সর্বশেষ

2/recent/ticker-posts

মেরুর বাসিন্দারা কিভাবে রোজা রাখবে?

#Campúsian-18
#MSRM-1
মেরুর বাসিন্দারা কিভাবে রোজা রাখবে?
কুরআন বলে যে একজন মুসলিমকে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা পালন করতে হবে (Quran 2:187)! আবার প্রার্থনার ব্যাপারটাও সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সাথে সম্পর্কিত (Quran 17:78)! কিন্তু সমগ্র মানুষের এই জীবন বিধানে Eskimo-দের ব্যাপারে কোন নির্দেশনা নেই!
মেরুর বাসিন্দারা নামায পড়বে কিভাবে যেহেতু সেখানে ৬ মাস পর পর দিন-রাতের পরিবর্তন হয়?
#Qn: মুসলিমরা রোযা রাখে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত, অথচ মেরুতে ৬ মাস পর পর দিন-রাত্রির পরিবর্তন হয়। তাই মেরুতে রোযা রাখতে গেলে তো মুসলিমরা না খেয়েই মারা যাবে!
#Ans: গোটা পৃথিবীতে মানুষ আছে প্রায় ৭৫০ কোটি।[১] সেখানে উত্তর আর দক্ষিণ মেরু মিলিয়ে মানুষের সংখ্যা কত? সংখ্যাটা পাঁচ অঙ্ক পার হয় না। উত্তর মেরুতে প্রকৃত পক্ষে কোন মানুষই বাস করে না। না, ভাই! Eskimo বা Inuit-রা উত্তর মেরুতে না, উত্তর মেরুর কাছাকাছি বাস করে।[২] আর দক্ষিণ মেরুতেও কোন স্থায়ী বাসিন্দা নেই। এখানে দুই ধরণের মানুষ আসে- বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে এবং টুরিস্ট। গ্রীষ্মকালে জনসংখ্যা থাকে ৪০০০, শীতকালে যেটা এসে দাঁড়ায় মাত্র ১০০০-এ।[৩] এখন আপনার কি মনে হয় এত বিশাল জনসংখ্যার হিসেবে তাদের কথা আলাদাভাবে বলা কি খুব গুরুত্বপূর্ণ? এবার দাজ্জাল সংক্রান্ত একটা বড় হাদিসের সামান্য অংশ উল্লেখ করছি।
“… আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহ্‌র রাসূল! যে দিনটি এক বছরের সমান হবে তাতে একদিনের নামায পড়লেই কি তা আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে?’ তিনি বললেন, ‘তোমরা সে দিনের সঠিক অনুমান করে নিবে এবং তদনুযায়ী নামায পড়বে (দিন রাতের ২৪ ঘণ্টা হিসেবে)।’”[৪]
ইসলামি স্কলারগণ এই হাদিসের উপর ভিত্তি দুইটি ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। প্রথমত, নামাজের ব্যাপারে- এখানে স্পষ্টভাবেই নির্দেশ দেয়া আছে মেরুতে কিভাবে নামায পড়তে হবে। দ্বিতীয়ত, রোজার ব্যাপারে- যেহেতু, নামাযের মতো রোযাও সূর্য উদয়-অস্তের সাথে সম্পর্কিত, তাই এই হাদিসে নিশ্চিতভাবেই আমাদের জন্য পথনির্দেশ রয়েছে।
যদি কোন মুসলিম মেরুতে থাকা অবস্থায় রমযান পায়, তাহলে সে নিকটবর্তী কোন দেশ, যে দেশে দিন এবং রাতের পার্থক্য করা যায়- সেই দেশের সময়সূচী অনুসরণ করে রোযা রাখবে। একইকথা, নামাযের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।[৫][৬]
তাই মুসলিমরা মেরুতে রোযা রাখতে পারবে না, এই কুযুক্তি ধোপে টিকলো না।
#Qn:এখানে তারা নরওয়ে, আলাস্কা এবং আইসল্যান্ডের রোযার সময়কাল হিসাব করে দেখিয়েছে যে সেখানে একজন মুসলিমকে প্রায় সারাদিনই রোযা রাখতে হয়!
#Ans: ২০১৭ সালে সবচেয়ে দীর্ঘ রোযার সময়কাল হল ২১ ঘণ্টা, গ্রিনল্যান্ড এবং আইসল্যান্ডে।[৭] অস্বীকার করছি না যে, এত লম্বা সময় ধরে রোযা রাখা আসলেই কষ্টসাধ্য ব্যাপার, কিন্তু অসম্ভব না। ফিনল্যান্ডের এক মুসলিমের সাক্ষাৎকার দেখুন- তারা কিন্তু ভালোভাবেই পালন করে আসছে।[৮]
সাওমের মূল উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন। আল্লাহর কথা মনে রেখে নিজেকে অন্যায় থেকে দূরে রাখা। আল্লাহ্‌ বলেছেন-
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের প্রতি ফরয করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো।”[৯]
তাই কে কত ঘণ্টা রোযা রাখলো, সেটা মুখ্য বিষয় না। যে বেশি সময় ধরে সাওম পালন করছে আল্লাহ্ তার তাকওয়া দেখবেন। এটা তার জন্য একটা পরীক্ষা। আর কারও পক্ষে যদি এত দীর্ঘ সময়ব্যাপী রমযান মাসে সাওম পালন করা কষ্টকর হয়, তাহলে সে অন্য সময় কাযা আদায় করে নিবে। এই ‘অন্য সময়’ হতে পারে বছরের সবথেকে ছোট দিনগুলো- তাতেও কোন সমস্যা নেই।[১০] আল্লাহ্ তো সে ঘোষণাও কুরআনেই দিয়ে দেখেছেন- “রোজা নির্দিষ্ট কিছু দিন। তাই তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ থাকে, বা সফরে থাকে, তাহলে পরে একই সংখ্যক দিন পূরণ করবে। আর যাদের জন্য রোজা রাখা ভীষণ কষ্টের, তাদের জন্য উপায় রয়েছে — তারা একই সংখ্যক দিন একজন গরিব মানুষকে খাওয়াবে। আর যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাড়তি ভালো কাজ করে, সেটা তার জন্যই কল্যাণ হবে। রোজা রাখাটাই তোমাদের জন্যই ভালো, যদি তোমরা জানতে।”[১১]
“…আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজটাই চান, তিনি তোমাদের জন্য কঠিনটা চান না।…”[১২]
#Qn: তারপরেও প্রশ্ন থেকে যায়। কেন একজনকে অন্য দেশের সময়সূচী অনুসরণ করতে হবে? এটা তো কোন যৌক্তিক সমাধান হতে পারে না!
#Ans: এবার আমাদের নাস্তিক-মিশনারি বন্ধুগণদের কাছে ইসলামী সমস্যার সমাধানের জন্য দ্বারস্থ হতে হবে!! যে সমাধান আমাদের রাসূল (সা)-এর হাদিসের আলোকে করা হয়েছে সেখানে তাদের আপত্তি! আচ্ছা ভাই, একটা দেশ কি সবকিছুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ? তার যে সমস্ত জিনিসের ঘাটতি আছে, সে অন্য দেশ থেকে সেটা আমদানি করে পুষায়। একইভাবে মেরু অঞ্চলে সময়ের কিছুটা অসুবিধা, তাই নিকটস্থ দেশের সাথে সামঞ্জস্য করে নেয়া।
মেরুর বাসিন্দাদের ব্যাপারে নির্দেশনা না দেয়া থেকে কুরআন পৃথিবীকে সমতল বলছে এই সিদ্ধান্তটা নিতান্তই হাস্যকর। আমি যদি কোনো বক্তৃতায় বলি, ‘আমরা তো সবাই কথা বলতে পারি, নাকি?’ কথাটা কিন্তু ভুল হবে না। কারণ কথাটা generalized-ভাবে বলা এবং অধিকাংশ মানুষই কথা বলতে পারে সেই প্রেক্ষিতে উল্লেখ করা। একইভাবে আল্লাহ্‌ শুধু সাওম পালনের কিছু নীতিমালার কথা বলেছেন, কোনো জটিলতা করেন নি।
কুরআন যে পৃথিবীকে সমতল বলছে না এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পরবর্তী পর্বের জন্যে অপেক্ষা করুন।।।
পরিশেষে কিছু মাসআলার সমাধান দিয়ে ইতি টানছি:
মেরু অঞ্চলের দেশসমূহ- যাতে বছরের বিভিন্ন সময়ে ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত দিন থাকে। ফ্রান্স, নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ডসহ বেশকিছু দেশে বছরের কোনো কোনো সময়ে ইফতারের সময় হওয়ার কিছুক্ষণ পরে এশার সময় আসার পূর্বেই পুনরায় ফজরের সময় হয়ে যায়। এ জন্য ওই সব দেশসমূহের নামাজ রোজার বিধান নিয়ে আলেমরা গবেষণা ও পর্যালোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন:
#Responsible: অনেক আলেম এসব এলাকার মানুষদের ওপর ওই ওয়াক্তের নামাজ রোজার বিধান নেই বলে উল্লেখ করেছেন, কিন্তু অধিকাংশ ফকিহ ও আলেম এসব এলাকার মুসলমানদের নামাজ রোজার সব বিধান বলবৎ থাকার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তবে তা আদায়ের নিয়মের মধ্যে কিছু ব্যাখ্যা রয়েছে।[১৩]
#Responsible: যারা ওই সব এলাকায়ও নামাজ রোজার বিধান বলবৎ থাকার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সে সব আলেম তাদের সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে একটি হাদিস উল্লেখ করেছেন। তা হচ্ছে, হজরত নাউয়াস ইবনে সামআন (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, একদা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) দাজ্জালের আবির্ভাব ও সে সময়ের ফেতনাসংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করছিলেন। বর্ণনার একপর্যায়ে সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! দাজ্জাল পৃথিবীতে কতদিন অবস্থান করবে? হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, চল্লিশ দিন অবস্থান করবে, এর প্রথম দিন এক বছর সমপরিমাণ, দ্বিতীয় দিন এক মাস সমপরিমাণ এবং তৃতীয় দিন এক সপ্তাহ সমপরিমাণ, আর বাকী দিনগুলো সাধারণ দিনসমূহের ন্যায়। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এক বছর সমপরিমাণ দিনে কি আমাদের এক রাত-দিনের পরিমাণ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লেই কি যথেষ্ট হবে? হরজত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, না, বরং তা সময় হিসাব করে পূর্ণ এক বছরের নামাজই আদায় করতে হবে।[১৪]
#Responsible: যদি এমন হয় যে, দিন বড় হলেও সাহরি ইফতারি ও সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত অল্প সময়ের জন্য হলেও নিয়মমাফিক হয়ে থাকে তাহলে এর বিধান সাধারণ এলাকাসমূহের ন্যায়ই হবে। হ্যাঁ, যদি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উক্ত নিয়মমাফিক হয়েও দিন অস্বাভাবিক বড় হয়ে যাওয়ার করণে রোজা রাখতে কঠিন সমস্যা হয় তাহলে শরিয়তে তাদেরকে রোজা ভেঙ্গে পরবর্তি স্বাভাবিক দিনে সেগুলো কাজা করে নেওয়ার সুযাগ দেয়।[১৫]
#Responsible: যদি লাগাতার কয়েকদিন সূর্য অস্ত না যায় তাহলে ২৪ ঘন্টা করে সময় ভাগ করে প্রথম ১২ ঘন্টাকে রাত ধরে দ্বিতীয় ১২ ঘন্টা শুরু হওয়ার দেড় ঘন্টা পূর্বে সাহরি খেয়ে শেষ করে রোজার নিয়ত করে রোজা আরম্ভ করে দিবে। দ্বিতীয় ১২ ঘন্টা শেষ হলে ইফতার করে মাগরিব এশা তারাবিহ নামাজ সব পড়ে নিবে।[১৬]
#Responsible: আর যদি ২৪ ঘন্টায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হলেও নিয়মমাফিক না হয়, বরং সূর্যাস্তের পর ইফতার ও সাহরির সময় না পেতেই ফজরের সময় ও সূর্যোদয় হয়ে যায় তাহলে উলামায়ে কেরাম তাদের নামাজ-রোজা আদায়ের দু’টি পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন-
এক. সে সব এলাকার লোকেরা প্রতি চব্বিশ ঘন্টা সময় হিসেব করে তা ভাগ করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে, চাই পূর্ণ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় পাওয়া যাক বা না যাক। রোজার ক্ষেত্রে তারা সেখানে ২৪ ঘন্টা পূর্ণ হওয়ার এতটুকু সময় পূর্বে ইফতার করে নিবে যেটুকু সময় জরুরত পরিমাণ খানা-পিনা করতে পারবে। এরপর তারা রোজার নিয়ত করে খানা-পিনা বন্ধ করে দিবে। তবে এক্ষেত্রেও এভাবে তাদের রোজা আদায় কঠিন ও কষ্টকর হলে ওই সময় না রেখে পরবর্তিতে কাজা করে নিতে পারবে। এ জন্য রোজা কাজা হলে গুনাহ হবে না। আর মাগরিব এশা ও বিতির নামাজ যথাক্রমে পড়ে নিবে। তারবির সময় না পাওয়া যাওয়ায় তা না পড়লেও চলবে।[১৭]
দুই. তারা ওই দেশের পার্শ্ববর্তী নিকটতম দেশ যেখানে নিয়মিত সূর্য উদয়-অস্ত হয়, সেখানের নামাজ-রোজার সময় অনুযায়ী নিজ দেশে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং প্রতিদিনের রোজা আদায় করবে।[১৮]
অতএব, মেরু অঞ্চলে মুসলিমদের সালাত এবং সাওম পালনের সময়সূচী নিয়ে কোন প্রকার বিভ্রান্তি নেই। আল্লাহ্‌ আমাদের সকলকে সঠিক পথে থাকার তাওফিক দান করুক।
তথ্যসূত্র:
[১] http://www.worldometers.info/world-population/
[২]https://www.nationalgeographic.org/encyclopedia/north-pole/
[৩]http://www.coolantarctica.com/…/can_you_live_in_antarctica.…
[৪] জামে’ তিরমিজি ২২৪০, সুনানে ইবেন মাজাহ ৪০৭৫, হাদিসে কুদসি ১৬২
[৫] https://islamqa.info/en/5842
[৬] https://islamqa.info/en/106527
[৭]https://www.y-oman.com/…/fyi-top-5-longest-ramadan-fasting…/
[৮]http://www.independent.co.uk/…/ramadan-2017-how-muslims-fas…
[৯] সূরা আল-বাকারাহ ২: ১৮৩
[১০] ফাসিঃ মুসনিদ ৮১পৃঃ
[১১] সূরা আল-বাকারাহ ২: ১৮৪
[১২] সূরা আল-বাকারাহ ২: ১৮৫
[১৩] -হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাল মারাকি: পৃঃ ১৭৮, রদ্দুল মুহতার: ১/৩৬২
[১৪] -সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৯৩৭, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪৩২১
[১৫] -রদ্দুল মুহতার: ১/৩৩৯, ফাতাওয়ায়ে হক্কানিয়া: ৪/১৪৫
[১৬] -রদ্দুল মুহতার: ১/৩৩৯, ফাতাওয়ায়ে ফরিদিয়া: ৪/৯৮
[১৭] -ফাতহুল কদির: ১/১৫৬, রদ্দুল মুহতার: ২/৪২০, আহসানুল ফাতাওয়া: ৪/৭১
[১৮] -ইমদাদুল ফাতাওয়া: ১/১৭৩, তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম: ৬/৩৭৬-৩৭৮