#Campúsian-24
#আল_ফারিস-১২
#উপলব্ধিঃ "অভিশপ্ত সভ্যতার আর্তনাদ"
‘মানুষ কেন স্বপ্ন দেখে এই নিয়ে প্রধানত দু’টি মতবাদ রয়েছে। একটি হলো মনস্তাত্বিক তত্ব, আরেকটি সক্রিয় সংশ্লেষণ মডেল তত্ব। প্রথমটিতে বলা হয়েছে, স্বপ্ন হলোঃ মানুষের অবদমিত চিন্তাগুলোর বহিঃপ্রকাশ। সামাজিক বিধিনিষেধের কারণে মানুষের অনেক চিন্তাই অবদমিত থাকে। এই অবদমিত চিন্তাগুলো এত প্রকট অবস্থায় থাকে যে,স্বপ্নের মাধ্যমে তার নিশ্চিত প্রকাশ ঘটে। এ সম্পর্কে ফ্রয়েড বলেন, “স্বপ্ন হচ্ছে অবদমিত আকাংঙ্খার ছদ্মবেশী তৃপ্তিকরন”। অপর মতবাদে বলা হয়েছে, ঘুমের REM পর্যায়ে Brainstem এর circuit গুলো সক্রিয় হয় যা মস্তিষ্কের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল amygdala, hippocampus সহ limbic system কে সক্রিয় করে। আমাদের limbic system আবেগ, সংবেদন ও স্মৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট। আমাদের মস্তিষ্ক এই অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকলাপকে সংশ্লেষণ করে। এরপর তা অর্থপূর্ণ করে তুলে। যার ফলে আমরা স্বপ্ন দেখি।
মজার ব্যাপার কি জানেন?’
‘মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণি যেমনঃ কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর ইত্যাদি প্রাণীরাও স্বপ্ন দেখে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেছেন,স্বপ্ন দেখার ক্ষেত্রে মানুষের মস্তিষ্ক তরঙ্গের যে পরিবর্তন হয়, ঠিক একই পরিবর্তন প্রাণিদের ক্ষেত্রেও হয়’।
‘পাশ্চাত্য সভ্যতা আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে,। আমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে এসেছে। আমাদেরকে জ্ঞান বিজ্ঞান শিখিয়েছে। আমাদেরকে আধুনিক করেছে। এই যে দেখ, আজ আমরা চকলেট খাচ্ছি, পীজা খাচ্ছি, বার্গার খাচ্ছি – অথচ একটা সময় তো এগুলোর নামও জানতাম না। এগুলো সবই পাশ্চাত্যের অবদান।’
পাশ্চাত্য সভ্যতাকে তোর এত বেশি ভালো লাগার কারণটা কি?’
‘কি বলিস! লাগবে না। যারা আমাদেরকে আধুনিকতা শিখিয়েছে, সমানুতা শিখিয়েছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা শিখিয়েছ’
‘আসলেই, পাশ্চাত্য আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। পাশ্চাত্য আমাদেরকে শিখিয়েছে কীভাবে বছরে লক্ষাধিক ধর্ষণ করা যায়, কীভাবে নিজের বোনকে শয্যাসঙ্গিনী বানানো যায়, কীভাবে রাস্তা ঘাটে প্রকাশ্যে ব্যাভিচার করা যায়, কীভাবে পর্ণগ্রাফীর নেশায় আসক্ত হওয়া যায়, কীভাবে মদ্যপানকে সহজলভ্য করা যায়। সত্যিই, অনেক কিছু শিখিয়েছে’।
বলবেন মোল্লাদের নজরে কি ভালো জিনিস গুলো ফুটে উঠে না? নাকি মনের মধ্যে শুধু নেগেটিভ চিন্তা ঘুরপাক খায়? মোল্লারা পৃথিবীটাকে আধুনিক করে নি, তারাই করেছে। তারা যদি আমাদেরকে পথ না দেখাতো তাহলে আমরা সেই তিমিরেই পরে রইতাম?’
পাশ্চাত্যের কোন দেশটাকে তোর সবথেকে বেশি উন্নত?’
‘যুক্তরাষ্ট্র। শুধু আমারই না, যাদের আধুনিক সভ্যতা শেখার আগ্রহ আছে তাদের সবার কাছেই। কেউ একবার যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ পেলে তা হাতছাড়া করতে চায় না।’
শুধুমাত্র ২০০৫ সালে তোর নারী স্বাধীনতার দেশ আমেরিকায় ১ লক্ষ ৯১ হাজার ৬৭০ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়। ২০১৫ সালে এসে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লক্ষেরও উপরে। জর্জ ম্যাসন ইউনিভার্সিটির গবেষণা বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ৩ জন নারীর ১ জন পুরো জীবনে একবার হলেও ধর্ষণের শিকার হন। গবেষণার আরও ভয়াবহ তথ্য হলো – প্রতিবছর দেশটির জনগোষ্ঠির ৬৮ শতাংশ ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আর এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার অপরাধীদের ৯৮ ভাগই কোনোদিন বিচারের সম্মুখীন হয় না। ন্যাশনাল ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইম্যানের সার্ভে অনুযায়ী আমেরিকার প্রতি ৬ জন মহিলার মধ্যে ১ জন ধর্ষণের শিকার হন। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানটা ৩৩ জনে ১ জন’।
বলেন মোল্লা পড়ে আছিস ধর্ষণ নিয়ে। এগুলো সেখানে স্বাভাবিক ব্যাপার। এগুলো নিয়ে যতটা মাথা ঘামাস, আমেরিকানরা ততটা মাথা ঘামায় না। জ্ঞান বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আমেরিকা আমাদের থেকে কতদূর এগিয়ে গিয়েছে, সে খেয়াল আছে তোর?’
‘সত্যিই অনেক দূর এগিয়ে আছে। কিন্তু যে দেশে এত জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রসার – তারা কেন তাদের নাগরিকদের অকাল মৃত্যু থেকে রক্ষা করতে পারছে না?’
মত প্রকাশের দেশ আমেরিকা সর্বক্ষেত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে গিয়ে এমন বিপাকে পড়েছে যে, তার খেসারত সে সারা জীবনেও দিয়ে শেষ করতে পারবে না’।
আমেরিকায় প্রতি বছর কি পরিমাণ লোক শুধুমাত্র এলকোহল গ্রহণের কারণে মারা যায়?’
আমেরিকায় প্রতি বছর ৮৮,০০০ লোক এলকোহল গ্রহণের কারণে মারা যায়।’
‘প্রিয় দেশ আমেরিকার Centers for Disease Control -এর দেয়া তথ্য।’
‘প্রতি বছর আমেরিকায় ২৪৯ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ এই মদের পেছনে ব্যয়িত হয়।’
ক্রাইম: ২০১১ সালে আমেরিকায় প্রায় ১২০৩৫৬৪ টি ভায়োলেন্ট ক্রাইম এর ঘটনা ঘটে। হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয় ১৪৬১২ টি, ডাকাতির ঘটনা ঘটে ৩৫৪৩৯৬ টি, অপহরন ঘটে ৬১৫৯৭৯৫ টি, সিঁধচুরির ঘটনা ঘটে ২১৮৮০০৫ টি, ভূসম্পত্তি সংক্রান্ত অপরাধ ঘটে ৯০৬৩১৭৩টি, শারীরিক আক্রমণের ঘটনা ঘটে ৭৫১১৩১ টি, মোটরযান সংক্রান্ত চুরি হয় ৭১৫৩৭৩ টি আর জোরপূর্বক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে ৮৩৪২৫টি। আবার বলিস না যে, আমি বানিয়ে বানিয়ে বলছি। স্বয়ং আমেরিকার FBI এর দেয়া তথ্য এটি, আমাদের দেয়া নয়। এরপরেও যদি আমেরিকাকে তোর কম অপরাধ প্রবণ দেশ মনে হয়, তো এটা একান্তই তোর ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার কিছুই বলার নেই’।
আমেরিকার এত এত ক্রাইমের ঘটনা আমার কাছেও অজানাই রয়ে যেতো, যদি ফারিসের মুখে তা না শুনতাম। আমেরিকায় যে বাৎসরিক এত ক্রাইমের ঘটনা তা চিন্তা করাটাও দায়। এরাই আবার অনান্য দেশের অপরাধ দমনের জন্য নাক গলাতে আসে। নিজের দেশের খোঁজ নেই, অপর দেশে পোদ্দারি। খুব অবাক লাগে, যখন দেখি মেইনষ্টিম মিডিয়া গুলো এই খবরগুলো প্রকাশ পর্যন্ত করে না। একেবারে বেমালুম চেপে যায়।
ভ্রূণ গর্ভপাত:
‘আমেরিকায় প্রতি বছর ৬৬৪,৪৩৫ টির-ও বেশি সংখ্যক গর্ভপাতের ঘটনা ঘটে। অথচ এটাকে তারা অপরাধ নয়, পরন্তু ব্যক্তিস্বাধীনতা হিসেবে গণ্য করে’।
পর্নগ্রাফি:
‘প্রতিদিন ৪০ মিলিয়ন আমেরিকান নাগরিক বিভিন্ন পর্ণোসাইট ভিজিট করে। প্রতি ৩৯ মিনিটে একটি করে নতুন পর্ণো ভিডিও আপলোড করা হয় আমেরিকায়। পর্ণোগ্রাফীর পেছনে তাদের বাৎসরিক খরচ হয় ১৬.৯ বিলিয়ন ডলায়। সবথেকে মজার বিষয় হলো, এই সমাজ বিধ্বংসী জিনসটাও তাদের সভ্যতা অনুযায়ী দোষের কিছু নয়। আফটার অল, ব্যক্তিস্বাধীনতা বলে কথা!’
যারা মানুষকে মানবাধিকারের তালিম দিয়ে বেড়ায় – তারাই কি না মানবতাকে ধ্বংস করতে এভাবে উঠেপড়ে লেগেছে? তাদের দেশে এত বড় বড় বিজ্ঞানী, এত বড় বড় ডাক্তার রয়েছে, যাদের সামনে পর্ণোগ্রাফীর ক্ষতিকর দিকগুলো পরিষ্কার, তা সত্ত্বেও তারা এটাকে থামাতে পারছে না। পরন্তু দিন দিন বেড়েই চলছে। আর শুধু এডাল্ট পর্ণোগ্রাফিই নয়, বরং লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেও চাইল্ড পর্ণোগাফী বন্ধ করতে পারছে না। এ কেমন মানবতাবাদী রাষ্ট্র?
‘FBI-এর দেয়া তথ্য থেকে জানা যায়, আমেরিকায় প্রতি ২৬.২ সেকেন্ডে একটি ভায়োলেন্ট ক্রাইম, প্রতি ৩৬ মিনিটে একটি হত্যাকাণ্ড, প্রতি ৬.৩ মিনিটে একটি ধর্ষণ, প্রতি ১.৫ মিনিটে একটি ডাকাতি, প্রতি ৩.৫ সেকেন্ডে একটি প্রোপার্টি ক্রাইম, প্রতি ৪২ সেকেন্ডে একটি আক্রমনাত্মক ঘটনা, প্রতি ১৪.৪ সেকেন্ডে একটি সিঁধচুরি, প্রতি ৪৪.১ সেকেন্ডে একটি মোটরযান চুরি এবং প্রতি ৫.১ সেকেন্ডে একটি অপহরণের ঘটনা ঘটে’।আমেরিকার বাইরে চাকচিক্যের পর্দা লাগানো থাকলেও ভিতরটা একেবারেই নষ্ট। ঠিক মাকাল ফলের মত।
আমেরিকায় অন্যান্য দেশের তুলনায় অধিকমাত্রায় সাম্য প্রতিষ্ঠিত। সেখানে নারী পুরুষের ভেদাভেদ নেই, সাদা কালোর ভেদাভেদ নেই – আমরা তো তাদের কাছ থেকে এই জিনিস গুলো শিখতে পারি। কি পারি না?’
‘পারি কি পারি না, সে প্রশ্নে আমি পরে যাচ্ছি। তার আগে তোর নারী স্বাধীনতার পয়েন্টটা একটু ক্লিয়া করি। ‘আমেরিকায় কোন নারী প্রেসিডেন্ট হতে পারে নি। আর সাম্যের ব্যাপারটা?’
‘আমেরিকায় আজও সাদা কালোর ভেদাভেদ দূর করা সম্ভব হয় নি। আমেরিকার গত ২০০ বছরের ইতিহাস লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বর্ণবাদ সেদেশের বহু পুরানো সমস্যা। এমনকি উত্তর ও দক্ষিণের যুদ্ধ নামে যে রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তার পেছনেও ছিল ওই বর্ণবাদী সংকট। তাদের দেশে বর্ণবাদ এতটাই প্রবল যে, স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট তা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। হোয়াইট হাউসে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের একদল তরুণ কর্মীর সঙ্গে আলাপচারিতায় ওবামা বলেছেন, “বর্ণবৈষম্য আমাদের সমাজে গভীরভাবে প্রোথিত, এটা আমাদের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত”’।
আমেরিকায় তো আইন কানুনের কোন কমতি নেই। আইনের বাস্তবায়নও তাদের দেশে আমাদের তুলনায় অনেক বেশি। তবুও তাদের অবস্থা এমন কেন? এত এত অপরাধের সাথে আমেরিকানরা জড়িত কেন?’
‘খুব সুন্দর প্রশ্ন।আমেরিকার কোন কিছুরই ঘাটতি নেই। অর্থ, বিত্ত, বৈভব কোনটাই তাদের কমতি নেই। শুধু একটা জায়গায় তাদের কমতি, যার কারণে তাদের সমস্যা না কমে বেড়েই চলছে।’
‘আমেরিকান সভ্যতার সূত্রপাত হয়েছে এমন সব লোকদের দ্বারা যাদের কাছে স্রষ্টা প্রেরিত ওহীর জ্ঞানের লেশমাত্র ছিলো না। সে সমাজে ধর্মগুরুরা অবশ্যি ছিলো; কিন্তু তাদের কাছে স্রষ্টার অবিকৃত প্রত্যাদেশ ছিলো না। আর যে বিকৃত ধর্মীয় মতবাদটি সে সমাজে বিদ্যমান ছিলো তা মানবজাতিকে সকল দিক থেকে পথ প্রদর্শন করতে অক্ষম ছিলো। শুধু অক্ষম বললে ভুল হবে, তা উন্নতির অন্তরায় ছিলো। এর ফলে সমাজপতিরা ধর্মকে বাদ দিয়ে এক নতুন দিকে যাত্রা শুরু করলো। আর সে যাত্রা শুরু হলো ধর্মহীনতা ও বস্তুবাদের কেন্দ্রবিন্দু থেকে। তাদের যাত্রাকে আরও বেগবান করলো ডারউইন সাহেব। ফলে পাশ্চাত্যের রেনেসাঁ আমলে যে স্রষ্টা বিমুখ সভ্যতার যে বিষবৃক্ষের বীজ রোপন করা হয়েছিলো, কয়েক শতকের মধ্যেই তা এক বিরাট মহীরুহে রূপান্তরিত হয়। সে বৃক্ষের ফল দেখতে সুন্দর হলেও আসলে তা বিষদুষ্ট। তার ফুল দেখতে সুন্দর হলেও আদতে তা কাঁটাযুক্ত। তার শাখা প্রশাখায় বসন্তের বাতাস থাকলেও তার থেকে প্রবাহিত বায়ু বিষাক্ত। আর সে বিষাক্ত বায়ু আজ শুধু পাশ্চাত্য সভ্যতাকেই নয় বরং গোটা মানবতাকেই বিষাক্ত করে চলছে’।
গভীরভাবে লক্ষ করলেই এর বাস্তবতা দৃশ্যমান হবে। পাশ্চাত্য সভ্যতা স্বহস্তে যে বিষবৃক্ষ রোপন করেছিলো, তারা আজ নিজেরাই তার প্রতি বীতশ্রদ্ধ। কারণ সে বৃক্ষ তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এমন জটিলতার সৃষ্টি করেছে যে, শত প্রচেষ্টাও তার সমাধান এনে দিতে পারছে না। পরন্তু জটিলতার সৃষ্টি করছে। তারা সে বিষবৃক্ষের যে ডালই কেটে দেয় – সেখান থেকে নতুন কাঁটাযুক্ত ডাল বের হয়। তাদের হাতে তৈরি সভ্যতা আজ তাদের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। নিজ হাতে গড়া সভ্যতা তাদেরকে প্রতিনিয়ত এমন যন্ত্রণা দিচ্ছে যে, সে যন্ত্রণা না সইতে পেরে প্রতি বছর ৪২৭৭৩ জন আমেরিকান আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে।
‘তার মানে তুই বলতে চাচ্ছিস পাশ্চাত্য সভ্যতা আমাদের কিছুই দেয় নি। কেবল আমাদেরকে ধ্বংসই উপহার দিয়েছে?’
আমি বলতে চেয়েছি পাশ্চাত্যের কাছে আমাদের থেকে জ্ঞান বিজ্ঞান বেশি আছে। শুধু বেশিই না অনেক অনেক বেশি আছে। কিন্তু সে জ্ঞান বিজ্ঞানের সঠিক প্রয়োগ তাদের কাছে নেই। তারা একটা জায়গায় এসে মারাত্মক ভুল করেছে’।
‘একটা সময়ে এসে তারা দুনিয়ার বস্তুনিচয়কে নিজেদের কর্তৃত্বাধীন পেয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো ব্যবহার করেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা যে ঐগুলোর মালিক নয়, বরং আসল মালিকের প্রতিনিধি মাত্র সে কথা তারা ভুলে গিয়েছিলো। যার ফলে জড়বাদ, বস্তুবাদ তাদের ঘাড়ের উপর চেপে বসেছিলো। যা ক্রমান্বয়ে তাদেরকে নাস্তিক্যবাদ, অজ্ঞেয়বাদ, সংশয়বাদের দিকে ধাবিত করেছে। একটা সময়ে এসে তারা স্রষ্টাকে বাদ দিয়ে নিজেরাই স্রষ্টার স্থান দখল করলো। আর মানুষ সে মিথ্যা স্রষ্টার আরাধনা করতে লাগলো। যা তাদেরকে ক্রমান্বয়ে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিলো। ফলত, আজ তারা যে পদক্ষেপ-ই গ্রহণ করছে তা-ই বিফলতায় পর্যবসিত হচ্ছে। তারা যখন পুঁজিবাদের উপর ক্ষোভের কুঠার চালাতে লাগলো, সাথে সাথে সমাজতন্ত্রের উদ্ভব ঘটলো। তারা যখন সমাজতন্ত্রের উপর আঘাত হানলো তখন ডিক্টেটরবাদের উত্থান ঘটলো। তারা যখন সামাজিক সমস্যাগুলোর সমাধান করতে গেলো তখন সাম্যবাদ, নারীবাদ, জন্মনিয়ন্ত্রণবাদ, সমকামিতা, ব্যাভিচার, ধর্ষণ, অযাচারের আবির্ভাব ঘটলো। স্রষ্টা প্রদত্ত নৈতিকতার মানদণ্ডকে দূরে ঠেলে যখন নিজেদের নফসের গোলামীতে লিপ্ত হলো তখন তখন অপরাধ প্রবণতা ও আইনের লঙ্ঘন অধিকমাত্রায় বিস্তার লাভ করলো। মোদ্দাকথা, পাশ্চাত্য সভ্যতা কালান্তরে এক অভিশপ্ত সভ্যতায় পরিণত হলো। তাদের নিজ হাতে রোপিত সভ্যতা নামের বিষবৃক্ষ থেকে বিকৃতি ও বিশৃঙ্খলার এক অন্তহীন ধারা বেরিয়ে এলো। সেই ধারা তাদের সমাজে জমা হয়ে বিরাট এক বিষফোঁড়ায় রূপান্তরিত হলো। যে ফোঁড়ার জ্বালা যন্ত্রণায় অভিশপ্ত সে সভ্যতা আজ প্রতিনিয়ত আর্তনাদ করে যাচ্ছে। আর চিৎকার করে বলছে, বাচাও! বাচাও!’
পাশ্চাত্য সভ্যতা আজ তার স্বহতে রচিত দর্শনের আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে। বিজ্ঞানরূপ মরুভূমির তীরবর্তী সবুজ বর্ণালী অতিক্রম করে ধূ ধূ মরুভূমিতে উপনীত হয়েছে। সে সভ্যতার সবাই আজ তৃষ্ণার্ত। তৃষ্ণায় তারা ছটফট করছে। তাদের প্রাণ কণ্ঠাগত হয়েছে। কেবল পানি পানি বলে চিৎকার করে যাচ্ছে অবিরত। কিন্তু তাদের কেউই জানে না, সে পানি কোথায় পাওয়া যাবে। পানির নাম অবশ্যি শুনেছে কিন্তু তার আসল চেহারা প্রত্যক্ষ করেনি কোনদিন। পরন্তু তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে এ কথাও শুনেছে, সাবধান! ঐ পানির ধারের কাছেও যেও না। কিন্তু আজকে পরিস্থিতি তাদের এমন হয়েছে, যদি সে পানির নাম গোপন করে তাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়, তাহলে তারা এক বাক্যে স্বীকার করে নেবে যে, আহহা, এই পানি এতদিন কোথায় ছিলো? আমরা তো এরই অপেক্ষায় ছিলাম। আমাদের আগে কেন এই পানি পান করতে দেয়া হলো না? আমরা এতদিন কি ধোঁকার মধ্যেই না ছিলাম! বলতে পারবি সে পানির নাম কি?’
‘ইসলাম।’
.
ফারিস সিরিজ -১২/ জাকারিয়া মাসুদ
.
____________________________
তথ্যসূত্রঃ
1) WHO, Alcohol Consumption Rate in the USA, http://www.who.int/…/publications/global_a…/profiles/usa.pdf
2) Crime in the United States, FBI. 2011. Retrieved 15 May 2013. https://www.fbi.gov/…/…/crime-in-the-u.s/2011/crime-in-the-u
3) "Criminal Victimization Survey", Bureau of Justice Statistics. 2011. Retrieved 15 May 2013. http://bjs.ojp.usdoj.gov/content/pub/pdf/cv11.pdf
4) https://www.cdc.gov/nchs/fastats/alcohol.htm
5) https://www.cdc.gov/…/n…/earlyrelease/earlyrelease201705.pdf
6) https://ucr.fbi.gov/…/2011/crime-in-the-u.s.…/tables/table-1
7) https://ucr.fbi.gov/…/2011/crime-in-the-u.s.…/tables/table-2
8) https://ucr.fbi.gov/…/2011/crime-in-the-u.s.…/tables/table-7
9) https://www.bjs.gov/index.cfm?ty=dcdetail&iid=245
10) https://www.bjs.gov/content/pub/pdf/cv15.pdf
11) http://www.latimes.com/…/la-sci-sn-alcohol-related-deaths-y…
12) Rehm J, Baliunas D, Borges GL, Graham K, Irving H, Kehoe T, et al. The relation between different dimensions of alcohol consumption and burden of disease: an overview. Addiction. 2010;105(5):817-43. http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/….
13) https://ucr.fbi.gov/…/offenses…/standard-links/national-data
14) https://www.webroot.com/…/internet-pornography-by-the-numbe…
15) https://www.churchmilitant.com/…/new-survey-of-porn-use-sho…
16) Wikipedia, Article: Rape in the United States, https://en.wikipedia.org/w/index.php…
17) Wikipedia, Article: Crime in the United States, https://en.wikipedia.org/w/index.php…
18) Wikipedia, Article: List of the Presidents of the United States, https://en.wikipedia.org/w/index.php…
#আল_ফারিস-১২
#উপলব্ধিঃ "অভিশপ্ত সভ্যতার আর্তনাদ"
‘মানুষ কেন স্বপ্ন দেখে এই নিয়ে প্রধানত দু’টি মতবাদ রয়েছে। একটি হলো মনস্তাত্বিক তত্ব, আরেকটি সক্রিয় সংশ্লেষণ মডেল তত্ব। প্রথমটিতে বলা হয়েছে, স্বপ্ন হলোঃ মানুষের অবদমিত চিন্তাগুলোর বহিঃপ্রকাশ। সামাজিক বিধিনিষেধের কারণে মানুষের অনেক চিন্তাই অবদমিত থাকে। এই অবদমিত চিন্তাগুলো এত প্রকট অবস্থায় থাকে যে,স্বপ্নের মাধ্যমে তার নিশ্চিত প্রকাশ ঘটে। এ সম্পর্কে ফ্রয়েড বলেন, “স্বপ্ন হচ্ছে অবদমিত আকাংঙ্খার ছদ্মবেশী তৃপ্তিকরন”। অপর মতবাদে বলা হয়েছে, ঘুমের REM পর্যায়ে Brainstem এর circuit গুলো সক্রিয় হয় যা মস্তিষ্কের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল amygdala, hippocampus সহ limbic system কে সক্রিয় করে। আমাদের limbic system আবেগ, সংবেদন ও স্মৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট। আমাদের মস্তিষ্ক এই অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকলাপকে সংশ্লেষণ করে। এরপর তা অর্থপূর্ণ করে তুলে। যার ফলে আমরা স্বপ্ন দেখি।
মজার ব্যাপার কি জানেন?’
‘মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণি যেমনঃ কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর ইত্যাদি প্রাণীরাও স্বপ্ন দেখে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেছেন,স্বপ্ন দেখার ক্ষেত্রে মানুষের মস্তিষ্ক তরঙ্গের যে পরিবর্তন হয়, ঠিক একই পরিবর্তন প্রাণিদের ক্ষেত্রেও হয়’।
‘পাশ্চাত্য সভ্যতা আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে,। আমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে এসেছে। আমাদেরকে জ্ঞান বিজ্ঞান শিখিয়েছে। আমাদেরকে আধুনিক করেছে। এই যে দেখ, আজ আমরা চকলেট খাচ্ছি, পীজা খাচ্ছি, বার্গার খাচ্ছি – অথচ একটা সময় তো এগুলোর নামও জানতাম না। এগুলো সবই পাশ্চাত্যের অবদান।’
পাশ্চাত্য সভ্যতাকে তোর এত বেশি ভালো লাগার কারণটা কি?’
‘কি বলিস! লাগবে না। যারা আমাদেরকে আধুনিকতা শিখিয়েছে, সমানুতা শিখিয়েছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা শিখিয়েছ’
‘আসলেই, পাশ্চাত্য আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। পাশ্চাত্য আমাদেরকে শিখিয়েছে কীভাবে বছরে লক্ষাধিক ধর্ষণ করা যায়, কীভাবে নিজের বোনকে শয্যাসঙ্গিনী বানানো যায়, কীভাবে রাস্তা ঘাটে প্রকাশ্যে ব্যাভিচার করা যায়, কীভাবে পর্ণগ্রাফীর নেশায় আসক্ত হওয়া যায়, কীভাবে মদ্যপানকে সহজলভ্য করা যায়। সত্যিই, অনেক কিছু শিখিয়েছে’।
বলবেন মোল্লাদের নজরে কি ভালো জিনিস গুলো ফুটে উঠে না? নাকি মনের মধ্যে শুধু নেগেটিভ চিন্তা ঘুরপাক খায়? মোল্লারা পৃথিবীটাকে আধুনিক করে নি, তারাই করেছে। তারা যদি আমাদেরকে পথ না দেখাতো তাহলে আমরা সেই তিমিরেই পরে রইতাম?’
পাশ্চাত্যের কোন দেশটাকে তোর সবথেকে বেশি উন্নত?’
‘যুক্তরাষ্ট্র। শুধু আমারই না, যাদের আধুনিক সভ্যতা শেখার আগ্রহ আছে তাদের সবার কাছেই। কেউ একবার যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ পেলে তা হাতছাড়া করতে চায় না।’
শুধুমাত্র ২০০৫ সালে তোর নারী স্বাধীনতার দেশ আমেরিকায় ১ লক্ষ ৯১ হাজার ৬৭০ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়। ২০১৫ সালে এসে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লক্ষেরও উপরে। জর্জ ম্যাসন ইউনিভার্সিটির গবেষণা বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ৩ জন নারীর ১ জন পুরো জীবনে একবার হলেও ধর্ষণের শিকার হন। গবেষণার আরও ভয়াবহ তথ্য হলো – প্রতিবছর দেশটির জনগোষ্ঠির ৬৮ শতাংশ ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আর এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার অপরাধীদের ৯৮ ভাগই কোনোদিন বিচারের সম্মুখীন হয় না। ন্যাশনাল ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইম্যানের সার্ভে অনুযায়ী আমেরিকার প্রতি ৬ জন মহিলার মধ্যে ১ জন ধর্ষণের শিকার হন। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানটা ৩৩ জনে ১ জন’।
বলেন মোল্লা পড়ে আছিস ধর্ষণ নিয়ে। এগুলো সেখানে স্বাভাবিক ব্যাপার। এগুলো নিয়ে যতটা মাথা ঘামাস, আমেরিকানরা ততটা মাথা ঘামায় না। জ্ঞান বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আমেরিকা আমাদের থেকে কতদূর এগিয়ে গিয়েছে, সে খেয়াল আছে তোর?’
‘সত্যিই অনেক দূর এগিয়ে আছে। কিন্তু যে দেশে এত জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রসার – তারা কেন তাদের নাগরিকদের অকাল মৃত্যু থেকে রক্ষা করতে পারছে না?’
মত প্রকাশের দেশ আমেরিকা সর্বক্ষেত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে গিয়ে এমন বিপাকে পড়েছে যে, তার খেসারত সে সারা জীবনেও দিয়ে শেষ করতে পারবে না’।
আমেরিকায় প্রতি বছর কি পরিমাণ লোক শুধুমাত্র এলকোহল গ্রহণের কারণে মারা যায়?’
আমেরিকায় প্রতি বছর ৮৮,০০০ লোক এলকোহল গ্রহণের কারণে মারা যায়।’
‘প্রিয় দেশ আমেরিকার Centers for Disease Control -এর দেয়া তথ্য।’
‘প্রতি বছর আমেরিকায় ২৪৯ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ এই মদের পেছনে ব্যয়িত হয়।’
ক্রাইম: ২০১১ সালে আমেরিকায় প্রায় ১২০৩৫৬৪ টি ভায়োলেন্ট ক্রাইম এর ঘটনা ঘটে। হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয় ১৪৬১২ টি, ডাকাতির ঘটনা ঘটে ৩৫৪৩৯৬ টি, অপহরন ঘটে ৬১৫৯৭৯৫ টি, সিঁধচুরির ঘটনা ঘটে ২১৮৮০০৫ টি, ভূসম্পত্তি সংক্রান্ত অপরাধ ঘটে ৯০৬৩১৭৩টি, শারীরিক আক্রমণের ঘটনা ঘটে ৭৫১১৩১ টি, মোটরযান সংক্রান্ত চুরি হয় ৭১৫৩৭৩ টি আর জোরপূর্বক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে ৮৩৪২৫টি। আবার বলিস না যে, আমি বানিয়ে বানিয়ে বলছি। স্বয়ং আমেরিকার FBI এর দেয়া তথ্য এটি, আমাদের দেয়া নয়। এরপরেও যদি আমেরিকাকে তোর কম অপরাধ প্রবণ দেশ মনে হয়, তো এটা একান্তই তোর ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার কিছুই বলার নেই’।
আমেরিকার এত এত ক্রাইমের ঘটনা আমার কাছেও অজানাই রয়ে যেতো, যদি ফারিসের মুখে তা না শুনতাম। আমেরিকায় যে বাৎসরিক এত ক্রাইমের ঘটনা তা চিন্তা করাটাও দায়। এরাই আবার অনান্য দেশের অপরাধ দমনের জন্য নাক গলাতে আসে। নিজের দেশের খোঁজ নেই, অপর দেশে পোদ্দারি। খুব অবাক লাগে, যখন দেখি মেইনষ্টিম মিডিয়া গুলো এই খবরগুলো প্রকাশ পর্যন্ত করে না। একেবারে বেমালুম চেপে যায়।
ভ্রূণ গর্ভপাত:
‘আমেরিকায় প্রতি বছর ৬৬৪,৪৩৫ টির-ও বেশি সংখ্যক গর্ভপাতের ঘটনা ঘটে। অথচ এটাকে তারা অপরাধ নয়, পরন্তু ব্যক্তিস্বাধীনতা হিসেবে গণ্য করে’।
পর্নগ্রাফি:
‘প্রতিদিন ৪০ মিলিয়ন আমেরিকান নাগরিক বিভিন্ন পর্ণোসাইট ভিজিট করে। প্রতি ৩৯ মিনিটে একটি করে নতুন পর্ণো ভিডিও আপলোড করা হয় আমেরিকায়। পর্ণোগ্রাফীর পেছনে তাদের বাৎসরিক খরচ হয় ১৬.৯ বিলিয়ন ডলায়। সবথেকে মজার বিষয় হলো, এই সমাজ বিধ্বংসী জিনসটাও তাদের সভ্যতা অনুযায়ী দোষের কিছু নয়। আফটার অল, ব্যক্তিস্বাধীনতা বলে কথা!’
যারা মানুষকে মানবাধিকারের তালিম দিয়ে বেড়ায় – তারাই কি না মানবতাকে ধ্বংস করতে এভাবে উঠেপড়ে লেগেছে? তাদের দেশে এত বড় বড় বিজ্ঞানী, এত বড় বড় ডাক্তার রয়েছে, যাদের সামনে পর্ণোগ্রাফীর ক্ষতিকর দিকগুলো পরিষ্কার, তা সত্ত্বেও তারা এটাকে থামাতে পারছে না। পরন্তু দিন দিন বেড়েই চলছে। আর শুধু এডাল্ট পর্ণোগ্রাফিই নয়, বরং লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেও চাইল্ড পর্ণোগাফী বন্ধ করতে পারছে না। এ কেমন মানবতাবাদী রাষ্ট্র?
‘FBI-এর দেয়া তথ্য থেকে জানা যায়, আমেরিকায় প্রতি ২৬.২ সেকেন্ডে একটি ভায়োলেন্ট ক্রাইম, প্রতি ৩৬ মিনিটে একটি হত্যাকাণ্ড, প্রতি ৬.৩ মিনিটে একটি ধর্ষণ, প্রতি ১.৫ মিনিটে একটি ডাকাতি, প্রতি ৩.৫ সেকেন্ডে একটি প্রোপার্টি ক্রাইম, প্রতি ৪২ সেকেন্ডে একটি আক্রমনাত্মক ঘটনা, প্রতি ১৪.৪ সেকেন্ডে একটি সিঁধচুরি, প্রতি ৪৪.১ সেকেন্ডে একটি মোটরযান চুরি এবং প্রতি ৫.১ সেকেন্ডে একটি অপহরণের ঘটনা ঘটে’।আমেরিকার বাইরে চাকচিক্যের পর্দা লাগানো থাকলেও ভিতরটা একেবারেই নষ্ট। ঠিক মাকাল ফলের মত।
আমেরিকায় অন্যান্য দেশের তুলনায় অধিকমাত্রায় সাম্য প্রতিষ্ঠিত। সেখানে নারী পুরুষের ভেদাভেদ নেই, সাদা কালোর ভেদাভেদ নেই – আমরা তো তাদের কাছ থেকে এই জিনিস গুলো শিখতে পারি। কি পারি না?’
‘পারি কি পারি না, সে প্রশ্নে আমি পরে যাচ্ছি। তার আগে তোর নারী স্বাধীনতার পয়েন্টটা একটু ক্লিয়া করি। ‘আমেরিকায় কোন নারী প্রেসিডেন্ট হতে পারে নি। আর সাম্যের ব্যাপারটা?’
‘আমেরিকায় আজও সাদা কালোর ভেদাভেদ দূর করা সম্ভব হয় নি। আমেরিকার গত ২০০ বছরের ইতিহাস লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বর্ণবাদ সেদেশের বহু পুরানো সমস্যা। এমনকি উত্তর ও দক্ষিণের যুদ্ধ নামে যে রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তার পেছনেও ছিল ওই বর্ণবাদী সংকট। তাদের দেশে বর্ণবাদ এতটাই প্রবল যে, স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট তা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। হোয়াইট হাউসে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের একদল তরুণ কর্মীর সঙ্গে আলাপচারিতায় ওবামা বলেছেন, “বর্ণবৈষম্য আমাদের সমাজে গভীরভাবে প্রোথিত, এটা আমাদের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত”’।
আমেরিকায় তো আইন কানুনের কোন কমতি নেই। আইনের বাস্তবায়নও তাদের দেশে আমাদের তুলনায় অনেক বেশি। তবুও তাদের অবস্থা এমন কেন? এত এত অপরাধের সাথে আমেরিকানরা জড়িত কেন?’
‘খুব সুন্দর প্রশ্ন।আমেরিকার কোন কিছুরই ঘাটতি নেই। অর্থ, বিত্ত, বৈভব কোনটাই তাদের কমতি নেই। শুধু একটা জায়গায় তাদের কমতি, যার কারণে তাদের সমস্যা না কমে বেড়েই চলছে।’
‘আমেরিকান সভ্যতার সূত্রপাত হয়েছে এমন সব লোকদের দ্বারা যাদের কাছে স্রষ্টা প্রেরিত ওহীর জ্ঞানের লেশমাত্র ছিলো না। সে সমাজে ধর্মগুরুরা অবশ্যি ছিলো; কিন্তু তাদের কাছে স্রষ্টার অবিকৃত প্রত্যাদেশ ছিলো না। আর যে বিকৃত ধর্মীয় মতবাদটি সে সমাজে বিদ্যমান ছিলো তা মানবজাতিকে সকল দিক থেকে পথ প্রদর্শন করতে অক্ষম ছিলো। শুধু অক্ষম বললে ভুল হবে, তা উন্নতির অন্তরায় ছিলো। এর ফলে সমাজপতিরা ধর্মকে বাদ দিয়ে এক নতুন দিকে যাত্রা শুরু করলো। আর সে যাত্রা শুরু হলো ধর্মহীনতা ও বস্তুবাদের কেন্দ্রবিন্দু থেকে। তাদের যাত্রাকে আরও বেগবান করলো ডারউইন সাহেব। ফলে পাশ্চাত্যের রেনেসাঁ আমলে যে স্রষ্টা বিমুখ সভ্যতার যে বিষবৃক্ষের বীজ রোপন করা হয়েছিলো, কয়েক শতকের মধ্যেই তা এক বিরাট মহীরুহে রূপান্তরিত হয়। সে বৃক্ষের ফল দেখতে সুন্দর হলেও আসলে তা বিষদুষ্ট। তার ফুল দেখতে সুন্দর হলেও আদতে তা কাঁটাযুক্ত। তার শাখা প্রশাখায় বসন্তের বাতাস থাকলেও তার থেকে প্রবাহিত বায়ু বিষাক্ত। আর সে বিষাক্ত বায়ু আজ শুধু পাশ্চাত্য সভ্যতাকেই নয় বরং গোটা মানবতাকেই বিষাক্ত করে চলছে’।
গভীরভাবে লক্ষ করলেই এর বাস্তবতা দৃশ্যমান হবে। পাশ্চাত্য সভ্যতা স্বহস্তে যে বিষবৃক্ষ রোপন করেছিলো, তারা আজ নিজেরাই তার প্রতি বীতশ্রদ্ধ। কারণ সে বৃক্ষ তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এমন জটিলতার সৃষ্টি করেছে যে, শত প্রচেষ্টাও তার সমাধান এনে দিতে পারছে না। পরন্তু জটিলতার সৃষ্টি করছে। তারা সে বিষবৃক্ষের যে ডালই কেটে দেয় – সেখান থেকে নতুন কাঁটাযুক্ত ডাল বের হয়। তাদের হাতে তৈরি সভ্যতা আজ তাদের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। নিজ হাতে গড়া সভ্যতা তাদেরকে প্রতিনিয়ত এমন যন্ত্রণা দিচ্ছে যে, সে যন্ত্রণা না সইতে পেরে প্রতি বছর ৪২৭৭৩ জন আমেরিকান আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে।
‘তার মানে তুই বলতে চাচ্ছিস পাশ্চাত্য সভ্যতা আমাদের কিছুই দেয় নি। কেবল আমাদেরকে ধ্বংসই উপহার দিয়েছে?’
আমি বলতে চেয়েছি পাশ্চাত্যের কাছে আমাদের থেকে জ্ঞান বিজ্ঞান বেশি আছে। শুধু বেশিই না অনেক অনেক বেশি আছে। কিন্তু সে জ্ঞান বিজ্ঞানের সঠিক প্রয়োগ তাদের কাছে নেই। তারা একটা জায়গায় এসে মারাত্মক ভুল করেছে’।
‘একটা সময়ে এসে তারা দুনিয়ার বস্তুনিচয়কে নিজেদের কর্তৃত্বাধীন পেয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো ব্যবহার করেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা যে ঐগুলোর মালিক নয়, বরং আসল মালিকের প্রতিনিধি মাত্র সে কথা তারা ভুলে গিয়েছিলো। যার ফলে জড়বাদ, বস্তুবাদ তাদের ঘাড়ের উপর চেপে বসেছিলো। যা ক্রমান্বয়ে তাদেরকে নাস্তিক্যবাদ, অজ্ঞেয়বাদ, সংশয়বাদের দিকে ধাবিত করেছে। একটা সময়ে এসে তারা স্রষ্টাকে বাদ দিয়ে নিজেরাই স্রষ্টার স্থান দখল করলো। আর মানুষ সে মিথ্যা স্রষ্টার আরাধনা করতে লাগলো। যা তাদেরকে ক্রমান্বয়ে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিলো। ফলত, আজ তারা যে পদক্ষেপ-ই গ্রহণ করছে তা-ই বিফলতায় পর্যবসিত হচ্ছে। তারা যখন পুঁজিবাদের উপর ক্ষোভের কুঠার চালাতে লাগলো, সাথে সাথে সমাজতন্ত্রের উদ্ভব ঘটলো। তারা যখন সমাজতন্ত্রের উপর আঘাত হানলো তখন ডিক্টেটরবাদের উত্থান ঘটলো। তারা যখন সামাজিক সমস্যাগুলোর সমাধান করতে গেলো তখন সাম্যবাদ, নারীবাদ, জন্মনিয়ন্ত্রণবাদ, সমকামিতা, ব্যাভিচার, ধর্ষণ, অযাচারের আবির্ভাব ঘটলো। স্রষ্টা প্রদত্ত নৈতিকতার মানদণ্ডকে দূরে ঠেলে যখন নিজেদের নফসের গোলামীতে লিপ্ত হলো তখন তখন অপরাধ প্রবণতা ও আইনের লঙ্ঘন অধিকমাত্রায় বিস্তার লাভ করলো। মোদ্দাকথা, পাশ্চাত্য সভ্যতা কালান্তরে এক অভিশপ্ত সভ্যতায় পরিণত হলো। তাদের নিজ হাতে রোপিত সভ্যতা নামের বিষবৃক্ষ থেকে বিকৃতি ও বিশৃঙ্খলার এক অন্তহীন ধারা বেরিয়ে এলো। সেই ধারা তাদের সমাজে জমা হয়ে বিরাট এক বিষফোঁড়ায় রূপান্তরিত হলো। যে ফোঁড়ার জ্বালা যন্ত্রণায় অভিশপ্ত সে সভ্যতা আজ প্রতিনিয়ত আর্তনাদ করে যাচ্ছে। আর চিৎকার করে বলছে, বাচাও! বাচাও!’
পাশ্চাত্য সভ্যতা আজ তার স্বহতে রচিত দর্শনের আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে। বিজ্ঞানরূপ মরুভূমির তীরবর্তী সবুজ বর্ণালী অতিক্রম করে ধূ ধূ মরুভূমিতে উপনীত হয়েছে। সে সভ্যতার সবাই আজ তৃষ্ণার্ত। তৃষ্ণায় তারা ছটফট করছে। তাদের প্রাণ কণ্ঠাগত হয়েছে। কেবল পানি পানি বলে চিৎকার করে যাচ্ছে অবিরত। কিন্তু তাদের কেউই জানে না, সে পানি কোথায় পাওয়া যাবে। পানির নাম অবশ্যি শুনেছে কিন্তু তার আসল চেহারা প্রত্যক্ষ করেনি কোনদিন। পরন্তু তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে এ কথাও শুনেছে, সাবধান! ঐ পানির ধারের কাছেও যেও না। কিন্তু আজকে পরিস্থিতি তাদের এমন হয়েছে, যদি সে পানির নাম গোপন করে তাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়, তাহলে তারা এক বাক্যে স্বীকার করে নেবে যে, আহহা, এই পানি এতদিন কোথায় ছিলো? আমরা তো এরই অপেক্ষায় ছিলাম। আমাদের আগে কেন এই পানি পান করতে দেয়া হলো না? আমরা এতদিন কি ধোঁকার মধ্যেই না ছিলাম! বলতে পারবি সে পানির নাম কি?’
‘ইসলাম।’
.
ফারিস সিরিজ -১২/ জাকারিয়া মাসুদ
.
____________________________
তথ্যসূত্রঃ
1) WHO, Alcohol Consumption Rate in the USA, http://www.who.int/…/publications/global_a…/profiles/usa.pdf
2) Crime in the United States, FBI. 2011. Retrieved 15 May 2013. https://www.fbi.gov/…/…/crime-in-the-u.s/2011/crime-in-the-u
3) "Criminal Victimization Survey", Bureau of Justice Statistics. 2011. Retrieved 15 May 2013. http://bjs.ojp.usdoj.gov/content/pub/pdf/cv11.pdf
4) https://www.cdc.gov/nchs/fastats/alcohol.htm
5) https://www.cdc.gov/…/n…/earlyrelease/earlyrelease201705.pdf
6) https://ucr.fbi.gov/…/2011/crime-in-the-u.s.…/tables/table-1
7) https://ucr.fbi.gov/…/2011/crime-in-the-u.s.…/tables/table-2
8) https://ucr.fbi.gov/…/2011/crime-in-the-u.s.…/tables/table-7
9) https://www.bjs.gov/index.cfm?ty=dcdetail&iid=245
10) https://www.bjs.gov/content/pub/pdf/cv15.pdf
11) http://www.latimes.com/…/la-sci-sn-alcohol-related-deaths-y…
12) Rehm J, Baliunas D, Borges GL, Graham K, Irving H, Kehoe T, et al. The relation between different dimensions of alcohol consumption and burden of disease: an overview. Addiction. 2010;105(5):817-43. http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/….
13) https://ucr.fbi.gov/…/offenses…/standard-links/national-data
14) https://www.webroot.com/…/internet-pornography-by-the-numbe…
15) https://www.churchmilitant.com/…/new-survey-of-porn-use-sho…
16) Wikipedia, Article: Rape in the United States, https://en.wikipedia.org/w/index.php…
17) Wikipedia, Article: Crime in the United States, https://en.wikipedia.org/w/index.php…
18) Wikipedia, Article: List of the Presidents of the United States, https://en.wikipedia.org/w/index.php…
