বইঃ- "ঐক্য সম্ভব"
লেখকঃ- জিয়ানুর রহমান
আশা করি বইটি আগামী বছর বা এই বছরের শেষের দিকে বাহির করতে পারবো। ইন শা আল্লাহ।
লেখাটি টি আমি অনলাইনে প্রচার করতে চাচ্ছিলাম না, তবে আশা করছি কমেন্ট বক্স থেকে সমালোচনা পাবো। লেখাটি সংক্ষেপে করা হয়েছে। সম্পূর্ণ পড়ার পরে আপনার মতামত আশা করছি।
অধ্যায় বিবিধ বিষয়াবলীঃ-
আমাদের পরিচয়
ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَٰﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ
আমাদের পরিচয় কি?
কোন কারো পরিচয় জানার জন্য তাহার জন্ম ইতিহাস জানা একান্ত প্রয়োজন। নির্মাতা বা সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সঠিক জন্ম ইতিহাস বলা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। পরিচয় জানার আগে আমাদের জন্ম ইতিহাস জানব। এবং এই ইতিহাসই বলে দিবে কোন কালে আমাদের পরিচয় কি ছিল। আমদের সৃষ্টি কর্তা মহান আল্লাহ, তাই তিনিই জানেন আমাদের সঠিক জন্ম ইতিহাস। তিনিই জানেন, তিনি কোন কালে আমাদের কি কি নাম দিয়েছেন। এবং বর্তমানে আমাদের নাম কি রেখেছেন। তাই আসুন মহা্ন আল্লাহর কাছ থেকে জেনে নেই আমাদের জন্ম ইতিহাস। সুরা বাকারার ৩০ থেকে ৩৮ আয়াতে তিনি আমাদের জন্ম ইতিহাস এভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন,
وَإِذۡ قَالَ رَبُّكَ لِلۡمَلَـٰٓٮِٕكَةِ إِنِّى جَاعِلٌ۬ فِى ٱلۡأَرۡضِ خَلِيفَةً۬ۖ قَالُوٓاْ أَتَجۡعَلُ فِيہَا مَن يُفۡسِدُ فِيہَا وَيَسۡفِكُ ٱلدِّمَآءَ وَنَحۡنُ نُسَبِّحُ بِحَمۡدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَۖ قَالَ إِنِّىٓ أَعۡلَمُ مَا لَا تَعۡلَمُونَ (٣٠) وَعَلَّمَ ءَادَمَ ٱلۡأَسۡمَآءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَہُمۡ عَلَى ٱلۡمَلَـٰٓٮِٕكَةِ فَقَالَ أَنۢبِـُٔونِى بِأَسۡمَآءِ هَـٰٓؤُلَآءِ إِن كُنتُمۡ صَـٰدِقِينَ (٣١) قَالُواْ سُبۡحَـٰنَكَ لَا عِلۡمَ لَنَآ إِلَّا مَا عَلَّمۡتَنَآۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَلِيمُ ٱلۡحَكِيمُ (٣٢) قَالَ يَـٰٓـَٔادَمُ أَنۢبِئۡهُم بِأَسۡمَآٮِٕہِمۡۖ فَلَمَّآ أَنۢبَأَهُم بِأَسۡمَآٮِٕہِمۡ قَالَ أَلَمۡ أَقُل لَّكُمۡ إِنِّىٓ أَعۡلَمُ غَيۡبَ ٱلسَّمَـٰوَٲتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَأَعۡلَمُ مَا تُبۡدُونَ وَمَا كُنتُمۡ تَكۡتُمُونَ (٣٣) وَإِذۡ قُلۡنَا لِلۡمَلَـٰٓٮِٕكَةِ ٱسۡجُدُواْ لِأَدَمَ فَسَجَدُوٓاْ إِلَّآ إِبۡلِيسَ أَبَىٰ وَٱسۡتَكۡبَرَ وَكَانَ مِنَ ٱلۡكَـٰفِرِينَ (٣٤) وَقُلۡنَا يَـٰٓـَٔادَمُ ٱسۡكُنۡ أَنتَ وَزَوۡجُكَ ٱلۡجَنَّةَ وَكُلَا مِنۡهَا رَغَدًا حَيۡثُ شِئۡتُمَا وَلَا تَقۡرَبَا هَـٰذِهِ ٱلشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ ٱلظَّـٰلِمِينَ (٣٥) فَأَزَلَّهُمَا ٱلشَّيۡطَـٰنُ عَنۡہَا فَأَخۡرَجَهُمَا مِمَّا كَانَا فِيهِۖ وَقُلۡنَا ٱهۡبِطُواْ بَعۡضُكُمۡ لِبَعۡضٍ عَدُوٌّ۬ۖ وَلَكُمۡ فِى ٱلۡأَرۡضِ مُسۡتَقَرٌّ۬ وَمَتَـٰعٌ إِلَىٰ حِينٍ۬ (٣٦) فَتَلَقَّىٰٓ ءَادَمُ مِن رَّبِّهِۦ كَلِمَـٰتٍ۬ فَتَابَ عَلَيۡهِۚ إِنَّهُ ۥ هُوَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ (٣٧) قُلۡنَا ٱهۡبِطُواْ مِنۡہَا جَمِيعً۬اۖ فَإِمَّا يَأۡتِيَنَّكُم مِّنِّى هُدً۬ى فَمَن تَبِعَ هُدَاىَ فَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡہِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ (٣٨)
অর্থঃ আবার সেই সময়ের কথা একটু স্মরণ কর যখন তোমাদের রব ফেরেশতাদের বলেছিলেন, আমি পৃথিবীতে একজন খলীফা- প্রতিনিধি নিযুক্ত করতে চাই৷” তারা বললো, “আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে নিযুক্ত করতে চান যে সেখানকার ব্যবস্থাপনাকে বিপর্যস্থ করবে এবং রক্তপাত করবে? আপনার প্রশংসা ও স্তুতিসহকারে তাসবীহ পাঠ এবং আপনার পবিত্রতা বর্ণনা তো আমরা করেই যাচ্ছি৷ আল্লাহ বললেন, “আমি জানি যা তোমরা জানো না। (সুরা বাকারা ২:৩০)।
অতপর আল্লাহ আদমকে সমস্ত জিনিসের নাম শেখালেন তারপর সেগুলো পেশ করলেন ফেরেশতাদের সামনে এবং বললেন, যদি তোমাদের ধারণা সঠিক হয়, তাহলে একটু বলতো দেখি এই জিনিসগুলোর নাম কি? (সুরা বাকারা ২:৩১)।
তারা বললোঃ “ত্রুটিমুক্ত তো একমাত্র আপনারই সত্তা, আমরা তো মাত্র ততটুকু জ্ঞান রাখি ততটুকু আপনি আমাদের দিয়েছেন৷ প্রকৃতপক্ষে আপনি ছাড়া আর এমন কোন সত্তা নেই যিনি সবকিছু জানেন ও সবকিছু বোঝেন৷ (সুরা বাকারা ২:৩২)।
তখন আল্লাহ আদমকে বললেন,“তুমি ওদেরকে এই জিনিসগুলোর নাম বলে দাও৷” যখন সে তাদেরকে সেসবের নাম জানিয়ে দিল, তখন আল্লাহ বললেন, “আমি না তোমাদের বলেছিলাম , আমি আকাশ ও পৃথিবীর এমন সমস্ত নিগূঢ় তত্ত্ব জানি যা তোমাদের অগোচরে রয়ে গেছে? যা কিছু তোমরা প্রকাশ করে থাকো তা আমি জানি এবং যা কিছু তোমরা গোপন করো তাও আমি জানি। (সুরা বাকারা ২:৩৩)।
তারপর যখন ফেরেশতাদের হুকুম দিলাম, আদমের সামনে নত হও, তখন সবাই অবনত হলো, কিন্তু ইবলিস অস্বীকার করলো৷ সে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারে মেতে উঠলো এবং নাফরমানদের অন্তরভুক্ত হলো৷ (সুরা বাকারা ২:৩৪)।
তখন আমরা আদমকে বললাম, “তুমি ও তোমার স্ত্রী উভয়েই জান্নাতে থাকো এবং এখানে স্বাচ্ছন্দের সাথে ইচ্ছে মতো খেতে থাকো, তবে এই গাছটির কাছে যেয়ো না৷ অন্যথায় তোমরা দু’জন যালেমদের অন্তরভুক্ত হয়ে যাবে৷ (সুরা বাকারা ২:৩৫)।
শেষ পর্যন্ত শয়তান তাদেরকে সেই গাছটির লোভ দেখিয়ে আমার হুকুমের আনুগত্য থেকে সরিয়ে দিল এবং যে অবস্থার মধ্যে তারা ছিল তা থেকে তাদেরকে বের করে ছাড়লো৷ আমি আদেশ করলাম,“ এখন তোমরা সবাই এখান থেকে নেমে যাও ৷ তোমরা একে অপরের শত্রু৷ তোমাদের একটি নিদিষ্ট সময় পর্যন্ত পৃথিবীতে অবস্থান করতে ও জীবন অতিবাহিত করতে হবে ৷ (সুরা বাকারা ২:৩৬)।
তখন আদম তার রবের কাছ থেকে কয়েকটি বাক্য শিখে নিয়ে তাওবা করলো৷ তার রব তার এই তাওবা কবুল করে নিলেন ৷ কারণ তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহকারী৷ (সুরা বাকারা ২:৩৭)।
আমরা বললাম, তোমরা সবাই এখান থেকে নেমে যাও৷ এরপর যখন আমার পক্ষ থেকে কোন হিদায়াত তোমাদের কাছে পৌছুবে তখন যারা আমার সেই হিদায়াতের অনুসরণ করবে তাদের জন্য থাকবে না কোন ভয় দুঃখ বেদনা৷ (সুরা বাকারা ২:৩৮)।
হজরত আদম আলাইহিস সালামের পৃথিবীতে আগমনের পর তার জীবদ্দশায় সন্তানদের মধ্যে ধর্মবিশ্বাসে সবাই একত্ববাদের (তাওহিদ) অনুসারী ছিলেন। তারা পরিপূর্ণ ভাবে ইসলামের অনুসারী ছিল। তাই আদম আলাইহিস সালামের বংশধরদের মাঝে ধর্ম নিয়ে তেমন কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। পরিচয় নিয়েও তেমন কোন সমস্যা হয়নি। তাদের একটাই পরিচয়, তারা সকলে আদমের সন্তান। তাদের মধ্যে বিভক্তি নেই, তারা একই জাতি একই পথের অনুসারী। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
كَانَ ٱلنَّاسُ أُمَّةً۬ وَٲحِدَةً۬ فَبَعَثَ ٱللَّهُ ٱلنَّبِيِّـۧنَ مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ وَأَنزَلَ مَعَهُمُ ٱلۡكِتَـٰبَ بِٱلۡحَقِّ لِيَحۡكُمَ بَيۡنَ ٱلنَّاسِ فِيمَا ٱخۡتَلَفُواْ فِيهِۚ وَمَا ٱخۡتَلَفَ فِيهِ إِلَّا ٱلَّذِينَ أُوتُوهُ مِنۢ بَعۡدِ مَا جَآءَتۡهُمُ ٱلۡبَيِّنَـٰتُ بَغۡيَۢا بَيۡنَهُمۡۖ فَهَدَى ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لِمَا ٱخۡتَلَفُواْ فِيهِ مِنَ ٱلۡحَقِّ بِإِذۡنِهِۦۗ وَٱللَّهُ يَهۡدِى مَن يَشَآءُ إِلَىٰ صِرَٲطٍ۬ مُّسۡتَقِيمٍ (٢١٣)
অর্থঃ প্রথমে সব মানুষ একই পথের অনুসারী ছিল ৷ তখন আল্লাহ নবী পাঠান ৷ তারা ছিলেন সত্য সঠিক পথের অনুসারীদের জন্য সুসংবাদদাতা এবং অসত্য ও বেঠিক পথ অবলন্বনের পরিণতির ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শনকারী৷ আর তাদের সাথে সত্য কিতাব পাঠান, যাতে সত্য সম্পর্কে তাদের মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছিল তার মীমাংসা করা যায়৷ মতভেদ তারাই করেছিল যাদেরকে সত্যের জ্ঞান দান করা হয়েছিল৷ তারা সুস্পষ্ট পথনির্দেশ লাভ করার পরও কেবলমাত্র পরস্পরের ওপর বাড়াবাড়ি করতে চাচ্ছিল বলেই সত্য পরিহার করে বিভিন্ন পথ উদ্ভাবন করে৷ কাজেই যারা নবীদের ওপর ঈমান এনেছে তাদেরকে আল্লাহ নিজের ইচ্ছাক্রমে সেই সত্যের পথ দিয়েছেন, যে ব্যাপারে লোকেরা মতবিরোধ করেছিল৷ আল্লাহ যাকে চান সত্য সঠিক পথ দেখিয়ে দেন ৷ (সুরা বাকারা ২:২১৩)।
আদম আলাইহিস সালামের সময় কালে সকল মানুষই একত্ববাদে বিশ্বাসী ছিলেন। আদম আলাইহিস সালাম মৃত্যুর পর আস্তে আস্তে অনেকেই মহান আল্লাহকে ভুলে যান, আর এই ভুলে যাওয়া জাতিকে সতর্ক করার জন্য প্রেরণ করেন নূহ আলাইহিস সালামকে। তিনি পঞ্চাশ কম এক হাজার বছর মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবান করেন। সল্প সংখ্যক আদম সন্তান ছাড়া কেউই তাহার আহবানে সাড়া দিল না। তাই মহান আল্লাহ ন্যায় সংগতভাবে সত্য অস্বীকার কারীদের পানিতে ডুবিয়ে মারলেন। মহান আল্লাহর ভাষায়,
وَلَقَدۡ أَرۡسَلۡنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوۡمِهِۦ فَلَبِثَ فِيهِمۡ أَلۡفَ سَنَةٍ إِلَّا خَمۡسِينَ عَامً۬ا فَأَخَذَهُمُ ٱلطُّوفَانُ وَهُمۡ ظَـٰلِمُونَ (١٤) فَأَنجَيۡنَـٰهُ وَأَصۡحَـٰبَ ٱلسَّفِينَةِ وَجَعَلۡنَـٰهَآ ءَايَةً۬ لِّلۡعَـٰلَمِينَ (١٥)
অর্থঃ আমি নূহকে তাদের সম্প্রদায়ের কাছে পাঠাই এবং সে তাদের মধ্যে থাকে পঞ্চাশ কম এক হাজার বছর৷ শেষ পর্যন্ত তুফান তাদেরকে ঘিরে ফেলে এমন অবস্থায় যখন তারা জালেম ছিল৷ তারপর আমি নূহকে ও নৌকা আরোহীদেরকে রক্ষা করি এবং একে বিশ্ববাসীর জন্য একটি শিক্ষণীয় নিদর্শন করে রাখি৷ (সুরা আন কাবুত ২৯:১৪-১৫)।
এরপর নূহ আলাইহিস সালামের কওম দ্বারাই প্রথম শির্ক শুরু হয়। তাদের সময়ের প্রসিদ্ধ ও সম্মানিত ব্যক্তিদের স্মরণার্থে তাদেরই প্রতিকৃতি বা মূর্তি স্থাপন করে। প্রথমত, এগুলোকে তারা এমনিতেই তৈরী করেছিল। তারা এগুলোকে সম্মানও দেখাত না, পূজাও করত না। তাদের সাধু সজ্জনদের মূর্তি বা প্রতিকৃতি বানায়ে এ সব সাধুজনদের নামেই তারা এগুলোর নামকরণ করেছিল। কিছুদিন পর শুরু হয় এগুলোর প্রতি মাত্রাতিরিক্ত সম্মান প্রদর্শন, যার অনিবার্য পরিণতিতে কিছুদিনের মধ্যে এগুলো পূজার বস্তুতে পরিণত হয়। মৃত ধার্মিক মুসলমানদের শ্রদ্ধা ও প্রশংসায় অতিরঞ্জন হতেই শির্কের সূত্রপাত হয়। এভাবেই আদম সন্তান মুশরিক জাতিতে পরিণত হয়।
ইমাম বুখারী ইবনে আব্বাস রাদি: সূত্র রর্ণনা করেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে প্রতিমার পূজা নূহ আলাইহিস সালামের জাতির মাঝে প্রচলিত ছিল, পরবর্তী সময়ে আরবদের মাঝেও তার পূজা প্রচলিত হয়েছিল। ওয়াদ ‘দুমাতুল জান্দাল’ নামক স্থানে অবস্থিত কালব গোত্রের একটি দেবমূর্তি, সূওয়া’আ হল হুযাইল গোত্রের একটি দেবমূর্তি এবং ইয়াগুস ছিল মুরাদ গোত্রের, অবশ্য পরে তা গাতীফ গোত্রের হয়ে যায়। এর আস্তানা ছিল কওমে সাবার নিকটে ‘জাওফ’ নামক স্থানে। ইয়াউক ছিল হামাদান গোত্রের দেবমূর্তি, নাসর ছিল যুলকালা গোত্রের হিমযায় শাখারদের মূর্তি। নূহ আলাইহিস সালামের জাতির কতিপয় নেক লোকের নাম নাসর ছিল। তারা মারা গেলে, শয়তান তাদের জাতির লোকদের হৃদয়ে এই কথা ঢুকিয়ে দিল যে, তারা যেখানে বসে মজলিস করত, সেখানে তোমরা কিছু মূর্তি স্থাপন কর এবং ঐ সকল নেক লোকের নামানুসারেই এগুলোর নামকরণ কর। সুতরাং তারা তাই করল, কিন্তু তখনও ঐসব মূর্তির পূজা করা হত না। তবে মূর্তি স্থাপনকারী লোকগুলো মারা গেলে এবং মূর্তিগুলো সম্পর্কে সত্যিকারের জ্ঞান বিলুপ্ত হলে লোকজন তাদের পূজা করতে শুরু করে দেয়। (সহিহ বুখারি হাদিস -৪৫৫৫)
এই মুশরিক জাতিকে আল্লাহর পথে ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি বিভিন্ন সময় নবী আলাইহিস সালামদের প্রেরণ করেন। আর আদম সন্তানের নাম রাখেন “মুসলিম”। মহান আল্লাহ বলেন,
وَجَـٰهِدُواْ فِى ٱللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِۦۚ هُوَ ٱجۡتَبَٮٰكُمۡ وَمَا جَعَلَ عَلَيۡكُمۡ فِى ٱلدِّينِ مِنۡ حَرَجٍ۬ۚ مِّلَّةَ أَبِيكُمۡ إِبۡرَٲهِيمَۚ هُوَ سَمَّٮٰكُمُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ مِن قَبۡلُ وَفِى هَـٰذَا (٧٨)
অর্থঃ এবং জিহাদ কর আল্লাহর পথে যেভাবে জিহাদ করা উচিত। তিনি তোমাদিগকে মনোনিত করিয়াছেন।
তিনি দীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেন নাই। ইহা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের
মিল্লাত। তিনি (আল্লাহ্) পূর্বে তোমাদের নামকরণ করিয়াছেন ‘মুসলিম’ এবং এই কিতাবেও”। (সূরা হাজ্জ ২২:৭৮)।
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসারীদেরকে কুরআনে ইবরাহীমের মিল্লাতের ওপর প্রতিষ্ঠিত বলা হয়েছে। যদিও ইসলামকে ইবরাহীমের মিল্লাতের ন্যায় নূহের মিল্লাত, মূসার মিল্লাত ও ঈসার মিল্লাত বলা যেতে পারে কিন্তু কুরআন মজীদে বার বার একে ইবরাহীমের মিল্লাত বলা হয়েছে কারণ কুরআনের বক্তব্যের প্রথম লক্ষ ছিল আরবরা, আর তারা ইবরাহীমের সাথে যেভাবে পরিচিত ছিল তেমনটি আর কারো সাথে ছিল না। তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আকীদা-বিশ্বাস যার ব্যক্তিত্বের প্রভাব সর্বব্যাপী ছিল তিনি ছিলেন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম। এবং হযরত ইবরাহীমই এমন এক ব্যক্তি ছিলেন যাঁর উন্নত চরিত্রের ব্যাপারে ইহুদী, খৃষ্টান, মুসলমান, আরবীয় মুশরিক ও মধ্যপ্রাচ্যের সাবেয়ী তথা নক্ষত্রপূজারীরা সবাই একমত ছিল। নবীদের মধ্যে দ্বিতীয় এমন কেউ ছিলেন না এবং নেই যার ব্যাপারে সবাই একমত হতে পারে।
কিন্তু আয়াতে পরিস্কারভাবে বলা হয়েছে আমরা ইব্রাহীমের মিল্লাতের ওপর প্রতিষ্ঠিত হলেও ইহার পূর্বে স্বয়ং আল্লাহ আমদের নাম রেখেছেন মুসলিম। অর্থাৎ ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের নবুয়তের সময় নয়। বরং মানব ইতিহাসের সূচনা লগ্ন থেকেই যারা তাওহীদ, আখেরাত, রিসালাত ও আসমানী কিতাবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী দলভুক্ত থেকেছে তাদের সবাইকেই এখানে সম্বোধন করা হয়েছে। এখানে মূল বক্তব্য হচ্ছে, এ সত্য মিল্লাতের অনুসারীদেরকে কোনদিন "নূহী" "ইবরাহিমী", "মুসাবী" ইত্যাদি বলা হয়নি বরং তাদের নাম ‘মুসলিম’ (আল্লাহর ফরমানের অনুগত) ছিল।
অপর পক্ষে মহান আল্লাহ ইহুদী ও খৃষ্টান না হয়ে সরাসরি ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের মিল্লাতের অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
وَقَالُواْ ڪُونُواْ هُودًا أَوۡ نَصَـٰرَىٰ تَہۡتَدُواْۗ قُلۡ بَلۡ مِلَّةَ إِبۡرَٲهِـۧمَ حَنِيفً۬اۖ وَمَا كَانَ مِنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ (١٣٥)
অর্থঃ ইহুদিরা বলে, “ইহুদি হয়ে যাও, তাহলে সঠিক পথ পেয়ে যাবে৷” খৃস্টানরা বলে, “খৃস্টান হয়ে যাও, তা হলে হিদায়াত লাভ করতে পারবে৷ ওদেরকে বলে দাও, “না, তা নয়; বরং এ সবকিছু ছেড়ে একমাত্র ইবরাহীমের পদ্ধতি অবলম্বন করো৷ আর ইবরাহীম মুশরিকদের অন্তরভুক্ত ছিল না। (সূরা বাকারা ২:১৩৫)।
কুরআনের সুরা বাকারার ১৩২ ও ১৩৩ আয়াতে দেখা যায় ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের বংশধর ইসমাঈল, ইসহাক ও ইয়াকুর সকলে মুসলিম ছিল। এবং তাদের সন্তানদেরকেও মুসলিম হিসাবে মৃত্যুবরণ করার জন্য নসিহত করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
أَمۡ كُنتُمۡ شُہَدَآءَ إِذۡ حَضَرَ يَعۡقُوبَ ٱلۡمَوۡتُ إِذۡ قَالَ لِبَنِيهِ مَا تَعۡبُدُونَ مِنۢ بَعۡدِى قَالُواْ نَعۡبُدُ إِلَـٰهَكَ وَإِلَـٰهَ ءَابَآٮِٕكَ إِبۡرَٲهِـۧمَ وَإِسۡمَـٰعِيلَ وَإِسۡحَـٰقَ إِلَـٰهً۬ا وَٲحِدً۬ا وَنَحۡنُ لَهُ ۥ مُسۡلِمُونَ (١٣٣)
অর্থঃ তোমরা কি তখন সেখানে উপস্থিত ছিলে, যখন ইয়াকুব এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছিল? মৃত্যুকালে সে তার সন্তানদের জিজ্ঞেস করলো, আমার পর তোমরা কার বন্দেগী করবে? তারা সবাই জবাব দিল, আমরা সেই এক আল্লাহর বন্দেগী করবো, যাকে আপনি এবং আপনার পূর্বপুরুষ ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাক ইলাহ হিসেবে মেনে এসেছেন আর আমরা তাঁরই অনুগত মুসলিম৷ (সূরা বাকারা ২:১৩৩)।
মহান আল্লাহ আরও বলেন,
وَوَصَّىٰ بِہَآ إِبۡرَٲهِـۧمُ بَنِيهِ وَيَعۡقُوبُ يَـٰبَنِىَّ إِنَّ ٱللَّهَ ٱصۡطَفَىٰ لَكُمُ ٱلدِّينَ فَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ (١٣٢)
অর্থঃ ঐ একই পথে চলার জন্য সে তার সন্তানদের উপদেশ দিয়েছিল এবং এরি উপদেশ দিয়েছিল ইয়াকুবও তার সন্তানদেরকে৷ সে বলেছিল, “আমার সন্তানেরা! আল্লাহ তোমাদের জন্য এই দ্বীনটিই পছন্দ করেছেন। কাজেই আমৃত্যু তোমরা মুসলিম থেকো ৷(সূরা বাকারা ২:১৩২)।
সৃষ্টির আদিতে আমাদের নাম দিলেন মুসলিম। ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ও তার বংশধর ইসমাঈল, ইসহাক ও ইয়াকুরের সময়ও আদম সন্তানের নাম মুসলিম ছিল। তাহলে অন্য নবী আলাইহিস সালামদের যুগে আদম সন্তানদের নাম কি ছিল? তখন ও আদম সন্তানের নাম মুসলিম ছিল। মহান আল্লাহ বলেন,
فَلَمَّآ أَحَسَّ عِيسَىٰ مِنۡہُمُ ٱلۡكُفۡرَ قَالَ مَنۡ أَنصَارِىٓ إِلَى ٱللَّهِۖ قَالَ ٱلۡحَوَارِيُّونَ نَحۡنُ أَنصَارُ ٱللَّهِ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَٱشۡهَدۡ بِأَنَّا مُسۡلِمُونَ (٥٢)
অর্থঃ যখন ঈসা অনুভব করলো, ইসরাঈল কুফরী ও অস্বীকার করতে উদ্যেগী হয়েছে, সে বললো, ‘‘কে হবে আল্লাহর পথে আমার সাহায্যকারী? হাওয়ারীগণ বলল, আমরা আল্লাহর সাহায্যকারী৷আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি ৷ সাক্ষী থাকো, আমরা মুসলিম। (সূরা আল ইমরান ৩:৫২)।
নবী রাসূলগণ নিজেরা মুসলিম হিসাবে মৃত্যু বরণ করার আকাংখা প্রকাশ করেছেন। যেমন ইউসুফ আলাইহিস সালাম দোয়া করেন।
(কুরআনের ভাষায়),
رَبِّ قَدۡ ءَاتَيۡتَنِى مِنَ ٱلۡمُلۡكِ وَعَلَّمۡتَنِى مِن تَأۡوِيلِ ٱلۡأَحَادِيثِۚ فَاطِرَ ٱلسَّمَـٰوَٲتِ وَٱلۡأَرۡضِ أَنتَ وَلِىِّۦ فِى ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأَخِرَةِۖ تَوَفَّنِى مُسۡلِمً۬ا وَأَلۡحِقۡنِى بِٱلصَّـٰلِحِينَ (١٠١)
অর্থঃ হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে রাজ্য দান করিয়াছ এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দিয়াছ। হে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা! তুমিই ইহলোক ও পরলোকে আমার অভিভাবক। তুমি আমাকে মুসলিম হিসাবে মৃত্যু দাও এবং আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের আর্ন্তভুক্ত কর”। (সূরা ইউসুফ ১২:১০১)।
এমনকি ফিরআউনের দরবারে আগত জাদুকরেরাও আল্লাহ্তাআ’লার কাছে মুসলিম হিসাবে মৃত্যুবরণ করার জন্য ফরিয়াদ করিয়াছিলেন।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَا تَنقِمُ مِنَّآ إِلَّآ أَنۡ ءَامَنَّا بِـَٔايَـٰتِ رَبِّنَا لَمَّا جَآءَتۡنَاۚ رَبَّنَآ أَفۡرِغۡ عَلَيۡنَا صَبۡرً۬ا وَتَوَفَّنَا مُسۡلِمِينَ (١٢٦)
অর্থঃ (যাদুকরগন ফিরআউনকে বলিল) তুমি তো আমাদিগকে শাস্তি দিতেছ শুধু এইজন্য যে, আমরা আমাদের প্রতিপালকের নির্দেশে ঈমান আনিয়াছি, যখন নিদর্শসমূহ আমাদের নিকট আসিয়াছে। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদিগকে ধৈর্য্য দান কর এবং মুসলমানরূপে আমাদের মৃত্যু দাও”। (সূরা আ’রাফ ৭:১২৬)।
ইসলাম ধর্ম ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসারী হিসাবে আমাদের পরিচয় কি হবে?
এ প্রশ্নের উত্তর স্বয়ং আল্লাহ বলেন,
يَـٰٓأَيُّہَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ (١٠٢)
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ ! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় করো৷ এবং তোমরা মুসলিম না হইয়া কোন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করিও না”। (সূরা ইমরান ৩:১০২)।
মহান আল্লাহ বলেন,
قُلۡ يَـٰٓأَهۡلَ ٱلۡكِتَـٰبِ تَعَالَوۡاْ إِلَىٰ ڪَلِمَةٍ۬ سَوَآءِۭ بَيۡنَنَا وَبَيۡنَكُمۡ أَلَّا نَعۡبُدَ إِلَّا ٱللَّهَ وَلَا نُشۡرِكَ بِهِۦ شَيۡـًٔ۬ا وَلَا يَتَّخِذَ بَعۡضُنَا بَعۡضًا أَرۡبَابً۬ا مِّن دُونِ ٱللَّهِۚ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَقُولُواْ ٱشۡهَدُواْ بِأَنَّا مُسۡلِمُونَ (٦٤)
অর্থঃ বলঃ হে আহলি কিতাব! এসো এমন একটি কথার দিকে, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই ধরনের৷ তা হচ্ছেঃ আমরা আল্লাহ ছাড়া কারোর বন্দেগী ও দাসত্ব করবো না৷ তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবো না৷ আর আমাদের কেউ আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেও নিজের রব হিসেবে গ্রহন করবে না ৷ যদি তারা এ দাওয়াত গ্রহণ করতে প্রস্তুত না হয়, তাহলে পরিষ্কার বলে দাওঃ ‘‘তোমরা সাক্ষী থাকো, আমরা অবশ্যি মুসলিম। (সূরা আল ইমরান ৩:৬৪)।
মহান আল্লাহ বলেন,
قُلۡ إِنَّ صَلَاتِى وَنُسُكِى وَمَحۡيَاىَ وَمَمَاتِى لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَـٰلَمِينَ (١٦٢) لَا شَرِيكَ لَهُ ۥۖ وَبِذَٲلِكَ أُمِرۡتُ وَأَنَا۟ أَوَّلُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ (١٦٣)
অর্থঃ বল, আমার নামায, আমার ইবাদাতের সমস্ত অনুষ্ঠান, আমার জীবন ও মৃত্যু সবকিছু আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্য, তাঁহার কোন শরীক নাই এবং আমি ইহারই জন্য আদিষ্ট হইয়াছি এবং আমি প্রথম মুসলিম”। (সূরা আনাম ৬:১৬২-১৬৩)।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَلَا تُجَـٰدِلُوٓاْ أَهۡلَ ٱلۡڪِتَـٰبِ إِلَّا بِٱلَّتِى هِىَ أَحۡسَنُ إِلَّا ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ مِنۡهُمۡۖ وَقُولُوٓاْ ءَامَنَّا بِٱلَّذِىٓ أُنزِلَ إِلَيۡنَا وَأُنزِلَ إِلَيۡڪُمۡ وَإِلَـٰهُنَا وَإِلَـٰهُكُمۡ وَٲحِدٌ۬ وَنَحۡنُ لَهُ ۥ مُسۡلِمُونَ (٤٦)
অর্থঃ আর উত্তম পদ্ধতিতে ছাড়া আহলে কিতাবের সাথে বিতর্ক করো না, তবে তাদের মধ্যে যারা জালেম তাদেরকে বলে, “আমরা ঈমান এনেছি আমাদের প্রতি যা পাঠানো হয়েছে তার প্রতি এবং তোমাদের প্রতি যা পাঠানো হয়েছিল তার প্রতিও, আমাদের ইলাহ ও তোমাদের ইলাহ একজনই এবং আমরা মুসলিম”। (সূরা আনকাবূত ২৯:৪৬)।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَنۡ أَحۡسَنُ قَوۡلاً۬ مِّمَّن دَعَآ إِلَى ٱللَّهِ وَعَمِلَ صَـٰلِحً۬ا وَقَالَ إِنَّنِى مِنَ ٱلۡمُسۡلِمِينَ (٣٣)
অর্থঃ সেই ব্যক্তির কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হবে যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, সৎ কাজ করলো এবং ঘোষণা করলো আমি মুসলিম৷(হা মীম আস্-সাজদা ৪১:৩৩)।
উপরের আয়াতসমূহের দ্বারা কি এটাই দ্ব্যার্থহীনভাবে প্রমাণিত হয়, যে ইসলামের অনুসারীদের একটিই পরিচয়
সেটি হচ্ছে ‘মুসলিম’।
দ্বীনের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে অন্য নাম করনের যৌক্তিকতা কোথায়?
একটা সহজ উদাহরণ দিলে ব্যপারটা বুঝা অনেক সহজ হবে।
কোন আদম সন্তানের জন্মের পরই তার জন্মদাতা পিতামাতা সুন্দর একটা নাম রাখেন। এই নামেই সকলে তাকে চিনে এবং সমাজে পরিচিতি লাভ করেন। কিন্তু যদি সন্তানটি বড় হওয়ার প্রাককালে সৃত্মিশক্তি হারিয়ে জন্মদাতা পিতামাতা হারিয়ে ফেলে। তার হারানোর সাথে সাথে আনল নামটিও হারিয়ে যাবে। হারান সন্তারটি যারা পাবেন বা তার শেষ ঠিকানা, যেখানে সে লালিত পালিত হবে তারাও তার একটি নাম রাখবেন। অর্থাৎ সে যেখানে বড় হবে তাদের দেওয়া নামটি তার শেষ পরিচয় থাকবে। সে যদি আবার সত্যিকারের পিতামাতার নিকট ফিরে আসে তখই আসল নামটি ফিরে পাবে।
সৃষ্টির শুরুতে আদম সন্তান মুসলিম নামে পরিচিতি লাভ করে। কালের আবর্তে সে তার সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহকে ভুলে যায়। আর মূর্তি পূজার মাধ্যমে সে তার নাম মুশরিকের খাতায় লিপিবদ্ধ করে। নুহ আলাইহিস সালামের আহবানে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে আবার চিনতে পেরে নিজেরদের হারান নাম মুসলিম ফিরে পায়। আবার ও কালের পরিক্রমায় সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহকে ভুলে যায়। তাদের পরিচয় দান কারি নামের ও পরিবর্তন ঘটে। আবার নবী রাসূলগনের আহবানে আল্লাহর পরিচয় পেয়ে মুসলিম নাম ফিরে পায়। উপরের আয়তগুলি একথারই সাক্ষ্য বহন করে। দলিল হিসাবে আল্লাহর বাণীর সমকক্ষ আর কে আছে?
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইসলামের প্রতি মানুষকে আহবান করেন। তখন আরবের লোকদের প্রধান তিনটি নামে পরিচিত ছিল। মক্কার অধিকাংশ ছিল মুশরিক, মদিনার অধিকাংশ ছিল ইয়াহুদি আর সিরিয়া ও ফিলিস্থানির অধিকাংশ ছিল খৃষ্টান। যখনই কেই ইসলাম ধর্ম গ্রহন করত তখন তাকে মুসলিম বলা হত। কিন্তু বর্তমানে আমাদরেকে মুসলিম হওয়ার পাশাপাশি শিয়া, খারিজী, মুতাযিলী, জাহমী, কাদারী, জাবারী সুন্নী, সালাফি, হানাফী, মালেকী, শা’ফী, হাম্বলী, আহলে হাদিস, তরিকতপন্থী, মারেফতপন্থী, হাকিকতপন্থী ইত্যাদি হতে হবে অনেকে প্রচার চালাচ্ছে। ইসলামের নামে শুদ্ধ অশুদ্ধ আকিদা বিশ্বাস জাহির করে নিজের দল আর মতকে একেবারে খাটি আর বিশুদ্ধ প্রমানে আপ্রান চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রতিনিয়ত নানান যুক্তি উপস্থাপন করছেন। নিজের মত অনুযায়ী জাল-জয়ীফ হাদিসের তোয়াক্কা করছেনা। এমনি অনেকে হাদিস বানিয়ে প্রচারে পিছপা হচ্ছে না। তাহলে এক ইসলামকে এত ভাগে ভাগ করে বিভিন্ন নামে টুকরা টুকরা করার অনুমতি এদেরকে কে দিয়েছে?
এই বিভিন্ন দল বা ফিকরা নিয়ে আলোচনা করলে বুঝতে পারা যাবে মুসলিম ছেড়ে কেন অন্য পরিচয় হল। তার আগেই জেনে নই এই ফিরকাবাজি কি মহান আল্লাহ পছন্দ করেন? ইসলাম কি নতুন নতুন দল বা ফিরকা সৃষ্টিকে সমর্থন করেন? এসকল প্রশ্নের উত্তর খুজব কুরআনুল কারিমে।
পূর্ববর্তী নবীদের প্রচারিত সত্য দ্বীনের সরল ও সুস্পষ্ট শিক্ষা লাভ করে উম্মাতের অনেকে সঠিক জীবন যাপন করেছিল। কিন্তু কিছুদিন অতিবাহিত হবার পর দ্বীনের মূল বিষয়গুলো পরিত্যাগ করে দ্বীনের সাথে সম্পর্ক বিহীন গৌণ ও অপ্রয়োজনীয় খুঁটিনাটি বিষয়াবলীর ভিত্তিতে নিজেদেরকে একটি আলাদা ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে গড়ে তুলতে শুরু করে। তারপর অবান্তর ও আজেবাজে কথা নিয়ে এমনভাবে কলহে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। আল্লাহ তাদের ওপর যে দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিলেন তার কথাই তারা ভুলে গিয়েছিল নতুন নতুন ফির্কা তৈরি করে ছিল। ফলে তারা বিভ্রান্ত জাতিতে পরিণত হয়। আর এদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَلا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ وَأُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
অর্থঃ তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আসার পরে বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং মতভেদ করেছে, এদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি। (সূরা আল-ইমরান ৩:১০৫)।
মুশরিকদের অন্যতম খারাপ দিক হল দ্বীনের মধ্যে বিভক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন দলে ভাগ হওয়া। প্রত্যেক দলই তাদের নিজেদের হক মনে করে এবং নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে আনন্দিত থাকে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন:
مُنِيبِينَ إِلَيۡهِ وَٱتَّقُوهُ وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَلَا تَكُونُواْ مِنَ ٱلۡمُشۡرِڪِينَ (٣١) مِنَ ٱلَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُمۡ وَڪَانُواْ شِيَعً۬اۖ كُلُّ حِزۡبِۭ بِمَا لَدَيۡہِمۡ فَرِحُونَ (٣٢)
অর্থঃ আল্লাহ অভিমুখী হয়ে এবং তাকে ভয় করো, আর নামায কায়েম করো এবং এমন মুশরিকদের অন্তরভুক্ত হয়ে যেয়ো না, যারা নিজেদের আলাদা আলাদা দ্বীন তৈরি করে নিয়েছে আর বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উৎফুল্ল। (সূরা রূম ৩০:৩১-৩২)।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন:
فَتَقَطَّعُوٓاْ أَمۡرَهُم بَيۡنَہُمۡ زُبُرً۬اۖ كُلُّ حِزۡبِۭ بِمَا لَدَيۡہِمۡ فَرِحُونَ (٥٣) فَذَرۡهُمۡ فِى غَمۡرَتِهِمۡ حَتَّىٰ حِينٍ (٥٤)
অর্থঃ কিন্তু তাহারা নিজেদের দ্বীনের মধ্যে বহু বিভক্ত করিয়াছে। প্রত্যেক দলই তাহাদের নিকট যাহা আছে তাহা লইয়া আনন্দিত। সুতরাং কিছু কালের জন্য উহাদিগকে স্বীয় বিভ্রান্তিতে থাকিতে দাও”। (সূরা মু'মিনূন ২৩:৫৩-৫৪)।
দ্বীনের মধ্যে বিভক্তির মাধ্যমে যারা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়েছে, তাদের সাথে আল্লাহর রাসূল (সা:) কে সম্পর্ক ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্য আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু বলেন:
إِنَّ ٱلَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَہُمۡ وَكَانُواْ شِيَعً۬ا لَّسۡتَ مِنۡہُمۡ فِى شَىۡءٍۚ إِنَّمَآ أَمۡرُهُمۡ إِلَى ٱللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُہُم بِمَا كَانُواْ يَفۡعَلُونَ (١٥٩)
অর্থঃ নিশ্চয়ই যারা নিজেদের দীনকে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে নিসন্দেহে তাদের সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই৷ তাদের ব্যাপারে আল্লাহর ওপর ন্যাস্ত রয়েছে৷ তারা কি করেছে, সে কথা তিনিই তাদেরকে জানাবেন। (সূরা আন‘আম: ১৫৯ আয়াত)
ইসলামের মধ্যে বিভক্তি, বিচ্ছিন্নতা বা দলাদলি করা সম্পু্র্ণ নিষেধ। সকল নবীকেই দ্বীনের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি না করার বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ দ্বীন প্রতিষ্ঠার বিপরীতে বিভক্তির কথা উল্লেখ করেছেন। এতে প্রতীয়মান হয় যে, দীন প্রতিষ্ঠা বলতে দীনের বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরি। আর সীমালঙ্ঘন ও বিদ্বেষ বিভক্তি বা দলাদলির মূল কারণ।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,
شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ مَا وَصَّى بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ
অর্থঃ তিনি তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন দীন, যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি নূহকে আর যা আমি ওহী করেছি আপনাকে এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা এবং ঈসাকে, এ বলে যে, তোমরা দ্বীন প্রতিষ্ঠা কর এবং তাতে দলাদলি-বিচ্ছিন্নতা করো না।” (সূরা শুরা ৪২:১৩)
পূর্ববর্তী উম্মাতগুলোর মতভেদ ও বিভক্তি প্রসঙ্গে কুরআনুল কারীমে বারবারই বলা হয়েছে যে, জ্ঞানের আগমনের পরেও তারা বাড়াবাড়ি করে বিভক্ত হয়েছে। আল্লাহ বলেন:
وَمَا تَفَرَّقُوا إِلَّا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ
অর্থঃ তাদের নিকট ইলম আগমনের পরে পারস্পরিক বাড়াবাড়ি করেই শুধু তারা দলাদলি করেছে। (সূরা শূরা ৪২:১৪)।
যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, “পূর্ববর্তী উম্মাতগণের ব্যাধি তোমাদের মধ্যে ধীরে ধীরে প্রবেশ করছে, সে ব্যাধি হলো হিংসা ও বিদ্বেষ। বিদ্বেষ মুণ্ডনকারী। আমি বলি না যে, তা মাথার চুল মুণ্ডন করে, বরং তা দীন মুণ্ডন করে। যারা হাতে আমার জীবন তার শপথ! ঈমানদার না হলে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আর তোমরা পরস্পরকে ভাল না বাসলে ঈমানদার হবে না। আমি কি তোমাদেরকে সে বিষয়ের কথা বলব না যা তোমাদের মধ্যে পারস্পারিক ভালবাসা প্রতিষ্ঠিতি করবে। তোমাদের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও।” (তিরমিযী, আস-সুনান ৪/৬৬৪। আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন)।
অপর পক্ষে মহান আল্লাহ দলাদলি বা বিভক্তি বাদ দিয়ে তাহার রজ্জুকে শক্তভাবে আকড়ে ধরতে বলেছেন।
আল্লাহ্ সুবহানাহুতাআ’লা বলেন,
وَٱعۡتَصِمُواْ بِحَبۡلِ ٱللَّهِ جَمِيعً۬ا وَلَا تَفَرَّقُواْۚ (١٠٣)
অর্থঃ তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রুজ্জু মজবুতভাবে আকঁড়ে ধরো এবং দলাদলি করো না৷ (সূরা ইমরান ৩:১০৩)।
উপরের আয়াতে মহান আল্লাহর স্পষ্ট ঘোষনা করেন,
১। দলাদলি বা বিভক্তিকে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। যারা দলাদলি বা ফির্কাবাজি করবে তাদের জন্য রয়েছে চরম শাস্তি।
২। দ্বীনের মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি করা মুশরিকদের অন্যতম খারাপ গুন ।
৩। যারা দলাদলি বা ফিরকাবাজি করে তারা মহা বিভ্রান্তিতে আছে।
৪। সকল নবীকেই দ্বীনের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি না করার বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এমনকি শেষ রাসূল (সা:) কে নির্দেশ দিয়েছেন, ঐ সকল লোকের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের, যারা দ্বীনের মধ্যে দলাদলি বা ফির্কাবাজির সৃষ্টি করে।
৫। দলাদলি বা ফিরকাবাজি বাদ দিয়ে তাহার রজ্জুকে শক্তভাবে আকড়ে ধরতে বলেছেন।
যারা আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে ব্যক্তি নিজের খেয়াল খুশির অনুসরণ করে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হবে তারাই পথ ভ্রষ্ট। এমন লোকদের মহান আল্লাহ হিদায়েত দেন না।
আল্লাহ্ সুবহানাহুতাআ’লা বলেন,
فَإِن لَّمۡ يَسۡتَجِيبُواْ لَكَ فَٱعۡلَمۡ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهۡوَآءَهُمۡۚ وَمَنۡ أَضَلُّ مِمَّنِ ٱتَّبَعَ هَوَٮٰهُ بِغَيۡرِ هُدً۬ى مِّنَ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَہۡدِى ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّـٰلِمِينَ (٥٠)
অর্থঃ আল্লাহর পথনির্দেশ অগ্রাহ্য করিয়া যে ব্যক্তি নিজের খেয়াল খুশির অনুসরণ করে তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? আল্লাহ্ যালিম সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না”। (সূরা কাসাস ২৮:৫০)। (১)
যুক্তিঃ-
এখন আমি সমাজে প্রচলিত কিছু যুক্তি খন্ডন করবো,
যুক্তিঃ-
১) আমাদের নাম তো মুসলিম তাহলে আমাদের পিতামাতা আমাদের কেন জিয়ানুর রহমান-তমুক নাম রাখলেন।
খন্ডনঃ- প্রথমে বলে রাখি, এই ধরনের কথা সাধারণত বক্তাদের কাছ থেকে শুনা যায় আলেমদের কাছ থেকে নয়।
একটু লক্ষ্য করুন যুক্তিটি কতটুকু শক্তিশালী, বলা হলো আল্লাহ আমাদের জাতি হিসাবে নাম রেখেছেন মুসলিম কিন্তু সেখানে যুক্তি হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে ব্যক্তি হিসাবে।
পরিষ্কার করি, আমার বাবার আমরা তিন ছেলে, তিন জনের তিনটা নাম আছে যথাক্রমে আব্দুর রহিম, আব্দুর করিম,আব্দুর জব্বার এই তিনটা নাম থেকে কি কোন দলের নাম বা মতাদর্শ বুঝাচ্ছে?
উত্তর স্বাভাবিক না।
কিন্তু আমি যদি বলি হানাফি, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী কিংবা সালাফি তখন কিন্তু ভিন্ন মত বোঝাচ্ছে আর যারা শুক্ষ্ণ পার্থক্য বোঝে না তখন এটিকে দলে বিভক্ত করছে।
২) যখন আমার বাবা আমার নাম রাখল জিয়ানুর রহমান এই নাম রাখার মাধ্যমে কিন্তু একবচন বা কোন ফিরকা বোঝাচ্ছে না কিন্তু যখন বলা হবে হানাফি বা সালাফি বা অন্য কোন নাম তখন সেটি আলাদা মতাদর্শ বা ফিরকা বোঝাবে।
আমি অনেক কে প্রশ্ন করেছিলাম এই যুক্তির লোকদের যে কোন বিধর্মী মুসলিম হতে চাইলে সে নিজেক কোন মাজহাব বা মানহাজের দাবী করবে?
উত্তর সবার জানা আছে, নিরব ভুমিকা। কেও বা বলল,
প্রথমে ইসলামের মৌলিক বিষয়ে জানবে।
আমার প্রশ্নঃ- তারপর কোন মাজহাব মানবে?
উত্তরঃ- কুরআন ও সহিহ হাদিস।
প্রশ্নঃ- তাহলে প্রথমে বলতে হতো।
উত্তরঃ- বিষয় টি নিয়ে ভাবতে হবে।
এখন আসি, দ্বিতীয় যুক্তিতে।
যুক্তিঃ- ২
শিয়া, মুতাজিলা, মুরজিয়া, মাজার পূজারি কিংবা অন্য আকিদাগত বিভ্রান্ত দল গুলি ও তো নিজেদেরকে মুসলিম বলে দাবী করে।
তাহলে তাদের কে আমরা জানব কি করে?
আর বিশেষ করে বিয়ে শাদীর ব্যাপার।
খন্ডনঃ-
প্রথমে যুক্তির অর্ধেক অংশ নেই, কেও যদি আকিদাগত বিভ্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও মুসলিম দাবি করলে আমরা কি করবো?
আমার প্রশ্ন উনাদের কাছে?
তারাও তো আমাদের কে আকিদাগত ভাবে বিভ্রান্ত বলে ও কাফের বলে এ ক্ষেত্রে আপনার জবাব কি?
উত্তরঃ- আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত বা সালফে সালেহীনের আকিদা আমাদের লালন করতে হবে।
আমার প্রশ্নঃ- আপনি ভালো ভাবে জানেন যে কিছু লোক আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত দাবি করে অথচ মৃত পীর বা ওলীদের কাছে তারা সাহায্য চায়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নুরের তৈরি বিশ্বাস করে, আল্লাহ সব জায়গায় বিরাজমান, আল্লাহর আকৃতি নেই অর্থাৎ এক কথায় সুফিবাদ দর্শনে বিশ্বাস করে আবার এই ধরনের মানুষ নিজেদের কে সত্যিকারের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত দাবী করে, আপনার উত্তর কি?
উত্তরঃ তারা কাফের।
আমার প্রশ্নঃ- তারা যে কাফের সেটি আপনি তো আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত বলার কারণে বোঝেন নি বরং আমি তাদের আকিদা বলার পরে বুঝেছেন, কিন্তু আপনাকে আমি বললাম আমি আহলে সুন্নত মানহাজের, তখন কি আপনি বিশ্বাস করবেন যে আমার মধ্যে উপরিক্ত আকিদা গুলি নেই বা কিভাবে বুঝবেন?
উত্তরঃ- শুনে, যেমন বিয়ের ক্ষেত্রে তার আকিদার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হবে।
আমিঃ- তাহলে তো হানাফি, শাফেয়ী, হাম্বলী, মালেকী বা সালাফি মানহাজ বা মাজহাব বলবে তাদের ক্ষেত্রেও?
উত্তরঃ- হ্যাঁ, তা তো বটে কারণ, নিজেকে হানাফি বা সালাফি দাবি করছে অথচ তাদের আকিদা জানেনা এ ক্ষেত্রেতো যাচাই-বাছাই করতেই হবে।
প্রশ্নঃ- তাহলে এখন বলুন আমাদের কি নামে ডাকা দরকার?
উত্তরঃ- দেখুন, সালাফিরা কিন্তু উপরিক্ত আকিদায় বিশ্বাসী না অর্থাৎ আমরা সালাফি বা আহলে হাদিস বলতে পারি।
প্রশ্নঃ- আপনি কি জানেন না যে সালাফি মানহাজের আলেমদের মধ্যেও আকিদাগত বিশেষ করে আল্লাহর সিফাত গত ব্যাপারেও পার্থক্য আছে?
উত্তরঃ- না তো।
প্রশ্নঃ- এখন আপনি বলুন আপনি কেমন সালাফি?
উত্তরঃ- ভাই, আপনি জানেন না, সালাফি বাদে সবার আকিদার ব্যাপারে সমাস্যা আছে।
প্রশ্নঃ- আমি তো নিজেকে আহলে হাদিস দাবি করিনা তার মানে আমার আকিদার ব্যাপারে সমাস্যা আছে?
উত্তরকর্তা নিশ্চুপ।
প্রশ্নঃ- আপনি কি জানেন এই যে মাজহাব বা মানহাজ এই ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ জানেনা, তবে যারা মাদ্রাসাতে পড়াশুনা করে তারা অবগত তবে সেখানে পার্থক্য আছে অধিকাংশই আকিদার ব্যাপারে জ্ঞান রাখেনা, কি বলবেন?
উত্তরঃ- আমাদের আকিদার ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করার দরকার।
প্রশ্নঃ- নিজেক যদি আহলে হাদিস বা হানাফি কিংবা অন্য নাম দিয়ে প্রচার করি তাহলে কি মানুষ গ্রহণ করবে? না নিজেকে সতন্ত্র রেখে কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক আকিদা প্রচার করলে কাজ হবে।
আমি যদি নিজেক কোন একটা গ্রুপে নিজেকে রেখে আর আকিদা প্রচার করি এবং বলছি এটিই সঠিক বাকি গুলি বাতিল।
উত্তরঃ- ভাই, বাতিল কে তো বাতিল বলতে হবে।
প্রশ্নঃ- তারাও আমাদের কে বাতিল বলছে, এ ক্ষেত্রে করণীয় কি?
,,,,,,,,,
চলছে।
বাকি "ঐক্য সম্ভব" বইতে পাবেন, ইন শা আল্লাহ।
আপনাদের যুক্তি আশা করছি।
তথ্য সহায়য়িকাঃ-
১) মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন।
২) কুরআন-সুন্নাহের আলোকে জামায়াত ও ঐক্য।(ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর)
#ZianurRahman0
9-5-2020
লেখকঃ- জিয়ানুর রহমান
আশা করি বইটি আগামী বছর বা এই বছরের শেষের দিকে বাহির করতে পারবো। ইন শা আল্লাহ।
লেখাটি টি আমি অনলাইনে প্রচার করতে চাচ্ছিলাম না, তবে আশা করছি কমেন্ট বক্স থেকে সমালোচনা পাবো। লেখাটি সংক্ষেপে করা হয়েছে। সম্পূর্ণ পড়ার পরে আপনার মতামত আশা করছি।
অধ্যায় বিবিধ বিষয়াবলীঃ-
আমাদের পরিচয়
ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَٰﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ
আমাদের পরিচয় কি?
কোন কারো পরিচয় জানার জন্য তাহার জন্ম ইতিহাস জানা একান্ত প্রয়োজন। নির্মাতা বা সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সঠিক জন্ম ইতিহাস বলা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। পরিচয় জানার আগে আমাদের জন্ম ইতিহাস জানব। এবং এই ইতিহাসই বলে দিবে কোন কালে আমাদের পরিচয় কি ছিল। আমদের সৃষ্টি কর্তা মহান আল্লাহ, তাই তিনিই জানেন আমাদের সঠিক জন্ম ইতিহাস। তিনিই জানেন, তিনি কোন কালে আমাদের কি কি নাম দিয়েছেন। এবং বর্তমানে আমাদের নাম কি রেখেছেন। তাই আসুন মহা্ন আল্লাহর কাছ থেকে জেনে নেই আমাদের জন্ম ইতিহাস। সুরা বাকারার ৩০ থেকে ৩৮ আয়াতে তিনি আমাদের জন্ম ইতিহাস এভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন,
وَإِذۡ قَالَ رَبُّكَ لِلۡمَلَـٰٓٮِٕكَةِ إِنِّى جَاعِلٌ۬ فِى ٱلۡأَرۡضِ خَلِيفَةً۬ۖ قَالُوٓاْ أَتَجۡعَلُ فِيہَا مَن يُفۡسِدُ فِيہَا وَيَسۡفِكُ ٱلدِّمَآءَ وَنَحۡنُ نُسَبِّحُ بِحَمۡدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَۖ قَالَ إِنِّىٓ أَعۡلَمُ مَا لَا تَعۡلَمُونَ (٣٠) وَعَلَّمَ ءَادَمَ ٱلۡأَسۡمَآءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَہُمۡ عَلَى ٱلۡمَلَـٰٓٮِٕكَةِ فَقَالَ أَنۢبِـُٔونِى بِأَسۡمَآءِ هَـٰٓؤُلَآءِ إِن كُنتُمۡ صَـٰدِقِينَ (٣١) قَالُواْ سُبۡحَـٰنَكَ لَا عِلۡمَ لَنَآ إِلَّا مَا عَلَّمۡتَنَآۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَلِيمُ ٱلۡحَكِيمُ (٣٢) قَالَ يَـٰٓـَٔادَمُ أَنۢبِئۡهُم بِأَسۡمَآٮِٕہِمۡۖ فَلَمَّآ أَنۢبَأَهُم بِأَسۡمَآٮِٕہِمۡ قَالَ أَلَمۡ أَقُل لَّكُمۡ إِنِّىٓ أَعۡلَمُ غَيۡبَ ٱلسَّمَـٰوَٲتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَأَعۡلَمُ مَا تُبۡدُونَ وَمَا كُنتُمۡ تَكۡتُمُونَ (٣٣) وَإِذۡ قُلۡنَا لِلۡمَلَـٰٓٮِٕكَةِ ٱسۡجُدُواْ لِأَدَمَ فَسَجَدُوٓاْ إِلَّآ إِبۡلِيسَ أَبَىٰ وَٱسۡتَكۡبَرَ وَكَانَ مِنَ ٱلۡكَـٰفِرِينَ (٣٤) وَقُلۡنَا يَـٰٓـَٔادَمُ ٱسۡكُنۡ أَنتَ وَزَوۡجُكَ ٱلۡجَنَّةَ وَكُلَا مِنۡهَا رَغَدًا حَيۡثُ شِئۡتُمَا وَلَا تَقۡرَبَا هَـٰذِهِ ٱلشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ ٱلظَّـٰلِمِينَ (٣٥) فَأَزَلَّهُمَا ٱلشَّيۡطَـٰنُ عَنۡہَا فَأَخۡرَجَهُمَا مِمَّا كَانَا فِيهِۖ وَقُلۡنَا ٱهۡبِطُواْ بَعۡضُكُمۡ لِبَعۡضٍ عَدُوٌّ۬ۖ وَلَكُمۡ فِى ٱلۡأَرۡضِ مُسۡتَقَرٌّ۬ وَمَتَـٰعٌ إِلَىٰ حِينٍ۬ (٣٦) فَتَلَقَّىٰٓ ءَادَمُ مِن رَّبِّهِۦ كَلِمَـٰتٍ۬ فَتَابَ عَلَيۡهِۚ إِنَّهُ ۥ هُوَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ (٣٧) قُلۡنَا ٱهۡبِطُواْ مِنۡہَا جَمِيعً۬اۖ فَإِمَّا يَأۡتِيَنَّكُم مِّنِّى هُدً۬ى فَمَن تَبِعَ هُدَاىَ فَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡہِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ (٣٨)
অর্থঃ আবার সেই সময়ের কথা একটু স্মরণ কর যখন তোমাদের রব ফেরেশতাদের বলেছিলেন, আমি পৃথিবীতে একজন খলীফা- প্রতিনিধি নিযুক্ত করতে চাই৷” তারা বললো, “আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে নিযুক্ত করতে চান যে সেখানকার ব্যবস্থাপনাকে বিপর্যস্থ করবে এবং রক্তপাত করবে? আপনার প্রশংসা ও স্তুতিসহকারে তাসবীহ পাঠ এবং আপনার পবিত্রতা বর্ণনা তো আমরা করেই যাচ্ছি৷ আল্লাহ বললেন, “আমি জানি যা তোমরা জানো না। (সুরা বাকারা ২:৩০)।
অতপর আল্লাহ আদমকে সমস্ত জিনিসের নাম শেখালেন তারপর সেগুলো পেশ করলেন ফেরেশতাদের সামনে এবং বললেন, যদি তোমাদের ধারণা সঠিক হয়, তাহলে একটু বলতো দেখি এই জিনিসগুলোর নাম কি? (সুরা বাকারা ২:৩১)।
তারা বললোঃ “ত্রুটিমুক্ত তো একমাত্র আপনারই সত্তা, আমরা তো মাত্র ততটুকু জ্ঞান রাখি ততটুকু আপনি আমাদের দিয়েছেন৷ প্রকৃতপক্ষে আপনি ছাড়া আর এমন কোন সত্তা নেই যিনি সবকিছু জানেন ও সবকিছু বোঝেন৷ (সুরা বাকারা ২:৩২)।
তখন আল্লাহ আদমকে বললেন,“তুমি ওদেরকে এই জিনিসগুলোর নাম বলে দাও৷” যখন সে তাদেরকে সেসবের নাম জানিয়ে দিল, তখন আল্লাহ বললেন, “আমি না তোমাদের বলেছিলাম , আমি আকাশ ও পৃথিবীর এমন সমস্ত নিগূঢ় তত্ত্ব জানি যা তোমাদের অগোচরে রয়ে গেছে? যা কিছু তোমরা প্রকাশ করে থাকো তা আমি জানি এবং যা কিছু তোমরা গোপন করো তাও আমি জানি। (সুরা বাকারা ২:৩৩)।
তারপর যখন ফেরেশতাদের হুকুম দিলাম, আদমের সামনে নত হও, তখন সবাই অবনত হলো, কিন্তু ইবলিস অস্বীকার করলো৷ সে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারে মেতে উঠলো এবং নাফরমানদের অন্তরভুক্ত হলো৷ (সুরা বাকারা ২:৩৪)।
তখন আমরা আদমকে বললাম, “তুমি ও তোমার স্ত্রী উভয়েই জান্নাতে থাকো এবং এখানে স্বাচ্ছন্দের সাথে ইচ্ছে মতো খেতে থাকো, তবে এই গাছটির কাছে যেয়ো না৷ অন্যথায় তোমরা দু’জন যালেমদের অন্তরভুক্ত হয়ে যাবে৷ (সুরা বাকারা ২:৩৫)।
শেষ পর্যন্ত শয়তান তাদেরকে সেই গাছটির লোভ দেখিয়ে আমার হুকুমের আনুগত্য থেকে সরিয়ে দিল এবং যে অবস্থার মধ্যে তারা ছিল তা থেকে তাদেরকে বের করে ছাড়লো৷ আমি আদেশ করলাম,“ এখন তোমরা সবাই এখান থেকে নেমে যাও ৷ তোমরা একে অপরের শত্রু৷ তোমাদের একটি নিদিষ্ট সময় পর্যন্ত পৃথিবীতে অবস্থান করতে ও জীবন অতিবাহিত করতে হবে ৷ (সুরা বাকারা ২:৩৬)।
তখন আদম তার রবের কাছ থেকে কয়েকটি বাক্য শিখে নিয়ে তাওবা করলো৷ তার রব তার এই তাওবা কবুল করে নিলেন ৷ কারণ তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহকারী৷ (সুরা বাকারা ২:৩৭)।
আমরা বললাম, তোমরা সবাই এখান থেকে নেমে যাও৷ এরপর যখন আমার পক্ষ থেকে কোন হিদায়াত তোমাদের কাছে পৌছুবে তখন যারা আমার সেই হিদায়াতের অনুসরণ করবে তাদের জন্য থাকবে না কোন ভয় দুঃখ বেদনা৷ (সুরা বাকারা ২:৩৮)।
হজরত আদম আলাইহিস সালামের পৃথিবীতে আগমনের পর তার জীবদ্দশায় সন্তানদের মধ্যে ধর্মবিশ্বাসে সবাই একত্ববাদের (তাওহিদ) অনুসারী ছিলেন। তারা পরিপূর্ণ ভাবে ইসলামের অনুসারী ছিল। তাই আদম আলাইহিস সালামের বংশধরদের মাঝে ধর্ম নিয়ে তেমন কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। পরিচয় নিয়েও তেমন কোন সমস্যা হয়নি। তাদের একটাই পরিচয়, তারা সকলে আদমের সন্তান। তাদের মধ্যে বিভক্তি নেই, তারা একই জাতি একই পথের অনুসারী। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
كَانَ ٱلنَّاسُ أُمَّةً۬ وَٲحِدَةً۬ فَبَعَثَ ٱللَّهُ ٱلنَّبِيِّـۧنَ مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ وَأَنزَلَ مَعَهُمُ ٱلۡكِتَـٰبَ بِٱلۡحَقِّ لِيَحۡكُمَ بَيۡنَ ٱلنَّاسِ فِيمَا ٱخۡتَلَفُواْ فِيهِۚ وَمَا ٱخۡتَلَفَ فِيهِ إِلَّا ٱلَّذِينَ أُوتُوهُ مِنۢ بَعۡدِ مَا جَآءَتۡهُمُ ٱلۡبَيِّنَـٰتُ بَغۡيَۢا بَيۡنَهُمۡۖ فَهَدَى ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لِمَا ٱخۡتَلَفُواْ فِيهِ مِنَ ٱلۡحَقِّ بِإِذۡنِهِۦۗ وَٱللَّهُ يَهۡدِى مَن يَشَآءُ إِلَىٰ صِرَٲطٍ۬ مُّسۡتَقِيمٍ (٢١٣)
অর্থঃ প্রথমে সব মানুষ একই পথের অনুসারী ছিল ৷ তখন আল্লাহ নবী পাঠান ৷ তারা ছিলেন সত্য সঠিক পথের অনুসারীদের জন্য সুসংবাদদাতা এবং অসত্য ও বেঠিক পথ অবলন্বনের পরিণতির ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শনকারী৷ আর তাদের সাথে সত্য কিতাব পাঠান, যাতে সত্য সম্পর্কে তাদের মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছিল তার মীমাংসা করা যায়৷ মতভেদ তারাই করেছিল যাদেরকে সত্যের জ্ঞান দান করা হয়েছিল৷ তারা সুস্পষ্ট পথনির্দেশ লাভ করার পরও কেবলমাত্র পরস্পরের ওপর বাড়াবাড়ি করতে চাচ্ছিল বলেই সত্য পরিহার করে বিভিন্ন পথ উদ্ভাবন করে৷ কাজেই যারা নবীদের ওপর ঈমান এনেছে তাদেরকে আল্লাহ নিজের ইচ্ছাক্রমে সেই সত্যের পথ দিয়েছেন, যে ব্যাপারে লোকেরা মতবিরোধ করেছিল৷ আল্লাহ যাকে চান সত্য সঠিক পথ দেখিয়ে দেন ৷ (সুরা বাকারা ২:২১৩)।
আদম আলাইহিস সালামের সময় কালে সকল মানুষই একত্ববাদে বিশ্বাসী ছিলেন। আদম আলাইহিস সালাম মৃত্যুর পর আস্তে আস্তে অনেকেই মহান আল্লাহকে ভুলে যান, আর এই ভুলে যাওয়া জাতিকে সতর্ক করার জন্য প্রেরণ করেন নূহ আলাইহিস সালামকে। তিনি পঞ্চাশ কম এক হাজার বছর মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবান করেন। সল্প সংখ্যক আদম সন্তান ছাড়া কেউই তাহার আহবানে সাড়া দিল না। তাই মহান আল্লাহ ন্যায় সংগতভাবে সত্য অস্বীকার কারীদের পানিতে ডুবিয়ে মারলেন। মহান আল্লাহর ভাষায়,
وَلَقَدۡ أَرۡسَلۡنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوۡمِهِۦ فَلَبِثَ فِيهِمۡ أَلۡفَ سَنَةٍ إِلَّا خَمۡسِينَ عَامً۬ا فَأَخَذَهُمُ ٱلطُّوفَانُ وَهُمۡ ظَـٰلِمُونَ (١٤) فَأَنجَيۡنَـٰهُ وَأَصۡحَـٰبَ ٱلسَّفِينَةِ وَجَعَلۡنَـٰهَآ ءَايَةً۬ لِّلۡعَـٰلَمِينَ (١٥)
অর্থঃ আমি নূহকে তাদের সম্প্রদায়ের কাছে পাঠাই এবং সে তাদের মধ্যে থাকে পঞ্চাশ কম এক হাজার বছর৷ শেষ পর্যন্ত তুফান তাদেরকে ঘিরে ফেলে এমন অবস্থায় যখন তারা জালেম ছিল৷ তারপর আমি নূহকে ও নৌকা আরোহীদেরকে রক্ষা করি এবং একে বিশ্ববাসীর জন্য একটি শিক্ষণীয় নিদর্শন করে রাখি৷ (সুরা আন কাবুত ২৯:১৪-১৫)।
এরপর নূহ আলাইহিস সালামের কওম দ্বারাই প্রথম শির্ক শুরু হয়। তাদের সময়ের প্রসিদ্ধ ও সম্মানিত ব্যক্তিদের স্মরণার্থে তাদেরই প্রতিকৃতি বা মূর্তি স্থাপন করে। প্রথমত, এগুলোকে তারা এমনিতেই তৈরী করেছিল। তারা এগুলোকে সম্মানও দেখাত না, পূজাও করত না। তাদের সাধু সজ্জনদের মূর্তি বা প্রতিকৃতি বানায়ে এ সব সাধুজনদের নামেই তারা এগুলোর নামকরণ করেছিল। কিছুদিন পর শুরু হয় এগুলোর প্রতি মাত্রাতিরিক্ত সম্মান প্রদর্শন, যার অনিবার্য পরিণতিতে কিছুদিনের মধ্যে এগুলো পূজার বস্তুতে পরিণত হয়। মৃত ধার্মিক মুসলমানদের শ্রদ্ধা ও প্রশংসায় অতিরঞ্জন হতেই শির্কের সূত্রপাত হয়। এভাবেই আদম সন্তান মুশরিক জাতিতে পরিণত হয়।
ইমাম বুখারী ইবনে আব্বাস রাদি: সূত্র রর্ণনা করেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে প্রতিমার পূজা নূহ আলাইহিস সালামের জাতির মাঝে প্রচলিত ছিল, পরবর্তী সময়ে আরবদের মাঝেও তার পূজা প্রচলিত হয়েছিল। ওয়াদ ‘দুমাতুল জান্দাল’ নামক স্থানে অবস্থিত কালব গোত্রের একটি দেবমূর্তি, সূওয়া’আ হল হুযাইল গোত্রের একটি দেবমূর্তি এবং ইয়াগুস ছিল মুরাদ গোত্রের, অবশ্য পরে তা গাতীফ গোত্রের হয়ে যায়। এর আস্তানা ছিল কওমে সাবার নিকটে ‘জাওফ’ নামক স্থানে। ইয়াউক ছিল হামাদান গোত্রের দেবমূর্তি, নাসর ছিল যুলকালা গোত্রের হিমযায় শাখারদের মূর্তি। নূহ আলাইহিস সালামের জাতির কতিপয় নেক লোকের নাম নাসর ছিল। তারা মারা গেলে, শয়তান তাদের জাতির লোকদের হৃদয়ে এই কথা ঢুকিয়ে দিল যে, তারা যেখানে বসে মজলিস করত, সেখানে তোমরা কিছু মূর্তি স্থাপন কর এবং ঐ সকল নেক লোকের নামানুসারেই এগুলোর নামকরণ কর। সুতরাং তারা তাই করল, কিন্তু তখনও ঐসব মূর্তির পূজা করা হত না। তবে মূর্তি স্থাপনকারী লোকগুলো মারা গেলে এবং মূর্তিগুলো সম্পর্কে সত্যিকারের জ্ঞান বিলুপ্ত হলে লোকজন তাদের পূজা করতে শুরু করে দেয়। (সহিহ বুখারি হাদিস -৪৫৫৫)
এই মুশরিক জাতিকে আল্লাহর পথে ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি বিভিন্ন সময় নবী আলাইহিস সালামদের প্রেরণ করেন। আর আদম সন্তানের নাম রাখেন “মুসলিম”। মহান আল্লাহ বলেন,
وَجَـٰهِدُواْ فِى ٱللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِۦۚ هُوَ ٱجۡتَبَٮٰكُمۡ وَمَا جَعَلَ عَلَيۡكُمۡ فِى ٱلدِّينِ مِنۡ حَرَجٍ۬ۚ مِّلَّةَ أَبِيكُمۡ إِبۡرَٲهِيمَۚ هُوَ سَمَّٮٰكُمُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ مِن قَبۡلُ وَفِى هَـٰذَا (٧٨)
অর্থঃ এবং জিহাদ কর আল্লাহর পথে যেভাবে জিহাদ করা উচিত। তিনি তোমাদিগকে মনোনিত করিয়াছেন।
তিনি দীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেন নাই। ইহা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের
মিল্লাত। তিনি (আল্লাহ্) পূর্বে তোমাদের নামকরণ করিয়াছেন ‘মুসলিম’ এবং এই কিতাবেও”। (সূরা হাজ্জ ২২:৭৮)।
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসারীদেরকে কুরআনে ইবরাহীমের মিল্লাতের ওপর প্রতিষ্ঠিত বলা হয়েছে। যদিও ইসলামকে ইবরাহীমের মিল্লাতের ন্যায় নূহের মিল্লাত, মূসার মিল্লাত ও ঈসার মিল্লাত বলা যেতে পারে কিন্তু কুরআন মজীদে বার বার একে ইবরাহীমের মিল্লাত বলা হয়েছে কারণ কুরআনের বক্তব্যের প্রথম লক্ষ ছিল আরবরা, আর তারা ইবরাহীমের সাথে যেভাবে পরিচিত ছিল তেমনটি আর কারো সাথে ছিল না। তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আকীদা-বিশ্বাস যার ব্যক্তিত্বের প্রভাব সর্বব্যাপী ছিল তিনি ছিলেন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম। এবং হযরত ইবরাহীমই এমন এক ব্যক্তি ছিলেন যাঁর উন্নত চরিত্রের ব্যাপারে ইহুদী, খৃষ্টান, মুসলমান, আরবীয় মুশরিক ও মধ্যপ্রাচ্যের সাবেয়ী তথা নক্ষত্রপূজারীরা সবাই একমত ছিল। নবীদের মধ্যে দ্বিতীয় এমন কেউ ছিলেন না এবং নেই যার ব্যাপারে সবাই একমত হতে পারে।
কিন্তু আয়াতে পরিস্কারভাবে বলা হয়েছে আমরা ইব্রাহীমের মিল্লাতের ওপর প্রতিষ্ঠিত হলেও ইহার পূর্বে স্বয়ং আল্লাহ আমদের নাম রেখেছেন মুসলিম। অর্থাৎ ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের নবুয়তের সময় নয়। বরং মানব ইতিহাসের সূচনা লগ্ন থেকেই যারা তাওহীদ, আখেরাত, রিসালাত ও আসমানী কিতাবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী দলভুক্ত থেকেছে তাদের সবাইকেই এখানে সম্বোধন করা হয়েছে। এখানে মূল বক্তব্য হচ্ছে, এ সত্য মিল্লাতের অনুসারীদেরকে কোনদিন "নূহী" "ইবরাহিমী", "মুসাবী" ইত্যাদি বলা হয়নি বরং তাদের নাম ‘মুসলিম’ (আল্লাহর ফরমানের অনুগত) ছিল।
অপর পক্ষে মহান আল্লাহ ইহুদী ও খৃষ্টান না হয়ে সরাসরি ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের মিল্লাতের অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
وَقَالُواْ ڪُونُواْ هُودًا أَوۡ نَصَـٰرَىٰ تَہۡتَدُواْۗ قُلۡ بَلۡ مِلَّةَ إِبۡرَٲهِـۧمَ حَنِيفً۬اۖ وَمَا كَانَ مِنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ (١٣٥)
অর্থঃ ইহুদিরা বলে, “ইহুদি হয়ে যাও, তাহলে সঠিক পথ পেয়ে যাবে৷” খৃস্টানরা বলে, “খৃস্টান হয়ে যাও, তা হলে হিদায়াত লাভ করতে পারবে৷ ওদেরকে বলে দাও, “না, তা নয়; বরং এ সবকিছু ছেড়ে একমাত্র ইবরাহীমের পদ্ধতি অবলম্বন করো৷ আর ইবরাহীম মুশরিকদের অন্তরভুক্ত ছিল না। (সূরা বাকারা ২:১৩৫)।
কুরআনের সুরা বাকারার ১৩২ ও ১৩৩ আয়াতে দেখা যায় ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের বংশধর ইসমাঈল, ইসহাক ও ইয়াকুর সকলে মুসলিম ছিল। এবং তাদের সন্তানদেরকেও মুসলিম হিসাবে মৃত্যুবরণ করার জন্য নসিহত করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
أَمۡ كُنتُمۡ شُہَدَآءَ إِذۡ حَضَرَ يَعۡقُوبَ ٱلۡمَوۡتُ إِذۡ قَالَ لِبَنِيهِ مَا تَعۡبُدُونَ مِنۢ بَعۡدِى قَالُواْ نَعۡبُدُ إِلَـٰهَكَ وَإِلَـٰهَ ءَابَآٮِٕكَ إِبۡرَٲهِـۧمَ وَإِسۡمَـٰعِيلَ وَإِسۡحَـٰقَ إِلَـٰهً۬ا وَٲحِدً۬ا وَنَحۡنُ لَهُ ۥ مُسۡلِمُونَ (١٣٣)
অর্থঃ তোমরা কি তখন সেখানে উপস্থিত ছিলে, যখন ইয়াকুব এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছিল? মৃত্যুকালে সে তার সন্তানদের জিজ্ঞেস করলো, আমার পর তোমরা কার বন্দেগী করবে? তারা সবাই জবাব দিল, আমরা সেই এক আল্লাহর বন্দেগী করবো, যাকে আপনি এবং আপনার পূর্বপুরুষ ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাক ইলাহ হিসেবে মেনে এসেছেন আর আমরা তাঁরই অনুগত মুসলিম৷ (সূরা বাকারা ২:১৩৩)।
মহান আল্লাহ আরও বলেন,
وَوَصَّىٰ بِہَآ إِبۡرَٲهِـۧمُ بَنِيهِ وَيَعۡقُوبُ يَـٰبَنِىَّ إِنَّ ٱللَّهَ ٱصۡطَفَىٰ لَكُمُ ٱلدِّينَ فَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ (١٣٢)
অর্থঃ ঐ একই পথে চলার জন্য সে তার সন্তানদের উপদেশ দিয়েছিল এবং এরি উপদেশ দিয়েছিল ইয়াকুবও তার সন্তানদেরকে৷ সে বলেছিল, “আমার সন্তানেরা! আল্লাহ তোমাদের জন্য এই দ্বীনটিই পছন্দ করেছেন। কাজেই আমৃত্যু তোমরা মুসলিম থেকো ৷(সূরা বাকারা ২:১৩২)।
সৃষ্টির আদিতে আমাদের নাম দিলেন মুসলিম। ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ও তার বংশধর ইসমাঈল, ইসহাক ও ইয়াকুরের সময়ও আদম সন্তানের নাম মুসলিম ছিল। তাহলে অন্য নবী আলাইহিস সালামদের যুগে আদম সন্তানদের নাম কি ছিল? তখন ও আদম সন্তানের নাম মুসলিম ছিল। মহান আল্লাহ বলেন,
فَلَمَّآ أَحَسَّ عِيسَىٰ مِنۡہُمُ ٱلۡكُفۡرَ قَالَ مَنۡ أَنصَارِىٓ إِلَى ٱللَّهِۖ قَالَ ٱلۡحَوَارِيُّونَ نَحۡنُ أَنصَارُ ٱللَّهِ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَٱشۡهَدۡ بِأَنَّا مُسۡلِمُونَ (٥٢)
অর্থঃ যখন ঈসা অনুভব করলো, ইসরাঈল কুফরী ও অস্বীকার করতে উদ্যেগী হয়েছে, সে বললো, ‘‘কে হবে আল্লাহর পথে আমার সাহায্যকারী? হাওয়ারীগণ বলল, আমরা আল্লাহর সাহায্যকারী৷আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি ৷ সাক্ষী থাকো, আমরা মুসলিম। (সূরা আল ইমরান ৩:৫২)।
নবী রাসূলগণ নিজেরা মুসলিম হিসাবে মৃত্যু বরণ করার আকাংখা প্রকাশ করেছেন। যেমন ইউসুফ আলাইহিস সালাম দোয়া করেন।
(কুরআনের ভাষায়),
رَبِّ قَدۡ ءَاتَيۡتَنِى مِنَ ٱلۡمُلۡكِ وَعَلَّمۡتَنِى مِن تَأۡوِيلِ ٱلۡأَحَادِيثِۚ فَاطِرَ ٱلسَّمَـٰوَٲتِ وَٱلۡأَرۡضِ أَنتَ وَلِىِّۦ فِى ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأَخِرَةِۖ تَوَفَّنِى مُسۡلِمً۬ا وَأَلۡحِقۡنِى بِٱلصَّـٰلِحِينَ (١٠١)
অর্থঃ হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে রাজ্য দান করিয়াছ এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দিয়াছ। হে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা! তুমিই ইহলোক ও পরলোকে আমার অভিভাবক। তুমি আমাকে মুসলিম হিসাবে মৃত্যু দাও এবং আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের আর্ন্তভুক্ত কর”। (সূরা ইউসুফ ১২:১০১)।
এমনকি ফিরআউনের দরবারে আগত জাদুকরেরাও আল্লাহ্তাআ’লার কাছে মুসলিম হিসাবে মৃত্যুবরণ করার জন্য ফরিয়াদ করিয়াছিলেন।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَا تَنقِمُ مِنَّآ إِلَّآ أَنۡ ءَامَنَّا بِـَٔايَـٰتِ رَبِّنَا لَمَّا جَآءَتۡنَاۚ رَبَّنَآ أَفۡرِغۡ عَلَيۡنَا صَبۡرً۬ا وَتَوَفَّنَا مُسۡلِمِينَ (١٢٦)
অর্থঃ (যাদুকরগন ফিরআউনকে বলিল) তুমি তো আমাদিগকে শাস্তি দিতেছ শুধু এইজন্য যে, আমরা আমাদের প্রতিপালকের নির্দেশে ঈমান আনিয়াছি, যখন নিদর্শসমূহ আমাদের নিকট আসিয়াছে। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদিগকে ধৈর্য্য দান কর এবং মুসলমানরূপে আমাদের মৃত্যু দাও”। (সূরা আ’রাফ ৭:১২৬)।
ইসলাম ধর্ম ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসারী হিসাবে আমাদের পরিচয় কি হবে?
এ প্রশ্নের উত্তর স্বয়ং আল্লাহ বলেন,
يَـٰٓأَيُّہَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ (١٠٢)
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ ! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় করো৷ এবং তোমরা মুসলিম না হইয়া কোন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করিও না”। (সূরা ইমরান ৩:১০২)।
মহান আল্লাহ বলেন,
قُلۡ يَـٰٓأَهۡلَ ٱلۡكِتَـٰبِ تَعَالَوۡاْ إِلَىٰ ڪَلِمَةٍ۬ سَوَآءِۭ بَيۡنَنَا وَبَيۡنَكُمۡ أَلَّا نَعۡبُدَ إِلَّا ٱللَّهَ وَلَا نُشۡرِكَ بِهِۦ شَيۡـًٔ۬ا وَلَا يَتَّخِذَ بَعۡضُنَا بَعۡضًا أَرۡبَابً۬ا مِّن دُونِ ٱللَّهِۚ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَقُولُواْ ٱشۡهَدُواْ بِأَنَّا مُسۡلِمُونَ (٦٤)
অর্থঃ বলঃ হে আহলি কিতাব! এসো এমন একটি কথার দিকে, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই ধরনের৷ তা হচ্ছেঃ আমরা আল্লাহ ছাড়া কারোর বন্দেগী ও দাসত্ব করবো না৷ তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবো না৷ আর আমাদের কেউ আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেও নিজের রব হিসেবে গ্রহন করবে না ৷ যদি তারা এ দাওয়াত গ্রহণ করতে প্রস্তুত না হয়, তাহলে পরিষ্কার বলে দাওঃ ‘‘তোমরা সাক্ষী থাকো, আমরা অবশ্যি মুসলিম। (সূরা আল ইমরান ৩:৬৪)।
মহান আল্লাহ বলেন,
قُلۡ إِنَّ صَلَاتِى وَنُسُكِى وَمَحۡيَاىَ وَمَمَاتِى لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَـٰلَمِينَ (١٦٢) لَا شَرِيكَ لَهُ ۥۖ وَبِذَٲلِكَ أُمِرۡتُ وَأَنَا۟ أَوَّلُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ (١٦٣)
অর্থঃ বল, আমার নামায, আমার ইবাদাতের সমস্ত অনুষ্ঠান, আমার জীবন ও মৃত্যু সবকিছু আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্য, তাঁহার কোন শরীক নাই এবং আমি ইহারই জন্য আদিষ্ট হইয়াছি এবং আমি প্রথম মুসলিম”। (সূরা আনাম ৬:১৬২-১৬৩)।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَلَا تُجَـٰدِلُوٓاْ أَهۡلَ ٱلۡڪِتَـٰبِ إِلَّا بِٱلَّتِى هِىَ أَحۡسَنُ إِلَّا ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ مِنۡهُمۡۖ وَقُولُوٓاْ ءَامَنَّا بِٱلَّذِىٓ أُنزِلَ إِلَيۡنَا وَأُنزِلَ إِلَيۡڪُمۡ وَإِلَـٰهُنَا وَإِلَـٰهُكُمۡ وَٲحِدٌ۬ وَنَحۡنُ لَهُ ۥ مُسۡلِمُونَ (٤٦)
অর্থঃ আর উত্তম পদ্ধতিতে ছাড়া আহলে কিতাবের সাথে বিতর্ক করো না, তবে তাদের মধ্যে যারা জালেম তাদেরকে বলে, “আমরা ঈমান এনেছি আমাদের প্রতি যা পাঠানো হয়েছে তার প্রতি এবং তোমাদের প্রতি যা পাঠানো হয়েছিল তার প্রতিও, আমাদের ইলাহ ও তোমাদের ইলাহ একজনই এবং আমরা মুসলিম”। (সূরা আনকাবূত ২৯:৪৬)।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَنۡ أَحۡسَنُ قَوۡلاً۬ مِّمَّن دَعَآ إِلَى ٱللَّهِ وَعَمِلَ صَـٰلِحً۬ا وَقَالَ إِنَّنِى مِنَ ٱلۡمُسۡلِمِينَ (٣٣)
অর্থঃ সেই ব্যক্তির কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হবে যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, সৎ কাজ করলো এবং ঘোষণা করলো আমি মুসলিম৷(হা মীম আস্-সাজদা ৪১:৩৩)।
উপরের আয়াতসমূহের দ্বারা কি এটাই দ্ব্যার্থহীনভাবে প্রমাণিত হয়, যে ইসলামের অনুসারীদের একটিই পরিচয়
সেটি হচ্ছে ‘মুসলিম’।
দ্বীনের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে অন্য নাম করনের যৌক্তিকতা কোথায়?
একটা সহজ উদাহরণ দিলে ব্যপারটা বুঝা অনেক সহজ হবে।
কোন আদম সন্তানের জন্মের পরই তার জন্মদাতা পিতামাতা সুন্দর একটা নাম রাখেন। এই নামেই সকলে তাকে চিনে এবং সমাজে পরিচিতি লাভ করেন। কিন্তু যদি সন্তানটি বড় হওয়ার প্রাককালে সৃত্মিশক্তি হারিয়ে জন্মদাতা পিতামাতা হারিয়ে ফেলে। তার হারানোর সাথে সাথে আনল নামটিও হারিয়ে যাবে। হারান সন্তারটি যারা পাবেন বা তার শেষ ঠিকানা, যেখানে সে লালিত পালিত হবে তারাও তার একটি নাম রাখবেন। অর্থাৎ সে যেখানে বড় হবে তাদের দেওয়া নামটি তার শেষ পরিচয় থাকবে। সে যদি আবার সত্যিকারের পিতামাতার নিকট ফিরে আসে তখই আসল নামটি ফিরে পাবে।
সৃষ্টির শুরুতে আদম সন্তান মুসলিম নামে পরিচিতি লাভ করে। কালের আবর্তে সে তার সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহকে ভুলে যায়। আর মূর্তি পূজার মাধ্যমে সে তার নাম মুশরিকের খাতায় লিপিবদ্ধ করে। নুহ আলাইহিস সালামের আহবানে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে আবার চিনতে পেরে নিজেরদের হারান নাম মুসলিম ফিরে পায়। আবার ও কালের পরিক্রমায় সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহকে ভুলে যায়। তাদের পরিচয় দান কারি নামের ও পরিবর্তন ঘটে। আবার নবী রাসূলগনের আহবানে আল্লাহর পরিচয় পেয়ে মুসলিম নাম ফিরে পায়। উপরের আয়তগুলি একথারই সাক্ষ্য বহন করে। দলিল হিসাবে আল্লাহর বাণীর সমকক্ষ আর কে আছে?
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইসলামের প্রতি মানুষকে আহবান করেন। তখন আরবের লোকদের প্রধান তিনটি নামে পরিচিত ছিল। মক্কার অধিকাংশ ছিল মুশরিক, মদিনার অধিকাংশ ছিল ইয়াহুদি আর সিরিয়া ও ফিলিস্থানির অধিকাংশ ছিল খৃষ্টান। যখনই কেই ইসলাম ধর্ম গ্রহন করত তখন তাকে মুসলিম বলা হত। কিন্তু বর্তমানে আমাদরেকে মুসলিম হওয়ার পাশাপাশি শিয়া, খারিজী, মুতাযিলী, জাহমী, কাদারী, জাবারী সুন্নী, সালাফি, হানাফী, মালেকী, শা’ফী, হাম্বলী, আহলে হাদিস, তরিকতপন্থী, মারেফতপন্থী, হাকিকতপন্থী ইত্যাদি হতে হবে অনেকে প্রচার চালাচ্ছে। ইসলামের নামে শুদ্ধ অশুদ্ধ আকিদা বিশ্বাস জাহির করে নিজের দল আর মতকে একেবারে খাটি আর বিশুদ্ধ প্রমানে আপ্রান চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রতিনিয়ত নানান যুক্তি উপস্থাপন করছেন। নিজের মত অনুযায়ী জাল-জয়ীফ হাদিসের তোয়াক্কা করছেনা। এমনি অনেকে হাদিস বানিয়ে প্রচারে পিছপা হচ্ছে না। তাহলে এক ইসলামকে এত ভাগে ভাগ করে বিভিন্ন নামে টুকরা টুকরা করার অনুমতি এদেরকে কে দিয়েছে?
এই বিভিন্ন দল বা ফিকরা নিয়ে আলোচনা করলে বুঝতে পারা যাবে মুসলিম ছেড়ে কেন অন্য পরিচয় হল। তার আগেই জেনে নই এই ফিরকাবাজি কি মহান আল্লাহ পছন্দ করেন? ইসলাম কি নতুন নতুন দল বা ফিরকা সৃষ্টিকে সমর্থন করেন? এসকল প্রশ্নের উত্তর খুজব কুরআনুল কারিমে।
পূর্ববর্তী নবীদের প্রচারিত সত্য দ্বীনের সরল ও সুস্পষ্ট শিক্ষা লাভ করে উম্মাতের অনেকে সঠিক জীবন যাপন করেছিল। কিন্তু কিছুদিন অতিবাহিত হবার পর দ্বীনের মূল বিষয়গুলো পরিত্যাগ করে দ্বীনের সাথে সম্পর্ক বিহীন গৌণ ও অপ্রয়োজনীয় খুঁটিনাটি বিষয়াবলীর ভিত্তিতে নিজেদেরকে একটি আলাদা ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে গড়ে তুলতে শুরু করে। তারপর অবান্তর ও আজেবাজে কথা নিয়ে এমনভাবে কলহে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। আল্লাহ তাদের ওপর যে দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিলেন তার কথাই তারা ভুলে গিয়েছিল নতুন নতুন ফির্কা তৈরি করে ছিল। ফলে তারা বিভ্রান্ত জাতিতে পরিণত হয়। আর এদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَلا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ وَأُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
অর্থঃ তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আসার পরে বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং মতভেদ করেছে, এদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি। (সূরা আল-ইমরান ৩:১০৫)।
মুশরিকদের অন্যতম খারাপ দিক হল দ্বীনের মধ্যে বিভক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন দলে ভাগ হওয়া। প্রত্যেক দলই তাদের নিজেদের হক মনে করে এবং নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে আনন্দিত থাকে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন:
مُنِيبِينَ إِلَيۡهِ وَٱتَّقُوهُ وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَلَا تَكُونُواْ مِنَ ٱلۡمُشۡرِڪِينَ (٣١) مِنَ ٱلَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُمۡ وَڪَانُواْ شِيَعً۬اۖ كُلُّ حِزۡبِۭ بِمَا لَدَيۡہِمۡ فَرِحُونَ (٣٢)
অর্থঃ আল্লাহ অভিমুখী হয়ে এবং তাকে ভয় করো, আর নামায কায়েম করো এবং এমন মুশরিকদের অন্তরভুক্ত হয়ে যেয়ো না, যারা নিজেদের আলাদা আলাদা দ্বীন তৈরি করে নিয়েছে আর বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উৎফুল্ল। (সূরা রূম ৩০:৩১-৩২)।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন:
فَتَقَطَّعُوٓاْ أَمۡرَهُم بَيۡنَہُمۡ زُبُرً۬اۖ كُلُّ حِزۡبِۭ بِمَا لَدَيۡہِمۡ فَرِحُونَ (٥٣) فَذَرۡهُمۡ فِى غَمۡرَتِهِمۡ حَتَّىٰ حِينٍ (٥٤)
অর্থঃ কিন্তু তাহারা নিজেদের দ্বীনের মধ্যে বহু বিভক্ত করিয়াছে। প্রত্যেক দলই তাহাদের নিকট যাহা আছে তাহা লইয়া আনন্দিত। সুতরাং কিছু কালের জন্য উহাদিগকে স্বীয় বিভ্রান্তিতে থাকিতে দাও”। (সূরা মু'মিনূন ২৩:৫৩-৫৪)।
দ্বীনের মধ্যে বিভক্তির মাধ্যমে যারা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়েছে, তাদের সাথে আল্লাহর রাসূল (সা:) কে সম্পর্ক ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্য আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু বলেন:
إِنَّ ٱلَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَہُمۡ وَكَانُواْ شِيَعً۬ا لَّسۡتَ مِنۡہُمۡ فِى شَىۡءٍۚ إِنَّمَآ أَمۡرُهُمۡ إِلَى ٱللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُہُم بِمَا كَانُواْ يَفۡعَلُونَ (١٥٩)
অর্থঃ নিশ্চয়ই যারা নিজেদের দীনকে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে নিসন্দেহে তাদের সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই৷ তাদের ব্যাপারে আল্লাহর ওপর ন্যাস্ত রয়েছে৷ তারা কি করেছে, সে কথা তিনিই তাদেরকে জানাবেন। (সূরা আন‘আম: ১৫৯ আয়াত)
ইসলামের মধ্যে বিভক্তি, বিচ্ছিন্নতা বা দলাদলি করা সম্পু্র্ণ নিষেধ। সকল নবীকেই দ্বীনের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি না করার বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ দ্বীন প্রতিষ্ঠার বিপরীতে বিভক্তির কথা উল্লেখ করেছেন। এতে প্রতীয়মান হয় যে, দীন প্রতিষ্ঠা বলতে দীনের বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরি। আর সীমালঙ্ঘন ও বিদ্বেষ বিভক্তি বা দলাদলির মূল কারণ।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,
شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ مَا وَصَّى بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ
অর্থঃ তিনি তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন দীন, যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি নূহকে আর যা আমি ওহী করেছি আপনাকে এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা এবং ঈসাকে, এ বলে যে, তোমরা দ্বীন প্রতিষ্ঠা কর এবং তাতে দলাদলি-বিচ্ছিন্নতা করো না।” (সূরা শুরা ৪২:১৩)
পূর্ববর্তী উম্মাতগুলোর মতভেদ ও বিভক্তি প্রসঙ্গে কুরআনুল কারীমে বারবারই বলা হয়েছে যে, জ্ঞানের আগমনের পরেও তারা বাড়াবাড়ি করে বিভক্ত হয়েছে। আল্লাহ বলেন:
وَمَا تَفَرَّقُوا إِلَّا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ
অর্থঃ তাদের নিকট ইলম আগমনের পরে পারস্পরিক বাড়াবাড়ি করেই শুধু তারা দলাদলি করেছে। (সূরা শূরা ৪২:১৪)।
যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, “পূর্ববর্তী উম্মাতগণের ব্যাধি তোমাদের মধ্যে ধীরে ধীরে প্রবেশ করছে, সে ব্যাধি হলো হিংসা ও বিদ্বেষ। বিদ্বেষ মুণ্ডনকারী। আমি বলি না যে, তা মাথার চুল মুণ্ডন করে, বরং তা দীন মুণ্ডন করে। যারা হাতে আমার জীবন তার শপথ! ঈমানদার না হলে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আর তোমরা পরস্পরকে ভাল না বাসলে ঈমানদার হবে না। আমি কি তোমাদেরকে সে বিষয়ের কথা বলব না যা তোমাদের মধ্যে পারস্পারিক ভালবাসা প্রতিষ্ঠিতি করবে। তোমাদের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও।” (তিরমিযী, আস-সুনান ৪/৬৬৪। আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন)।
অপর পক্ষে মহান আল্লাহ দলাদলি বা বিভক্তি বাদ দিয়ে তাহার রজ্জুকে শক্তভাবে আকড়ে ধরতে বলেছেন।
আল্লাহ্ সুবহানাহুতাআ’লা বলেন,
وَٱعۡتَصِمُواْ بِحَبۡلِ ٱللَّهِ جَمِيعً۬ا وَلَا تَفَرَّقُواْۚ (١٠٣)
অর্থঃ তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রুজ্জু মজবুতভাবে আকঁড়ে ধরো এবং দলাদলি করো না৷ (সূরা ইমরান ৩:১০৩)।
উপরের আয়াতে মহান আল্লাহর স্পষ্ট ঘোষনা করেন,
১। দলাদলি বা বিভক্তিকে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। যারা দলাদলি বা ফির্কাবাজি করবে তাদের জন্য রয়েছে চরম শাস্তি।
২। দ্বীনের মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি করা মুশরিকদের অন্যতম খারাপ গুন ।
৩। যারা দলাদলি বা ফিরকাবাজি করে তারা মহা বিভ্রান্তিতে আছে।
৪। সকল নবীকেই দ্বীনের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি না করার বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এমনকি শেষ রাসূল (সা:) কে নির্দেশ দিয়েছেন, ঐ সকল লোকের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের, যারা দ্বীনের মধ্যে দলাদলি বা ফির্কাবাজির সৃষ্টি করে।
৫। দলাদলি বা ফিরকাবাজি বাদ দিয়ে তাহার রজ্জুকে শক্তভাবে আকড়ে ধরতে বলেছেন।
যারা আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে ব্যক্তি নিজের খেয়াল খুশির অনুসরণ করে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হবে তারাই পথ ভ্রষ্ট। এমন লোকদের মহান আল্লাহ হিদায়েত দেন না।
আল্লাহ্ সুবহানাহুতাআ’লা বলেন,
فَإِن لَّمۡ يَسۡتَجِيبُواْ لَكَ فَٱعۡلَمۡ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهۡوَآءَهُمۡۚ وَمَنۡ أَضَلُّ مِمَّنِ ٱتَّبَعَ هَوَٮٰهُ بِغَيۡرِ هُدً۬ى مِّنَ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَہۡدِى ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّـٰلِمِينَ (٥٠)
অর্থঃ আল্লাহর পথনির্দেশ অগ্রাহ্য করিয়া যে ব্যক্তি নিজের খেয়াল খুশির অনুসরণ করে তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? আল্লাহ্ যালিম সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না”। (সূরা কাসাস ২৮:৫০)। (১)
যুক্তিঃ-
এখন আমি সমাজে প্রচলিত কিছু যুক্তি খন্ডন করবো,
যুক্তিঃ-
১) আমাদের নাম তো মুসলিম তাহলে আমাদের পিতামাতা আমাদের কেন জিয়ানুর রহমান-তমুক নাম রাখলেন।
খন্ডনঃ- প্রথমে বলে রাখি, এই ধরনের কথা সাধারণত বক্তাদের কাছ থেকে শুনা যায় আলেমদের কাছ থেকে নয়।
একটু লক্ষ্য করুন যুক্তিটি কতটুকু শক্তিশালী, বলা হলো আল্লাহ আমাদের জাতি হিসাবে নাম রেখেছেন মুসলিম কিন্তু সেখানে যুক্তি হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে ব্যক্তি হিসাবে।
পরিষ্কার করি, আমার বাবার আমরা তিন ছেলে, তিন জনের তিনটা নাম আছে যথাক্রমে আব্দুর রহিম, আব্দুর করিম,আব্দুর জব্বার এই তিনটা নাম থেকে কি কোন দলের নাম বা মতাদর্শ বুঝাচ্ছে?
উত্তর স্বাভাবিক না।
কিন্তু আমি যদি বলি হানাফি, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী কিংবা সালাফি তখন কিন্তু ভিন্ন মত বোঝাচ্ছে আর যারা শুক্ষ্ণ পার্থক্য বোঝে না তখন এটিকে দলে বিভক্ত করছে।
২) যখন আমার বাবা আমার নাম রাখল জিয়ানুর রহমান এই নাম রাখার মাধ্যমে কিন্তু একবচন বা কোন ফিরকা বোঝাচ্ছে না কিন্তু যখন বলা হবে হানাফি বা সালাফি বা অন্য কোন নাম তখন সেটি আলাদা মতাদর্শ বা ফিরকা বোঝাবে।
আমি অনেক কে প্রশ্ন করেছিলাম এই যুক্তির লোকদের যে কোন বিধর্মী মুসলিম হতে চাইলে সে নিজেক কোন মাজহাব বা মানহাজের দাবী করবে?
উত্তর সবার জানা আছে, নিরব ভুমিকা। কেও বা বলল,
প্রথমে ইসলামের মৌলিক বিষয়ে জানবে।
আমার প্রশ্নঃ- তারপর কোন মাজহাব মানবে?
উত্তরঃ- কুরআন ও সহিহ হাদিস।
প্রশ্নঃ- তাহলে প্রথমে বলতে হতো।
উত্তরঃ- বিষয় টি নিয়ে ভাবতে হবে।
এখন আসি, দ্বিতীয় যুক্তিতে।
যুক্তিঃ- ২
শিয়া, মুতাজিলা, মুরজিয়া, মাজার পূজারি কিংবা অন্য আকিদাগত বিভ্রান্ত দল গুলি ও তো নিজেদেরকে মুসলিম বলে দাবী করে।
তাহলে তাদের কে আমরা জানব কি করে?
আর বিশেষ করে বিয়ে শাদীর ব্যাপার।
খন্ডনঃ-
প্রথমে যুক্তির অর্ধেক অংশ নেই, কেও যদি আকিদাগত বিভ্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও মুসলিম দাবি করলে আমরা কি করবো?
আমার প্রশ্ন উনাদের কাছে?
তারাও তো আমাদের কে আকিদাগত ভাবে বিভ্রান্ত বলে ও কাফের বলে এ ক্ষেত্রে আপনার জবাব কি?
উত্তরঃ- আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত বা সালফে সালেহীনের আকিদা আমাদের লালন করতে হবে।
আমার প্রশ্নঃ- আপনি ভালো ভাবে জানেন যে কিছু লোক আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত দাবি করে অথচ মৃত পীর বা ওলীদের কাছে তারা সাহায্য চায়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নুরের তৈরি বিশ্বাস করে, আল্লাহ সব জায়গায় বিরাজমান, আল্লাহর আকৃতি নেই অর্থাৎ এক কথায় সুফিবাদ দর্শনে বিশ্বাস করে আবার এই ধরনের মানুষ নিজেদের কে সত্যিকারের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত দাবী করে, আপনার উত্তর কি?
উত্তরঃ তারা কাফের।
আমার প্রশ্নঃ- তারা যে কাফের সেটি আপনি তো আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত বলার কারণে বোঝেন নি বরং আমি তাদের আকিদা বলার পরে বুঝেছেন, কিন্তু আপনাকে আমি বললাম আমি আহলে সুন্নত মানহাজের, তখন কি আপনি বিশ্বাস করবেন যে আমার মধ্যে উপরিক্ত আকিদা গুলি নেই বা কিভাবে বুঝবেন?
উত্তরঃ- শুনে, যেমন বিয়ের ক্ষেত্রে তার আকিদার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হবে।
আমিঃ- তাহলে তো হানাফি, শাফেয়ী, হাম্বলী, মালেকী বা সালাফি মানহাজ বা মাজহাব বলবে তাদের ক্ষেত্রেও?
উত্তরঃ- হ্যাঁ, তা তো বটে কারণ, নিজেকে হানাফি বা সালাফি দাবি করছে অথচ তাদের আকিদা জানেনা এ ক্ষেত্রেতো যাচাই-বাছাই করতেই হবে।
প্রশ্নঃ- তাহলে এখন বলুন আমাদের কি নামে ডাকা দরকার?
উত্তরঃ- দেখুন, সালাফিরা কিন্তু উপরিক্ত আকিদায় বিশ্বাসী না অর্থাৎ আমরা সালাফি বা আহলে হাদিস বলতে পারি।
প্রশ্নঃ- আপনি কি জানেন না যে সালাফি মানহাজের আলেমদের মধ্যেও আকিদাগত বিশেষ করে আল্লাহর সিফাত গত ব্যাপারেও পার্থক্য আছে?
উত্তরঃ- না তো।
প্রশ্নঃ- এখন আপনি বলুন আপনি কেমন সালাফি?
উত্তরঃ- ভাই, আপনি জানেন না, সালাফি বাদে সবার আকিদার ব্যাপারে সমাস্যা আছে।
প্রশ্নঃ- আমি তো নিজেকে আহলে হাদিস দাবি করিনা তার মানে আমার আকিদার ব্যাপারে সমাস্যা আছে?
উত্তরকর্তা নিশ্চুপ।
প্রশ্নঃ- আপনি কি জানেন এই যে মাজহাব বা মানহাজ এই ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ জানেনা, তবে যারা মাদ্রাসাতে পড়াশুনা করে তারা অবগত তবে সেখানে পার্থক্য আছে অধিকাংশই আকিদার ব্যাপারে জ্ঞান রাখেনা, কি বলবেন?
উত্তরঃ- আমাদের আকিদার ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করার দরকার।
প্রশ্নঃ- নিজেক যদি আহলে হাদিস বা হানাফি কিংবা অন্য নাম দিয়ে প্রচার করি তাহলে কি মানুষ গ্রহণ করবে? না নিজেকে সতন্ত্র রেখে কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক আকিদা প্রচার করলে কাজ হবে।
আমি যদি নিজেক কোন একটা গ্রুপে নিজেকে রেখে আর আকিদা প্রচার করি এবং বলছি এটিই সঠিক বাকি গুলি বাতিল।
উত্তরঃ- ভাই, বাতিল কে তো বাতিল বলতে হবে।
প্রশ্নঃ- তারাও আমাদের কে বাতিল বলছে, এ ক্ষেত্রে করণীয় কি?
,,,,,,,,,
চলছে।
বাকি "ঐক্য সম্ভব" বইতে পাবেন, ইন শা আল্লাহ।
আপনাদের যুক্তি আশা করছি।
তথ্য সহায়য়িকাঃ-
১) মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন।
২) কুরআন-সুন্নাহের আলোকে জামায়াত ও ঐক্য।(ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর)
#ZianurRahman0
9-5-2020
0 Comments
Thanks for your comment