, মুহম্মদ ইবনে ইয়াকুব আল কুলানী,১ম খন্ড, ২২৮ পৃষ্ঠা )
. প্রকৃত কুরআন শরীফ এ ১৭ হাজার আয়াত শরীফ আছে।
 (আল সাফী, ২য় খন্ড, ৬১৬ পৃষ্ঠা)

. কুরআন শরীফ-এ ফায়িশা দ্বারা হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম, মুনকির দ্বারা হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম এবং বগ্বী দ্বারা হযরত উছমান আলাইহিস সালাম উনাদেরকে বুঝানো হয়েছে
(কুরআন মজীদ-এর অনুবাদ, মকবুল হুসাইন দেহলভী, ৫৫১ পৃষ্ঠা)
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ইসলাম শিক্ষা)




ইসলামের দৃষ্টিতে দলাদলি-০৬
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন
শিয়া ফির্কার আকিদা-০২

০৯রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পরিবার সম্পর্কে তাদের বিশ্বাস
ক.. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপমান করাঃ
মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার বাংলা অনুবাদ হল:
নুমানী ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যখন ইমাম মাহদী আত্মপ্রকাশ করবে, তখন তাকে ফেরেশতাদের দ্বারা পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হবে এবং তার নিকট সর্বপ্রথম যিনি বায়আত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করবেন, তিনি হলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম; অতঃপর আলী আ.শাইখ তুসী ও নুমানী ইমাম রেজা বর্ণনা করেন, ইমাম মাহদি আত্মপ্রকাশ অন্যতম নিদর্শন হল তিনি অচিরেই বিবস্ত্র অবস্থায় সূর্যের গোলকেন সামনে আত্মপ্রকাশ করবেন।
(আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন (ফারসি ভাষায়), পৃ. ৩৪৭, পাকিস্তান আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত সংগঠনের সভাপতি শাইখ মুহাম্মদ আবদুস সাত্তার আততুনসাবীর লেখা শিয়া আকিদার অসারতা’) 
মন্তব্যঃ সর্ব শেষ আর সর্বশ্রেষ্ট রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম বায়আত নিবেন ইমাম মাহদি নিকট। আর যিনি কিনা বিবস্ত্র অবস্থায় আত্মপ্রকাশ করবেন। কত বড় মিথ্যা দাবি।

খ.. মুমিন জননী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদেরকে অপমান করা
আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী হক্কুল ইয়াকীননামক ফারসি ভাষায় গ্রন্থে বলেন, যার বাংলা অনুবাদ হল:
দায়মুক্তির ব্যাপারে আমাদের (শিয়াদের) আকিদা ও বিশ্বাস হল, আমরা আবূ বকর, ওমর, ওসমান ও মুয়াবিয়ার মত চার মূর্তি থেকে মুক্তআমরা আরও মুক্ত আয়েশা, হাফসা, হিন্দা ও উম্মুল হেকামের মত চার নারী এবং তাদের অনুসারী ও তাদের বিভিন্ন দল-গোষ্ঠী থেকে। আর তারা হল পৃথিবীর বুকে আল্লাহর নিকৃষ্ট সৃষ্টি। আর তাদের শত্রুদের থেকে মুক্ত হওয়ার পরেই শুধু আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও ইমামদের প্রতি ঈমান পরিপূর্ণতা লাভ করবে। ( আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, “হক্কুল ইয়াকীন” (حق اليقين), পৃ. ৫১৯, শিয়া আকিদার অসারতা’)। 

মন্তব্যঃ অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, ﴿ ٱلنَّبِيُّ أَوۡلَىٰ بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ مِنۡ أَنفُسِهِمۡۖ وَأَزۡوَٰجُهُۥٓ أُمَّهَٰتُهُمۡ﴾ الآية ... [سورة الأحزاب: 6]
নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর এবং তার স্ত্রীগণ তাদের মাতা।” ((সূরা আহযাব :)
তিনি আরও বলেন:    
﴿ يَٰنِسَآءَ ٱلنَّبِيِّ لَسۡتُنَّ كَأَحَدٖ مِّنَ ٱلنِّسَآءِ  الآية ... [سورة الأحزاب: 32]
হে নবী-পত্নিগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও(সূরা আল-আহযাব ৩২)
তাঁদের (উম্মুহাতুল মুমেনীন) ব্যাপারে আয়াত নাযিল হয়েছে:
﴿إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذۡهِبَ عَنكُمُ ٱلرِّجۡسَ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِ وَيُطَهِّرَكُمۡ تَطۡهِيرٗا ٣٣﴾ [سورة الأحزاب: 33]
হে নবী-পরিবার! আল্লাহ তো শুধু চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।”— (সূরা আল-আহযাব: ৩৩)
আল-কুরআনুল কারীমের মধ্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণের গুণাগুণ বর্ণনা করেছেন; তিনি তাঁর নবীকে উদ্দেশ্য করে তাঁর এসব স্ত্রীদের শানে বলেন:
﴿ لَّا يَحِلُّ لَكَ ٱلنِّسَآءُ مِنۢ بَعۡدُ وَلَآ أَن تَبَدَّلَ بِهِنَّ مِنۡ أَزۡوَٰجٖ وَلَوۡ أَعۡجَبَكَ حُسۡنُهُنَّ إِلَّا مَا مَلَكَتۡ يَمِينُكَۗ وَكَانَ ٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ رَّقِيبٗا  [سورة الأحزاب: 52]
এর পর তোমার জন্য কোন নারী বৈধ নয় এবং তোমার স্ত্রীদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণও বৈধ নয়, যদিও তাদের সৌন্দর্য তোমাকে মুগ্ধ করে; তবে তোমার অধিকারভুক্ত দাসীদের ব্যাপারে এই বিধান প্রযোজ্য নয়। আল্লাহ সমস্ত কিছুর উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন ।”(সূরা আহযাব: ৫২)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয়া আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহার ব্যাপারে তাদের চরম নির্লজ্জতা ও নোংরামি।
ইবনু বাবুইয়া এলালুশ শারায়েনামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন, ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. বলেন: যখন ইমাম মাহদী আত্মপ্রকাশ করবে, তখন তিনি অতিসত্বর আয়েশাকে জীবিত করবেন এবং ফাতেমার প্রতিশোধ হিসেবে তার উপর শাস্তির বিধান (হদ) কায়েম করবেন(আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন পৃ. ৩৭৮; হায়াতুল কুলুব, ২য় খণ্ড, পৃ. ৮৫৪, শিয়া আকিদার অসারতা’)। 

আহমদ ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী আল-ইহতিজাজনামক গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ২৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন:
আলী আ. উম্মুল মুমেনীন আয়েশাকে উদ্দেশ্য করে বলেন: আল্লাহর শপথ! তিনি আমাকে তাকে তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছেন ...রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী আ.-কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন: হে আলী! আমার স্ত্রীদের বিষয়টি আমার অবর্তমানে তোমার হাতে দিয়ে গেলাম।

মন্তব্যঃ আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহার পবিত্রতা ও পরিপূর্ণতার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা সূরা নূরের ১১ থেকে ২০, এই ১০ আয়াত নাযিল করেছেন। আল্লাহ তাআলা আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহার প্রতি অপবাদ কবিদের উদ্দেশ্যে বলেন:
 إِنَّ ٱلَّذِينَ جَآءُو بِٱلۡإِفۡكِ عُصۡبَةٌ۬ مِّنكُمۡۚ لَا تَحۡسَبُوهُ شَرًّ۬ا لَّكُمۖ بَلۡ هُوَ خَيۡرٌ۬ لَّكُمۡۚ لِكُلِّ ٱمۡرِىٍٕ۬ مِّنۡہُم مَّا ٱكۡتَسَبَ مِنَ ٱلۡإِثۡمِۚ وَٱلَّذِى تَوَلَّىٰ كِبۡرَهُ ۥ مِنۡہُمۡ لَهُ ۥ عَذَابٌ عَظِيمٌ۬ (١١)
অর্থ: যারা এ মিথ্যা অপবাদ তৈরী করে এনেছে তারা তোমাদেরই ভিতরের একটি অংশ এ ঘটনাকে নিজেদের পক্ষে খারাপ মনে করো না বরং এও তোমাদের জন্য ভালই যে এর মধ্যে যতটা অংশ নিয়েছে সে ততটাই গোনাহ কামাই করেছে আর যে ব্যক্তি এর দায়দায়িত্বের বড় অংশ নিজের মাথায় নিয়েছে তার জন্য তো রয়েছে মহাশাস্তি (সূরা আন-নূর: ১১)
আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট বলে দিয়েছে মিথ্যা অপবাদ যারা দেয় তারা কখনো মুমিন নয় বরং সে ব্যক্তি মুনাফিক গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত; আল্লাহ তাআলা সূরার শেষ অংশে বলেন:
﴿يَعِظُكُمُ ٱللَّهُ أَن تَعُودُواْ لِمِثۡلِهِۦٓ أَبَدًا إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ١٧﴾ [سورة النور: 17]
আল্লাহ তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন, ‘তোমরা যদি মুমিন হও, তবে কখনও অনুরূপ আচরণের পূনরাবৃত্তি করো না।” (সূরা আন-নূর: ১৭)
তাহলো বলুন কেমন দুঃসাহস দেখান সাহবিদের দুশমন শিয়াগণ আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের প্রতি তাদের কোন সম্মানবোধ নেইতাইতো তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় স্ত্রী আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে অপবাদ দেয় অথচ যিনি আল্লাহ তাআলা কর্তৃক সনদ প্রাপ্ত।

ঘ. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যাদের অপমান করা
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সকল অনুসারী কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যাদের সংখ্যা চারজন: সাইয়্যেদা যয়নব, সাইয়্যেদা রুকাইয়া, সাইয়্যেদা উম্মে কুলসুম ও সাইয়্যেদা ফাতেমা যাহরা রাদিয়াল্লাহু আনহুন্না। আর অনুরূপ মত পোষণ করে সাধারণ শিয়াগণও। তবে ভারত ও পাকিস্তানের শিয়াগণ তিন কন্যাকে অস্বীকার করে এবং তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য শুধু এক কন্যাকে সাব্যস্ত করে; আর তিনি হলেন সাইয়্যেদা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা। আর বাকি তিনজনকে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যা নয় বলে মতামত প্রকাশ করেছে এবং এর দ্বারা তারা আল্লাহ তাআলার বিধানের স্পষ্ট বিরোধিতা করেছে; আল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿ ٱدۡعُوهُمۡ لِأٓبَآئِهِمۡ هُوَ أَقۡسَطُ عِندَ ٱللَّهِ﴾ [سورة الأحزاب: 5]
তোমরা তাদেরকে তাদের পিতার পরিচয়ে ডাক; আল্লাহর দৃষ্টিতে এটাই অধিক ন্যায়সংগত।” (সূরা আহযাব: )
তাদের এই মত প্রকাশের একমাত্র কারণ হল ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে শত্রুতা করা, যাতে তাঁর উচ্চ মর্যাদা স্বীকৃত না হয়; কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট প্রথমে সাইয়্যেদা রুকাইয়াকে বিয়ে দেনঅতঃপর যখন তিনি (রুকাইয়া) ইন্তিকাল করেন, তখন তাঁর নিকট নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  উম্মে কুলসুমকে বিয়ে দেন আর এ জন্য তাকে যূন্নুরাইননামে ডাকা হত।
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّ  [سورة الأحزاب: 59]
হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বল, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়।”— (সূরা আল-আহযাব: ৫৯)
ঙ. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যা নারীদের নেত্রী ফাতিমা যোহরা রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে অসম্মান করার আকিদা।
আর আল-কুলাইনী ফুরুউল কাফী নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন:
যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতেমা আ.-কে আলীর নিকট বিয়ে দেন, তখন তিনি তার নিকট হাজির হয়ে দেখতে পান যে, সে কাঁদছে; অতঃপর তিনি তাকে বললেন, তুমি কি জন্য কাঁদছ? আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, আমার পরিবারে তার (আলীর) চেয়ে উত্তম কেউ যদি থাকত, তবে আমি তোমাকে তার নিকট বিয়ে দিতাম। আর আমি তোমাকে তার নিকট বিয়ে দেইনি; বরং আল্লাহই তোমাকে তার নিকট বিয়ে দিয়েছেন। (ফুরুউল কাফী (فروع الكافي), ২য় খণ্ড, বিবাহ অধ্যায়, পৃ. ১৫৭)

আল-কুলাইনী আরও উল্লেখ করেন:
আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ফাতেমা আ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল: আপনি আমাকে তুচ্ছ মোহরের বিনিময়ে বিয়ে দিয়েছেন? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন: আমি তো তোমাকে বিয়ে দেইনি; বরং আল্লাহই তোমাকে আকাশ থেকে বিয়ে দিয়েছেন। (ফুরুউল কাফী (فروع الكافي), ২য় খণ্ড, বিবাহ অধ্যায়, পৃ. ১৫৭)

আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী তার জালাউল উয়ুন (جلاء العيون) নামক গ্রন্থে ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার বাংলা অনুবাদ হল:
ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. ‘কাশফুল গুম্মাহ’ (كشف الغمة) গ্রন্থে বলেন যে, কোন একদিন ফাতেমা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অভিযোগ করল: আলীর নিকট অর্থ-সম্পদ আসলেই সে তা ফকির ও মিসকিনদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়? তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তুমি কি চাও যে, আমার ভাই ও আমার চাচার ছেলে অসন্তুষ্ট হউক? তুমি জেনে রাখ যে, তার অসন্তুষ্টি মানে আমার অসন্তুষ্টি; আর আমার অসন্তুষ্টি মানে আল্লাহর অসন্তুষ্টি; এই কথা শুনে ফাতেমা বলল: আমি আল্লাহর কাছে আল্লাহর ক্রোধ ও তাঁর রাসূলের ক্রোধ থেকে আশ্রয় চাই। (আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী, জালাউল উয়ুন (جلاء العيون), (ইরানি সংস্করণ), পৃ. ৬১)
আহমদ ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী আল-ইহতিজাজ (الاحتجاج) নামক গ্রন্থে আরও উল্লেখ করেন:
সালমান (ফারসি) বলেন: যখন রাত হয়, তখন আলী ফাতেমাকে গাধার উপর আরোহণ করান এবং তার দুই ছেলে হাসান ও হোসাইনের হাত ধরেন; অতঃপর বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুহাজির ও আনসারগণকে এক এক করে ডাকেন; তারা প্রত্যেকে তার বাসায় আসল; আর তিনি (তাদের নিকট) তার অধিকারের কথা বললেন এবং তাকে সাহায্য করার জন্য আহ্বান করলেন ..., অতঃপর সকাল হয়ে গেল, কিন্তু চারজন ব্যতীত আর কেউ তার আবদার রক্ষা করেনি; আমি সালমানকে জিজ্ঞাসা করলাম: সেই চারজন কে? তিনি বললেন: আমি, আবূ যর, মিকদাদ ও যোবায়ের ইবন আওয়াম; তিনি তাদের নিকট দ্বিতীয় রাত্রে আসলেন ..., অতঃপর তৃতীয় রাত্রে আসলেন, কিন্তু আমরা ব্যতীত কেউই তার আবদার রক্ষা করেনি। (আহমদ ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী, আল-ইহতিজাজ (الاحتجاج), পৃ. ১৫৭)

মন্তব্যঃ প্রথম দুটি বর্ণনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে, সাইয়্যেদা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা সাইয়্যেদুনা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে তাঁর দরিদ্রতা ও মোহরের স্বল্পতার কারণে বিয়ে বসতে রাজি ছিলেন না। অনুরূপভাবে তৃতীয় বর্ণনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে, তিনি (ফাতেমা রা.) সাইয়্যেদুনা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক ফকির ও মিসকিনদেরকে অর্থ-সম্পদ দান করাকে অপছন্দ করতেন (নাউযুবিল্লাহ), এমনকি তিনি তাঁর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অভিযোগও করতেন। চতুর্থ বর্ণনাটি আরও জঘন্য। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে নিয়ে প্রত্যেক মুসলিমের দরজায় দরজায় ধরনা দেয়া কি তাদের জন্য অসম্মান ও অপমানজনক নয়? আর এটা কি করে সম্ভব যে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুহাজির ও আনসারগণ তাদের ডাকে সাড়া দেয়নি। নিঃসন্দেহে এই বর্ণনাটি শিয়াদের দ্বারা তৈরি করা মিথ্যা ও বানোয়াট কল্প কাহিনী
চ. হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু কে অপমান করা ।
আল-কুলাইনী তার উসুলুল কাফী (أصول الكافي) নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন:
জিবরাইল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অবতরণ করেন এবং তাঁকে বলেন: হে মুহাম্মদ! আল্লাহ আপনাকে এমন এক সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছেন, যে ফাতেমার ঘরে জন্ম গ্রহণ করবে, তাকে আপনার পরে আপনার উম্মত হত্যা করবে; তখন তিনি বললেন: হে জিবরাইল! আমার প্রতিপালকের প্রতি সালাম, আমার এমন সন্তানের প্রয়োজন নেই, যে ফাতেমার ঘরে জন্ম গ্রহণ করবে এবং আমার পরে আমার উম্মত তাকে হত্যা করবে; অতঃপর সে (জিবরাইল) উর্ধ্বে গমন করল এবং আবার অবতরণ করল; অতঃপর পূর্বের মত করে কথা বলল; আর তিনিও পূর্বের মতই বললেন: হে জিবরাইল! আমার প্রতিপালকের প্রতি সালাম, আমার এমন সন্তানের প্রয়োজন নেই, যাকে আমার পরে আমার উম্মত হত্যা করবে; অতঃপর জিবরাইল আকাশে গমন করল এবং আবার অবতরণ করল; অতঃপর বলল: হে মুহাম্মদ! আপনার রব আপনাকে সালাম বলেছেন এবং সুসংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি তার বংশধরের মধ্যে ইমামত, বেলায়াত ও অসী তথা নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব ও অসী প্রদান করবেন। অতঃপর তিনি বললেন: আমি তাতে রাজি। অতঃপর ফাতেমার নিকট সংবাদ পাঠানো হল যে, আল্লাহ আমাকে তোমার এক সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছেন, যাকে আমার পরে আমার উম্মত হত্যা করবে; তিনি (ফাতেমা) তাঁর নিকট সংবাদ পাঠালেন যে, আমার এমন সন্তানের প্রয়োজন নেই, যাকে তোমার পরে তোমার উম্মত হত্যা করবে। তার নিকট আবার সংবাদ পাঠানো হল যে, আল্লাহ তার বংশধরের মধ্যে নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব ও অসী প্রদান করবেন। অতঃপর তিনি তাঁর নিকট সংবাদ পাঠালেন যে, আমি তাতে রাজি। অতঃপর সে তাকে কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্ট সহ্য করে তাকে প্রসব করেছে ...; কিন্তু হোসাইন ফাতেমা আ. এবং অন্য কোন মহিলা থেকে দুধ পান করেনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার নিকট নিয়ে আসা হত, অতঃপর তিনি তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি তার মুখের মধ্যে রাখতেন; অতঃপর সে তার থেকে যা চুষে নিত, তা তার জন্য দুই-তিন দিন পর্যন্ত যথেষ্ট হয়ে যেত। (আল-কুলাইনী, উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ২৯৪,শিয়া আকিদার অসারতা’)। 

মন্তব্যঃ নিঃসন্দেহে এই বর্ণনাটি শিয়াদের দ্বারা তৈরি করা মিথ্যা ও বানোয়াট কল্প কাহিনী। তাই তো সবই কুরআন সুন্নাহ ও বিবেক বিরোধী কথা।এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে ছোট করা হইয়াছে  কারন আল্লাহ তাআলা কর্তৃক জিবরাইল আ.-এর ভাষায় তার সুসংবাদ দেয়া সত্ত্বেও তারা হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর ব্যপারে বললেন, আমার জন্য তার কোন প্রয়োজন নেইআর ইহা নিশ্চয় হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর অপমান জনক।
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ইসলাম শিক্ষা)



ইসলামের দৃষ্টিতে দলাদলি-০৭
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন
শিয়া ফির্কার আকিদা-০৩

১০সাহাবি রাদিয়াল্লাহু আনহুমদের প্রতি সম্পর্কে শিয়াদের আকিদা
ক. খোলাফায়ে রাশেদীন, মুহাজিরীন ও আনসার রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে অপমান করাআল-কুলাইনী ফুরুউল কাফী (فروع الكافي) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন:
আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণিত: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের পর তিনজন ব্যতীত বাকি সকল মানুষ ধর্মত্যাগীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে; তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম: সে তিন ব্যক্তি কে? জওয়াবে তিনি বললেন: মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ, আবূ যর আল-গিফারী এবং সালমান ফারসী (আল-কুলাইনী, ফুরুউল কাফী (فروع الكافي), রওযা অধ্যায়, পৃ. ১১৫)

খ. আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল:
নিশ্চয় আবূ বকর এবং ওমর উভয় হলেন: ফেরাউন ও হামান।( আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন (حق اليقين), পৃ. ৩৬৭)

গ. আল-মাজলিসী ফারসি ভাষায় আরও উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল:
‘তাকরীবুল মাআরেফ’ (تقريب المعارف) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আলী ইবন হোসাইনকে উদ্দেশ্য করে তার মাওলা (মুক্ত দাস) বলল: আপনার উপর আমার খেদমতের হক রয়েছে; সুতরাং আপনি আমাকে আবূ বকর ও ওমর সম্পর্কে সংবাদ দিন? তখন আলী ইবন হোসাইন বলল: তারা উভয়ে কাফির ছিল। আর যে ব্যক্তি তাদেরকে ভালবাসবে, সেও কাফির।( আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন (حق اليقين), পৃ. ৫২২)
ঘ. আল-মাজলিসী ফারসি ভাষায় আরও উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল:
আবূ হামযা আত-সামালী বর্ণনা করেন, তিনি ইমাম যাইনুল আবেদীনকে আবূ বকর ও ওমরের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন? তখন তিনি বললেন: তারা উভয়ে কাফির ছিল। আর আর যে ব্যক্তি তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, সেও কাফির। আর এই অধ্যায়ে বিভিন্ন গ্রন্থে বহু হাদিস রয়েছে; তার অধিকাংশই বিহারুল আনওয়ার নামক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে।( আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন (حق اليقين), পৃ. ৫৩৩)

ঙ. আল-মাজলিসী ফারসি ভাষায় আরও উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল:
আর তাকে মুফাদ্দাল জিজ্ঞাসা করল, এই আয়াতে কারীমার মধ্যে ফিরআউন ও হামান বলতে কাদের বুঝানো হয়েছে? তখন তিনি জবাব দিলেন, তাদের দ্বারা উদ্দেশ্য হল: আবূ বকর ও ওমর।( আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন (حق اليقين), পৃ. ৩৯৩) (নাউযুবিল্লাহ)

চ. আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, বাংলায় যার অর্থ হল:
সালমান (ফারসী) বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের পর চারজন ব্যতীত বাকি সকল মানুষ মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী হয়ে গেছে। আর রাসূলের পরে মানুষ হয়ে গেল হারুন ও তার অনুসারীদের মত এবং গো বৎস ও তার পূজারীদের পর্যায়ভুক্ত। সুতরাং আলী হল হারুনের পদমর্যাদায়, আর আবূ বকর হল গরুর বাছুরের মর্যদার এবং ওমর হল সামেরীর পদমর্যাদার।

ছ. আর মারেফাতু আখবারির রিজাল (معرفة أخبار الرجال), (রিজালু কাশি)-এর গ্রন্থকার কাশি উল্লেখ করেন:
আবূ জাফর আ. বলেন: তিন ব্যক্তি ব্যতীত বাকি সকল মানুষ মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী হয়ে গেছে। আর সে তিন ব্যক্তি হলেন: সালমান, আবূ যর ও মিকদাদ; তিনি বলেন, আমি বললাম: অতঃপর আম্মার? তখন তিনি বলেন: সে অহংকার প্রদর্শন করেছিল, অতঃপর সে ফিরে এসেছে। অতঃপর তিনি বলেন: আমি যদি এমন কোন একজনকে চাই, যার মধ্যে কোন সন্দেহ-সংশয় অনুপ্রবেশ করেনি, তিনি হলেন মিকদাদ; আর সালমানের ব্যাপারটি হল, তার হৃদয়ে বাধাদানকারী বাধা প্রদান করেছে ...আর আবূ যরের বিষয়টি হল, তাকে আমীরুল মুমিনীন চুপ থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন; আর আল্লাহর ব্যাপারে তাকে কোন নিন্দুকের নিন্দা স্পর্শ করতে পারে না; ফলে তিনি কথা বলতে অস্বীকার করেন। ( মুহাম্মদ ইবন ওমর আল-কাশী, মারেফাতু আখবারির রিজাল , পৃ.  (রিজালু কাশী)

মন্তব্যঃ আল-কুরআন তাদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে জান্নাত, ক্ষমা ও সন্তুষ্টির সনদ দিয়েছে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট; আর তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট।
সুতরাং আল্লাহ তাআলা তাদের ব্যাপারে তাঁর কুরআনে বলেন:
﴿وَأَعَدَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي تَحۡتَهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗا﴾ [التوبة: 100]
এবং তিনি তাদের জন্য জান্নাত প্রস্তুত করেছেন, যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত, যেথায় তারা চিরস্থায়ী হবে।”— (সূরা আত-তাওবা: ১০০)
তিনি আরও বলেন:
﴿أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ حَقّٗاۚ لَّهُمۡ دَرَجَٰتٌ عِندَ رَبِّهِمۡ ... [سورة الأنفال: 4]
তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদেরই জন্য রয়েছে মর্যাদা; ... ”— (সূরা আল-আনফাল: )
আর তাদের সম্পর্কে তিনি আরও বলেন:
﴿وَأَلۡزَمَهُمۡ كَلِمَةَ ٱلتَّقۡوَىٰ وَكَانُوٓاْ أَحَقَّ بِهَا وَأَهۡلَهَا﴾ [سورة الفتح: 26]
আর তাদেরকে তাকওয়ার বাক্যে সুদৃঢ় করলেন এবং তারাই ছিল এর অধিকতর যোগ্য ও উপযুক্ত”— (সূরা আল-ফাতহ: ২৬)
তাদের সম্পর্কে তিনি আরও বলেন:
﴿وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ حَبَّبَ إِلَيۡكُمُ ٱلۡإِيمَٰنَ وَزَيَّنَهُۥ فِي قُلُوبِكُمۡ وَكَرَّهَ إِلَيۡكُمُ ٱلۡكُفۡرَ وَٱلۡفُسُوقَ وَٱلۡعِصۡيَانَ﴾ [سورة الحجرات: 7]
কিন্তু আল্লাহ তোমাদের নিকট ঈমানকে প্রিয় করেছেন এবং তাকে তোমাদের হৃদয়গ্রাহী করেছেন; আর কুফরী, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে করেছেন তোমাদের নিকট অপ্রিয়।”— (সূরা আল-হুজুরাত: )
তিনি আরও বলেন:
﴿ وَكُلّٗا وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡحُسۡنَىٰ﴾ [سورة النساء: 95]
আল্লাহ সকলকেই কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।”— (সূরা আন-নিসা: ৯৫)
এগুলো ছাড়া আরও বহু আয়াতে সাহাবীদের মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ ছিলেন আল-কুরআন, নবুওয়াত ও সুন্নাতের বাস্তব সাক্ষী। সুতরাং সাহাবীদের উপর মিথ্যারোপ করার অর্থই হল ইসলাম ও মুসলিমের সাথে শত্রুতা করা। সাহাবীদের কুৎসা রটনা করা মানেই আল-কুরআন, নবুওয়াত ও সুন্নাতের কুৎসা রটনা করাউপরের দিকে থুথু নিক্ষেপ করার সমিল।
                             
জ. আব্বাস, তাঁর পুত্র আবদুল্লাহ ও আকিল ইবন আবি তালিব অপমান করা
আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল:
আল-কুলাইনী হাসান সনদে বর্ণনা করেন, তিনি ইমাম মুহাম্মদ বাকেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের পর বনু হাশিমের আত্মমর্যাদা, শান-শওকত ও সংখ্যাধিক্য কোথায় ছিল, যখন আলী আবূ বকর, ওমর ও সকল মুনাফিকের কাছে পরাজিত হলেন? তখন ইমাম মুহাম্মদ বাকের জওয়াব দিলেন, বনু হাশিমের মধ্যে কে-ই বা অবশিষ্ট ছিলেন? জাফর ও হামযা ছিলেন প্রথম সারির ও পরিপূর্ণ মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত, যারা মারা গেছেন; আর দুইজন, যারা ছিলেন বিশ্বাসে দুর্বল, হীন মানসিকতার এবং নও মুসলিম, তারা অবশিষ্ট আছে- আব্বাস ও আকিল।
(হায়াতুল কুলুব (حيات القلوب), ২য় খণ্ড, পৃ. ৮৪৬; আবার এই বর্ণনাটি ফুরুউল কাফী (فروع الكافي), ২য় খণ্ড, রওযা অধ্যায় বিদ্যমান আছে)

মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী আব্বাস থেকে ফারসি ভাষায় বর্ণনা করেন, যার অনুবাদ হল:
নিঃসন্দেহে আমাদের হাদিসসমূহ থেকে প্রমাণিত হয় যে, আব্বাস পরিপূর্ণ মুমিন ছিলেন না; আর আকিলও ঈমানের অপূর্ণতার দিক থেকে তার মতই ছিলেন ( হায়াতুল কুলুব (حيات القلوب), ২য় খণ্ড, পৃ. ৮৬৬)

আল-মাজলিসী ফারসি ভাষায় আরও বর্ণনা করেন, যার অনুবাদ হল:
ইমাম মুহাম্মদ বাকের ইমাম যাইনুল আবেদীন আ. থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণনা করেন যে, এই আয়াতটি আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস ও তার পিতা আব্বাসের শানে অবতীর্ণ হয়েছে; আয়াতটি হল:
﴿ وَمَن كَانَ فِي هَٰذِهِۦٓ أَعۡمَىٰ فَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ أَعۡمَىٰ وَأَضَلُّ سَبِيلٗا ٧٢  [سورة الإسراء: 72]
আর যে ব্যক্তি এখানে অন্ধ, সে আখিরাতেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রষ্ট।” (সূরা আল-ইসরা: ৭২)
(হায়াতুল কুলুব (حيات القلوب), ২য় খণ্ড, পৃ. ৮৬৫)

মন্তব্যঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু  এবং আকিল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বিশ্বাসে দুর্বল, হীন ও মানসিকতার বলে অপবাদ দেয়া হয়েছে। আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ছেলে উম্মতের (জাতির) পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে এই বলে যে, তারা নাকি উপরিউক্ত আয়াতে কারিমার হুকুমের আওতাধীন (নাউযুবিল্লাহ), অর্থাৎ তাদের শানে উপরিউক্ত আয়াতটি নাযিল হয়েছে; অথচ এই আয়াতটি নাযিল হয়েছে কাফিরদেরকে উপলক্ষ করে। আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে সকল প্রকার বক্রতা, ভ্রষ্টতা ও নাস্তিকতা থেকে আশ্রয় চাই।
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ইসলাম শিক্ষা)

গাদিরে খামের ঘটনা সম্পর্কে মিয়াদের আকিদা


ইসলামের দৃষ্টিতে দলাদলি-০৮
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন
শিয়া ফির্কার আকিদা-০৪

১১। মুতআ বিয়ে বা চুক্তি ভিত্তক সাময়িক বিয়ে সম্পর্কে মিয়াদের আকিদা
০০. মুতআ বিয়ে বা চুক্তি ভিত্তক সাময়িক বিয়ে জায়েয মনে করা।
ক.  শিয়াগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মিথ্যার সম্পর্ক জুড়ে দিয়েছে এইভাবে যে, তিনি বলেছেন: “যে ব্যক্তি একবার মুতআ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে হোসাইনের মর্যাদার সমান; আর যে ব্যক্তি দুইবার মুতআ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে হাসানের মর্যাদার সমান; আর যে ব্যক্তি তিনবার মুতআ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে আলী ইবন আবি তালিবের মর্যাদার সমান এবং যে ব্যক্তি চারবার মুতআ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে আমার মর্যাদার সমান। (মুহাম্মদ মোল্লা আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন পৃ. ৩৫৬, শিয়া আকিদার অসারতা’) 

খ. আল-কাশানী তার তাফসীরের মধ্যে আরও উল্লেখ করেন:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যে ব্যক্তি মুতআ বিয়ে (সাময়িক বিবাহ) না করে দুনিয়া থেকে বের হয়েছে (মৃত্যুবরণ করেছে), সে কিয়ামতের দিন নাক কাটা অবস্থায় হাজির হবে(মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন (تفسير منهج الصادقين), পৃ. ৩৫৬)।

গ. আস-সাদিক আ. থেকে বর্ণিত, মুতআ বিয়ে আমার এবং আমার বাপ-দাদার দীনের অন্তর্ভুক্ত সুতরাং যে ব্যক্তি তার উপর আমল করবে, সে আমাদের দীনের উপর আমল করবে এবং যে ব্যক্তি তা অস্বীকার করবে, সে আমাদের দীনকে অস্বীকার করবে; বরং সে আমাদের দীন ব্যতীত অন্য দীনের অনুসরণ করবে। মুতআ বিয়ের স্ত্রীর গর্ভের সন্তান স্থায়ী স্ত্রীর গর্ভের সন্তানের চেয়ে উত্তম। আর মুতআ বিয়ের বিধান অস্বীকারকারী কাফির, মুরতাদ। (মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন (تفسير منهج الصادقين), পৃ. ৩৫৬)

. ‘মুন্তাহাল আমাল’ (منتهى الأمال) নামক গ্রন্থের লেখক ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল:
আস-সাদিক আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যে ব্যক্তি মুতআ বিয়ের স্ত্রীকে ভোগ করে, অতঃপর গোসল করে, আল্লাহ তার শরীর থেকে ঝরে পড়া প্রতি ফোটা পানি থেকে সত্তর জন ফেরেশতা সৃষ্টি করেন, যাতে তারা কিয়ামত পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং কিয়ামত পর্যন্ত ঐ ব্যক্তিকে অভিশাপ দেয়, যে মুতআ বিয়ে থেকে দূরে থাকে। (মুন্তাহাল আমাল (منتهى الأمال), ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৪১)

ঙ. আমীরুল মুমিনীন আলী আ. বলেন: যে ব্যক্তি এই সুন্নাতটিকে (মুতআ বিয়েকে) কঠিন হিসেবে পেল এবং তা গ্রহণ করল না, সে ব্যক্তি আমার দলভূক্ত নয় এবং আমি তার দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত। ( আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী রিসালাতুল মুত’ (رسالة المتعة)-এর অনুবাদ উজালাতুন হাসানা’ (عجالة حسنة), পৃ. ১৫)

.“সাইয়্যেদুল আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি মুমিন নারীকে মুতআ বিয়ের মাধ্যমে ভোগ করে, সে যেন সত্তর বার কাবা যিয়ারত করে। (উজালাতুন হাসানা (عجالة حسنة), পৃ. ১৬)

. “রহমাতুল্লিল আলামীন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি একবার মুতআ বিয়ে করল, সে তার শরীরের এক তৃতীয়াংশ জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করল। আর যে ব্যক্তি দুইবার মুতআ বিয়ে করল, সে তার শরীরের দুই তৃতীয়াংশ জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করল। আর যে ব্যক্তি তিনবার মুতআ বিয়ে করল, সে তার গোটা শরীরকে জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুন থেকে নিরাপদ করল। (উজালাতুন হাসানা (عجالة حسنة), পৃ. ১৬)

. “সাইয়্যেদুল বাশার শাফেউল মাহশার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: হে আলী! মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীগণের উচিত দুনিয়া থেকে ইন্তিকাল করে আখেরাতে যাওয়ার পূর্বে একবার হলেও মুতআ বিয়ের প্রতি উৎসাহিত হওয়া

ঝ. আল্লাহ তাআলা স্বয়ং নিজেই শপথ করে বলেন যে, তিনি এমন পুরুষ অথবা নারীকে শাস্তি দেবেন না, যে মুতআ বিয়ে করেছে; আর যে ব্যক্তি এই কল্যাণকর (মুতআ বিয়ের) বিষয়টি নিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা-সাধনা করে এবং সেই ব্যাপারে পাথেয় প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাআলা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। (উজালাতুন হাসানা (عجالة حسنة ), পৃ. ১৬)
শিয়াদের মতে মুতআ বিয়ের রুকন ও তার বিধানসমূহ
মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী তার তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন নামক তাফসীরের মধ্যে ফারসি ভাষায় বর্ণনা করেন, যার অর্থ হল:“জেনে রাখা উচিত, মুতআ বিয়ে সংঘটিত করার রুকন পাঁচটি: স্বামী, স্ত্রী, মোহর, সময় নির্ধারণ এবং ইজাব (প্রস্তাব) ও কবুল (গ্রহণ) (মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন (تفسير منهج الصادقين), পৃ. ৩৫৭)

মুতআ বিয়ের মধ্যে কোন সাক্ষী ও ঘোষণার দরকার নেই আত-তুসী আত-তাহযীব (التهذيب) নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন:“মুতআ বিয়ের মধ্যে কোন সাক্ষী রাখার ও ঘোষণা দেয়ার প্রয়োজন নেই। ( আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আত-তাহযীব (التهذيب), ২য় খণ্ড, ১৮৮)

আল-কুলাইনী তার আল-কাফীনামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন:
আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: জনৈক মহিলা ওমরের নিকট আগমন করল, অতঃপর বলল, আমি ব্যভিচার করেছি, সুতরাং আপনি আমাকে পবিত্র করুন; অতঃপর তিনি (ওমর) তাকে পাথর মেরে হত্যার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর আমীরুল মুমিনীন আ.কে এই ব্যাপারে সংবাদ দেয়া হলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কিভাবে ব্যভিচার (যিনা) করেছ? তখন সে বলল: আমি মরুভূমিতে পথ অতিক্রম করেছি, অতঃপর আমাকে প্রচণ্ড পানির তৃষ্ণায় পেল, আমি এক বেদুইনের নিকট পানি প্রার্থনা করলাম, কিন্তু সে আমাকে পানি পান করাতে অস্বীকার করল যতক্ষণ না আমি তাকে আমার উপর ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ দেই। অতঃপর পিপাসা যখন আমাকে ক্লান্ত করে ফেলল এবং আমি আমার জীবন নিয়ে আশঙ্কাবোধ করলাম, তখন সে আমাকে পানি পান করাল; আর আমিও আমার নিজের উপর তাকে ক্ষমতাবান করে দিলাম। এ কথা শুনে আমীরুল মুমিনীন আ. বললেন: কাবার মালিকের শপথ, এটা তো বিবাহ। (ফুরুউল কাফী (فروع الكافي), ২য় খণ্ড, বিবাহ অধ্যায় (كتاب النكاح) পৃ. ১৯৮)

মন্তব্যঃ সুবহানাল্লাহ! প্রবৃত্তি শিয়াদের উপর বিজয় লাভ করেছে; ফলে তারা আমীরুল মুমিনীন আলী ইবন আবি তালিবের সাথে এই ধরনের মিথ্যাসমূহের সম্পর্কযুক্ত করেছে। কোন মুসলিম এমন দাবি করতে পারে না যা ঐসব শিয়া নামের খবিসগণ যা দাবি করে থাকে।       
আল্লাহ তাআলার বাণী: 
﴿ قَدۡ أَفۡلَحَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ١ ٱلَّذِينَ هُمۡ فِي صَلَاتِهِمۡ خَٰشِعُونَ ٢ وَٱلَّذِينَ هُمۡ عَنِ ٱللَّغۡوِ مُعۡرِضُونَ ٣ وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِلزَّكَوٰةِ فَٰعِلُونَ ٤ وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِفُرُوجِهِمۡ حَٰفِظُونَ ٥ إِلَّا عَلَىٰٓ أَزۡوَٰجِهِمۡ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُمۡ فَإِنَّهُمۡ غَيۡرُ مَلُومِينَ ٦ فَمَنِ ٱبۡتَغَىٰ وَرَآءَ ذَٰلِكَ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡعَادُونَ ٧  [سورة المؤمنون: 1-7]
অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ, যারা বিনয়-নম্র নিজেদের সালাতে, যারা ক্রিয়াকলাপ থেকে বিরত থাকে, যারা যাকাত দানে সক্রিয়, যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে নিজেদের স্ত্রী অথবা অধিকারভূক্ত দাসীগণ ব্যতীত, এতে তারা নিন্দনীয় হবে না, আর কেউ এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তার হবে সীমালংঘনকারী।”— (সূরা আল-মুমিনুন: -)
সুতরাং এই আয়াতসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হল যে, পুরুষ ব্যক্তির জন্য তার স্ত্রী ও অধিকারভূক্ত দাসীগণ ব্যতীত অন্য কোন নারী বৈধ নয়; অতএব এর বাইরে কোন নারীকে ব্যবহারের পথ খুঁজলে, সে হবে সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত অনুরূপভাবে আল্লাহ তাআলার বাণী:
﴿فَإِنۡ خِفۡتُمۡ أَلَّا تَعۡدِلُواْ فَوَٰحِدَةً أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُكُمۡ﴾ [سورة النساء: 3]
আর যদি আশঙ্কা কর যে, সুবিচার করতে পারবে না, তবে একজনকে অথবা তোমাদের অধিকারভূক্ত দাসীকে।”— (সূরা আন-নিসা: )
সুতরাং যে ব্যক্তি অন্যায়ের আশঙ্কা করবে, সে যেন একজন স্ত্রী অথবা তার অধিকারভূক্ত দাসীকে যথেষ্ট মনে করে। সুতরাং কোথায় মুতআ বিয়ে? অতএব যদি তা হালাল হত, তবে তিনি (আল্লাহ) তা উল্লেখ করতেন। কারণ, প্রয়োজনের সময় আলোচনা বিলম্বিত করা বৈধ নয়।
অনুরূপভাবে আল্লাহ তাআলার বাণী:
﴿ وَمَن لَّمۡ يَسۡتَطِعۡ مِنكُمۡ طَوۡلًا أَن يَنكِحَ ٱلۡمُحۡصَنَٰتِ ٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ فَمِن مَّا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُكُم مِّن فَتَيَٰتِكُمُ ٱلۡمُؤۡمِنَٰتِۚ وَٱللَّهُ أَعۡلَمُ بِإِيمَٰنِكُمۚ بَعۡضُكُم مِّنۢ بَعۡضٖۚ فَٱنكِحُوهُنَّ بِإِذۡنِ أَهۡلِهِنَّ وَءَاتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِ مُحۡصَنَٰتٍ غَيۡرَ مُسَٰفِحَٰتٖ وَلَا مُتَّخِذَٰتِ أَخۡدَانٖۚ فَإِذَآ أُحۡصِنَّ فَإِنۡ أَتَيۡنَ بِفَٰحِشَةٖ فَعَلَيۡهِنَّ نِصۡفُ مَا عَلَى ٱلۡمُحۡصَنَٰتِ مِنَ ٱلۡعَذَابِۚ ذَٰلِكَ لِمَنۡ خَشِيَ ٱلۡعَنَتَ مِنكُمۡۚ وَأَن تَصۡبِرُواْ خَيۡرٞ لَّكُمۡۗ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٢٥  [سورة النساء: 25]
তোমাদের মধ্যে কারও স্বাধীনা ঈমানদার নারী বিয়ে করার সামর্থ্য না থাকলে তোমরা তোমাদের অধিকারভূক্ত ঈমানদার দাসী বিয়ে করবে; আল্লাহ তোমাদের ঈমান সম্বন্ধে পরিজ্ঞাত। তোমরা একে অপরের সমান; সুতরাং তাদেরকে বিয়ে করবে তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে এবং তাদেরকে তাদের মোহর ন্যায়সংগতভাবে দিয়ে দেবে। তারা হবে সচ্চরিত্রা, ব্যভিচারী নয় ও উপপতি গ্রহণকারিণীও নয়। বিবাহিতা হওয়ার পর যদি তারা ব্যভিচার করে, তবে তাদের শাস্তি স্বাধীনা নারীর অর্ধেক; তোমাদের মধ্যে যারা ব্যভিচারকে ভয় করে, এটা তাদের জন্য; ধৈর্য ধারণ করা তোমাদের জন্য মঙ্গল। আল্লাহ ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু।  (সূরা আন-নিসা: ২৫)
সুতরাং যদি মুতআ বিয়ে হালাল হত, তবে তিনি (আল্লাহ) তা উল্লেখ করতেন। বিশেষ করে তিনি উল্লেখ করেছেন ﴿ مَنۡ خَشِيَ ٱلۡعَنَتَ  অর্থাৎ- যারা ব্যভিচারকে ভয় করে। আর (যদি মুতআ বিয়ে হালাল হত) তিনি তা উল্লেখ করতেন না। সুতরাং এটাই প্রমাণ হয় যে, নিঃসন্দেহ তা (মুতআ বিয়ে) হারাম।
অনুরূপভাবে আল্লাহ তাআলার বাণী:
﴿ وَلۡيَسۡتَعۡفِفِ ٱلَّذِينَ لَا يَجِدُونَ نِكَاحًا حَتَّىٰ يُغۡنِيَهُمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦ﴾ [سورة النور: 33]
যাদের বিয়ের সামর্থ্য নেই, আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম অবলম্বন করে।”— (সূরা আন-নূর: ৩৩)
শিয়াগণ মুতআ বিয়ের বৈধতার ব্যাপারে আমাদের নিকট বিশুদ্ধ গ্রন্থসমূহে বর্ণিত কিছু সংখ্যক হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করে; তার জওয়াব হল: ঐসব হাদিস মানসুখ (রহিত) হয়ে গেছে তাদের পক্ষে তার (মুতআ বিয়ের বৈধতার) ব্যাপারে কোন দলিল নেই।
আর মুতআ বিয়ে নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে আরও দলিল হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
কসকল! আমি তোমাদেরকে (সাময়িক বিয়ের মাধ্যমে) নারীদের ভোগ করার অনুমতি দিয়েছিলাম; আর আল্লাহ তা কিয়ামতের দিন পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। সুতরাং যার নিকট তাদের পক্ষ থেকে কোন বস্তু রয়েছে, সে যেন তার পথ উন্মুক্ত করে দেয়; আর তোমরা তাদেরকে যা প্রদান করেছ, তার মধ্য থেকে কিছুই গ্রহণ করো না। (সহীহ মুসলিম, বিবাহ অধ্যায়, ৩৪৮৮)

অনুরূপভাবে ইমাম মুসলিম র. আরও বর্ণনা করেছেন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুতআ বিয়ে থেকে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন: সাবধান! নিশ্চয় তা (মুতআ বিয়ে) তোমাদের এই দিন থেকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত হারাম (নিষিদ্ধ) আর যে ব্যক্তি কোন কিছু প্রদান করেছে, সে যেন তা গ্রহণ না করে। (সহীহ মুসলিম, বিবাহ (نكاح) অধ্যায়, বাব নং- , হাদিস নং- ৩৪৯৬)
ইমাম তিরমিযী র. বর্ণনা করেন:
ইবনু আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: মুতআ বিয়ে ইসলামের প্রথম দিকে বৈধ ছিল, পুরুষ ব্যক্তি বিভিন্ন শহরে আগমন করত, যা তার নিকট অপরিচিত; অতঃপর সে যেই পরিমাণ সময় সেখানে অবস্থান করত, সেই পরিমাণ সময়ের জন্য কোন নারীকে বিয়ে করত; অতঃপর সে তার মালমাত্তার হেফাজত করত এবং তার জিনিসপত্র তার জন্য ঠিকঠাক করে রাখবে, শেষ পর্যন্ত আয়াত নাযিল হল: ﴿ إلا على أزواجهم أو ما ملكت أيمانهم অর্থাৎ- (যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে) নিজেদের স্ত্রী অথবা অধিকারভূক্ত দাসীগণ ব্যতীত); ইবনু আব্বাস রা. বলেন: এই দুই যৌন অঙ্গ ব্যতীত সকল যৌন অঙ্গই হারাম। (সুনানে তিরমিযী, বিবাহ অধ্যয়, হাদিস নং- ১১২২)

আল-হাযেমী বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারা তাদের বাড়ি-ঘর ও নিজ দেশে অবস্থানরত অবস্থায় তাদের জন্য কখনও মুতআ বিয়ে বৈধ করেন নি; বরং তিনি শুধু বিভিন্ন সময়ে জরুরী প্রয়োজনে তাদের জন্য তা বৈধ করেছেনশেষ পর্যন্ত তিনি তাদের উপর তা কিয়ামতের দিন পর্যন্ত নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন।

শিয়াদের কিতাবসমূহের মধ্যেও বর্ণিত আছে:
আলী আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বরের যুদ্ধের দিন গৃহপালিত গাদার গোশত ও মুতআ বিয়ে নিষিদ্ধ করেছেন। (আত-তাহযীব (التهذيب), ২য় খণ্ড, পৃ. ১৮৬; আল-ইসতিবসার (الاستبصار),৩য় খণ্ড, পৃ. ১৪২)
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ইসলাম শিক্ষা)



ইসলামের দৃষ্টিতে দলাদলি-০৯
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন
শিয়া ফির্কার আকিদা-০৫
১২। তাকীয়া বা ধর্মীয় স্বার্থে কোনো কিছুকে অন্যদের থেকে গোপন করা এবং মিথ্যা কথা বলা সম্পর্কে শিয়াদের আকিদা

তাকীয়ার ব্যাপারে শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস ধর্মীয় স্বার্থে কোনো কিছুকে অন্যদের থেকে গোপন করা এবং মিথ্যা কথা বলা, মিথ্যা পরিচয় দান করা জায়েয। এর উপর ভিত্তি করে তারা তাদের অনেক তথ্য অন্য মুসলমানদের থেকে বা তাদের সাধারণ স্তরের অনুসারীদের থেকে আড়াল করে রাখে। নিচের বর্ণনাসমূহ থেকে পরিষ্কার ও সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায় শিয়াদের নিকট তাকীয়া বা ধর্মীয় স্বার্থে কোনো কিছুকে অন্যদের থেকে গোপন করা এবং মিথ্যা কথা বলা জায়েয।
ক. আল-কুলাইনী বর্ণনা করেন, “ইবনু উমাইর আল-জামী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে আবূ আবদিল্লাহ আ. বলেন: হে আবূ ওমর! নিশ্চয় দীনের দশ ভাগের নয় ভাগ তাকীয়ারমধ্যে; যার তাকীয়ানেই, তার ধর্ম নেই। আর মদ ও মোজার উপর মাসেহ ব্যতীত সকল বস্তুর মধ্যে তাকীয়াআছে। (উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ৪৮২)

খ. আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন: আবূ জাফর আ. বলেন: ‘তাকীয়াআমার এবং আমার বাপ-দাদাদের ধর্ম। যার তাকীয়ানেই, তার ঈমান নেই। (উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ৪৮৪)

গ. তিনি আরও বর্ণনা করেন: “মুহাম্মদ ইবন মুসলিম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.-এর নিকট উপস্থিত হলাম এমতাবস্থায় যে, তার নিকট আবূ হানিফা ছিলেন অতঃপর আমি তাকে বললাম: আমি আমার নিজেকে আপনার জন্য উৎসর্গ করলাম, আমি এক বিস্ময়কর স্বপ্ন দেখেছি; তখন তিনি আমাকে বললেন: হে মুসলিমের ছেলে! তুমি তা বর্ণনা কর, তার সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যক্তি এখানে বসা আছেন এবং তিনি তার হাত দ্বারা আবূ হানিফার দিকে ইঙ্গিত করেন; অতঃপর আমি বললাম: আমি (স্বপ্নে) দেখেছি যে, আমার মনে হল আমি আমার বাড়িতে প্রবেশ করলাম; তৎক্ষণাৎ আমার স্ত্রী আমার নিকট বের হয়ে আসল এবং অনেকগুলো আখরোট ভেঙ্গে তা আমার উপর চিটিয়ে দিল। আর এই স্বপ্ন দেখে আমি আশ্চর্য হলাম। অতঃপর আবূ হানিফা বললেন: তুমি এমন এক ব্যক্তি, যে তোমার স্ত্রীর উত্তরাধিকার নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ করবে এবং প্রচণ্ড ঝগড়ার পর তার থেকে তোমার প্রয়োজন মিটে যাবে ইনশাআল্লাহ। অতঃপর আবূ আবদিল্লাহ আ. বললেন: আল্লাহর শপথ, হে আবূ হানিফা! আপনি সঠিক বলেছেন। অতঃপর আবূ হানিফা তার নিকট থেকে বের হয়ে গেল; তখন আমি তাকে বললাম: আমি আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করলাম, আমি এই নাসেবী[123] লোকের ব্যাখ্যাকে অপছন্দ করি। অতঃপর তিনি বললেন: হে মুসলিমের ছেলে! আল্লাহ তোমাকে ক্ষতির সম্মূখীন করবেন নাকারণ, তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী কিছু হবে না। আর সে যে ব্যাখ্যা করেছে, প্রকৃত ব্যাখ্যা এই রকম নয় অতঃপর আমি তাকে বললাম: আপনার কথা সঠিক এবং তার কথার বিপরীত; আর সে ভুল করেছে; তখন তিনি বললেন: হ্যাঁ, আমি তার নিকট শপথ করে বলেছি যে, সে ভুল করেছে।( ফুরুউল কাফী (فروع الكافي), রওযা অধ্যায়, পৃ. ১৩৮)

ঘ. আল-কুলাইনী বর্ণনা করেন, “আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমার পিতা বলতেন: ‘তাকীয়ার চেয়ে আমার চক্ষু অধিক শীতলকারী বস্তু আর কি হতে পারে! নিশ্চয় তাকীয়াহল মুমিনের জান্নাত( উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ৪৮৪)

পাকিস্তান আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত সংগঠনের সভাপতি সম্মানিত শাইখ মুহাম্মদ আবদুস সাত্তার আততুনসাবীর লেখা শিয়া আকিদার অসারতা’ গ্রন্থে ইসলামে তাকীয়ার বিধান এভাবে ব্যক্ত করেছেনঃ
ইসলামে তাকীয়াশূকরের মাংস ভক্ষণ করার চেয়েও বেশি কঠোরতার সাথে নিষিদ্ধ। কারণ, কঠিন পরিস্থিতিতে নিরুপায় ব্যক্তির জন্য শূকরের মাংস ভক্ষণ করা বৈধ; আর তেমনিভাবে অনুরূপ কঠিন পরিস্থিতিতেই শুধু তাকীয়াবৈধ হবে। কারণ, কোন মানুষ যদি নিরুপায় অবস্থায়ও শূকরের মাংস ভক্ষণ করা থেকে মুক্ত থাকে এবং মারা যায়, তবে সে আল্লাহর নিকট গুনাহগার হবে। আর এটা তাকীয়ার বিপরীতকারণ, যখন কোন মানুষ নিরুপায় অবস্থায় তাকীয়ার আশ্রয় না নেয় এবং মারা যায়, তবে আল্লাহর নিকট তার জন্য উচ্চ মর্যাদা ও সাওয়াবের ব্যবস্থা থাকবে। সুতরাং শূকরের মাংস ভক্ষণ করার অবকাশটি যেন শরীয়তের আবশ্যিক বিধানে রূপান্তরিত হয়, কিন্তু তাকীয়ার অবকাশটি শরীয়তের আবশ্যিক বিধানে রূপান্তরিত হয় না। বরং যে ব্যক্তি আল্লাহর দীনের জন্য তাকীয়ার আশ্রয় না নিয়েই মৃত্যুবরণ করবে, সে ব্যক্তি তার এই মৃত্যুর কারণে শীঘ্রই মহাপ্রতিদানের অধিকারী হবে। আর এই ক্ষেত্রে প্রত্যেক অবস্থায় তাকীয়ার চেয়ে দৃঢ় সিদ্ধান্তই উত্তম। আর এই উম্মতের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় ইসলামের ইতিহাসে রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক মুশরিকদের প্রদত্ত কষ্ট সহ্যকরণ, অনুরূপভাবে আবূ বকর সিদ্দীক ও বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুমা প্রমুখের কষ্ট সহ্যকরণ; আম্মার রাদিয়াল্লাহু আনহুর মাতা সুমাইয়া ও খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহুমা প্রমুখের শাহাদাত ইত্যাদি ধরনের বীরত্ব ও দৃঢ় সিদ্ধান্তের বহু বিরল ঘটনা ও কাহিনী এর উপর উত্তম দলিল যে, দৃঢ় সিদ্ধান্তই হল মূল বিষয়, অতি উত্তম ও সুন্দর।
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ইসলাম শিক্ষা)


ইসলামের দৃষ্টিতে দলাদলি-১০
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন
শিয়া ফির্কার আকিদা-০৬
১৩। গুপ্তাঙ্গ ধার করার (বেশ্যাবৃত্তি) বৈধতার আকিদা
আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী আল-ইসতিবসার (الاستبصار) নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন:
মুহাম্মদ ইবন মুসলিম থেকে বর্ণিত, তিনি আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম: কোন ব্যক্তি কি তার ভাইয়ের জন্য তার কন্যা বা দাসীর গুপ্তাঙ্গকে বৈধ করে দিতে পারে? তিনি জবাব দিলেন: হ্যাঁ, সে ব্যক্তি তার (কন্যা বা দাসীর) থেকে তার জন্য যা বৈধ করেছে, তাতে তার কোন সমস্যা নেই। (আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার (الاستبصار), ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৩৬)

আত-তুসী আল-ইসতিবসার (الاستبصار) নামক গ্রন্থে আরও বর্ণনা করেন:“মুহাম্মদ ইবন মুদারিব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আবূ আবদিল্লাহ আ. আমাকে বলল: হে মুহাম্মদ! তুমি এই দাসীটিকে গ্রহণ কর, সে তোমার সেবা করবে এবং তুমি তার থেকে (ফায়দা) অর্জন করবে। অতঃপর যখন বের হয়ে যাবে, তখন তাকে আমাদের নিকট ফেরত দিয়ে যাবে।(আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার (الاستبصار), ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৩৬; মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব আল-কুলাইনী, ফুরুউল কাফী (فروع الكافي), দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ২০০)

মন্তব্যঃ এ কাজ পরিস্কার যিনা-ব্যভিচার যার বৈধতা শিয়াগন ইমামের নামে সম্পর্কযুক্ত করে দিয়েছে। অথচ ইহা  ইসলামী শরীয়তে হারাম করা হইয়াছে।


১৪। নারীদের সাথে তার পিছনের পথে সংগমে মিলিত হওয়াকে বৈধ মনে করে
আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী আল-ইসতিবসার (الاستبصار) নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন:
আবদুল্লাহ ইবন আবি ইয়াফুর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.কে জিজ্ঞাসা করলাম ঐ পুরুষ ব্যক্তি সম্পর্কে, যে তার স্ত্রীর সাথে তার পিছনের পথে সংগমে মিলিত হয় তখন তিনি বললেন: সে রাজি থাকলে কোন অসুবিধা নেই। আমি বললাম: তাহলে আল্লাহ তাআলার বাণী:
 ﴿ فَأۡتُوهُنَّ مِنۡ حَيۡثُ أَمَرَكُمُ ٱللَّهُ﴾  
অর্থ: তখন তাদের নিকট ঠিক সেভাবে গমন করবে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন
এর বাস্তবতা কোথায়?  তখন তিনি বললেন: এই আয়াতের বিধান সন্তান কামনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সুতরাং তোমরা সন্তান অনুসন্ধান কর, আল্লাহ যেভাবে তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿ْ نِسَآؤُكُمۡ حَرۡثٞ لَّكُمۡ فَأۡتُواْ حَرۡثَكُمۡ أَنَّىٰ شِئۡتُمۡ﴾ [سورة البقرة: 223]
তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের ক্ষেত্র। অতএব তোমরা তোমাদের ক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন কর। (সূরা আল-বাকারা: ২২৩) (আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার (الاستبصار), ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৪৩)

তিনি আল-ইসতিবসার (الاستبصار) নামক গ্রন্থে আরও বর্ণনা করেন:
মূসা ইবন আবদিল মুলক থেকে বর্ণিত, তিনি জনৈক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি আবুল হাসান রেজা আ.কে জিজ্ঞাসা করলাম পুরুষ ব্যক্তি কর্তৃক তার স্ত্রীর পিছনের পথে সংগমে মিলিত হওয়ার বিষয়ে; তখন তিনি বললেন: আল্লাহ তাআলার কিতাবের একটি আয়াত তা বৈধ করে দিয়েছে, লুত আ.-এর উক্তি ﴿ هَٰٓؤُلَآءِ بَنَاتِي هُنَّ أَطۡهَرُ لَكُمۡ﴾
অর্থ:এরা আমার কন্যা, তোমাদের জন্য তারা পবিত্র  কারণ, তিনি জানতেন যে, তারা সম্মুখস্থ গুপ্তাঙ্গের প্রত্যাশী ছিল না। (আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার (الاستبصار), ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৪৩)


তিনি আল-ইসতিবসার (الاستبصار) নামক গ্রন্থে আরও বর্ণনা করেন: “আলী ইবন হেকাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সাফওয়ানকে বলতে শুনেছি: আমি রেজা আ.কে বললাম: তোমার আযাদ করা গোলামদের একজন আমাকে অনুরোধ করল যাতে আমি তোমাকে একটি মাসআলা জিজ্ঞাসা করি; কারণ, সে তোমাকে জিজ্ঞাসা করতে ভয় ও লজ্জাবোধ করে; তখন তিনি (রেজা আ.) বললেন, মাসআলাটা কী? সে বলল, পুরুষ ব্যক্তির জন্য তার স্ত্রীর পিছন দিকে সংগমে মিলিত হওয়ার বৈধতা আছে কি? তিনি বললেন: এটা তার জন্য বৈধ আছে। ( আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার (الاستبصار), ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৪৩)

মন্তব্যঃ আল-কুরআন ও সুন্নাহ থেকে নারীদের সাথে সমকামিতা অবৈধতার প্রমাণ পাওয়া যায়।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿ْ نِسَآؤُكُمۡ حَرۡثٞ لَّكُمۡ فَأۡتُواْ حَرۡثَكُمۡ أَنَّىٰ شِئۡتُمۡ﴾ [سورة البقرة: 223]
তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্র। অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন কর।” (সূরা আল-বাকারা ২:২২৩)
নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা চাষের জায়গায় আসার অনুমতি দিয়েছেন; আর তা হল লজ্জাস্থান। আর তিনি পায়খানার জায়গায় গমনের অনুমতি দেননি; আর তা হল পিছনের রাস্তা।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
যে ব্যক্তি জ্যোতিষীর নিকট আসে এবং সে যা বলে, তা বিশ্বাস করে; অথবা রজঃস্রাবকালীন সময়ে তার স্ত্রীর নিকট গমন করে; অথবা তার স্ত্রীর সাথে পায়ুপথে মিলিত হয়, সেই ব্যক্তি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা থেকে মুক্ত। (আবু দাঊদ, চিকিৎসা,হাদিস নং- ৩৯০৬)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:“যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে পায়ুপথে মিলিত হয়, সেই ব্যক্তি অভিশপ্ত(আবু দাঊদ, নিকাহ অধ্যায়, হাদিস নং- ২১৬৪)




১৫। শিয়াগন বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির ক্ষেত্রে রাজআ বা পুনর্জন্মের বিশ্বাসি
শাইখ আব্বাস আল-কুমী তার মুন্তাহাল আমালনামক গ্রন্থের মধ্যে ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল, “আস-সাদিক আ. বলেন: যে ব্যক্তি আমাদের পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে না এবং মুতআ বিয়ের বৈধতাকে স্বীকৃতি দেয় না, সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়। ( শাইখ আব্বাস আল-কুমী, মুন্তাহাল আমাল (منتهى الأمال), ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৪১)

আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী ফারসি ভাষায় বলেন, যার অনুবাদ হল: “ইবনু বাবুইয়া এলালুশ শারায়ে‘ (علل الشرائع) নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন, ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. বলেন: যখন ইমাম মাহাদী আত্মপ্রকাশ করবে, তখন তিনি অতিসত্বর আয়েশাকে জীবিত করবেন এবং তার উপর শাস্তির বিধান (হদ) কায়েম করবেন।(আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন (حق اليقين), পৃ. ৩৪৭)

মোল্লা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী হক্কুল ইয়াকীন (حق اليقين) নামক গ্রন্থে ফারসি ভাষায় দীর্ঘ আলোচনা পেশ করেন, যার সারকথা হল: যখন মাহাদী আ. (কিয়ামতের অল্প কিছুদিন পূর্বে) আত্মপ্রকাশ করবেন, তখন অতি শীঘ্রই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের দেয়াল ভেঙ্গে যাবে এবং তিনি আবূ বকর ও ওমরকে তাদের কবর থেকে বের করে নিয়ে আসবেন; অতঃপর তাদেরকে জীবিত করবেন এবং তাদেরকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করবেন (নাউযুবিল্লাহ) অতঃপর তিনি মাহদীর ব্যাপারে ফারসি ভাষায় আরও উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল: অতঃপর তিনি মানবজাতিকে একত্রিত হওয়ার নির্দেশ দিবেন; তারপর বিশ্ব জগতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত যুলুম (নির্যাতন) ও কুফরী প্রকাশ পেয়েছে, ঐসব যুলুম ও কুফরীর সকল পাপ তাদের (অর্থাৎ আবূ বকর ও ওমরের) আমলনামায় লিখা হবে। যে কোন যুগেই মুহাম্মদের বংশধরের মধ্যে যে রক্তপাত হয়েছে, বরং অন্যায়ভাবে যত রক্তপাত হয়েছে, যত অবৈধ মিলন হয়েছে, যত সুদী মাল অথবা যত অবৈধ সম্পদ খাওয়া হয়েছে এবং মাহাদী আগমনের পূর্ব পর্যন্ত যত পাপ ও অন্যায়-অত্যাচার সংঘটিত হয়েছে, নিশ্চিভাবে ঐসব কিছুই অচিরেই তাদের আমলনামায় হিসাব (গণনা) করা হবে। (মোল্লা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন (حق اليقين), পৃ. ৩৬০)
মন্তব্যঃ পুনর্জন্ম একটি হিন্দুয়ানি মতবাদ আর বাতিল পন্থী শিয়ারা ও একইভাবে পুনর্জন্ম বিশ্বাসি। তাছাড়া সম্মানিত সাহাবি আবূ বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুদের প্রতি তাদের যে জঘন্য শত্রুতা ও বিদ্বেষ তা আর বলার প্রয়োজন হয় না।
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ইসলাম শিক্ষা)



ইসলামের দৃষ্টিতে দলাদলি-০১১
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন
শিয়া ফির্কার আকিদা-০৭
১৬। হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের স্মরণে শোকের মাতম করা
হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের স্মরণে শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন এই দিবসটিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে বিভিন্ন ইসলমাম বিরোধী কাজ করে থাকে।
. শোক দিবস হিসেবে পালন করা : হুসাইন ইবনে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর মৃত্যু এই দিনে হয়েছিল বিধায় এই দিনটিকে শোকদিবস হিসেবে পালন করার নীতি শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে রয়েছে।
. মাতম বা আহাজারী করা: আশুরার দিবসে পৃথিবীর বিভিন্ন  দেশে, বিশেষ কিছু স্থানে বেশ আয়োজন করে তাজিয়া মিছিল বের করেতারা বিলাপ করে, পোষাক ছিঁড়ে ফেলে, শরীর রক্তাক্ত করে এবং তারা তাদের হাত দ্বারা তাদের গালে, বক্ষে ও পিঠে আঘাত করে এবং কাঁদতে কাঁদতে বক্ষ বিদীর্ণ করে। কারবালার ময়দানে উপস্থিত হয়ে মাতম ও তাযিয়া মিছিল করা এই তাজিয়া মিছিলের নেপথ্যে থাকে শিয়া সম্প্রদায়।  শোক প্রকাশে এইভাবে বহু অর্থ-সম্পদ খরচ করে। বিশেষ করে তারা প্রত্যেক মহররম মাসের দশম তারিখে ইয়া হোসাইন! ... ইয়া হোসাইন! শ্লোগানে শ্লোগানে চীৎকার করে।  কারণ, তারা বিশ্বাস করে যে, এটা তাদের দীনের মূল কর্মকাণ্ড ও মহান প্রতীক তথা নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত আর শিয়াগণ তাদের সন্তানদেরকে এই মাতমের সময় কাঁদতে অভ্যস্ত করে তোলে। তারা ও ভবিশ্যতে ইহাকে ধর্মের অংশ মনে করে।
  গ. মিসিল বা শোভযাত্রা বাহির করা: শিয়াগণ শোক, মাতম ও বিলাপের জন্য তারা মিসিল বা শোভযাত্রা বাহির করে। তারা প্রতি বছর মহররম মাসের প্রথম দশকে আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের বিশ্বাস নিয়ে হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের স্মরণে বিভিন্ন মাঠে ও ময়দানে এবং মহাসড়কে বড় বড় শোক মিছিলের আয়োজন করে।
ঘ. হোসাইনের কফিন বহন: তার এই দিন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সারিবদ্ধভাবে কাঠ বা অনুরূপ বস্তু দ্বারা নির্মিত হোসাইনের কফিন বহন করে শোভযাত্রা বাহির করে এবং সকল প্রকার সৌন্দর্য ও অলঙ্কার দ্বারা সুসজ্জিত ঘোড়া পরিচালিত করেআর এর দ্বারা তারা কারবালার ময়দানে হোসাইনের ঘোড়া ও তার দলবলের সেই দিনের অবস্থার অভিনয় করে।
ঙ. সাহাবি  গাল দেয়: এই দিনে তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী বিশেষ করে আবূ বকর, ওমর ও ওসমানের মত খলিফাদের থেকে নিজেদেরকে মুক্ত মনে করে এবং গালি দেয়, নিন্দা করে।
. এ দিবসকে কবর যিয়ারতের জন্যে বিশেষভাবে নির্দিষ্ট করে নেয়
. এ দিনে বিশেষ খাবারের আয়োজন করা এবং তার ফযিলত বর্ণনা করা ।

মন্তব্যঃ ইসলামের শরীয়তে যে কোন শোকে কান্নাকাটি বা হাহুতাস করা, বক্ষ বিদীর্ণকরণ ও গালে আঘাত করাকে কঠরভাবে নিষেধ করা হয়েছ। তাই কারবালার ইতিহাস স্মরণের নামে যে সকল মাতম, মর্সিয়া, তাযিয়া মিছিল, শরীর রক্তাক্ত করাসহ যা কিছু করা হয় এর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। ইসলাম এ সকল কার্যকলাপের অনুমোদন দেয় না। এগুলো সন্দেহাতীতভাবে বিদআত। আর যদি এই সব কর্মকান্ডকে ইসলামি শরিয়ত মনে করি, তবে ইসলাম অস্বীকার করার মত পাপে আক্রান্ত হব। তাই হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের স্মরণে শোকের মাতম করা থেকে বিরত থেকে আল-কুরআনের আদেশ মতধৈর্য ধারণ করব। কারন মহান আল্লাহর তার সিদ্ধান্তের প্রতি সন্তুষ্ট থাকার উপদেশ দিয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱسۡتَعِينُواْ بِٱلصَّبۡرِ وَٱلصَّلَوٰةِۚ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٥٣  [سورة البقرة: 153]
অর্থ: হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।” (সূরা আল-বাকারা: ১৫৩)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:
﴿ وَبَشِّرِ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٥٥ ٱلَّذِينَ إِذَآ أَصَٰبَتۡهُم مُّصِيبَةٞ قَالُوٓاْ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّآ إِلَيۡهِ رَٰجِعُونَ ١٥٦﴾ [سورة البقرة: 155-156]
অর্থ: তুমি শুভ সংবাদ দাও ধৈর্যশীলগণকে, যারা তাদের উপর বিপদ আপতিত হলে বলে, ‘আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভোবে আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।” —( সূরা আল-বাকারা: ১৫৫-১৫৬)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:
﴿ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلۡحَقِّ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلصَّبۡرِ ٣  [سورة العصر: 3]
অর্থ: এবং তারা পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দেয়।” (সূরা আল-‘আসর: )
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:
﴿ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلصَّبۡرِ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلۡمَرۡحَمَةِ ١٧  [سورة البلد: 17]
অর্থ: এবং যারা পরস্পরকে উপদেশ দেয় ধৈর্য ধারণের ও দয়া-দাক্ষিণ্যের।” —( সূরা আল-বালাদ: ১৭)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:
﴿... وَٱلصَّٰبِرِينَ فِي ٱلۡبَأۡسَآءِ وَٱلضَّرَّآءِ وَحِينَ ٱلۡبَأۡسِۗ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ صَدَقُواْۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُتَّقُونَ ١٧٧﴾ [سورة البقرة: 177]
অর্থ: অর্থ-সংকটে, দুঃখ-ক্লেশে ও সংগ্রাম-সংকটে ধৈর্য ধারণ করলে। এরাই তারা যারা সত্যপরায়ণ এবং এরাই মুত্তাকী।” —(সূরা আল-বাকারা: ১৭৭)
তাছাড়া হাদিস সমুহে শোক পালনের জন্য নিষধ করা হইয়াছে। উম্মে আতিয়্যা রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মৃত ব্যক্তির জন্য আমাদেরকে তিনদিনের বেশি শোক করতে নিষেধ করা হয়েছে শুধুমাত্র স্বামী মারা গেলে স্ত্রীদের জন্য চার মাস দশদিন শোক পালন করতে হয়।’’ (বুখারী : ৫৩৪১)
সুতারং হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর মৃত্যু হয়েছে চৌদ্দশত বছর পূর্বে কাজেই এতবছর পরও শোক পালন করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ অমান্য করার নামান্তর।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ‘‘যে ব্যক্তি গালের উপর চপেটাঘাত করল, বক্ষদেশ বিদির্ণ করল এবং জাহিলিয়াতের ডাকের অনুসরণ করে আহবান করল সে আমাদের (মুসলমানদের) অন্তর্ভুক্ত নয়।’’ (বুখারী : ১২৩৬ ও মুসলিম : ২৯৬)
অপর বর্ণনায় এভাবে এসেছে : উম্মে আতীয়্যা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাইয়াত গ্রহণকালে আমাদের থেকে অঙ্গীকার নিয়েছেন যেন আমরা মৃত ব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশার্থে উচ্চশব্দে আনুষ্ঠানিকভাবে কান্নাকাটি না করি। (বুখারী : ১৩০৬ ও মুসলিম : ২০৮৮)
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : ‘‘দুটি বিষয় এমন যা মানুষের মধ্যে কুফরী বলে গণ্য হয় বংশধারাকে কলঙ্কিত করা ও মৃত ব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশার্থে উচ্চশব্দে কান্নাকাটি করা।’’ (মুসলিম : ১২১)
কাজেই শিয়াদের এই সকল ভ্রান্ত আকিদা সমুহ নিজে জানার পর অপর কে জানান, যাতে করে সকল মুসলিম আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকিদা-বিশ্বাসের উপর সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারে। এবং শিয়াদের মিথ্যা বর্ণনাসমূহ, আকিদা, বিশ্বাস এবং তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে মুসলিম সম্প্রদায়ক হেফাজত থাকতে পারে ।
হে মহান আল্লাহ, এই সামান্য খেদমত টুকু কবুল করে আমাদের সকল কে নাজাত দান করুন। আমিন
  
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

Post a Comment

0 Comments