সর্বশেষ

2/recent/ticker-posts

প্রশ্নঃ তাকদির সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই

প্রশ্নঃ তাকদির সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই। নাস্তিকদের অপপ্রচারের জবাব চাই /আরো একটি আপত্তি নাস্তিকদের পক্ষ থেকে আসে। ১/যাকে আল্লাহ পথ দেখাবেন, সেই পথপ্রাপ্ত হবে। আর যাকে তিনি পথ ভ্রষ্ট করবেন, সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত তাহলে মানুষ কেন শাস্তি পাবে? (কোরআন ৭:১৭৮) 

 

 উত্তরঃ ভাবতেও অবাক লাগে, যখন দেখি বাংলাদেশের যুদ্ধের ইতিহাস মানুষ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে জানছে। আচ্ছা নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে বলুন তো তাদের পক্ষে কি ঘুণাক্ষরেও সম্ভব সঠিক ইতিহাস জানা! আপনার কী মনে হয় নাস্তিকরা সম্পুর্ন ধর্মীয় একটি বিষয়কে খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করবে? এমন ইতিহাস ঘটার কল্পনা করা যায়! আপনি তো কোরআন-হাদিসের পুরোটা জানেন না। আপনাকে একটি আয়াত দেখিয়ে তারা বলবে, দেখছো কোরআন এটা বলছে, হাদিস এটা বলছে, অথচ কোরআন-হাদিসেরই আরেক জায়গায় এর বিস্তর ব্যাখ্যা রয়েছে। এমন কি অনেক হাদিস এমনও রয়েছে, যেগুলোকে রাসূল সা. 'মানসূখ' তথা রহিত বলে গেছেন । যা তারা আপনাদেরকে কস্মিনকালেও দেখাবে না। অতএব যে দেশের ইতিহাস সে দেশের কাছ থেকে জানাটাই যৌক্তিক। শত্রুদেশের থেকে নয়। 'তাকদির' ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যার সাথে বান্দার শুধুমাত্র বিশ্বাসের সম্পর্ক। তাকদির সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেনঃ ১/ {তুমি কি জান না যে, আল্লাহ জানেন যা কিছু আকাশে ও ভুমন্ডলে আছে। এবং এসব কিতাবে লিখিত আছে। এটা আল্লাহর কাছে সহজ।} (আল হাজ্জ্ব - ৭০) ২/ {তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এ গুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। স্থলে ও জলে যা আছে, তিনিই জানেন। কোন পাতা ঝরে না; কিন্তু তিনি তা জানেন। কোন শস্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুস্ক দ্রব্য পতিত হয় না; কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে।} (আল আনআম - ৫৯) এ আয়াতদুটিতে তাকদির সম্পর্কে আল্লাহ খুব পরিস্কার করে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, আল্লাহ এই মহাবিশ্বের খুটিনাটি সবকিছুই জানেন। ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর সমস্ত অদৃশ্যের খবর তার কাছে আছে। এবং তিনি এগুলো লিপিবদ্ধ করেও রেখেছেন। আর এটা আল্লাহর কাছে সহজ। এই ক্ষমতাই যদি না থাকে তাহলে স্রষ্টা তো পরের কথা, একজন আবিষ্কারককেও আমরা তার আবিষ্কার সম্পর্কে সন্দেহ করবো। অতএব মহান স্রষ্টার তার সৃষ্টির সম্পর্কে নিখুঁত ধারণা থাকাটা আবশ্যক। না থাকাটা অযৌক্তিক। (এখানে 'আমি আল্লাহর সাথে শিরক করেছি' এই দাবি করাটা নিছক বোকামি। আর শিরক সম্পর্কে অজ্ঞতা বৈ কিছু নয়। আমি জাস্ট একটা উদাহরণ দিয়েছি, সবকিছু মিলতে হবে ব্যাপারটা এরকম নয়। এটা বলে নিচ্ছি। কারণ গা বাঁচাতে আসিফ মহিউদ্দিনকে দেখেছি এই ধরণের মিথ্যার আশ্রয় নিতে। সে তাকদির বিষয়ে শিক্ষক-ছাত্রের উদাহরণটাকে হজম করতে না পেরে শেষমেশ শিরক দাবি করেছে। সে কি একটাবারও ভাবলো না যে, মামার বাড়ির পথ-ঘাট মার চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না।) এতটুকু নাস্তিকরা মেনে নেয় যে, আল্লাহ মহাবিশ্বের সবকিছুর সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিবহাল। তিনি আগে থেকেই সবকিছু জানেন। এবং তা লওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধও রয়েছে। কিন্তু এরপর তারা নিজ সার্থ উদ্ধারে যে অংশটুকু যুক্ত করে তা হলো, 'আল্লাহই আমাদেরকে দিয়ে ভালো-মন্দ যাবতীয় সবকিছু করান, এতে আমাদের কোন ভূমিকা নেই। আমরা শুধুমাত্র রোবটের ভূমিকা পালন করছি।' এই অংশটুকু যুক্ত করেই তারা বিভিন্ন সংশয় সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। এই অংশটুকু কখনোই তারা প্রমাণ করতে পারবে না। কারণ আল্লাহ নিজেই এই ধরণের দাবিদারকে আল্লাহর নামে মিথ্যাচার করার ব্যাপারে অবিযুক্ত করেছেন। {এখন মুশরেকরা বলবেঃ 'যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তবে না আমরা শিরক করতাম, না আমাদের বাপ দাদারা। এবং না আমরা কোন বস্তুকে হারাম করতাম'। একই ভাবে তাদের পূর্ববর্তীরাও মিথ্যারোপ করেছে, এমন কি তারা আমার শাস্তি আস্বাদন করেছে। আপনি বলুনঃ তোমাদের কাছে কি কোন প্রমাণ আছে যা আমাদেরকে দেখাতে পার। তোমরা শুধুমাত্র আন্দাজের অনুসরণ কর এবং তোমরা শুধু অনুমান করে কথা বল।} (আনআম-১৪৮) তারা যে কোরআন-হাদিসের বিভিন্ন কথাকে কাট করে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে সেট করে, আল্লাহর উপর দোষ দিতে চাচ্ছে যে, আল্লাহ না চাইলে এগুলা কিছুই তারা করত না। 'শাস্তি থেকে রক্ষা পেতে তারা যে এই কাজ করবে' তা আল্লাহ আগে থেকেই জানেন। এমনকি পূর্ববর্তী অস্বীকারকারীরাও এরকম দাবি করেছিল। তাকদির আল্লাহ লিখে রেখেছেন। তার মানে এই নয় যে, এই লেখার এফেক্টে মানুষ সেই কাজগুলো করবে। বরং 'মানুষ করবে' এটা আল্লাহ জানেন তাই লিখে রেখেছেন। উপরের আয়াতে স্পষ্টভাবে তিনি আগে উল্লেখ্য করেছেন 'তুমি কি জান না যে, আল্লাহ জানেন যা কিছু আকাশে ও ভুমন্ডলে আছে'। তারপরই বলেছেন 'এবং এসব কিতাবে লিখিত আছে।' আলহজ্ব- ৭০ সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, আল্লাহ সবকিছু আগে থেকে জানেন বলেই তাকদির লিখে রেখেছেন। 'লেখার কারণেই ঘটছে' এমন নয়। যদি এমন হতো! তাহলে 'আল্লাহ সবকিছু আগে থেকেই জানেন' এই কথার কোন মানে রইল না। আল্লাহ দুনিয়াতে কারো স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেন না। এমনকি কুফরি করার ব্যাপারটাও আল্লাহ তার স্বাধীনতার উপর ছেড়ে দিয়েছেন। {বলুনঃ সত্য তো তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে এসেছেই। অতএব, এখন যার ইচ্ছা, ঈমান আনুক এবং যার ইচ্ছা কুফরি করুক। কারণ আমি তো জালেমদের জন্য (পরকালে) অগ্নি প্রস্তুত করে রেখেছি, যার বেষ্টনী তাদের কে পরিবেষ্টন করে থাকবে। যদি তারা পানীয় প্রার্থনা করে, তবে পুঁজের ন্যায় পানীয় দেয়া হবে যা তাদের মুখমন্ডল দগ্ধ করবে। কত নিকৃষ্ট পানীয় এবং খুবই মন্দ আশ্রয়।} (আল কাহফ-২৯) মানুষকে আল্লাহর ব্যক্তি স্বাধীনতা দেয়ার ব্যাপারে হাজারো যুক্তি প্রামাণ আছে। আপনি যদি সত্যিই যুক্তিতে বিশ্বাসী হয়ে থাকেন তাহলে আপনি এটা মানতে বাধ্য। ধরুন, আপনি আপনার বেডরুমের ফ্যানের সুইজটা অন করে রেগুলেটরটা ফুল স্পিডে বাড়িয়ে দিয়েছেন। এটা সম্পূর্ণ আপনার দেয়া নির্দিষ্ট কন্ট্রলে চলছে 'ফ্যানটার নিজের কোন ক্ষমতা নেই এদিক-সেদিক করার' এটা আপনি জানেন, তা সত্বেও কি আপনি ফ্যানকে উদ্দেশ্য করে বলবেন!? যে, 'এই ফ্যান তুমি আস্তে চল কিংবা আরও জোরে চল।' বলবেন না। কারণ, আপনি ফ্যানকে তার স্বাধীনভাবে চলার ক্ষমতা দেন নি যে, ইচ্ছে হলে সে আপনার আদেশ মানবে আর ইচ্ছে হলেই অমান্য করবে। কিন্তু আল্লাহ মানুষকে সেই স্বাধীনতা দিয়েছেন বলেই হাজারো বিধিনিষেধ জুড়ে দিয়েছেন। যদি তাকদিরে লেখার বিষয়টি 'আপনাদের দাবি অনুযায়ী হত', তাহলে কোরআনে খামোখা এত আদেশ নিষেধ আসতো না। অতএব এটা মেনে নেয়া আবশ্যক হচ্ছে যে,আল্লাহ সবকিছু আগে থেকে জানেন বলেই তাকদির লিখে রেখেছেন। লেখার কারণে সব অটোমেটিক ঘটছে না। আল্লাহ কখনো কারো থেকে এই স্বাধীন ক্ষমতা নিয়ে নেন। যেমন পাগলের, কাহফবাসীদের ইত্যাদি। পাগলের বিবেগ বুদ্ধি নেই, ভালো মন্দ বুঝে নিজের মতামত দেয়ার ক্ষমতা নেই এজন্যই তাকে তার কৃতকর্মের জবাবদিহি করতে হবে না। কাহফবাসীদের আল্লাহ দীর্ঘ সময় ঘুমের মধ্যে রেখেছেন এতে বান্দার কোন কন্ট্রোল ছিল না। তাই এই দীর্ঘ সময়ে যত ইবাদাত তাদের থেকে ছুটে গেছে সে সম্পর্কে তাদের জবাবদিহি করতে হবে না। শুধুমাত্র এ কারণে যে, তখন তাদের কন্ট্রোল তাদের কাছে ছিল না বলে। এমনকি ভুলেও যদি কেউ কোন কাজ করে ফেলে তাকেও সে কাজের জন্য দায়ি করা হবে না। যেমন রোজা রেখে যদি ভুলে পানি পান করে ফেলে তাহলে তার রোজা নষ্ট হয় না। বুখারী ; ১৯৩৩ অর্থাৎ আল্লাহর দেয়া স্বাধীনতা মানব তৈরি স্বাধীনতার চেয়ে অনেক নিখুঁত। মানুষ নিজে করলেও শুধু বাহ্যিকটা দেখে আল্লাহ রায় দেন না, বরং ওই কাজে তার ইচ্ছার স্বাধীনতা ছিল কি না সেটাও দেখেন। তাকদিরকে বিতর্কিত করার জন্য নাস্তিকরা কিছু রেফারেন্স দিয়ে থাকে। ১/ এবং আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন। [সূরা ইব্রাহিম, আয়াত: ২৭] ২/আপনার পালনকর্তা যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং (যা ইচ্ছা) মনোনীত করেন। [সূরা কাসাস, আয়াত: ৬৮] এই ধরণের কিছু আয়াত দিয়ে তারা বুঝাতে চায় যে, পৃথিবীতে যা কিছু হচ্ছে তা আল্লাহর ইচ্ছায় হচ্ছে। যেহেতু সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছায়, আল্লাহর হুকুমেই হচ্ছে। অর্থাৎ আমি যে অন্যায় করছি, জিনা ব্যভিচার, খুন ইত্যাদি করছি, তা তো আল্লাহর আদেশেই করছি। তাহলে কেন তিনি এর কারণে আমাদেরকে শাস্তি দিবেন? প্রথমেই আমরা জেনে নিব যে, আমরা কি সমস্ত অপরাধ আল্লাহর ইচ্ছায়, আল্লাহর আদেশেই করছি? সয়ং আল্লাহ এ সম্পর্কে আমাদের বলছেন, { তারা যখন কোন মন্দ কাজ করে, তখন বলে আমরা বাপ-দাদাকে এমনি করতে দেখেছি এবং 'আল্লাহও আমাদেরকে এ নির্দেশই দিয়েছেন'। (হে মুহাম্মদ) আপনি বলে দিন, 'আল্লাহ মন্দকাজের আদেশ দেন না।' এমন কথা আল্লাহর প্রতি কেন আরোপ কর, যা তোমরা জান না। } (আল আরাফ-২৮) অজ্ঞতা যে মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু একথা বলবার অপেক্ষা রাখে না। আজ নাস্তিকরা এ কারণেই সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ পাচ্ছে। আল্লাহ স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন,'তিনি মন্দ কাজের আদেশ দেন না।' এও বলেছেন যে, বাঁচার জন্য তারা আল্লাহর উপর দোষ চাপিয়ে দেয়। মিথ্যা আরোপ করে। অবাক লাগে! এরপরও কিভাবে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। দ্বিতীয়ত আল্লাহর ইচ্ছাই সবকিছু হয়। আল্লাহ ইচ্ছা না করলে কোনকিছুই হত না। আল্লাহর ইচ্ছা আছে বলেই আমরা নিজেদের স্বাধীনতায় চলতে ফিরতে পারছি। এর মানে এই নয় যে, আল্লাহই সবকিছুর জন্য দায়ি। কারণ ইচ্ছা বলতেই আমরা শুধু কামনা, বাসনা বুঝাই না। ইচ্ছার আরেকটা অর্থ হলো- অবকাশ। যেমন- চেয়ারম্যান সাহেব একদমই ক্রিকেট খেলা পছন্দ করেন না। কিন্তু তারই বাড়ির মাঠে প্রতিদিন এলাকার ছেলেরা ক্রিকেট খেলে। এখানে আমি বলতে পারি যে, চেয়ারম্যান সাহেবের ইচ্ছা আছে বলেই তারা তার বাড়ির মাঠে খেলতে পারে। তিনি যদি না চাইতেন তাহলে তাদের পক্ষে সেই মাঠে খেলা সম্ভব হত না। এখানে কিন্তু চেয়ারম্যান সাহেবের ইচ্ছা মানে পছন্দ, কামনা, বাসনা নয় (কারণ তিনি খেলা পছন্দই করেন না) বরং অবকাশ। অর্থাৎ সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছাতে হয়।কারণ বিশ্বজগতের সমস্ত ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর। আল্লাহ না চাইলে কারো কিছু করার ক্ষমতা নেই। কিন্তু আল্লাহ মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছেন। দিয়েছেন অবকাশ কিছু সময়ের জন্য। এ কারণেই মানুষ যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। { জালেমরা যা করে, সে সম্পর্কে আল্লাহকে কখনও বেখবর মনে করো না তাদেরকে তো ঐ দিন পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে রেখেছেন, যেদিন চক্ষুসমূহ বিস্ফোরিত হবে। } (ইব্রাহীম- ৪২) { যদি আল্লাহ লোকদেরকে তাদের অন্যায় কাজের কারণে পাকড়াও করতেন, তবে ভুপৃষ্ঠে চলমান কোন কিছুকেই ছাড়তেন না। কিন্তু তিনি প্রতিশ্রুতি সময় পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেন। অতঃপর নির্ধারিত সময়ে যখন তাদের মৃত্যু এসে যাবে, তখন এক মুহুর্তও বিলম্বিত কিংবা তরাম্বিত করতে পারবে না। } (আন নাহল-৬১) এতএব মানুষ যে অন্যায় অবিচার করছে এগুলো আল্লাহর থেকে প্রাপ্ত নিজেদের স্বাধীনতা আছে বলেই করছে। আল্লাহ যদি না চাইতেন তাহলে এগুলোও তারা করতে পারতো না। কিন্তু আল্লাহ তো মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছেন। দেখিয়েছেন ভালো-মন্দ দুটি পথ। তাকে পরিক্ষা করার জন্য।এখন বান্দা যদি সেই স্বাধীনতার অপব্যবহার করে বিপদগ্রস্ত হয়ে বলে- 'আমার কোন দোষ নেই। আল্লাহ আমাকে স্বাধীনতা, অবকাশ দিয়েছেন বলেই আমি অপরাধ করতে পেরেছি।' এরকম দু'মুখো সূলভ আপত্তির কোন মানে হয় না। ( একবার আপত্তি 'স্বাধীনতা নাই কেন'? আবার এটা প্রমাণিত হয়ে গেলে 'স্বাধীনতা দিয়েছে কেন'?) আরো একটি আপত্তি নাস্তিকদের পক্ষ থেকে আসে। ১/যাকে আল্লাহ পথ দেখাবেন, সেই পথপ্রাপ্ত হবে। আর যাকে তিনি পথ ভ্রষ্ট করবেন, সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত।(কোরআন ৭:১৭৮) ২/আল্লাহ যাকে সৎপথে চালান, সেই সৎপথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তার জন্যে পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না। (কোরআন ১৮:১৭) অর্থাৎ আল্লাহই তো হেদায়েতের মালিক, গোমরাহ করার মালিক। যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দেন আর যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন। এখানে আমাদের তো কোন হাত নেই। হ্যা অবশ্যই, এই আয়াতগুলোর উদ্দেশ্য এটা বুঝানো যে, হেদায়েতের মালিক একমাত্র আল্লাহ। তিনি ছাড়া কেউ হেদায়েত দিতে পারেন না। এমনকি সয়ং রসূল ও না। তবে এতে সংশয় ছড়ানোর কিছু নেই। কারণ সৃষ্ট সব কিছুই স্রষ্টার অধিনে থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। এখন আমি আপনাকে একটি প্রশ্ন করছি, আপনার টাকার প্রয়োজন। আর আপনি এও জানেন যে, আপনার বাবার কাছে টাকা আছে। এখন আপনার কী কর্তব্য? নিশ্চয়ই বাবার কাছে টাকা চাওয়া। নাকি নিজে না চেয়ে 'বাবা দেয় না কেন' বলে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাবেন। অতএব আপনি জানেন হেদায়েতের মালিক আল্লাহ। আল্লাহর কাছে হেদায়েত আছে। এখন যদি আপনি হেদায়েত না চেয়ে আল্লাহকে দোষারোপ করেন, তাহলে এটা সম্পূর্ণ আপনার বোকামি। কেননা যার হেদায়েতের প্রয়োজন তাকে আল্লাহ হেদায়েতের দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন - اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيم (আল ফাতিহা - ৬) (হে আল্লাহ) আমাদের সরল পথের দিকে পথ প্রদর্শণ করো। এবং আল্লাহ অনেক জায়গায় বান্দাকে চাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন - তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক। আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। (আল মু'মিন-৬০) দ্বিতীয়ত, আল্লাহ কারো ঈমান নষ্ট করেন না। { আল্লাহ এমন নন যে, তোমাদের ঈমান নষ্ট করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ, মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, করুনাময়।} (আল বাকারা- ১৪৩) আর আল্লাহ গোমরা করেন তাদেরকে যারা আল্লাহর নিদর্শন পাওয়ার পরও তা গোপন করে। অর্থাৎ আল্লাহর অস্তিত্বকে জেনে বুঝে অস্বীকার করে। (আল বাকারা ১৫৯) সুতরাং আল্লাহ তাদের কৃতকর্মের কারণেই তাদেরকে গোমরাহ করেন। এমনি এমনি নয়। আর এটাই বাস্তবতা, কারণ ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগানো যায়। ঘুমের ভানকারী ব্যক্তিকে নয়। আর আল্লাহ এও স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে, সত্য (হেদায়েত) বর্জন করলে তার ভাগ্যে মিথ্যা(গোমরাহি) ছাড়া আর কিছুই থাকে না। 'অপশন দুটি' একটা রিজেক্ট করার পর অটোমেটিকলি অপরটা চুজিং হয়ে যায়। { অতএব, এ আল্লাহই তোমাদের প্রকৃত পালনকর্তা। আর সত্যের পরে গোমরাহী ছাড়া আর কী বা রয়েছে ? সুতরাং কোথায় তোমরা ঘুরপাক খাচ্ছো? }( ইউনুস -৩২) পরিশেষে বলতে চাই, আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, পথও দেখিয়েছেন। অতঃপর পরিক্ষা করছেন যে, কে এসমস্ত নেয়ামত স্রষ্টার ভেবে কৃতজ্ঞ হয় আর কে এক্সিডেন্ট, নিজের ক্রেডিট ভেবে অকৃতজ্ঞ হয়। {আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে, এভাবে যে, তাকে পরীক্ষা করব অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন।} (আদ দাহর-২) {আমি তাকে (দুটো) পথ দেখিয়ে দিয়েছি। এখন সে হয় কৃতজ্ঞ হয়, না হয় অকৃতজ্ঞ হয়।} (আদ দাহ্‌র - ৩)

লেখাঃ- Robiul islam

আমরা আরো একটি উত্তর জেনে আসি,
প্রশ্ন
কিভাবে আমরা আল্লাহ্‌ তাআলার বাণী:
وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَن تُؤْمِنَ إِلاَّ بِإِذْنِ اللّه
আল্লাহ্‌র অনুমতি ছাড়া ঈমান আনা কারো সাধ্য নয়) ও তাঁর বাণী:
وَاللَّهُ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ
আল্লাহ্‌যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দেন) এর মাঝে সমন্বয় করতে পারি? আল্লাহ্‌আমাদেরকে যে ফিতরাতের উপর সৃষ্টি করেছেন আমি সে ফিতরাতের উপর থাকার চেষ্টা করি এবং তিনি যা কিছুর উপর ঈমান আনতে আমাদেরকে আদেশ করেছেন সেগুলোর উপর ঈমান আনার মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য করার চেষ্টা করি। কিন্তু ইদানিং আমার কাছে এই বিষয়ে শয়তানের কুমন্ত্রণা আসা শুরু হয়েছে। তাই আমি এ বিষয়ে জবাব পেতে চাই।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
তাওফিক ও হেদায়েত আল্লাহ্‌র হাতে। তিনি যাকে হেদায়েত দিতে চান তাকে হেদায়েত দেন; আর যাকে পথভ্রষ্ট করতে চান তাকে পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ্‌তাআলা বলেন: "এটা আল্লাহ্‌র পথনির্দেশ, তিনি তা দ্বারা যাকে ইচ্ছা হিদায়াত করেন। আল্লাহ্‌যাকে বিভ্রান্ত করেন তার কোন হেদায়াতকারী নেই।"[সূরা যুমার, ৩৯:২৩] তিনি আরও বলেন: "আল্লাহ্‌যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সঠিক পথে রাখেন।"[সূরা আনআম, ৬:৩৯] তিনি আরও বলেন: "আল্লাহ্‌যাকে পথ দেখান সে-ই পথ পায় এবং যাদেরকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।"[সূরা আল-আরাফ, ৭:১৭৮]
একজন মুসলিম তার নামাযে দোয়া করে: "আমাকে সরল পথে অটল রাখুন।"[সূরা ফাতিহা, ১:৬] যেহেতু বান্দা জানে যে, হেদায়েত আল্লাহ্‌র হাতে। তা সত্ত্বেও বান্দা হেদায়েতের উপায়-উপকরণ গ্রহণ করতে আদিষ্ট। ধৈর্য রাখা, অবিচল থাকা এবং সরল পথে পথচলা শুরু করতে আদিষ্ট। কারণ আল্লাহ্‌তাকে প্রোজ্জ্বল বিবেক-বুদ্ধি দিয়েছেন, স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন; যা দিয়ে সে ভাল কিংবা মন্দ, হেদায়েত কিংবা পথভ্রষ্টতা নির্বাচন করতে পারে। যদি বান্দা প্রকৃত উপকরণগুলো ব্যবহার করে এবং আল্লাহ্‌তাকে হেদায়েত দিন এর জন্য সচেষ্ট থাকে তখন আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে সে তাওফিকপ্রাপ্ত হয়। আল্লাহ্‌তাআলা বলেন: "এভাবেই আমি একদলকে আরেকদল দ্বারা পরীক্ষা করেছি; কেননা তারা বলতে পারত, 'আল্লাহ্‌কি আমাদের মধ্য থেকে এদেরকেই অনুগ্রহ করলেন?' কৃতজ্ঞদের সম্পর্কে আল্লাহ্‌ই কি সবচেয়ে বেশী অবগত নন?"[সূরা আনআম, ৬:৫৩]
এই যে মাসয়ালাটি কিছু কিছু মানুষের কাছে জটিলতা তৈরী করে সেটা নিয়ে শাইখ উছাইমীন (রহঃ) দীর্ঘ আলোচনা করেছেন; তিনি বলেন: "যদি সব কিছুর উৎস হয় আল্লাহ্‌তাআলার ইচ্ছা এবং সব কিছু তাঁর হাতেই থাকে তাহলে মানুষের পথ কী? যদি আল্লাহ্‌তাআলা মানুষের পথভ্রষ্ট হওয়া ও হেদায়েত না-পাওয়া তাকদীরে রাখেন তাহলে মানুষের উপায় কী? আমরা বলব: এর জবাব হচ্ছে আল্লাহ্‌তাআলা কেবল তাকেই হেদায়েত দান করেন যে হেদায়েত পাওয়ার উপযুক্ত এবং তাকেই পথভ্রষ্ট করেন যে পথভ্রষ্ট হওয়ার উপযুক্ত। আল্লাহ্‌তাআলা বলেন: "কিন্তু তারা যখন বাঁকা পথ ধরল, তখন আল্লাহ্‌ও তাদের অন্তরকে বাঁকা করে দিলেন।"[সূরা আছ-ছফ, ৬১:৫] তিনি আরও বলেন:"অতএব তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণে আমি তাদেরকে অভিসম্পাত দিয়েছি এবং তাদের অন্তরসমূহ কঠিন করেছি। তারা শব্দসমূহের সঠিক অর্থ বিকৃত করে। তাদেরকে যা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ তারা ভুলে গিয়েছে।"[সূরা আল-মা'ইদাহ, ৫:১৩]
আল্লাহ্‌পরিস্কারভাবে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি যে বান্দাকে পথভ্রষ্ট করেছেন তাকে পথভ্রষ্ট করার কারণ সে বান্দার পক্ষ থেকেই। বান্দা তো জানে না আল্লাহ্‌তার তাকদীরে কী রেখেছেন। যেহেতু তাকদীরকৃত বিষয়টি সংঘটিত হওয়ার পর সে তাকদীরের কথা জানতে পারে। সে জানে না যে, আল্লাহ্‌কি তাকে পথভ্রষ্ট হিসেবে তাকদীরে রেখেছেন; নাকি হেদায়েতপ্রাপ্ত হিসেবে? সুতরাং সে নিজে ভ্রষ্টতার পথ অবলম্বন করে কেন আপত্তি আরোপ করবে যে আল্লাহ্‌ই তার জন্য সেটা চেয়েছেন! তার জন্য কী এটাই উপযুক্ত ছিল না যে, সে নিজে হেদায়েতের পথে চলবে এবং এরপর বলবে: নিশ্চয় আল্লাহ্‌আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করেছেন।
এটা কী তার জন্য সমীচীন যে পথভ্রষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রে সে জাবারিয়া (নিয়তিবাদী) হবে, আর আনুগত্যের সময় সে কাদারিয়া (তাকদীর অস্বীকারকারী) হবে! কক্ষনো নয়, পথভ্রষ্টতা ও গুনাহর ক্ষেত্রে কোন মানুষের জাবারিয়া হওয়া সমীচীন নয় যে, পথভ্রষ্ট হয়ে কিংবা গুনাহ করে সে বলবে: এটি আমার জন্য লেখা ছিল ও তাকদীরে ছিল, আল্লাহ্‌আমার জন্য যা ফয়সালা করে রেখেছেন সেটা থেকে বের হওয়া আমার পক্ষে সম্ভবপর নয়।
প্রকৃতপক্ষে মানুষের ক্ষমতা ও ইচ্ছাশক্তি রয়েছে। রিযিকের বিষয়টির চেয়ে হেদায়েতের বিষয় অধিক প্রচ্ছন্ন নয়। সকলের কাছেই সুবিদিত যে, মানুষের রিযিক পূর্বনির্ধারিত (তাকদীরকৃত)। কিন্তু তা সত্ত্বেও মানুষ রিযিক লাভের উপায়-উপকরণ অবলম্বন করার চেষ্টা করে; নিজের দেশে থেকে, বিদেশে গিয়ে, ডানে, বামে। কেউ নিজ বাড়ীতে বসে থেকে বলে না যে: আমার জন্য যে রিযিক নির্ধারণ করা আছে সেটা আমার কাছে আসবেই। বরং রিযিক লাভের উপায়-উপকরণগুলো গ্রহণ করার চেষ্টা করে। অথচ রিযিকের সাথে আমলের কথাও আছে; যেমনটি হাদিসে সাব্যস্ত হয়েছে।
নেক আমল বা বদ আমল করা যেমন লিপিবদ্ধ ঠিক তেমনি রিযিকও লিপিবদ্ধ। তাহলে দুনিয়ার রিযিক তালাশ করার জন্য আপনি ডানে যান, বামে যান, পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ান; অথচ আখিরাতের রিযিক তালাশ করা ও চূড়ান্ত সুখ লাভে সফল হওয়ার জন্য আপনি নেক আমল করবেন না!!
অথচ দুটো একই ধরণের। দুটোর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আপনি যেমন রিযিকের জন্য চেষ্টা করেন, নিজের জীবন ও বয়সকে প্রলম্বিত করার প্রচেষ্টা করেন: আপনি অসুস্থ হলে পৃথিবীর আনাচেকানাচে ভাল ডাক্তারের অনুসন্ধান করেন যিনি আপনার রোগের চিকিৎসা দিতে পারবে। অথচ আপনার আয়ু যতটুকু নির্ধারণ করা আছে তার চেয়ে একটুও বাড়বে না, কিংবা কমবে না। আপনি তো এর উপর নির্ভর করে বসে থাকেন না এবং বলেন না যে, আমি অসুস্থ হয়ে আমার ঘরে পড়ে থাকব; আল্লাহ্‌যদি আমার আরও দীর্ঘ হায়াত নির্ধারণ করে রাখেন (তাকদীরে রাখেন) তাহলে হায়াত দীর্ঘায়িত হবেই। বরং আমরা দেখতে পাই যে, আপনি আপনার সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করেন, সন্ধান করেন যাতে করে এমন কোন ডাক্তার খুঁজে পান যার হাতে রোগ থেকে সুস্থ হওয়া আল্লাহ্‌নির্ধারণ করে রেখেছেন।
তবে আপনার আখিরাতের ও সৎকর্মের পন্থা কেন দুনিয়ার কর্মপন্থার মত হয় না? ইতিপূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি যে, ক্বাযা বা আল্লাহ্‌র ফয়সালা হচ্ছে এমন এক গোপন গূঢ় রহস্য যা জানা সম্ভবপর নয়।
এখন আপনার সামনে দুটো পথ খোলা আছে:
  • এক পথ আপনাকে নিরাপত্তা, সফলতা, সুখ ও সম্মানে পৌঁছাবে।
  • অপর পথ আপনাকে ধ্বংস, অনুতপ্ততা ও অসম্মানে পৌঁছাবে।
আপনি এখন এ দুটো রাস্তার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন এবং আপনি স্বাধীন। এমন কেউ নাই যে আপনাকে ডানের রাস্তায় চলতে বাধা দিবে কিংবা বামের রাস্তায় চলতে বাধা দিবে। আপনি চাইলে এই পথেও যেতে পারেন এবং ঐ পথেও যেতে পারেন।
এ আলোচনার মাধ্যমে আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, মানুষ তার স্বনির্বাচিত কর্মে স্বাধীনভাবে অগ্রসর হতে পারে। অর্থাৎ সে তার দুনিয়াবী কর্মে যেভাবে স্বাধীনভাবে অগ্রসর হতে পারে; অনুরূপভাবে সে তার আখিরাতের পথেও এভাবে স্বাধীনভাবে চলতে পারে। বরং আখিরাতের পথগুলো দুনিয়ার পথগুলোর চেয়ে আরো বেশি সুস্পষ্ট। কারণ আখিরাতের পথগুলোর বর্ণনাকারী আল্লাহ্‌তাআলা নিজে; তাঁর নাযিলকৃত গ্রন্থে ও তাঁর রাসূলের মুখে। তাই আখিরাতের পথগুলো দুনিয়ার পথগুলোর চেয়ে অধিক স্পষ্ট ও স্বচ্ছ। তা সত্ত্বেও মানুষ দুনিয়ার পথগুলো ধরে অগ্রসর হয়; যার ফলাফলের গ্যারান্টি নাই। কিন্তু আখিরাতের পথগুলো বর্জন করে; অথচ সেগুলোর ফলাফল গ্যারান্টিযুক্ত ও সুবিদিত; কেননা এর ফলাফল আল্লাহ্র প্রতিশ্রুত। আল্লাহ্‌তাঁর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না।
এই আলোচনার পর আমরা বলব: আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত এই আকিদাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তারা তাদের আকিদা-বিশ্বাস এভাবে ঠিক করেছেন যে, মানুষ নিজ ইচ্ছায় তার কর্ম করে এবং তার ইচ্ছানুযায়ী সে কথা বলে। কিন্তু তার ইচ্ছা ও এখতিয়ার আল্লাহ্‌র ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের অনুবর্তী।
আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআত ঈমান রাখে যে, আল্লাহ্‌র অভিপ্রায় তাঁর হেকমত (প্রজ্ঞা)-র অনুবর্তী। আল্লাহ্‌র তাআলার হেকমত বর্জিত কোন অভিপ্রায় নাই; বরং তাঁর অভিপ্রায় তাঁর হেকমতের অনুবর্তী। কেননা আল্লাহ্‌র নামসমূহের মধ্যে রয়েছে الحكيم "আল-হাকীম" (বিচারক, নিপুণ ও প্রজ্ঞাবান)। "আল-হাকীম" হচ্ছেন— যিনি সবকিছুর অস্তিত্বগত ও আইনগত সিদ্ধান্ত দেন এবং কর্ম ও সৃষ্টির দিক থেকে সবকিছুকে নিপুণভাবে সম্পাদন করেন। আল্লাহ্‌তাআলা তাঁর প্রজ্ঞা দিয়ে যার জন্য ইচ্ছা হেদায়েত নির্ধারণ করে রাখেন, যার ব্যাপারে জানেন যে সে সত্যকে গ্রহণ করতে চায় ও তার অন্তর সঠিক পথে আছে এবং যে এমন নয় তার জন্য পথভ্রষ্টতা নির্ধারণ করে রাখেন, যার কাছে ইসলামকে পেশ করা হলে তার অন্তর সংকুচিত হয়ে পড়ে যেন সে আকাশে আরোহণ করছে। আল্লাহ্‌ তাআলার প্রজ্ঞা এমন ব্যক্তির হেদায়েতপ্রাপ্ত হওয়াকে অস্বীকার করে; তবে যদি না আল্লাহ্‌তাআলা তাঁর সংকল্পকে নবায়ন করেন এবং তাঁর পূর্ব ইচ্ছাকে অন্য কোন ইচ্ছা দিয়ে পরিবর্তন করে নেন। আল্লাহ্‌তাআলা সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান। কিন্তু আল্লাহ্‌তাআলার হেকমত (প্রজ্ঞা)-র দাবী হচ্ছে— হেতুর ফলাফল সাথে সম্পৃক্ত থাকা।"[রিসালা ফিল কাযা ওয়াল ক্বাদর (পৃষ্ঠা-১৪-২১) থেকে সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত]
একজন মুসলিম ক্বাযা ও ক্বাদর (ভাগ্য ও নিয়তি)-এর বিষয়টি যে কর্মের দায়িত্ব তাকে দেয়া হয়েছে তার সাথে এভাবেই বুঝে থাকে। যে কর্মের উপর তার সুখ ও দুঃখ নির্ভর করে। হেদায়েতপ্রাপ্তি ও জান্নাতে প্রবেশের কারণ হচ্ছে— নেক আমল। আল্লাহ্‌তাআলা বলেন: "এই হল জান্নাত; তোমাদের কর্মের প্রতিদানে তোমাদেরকে এর উত্তরাধিকারী করা হয়েছে।"[সূরা আরাফ, ৭:৪৩] তিনি আরও বলেন: "তোমরা যেসব (ভাল) কাজ করতে তার প্রতিদানস্বরূপ জান্নাতে প্রবেশ কর।"[সূরা নাহল, ১৬:৩২] আর পথভ্রষ্টতা ও জাহান্নামের প্রবেশের কারণ হচ্ছে— আল্লাহ্‌র অবাধ্যতা ও তাঁর আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া। জাহান্নামবাসীদের সম্পর্কে আল্লাহ্‌তাআলা বলেন: "তারপর অন্যায়কারীদেরকে বলা হবে, 'চিরন্তন শাস্তি আস্বাদন কর। তোমরা যা উপার্জন করতে তোমাদেরকে তারই প্রতিফল দেওয়া হচ্ছে।"[সূরা ইউনুস, ১০:৫২]  তিনি আরও বলেন: "তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য চিরস্থায়ী শাস্তি ভোগ করতে থাক।"[সূরা আস-সাজদাহ, ৩২:১৪]
এভাবে বুঝলে একজন মুসলিম সঠিক পথে তার প্রথম পদক্ষেপ ফেলতে পারবে। সে তার জীবনের একটি মুহূর্তও আল্লাহ্‌র পথে আমল করা ছাড়া নষ্ট করবে না। একই সময়ে সে তার রবের প্রতি বিনয়ী থাকবে এবং উপলব্ধি করবে যে, তাঁর হাতেই রয়েছে আসমান ও জমিনের নিয়ন্ত্রণ। তখন সে সার্বক্ষণিক তাঁর কাছে ভিখারি হয়ে থাকা ও তাঁর তাওফিকপ্রাপ্তির প্রয়োজন অনুভব করবে।
আমরা আল্লাহ্‌তাআলার কাছে আমাদের জন্য ও আপনাদের জন্য হেদায়েতপ্রাপ্তি এবং সকল ভাল কর্মের তাওফিক প্রার্থনা করছি।
আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।
সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জব
তাকদীর সম্পর্কে আর পড়তে পারেন আরিফ আজাদের দুটি লেখাঃ-
তাকদির বনাম স্বাধীন ইচ্ছা: স্রষ্টা কি এখানে বিতর্কিত?
আরিফ আজাদ
https://www.facebook.com/groups/uniteofmuslim/permalink/709419389767998/
তাদের অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দেন : সত্যিই কি তাই ?
আরিফ আজাদ
https://www.facebook.com/groups/uniteofmuslim/permalink/709420243101246/
সংকলন জিয়ানুর রহমান

Post a Comment

0 Comments