সর্বশেষ

2/recent/ticker-posts

জামায়াতে ইসলামি

জামায়াতে ইসলামি

জামায়াতে ইসলামি-০১
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন
  উপমহাদেশে দেওবন্দ যেমন কোন মতবাদ নয়, ঠিক তেমনি জামায়াতে ইসলামীও কোন মতবাদ নয়। কিন্তু কালের আবর্তে কিছু কিছু আমল ও বিশ্বাস অন্যদের থেকে আলাদা হওয়ায়, মনে হবে এরা একটা নতুন ফির্কা বা মতবাদ। আসলে এরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অন্তরভুক্ত একটি দল, তাই তাদের সাথে অন্য দলের  আকিদায় যে পার্থক্য আছে, শুধু সেই আকিদাগুলিই উল্লেখ করব। আমরা সকলেই অবগত জামায়াতে  ইসলামী একটি রাজনৈতিক দল, কাজেই এখানে এককভাবে কোন মতাদর্শ গড়ে উঠেনি। বিভিন্ন ফির্কা বা মতবাদের সংমিশ্রন ঘটেছে এই দলের মাঝে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী কর্মিরা এককভাবে এই দলের প্রতিষ্ঠাতা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদীর অনুসরনে এই দলের কর্মকান্ড পরিচালনা করে বিধায় তার লেখা কিতারগুলির ব্যাপক হারে অধ্যায়ন করে থাকে। কাজেই এই দলের কর্মিদের মধ্যে এই দলের প্রতিষ্ঠাতা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদীর মতাদর্শণের বিরাট প্রভার প্রতিয়মান হয়। তাই আমরা সর্বপ্রথম জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদীর জীবনি ও জামায়াত প্রতিষ্ঠার ইতিহাস আলোচনা করর এবং পরবর্তিতে তাদের আকিদা আলোচনা করব। (ইনশা আল্লাহ)
সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী

শাইখ সাইয়েদ আবুল 'লা মওদুদী ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯০৩ জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল সাইয়েদ আহমদ হাসান মোওদূদী। তিনি ভারতের আওরঙ্গাবাদ, (বর্তমানে মহারাষ্ট্রের  মধ্যে), হায়দ্রাবাদের এক মুসলিম
পরিবারে জম্ম গ্রহন করেন। তিনি একজন মুসলিম গবেষক, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা ও বিংশ শতাব্দীর একজন গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী চিন্তাবিদ ও দার্শনিক ছিলেন তিনি পাকিস্তানের একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও ছিলেন এবং জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বিংশ্ব শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিম স্কলারদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। আবুল 'লা  মওদুদী ইতিহাসের দ্বিতীয় এবং সর্বশেষ ব্যক্তি যার গায়েবানা জানাজার নামাজ পবিত্র কাবা শরীফে পড়া হয়। (তথ্য সূত্র: মাওলানা মওদূদী একটি জীবন একটি ইতিহাস, লেখক আব্বাস আলী খান)

শিক্ষা জীবন:
তার পিতার একান্ত ইচ্ছ্ ছিল পুত্রকে একজন আলেমে দ্বীন বানাবেন। সে ভাবেই তাঁর শিক্ষা দীক্ষার ব্যবস্থা করেন। প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গেই আরবী, ফারসী ও উর্দূর মাধ্যমে কোরআন, হাদীস, ফেকাহ প্রভৃতি বিষয়ে তাঁকে শিক্ষা দেয়া হলো। ইংরেজী শিক্ষা ও পাশ্চাত্য চিন্ধাধারার স্পর্শ থেকে তাকে সতর্কতার সাথে দূরে রাখা হলো। অন্য লোকের সঙ্গে সাধারন মেলামেশা ও গল্পগুজবে নৈতিকতা ও ভদ্রতা রক্ষা করে চলার ব্যাপারে পিতার তিক্ষ্ন দৃষ্টি ছিল। মাতৃভাষা উর্দূর প্রতিও তার ছিল বিশেষ লক্ষ্য। নবছর বয়স পর্যন্ত বাড়ীতেই বালক মওদূদীর বিদ্যাচর্চা চলতে থাকে। এ সময়ের মধ্যে তিনি আরবী ব্যাকরণ, সাহিত্য এবং ফেকাহ শাস্ত্রের বিভিন্ন প্রাথমিক পুস্তকাদি শেষ করেন। তাপর তাঁর ওস্তাদ মরহুম মৌলভী নাদীমুল্লাহ হুসাইনীর পরামর্শে তাঁকে আওরংগাবাদের ফওকানিয়া মাদ্রাসায় রিশদিয়া মানের শেষ বর্ষ (৮ম শ্রেণী) শ্রেণীতে ভর্তি করে দেয়া হয়।
 ভর্তি হওয়ার ছমাস পরেই তিনি রুশদিয়া পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হন। অবশ্য একমাত্র অংক ব্যতীত অন্যান্য সকল বিষয়েই তিনি ভালভাবে পাস করেন। অংকে পাস না করার কারণ এই যে, মাত্র ছমাস পূর্বে সর্ব প্রথম তাঁর অংকে হাতে খড়ি দেয়া হয়। মাদরাসার প্রধান শিক্ষক মোল্লা দাউদ সাহেব তাঁকে উপরের মৌলভী শ্রেণীতে ভর্তি করে নেন।
ঊনিশত চৌদ্দ খ্রিষ্টাব্দে বালক মওদূদী মৌলভী পরীক্ষা দেন এবং অংকে কাঁচা থাকার কারণে উত্তীর্ণ ছাত্রদের মধ্যে ষষ্ঠ স্থান লাভ করেন। এই সময় পিতার স্বাস্থ্য একেবারে ভেঙ্গে পড়ে। তিনি ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে আওরংগাবাদ থেকে হায়দারাবাদ গমন করেন এবং সেখানে দারুল উলুমে উচ্চ শিক্ষার জন্যে পুত্র মওদূদীকে ভর্তি করে দেন। তখন দারুল উলুমের অধ্যক্ষ ছিলেন মরহুম মাওলানা হামীদুদ্দীন। ১৯২১ সালে দিল্লী গমন এবং হাদীস-তাফসীর-ফিকাহসহ অন্যান্য ইসলামী বিষয়ে জ্ঞান অর্জন এবং ইংরেজী ভাষা শিক্ষা। ১৯২১ সালে দিল্লিতে মাওলানা আব্দুস সালাম নিয়াজির কাছে আরবি শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯২৬ সালে  দিল্লির 'দারুল উলুম ফতেহপুরি  থেকে ‘উলুম-এ-আকালিয়া ওয়া নাকালিয়া’  সনদ লাভ করেন। ১৯২৮ সালে দারুল উলুম ফতেহপুরি থেকে 'জামে তিরমিযি' এবং 'মুয়াত্তা ইমাম মালিক' সনদ লাভ করেন।
       
ডঃ শায়খ আব্দুস সালাম আজাদি মওদূদীর শিক্ষা গত যোগ্যতা নিয়ে আরো লিখেছেন উস্তাদ নাদীমুল্লাহ হাসনাইন শায়খ নিয়ায ফাতেহপুরির আছ থেকে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। মুহাম্মাদ ফাদিল এর কাছে শুধু ইংরেজি ভাষা না, ইতিহাস, দর্শন, সমাজ বিজ্ঞান ও বিভিন্ন ধর্মের তুলনা মূলক আলোচনা পড়েছেন। তিনি মাওলানা ইশফাকুর রহমান কান্ধেল্ভীর কাছ থেকে হাদীস ফিকহ ও আরবী সাহিত্য পাঠদানের ইজাযাহ নেন ১৯২৭ সালে এবং তিরমিযি ও মুওয়াত্তা ইমাম মালিক শিক্ষা দানের ইজাযাত গ্রহন করেন ১৯২৮ সনে। এই দু বছর তিনি সম্পূর্ণ সময় ব্যয় করেছেন লেখা পড়ার পেছনে। দেওবন্দে তিনি তাদের পত্রিকা আল জামইয়্যাতের সম্পাদক তখনই হতে পেরেছেন যখন সেখানকার আলিমরা তাঁকে সার্টিফাই করেছেন।
আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও বিশিষ্ট ফকীহ এবং সালাফী আলিম ডঃ সায়্যিদ আব্দুল হালিম মুহাম্মদ হুসাইন [হাফিজাহুল্লাহ] এর লিখা "নাযারাত ফী ফিকরি আবীল-আলা আল-মওদূদী - نظارات في فكر أبي الأعلى المودودي" কিতাবে মাওলানা মওদূদীর শিক্ষাগত যোগ্যতার যে বিবরণ তিনি দিয়েছেন তা থেকে আমি পাঠকদের জন্য উল্লেখ করছি।

আরবী ভাষা, নাহু, সরফ, আল-মা'ক্বুলাত ওয়াল-বালাগাহ ওয়াল মা'আনীঃ এগুলোতে তিনি ইজাজাহ লাভ করেছেন দিল্লীর দারুল উলুমে ভারতের প্রখ্যাত আলিম মাওলানা শায়খ আব্দুস-সালাম নিয়াজীর [রহিমাহুল্লাহ] কাছ থেকে।

হাদীস ও উলুম আল-হাদীসঃ শায়খ ইশফাক্বুদ্দীন কান্দাহলাবীর [রহিমাহুল্লাহ] কাছ থেকে এ বিষয়ে ইজাযাহ লাভ করেন তিনি।

ফিক্বহ, তাফসীর বায়দাওয়ী এবং আল-মাতূল ফী 'ইলম আল-মা'আনী ওয়াল-বালাগাহঃ এ বিষয়গুলোতে তিনি ইজাযাহ লাভ করেন শায়খ শরীফুল্লাহর [রহিমাহুল্লাহ] কাছ থেকে।

ইংরেজী ভাষাঃ মৌলভী মুহাম্মদ ফাদিল এর হাতে মাত্র চার মাসে তিনি ইংরেজী ভাষা শিক্ষায় বুৎপত্তি লাভ করেন।

পিতার মৃত্যু:
পুত্রকে হায়দারাবাদ রেখে অসুস্থ পিতার চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরিবর্তনের জন্যে ভূপাল চলে যান। বালক মওদূদী হায়দারাবাদ দারুল উলুমে পাঠাভ্যাস করতে থাকেনকিন্তু ছমাস অতিক্রান্ত না হতেই ১৯১৭ সালে ভূপাল থেকে দুঃসংবাদ এলো যে, পিতা মৃত্যু শয্যায় শায়িত। সংবাদ পাওয়া মাত্র বালক মওদূদী মাতাকে নিয়ে ভূপাল চলে যান এবং মুমুর্ষূ পিতার শুশ্রুষায় আত্মনিয়োগ করেন। পিতা দারিদ্র্য ও পীড়ার সঙ্গে ক্রমাগত কয়েক বছর সংগ্রাম করে ১৯২০ সালে দুনিয়ার কর্মক্ষেত্র থেকে চির বিদায় গ্রহণ করেন।১

কর্ম জীবন:
পিতার মৃত্যুর পর থেকেই বালক মওদূদীকে জীবিকা অন্বেষণের উপায় অবলম্বন করতে হয়। ঊনিশ শআঠারো সালে মওদূদীর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা সাইয়েদ আবুল খায়ের মওদূদী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে প্রবেশ করেন। বিজনৌর থেকে প্রকাশিত মদীনাপত্রিকার সম্পাদনার ভার তিনি নিজ হস্তে গ্রহণ করেন। সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদীও বড় ভাইয়ের সঙ্গে মিলে মদীনাপরিচালনা করতে থাকেন। ১৯২০ পিতার ইন্তিকালের পর জব্বলপুরে দৈনিক তাজ পত্রিকার সম্পাদনা ভার গ্রহণ। ১৯২১ সালের প্রথম দিকে মাওলানা মুফতী কেফায়েতুল্লাহ ও জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা আহমদ সাঈদের সাথে তাঁর পরিচয় হয়। তাঁরা জমিয়তের পক্ষ থেকে মুসলিমনাম দিয়ে একটা পত্রিকা প্রকাশ করেন এবং মাওলানা মওদূদীর প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে, ১৯২২ সালে তাঁকে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের মুখপত্র মুসলিম’-এর সম্পাদক নিযুক্ত করেন। ১৯২৩ সাল পর্যন্ত পত্রিকাটি সুচারুরূপে চলতে থাকে এবং মাওলানা শেষ পর্যন্ত তার সম্পাদনা করেন। (তথ্য সূত্র: মাওলানা মওদূদী একটি জীবন একটি ইতিহাস, লেখক আব্বাস আলী খান)।

ঊনিশ শতেইশ সালে মুসলিমব্ন্ধ হওয়ার পর মাওলানা মওদূদী হায়দারাবাদ রওয়ানা হন। কিন্তু পথিমধ্যে ভূপালে যাত্রা ভঙ্গ করে সেখানে দেড় বছরকাল নিবিষ্টচিত্তে অধ্যয়নে রত হন। ১৯২৪ সালে তিনি পুনরায় দিল্লী গমন করেন। ওই সময়ে পাকভারতের সিংহ পুরুষ মরহুম মাওলানা মুহাম্মদ আলী জওহরের সাথে তাঁর পরিচয় ঘটে। মাওলানা মুহাম্মদ আলী তখন হামদর্দপত্রিকা পরিচালনা করছিলেন। তিনি তরুণ উদীয়মান সাংবাদিক মাওলানা মওদূদীকে উক্ত পত্রিকার কার্যভার গ্রহণ করতে অনুরোধ জানান। ঠিক এই সময়ে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের পক্ষ থেকে আল জমিয়তপত্রিকা প্রকাশ করার অভিপ্রায়ে মাওলানা আহমদ সাঈদ মাওলানা মওদূদীকে আহবান জানান। মাওলানা মুহাম্মদ আলীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা থাকা সত্ত্বেও মওদূদীর স্বাধীন মন অন্যের অদীনতা স্বীকার বাধা দান করলো। অতএব তিনি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে আল জমিয়তপত্রিকার সম্পাদনা ভার গ্রহণ করাই সমীচীন মনে করলেন। ১৯২৪ সাল থেকে ১৯২৮ সাল পর্যন্ত সম্পূর্ণ সুষ্ঠূভাবে তিনি অর্ধ সাপ্তাহিক আল জমিয়তপরিচালনা করেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি বিভিন্ন বিষয়ের মূল্যবান গ্রন্থও রচনা করেন। তাঁর প্রথম প্রকাশনা আল জিহাদু ফিল ইসলামএবং দওলতে আসফিয়া ও হুকুমতে বরতানিয়াবিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ( তথ্য সূত্র: মাওলানা মওদূদী একটি জীবন একটি ইতিহাস, লেখক আব্বাস আলী খান)।
ইংরেজী ১৯৩২ সাল থেকে মাওলানা মওদূদীর জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। এই সময় তিনি দাক্ষিণাত্যের হায়দারাবাদ থেকে তর্জুমানুল কোরআননামে একটি মাসিক পত্রিকা বের করেন। তখন থেকেই তিনি পৃথকভাবে বসবাস শুরু করেন। মুয়ায্যামশাহী মার্কেটের সন্নিকটে একটি দোতলা বাড়িতে একজন কর্মচারী নিয়ে সেখান থেকে উক্ত পত্রিকা প্রকাশ করতে থাকেন। তিনি তখনও ছিলেন অবিবাহিত। একটি পত্রিকা প্রকাশ করা যেমন কথা নয়। এর জন্য প্রয়োজন আর্থিক স্থিতিশীলতা। কিন্তু বলতে কি, তাঁর কোন আর্থিক সঙ্গতিই ছিল না। না ছিল সহায়-সম্পদ, না পৈত্রিক বাড়ী-ঘর, আর না কোন নিয়মিত মাসিক আয়-উপায়। এ নিয়ে তাঁর বড় ভাইয়ের সঙ্গে অনেক আলাপ-আলোচনা হয়। এমন আর্থিক দৈন্যের ভেতর দিয়ে একটা মাসিক পত্রিকা প্রকাশের সংকল্পের কথা শুনে বড় ভাই বিচলিত হন। তিনি অবশেষে উসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ গ্রেডের একটি প্রফেসারীর পদ মাওলানার জন্যে সংগ্রহ করে তাঁকে পত্রিকা প্রকাশের দুঃসাহস ও ঝুঁকি থেকে বিরত থাকতে বলেন। বড় ভাই ছোট ভাইকে এ বিষয়ে সম্মত করার জন্য ছঘন্টা ধরে বুঝাতে থাকেন। এরপরও মাওলানা ধীর গম্ভীর স্বরে বড় ভাইয়ের নিকট আবেদন জানানআর সময় নষ্ট করা যেতে পারে না। আমার দৃঢ় প্রত্যয় আছে যে, যদি আমার কথায় আন্তরিকতা থাকে, তা হলে আমার অনুপ্রেরণা বিফলে যাবে না। তিনি আরও বলেন, “অবস্থা বড়ই সঙ্গিন হয়ে পড়েছে। আমি দেখতে পাচ্ছি যে, প্লাবন আসতে আর বিলম্ব নেই। এ প্লাবন ১৮৫৭ সালের ইংরেজ শাসনের প্লাবন থেকে বেশী মারাত্মক ও ধ্বংসাত্মক হবে। এ বিপদ থেকে মুসলমানদেরকে সাবধান করে দেয়া আমি আমার কর্তব্য মনে করি। আমার সাধ্যমত তাদের কোন না কোন খেদমত করার চেষ্টা আমি করব। ছোট ভাইয়ের অকাট্য যুক্তি ও অটুট মনোবল দেখে বড় ভাই নিরস্ত হলেন। উসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লোভনীয় মোটা বেতনের চাকরির লোভ সংবরণ করে মাওলানা মওদূদী পত্রিকার মাধ্যমে জাতির খেদমতে আত্মনিয়োগ করলেন। লেখনীর মাধ্যমে একটা বিপ্লবী আন্দোলনের সূচনা করলেন।  (তথ্য সূত্র: মাওলানা মওদূদী একটি জীবন একটি ইতিহাস, লেখক আব্বাস আলী খান)।

ইসলামী দাওয়াত জনসমক্ষে তুলে ধরার সূচনা: ১৯৩৬ আল্লামা ইকবালের সাথে পত্র বিনিময়ের সূচনা। পরের বছর ৩৪ বছর বয়সে লাহোরে, দক্ষিণ এশিয়ার কিংবদন্তিতুল্য মুসলিম কবি ও দার্শনিক আল্লামা মুহাম্মাদ ইকবালের সাথে পরিচয় হয়। পরিচয় করিয়ে দেন চৌধুরী নিয়াজ আলী খান। এই সময় আল্লামা ইকবাল তাকে হায়দারাবাদ থেকে পাঞ্জাবে কার্যক্রম স্থানান্তরের জন্যে আহ্বান। এবং এর পরের বছর ১৯৩৮ সালের ১৬ই মার্চ তারিখ ৩৫ বছর বয়সে, হায়দারাবাদ থেকে পাঠানকোটে গমন করেন। সেখানে তিনি দারুল ইসলাম ট্রাস্ট ইনস্টিটিউটে যোগদান করেন, যেটি ১৯৩৬ সালে আল্লামা ইকবালের পরামর্শে চৌধুরী নিয়াজ আলী খান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পাঠানকোটের ৫ কিমি পশ্চিমে, জামালপুরে, চৌধুরী নিয়াজ আলী খানের ১০০০ একর এস্টেট ছিল। চৌধুরী নিয়াজ আলী খান সেখান থেকে ৬৬ একর জমি দান করেন।

রাজনৈতিক কার্যক্রম:
১৯৪০ ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার খসড়া প্রণয়নের জন্যে মুসলিম লীগ কর্তৃক কমিটি গঠন করে এবং মাওলানাকে সেই কমিটির সদস্য মনোনয়ন করেন। আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী হুকুমত কিস তরাহ কায়েম হুতি হ্যায়’- বিষয়ের উপর এক জ্ঞানগর্ভ ভাষণ দান যা গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় এবং যা ইংরেজী ও বাংলা ভাষায় যথাক্রমে ‘The Process of Islamic Revolution’ এবং ইসলামী বিপ্লবের পথনামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত। ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন, ইসলামী বিপ্লবের পথ ও এক আহম এস্তফতা গ্রন্থ প্রকাশ। পরের বছর, ১৯৪১ সালের ২৬শে আগস্ট তারিখে পঁচাত্তর জন লোক নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠা এবং তিনি উক্ত দলের আমীর নির্বাচিত। লাহোরে জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিস প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরের বছর জুন মাসে জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিস লাহোর থেকে দারুল ইসলাম পাঠানকোট এ স্থানান্তরিত করা হয় কিন্তু ১৯৪৭ সালে চতুর্দিকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরি হয় এবং পাঠানকোট হিন্দুদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়। যার ফলে পাঠানকোটের মুষ্টিমেয় মুসলমান অধিবাসী লাহোর হিজরত করতে বাধ্য হয় এবং জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় অফিস পুনরায় লাহোরে স্থানান্তরিত

কারাগারে প্রেরণ:
 ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পাঁচ মাস পর থেকে পাকিস্তানে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুরু। ৬ই জানুয়ারী লাহোরে আইন কলেজে ভাষণ দিতে গিয়ে ইসলামী আইনের ভিত্তিতে রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েমের দাবি পেশ। ৬ই মার্চ করাচী জাহাঙ্গীর পার্কে অনুষ্ঠিত জনসভায় ইসলামী শাসন ব্যবস্থার জন্যে ৪ দফা দাবি পেশ। (এপ্রিল–সেপ্টম্বর) দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থার দাবিতে জনমত গঠনের জন্য অভিযান চালান। সরকারের পক্ষ থেকে মাওলানা প্রতি মিথ্যা আরোফ করা হয়। মাওলানা কাশ্মীরের জিহাদ হারাম বলেছেন ১২ই অক্টোবর মাওলানাকে কয়েকজন সহকর্মীসহ গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ। ইসলামের জীবন পদ্ধতি, ইসলামী আইন, ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদের অধিকার, আযাদী কে ইসলামী তাকাযে ও মোতালেবায়ে নেযামে ইসলামী গ্রন্থ প্রকাশ। ১৯৫০ ২৮ শে মে মাওলানা কারামুক্তি।

১৯৫২ সালে শাসনতন্ত্র প্রণয়নকারী গণপরিষদের কাছে তিনি ও তার দল ৮ দফা দাবি পেশ। ইসলামী শাসনতন্ত্রের জন্যে দেশব্যাপী আন্দোলন। কাদিয়ানীদেরকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ঘোষণা করার দাবিতে করাচীতে সর্বদলীয় সম্মেলনে মাওলানার অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৩ সালে 'কাদিয়ানী সমস্যা' নামে একটি বই লিখে কাদিয়ানী বা আহমদিয়া সম্প্রদায়কে অমুসলিম প্রমাণ করেন। ফলে ইতিহাস খ্যাত বড় রকমের কাদিয়ানী বিরোধী হাঙ্গামার সৃষ্টি হয়।  এ সময় অনেকগুলো সংগঠন একযোগে কাদিয়ানীদেরকে সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষনার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। তারা সর্বদলীয় কনভেনশনে ২৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে 'ডাইরেক্ট একশন কমিটি' গঠন করে। জামায়াত এই কমিটির বিরোধিতা করে অহিংস আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেয়। কিন্তু তথাপি মার্চ মাসের শুরুতে আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে এবং পুলিশের গুলিতে কিছু লোক নিহত হয়। পরে একটি সামরিক আদালত আবুল আ'লাকে এই গোলযোগের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেয়, তবে কাদিয়ানী সমস্যা নামক বইটি বাজেয়াপ্ত করা হয়নি।  অবশ্য সেই মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করা হয়নি। মুসলিম প্রধান দেশগুলোর চাপ এবং দেশী বিদেশী মুসলিম নেতৃবৃন্দের অনুরোধে মৃত্যুদন্ডাদেশ পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড করা হয়, কিন্তু পরে তাও  প্রত্যাহার করা হয়।

১৯৫৫ নিছক আইনগত কারণে ২৯ মে এপ্রিল মাওলানার মুক্তিকিন্তু ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসক ফিল্ড মার্শাল আই্‌উব খান জামায়াতে ইসলামী'কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
        ১৯৬৩ লাহোরে নিখিল পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণ দানকালে মাওলানাকে লক্ষ্য করে গুলীবর্ষণ। জনৈক জামায়াত কর্মীর শাহাদাত বরণ। সম্মেলন পণ্ড করার সকল সরকারী প্রচেষ্টা ব্যর্থ। ১৯৬৪ ৪ঠা জানুয়ারী। জামায়াত বেআইনী ঘোষিত। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্যগণসহ মাওলানা গ্রেফতার। ১৯শে জানুয়ারী। জামায়াতের সকল রেকর্ডপত্র বাজেয়াপ্ত করে জামায়াতের বিরুদ্ধে সরকারী প্রচারণা তীব্রতর হয়২৫ শে সেপ্টেম্বর ১৯৬৪ সালে তাকে আবারো সুপ্রীম কোর্টের বায়ে আটক করা হয়।
 পরবর্তীতে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়। (তথ্য সূত্র: মাওলানা মওদূদী একটি জীবন একটি ইতিহাস, লেখক আব্বাস আলী খান)।

সফর:
  ১৯৫৬ সালে ইসলামী শাসনতন্ত্রের জন্যে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করেন এবং দুমাসব্যাপী তিনি পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) সফল। পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যাবলীর প্রতি আলোকপাত করেন ১৯৬০ সালের ডিসেম্বর মাসে বাদশা সউদের আমন্ত্রণে সউদী আরব গমন এবং মদীনা  শ্ববিদ্যালয়ের খসড়া পরিকল্পনা পেশ করেন ১৯৬২ মক্কা মুয়াযযমায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইসলামী সম্মেলনে যোগদান করেনরাবেতায়ে আলমে ইসলামী সংস্থার প্রতিষ্ঠা হলে তাকে প্রতিষ্ঠা কমিটির আজীবন সদস্য নির্বাচিত করা হয় ১৯৬৮ সালে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে লন্ডন ভ্রমণ। ইংল্যান্ডে বসবাসকারী মুসলমানদের পক্ষ থেকে হিল্টন হোটেল লন্ডনে আয়োজিত সম্বর্ধনা সভায় মাওলানার ভাষণ প্রদান করেন। ১৯৬৯ সালে মরক্কো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা সম্মেলনে যোগদান করেন
১৯৭১ সালে পাকিস্থা আলাদা হবে কিনা এ প্রশ্ন পাকিস্থানের তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের উপর ন্যাস্ত করেনএবং  সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের উপর ন্যাস্ত করেনপূর্ব পাকিস্তান, জামায়াত ইসলামির নেতারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে এবং পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পক্ষে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর সাথে হাত মেলায় এবং তাদের সহযোগী শক্তি হিসেবে বিভিন্ন নামে বাহিনী গঠন করে বাংলাদেশে মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে। যা আজ ঐতিহাসিকভাবে সত্য ও আদালত কর্তৃক প্রমানি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতাসীন হওয়ার পর বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল গঠন করে। এই ট্রাইবুনাল ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর সহযোগিদের বিচার শুরু করে, যার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজন প্রধান নেতাও ছিলেন। ট্রাইবুনাল জামায়েত নেতাদের অপরাধী সাব্যস্ত করে রায় দেনজামায়াতে ইসলামীর প্রধান পৃষ্ঠপোষক বর্ষীয়ান নেতা গোলাম আযম ও জামাতের নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসেন সাইদীকে তাঁদের বয়স ও শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনা করে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ প্রদান করা হলেও জামাতের আমির মতিউর রহমান নিজামিসহ বেশ কয়েক জন নেতার ফাসির রায় কার্যকর করা হয়।

গ্রন্থ সমুহ:
শেষ জীবন: ১৯৭৯ সালের ২১শে মে তারিখে, চিকিৎসার উদ্দেশ্যে আমেরিকা গমন। ৪ঠা সেপ্টেম্বর মূত্রাশয় অপারেশন হয় এবং ২২শে সেপ্টেম্বর তারিখে, পাকিস্তান সময় অনুযায়ী সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায় ইন্তিকাল। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজউন) শাইখ সাইয়েদ আবুল 'লা মওদুদী তার জীবদ্দশায় কুরআন মজীদ এর তাফসীর তাফহীমুল কুরআন সহকারে ইসলামী জীবন দর্শন, ইসলামী রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন, অর্থনীতি ও ব্যাংক ব্যবস্থা, দাম্পত্য জীবন এবং আরও অন্যান্য বিষয়ের বহু বই লিখেছেন। আল্লাহ তায়ালা ইসলামের এই মহান খাদেমকে বেহেস্তের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুক, আমীন।
 সূত্র উইকিপিডিয়া
বাংলা ভাষায় তার অনুদিত বইয়ের সংখ্যা ৯৮ টি। যা তালিকা আকারে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে কুরআন সম্পর্কে ৭ টি, ইসলামী জীবন দর্শন সম্পর্কে ২৯ টি, আইন,  রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা  সম্পর্কে  ১৩ টি, ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন সম্পর্কে ১৯ টি, অর্থনীতি ও ব্যাংক ব্যবস্থা সম্পর্কে ৮ টি, দাম্পত্য জীবন ও নারী সম্পর্কে ৪ টি, তাযকিয়ায়ে নফস সম্পর্কে ৪ টি, সীরাত সম্পর্কে ৫ টি এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে ৯ টি।
তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য কয়েকটি হল: তরজমায়ে কুরআন মজীদ (পৃষ্ঠা সংখ্যা -১২৪৮), তাফহীমুল কুরআন ১-১৯ খণ্ড (পৃষ্ঠা সংখ্যা -৪১৬৫), তাফহীমুল কুরআনের বিষয়সূচি পৃষ্ঠা সংখ্যা -৫৪০), কুরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা (পৃষ্ঠা সংখ্যা -১১৯), সুন্নাতে রাসূলের আইনগত মর্যাদা (পৃষ্ঠা সংখ্যা -৩৩৬), কুরআনের মহত্ত্ব ও মর্যাদা (পৃষ্ঠা সংখ্যা -১৩৩), ইসলামী পরিচিতি  (পৃষ্ঠা সংখ্যা -১১২), ইসলামী সংস্কৃতির মর্মকথা (পৃষ্ঠা সংখ্যা -২৭৯), নির্বাচিত রচনাবলী ১-৩ খণ্ড (পৃষ্ঠা সংখ্যা -১৩৪৪), আল জিহাদ  (পৃষ্ঠা সংখ্যা -৫৯২), ইসলাম ও পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্দ্ব (পৃষ্ঠা সংখ্যা -২২৮), ইসলামী জীবন ব্যবস্থার মৌলিক রূপরেখা (পৃষ্ঠা সংখ্যা -৩৮৪), ইসলামী রাষ্ট্র (পৃষ্ঠা সংখ্যা -৭০০), খেলাফত ও রাজতন্ত্র (পৃষ্ঠা সংখ্যা -২৯৪), উপমহাদেশের স্বাধীতা  আন্দোলন ও মুসলমান ১-২ খণ্ড (পৃষ্ঠা সংখ্যা -৮৭৭), দাক্ষিণাত্যের রাজনৈতিক ইতিহাস (পৃষ্ঠা সংখ্যা -২৮৬), ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন (পৃষ্ঠা সংখ্যা -১২২), আন্দোলন সংগঠন কর্মী (পৃষ্ঠা সংখ্যা -২২৪), ইসলামী অর্থনীতি (পৃষ্ঠা সংখ্যা - ৩২৮), সুদ ও আধুনিক ব্যাংকিং (পৃষ্ঠা সংখ্যা -৩০২), পর্দা ও ইসলাম (পৃষ্ঠা সংখ্যা -২৮০), স্বামী স্ত্রীর অধিকার (পৃষ্ঠা সংখ্যা - ১৫১), ইসলামী দৃষ্টিতে জন্মনিয়ন্ত্রণ  (পৃষ্ঠা সংখ্যা - ১৩১), ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষা (পৃষ্ঠা সংখ্যা - ২৭৪), সীরাতে সারওয়ারে আলম ১-৫ খণ্ড (পৃষ্ঠা সংখ্যা - ১২১৬), খতমে নবুয়্যত (পৃষ্ঠা সংখ্যা -৭৫), রাসায়েল ও মাসায়েল ১-৫ খণ্ড, যুব সমাজের মুখোমুখি মাওলানা মওদূদী (পৃষ্ঠা সংখ্যা -৪৫০), যুগ জিজ্ঞাসার জবাব ১-২ খণ্ড (পৃষ্ঠা সংখ্যা - ৪৪৮), বিকেলের আসর ১-২ খণ্ড (পৃষ্ঠা সংখ্যা -২৫০), পত্রাবলী ১-২ খণ্ড (পৃষ্ঠা সংখ্যা -৪৫৫), মাকাতীব মাওলানা মওদূদী (র.) ১-২ জিলদ ইত্যাদি। 

প্রভাব ও প্রতিপত্তি:
মাওলানা মওদুদীর প্রভাব ছিল ব্যাপক। ইতিহাসবেত্তা ফিলিপ জেনকিন্সের মতে মিসরের আল বান্না এবং সাইয়েত কুতুর তার বই পড়ে অনুপ্রাণিত হন। সাইয়িদ কুতব তার কাছ থেকে আদর্শ গ্রহণ করেন এবং এটি আরো সম্প্রসারিত করেন। তিনি একটি অগ্রগামী ইসলামী বিপ্লবী দল গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থী জুরিস্ট আবদুল্লাহ আযযামও তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। দক্ষিণ-এশীয় জনগন (বিরাট সংখ্যক ব্রিটেন প্রবাসী সহ) মাওলানা মওদুদীর দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছেন। এমনকি শিয়া অধ্যুষিত ইরানেও মওদুদীর বড় ধরণের প্রভাব আছে। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনী ১৯৬৩ সালে মাওলানা মওদুদীর সাথে সাক্ষাত করেন, পরবর্তীতে ইমাম খোমেনী মওদুদীর বইগুলো ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করেন। এখনো পর্যন্ত প্রায়ই ইরানের ইসলামী সরকার মাওলানা মওদুদীর কর্মপন্থা অনুসরন করে থাকে। ইমাম ইবনে তাইমিয়ার পর, তিনি (মওদুদী) দ্বিতীয় চিন্তাবিদ যিনি আধুনিক বিশ্বে ইসলামী রাজনৈতিক চিন্তাধারা কে প্রভাবিত করেছেন। ( তথ্য: উইকিপিডিয়া)।

শেষ জীবন: ১৯৭৯ সালের ২১শে মে তারিখে, চিকিৎসার উদ্দেশ্যে আমেরিকা গমন। ৪ঠা সেপ্টেম্বর মূত্রাশয় অপারেশন হয় এবং ২২শে সেপ্টেম্বর তারিখে, পাকিস্তান সময় অনুযায়ী সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায় ইন্তিকাল। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজউন) শাইখ সাইয়েদ আবুল 'লা মওদুদী তার জীবদ্দশায় কুরআন মজীদ এর তাফসীর তাফহীমুল কুরআন সহকারে ইসলামী জীবন দর্শন, ইসলামী রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন, অর্থনীতি ও ব্যাংক ব্যবস্থা, দাম্পত্য জীবন এবং আরও অন্যান্য বিষয়ের বহু বই লিখেছেন। আল্লাহ তায়ালা ইসলামের এই মহান খাদেমকে বেহেস্তের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুক, আমীন।
 সূত্র উইকিপিডিয়া

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী,
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ  ইসলামী আদর্শ অনুযায়ী পরিচালিত রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করার নীতিতে বিশ্বাসী একটি রাজনৈতিক দল। পূর্বে সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদীর জীবনি থেকে জানতে পেরেছি, অবিভক্ত ভারতে ইসলামী আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে মওলানা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদীর নেতৃত্বে একটি পৃথক রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। মাসিক পত্রিকা “তারজুমান কোরআন” এর মাধ্যমে ১৯৩২ সাল থেকেই এ লক্ষ্যে প্রচারকার্য শুরু হয়। ১৯৪০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার পথ’ শীর্ষক এক বক্তৃতায় মওলানা মওদুদী মুসলিম লীগের সঙ্গে তাঁর মতপার্থক্যের কথা প্রকাশ করেন। ১৯৪১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নতুন রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠানের কথা ঘোষণা করা হয়তদনুসারে ওই  বছর  ২৬ আগস্ট লাহোরের ইসলামীয়া পার্কে সামাজিক-রাজনৈতিক ইসলামী আন্দোলনের অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামী হিন্দ নামে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। মওলানা মওদুদী এ দলের আমীর নির্বাচিত হন।
লক্ষ ও উদ্দেশ্য:
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ-এর গঠনতন্ত্র অনুসারে, কোরানে বর্নিত আল্লাহর আইন অনুসারে সমগ্র রাষ্ট্রে পরিপূর্ণ ইসলামী শাসনতন্ত্র কায়েম করা। ইসলামকে বিভক্তির হাত থেকে রক্ষা করে সমগ্র রাষ্ট্রে সম্পূর্ণরূপে কায়েম করিবার জন্য চেষ্টা ও সাধনা করা এবং আল্লাহর নির্দেশিত অবশ্য পালনীয় কর্তব্যসমূহ যেমন নামাজ, রোজা, হজ্জ ও যাকাত ইত্যাদি পালনে নাগরিকদের সচেতন করা। এসবের মাধ্যমে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সর্বপ্রকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক হুমকি এবং বিশৃংখলা হইতে রক্ষা করিবার চেষ্টা করা। দায়িত্বশীল নাগরিক এবং চরিত্রবান ও যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে শোষনহীন সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করে জনসাধারণের সামগ্রিক কল্যাণ সাধন করা এবং বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সংগে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা।
তবে ২০১২ সালের অক্টোবরে গঠনতন্ত্রে আনীত সংশোধন অনুযায়ী এই দলটি ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা উল্ল্যেখ করে। (সূত্র:উইকিপিডিয়া)
সংগঠনের মৌলিক বিশ্বাস:
এই সংগঠনের সকল কার্যাবলীর প্রেরণা হল আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে, তাকে একমাত্র উপাস্য, কল্যাণকারী, আশ্রয়দাতা, সাহায্যকারী, রক্ষাকর্তা মেনে নেয়া এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কোরআনের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রে ইসলামের অনুশাসন প্রতিষ্ঠা করা তথা শারিয়া আইন প্রবর্তন করা।
তবে ২০১২ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তাদের গঠনতন্ত্রে ব্যাপক সংশোধন আনে। নতুন সংশোধনীর মাধ্যমে দলটি গঠনতন্ত্র থেকে আল্লাহ প্রদত্ত ও রসুল প্রদর্শিত ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার কথা বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা উল্ল্যেখ করে। (সূত্র: উইকিপিডিয়া)

ইতিহাসের আলোকে জামায়েতে ইসলামি:
ব্রিটিশ ভারত আমলে জামাতের অবস্থা : সময় কাল ১৯৪১-১৯৪৭ সাল
জামায়াতে ইসলামী হিন্দ প্রতিষ্ঠা পর যুদ্ধাবস্থার কারণে প্রায় চার বছর জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয় নি। তবে যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই ১৯৪৫ সালের ১৯-২১ এপ্রিল পাঞ্জাবের পাঠানকোটে দলের প্রথম নিখিল ভারত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৭  সালে ভারত বিভক্তির পর জামায়াতে ইসলামী দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। জামায়াতে ইসলামী হিন্দ দিল্লিতে এবং জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান লাহোরে দলের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করে। নিখিল পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত হন দলের প্রতিষ্ঠাতা আমীর মওলানা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী। (সূত্র:উইকিপিডিয়া)
ভারতের শ্রেষ্ঠতম ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র দেওবন্দের হাদীস শাস্ত্রের অধ্যক্ষ হযরত মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী (রহ:) একদা লাহোর জামে মসজিদে কোরআন হাদীস উদ্ধৃত করে ভারতের হিন্দু-মুদলমান, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-জৈন নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে এক ভৌগলিক জাতি প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন। তাঁর বক্তৃতা পুস্তিকাকারেও প্রকাশিত হলো। সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী (রহ:) হুসাইন আহমদ মাদানী (রহ:) এর উক্তির প্রত্যুত্তরে যে বিপ্লবী গ্রন্থ রচনা করেন যার উর্দূ নাম হল:মাসয়ালায়ে কওমিয়ত যার বাংলা অনুবাদের নাম হল: ইসলাম ও জাতীয়তাবাদএ থেকে প্রমানিত হয় তিনি ভারতের মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান সৃষ্টির পক্ষে ছিলেন। ভারত ও পাকিস্তান বিভক্তির পর মওদুদী ভারত থেকে পাকিস্তান চলে যান। (তথ্য সূত্র: মাওলানা মওদূদী একটি জীবন একটি ইতিহাস, লেখক আব্বাস আলী খান)।

পাকিস্তান সময়কালে জামায়েতের অবস্থা : সময় কাল ১৯৪৮-১৯৭১
পাকিস্তান সৃাষ্টির পর জামায়াতে ইসলামী মূলত ভারত ও পাকিস্তান দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে যায়। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের শাখা থেকে সৃষ্টি হয়। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান প্রণিত মুসলিম পরিবার আইন অধ্যাদেশের বিরোধিতা করার কারণে ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর কর্মকান্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মওদুদী সহ ৬০ জন জামায়াত নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ১৩ জন জামায়াত নেতা ছিলেন। অধ্যাপক গোলাম আযম তাদের একজন। ঐ বছর অক্টোবরেই আবার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। জামায়াতে ইসলামী, জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক আইন ঘোষণার সময় পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে এবং ১৯৬৫ সালে সর্বদলীয় গণতান্ত্রিক জোট গঠিত হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ প্রদত্ত ছয় দফা এবং মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ঘোষিত ১১ দফার তারা তীব্র বিরোধিতা করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী পশ্চিম পাকিস্তানে ৪ টি আসন লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ডাঃ আব্দুল মালিক কে গভর্নর করে ১৭ই সেপ্টেম্বার একটি প্রাদেশিক সরকার গঠন করা হয়। সে সরকারের মন্ত্রী সভায় পরবর্তীকালে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খান ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।(সূত্র:উইকিপিডিয়া)

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সময় কালের আবস্থা : সময় কাল ১৯৭১
১৯৭১ সালে পাকিস্থা আলাদা হবে কিনা এ প্রশ্ন পাকিস্থানের তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের উপর ন্যাস্ত করেনএবং  সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের উপর ন্যাস্ত করেনপূর্ব পাকিস্তান, জামায়াত ইসলামির নেতারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে এবং পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পক্ষে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর সাথে হাত মেলায় এবং তাদের সহযোগী শক্তি হিসেবে বিভিন্ন নামে বাহিনী গঠন করে বাংলাদেশে মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে। যা আজ ঐতিহাসিকভাবে সত্য ও আদালত কর্তৃক প্রমানি।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতাসীন হওয়ার পর বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল গঠন করে। এই ট্রাইবুনাল ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর সহযোগিদের বিচার শুরু করে, যার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজন প্রধান নেতাও ছিলেন। ট্রাইবুনাল জামায়েত নেতাদের অপরাধী সাব্যস্ত করে রায় দেনজামায়াতে ইসলামীর প্রধান পৃষ্ঠ পোষক বর্ষীয়ান নেতা গোলাম আযম ও জামাতের নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসেন সাইদীকে তাঁদের বয়স ও শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনা করে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ প্রদান করা হলেও জামাতের আমির মতিউর রহমান নিজামিসহ বেশ কয়েক জন নেতার ফাসির রায় কার্যকর করা হয়। (সূত্র:উইকিপিডিয়া)

বর্তমানে জামায়াতের অরস্থা : সময় কাল ১৯৭১-২০১৬
বর্তমানে দলটির নাম: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, যার পূর্বনাম ছিলো জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী রাজনৈতিক দল। ১৯৭১ সালের পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে জামায়াত ও এর আওতায় পড়ে। তাই স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর সব রকমের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব হত্যাকান্ডের পর এবং কয়েকটি সামরিক অভ্যুত্থান হয়। এবং ১৯৭৬ সালের আগস্টে জিয়াউর রহমান সরকার সকল ধরণের রাজনৈতিক দলের রাজনীতি উন্মুক্ত করে রাজনৈতিক দল অধ্যাদেশ ঘোষণা করেন। এ সময় ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি নামক একটি দলের সাথে জামায়াতে ইসলামী যুক্ত ছিল। ১৯৭৭ সালে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে জামায়াতের উপর থেকে নিষেদ্ধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। দলটির নেতাকর্মীরা ফিরে আসার অনুমতি পান এবং ১৯৭৯ সালের মে মাসে তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা আব্বাস আলী খান এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংগঠনের উদ্দেশ্য হলো শরীয়া ভিত্তিক একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যা পাকিস্তান ও সৌদি আরবের দেশসমূহে লক্ষ্য করা যায়।
১৯৮০-এর দশকে জামায়াত গণতন্ত্রের পুনুরুদ্ধারের জন্য বহুদলীয় জোটে যোগদান করে। এসময় দলটি আওয়ামী লীগ ও সমসাময়িক বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে পরবর্তীতে দলটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য আন্দোলন করে।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে এটি ৩০০ আসনের মধ্যে ১৮ টি আসন লাভ করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে গঠিত চার দলীয় ঐক্যজোটের অন্যতম শরিক হিসেবে সরকার গঠনে ভূমিকা পালন করে। এরপর ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে এটি ৩০০ আসনের মধ্যে ২ টি আসন লাভ করে। (সূত্র:উইকিপিডিয়া)
নিবন্ধনের বাতিল:
কয়েকটি ইসলামী সংগঠনের ২৫ জন সদস্য, জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করলে ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের হাই কোর্ট একটি রুল জারি করে। জামায়াতে নেতাদের এবং  নির্বাচন কমিশন সচিবকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলে আদালতের বেঞ্চ। পরবর্তিতে ১লা আগস্ট ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট রুলের রায় ঘোষনা করে এতে সংগঠনের নিবন্ধন অবৈধ এবং সংগঠনটিকে নির্বাচনে অংশগ্রহনের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। (সূত্র:উইকিপিডিয়া)
এই ছিল জামায়েতে ইসলামির প্রতিষ্ঠাতা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদীর জীবনি এবং জামায়েতে ইসলামির পথ চলার সংক্ষিপ্তি ইতিহাস। এখন জামায়েতে ইসলামির আকিদা, বিশ্বাস ও কর্ম পদ্দতি সম্পর্কে আমাদের বুঝতে খুবই সহজ হবে, ইনশা আল্লাহ।
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন

Post a Comment

0 Comments