▌বিদ’আত কি?
▌বিদাতের কুফল
কি?
▌এবং এর
পরিনতি কি? (২য় পর্ব)
▬▬▬▬▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬▬▬▬▬
সংকলক মুহাম্মাদ শাহীনুর রহমান
রহমান রহীম আল্লাহ্ তায়ালার নামে-
.
.
♦বিদাতের কুফল
এবং পরিনতিঃ
___________________________
.
❏ ❏ বিদআত
মানুষকে পথভ্রষ্ট করে –
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম যা উম্মতের জন্য নিয়ে এসেছেন তা হল হক। এ
ছাড়া যা কিছু ধর্মীয় আচার হিসাবে পালিত হবে তা পথভ্রষ্টতা।
.
◾আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন –
হক আসার পর বিভ্রান্তি ব্যতীত আর কি থাকে ? (সূরা ইউনুস: ৩২)
.
❏ রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন –
সকল ধরনের বিদআত পথভ্রষ্টতা। (মুসলিম: ১৮৭৮)
.
❏ ❏ বিদআত
আল্লাহর দ্বীনকে বিকৃত করে-
এর জ্বলন্ত
উদাহরণ আজকের খৃষ্টান ধর্ম। তারা ধর্মে বিদআতের প্রচলন করতে করতে তার মূল
কাঠামো পরিবর্তন করে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে পথভ্রষ্ট হিসাবে অভিহিত
হয়েছে। তাদের বিদআত প্রচলনের কথা আল-কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে –
◾আর সন্ন্যাসবাদ! এটাতো তারা
নিজেরাই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় প্রচলন করেছিল। আমি তাদের এ বিধান দেইনি।
(সূরা হাদীদ: ২৭)
.
সন্ন্যাসবাদ তথা বৈরাগ্যবাদের বিদআত
খৃষ্টানেরা তাদের ধর্মে প্রবর্তন করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ভাল
ছিল; উদ্দেশ্য ছিল
আল্লাহর সন্তুষ্টি। কিন্তু ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে নিজেদের ইচ্ছামত যে কোন
কাজ করলেই তা গ্রহণযোগ্য হয় না। এ জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুমোদন প্রয়োজন। এভাবে যারা
ধর্মে বিদআতের প্রচলন করে তাদের অনেকেরই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভাল থাকে। কিন্তু
তাতে নাজাত পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। ইয়াহুদী ও খৃষ্টানেরা তাদের ধর্মে
অন্য জাতির রসম-রেওয়াজ ও বিদআত প্রচলন করে ধর্মকে এমন বিকৃত করেছে যে, তাদের নবীগণ
যদি আবার পৃথিবীতে ফিরে আসেন তাহলে তাদের রেখে যাওয়া ধর্ম
তাঁরা নিজেরাই চিনতে পারবেন না।
.
এমনিভাবে আমাদের
মুসলিম সমাজে শিয়া সম্প্রদায় বিদআতের প্রচলন করে দ্বীন ইসলামকে কিভাবে বিকৃত
করেছে তা নতুন করে বর্ণনা করার প্রয়োজন নেই।
.
❏ ❏ বিদআত
ইসলামের উপর একটি আঘাত:
যে ইসলামে কোন
বিদআতের প্রচলন করল সে মূলতঃ অজ্ঞ লোকদের মত এ কথা স্বীকার করে নিল যে, ইসলাম
পরিপূর্ণ জীবন বিধান নয়, তাতে
সংযোজনের প্রয়োজন আছে। যদিও সে মুখে এ ধরনের বক্তব্য দেয়
না, কিন্তু তার
কাজ এ কথার স্বাক্ষী দেয়। অথচ
◾আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। (সূরা মায়িদা, আয়াত : ৩)
.
❏ ❏ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে খিয়ানাতের অভিযোগ:
যে ব্যক্তি কোন
বিদআতের প্রচলন করল বা আমল করল আপনি তাকে জিজ্ঞেস করুন ‘এ কথা বা কাজটি যে
ইসলাম ধর্মে পছন্দের বিষয় এটা কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম জানতেন?’ তিনি উত্তরে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ বলবেন। যদি ‘না’ বলেন, তাহলে তিনি
স্বীকার করে নিলেন যে, ইসলাম
সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কম জানতেন। আর যদি ‘হ্যাঁ’ বলেন, তাহলে তিনি স্বীকার
করে নিলেন যে, আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়টি জানতেন, কিন্তু
উম্মাতের মধ্যে প্রচার করেননি। এ অবস্থায় তিনি তাবলীগে শিথিলতা করেছেন।
খিয়ানত করেছেন আমানতের ব্যাপারে। (নাউযুবিল্লাহ!)
.
❏ ❏ বিদআত মুসলিম
উম্মাহকে বিভক্ত করে
বিদআত মুসলিম উম্মাহর মধ্যে শত্রুতা ও
বিবাদ-বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে তাদের মারামারি হানাহানিতে লিপ্ত করে। উদাহরণ
হিসাবে বলা যায় যে, একদল লোক
মীলাদুন্নবী পালন করল।
আরেক দল বিদআত হওয়ায় তা বর্জন ও বিরোধিতা করল। যারা এটা পালন করল তারা
প্রচার করতে লাগল যে, অমুক দল
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিনে
আনন্দিত হওয়া পছন্দ করে না। তাঁর গুণ-গান করা তাদের কাছে
ভাল লাগে না। তাদের অন্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
মুহাব্বত নেই। যাদের অন্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
মুহাব্বত নেই তারা বেঈমান। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
দুশমন। আর এ ধরনের প্রচারনায় তারা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে একে অপরের দুশমনে
পরিণত হয়ে হানাহানিতে লিপ্ত হয়ে পড়ল। এভাবে ইসলামের প্রাথমিক যুগ
থেকেই বিদআতকে গ্রহণ ও বর্জনের প্রশ্নে মুসলিম উম্মাহ শিয়া ও সুন্নী এবং
পরবর্তী কালে আরো শত দলে বিভক্ত হয়ে গেল। কত প্রাণহানির ঘটনা ঘটল, রক্তপাত হল।
.
তাই মুসলিম উম্মাহকে আবার একত্র করতে হলে
সকলকে কুরআন ও সুন্নাহর দিকে আহ্বান ও বিদআত বর্জনের জন্য অহিংস ও শান্তিপূর্ণ
পন্থায় পরম ধৈর্যের সাথে আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলন করতে হবে সকল মানুষ ও
মানবতার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা প্রদর্শন করে। কারো অনুভূতিতে
আঘাত লাগে এমন আচরণ করা যাবে না। এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, যা হক ও সত্য তা-ই
শুধু টিকে থাকবে। আর যা বাতিল তা দেরীতে হলেও বিলুপ্ত হবে।
.
❏ ❏ বিদআত ‘আমলকারীর তাওবা
করার সুযোগ হয় নাঃ
বিদআত যিনি প্রচলন করেন বা সেই
অনুযায়ী আমল করেন তিনি এটাকে এক মহৎ কাজ বলে মনে করেন। তিনি
মনে করেন এ কাজে আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হবেন। যেমন আল্লাহ খৃষ্টানদের
সম্পর্কে বলেছেন তারা ধর্মে বৈরাগ্যবাদের বিদআত চালু করেছিল আল্লাহর
সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে। যেহেতু বিদআতে লিপ্ত ব্যক্তি বিদআতকে পাপের কাজ
মনে করেন না, তাই তিনি এ
কাজ থেকে তাওবা করার প্রয়োজন মনে করেন না এবং তাওবা করার সুযোগও হয়
না। অন্যান্য পাপের বেলায় কমপক্ষে যিনি পাপে লিপ্ত হন তিনি এটাকে
অন্যায় মনে করেই করেন। পরবর্তীতে তার অনুশোচনা আসে, এক সময়
তাওবা করে আল্লাহ তাআলার ক্ষমা লাভ করেন। কিন্তু বিদআতে লিপ্ত ব্যক্তির এ
অবস্থা কখনো হয় না।
.
❏ ❏ শাফাআত হতে
বঞ্চিত –
❏ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
শুনে রাখ! হাউজে কাউছারের কাছে
তোমাদের সাথে আমার দেখা হবে। তোমাদের সংখ্যার আধিক্য নিয়ে
আমি গর্ব করব। সেই দিন তোমরা আমার চেহারা মলিন করে দিওনা। জেনে রেখ!
আমি সেদিন অনেক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করার চেষ্টা চালাব। কিন্তু তাদের
অনেককে আমার থেকে দূরে সরিয়ে নেয়া হবে। আমি বলব – হে আমার প্রতিপালক!
তারা তো আমার প্রিয় সাথী-সংগী, আমার অনুসারী। (কেন তাদের দূরে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে ?) তিনি উত্তর
দেবেন, আপনি জানেন
না, আপনার চলে
আসার পর তারা ধর্মের
মধ্যে কি কি নতুন বিষয় আবিষ্কার করেছে। (মুসলিম : ৫৮৭২)
.
❏ অন্য এক বর্ণনায় আছে এর পর
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই তাদের উদ্দেশে
বলবেন – দূর হও! দূর
হও!! (মুসলিম: ৫৮৬৮)
.
❏ ❏ বিদআত মুসলিম
সমাজে কুরআন ও হাদীসের গুরুত্ব কমিয়ে দেয়-
বিদআত প্রচলনকারী অহংকারের দোষে দুষ্ট হয়ে পড়ে ও নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে
দ্বীনকে ব্যবহার ও বিকৃত করতে চেষ্টা করে
.
তাই প্রিয় পাঠকবৃন্দ, সব কাজে সকল
ক্ষেত্রে আমাদের একমাত্র অবলম্বন হতে হবে আল কুরআন ও রাসূলের সুন্নাহ।
তাতেই মুক্তি এবং তাতেই প্রশান্তি। তাই সর্বতোভাবে বিদআত থেকে সতর্ক
থাকতে হবে। পরিত্যাগ করতে হবে কুরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী সকল
আচার-প্রচলন। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফীক দান কর।
.
.
►আল্লাহ তাআলা
আমাদেরকে বিদাত চিনে তা বর্জন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
.
.
✪✪ আসুন নিজে জানি, জেনে সচেতন
হই এবং অন্যকে সচেতন করি।।
.
.
___________________________________________________________________________________________
রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
"কেউ হেদায়েতের
দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের
অধিকারী সে হবে, তবে যারা
অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [তিরমিযীঃ২৬৭৪]
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
0 Comments
Thanks for your comment