সর্বশেষ

2/recent/ticker-posts

ঈমান ভঙ্গের দশটি কারণ


ঈমান ভঙ্গের দশটি কারণ-
------------------------------
আমরা ওযু ভঙ্গের কারণ জানি, নামায ভঙ্গের কারণ জানি কিন্তু ঈমান ভঙ্গের কারণ জানি কি??
এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় দুই মিনিট সময় ব্যয় করে একটু সংক্ষিপ্তভাবে জেনে নিতে পারেন..! নিচে বিষয়গুলো সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলো...!
-
একঃ আস শিরক
আল্লাহ তায়ালার ইবাদতে শরীক করা। এ ব্যাপারে মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ আল্লাহ্ বলেছেন:
নিশ্চয় আল্লাহ্ তাঁর সাথে অংশীদার করা ক্ষমা করেন না।ইহা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন; এবং যে কেহ আল্লাহর সাথে শরীক করে সে এক মহা পাপ করে।”(সূরা নিসা ৪: আয়াত ৪৮)
“…….কেহ আল্লাহর সাথে শরীক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যেই হারাম করবেন এবং তার আবাস জাহান্নাম। যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।” (সূরা মায়িদা ৫: আয়াত ৭২)
কেউ আল্লাহর সাথে যে বিভিন্ন প্রকার শরীক করতে পারে তার মধ্যে রয়েছে অলিহাহ, আরবাব, আনদাদ ও তাগুত। বর্তমান কালের কয়েকটি বড় বড় শিরক সমূহের মধ্যে রয়েছে মাজার ও কবর পূজা, পীর ও আল্লাহর অলিরা গায়েব জানেন, অসুস্থকে সুস্থ করতে পারেন, বাচ্চা দিতে পারেন, বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারেন কিংবা আমাদের খবর জানেন ইত্যাদি ধারণা পোষণ করা।
-
আল্লাহ্ একমাত্র আইন ও বিধান দাতা। কুরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন সমাজ, রাষ্ট্র, শিক্ষা, বিচার ব্যবস্থা, শাস্তি, অর্থনীতি কিভাবে চালাতে হবে এবং এ সমস্ত ব্যাপারে আল্লাহর দেয়া বিধানই প্রত্যেক মুসলিমের একমাত্র সংবিধান। যদি কেউ আল্লাহর দেয়া সংবিধানের উপর নিজেরা আইন তৈরী করে তবে তারা তাগুত(আল্লাহদ্রোহী, সীমালংঘনকারী)-তে পরিণত হবে। যারা তাগুতের তৈরী সংবিধানকে মানবে, তারা মানার বিষয়ে আল্লাহর সাথে শিরক্ করে মুশরিকে পরিণত হবে। এমনিভাবে আল্লাহর দেয়া শরীয়া আইন বাদ দিয়ে যে সমস্ত বিচারক মানুষের তৈরী করা আইন দিয়ে বিচার ফয়সালা করে তারাও তাগুত।এবং যে সকল লোক তাদের কাছে নিজের ইচ্ছার বিচার ফয়সালা নিয়ে যাবে তারাও শিরকের গুনাহতে লিপ্ত হয়ে ইসলাম থেকে বাদ পড়ে যাবে।
-
দুই:মধ্যস্থতা ধরা
যে ব্যক্তি তার নিজের এবং আল্লাহর মধ্যে মধ্যস্থতা ও যোগাযোগের মাধ্যম বানায় এবং তাদের কাছে তার মনোস্কামনা পূরণের(শাফায়া) জন্য আবেদন নিবেদন করে এবং তাদের উপর নির্ভর করে, সে কাফির (অবিশ্বাসী) হয়ে যায়। ইহাই অতীত ও বর্তমানের আলেমদের ইজমা।
তারা আল্লাহকে ব্যতিত যার ইবাদাত করে তা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না,উপকারও করতে পারে না। তারা বলে, ‘এইগুলি আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী।বল, ‘তোমরা কি আল্লাহকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দিবে যা তিনি জানেন না?তিনি মহান, পবিত্রএবং তারা যাকে শরীক করে তা হতে তিনি উর্দ্ধে।”(সূরা ইউনুস ১০: আয়াত ১৮)
-
জেনে রাখ, অবিমিশ্র আনুগত্য আল্লাহরই প্রাপ্য। যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবকরুপে গ্রহণ করে তারা বলে, ‘আমরা তো এদের পূজা এজন্যই করি যে, ইহারা আমাদেরকে আল্লাহর সান্নিধ্যে নিয়ে যাবে।তারা যে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতভেদ করছে আল্লাহ তার ফয়সালা করে দিবেন। যে মিথ্যাবাদী ও কাফির আল্লাহ তাকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।” (সূরা যুমার ৩৯:আয়াত ৩)
-
এর একটি স্পষ্ট উদাহরণ হবে যদি কোন ব্যক্তি মৃত বা জীবিত পীর(ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব) বা দরবেশের কাছে সন্তান দেয়ার বা মনের ইচ্ছা পূরণের জন্য প্রার্থনা করে; এছাড়া তাবীজ দিতে বলে আর বিশ্বাস স্থাপন করে পীরবাবার তাবীজে সে সুস্থ হবে অথবা মনের কামনা পূরণ হবে। এসকল কাজ দ্বারা আল্লাহ তায়ালা রুবুবিয়াতের সাথে পীরবাবা বা বুজুর্গকে শরীক করা হয়। ইহা সুস্পষ্ট শিরক্ যা কিনা একজন মুসলিমকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়।
-
তিন: যে ব্যক্তি বহু্ইশ্বরবাদকে প্রত্যখান না করে বা বহুইশ্বরবাদী(মুশরীক) কাফির কিনা এমন সন্দেহ পোষণ করে সে কাফির হয়ে যায়। উদাহরণ স্বরূপ যদি কোন ব্যক্তি বলে যে, সে নিশ্চিত নয় একজন খৃষ্টান কাফির কিনা, তাহলে সে নিজেই কাফির হয়ে যায়। কারণ সে ঈসা(আ)-কে আল্লাহ হিসেবে গ্রহণকারী খৃষ্টানদের প্রত্যাখান করে নি।
-
-
চার: যে ব্যক্তি মহানবী(সা) এর পরিপূর্ণতা ও দিক নির্দেশনা বা ফয়সালায় অবিশ্বাস করে সে কাফির। এর কারণ হচ্ছে আল্লাহর রাসূল(সা) ও তার ফয়সালা হচ্ছে সীরাতুল মুসতাক্কিমের উপর। আর যারা তাগুতের কাছে যাওয়া বেশি পছন্দ করে তারা সত্য সঠিক পথ হতে বহু দূরে। এই সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
কারও নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতিত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যে দিকে সে ফিরিয়া যায় সে দিকেই তাকে ফিরাইয়া দিব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব, আর উহা কত মন্দ আবাস। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করবেন না; ইহা ব্যতিত সব কিছু যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন, এবং কেহ আল্লাহর শরীক করলে সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়।” (সূরা নিসা ৪: আয়াত ১১৫-১১৬)
এই আয়াত দ্বারা পরিষ্কার রুপে প্রমানিত হয় যে রাসূলের প্রদর্শিত পথের বিরোধীতা করা এবং মুমিনের পথ ছেড়ে অন্য কোন পথ গ্রহণ করা শিরক। এর শাস্তি হচ্ছে নিকৃষ্ট স্থান জাহান্নাম। যদি কোন বিষয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথা দ্বারা প্রমাণিত হয়, তাহলে তা নিয়ে কানাঘুষা করা এবং তা ছেড়ে নিজের মনগড়া পথের বা অন্য কারোর অন্ধ অনুকরণে অন্য পথের আশ্রয় নেয়া সুস্পষ্ট শিরক। আল্লাহ শিরককে কখনই ক্ষমা করবেন না।
-
-
পাঁচ: যে ব্যক্তি নবী মুহাম্মদ(সা) যা কিছু নিয়ে এসেছেন তাতে অসন্তুষ্ট হয় যদিও সে এ অনুযায়ী কাজ করে, সে কাফির হয়ে যায়। যেমন এক ব্যক্তি যে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে অথচ সে এগুলো করা অপছন্দ করে অথবা এমন এক মহিলা যে হিজাব পরে অথচ সে তা পরা অপছন্দ করে।
মহান আল্লাহ বলেন-
আর মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে যারা বলে,‘আমরা আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান এনেছি’, কিন্তু তারা মুমিন নয়।” (সূরা বাকারা ২; আয়াত ৮)
কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচার ভার তোমার(রাসূলের) উপর অর্পণ না করে; অত:পর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্ত:করণে মেনে য়ে।” (সূরা নিসা ৪: আয়াত ৬৫)
-
-
ছয়: যে ব্যক্তি দ্বীনের আওতার কোন কিছুর ব্যাপারে উপহাস করে বা কৌতুক করে অথবা ইসলামের কোন পুরষ্কার বা শাস্তির ব্যাপারে ব্যাঙ্গ করে সে কাফির হয়ে যায়। এর প্রমাণ হচ্ছে
এবং তুমি তাদেরকে প্রশ্ন করলে তারা নিশ্চয়ই বলবে, ‘আমারা তো আলাপ-আলোচনা ও ক্রীড়া-কৌতুক করছিলাম।বল, ‘তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর নিদর্শন ও তাঁর রাসূলকে বিদ্রুপ করছিলে?’ ‘তোমরা অযুহাত দেয়ার চেষ্টা করিও না। তোমরা তো ঈমান আনার পর কুফরী করেছ।….” (সূরা তওবা ৯ : আয়াত ৬৫-৬৬)
-
-
সাত: আস সিহর বা জাদু
সকল প্রকার যাদু নিষদ্ধ, কেউ এতে অংশগ্রহণ করুক, সময় ব্যয় করুক বা চর্চার প্রতি সহানুভূতিশীল হোক না কেন। যে ব্যক্তি জাদু চর্চা করে বা জাদুতে খুশী হয়, সে কাফির হয়ে যায়। কারণ আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন:
“…সুলায়মান কুফরী করে নাই কিন্তু শয়তানরাই কুফরী করেছিল, তারা মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত….”(সূরা বাকারা ২ : আয়াত ১০২)
-
-
আট: যে ব্যক্তি মুশরিককে(বহু ঈশ্বরবাদী কাফের-ইহুদী,খ্রিষ্টান প্রভৃতি) সাহায্য সমর্থন করে এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাকে সহয়তা করে সে কাফির হয়ে যায় কারণ তার কাছে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখে এমন একজন মুসলিমের তুলনায় আল্লাহর শত্রু বেশী প্রিয়।ইহার প্রমাণ হচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালার এই কথা:
হে মুমিনগণ! তোমাদের পিতা ও ভ্রাতা যদি ঈমানের মুকাবিলায় কুফরীকে শ্রেয় জ্ঞান করে, তবে তাদেরকে অন্তরঙ্গরুপে গ্রহণ করে না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে অন্তরঙ্গরুপে গ্রহণ করে, তারাই যালিম।” (সূরা তওবা ৯:আয়াত ২৩)
হে মুমিনগণ! তোমরা ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধুরুপে গ্রহণ করো না, তারা পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেহ তাদেরকে বন্ধুরুপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই একজন হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।” (সূরা মায়িদা ৫ : আয়াত ৫১)
-
-
নয়: যদি কোন ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে, সে শারিয়ার মধ্যে (আল্লাহর আইন) বিভিন্ন জিনিস যোগ করা বা কতিপয় বিষয় বাদ দেওয়ার মাধ্যমে ইসলামের উন্নতি সাধন করতে পারব তাহলে সে কাফির হয়ে যায়।
ইহার কারণ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার পরিপূর্ণভাবে সকল মানুষের জন্য তার নবী মুহাম্মদ(সা)-এর কাছে ইসলামের বাণী পাঠিয়েছেন এবং যদি কেউ এটা অস্বীকার করে তাহলে সে কুরআনের এই আয়াতের বিরুদ্ধে যায়:
“…আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।…”(সূরা মায়িদা ৫: আয়াত ৩)
-
-
দশ: মুহাম্মদ(সা)-এর প্রতি অবতীর্ণ বাণী শিক্ষা না করা অথবা সে অনুযায়ী কাজ না করার মাধ্যমে কেউ আল্লাহর বাণী থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে সে ইসলামের গন্ডির বাহিরে চলে যায়। আল কুরানে এর প্রমাণ হচ্ছে-
যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী দ্বারা উপদিষ্ট হয়ে তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় তার অপেক্ষা অধিক যালিম আর কে? আমি অবশ্যই অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে থাকি।” (সূরা সাজদা ৩২:আয়াত ২২)
মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ আরো বলেছেন:
বল, ‘তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।বল, ‘আল্লাহ ও রাসূলের অনুগত হও।যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে জেনে রাখ, আল্লাহ তো কাফিরদেরকে পছন্দ করেন না।” (সূরা আল ইমরান : ৩১-৩২)
-
-
এইগুলোই দশটি বিষয় যা কোন ব্যক্তির ইসলামকে অকার্যকর করতে পারে এবং যদি সে তার ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত না হয় এবং সে মৃত্যু বরণ করার আগে আবার ইসলাম গ্রহণ না করে তাহলে সে একজন মুশরিক (পৌত্তলিক) বা একজন কাফিরের মৃত্যুবরণ করে, আর তার গন্তব্যস্থল হয় অনন্ত কালের জন্য দোজখের আগুন এবং কোনদিনও জাহান্নামের আগুন থেকে বের করা হবে না।
-
ঈমানের সাথে সম্পর্কিত অতি প্রয়োজনীয় উপরে উল্লেখিত বিষায়াদির প্রতিটি মানুষের নিজে জানা, উপলদ্ধি করা এবং সেই সাথে অন্যকেও জানিয়ে দেয়া আমাদের প্রত্যেকের ঈমানী দায়িত্ব।
আসুন আমরা নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হই এবং এই বক্তব্যটি অন্যর কাছে পৌঁছে দেই।

ঈমাণ ভঙ্গের কারণ সমূহ

আমরা অযু,নামায,রোযা ইত্যাদি ভাঙ্গার কারণ পড়ি । কিন্তু এগুলোর ভিত্তি যে ঈমানের উপর সেটা নিয়ে আমরা ভাবিনা । এমনতো নয় যে, হয়ত আমরা মনের অজান্তে এমন কাজ করে ফেলছি যা আমাদের ঈমানকে সন্দেহে ফেলে দেয় অথবা ঈমান নষ্ট বা ভেঙ্গে যায় । জেনে নেয় কিভাবে আমাদের ঈমান ভেঙ্গে যায় ।

ঈমাণ ভঙ্গের কারণ সমূহ

১.আল্লাহর ইবাদতে কাউকে শরীক করা বা অংশীদার স্থাপন করা।
দলীল:-(সূরা বনী ইসরাঈল-২২,৩৯/ মুমিনূন-১১৭/­শুয়ারা-২১৩/ মায়েদা-৩,৭২,৭৬/ আ’রাফ-১৮৮/রা’দ-১৬/ আন’আম-১৭-১৮/ যুমার-৩,৩৮,৬৫/ফুরক্বান-৩/ নামল-২৭/ফাতির-১৩-১৪/ আনকাবুত-১৭/আহকাফ-৫/ নিসা-১১৬)
২.আল্লাহ এবং বান্দার মাঝে কাউকে মাধ্যম তৈরী করে তাদেরকে ডাকা। এবং তাদের নিকট শাফায়াত কামনা করা।
দলীল:-(সূরা যুমার-৩৮,৪৪/ ইউনুস-১৮,৮৪/­মায়েদা-২৩)
৩.মুশরিকদেরকে কাফির মনে না করা অথবা তাদের কুফুরীর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা অথবা তাদের মতবাদ সমূহ সঠিক মনে করা। দলীল:-(সূরা তাওবা-৩,২৮/ বায়্যিনাহ-৬/ বাক্বারা-২২১)
৪.নবী করীম(সাঃ)এর দেখানো পথ ব্যতীত অন্য কোন পথকে পরিপূর্ণ মনে করা।অথবা ইসলামী হুকুমাত বা শরীয়াহ ব্যতীত অন্য কারো তৈরী বিধান (বর্তমান গণতন্ত্র)কে উত্তম মনে করা।
দলীল:-(সূরা তাওবা-৩১/আহযাব-৩৬)
৫.নবী করীম(সাঃ)এর আনিত বিধানের কোন একটিকে অপসন্দ করা।যদিও সে ঐ বিষয়ের উপর আমল করে।
দলীল:-(সূরা মুহাম্মদ-৮-৯/ তাওবা-৪৮


৬.
মুহাম্মদ(সাঃ)এর আনিত ধর্ম (ইসলাম) এর কোন বিষয় অথবা ধর্মীয় ছওয়াব বা শাস্থির ব্যাপারে ঠাট্টা- বিদ্রূপ করা।
দলীল:-(সূরা তাওবা-৬৫-৬৬/ইউনুস-১১/ নিসা-১৪০/­মায়েদা-৫৭-৫৮/ বাক্বারা-১৪)
৭.যাদুর মাধ্যমে ভাল কিছু অর্জন বা মন্দ কিছু বর্জন করা।অথবা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সম্পর্ক স্থাপন বা ভাঙ্গন ধরাতে গোপন,প্রকাশ্য,মন্ত্র-তন্ত্র করা।অথবা কারো সাথে সম্পর্ক স্থাপন বা বন্ধুত্বে ফাঁটল ধরানো। দলীল:-(সূরা বাক্বারা-১০২
৮.মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুশরিকদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করা। দলীল:-
(সূরা মায়েদা-৫১/ মুমতাহিনা-১-২)
৯.মুহাম্মদ(সাঃ)এর আনিত শরীয়াহ ব্যতীত অন্য কোন পথে বা অন্য কোন ধর্মে জীবন পরিচালনা করলেও জান্নাত পাওয়া যাবে বা আল্লাহ সন্তষ্টি পাওয়া সম্ভব মনে করা। দলীল:-(সূরা আলে ইমরান-৮৩,৮৫/
নিসা-১১৫)
১০.আল্লাহর মনোনিত দ্বীন,ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া।ইসলাম অনুসারে আমল এবং শিক্ষা গ্রহণ করতে নারাজ হওয়া। দলীল:-(সূরা সাজদাহ-২২/ কাহফ-৫৭/ত্বা-হা-১২৪-১২৬/ মুমিনূন-৭১)
অতএব,ইসলামী আক্বীদা ও তাওহীদ গ্রহণের পর যদি কেউ উপরোল্লিখিত বিষয়গুলিতে নিপতিত হয়,তবে সে ঈমাণহারা হবে বা মুরতাদ হয়ে যাবে। (https://articlebari.com/)

প্রশ্ন

প্রশ্ন: ঈমান আনার কারণ ও না-আনার প্রতিবন্ধকতাগুলো কি কি?

উত্তর
আলহামদুলিল্লাহ।
এক: ঈমান আনার কারণসমূহ অনেক। যেমন-
১। ইলম অর্জন করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: কিন্তু তাদের মধ্যে যারা জ্ঞানে মজবুত তারা ও মুমিনগণ আপনার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে এবং আপনার আগে যা নাযিল করা হয়েছে তাতে ঈমান আনে।”[সূরা নিসা, আয়াত: ১৬২]
২। সত্যকে গ্রহণ করা, অহংকার না করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: এটা আখেরাতের সে আবাস যা আমরা নির্ধারিত করি তাদের জন্য যারা যমীনে উদ্ধত হতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। আর শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য।”[সূরা কাসাস, আয়াত: ৮৩]
৩। আল্লাহ্‌ তাআলার সৃষ্টিগত নিদর্শনগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিতে রাত ও দিনের পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদের জন্য।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯০]
৪। মিথ্যাপ্রতিপন্নকারীদের পরিণতি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: তারা কি যমীনে ভ্রমণ করেনি? তাহলে তারা জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন হৃদয় ও শ্রুতিশক্তিসম্পন্ন শ্রবণের অধিকারী হতে পারত।”[সূরা হাজ্জ, আয়াত: ৪৬]
৫। আল্লাহ্‌র পাঠানো কিতাব ও তাঁর শরয়ি নিদর্শনাবলী নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: এক মুবারক কিতাব, এটা আমরা আপনার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং যাতে বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিরা গ্রহণ করে উপদেশ।”[সূরা সোয়াদ, আয়াত: ২৯]
৬। কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ না করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: সুতরাং আপনি আহ্বান করুন এবং দৃঢ় থাকুন, যেভাবে আপনি আদিষ্ট হয়েছেন। আর আপনি তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবেন না; এবং বলুন, আল্লাহ্‌ যে কিতাব নাযিল করেছেন আমি তাতে ঈমান এনেছি।”[সূরা শুরা, আয়াত: ১৫]
৭। ঈমানদারদের সঙ্গ গ্রহণ এবং কাফের ও পাপীদের সঙ্গ ত্যাগ: আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: যালিম ব্যক্তি সেদিন নিজের দুহাত দংশন করতে করতে বলবে, হায়, আমি যদি রাসূলের সাথে কোন পথ অবলম্বন করতাম। হায়, দুর্ভোগ আমার, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। আমাকে তো সে বিভ্রান্ত করেছিল আমার কাছে উপদেশ পৌঁছার পর। আর শয়তান তো মানুষের জন্য মহাপ্রতারক।”[সূরা ফুরক্বান, আয়াত: ২৭-২৯]
৮। সুস্থ-সরল বিবেককে কাজে লাগানো। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “আর তারা বলবে, ‘যদি আমরা শুনতাম অথবা বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করতাম, তাহলে আমরা জলন্ত আগুনের অধিবাসী হতাম না।”[সূরা মুলক, আয়াত: ১০]
৯। ভাল কাজ পছন্দ করা এবং কুফুরি ও পাপ কাজকে ঘৃণা করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: কিন্তু আল্লাহ্‌ তোমাদের কাছে ঈমানকে প্রিয় করেছেন এবং সেটাকে তোমাদের হৃদয়গ্রাহী করেছেন। আর কুফুরী, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে করেছেন তোমাদের কাছে অপ্রিয়।”[সূরা হুজুরাত, আয়াত: ৭]
১০। সব কারণের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, আল্লাহ্‌ তাআলার ইচ্ছা ও বান্দার জন্য ভাল তাকদীর নির্ধারণ করে রাখা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “আর আল্লাহ্‌ শান্তির আবাসের দিকে আহ্বান করেন এবং যাকে ইচ্ছে সরল পথে পরিচালিত করেন।”[সূরা ইউনুস, আয়াত: ২৫]
দুই:
ঈমান না-আনার প্রতিবন্ধকতাও অনেক। যেমন-
১। অজ্ঞতা এবং ঈমানী মহান শিক্ষা ও দিক নির্দেশনাগুলো না জানা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: বরং তারা যে বিষয়ের জ্ঞান আয়ত্ত করেনি তাতে মিথ্যারোপ করেছে, আর যার প্রকৃত পরিণতি এখনও তাদের কাছে আসেনি। এভাবেই তাদের পূর্ববর্তীরাও মিথ্যা আরোপ করেছিল, কাজেই দেখুন, যালিমদের পরিণাম কি হয়েছে।”! [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৩৯] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন, “কিন্তু, তাদের অধিকাংশই মূর্খ।”[সূরা আনআম, আয়াত: ১১১] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন, “কিন্তু, তাদের অধিকাংশই জানে না।”[সূরা আনআম, আয়াত: ৩৭]
২। হিংসা ও বিদ্বেষ; যা হচ্ছে ইহুদীদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “কিতাবীদের অনেকেই চায়, যদি তারা তোমাদেরকে তোমাদের ঈমান আনার পর কাফেররূপে ফিরিয়ে নিতে পারত! সত্য স্পষ্ট হওয়ার পরও তাদের নিজেদের পক্ষ থেকে বিদ্বেষবশতঃ (তারা এটা করে থাকে।” [সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১০৯]
৩। অহংকার। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: যমীনে যারা অন্যায়ভাবে অহংকার করে বেড়ায় আমার নিদর্শনসমূহ থেকে আমি তাদের অবশ্যই ফিরিয়ে রাখব। আর তারা প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখলেও তাতে ঈমান আনবে না এবং তারা সৎপথ দেখলেও এটাকে পথ বলে গ্রহণ করবে না, কিন্তু তারা ভুল পথ দেখলে সেটাকে পথ হিসেবে গ্রহণ করবে। এটা এ জন্য যে, তারা আমাদের নিদর্শনসমূহে মিথ্যারোপ করেছে এবং সে সম্বন্ধে তারা ছিল গাফেল।”[সূরা আরাফ, আয়াত: ১৪৬]
৪। সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া ও সত্যকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আপনাকে তো আমরা এদের রক্ষক করে পাঠাইনি।”[সূরা শুরা, আয়াত: ৪৮] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন, “পূর্বে যা ঘটেছে তার কিছু সংবাদ আমরা এভাবে আপনার নিকট বর্ণনা করি। আর আমরা আমাদের নিকট হতে আপনাকে দান করেছি যিকর। এটা থেকে যে বিমুখ হবে, অবশ্যই সে কিয়ামতের দিন মহাভার বহন করবে। সেটাতে তারা স্থায়ী হবে এবং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য এ বোঝা হবে কত মন্দ!”[সূরা ত্বা-হা, আয়াত: ৯৯-১০১] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন, “অতএব আপনি তাকে উপেক্ষা করে চলুন যে, আমাদের স্মরণ থেকে বিমুখ হয় এবং কেবল দুনিয়ার জীবনই কামনা করে।”[সূরা নাজম, আয়াত: ২৯] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন: আর যে রহমানের যিকির থেকে বিমুখ হয় আমরা তার জন্য নিয়োজিত করি এক শয়তান, অতঃপর সে হয় তার সহচর।”[সূরা যুখরুফ, আয়াত: ৩৬]
৫। ঈমানকে বুঝার পরে, দলিল জানার পরেও প্রত্যাখ্যান করা, গ্রহণ না করা। জানার পরেও হঠকারিতা করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: আমরা যাদেরকে কিতাব দিয়েছি তারা তাকে সেরূপ চিনে যেরূপ চিনে তাদের সন্তানদেরকে। যারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করেছে, তারা ঈমান আনবে না।”[সূরা আনআম, আয়াত: ২০] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন, “অতঃপর তারা যখন বাঁকা পথ অবলম্বন করল তখন আল্লাহ্‌ তাদের হৃদয়কে বাঁকা করে দিলেন। আর আল্লাহ্‌ ফাসিক সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না।”[সূরা সাফ্‌ফ, আয়াত: ৫] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন, “এভাবেই ফিরিয়ে নেয়া হয় তাদেরকে যারা আল্লাহ্‌র নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করে।”[সূরা গাফের, আয়াত: ৬৩]
৬। বিলাসিতায় ডুবে থাকা, নেয়ামতের অপচয় করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “আর যারা কুফরী করেছে যেদিন তাদেরকে জাহান্নামের সামনে পেশ করা হবে (সেদিন তাদেরকে বলা হবে) তোমরা তোমাদের দুনিয়ার জীবনেই যাবতীয় সুখ-সম্ভার নিয়ে গেছ এবং সেগুলো উপভোগও করেছে। সুতরাং আজ তোমাদেরকে দেয়া হবে অবমাননাকর শাস্তি; কারণ তোমরা যমীনে অন্যায়ভাবে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে এবং তোমরা নাফরমানী করতে।”[সূরা আহকাফ, আয়াত: ২০] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন, “ইতোপূর্বে তারা তো মগ্ন ছিল ভোগ-বিলাসে।”[সূরা ওয়াক্বিয়া, আয়াত: ৪৫]
৭। সত্যকে ও সত্য গ্রহণকারীকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা। আল্লাহ্‌ তাআলা নূহ আলাইহিস সালাম এর এর উম্মত সম্পর্কে বলেন, তারা বলল, ‘আমরা কি তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব অথচ তোমার অনুসরণ করছে নীচুজাতেরা।”[সূরা ওয়াক্বিয়া, আয়াত: ১১১]
৮। পাপ কাজ করা ও আল্লাহ্‌র আনুগত্য থেকে বেরিয়ে শয়তানের আনুগত্য করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, যারা অবাধ্য হয়েছে এভাবেই তাদের সম্পর্কে আপনার রবের বাণী সত্য প্রতিপন্ন হয়েছে যে, তারা ঈমান আনবে না।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৩৩]
৯। অন্তরের কাঠিন্যতা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “সুতরাং যখন আমাদের শাস্তি তাদের উপর আপতিত হল, তখন তারা কেন বিনীত হল না? কিন্তু তাদের হৃদয় নিষ্ঠুর হয়েছিল এবং তারা যা করছিল শয়তান তা তাদের দৃষ্টিতে শোভন করেছিল।”[সূরা আনআম, আয়াত: ৪৩]
১০। আল্লাহ্‌ যা নাযিল করেছেন সেটাকে অপছন্দ করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “আর যারা কুফরী করেছে তাদের জন্য রয়েছে ধ্বংস এবং তিনি তাদের আমলসমূহ ব্যর্থ করে দিয়েছেন। এটা এজন্যে যে, আল্লাহ্‌ যা নাযিল করেছেন তারা তা অপছন্দ করেছে। কাজেই তিনি তাদের আমলসমূহ নিষ্ফল করে দিয়েছেন।” [সূরা মুহাম্মদ, আয়াত: ৮-৯]
আরও জানতে পড়ুন: 31807 নং প্রশ্নোত্তর।
আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন। (https://islamqa.info/bn/answers/)


Post a Comment

0 Comments