সর্বশেষ

2/recent/ticker-posts

আবু লাহাবের ধ্বংস: কুরআনের মোজেজা, নবুওতের সত্যতা

#Campúsian-29
#Azad-1
আবু লাহাবের ধ্বংস: কুরআনের মোজেজা, নবুওতের সত্যতা
মুহাম্মাদ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যেদিন জন্ম হয়, সেদিন একজন লোক পাগলের মতো ছুটতে ছুটতে কুরাইশদের এ বাড়ি থেকে ও’বাড়ি, এ পাড়া থেকে ও’পাড়া, জনে জনে খবর দিতে লাগলো, ‘শোন লোকসকল! আমার মৃত ভাই আবদুল্লাহর ঘরে একটা ফুটফুটে পুত্র সন্তান এসেছে। তার বংশ রক্ষা পেয়েছে’। ।
যে লোক পাগলপারা হয়ে মুহাম্মাদ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের সংবাদ সর্বত্র বিলাচ্ছিলো, তার নাম হলো আবু লাহাব। সম্পর্কে তিনি রাসূলের আপন চাচা। আব্দুল মুত্তালিবের দশজন পুত্রের একজন। শুধু কি তাই? মুহাম্মাদ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের সংবাদ সর্বপ্রথম যে দাসী তার কাছে নিয়ে আসে, ভাতিজার জন্মের সংবাদে খুশিতে উৎফুল্ল চাচা আবু লাহাব ছুওয়াইবা নামক সেই দাসীকেও মুক্ত করে দিয়েছিলো সাথে সাথে। ভাতিজার পৃথিবীতে শুভাগমের সংবাদে তিনি এতোটাই প্রফুল্ল ছিলেন।
‘এটাই সেই আবু লাহাব যার ধ্বংস কামনা করে কুরআনে একটা পূর্ণাঙ্গ সূরা নাযিল হয়েছে’
এই সেই আবু লাহাব। যার জন্মের সংবাদ পেয়ে প্রফুল্ল চাচা খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েছিলেন, সেই চাচাই পরে রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যতম প্রধান শত্রুতে পরিণত হয়।
নাস্তিকদের আপত্তি নিয়ে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাল্লাহ।
##️⃣আবু লাহাব পরিচিতি#️⃣#️⃣
আবু লাহাবের পরিচয় :
আবু লাহাব ছিলেন কুরায়েশ নেতা আব্দুল মুত্ত্বালিবের দশজন পুত্রের অন্যতম। নাম আব্দুল ওযযা। অর্থ, ওযযা দেবীর গোলাম। লালিমাযুক্ত গৌরবর্ণ ও সুন্দর চেহারার অধিকারী হওয়ায় তাকে ‘আবু লাহাব’ বা অগ্নিস্ফুলিঙ্গওয়ালা বলা হ’ত। তার আসল নাম কুরআনে উল্লেখ করা হয়নি। কেননা তা ছিল তাওহীদের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। আল্লাহ তার আবু লাহাব উপনামটি কুরআনে উল্লেখ করেছেন। কেননা এর মধ্যে তার চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবার দুঃসংবাদটাও লুকিয়ে রয়েছে।
আবু লাহাব ছিলেন রাসূল (ছাঃ)-এর সেই প্রিয় চাচা যিনি:
১) তাঁর জন্মের খবর শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে সর্বত্র দৌড়ে গিয়ে লোকদের নিকট খবরটি পৌঁছে দেন যে, তার মৃত ছোট ভাই আব্দুল্লাহর বংশ রক্ষা হয়েছে। আর এই সুখবরটি প্রথম তাকে শুনানোর জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ দাসী ছুওয়াইবাকে মুক্ত করে দেন।[4]
২) তিনি ছিলেন মক্কায় রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটতম প্রতিবেশী
৩) তার দুই ছেলে উৎবা ও উতাইবার সাথে নবুঅতপূর্বকালে রাসূল (ছাঃ)-এর দুই মেয়ে রুক্বাইয়া ও উম্মে কুলছূমের বিবাহ হয়।[5]
এত আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও সবকিছু তীব্র বিদ্বেষপূর্ণ সম্পর্কে পরিবর্তিত হয়ে যায় রাসূল (ছাঃ)-এর নবুঅত লাভের পর। আবু লাহাব কখনোই তার ভাতিজার সুনাম-সুখ্যাতি ও নবুঅত লাভের মত উচ্চ মর্যাদা অর্জনের বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। যেমন মেনে নিতে পারেননি অন্যতম বংশীয় চাচা আবু জাহল ও তার সাথীরা। ফলে শুরু হয় শত্রুতা। তার পক্ষে সম্ভব কোনরূপ শত্রুতাই তিনি বাকী রাখেননি। যেমন,
(১) আবু লাহাব তার দু’ছেলেকে তাদের স্ত্রীদের তালাক দিতে বাধ্য করেন। এই দু’মেয়েই পরবর্তীতে একের পর এক হযরত ওছমান (রাঃ)-এর সাথে বিবাহিতা হন।
(২) রাসূল (ছাঃ)-এর দ্বিতীয় পুত্র আব্দুল্লাহ, যার লকব ছিল ত্বাইয়েব ও ত্বাহের, মারা গেলে আবু লাহাব খুশীতে বাগবাগ হয়ে সবার কাছে গিয়ে বলেন মুহাম্মাদ এখন ‘আবতার’ অর্থাৎ লেজকাটা ও নির্বংশ হয়ে গেল।
সেযুগে কারু পুত্রসন্তান না থাকলে এরূপই বলা হ’ত। একথারই প্রতিবাদে সূরা কাওছার নাযিল হয় এবং আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন,
إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ
‘নিশ্চয়ই তোমার শত্রুই নির্বংশ’।
(৩) হজ্জের নিরাপদ মওসুমে রাসূল (ছাঃ) বহিরাগত হাজীদের তাঁবুতে গিয়ে তাওহীদের দাওয়াত দিতেন। তখন আবু লাহাব তাঁর পিছু নিতেন এবং লোকদের ভাগিয়ে দিতেন এই বলে যে,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ لاَ تُطِيْعُوْهُ فَإِنَّهُ صَابِئٌ كَذَّابٌ
‘হে লোকসকল! তোমরা এর আনুগত্য করো না। কেননা সে ধর্মত্যাগী, মহা মিথ্যুক’। এমনকি যুল-মাজায (ذو المجاز) নামক বাজারে যখন তিনি লোকদের বলছিলেন, قُوْلُوْا لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ تُفْلِحُوْا ‘তোমরা বলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তাহ’লে তোমরা সফলকাম হবে’ তখন আবু লাহাব পিছন থেকে তাঁকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়ে মারছিলেন। যাতে রাসূল (ছাঃ)-এর পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত রক্তাক্ত হয়ে যায়।[6]
#️⃣#️⃣ আবু লাহাবের পরিণতি#️⃣#️⃣
আবু লাহাবের পরিণতি :
বদর যুদ্ধে পরাজয়ের দুঃসংবাদ মক্কায় পৌঁছবার সপ্তাহকাল পরে আবু লাহাবের গলায় গুটিবসন্ত দেখা দেয় এবং তাতেই সে মারা পড়ে। সংক্রমণের ভয়ে তার ছেলেরা তাকে ছেড়ে চলে যায়। কুরায়েশরা এই ব্যাধিকে মহামারী হিসাবে দারুণ ভয় পেত। তিনদিন পরে লাশে পচন ধরলে কুরায়েশ-এর এক ব্যক্তির সহায়তায় আবু লাহাবের দুই ছেলে লাশটি মক্কার উচ্চভূমিতে নিয়ে যায় এবং সেখানেই একটি গর্তে লাঠি দিয়ে ফেলে পাথর চাপা দেয়।[8]অহংকারী যালেমের পতন এভাবেই হয়। কুরআনের কথাই সত্য প্রমাণিত হয়। তার মাল-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তার কোন কাজে আসেনি।
#️⃣#️⃣ আবু লাহাবের স্ত্রী পরিচিতি#️⃣#️⃣
আবু লাহাবের স্ত্রী :
নাম : ‘আওরা (العوراء) অথবা আরওয়া (أروى) বিনতে হারব ইবনে উমাইয়া। উপনাম : উম্মে জামীল। কুরায়েশ নেতা আবু সুফিয়ানের বোন। ট্যারাচক্ষু হওয়ার কারণে তাকে ‘আওরা’ (عوراء) বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ইবনুল ‘আরাবী তাকে عوراء أم قبيح বা ‘ট্যারাচক্ষু সকল নষ্টের মূল’ বলেন (কুরতুবী)।
কুরায়েশদের নেতৃস্থানীয় মহিলাদের অন্যতম এই মহিলা রাসূল (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে সকল প্রকার চক্রান্তে ও দুষ্কর্মে তার স্বামীর পূর্ণ সহযোগী ছিলেন (ইবনু কাছীর)। সর্বদা রাসূল (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে গীবত, তোহমত ও চোগলখুরীতে লিপ্ত থাকতেন। কবি হওয়ার সুবাদে ব্যঙ্গ কবিতার মাধ্যমে তার নোংরা প্রচারণা অন্যদের চাইতে বেশী ছিল। চোগলখুরীর মাধ্যমে সংসারে ভাঙ্গন ধরানো ও সমাজে অশান্তির আগুন জ্বালানো দু’মুখো ব্যক্তিকে আরবরা حَمَّالَةُ الْحَطَبِ ইন্ধন বহনকারী বা খড়িবাহক বলত। সে হিসাবে এই মহিলাকে কুরআনে উক্ত নামেই আখ্যায়িত করা হয়েছে। নিকটতম প্রতিবেশী হওয়ার সুযোগে উক্ত মহিলা রাসূল (ছাঃ)-এর যাতায়াতের পথে বা তাঁর ‏ বাড়ীর দরজার মুখে কাঁটা ছড়িয়ে বা পুঁতে রাখতেন। যাতে রাসূল (ছাঃ) কষ্ট পান।
সূরা লাহাব নাযিল হ’লে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে উক্ত মহিলা হাতে প্রস্তরখন্ড নিয়ে রাসূল (ছাঃ)-কে মারার উদ্দেশ্যে কা‘বা চত্বরে গমন করেন। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় রাসূল (ছাঃ) সামনে থাকা সত্ত্বেও তিনি তাঁকে দেখতে পাননি। অবশেষে রাসূল (ছাঃ)-এর পাশে দাঁড়ানো আবুবকরের কাছে তার মনের ঝাল মিটিয়ে বলেন, আবুবকর! তোমার সাথী নাকি আমাকে ব্যঙ্গ করেছে? আল্লাহর কসম, যদি আমি তাকে পেতাম, তাহ’লে এই পাথর দিয়ে তার মুখে মারতাম। আল্লাহর কসম! আমি একজন কবি। বলেই তিনি রাগতঃস্বরে কবিতা পাঠ করেন-
مُذَمَّمًا عَصَيْنَا + وأمْرَهُ أبَيْنَا + ودِينَهُ قَلَيْنَا
‘নিন্দিতের আমরা নাফরমানী করি’। ‘তার নির্দেশ আমরা অমান্য করি’। ‘তার দ্বীনকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি’। উল্লেখ্য যে, কুরায়েশ নেতারা রাসূল (ছাঃ)-কে ‘মুহাম্মাদ’ (প্রশংসিত)-এর বদলে ‘মুযাম্মাম’ (নিন্দিত) নামে আখ্যায়িত করেছিল এবং ঐ নামে তারা তাঁকে গালি দিত।[7]
#️⃣#️⃣আবু লাহাবের স্ত্রীর পরিণতি :#️⃣#️⃣
মুররাহ আল-হামদানী বলেন, আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামীল প্রতিদিন কাঁটাযুক্ত ঝোপের বোঝা এনে মুসলমানদের চলার পথে ছড়িয়ে দিত। ইবনু যায়েদ ও যাহহাক বলেন, সে রাতের বেলা একাজ করত। একদিন সে বোঝা বহনে অপারগ হয়ে একটা পাথরের উপরে বসে পড়ে। তখন ফেরেশতা তাকে পিছন থেকে টেনে ধরে এবং সেখানেই তাকে শেষ করে দেয়’ (কুরতুবী)।
এবার আমার আমাদের মূল আলোচনায় আসব:
#️⃣#️⃣আয়াতের শানে নুযূল :#️⃣#️⃣
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর আয়াত নাযিল হ’ল,
আর তুমি তোমার নিকটতম আত্মীয়-পরিজনকে সতর্ক কর’ (শো‘আরা ২৬/২১৪),
তখন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) সে যুগের নিয়ম অনুযায়ী একদিন সকালে ছাফা পাহাড়ের চূড়ায় উঠে সকলের উদ্দেশ্যে বিপদসংকেতমূলক ভাষায় ডাক দিয়ে বলেন,
يا صَباحاه
(প্রত্যুষে সকলে সমবেত হও!)। এভাবে রাসূল (ছাঃ) বিভিন্ন গোত্রের নাম ধরে ধরে ডাকতে থাকলেন।
অতঃপর সবাই হাযির হ’লে তিনি বলেন,
أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَخْبَرْتُكُمْ أَنَّ الْعَدُوَّ يُصَبِّحُكُمْ أَوْ يُمَسِّيكُمْ أَمَا كُنْتُمْ تُصَدِّقُونِى؟ قَالُوا بَلَى-
আমি যদি বলি এই পাহাড়ের অপর পার্শ্বে একদল শত্রুসেনা তোমাদের উপরে সকালে বা সন্ধ্যায় হামলার জন্য অপেক্ষা করছে, তাহ’লে কি তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করবে না? সকলে সমস্বরে বলে উঠলো, অবশ্যই করব। কেননা, مَا جَرَّبْنَا عَلَيْكَ إِلاَّ صِدْقًا ‘আমরা এযাবত তোমার কাছ থেকে সত্য ব্যতীত কিছুই পাইনি’।
তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন,
فَإِنِّىْ نَذِيْرٌ لَكُمْ بَيْنَ يَدَىْ عَذَابٍ شَدِيْدٍ
‘আমি ক্বিয়ামতের কঠিন আযাবের প্রাক্কালে তোমাদের নিকটে সতর্ককারী রূপে আগমন করেছি’। অতঃপর তিনি আবেগময় কণ্ঠে সকলের উদ্দেশ্যে বললেন,
يَا مَعْشَرَ قُرَيْشٍ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِىْ كَعْبِ بْنِ لُؤَىٍّ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِىْ عَبْدِ مَنَافٍ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِىْ هَاشِمٍ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِىْ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا عَبَّاسُ بْنَ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ لاَ أُغْنِى عَنْكَ مِنَ اللهِ شَيْئًا، يَا فَاطِمَةُ بِنْتَ مُحَمَّدٍ أَنْقِذِىْ نَفْسَكِ مِنَ النَّارِ، فَإِنِّىْ لاَ أَمْلِكُ لَكُمْ مِنَ اللهِ شَيْئاً غَيْرَ أَنَّ لَكُمْ رَحِماً سَأَبُلُّهَا بِبَلاَلِهَا -
‘হে কুরায়েশগণ! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও! হে বনু কা‘ব বিন লুআই! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও! হে বনু আবদে মানাফ! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও! হে বনু হাশেম! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও! হে বনু আব্দিল মুত্ত্বালিব! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও! হে আববাস বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব! আমি আল্লাহর আযাব থেকে তোমার কোনই কাজে আসব না। হে মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমা! তুমি নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও! কেননা আমি তোমাদের কাউকে আল্লাহর পাকড়াও হ’তে রক্ষা করতে পারব না’। তবে তোমাদের সঙ্গে আত্মীয়তার যে সম্পর্ক রয়েছে, তা আমি (দুনিয়াতে) সদ্ব্যবহার দ্বারা সিক্ত করব’।
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
يَا فَاطِمَةُ بِنْتَ مُحَمَّدٍ سَلِيْنِىْ مَا شِئْتِ مِنْ مَالِىْ وَلاَ أُغْنِى عَنْكِ مِنَ اللهِ شَيْئًا
‘হে মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমা! তুমি আমার মাল-সম্পদ থেকে যা খুশী নাও। কিন্তু আল্লাহর পাকড়াও হ’তে আমি তোমাকে রক্ষা করতে পারব না’।[1]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, إلا ان تقولوا لآ اله الا الله ‘তবে যদি তোমরা বল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই)।[2]
রাসূল (ছাঃ)-এর এই মর্মস্পর্শী আবেদন গর্বোদ্ধত চাচা আবু লাহাবের অন্তরে দাগ কাটেনি। তিনি চিৎকার দিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর মুখের উপর বলে দিলেন تَبًّا لَكَ سَائِرَ الْيَوْمِ ، أَلِهَذَا جَمَعْتَنَا؟ ‘সকল দিনে তোমার উপর ধ্বংস আপতিত হৌক! এজন্য তুমি আমাদের জমা করেছ’? বলেই তিনি উঠে যান। অতঃপর অত্র সূরাটি নাযিল হয়।[3] কথিত আছে যে, এই সময় আবু লাহাব রাসূল (ছাঃ)-কে পাথর মারতে উদ্যত হন। কিন্তু আল্লাহ তাকে প্রতিরোধ করেন’ (কুরতুবী; আর-রাহীক্ব ৮৬ পৃ:)।
আবু লাহাব কথাটি তাচ্ছিল্য করে বলেছিলেন। কেননা আখেরাতে জবাবদিহিতার কথা তাদের আগেই জানা ছিল। কিন্তু এটি তাদের কাছে অতীব তুচ্ছ বিষয় ছিল। দুনিয়া তাদেরকে গ্রাস করেছিল ও আখেরাত থেকে বেপরওয়া করেছিল।
#️⃣#️⃣সুরার আয়াতের ব্যাখ্যা#️⃣#️⃣
(১) تَبَّتْ يَدَا أَبِيْ لَهَبٍ وَّتَبَّ ‘ ধ্বংস হৌক আবু লাহাবের দু’হাত এবং ধ্বংস হৌক সে নিজে’।
تَبَّ تَبَابًا অর্থ خسر، خاب، هلك ‘ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, নিরাশ হওয়া, ধ্বংস হওয়া ইত্যাদি। التباب অর্থ الخسار ‘ধ্বংস হওয়া’।
যেমন আল্লাহ বলেন,
وَمَا كَيْدُ فِرْعَوْنَ إِلاَّ فِي تَبَابٍ
‘আর ফেরাঊনের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছিল পুরোপুরি’।(গাফের/মুমিন ৪০/৩৭)।
আবু লাহাব যে ভাষায় আল্লাহর রাসূলের ধ্বংস কামনা করেছিল, ঠিক সেই ভাষায় অত্র আয়াতে তার ধ্বংস কামনা করা হয়েছে। আবু লাহাব রাসূল (ছাঃ)-কে বলেছিল تَبًّا لَكَ ‘তোমার ধ্বংস হৌক’।
একইভাবে তাকে বলা হয়েছে
تَبَّتْ يَدَا أَبِيْ لَهَبٍ وَّتَبَّ
‘আবু লাহাবের দু’হাত ধ্বংস হৌক এবং ধ্বংস হৌক সে নিজে’।
এখানে দু’হাত বলার উদ্দেশ্য এই যে, মানুষ মূলতঃ দু’হাত দিয়েই সব কাজ করে থাকে। তাছাড়া আরবদের পরিভাষায় বস্ত্তর একটি অংশকে পূর্ণ বস্ত্ত হিসাবে বুঝানো হয় এবং ব্যক্তির দু’হাত দ্বারা মূল ‘ব্যক্তি’কে বুঝানো হয়।
যেমন আল্লাহ বলেন,
ذَلِكَ بِمَا قَدَّمَتْ يَدَاكَ وَأَنَّ اللهَ لَيْسَ بِظَلاَّمٍ لِّلْعَبِيْدِ
‘এটা তোমার দু’হাতের কর্মফল। আর আল্লাহ বান্দাদের প্রতি যুলুম করেন না’ (হজ্জ ২২/১০)।
অন্যত্র তিনি বলেন,
يَوْمَ يَنْظُرُ الْمَرْءُ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ وَيَقُوْلُ الْكَافِرُ يَا لَيْتَنِيْ كُنْتُ تُرَاباً-
‘যেদিন মানুষ প্রত্যক্ষ করবে যা তার দু’হাত অগ্রিম প্রেরণ করেছে এবং কাফের বলবে, হায় আফসোস! আমি যদি মাটি হ’তাম’! (নাবা ৭৮/৪০)। উভয় আয়াতেই দু’হাতকে ‘ব্যক্তি’ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। অনুরূপভাবে আলোচ্য আয়াতেও ‘আবু লাহাবের দুই হাত ধ্বংস হৌক’ অর্থ আবু লাহাব ধ্বংস হৌক!
(২) مَا أَغْنَى عَنْهُ مَالُهُ وَمَا كَسَبَ ‘কোন কাজে আসেনি তার মাল-সম্পদ এবং যা সে উপার্জন করেছে’। অর্থাৎ যেসব ধন-সম্পদ সে তার পিতা থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে এবং যা সে নিজে উপার্জন করেছে, কোন কিছুই তার কাজে আসেনি এবং তার ধ্বংস সে ঠেকাতে পারেনি।
ইবনু আববাস (রাঃ) ও অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেন, وَمَا كَسَبَ অর্থ তার সন্তানাদি। যেমন মা আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন,
إِنَّ أَطْيَبَ مَا أَكَلَ الرَّجُلُ مِنْ كَسْبِهِ وَإِنَّ وَلَدَهُ مِنْ كَسْبِهِ-
‘মানুষ যা নিজে উপার্জন করে সেটাই তার সর্বাধিক পবিত্র খাদ্য। আর তার সন্তান তার উপার্জনের অংশ’।[9]অর্থাৎ আবু লাহাবের মাল ও সন্তানাদি তার কোন কাজে আসেনি। শুধু তাই নয়, তার সম্মান ও পদমর্যাদা এবং শক্তি ও ক্ষমতা কোনটাই কোন কাজে লাগেনি। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন স্বীয় কওমকে ঈমানের দাওয়াত দেন ও আখেরাতে আযাবের ভয় দেখান, তখন আবু লাহাব তাচ্ছিল্য ভরে বলেছিল,
إذا كان ما يقول ابن أخي حقا، فإني أفتدي نفسي يوم القيامة من العذاب بمالي وولدي-
‘আমার ভাতিজার কথা যদি সঠিক হয়, তাহ’লে আমি ক্বিয়ামতের দিন আমার ধন-সম্পদ ও সন্তানাদির বিনিময়ে নিজেকে মুক্ত করে নেব’। অত্র আয়াতে তার জওয়াব এসেছে (ইবনু কাছীর)।
উল্লেখ্য যে, মক্কায় গোপন দাওয়াতের তিন বছরে যে ৪০-এর অধিক ব্যক্তি ইসলাম কবুল করেন, ইবনু মাসঊদ ছিলেন তাদের অন্যতম। অতঃপর নবুঅতের চতুর্থ বর্ষে ছাফা পাহাড়ে অত্র দাওয়াতের ঘটনা ঘটে। আবু লাহাবের সন্তানদের ইবনু আববাস (রাঃ) الكسب الخبيث বা ‘নষ্ট উপার্জন’ বলে অভিহিত করেন (কুরতুবী)।
(৩) سَيَصْلَى نَاراً ذَاتَ لَهَبٍ ‘সত্বর সে প্রবেশ করবে লেলিহান অগ্নিতে’।
অর্থাৎ ভয়ংকর দাহিকাশক্তিসম্পন্ন ও চূড়ান্তভাবে উত্তপ্ত জাহান্নামে সে প্রবেশ করবে। صَلَى يَصْلَى صَلْيًا ‘প্রবেশ করা’।
যেমন আল্লাহ বলেন,
ثُمَّ إِنَّهُمْ لَصَالُوا الْجَحِيْمِ-
‘অতঃপর তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে’ (মুত্বাফফেফীন ৮৩/১৬)।
إِلاَّ مَنْ هُوَ صَالِ الْجَحِيْمِ
‘কেবল তাদের ব্যতীত যারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে’ (ছাফফাত ৩৭/১৬৩)।
ذَاتَ لَهَبٍ অর্থ ذات اشتعال وتلهّب وإحراق شديد ‘জোশ ও স্ফুলিঙ্গওয়ালা এবং প্রচন্ড দাহিকাশক্তি সম্পন্ন’ (কুরতুবী, ইবনু কাছীর)।
আয়াতে سَيَصْلَى ‘সত্বর সে প্রবেশ করবে’ বলা হয়েছে। অথচ তা ক্বিয়ামতের পরে ঘটবে। এখানে س এসে تحقيق বা ‘নিশ্চয়তা’ অর্থে। অর্থাৎ ‘নিশ্চয়ই সে প্রবেশ করবে’। দুনিয়ার হিসাবে ক্বিয়ামত দূরের হলেও আখেরাতের হিসাবে তা খুবই নিকটবর্তী। ঘুমন্ত মানুষ সারারাত ঘুমিয়ে উঠে যেমন বলে এইমাত্র ঘুমালাম।
পুনরুত্থান দিবসে মানুষের ভাবনা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
كَأَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَهَا لَمْ يَلْبَثُوا إِلاَّ عَشِيَّةً أَوْ ضُحَاهَا
‘সেদিন যখন তারা এটা দেখবে, তখন তাদের মনে হবে, তারা (দুনিয়াতে) একটি রাত্রি বা একটি দিনের অধিক অবস্থান করেনি’ (নাযে‘আত ৭৯/৪৬)। আল্লাহ বলেন,
إِنَّهُمْ يَرَوْنَهُ بَعِيْدًا- وَنَرَاهُ قَرِيْبًا-
‘তারা ঐ দিনকে (ক্বিয়ামতকে) অনেক দূরে মনে করে’। ‘কিন্তু আমরা তা দেখছি নিকটে’ (মা‘আরিজ ৭০/৬-৭)।
(৪) وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ ‘এবং তার স্ত্রীও; যে ইন্ধন বহনকারিণী’।
অর্থাৎ আবু লাহাবের স্ত্রীও তার স্বামীর সাথে একইভাবে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। حَمَّالَةُ الْحَطَبِ অর্থ ‘ইন্ধন বহনকারী’। আগুন জ্বালানোর ইন্ধন হিসাবে যেসব খড়িকাঠ জমা করা হয়। আরবরা দু’মুখো, চোগলখোর ও গীবতকারীদের এই নামে আখ্যায়িত করত। কেননা এর দ্বারা ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে দ্রুত অশান্তির আগুন জ্বলে ওঠে। ইবনু আববাস, মুজাহিদ, ক্বাতাদাহ, সুদ্দী প্রমুখ বলেন যে, আবু লাহাবের স্ত্রী রাসূল (ছাঃ)-এর পিছনে নিন্দা ও চোগলখুরী করে এই আগুন জ্বালানোর কাজটিই করত’ (কুরতুবী)। উক্ত মহিলা ‘উম্মে জামীল’ উপনামে পরিচিত ছিল। যার অর্থ ‘সুন্দরের মা’। অথচ প্রকৃত অর্থে সে ছিল أم قبيح অর্থাৎ ‘নষ্টের মূল’। তাই কুরআন তার উপনাম বাদ দিয়ে حَمَّالَةَ الْحَطَبِ ‘খড়ি বহনকারিণী’ বলে তার চোগলখুরীর বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলেছে।
ক্বাতাদাহ ও অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেন, সে সর্বদা রাসূল (ছাঃ)-এর দরিদ্রতাকে তাচ্ছিল্য করত। অথচ প্রচুর ধন-সম্পদ থাকা সত্ত্বেও সীমাহীন কৃপণতার কারণে সে নিজে কাঠ বহন করত। ফলে কৃপণ হিসাবে লোকেরা তাকে তাচ্ছিল্য করত। এত ধন-সম্পদ তাদের কোন কাজে আসেনি। ইবনু যায়েদ ও যাহহাক বলেন, সে কাঁটাযুক্ত ঘাস ও লতাগুল্ম বহন করে এনে রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীদের চলার পথে ছড়িয়ে দিত (কুরতুবী)। ইবনু জারীর এ বক্তব্যকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন (ইবনু কাছীর)।
(৫) فِيْ جِيْدِهَا حَبْلٌ مِّن مَّسَدٍ ‘তার গলদেশে খর্জুরপত্রের পাকানো রশি’। অর্থাৎ খেজুরপাতা দিয়ে পাকানো রশি দিয়ে কাঁটাযু্ক্ত লতাগুল্ম বেঁধে ঘাড়ে করে বা গলায় ঝুলিয়ে সে বহন করে আনত। হাসান বাছরী বলেন, ‘মাসাদ’ হ’ল ইয়ামনে উৎপন্ন এক প্রকার গাছের পাকানো রশি। আবু ওবায়দা বলেন, পশমের রশি (কুরতুবী)। তানতাভী বলেন, কঠিনভাবে পাকানো রশি, যা গাছের ছালপাতা দিয়ে বা চামড়া দিয়ে বা অন্যকিছু দিয়ে তৈরী হ’তে পারে (তানতাভী)। যাহহাক ও অন্যান্যগণ বলেন, ‘ঐ রশিই ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য আগুনের রশি হবে’। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব বলেন, আবু লাহাবের স্ত্রীর মণিমুক্তাখচিত বহু মূল্যবান একটি কণ্ঠহার ছিল। যেটা দেখিয়ে সে লোকদের বলত,
وَاللاَّتِ وَالْعُزَّى لَأُنْفِقَنَّهَا فِي عَدَاوَةِ مُحَمَّدٍ-
‘লাত ও ওযযার কসম! এটা আমি অবশ্যই ব্যয় করব মুহাম্মাদের শত্রুতার পিছনে’। এ কণ্ঠহারই তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন আযাবের কণ্ঠহার হবে’ (কুরতুবী)।
কুরায়েশ বংশের একজন সম্মানিত ও ধনশালী ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও ইসলাম ও ইসলামের নবীর বিরুদ্ধে নিকৃষ্টতম আচরণ করায় আল্লাহ আবু লাহাবের স্ত্রীকে নিম্নশ্রেণীর ‘কাঠ কুড়ানী’ মহিলাদের সাথে তুলনা করেছেন’ (তানতাভী)।
#️⃣#️⃣কুরআনের মোজেজা: নবুওতের সত্যতা#️⃣#️⃣
💧💧 মোজেজা-১: এই সূরাটি যখন নাযিল হচ্ছিলো, তখন আবু লাহাব এবং তার স্ত্রী দু’জনেই বর্তমান। তাদের সামনেই মুসলিমরা এই সূরাটি তিলাওয়াত করছিলো।আবু লাহাব এবং তার স্ত্রীর হাতে কিন্তু দারুন একটা সুযোগ ছিলো কুরআনকে ভুল প্রমাণ করার এবং মুহাম্মাদ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নব্যুয়াত নিয়ে যৌক্তিক প্রশ্ন তোলার। কীভাবে? এই সূরা নাযিল হওয়ার পর যদি তারা দু’জনে ঈমান নিয়ে আসতো, যদি মুসলিম হয়ে যেতো, তাহলে সূরা লাহাবের ঠিক কি হতো? ঈমান এনে মুসলমান বনে যাওয়া কারো বিরুদ্ধে কুরআন অনবরত অভিশাপ বর্ষণ করছে- তেমনটা শোভা পায় কি? যদি দু’জনে মুসলমান হয়ে যেতো, সূরা লাহাব বাতিল বা উঠিয়ে নেওয়ার কোন সুযোগ ছিলো কি? ছিলো না... তাহলে, আবু লাহাব আর তার স্ত্রী যদি তখন সত্যি সত্যিই মুসলমান হয়ে যেতো, ব্যাপারটা কেমন হতো?
কিন্তু না। এই সত্য প্রত্যাদেশ যেখান থেকে আসা, যার কাছ থেকে আসা সেই মহান প্রভু তো জানেন তারা দু’জন কখনোই ঈমান আনবেনা। তারা মুশরিক হয়েই মৃত্যুবরণ করবে।
হলোও ঠিক তাই। এই সূরা নাযিলের আরো দশ বছর পরে তারা মৃত্যুবরণ করে। কিন্তু এই দশ বছরে তারা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কোনভাবেই ঈমান আনেনি। ঈমান এনে কুরআনকে ভুল (!) প্রমাণ করে ফেলার এক দারুন সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সেই সুযোগ গ্রহণ করেনি দুই মুশরিক। কি অদ্ভুত না? এটাই আল কুরআনের মুযিযা!
ঈমাম ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহু আলাই এর মতে, এই সূরাটা মুহাম্মাদ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নব্যুয়াতের সত্যতার পক্ষে একটা অন্যতম শক্ত দলিল। অর্থাৎ তিনি যে সত্য নবী ছিলেন, কুরআন যে ঐশী বিধান, সেটা এই সূরা এবং এর নাযিলের প্রেক্ষাপট থেকেই পরিষ্কার।
💧💧 মোজেজা-২: ‘আবু লাহাব’ কিন্তু তার আসল নাম নয়, উপাধি। তার আসল নাম ছিলো আব্দুল ওযযা যার অর্থ ‘ওযযা দেবীর গোলাম’। কুরআন তাকে তার আসল নাম ধরে সম্বোধন না করে তার ছদ্মনাম বা উপাধি ধরে সম্বোধন করেছে। কেনো জানেন? কারণ তার আসল নাম (আব্দুল ওযযা বা ওযযা দেবীর গোলাম) তাওহীদের পরিপন্থী। দুনিয়ার কোন মানুষ, হোক সে মুশরিক বা কাফের, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো গোলাম হতে পারেনা। কুরআন এসেছে তাওহীদ তথা একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করতে। আবু লাহাবের আসল নাম তাওহিদের সাথে সাংঘর্ষিক বলে কুরআন এই নাম ব্যবহার করেনি। চিন্তা করতে পারেন কতো সুক্ষ্মচিন্তার বিষয় এটা? এটাও কুরাআনের একটা মুযিযা।
💧💧 মোজেজা-৩: যদি রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্য নবী না হতেন, তাহলে তিনি কোনভাবেই আবু লাহাব এবং তার স্ত্রীর ব্যাপারে এরকম ভবিষ্যতবাণী করতে পারতেন না। সে সময় মক্কায় আরো এমন অনেকে ছিলো যারা রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অন্যায়, অত্যাচারে কোনদিকেই আবু লাহাব এবং তার স্ত্রীর চেয়ে কম ছিলো না।
উদাহরণস্বরূপ আবু সুফিয়ান এবং তার স্ত্রী হিন্দার কথা বলা যায়। প্রথমজীবনে আবু সুফিয়ান তো মুসলিম বাহিনীর বিরুদ্ধে এক তুখোড় যোদ্ধা ছিলো। প্রচুর মুসলিমরা তাঁর হাতে শাহাদাত বরণ করে।
আর হিন্দা তো সেই মহিলা যে যুদ্ধের ময়দানে রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত চাচা হামযা রাদিয়াল্লাহু আনহু’র কলিজা চিবিয়ে খেয়েছিলো।[১০] তবুও কুরআনে আবু লাহাব এবং তার স্ত্রীর ব্যাপারে যেরকম অভিসম্পাত করে সূরা নাযিল হয়েছে, সেরকম কোনকিছু আবু সুফিয়ান বা তার স্ত্রী হিন্দার ব্যাপারে নাযিল হয়নি। এর কারণ আল্লাহ জানতেন আবু সুফিয়ান এবং তার স্ত্রী জীবনের একটা পর্যায়ে ঈমান আনয়ন করবে, এবং হলোও তাই। আবু সুফিয়ান এবং তাঁর স্ত্রী দু’জনেই পরে মুসলিম হোন। এই ঘটনা থেকে কি এটা প্রমাণ হয়না যে কুরআন কোন মানুষের রচিত কিতাব নয় এবং মুহাম্মাদ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত রাসূল?
তথ্যসূত্রঃ
[1]. বুখারী হা/২৭৫৩; মুসলিম হা/২০৪, ২০৬; আহমাদ হা/৮৭১১; মিশকাত হা/৫৩৭৩ ‘রিক্বাক্ব’ অধ্যায়-২৬, ‘সতর্ক করা ও ভয় প্রদর্শন করা’ অনুচ্ছেদ-৮।
[2]. বায়হাক্বী, দালায়েলুন নবুঅত ১/৬৪।
[3]. বুখারী হা/৪৭৭০, ৪৯৭১; মুসলিম হা/২০৮; তিরমিযী হা/৩৩৬৩; কুরতুবী হা/৬৫১২; মিশকাত আলবানী হা/৫৩৭২।
[4]. আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ২/২৭৩; আলবানী, ছহীহ সীরাতুন নববিইয়াহ পৃ: ১৫।
[5]. আর-রাহীক্বুল মাখতূম পৃ: ৮৬।
[6]. আহমাদ হা/১৬০৬৬; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৬৫৬২; দারাকুৎনী হা/২৯৫৭ সনদ ছহীহ, ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়; কুরতুবী হা/৬৫১৩; তাফসীর ইবনু কাছীর; আর-রাহীক্ব পৃঃ ৮২।
[7]. সীরাতে ইবনে হিশাম ১/৩৫৫-৫৬; ফাৎহুল বারী ৮/৬১০ প্রভৃতি; কুরতুবী, ইবনু কাছীর।
[8]. সীরাতে ইবনে হিশাম ১/৬৪৬; বায়হাক্বী দালায়েলুন নবুঅত ৩/১৪৫-১৪৬; আল-বিদায়াহ ৩/৩০৯; আর-রাহীক্ব পৃঃ ২২৫-২৬; কুরতুবী।
[9]. আবুদাঊদ হা/৩৫৩০; ইবনু মাজাহ হা/২২৯০; মিশকাত হা/২৭৭০ ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়।
[10]https://m.facebook.com/shahabaye.kiram/posts/807223289298055