সর্বশেষ

2/recent/ticker-posts

কোরআনে যেহেতু পৃথিবীকে 'বেড' ও 'কার্পেট' এর সাথে তুলনা করা হয়েছে সেহেতু পৃথিবীর আকারকে 'সমতল' মনে করা হয়েছে!

#Campúsian-48
#Srandard-5
#Qn: কোরআনে যেহেতু পৃথিবীকে 'বেড' ও 'কার্পেট' এর সাথে তুলনা করা হয়েছে সেহেতু পৃথিবীর আকারকে 'সমতল' মনে করা হয়েছে!
#Ans: প্রথমত, কোরআনের কোথাও পৃথিবীর আকারকে 'সমতল' বলা হয়নি।
দ্বিতীয়ত, কেউ কি অকাট্য যুক্তি-প্রমাণের সাহায্যে কোরআনের পৃথিবীকে 'সমতল' বানাতে পারবে? মোটেও না। নিচের আয়াতগুলো দিয়ে কোরআনের পৃথিবীকে 'সমতল' বানানোর চেষ্টা করা হয়।
20.53: YUSUFALI: "He Who has, made for you the earth like a carpet spread out; has enabled you to go about therein by roads (and channels); and has sent down water from the sky." With it have We produced diverse pairs of plants.
PICKTHAL: Who hath appointed the earth as a bed and hath threaded roads for you therein and hath sent down water from the sky and thereby We have brought forth divers kinds of vegetation.
15.19: And the earth We have spread out (like a carpet); set thereon mountains firm and immovable; and produced therein all kinds of things in due balance.
51.48: And We have spread out the (spacious) earth: How excellently We do spread out!
71.19: And God hath made the earth a wide expanse for you.
তাদের যুক্তি হচ্ছে কোরআনে যেহেতু পৃথিবীকে 'বেড' ও 'কার্পেট' এর সাথে তুলনা করা হয়েছে সেহেতু কোরআনে পৃথিবীর আকারকে 'সমতল' মনে করা হয়েছে! কিন্তু এই ধরণের যুক্তিকে কু-যুক্তি ছাড়া অন্য কিছু বলা যেতে পারে না। কারণগুলো নিম্নরূপ:
১. সাদা চোখে পৃথিবীকে যেমন সমতল মনে হয় তেমনি আবার কিন্তু বৃত্তাকারও মনে হয়। বরঞ্চ সমতলের চেয়ে বৃত্তাকারই বেশী মনে হয়। কারণ, উঁচু কোনো পাহাড়ের চূড়া থেকে পৃথিবীকে কিছুটা হলেও উত্তল দেখায়। তা-ই যদি হয় তাহলে সাদা চোখের জ্ঞান দিয়ে পৃথিবীর আকারকে কোনো ভাবেই বেডের সাথে তুলনা করা হতো না। কেননা এই পৃথিবীর কারো বাড়িতে 'বৃত্তাকার বেড' আছে বলে মনে হয় না, যদি না কেউ এই লেখাটি পড়ে তড়িঘড়ি করে একটি বৃত্তাকার বেড বানিয়ে নেয়! সমালোচকরা সারা জীবন ধরে চতুর্ভুজাকৃতির বেডে শুয়ে থেকেও কোরআন পড়তে যেয়ে কোরআনের পৃথিবীকে জোর করে 'সমতল' বানানোর জন্য সেই বেডকেই আবার ‘বৃত্তাকার’ কল্পনা করে! তাছাড়া তারা হয়তো ‘বেড’ বলতে কাঠ অথবা লোহার তৈরী চতুর্ভুজাকৃতির ফ্রেমকে বুঝে থাকে! ওয়েল, তা-ই যদি হয় তাহলে বেড এর চার পা ও স্ট্যান্ড থাকলেও কোরআনের কোথাও কিন্তু পৃথিবীর চার পা ও স্ট্যান্ড এর কথা বলা হয়নি! অধিকন্তু, যাদের বাড়িতে কাঠ অথবা লোহার তৈরী বেড নেই তারা কিন্তু মেঝেতেই শুয়ে থাকে। ফলে তাদের কাছে এই পৃথিবীটাই একটি বেড।
যাহোক, বেড বলতে সাধারণত নরম গদিকে বুঝানো হয়ে থাকে। অর্থাৎ বেড তাকেই বলা হয় যেখানে আরাম ও স্বাচ্ছন্দের সাথে বিশ্রাম নেওয়া যায়। বেডে মানুষ যতটা আরাম ও স্বাচ্ছন্দের সাথে বিশ্রাম নিতে পারে, মরুভূমির উত্তপ্ত বালুচরে ততটা আরাম ও স্বাচ্ছন্দের সাথে বিশ্রাম নিতে পারে না। ফলে মরুভূমির উত্তপ্ত বালুচরকে কিন্তু বেড বলা যাবে না। তাছাড়া বেড সাধারণত প্রটেকটিভ জায়গার মধ্যে রাখা হয় যাতে করে সূর্যের তাপ ও ক্ষতিকর রশ্মি, ঝড়-বৃষ্টি, হিংস্র জন্তু, ও বিষাক্ত কীট-পতঙ্গের হাত থেকে জীবন বাঁচানো যায়। এবার আসা যাক কোরআনের ক্ষেত্রে। কোরআনে পৃথিবীকে বেড বা কার্পেট এর সাথে তুলনা করে পৃথিবীর আকার-আকৃতিকে বুঝানো হয়নি। বরঞ্চ এই তুলনাটা অত্যন্ত যৌক্তিক ও তাৎপর্যপূর্ণ। আমরা সবাই জানি এ পর্যন্ত যতগুলো গ্রহ-উপগ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে পৃথিবী একটি ব্যতিক্রমধর্মী গ্রহ, যেখানে পানি-বাতাস ও জীবের অস্তিত্ব আছে। অর্থাৎ পৃথিবী নামক গ্রহে মানুষ ও অন্যান্য জীব যত সহজে বসবাস করতে পারে, যত সহজে আরাম ও স্বাচ্ছন্দের সাথে বিশ্রাম নিতে পারে, সর্বোপরি যত সহজে বেঁচে থাকতে পারে, অন্য কোনো গ্রহে যেয়ে তত সহজে বসবাস করা কিন্তু আসম্ভব। বেড এর সাথে উত্তপ্ত মরুভূমির যেমন সম্পর্ক, পৃথিবী নামক গ্রহের সাথে অন্যান্য গ্রহেরও অনুরূপ সম্পর্ক। আর এ কারণেই কোরআনে পৃথিবীকে বেড এর সাথে তুলনা করা হয়েছে। অর্থাৎ কোরআনে পৃথিবীকে বেড এর সাথে তুলনা করে পৃথিবীকে বসবাস ও জীবন ধারণের উপযোগী বুঝানো হয়েছে, পৃথিবীর আকার-আকৃতিকে বুঝানো হয়নি। বেডকে যেমন প্রটেকটিভ জায়গার মধ্যে রাখা হয় তেমনি পৃথিবীকেও প্রটেকটিভ আবরণের মধ্যে রাখা হয়েছে (২১:৩২)।
২. কোরআনের এই আয়াতগুলোতে ‘Shape’ ও ‘Flat’ শব্দ দুটির কোনোটিই ব্যবহার করা হয়নি। সুতরাং আয়াতগুলোতে আসলে কী বুঝাতে চাওয়া হয়েছে সেটাই বিবেচ্য বিষয়। প্রথমত, কিছু অনুবাদক ‘কার্পেট’ ও ‘বেড’ শব্দ দুটি ব্যবহারই করেননি। দ্বিতীয়ত, কার্পেটিং করতে হলে রাস্তা-ঘাট সরল রেখার মতো সমতল হতেই হবে, এমন আজগুবি কথা কে বলেছে? পাহাড়ের উপর দিয়ে যে রাস্তা তৈরী করা হয় সেটি তো বক্রাকার বা অর্ধবৃত্তাকার। সেই অর্ধবৃত্তাকার রাস্তায় কি কার্পেটিং করা হয় না? ফলে গোলাকার বস্তুর উপর কার্পেট বিছানো যাবে না কেন? ফুটবলের উপরিভাগের চামড়াকেও এক অর্থে কার্পেট বলা যেতে পারে। তার মানে কি ফুটবলের আকার সমতল? কেস ডিসমিস। ঘরের মেঝেতে মানুষ কার্পেট বিছায় মূলত কিছু কারণে: মেঝে খসখসে হলে; মেঝে ঠাণ্ডা হলে; মেঝের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য; ইত্তাদি। রাস্তায় যানবাহন চলাচলের সুবিধার জন্য যেমন কার্পেটিং করা হয়, পৃথিবীর পৃষ্ঠভাগকেও মানুষের বসবাস ও ফসল ফলানোর উপযোগী করার জন্য কার্পেটিং করা হয়েছে। পৃথিবীর মধ্যভাগ বসবাস ও ফসল ফলানোর উপযোগী নয়। বেডের উপর মানুষ যেমন বিশ্রাম নিতে পারে তেমনি পৃথিবীর পৃষ্ঠেও বিশ্রাম নিতে পারে। আর এ কারণেই পৃথিবীকে বেডের সাথে তুলনা করা হয়েছে, পৃথিবীর মধ্যভাগ বিশ্রামযোগ্য নয়। অতএব, প্রচলিত বেডের আকার সমতল না হয়ে অন্য কিছু হলেও সেই বেডের সাথেই হয়তো পৃথিবীকে তুলনা করা হতো। তাছাড়া স্ফেরিক্যাল বেডও তো অসম্ভব কিছু নয়। পুরো পৃথিবীকে একটি বিশাল স্ফেরিক্যাল বেড ধরে নেওয়াটা অযৌক্তিক হবে কেন? আয়াতগুলোতে কিছু শব্দ যেমন Bed, Carpet, Spread out, Expanse ইত্যাদি দেখেই পৃথিবীর আকারকে 'সমতল' ধরে নেওয়া হয়েছে! কিন্তু Bed, Carpet, Spread out, Expanse ইত্যাদি বলতে যে সমতল হতেই হবে তার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কোরআনের কিছু আয়াত পড়ে অনুমান করা যায় যে, পৃথিবীটা বর্তমান অবস্থায় হুট করে আসেনি। ফলে ‘এক্সপ্যান্ড’ ও ‘স্প্রেড’ শব্দ দুটি কোরআনের জন্য অর্থবহ।
৩. কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন আনুবাদক বিভিন্ন রকম শব্দ ব্যবহার করেছেন। যেমন আয়াত ২০:৫৩ এর বিভিন্ন অনুবাদ লক্ষ্যণীয়-
[Qaribullah]: It is He who has made for you the earth as a cradle.
[Khalifa]: He is the One who made the earth habitable for you.
[YUSUFALI]: He Who has, made for you the earth like a carpet.
[PICKTHAL]: Who hath appointed the earth as a bed.
[SHAKIR]: Who made the earth for you an expanse.
তাহলে দেখা যাচ্ছে পাঁচজন অনুবাদক পাঁচ রকম শব্দ ব্যবহার করেছেন এবং সবগুলোই আসলে যৌক্তিক যার ব্যাখ্যা ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অন্ধ-অজ্ঞ সমালোচকদের ‘বিভ্রান্তি’ এড়ানোর জন্য ক্বারিবুল্লাহ ও রাশাদ খলিফা যথাক্রমে ‘ক্রেডল’ ও ‘হ্যাবিটেবল’ ব্যবহার করেছেন। কেস ডিসমিস। অনুবাদের ক্ষেত্রে যে অনুবাদকে সবচেয়ে বেশী যৌক্তিক মনে হবে সেটা গ্রহণ করাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু বিভিন্ন অনুবাদ থেকে নিজের ইচ্ছেমতো কিছু শব্দ বেছে নিয়ে একটি গ্রন্থকে ভুল বা অবৈজ্ঞানিক প্রমাণ করার চেষ্টা করা অযৌক্তিক। কেননা অনুবাদের ক্ষেত্রে ‘বেনিফিট-অব-ডাউট’ কোরআন বা যেকোনো গ্রন্থকেই দিতে হবে। কোরআনে এমন কোনো আয়াত নেই যেখানে থেকে কেউ পৃথিবীর আকারকে অকাট্য যুক্তি দিয়ে সমতল বানাতে পারে।
এবার পজিটিভ অ্যাপ্রোচ নেওয়া যাক। কোরআনে সমতল পৃথিবীর পরিবর্তে বরং স্ফেরিক্যাল পৃথিবীরই ইঙ্গিত আছে। যেমন:
ক) আয়াত ৮৪:৩-৪-তে মহাপ্রলয় দিবস সম্পর্কে বলা হয়েছে, “And when the earth is flattened out, and casts forth what is in it and becomes empty.” কোরআনের আলোকে পৃথিবীর আকার যদি সমতল-ই হতো তবে তাকে প্রলয়দিনে আবার সমতল বানানোর প্রশ্ন আসবে কেন? সমতল পৃথিবীকে আবার সমতল বানানো এবং সেই সাথে খালি করার প্রশ্ন কিন্তু অবান্তর। পৃথিবীকে সমতল ও খালি করার প্রশ্ন তখনই আসবে যখন পৃথিবীর আকার স্ফেরিক্যাল হবে।
খ) কিছু স্কলারের মতে আয়াত ৭৯:৩০-তে পৃথিবীকে ডিমের মতো বলা হয়েছে।
গ) আরো দেখুন:
31.29: Seest thou not that God merges Night into Day and he merges Day into Night.
Note: Merging here means that the night slowly and gradually changes to day and vice versa. This phenomenon can only take place if the earth is spherical. If the earth was flat, there would have been a sudden change from night to day and from day to night.
39.5: He makes the Night overlap the Day, and the Day overlap the Night.
Note: The Arabic word used here is Kawwara meaning 'to overlap' or 'to coil' – the way a turban is wound around the head. The overlapping or coiling of the day and night can only take place if the earth is spherical.
55.17-18: Lord of the two Easts and the two Wests. Then which of the favours of your Lord will ye deny?
[Note: The question of two Easts and the two Wests does only arise if the earth is spherical.]
এবার যুক্তিতে আসা যাক। পৃথিবীর আকার যেমন হুবহু কমলালেবুর মতো না, তেমনি আবার হুবহু ডিমের মতোও না। প্রকৃতপক্ষে, পৃথিবীর আকারকে বাস্তবে কোনো কিছুর সাথেই অবিকল বা হুবহু তুলনা করা যায় না। আর তা-ই যদি হয় তাহলে পৃথিবীকে ডিমের সাথে তুলনা করাই বেশী যৌক্তিক। কারণগুলো নিম্নরূপ:
১) কমলালেবুর মতো ডিমও স্ফেরিক্যাল।
২) ডিম ও পৃথিবীর বোঁটা নেই, কমলালেবুর বোঁটা আছে।
৩) ডিম ও পৃথিবীর মধ্যে বিচি নেই, কমলালেবুর মধ্যে বিচি আছে।
৪) ডিম ও পৃথিবীর কেন্দ্রে ফাঁপা নয়, কমলালেবুর কেন্দ্রে কিছুটা ফাঁপা।
৫) পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ কমলালেবুর মতো নয়, বরং ডিমের মতো। কমলালেবুর অভ্যন্তরভাগ অনেকগুলো কোয়ার সমষ্টি এবং কোয়াগুলোকে একে অপর থেকে সহজে পৃথকও করা যায়।
৬) ডিমের যেমন কয়েকটি স্তর আছে (শেল, শেলের নিচে পাতলা স্তর, সাদা তরল পদার্থের স্তর, হলুদ তরল পদার্থের স্তর, ইত্যাদি), পৃথিবীরও তেমনি কয়েকটি স্তর আছে (Crust, Mantle, Inner core, Outer core, etc.)।
৭) ডিম ও পৃথিবী উভয়েরই পৃষ্ঠভাগ শক্ত পদার্থ এবং অভ্যন্তরভাগ নরম ও গলিত পদার্থ দ্বারা গঠিত।
নিচের ছবিতে দেখুন তো, পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগকে ডিমের অভ্যন্তরভাগের মতো মনে হয় কি-না।
উপরোল্লেখিত পয়েন্টগুলোর ভিত্তিতে পৃথিবীকে কমলালেবু নাকি ডিমের সাথে তুলনা করা বেশী যৌক্তিক মনে হচ্ছে? পার্থক্যগুলো কিন্তু দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার। একমাত্র গোঁড়া কিংবা অজ্ঞ-মূর্খ ছাড়া এই দিনের আলোর মতো সত্যকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না।
নোট: কুরআনে পৃথিবীকে সরাসরি স্ফেরিক্যাল ও ঘূর্ণায়মান উল্লেখ না করে পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত দেওয়ার পেছনে যৌক্তিক একটি কারণ যেটা হতে পারে সেটা হচ্ছে বিষয় দুটি সেই সময়ের মানুষের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতো এবং যার ফলে তারা হয়তো কুরআনকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করতো। এমনকি নিকট অতীতেই গ্যালিলিও ও ব্রুনোর কাহিনী কে না জানে! কারণ, একদিকে যেমন সেই সময়ের মানুষের কাছে ‘প্রতিষ্ঠিত সত্য’ বলতে পৃথিবীটা 'সমতল' ও 'অনড়' ছিল, অন্যদিকে আবার পৃথিবীটা যে সত্যি সত্যি স্ফেরিক্যাল ও ঘূর্ণায়মান সেটা তাদেরকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখানোও সম্ভব হতো না। ফলে বিষয় দুটি সত্য হলেও তাদের কাছে কোনো তথ্যই বহন করতো না। যার ফলে কোরআনের মূখ্য উদ্দেশ্য “পার্থিব ও অপার্থিব গাইডেন্স” ব্যর্থ হতে পারতো। কোরআনে তেমন কোনো উক্তি নেই যেটি সেই সময়ের মানুষের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বাসের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক এবং সম্পূর্ণ অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে।