ক্ষমাপ্রার্থনা ও তাওবা করার নিয়ম-পদ্ধতি সম্পর্কে রাসুল [সা.] যা বলেছেন!
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহ্র শপথ, নিশ্চয় আমি দৈনিক সত্তর -এর অধিকবার আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা চাই এবং তাওবা করি।” [ বুখারী, ফাতহুল বারীসহ, ১১/১০১, নং ৬৩০৭।] রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, “হে মানুষ, তোমরা আল্লাহ্র কাছে তাওবা কর, নিশ্চয় আমি আল্লাহ্র কাছে দৈনিক একশত বার তাওবা করি।” [মুসলিম, ৪/২০৭৬, নং ২৭০২।] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, “যে ব্যক্তি বলবে, «أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظيمَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ القَيّوُمُ وَأَتُوبُ إِلَيهِ». আরবি উচ্চারণ : আস্তাগফিরুল্লা-হাল ‘আযীমল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কায়্যূমু ওয়া আতূবু ইলাইহি বাংলা অর্থ : আমি মহামহিম আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তিনি চিরস্থায়ী, সর্বসত্তার ধারক। আর আমি তাঁরই নিকট তওবা করছি।’ আল্লাহ তাকে মাফ করে দিবেন যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়।” [আবূ দাউদ ২/৮৫, নং ১৫১৭; তিরমিযী ৫/৫৬৯, নং ৩৫৭৭; আল-হাকিম এবং সহীহ বলেছেন, তার সাথে ইমাম যাহাবী ঐকমত্য পোষণ করেছেন, ১/৫১১, আর শাইখুল আলবানীও সহীহ বলেছেন। দেখুন, সহীহুত তিরমিযী ৩/১৮২, জামেউল উসূল লি আহাদীসির রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৪/৩৮৯-৩৯০, আরনাঊত এর সম্পাদনাসহ।] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, “রব একজন বান্দার সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হয় রাতের শেষ প্রান্তে, সুতরাং যদি তুমি যদি সে সময়ে আল্লাহ্র যিক্রকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে সক্ষম হও, তবে তা-ই হও।” [তিরমিযী নং ৩৫৭৯, নাসায়ী, ১/২৭৯ নং ৫৭২; হাকেম ১/৩০৯। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ৩/১৮৩; জামে‘উল উসূল, আরনাউতের তাহকীকসহ ৪/১৪৪।] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, “একজন বান্দা তার রবের সবচেয়ে কাছে তখনই থাকে, যখন সে সিজদায় যায়, সুতরাং তোমরা তখন বেশি বেশি করে দোয়া কর।” [মুসলিম, ১/৩৫০; নং ৪৮২।] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, “নিশ্চয় আমার অন্তরেও ঢাকনা এসে পড়ে, আর আমি দৈনিক আল্লাহ্র কাছে একশত বার ক্ষমা প্রার্থনা করি।” [মুসলিম, ৪/২০৭৫, নং ২৭০২। ইবনুল আসীর বলেন, «ليُغان على قلبي» এর অর্থ হচ্ছে, ঢাকা পড়ে যায়, পর্দাবৃত হয়ে যায়। উদ্দেশ্য ভুলে যাওয়া; কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা যিক্র, নৈকট্য ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকতেন। তাই যখন কোনো সময় এ ব্যাপারে সামান্যতম ব্যাঘাত ঘটত অথবা ভুলে যেতেন, তখনি তিনি এটাকে নিজের জন্য গুনাহ মনে করতেন, সাথে সাথে তিনি ইস্তেগফার বা ক্ষমাপ্রার্থনার দিকে দ্রুত ধাবিত হতেন। দেখুন, জামে‘উল উসূল ৪/৩৮৬।] লিখেছেন : মাওলানা মনযূরুল হক
তওবা কিভাবে করতে হবে, তওবার সঠিক নিয়ম।
তওবা কিভাবে করতে হবে, তওবার সঠিক নিয়ম। কারো তওবা কবুল হয়েছে কিনা এটা কিভাবে বোঝার উপায়
===========================
১. পাপ কাজ করা বন্ধ করতে হবে। এখন শুধু মুখে মুখে তওবা করি, কয়েকদিন পর থেকে পাপ কাজটা ছেড়ে দেবো – এ রকম হলে তওবা হবে না।
২. অতীতের সমস্ত পাপ কাজ ও ভুল ত্রুটি আল্লাহর কাছে স্বীকার করে তাঁর কাছে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে।
৩. অন্তরে ঐকাজগুলোর প্রতি ঘৃণা রেখে সেইগুলোতে আর ফিরে না যাওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞা করতে হবে।
৪. লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে সমস্ত গুনাহ খাতার জন্য “ইস্তিগফার” করতে হবে (মাফ চাইতে হবে) + “তওবা” করতে হবে (গুনাহ করা বন্ধ করে আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে হবে)।
৫. কারো হক্ক নষ্ট করে থাকলে তাকে তার হক্ক ফিরিয়ে দিতে হবে, অথবা যেইভাবেই হোক, সামর্থ্য না থাকলে অনুরোধ করে, ক্ষমা চেয়ে তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নিতে হবে।
উল্লেখ্য, তওবা করলে আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন, এমনকি কারো পাপ আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে গেলেও আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন। কিন্তু বান্দার কোনো হক্ক নষ্ট করলে সেটা বান্দা মাফ না করলে তিনি মাফ করবেন না।
৬. অন্তরে আশা রাখতে হবে, যে আমি গুনাহগার কিন্তু আল্লাহ গাফুরুর রাহীম – অতীব ক্ষমাশীল ও দয়ালু। সুতরাং তিনি আমার তওবা কবুল করবেন।
৭. তওবা করার পরে প্রাণপণে চেষ্টা করতে হবে পাপ কাজ থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকতে, এবং সাধ্য অনুযায়ী বেশি বেশি করে নেকীর কাজ করার চেষ্টা করতে হবে।
৮. যে পাপ কাজ থেকে তওবা করা হলো (সমস্ত পাপ কাজ থেকেই তওবা করা ফরয), কোনো ভুলে বা কুপ্রবৃত্তির কারণে পাপ কাজটা করে ফেললে সাথে সাথে আবার তওবা করে সেটা থেকে ফিরে হবে। এইভাবে যখনই কোনো পাপ হবে সাথে সাথেই তওবা করতে হবে, মৃত্যু পর্যন্ত।
৯. কারো তওবা কবুল হয়েছে কিনা এটা কিভাবে বুঝবেন ?
অনেক আলেম এ সম্পর্কে বলেনঃ কারো যদি তওবা করার পরের জীবন আগের জীবন থেকে ভালো হয় অর্থাত পাপের কাজ অনেক কমে যায় ও ভালো কাজ বৃদ্ধি পায় তাহলে আশা করা যেতে পারে – তার তওবা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে। কিন্তু কারো যদি এমন না হয় অর্থাত, তওবার আগের ও পরের জীবনে কোনো পার্থক্য না থাকে তাহলে বুঝতে হবে তার তওবাতে ত্রুটি আছে। তার উচিত হতাশনা হয়ে – বার বার আন্তরিকতার সাথে খালেস নিয়তে তওবা করা, আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে আন্তরিক তওবা করার তওফিক দান করুন।
১- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহ্র শপথ, নিশ্চয় আমি দৈনিক সত্তর -এর অধিকবার আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা চাই এবং তাওবা করি।” ( বুখারী, ফাতহুল বারীসহ, ১১/১০১, নং ৬৩০৭।)
২- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, “হে মানুষ, তোমরা আল্লাহ্র কাছে তাওবা কর, নিশ্চয় আমি আল্লাহ্র কাছে দৈনিক একশত বার তাওবা করি।”( মুসলিম, ৪/২০৭৬, নং ২৭০২।)
তওবার দোয়া-
তওবার সুন্নাতি দোয়া বা কি বলে তওবা করবেন, ১-
أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَتُوبُ إِلَيهِ
(আস্তাগফিরুল্লা-হা ‘ওয়া আতূবু ইলাইহি)।
‘আমি মহামহিম আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা চাই, আর আমি তাঁরই নিকট তওবা করছি।’( বুখারী, ফাতহুল বারীসহ, ১১/১০১, নং ৬৩০৭।)
২- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি বলবে,
«أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظيمَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ القَيّوُمُ وَأَتُوبُ إِلَيهِ».
(আস্তাগফিরুল্লা-হাল ‘আযীমল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কায়্যূমু ওয়া আতূবু ইলাইহি)।
‘আমি মহামহিম আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তিনি চিরস্থায়ী, সর্বসত্তার ধারক। আর আমি তাঁরই নিকট তওবা করছি।’ আল্লাহ তাকে মাফ করে দিবেন যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়।” ( সহীহুত তিরমিযী ৩/১৮২)
৩- সাইয়িদুল ইস্তিগফার (সাইয়েদুল ইস্তেগফার) বা ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দো‘আ :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দো‘আ পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতী হবে’।
اَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ لآ إِلهَ إلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا صَنَعْتُ، أبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ، فَإِنَّهُ لاَيَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ-
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আনতা রববী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হ’তে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই’।
বুখারী, মিশকাত হা/২৩৩৫ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘ইস্তিগফার ও তওবা’ অনুচ্ছেদ-৪।
সংংকলক জিয়ানুর রহমান
0 Comments
Thanks for your comment