সর্বশেষ

2/recent/ticker-posts

"পৃথিবীর সব অপরাধ কি আল্লাহর হুকুমেই হয়? তাহলে বান্দাকে কেন শাস্তি দেয়া হবে!যদি ?ভাল খারাপ সৃষ্টি করে থাকেন আল্লাহ!

#Campúsian-23
#MSRM-4
#Qn:"পৃথিবীর সব অপরাধ কি আল্লাহর হুকুমেই হয়?
তাহলে বান্দাকে কেন শাস্তি দেয়া হবে!যদি ?ভাল খারাপ সৃষ্টি করে থাকেন আল্লাহ!
#Ans: হুকুম মানে নির্দেশ। আল্লাহ তা’আলা কখনোই অপরাধ বা খারাপ কাজের নির্দেশ দেন না। আল্লাহ বলেন,
“... আল্লাহ মন্দ কাজের আদেশ দেন না। তোমরা এমন কথা আল্লাহর প্রতি কেন আরোপ কর, যা তোমরা জানো না? ” [1]
##️⃣আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছা#️⃣#️⃣
আল্লাহ তা’আলা সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা। পাপ কিংবা পূণ্য – মানুষের সকল কর্মও আল্লাহর সৃষ্টি। পৃথিবীতে যা ঘটে এবং মানুষ যা করে – এগুলোর সবগুলোই আল্লাহর অনুমতিক্রমে বা ইচ্ছায় হয়।
আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছা ২ প্রকারের। [2] যথাঃ
১। কাউনিয়্যাহঃ
এ ধরণের ইচ্ছা দ্বারা আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছাকৃত জিনিসটি সম্পন্ন হয়। তবে জিনিসটি আল্লাহ তা’আলার কাছে পছন্দনীয় হওয়া জরুরী নয়। আর এটা দ্বারাই ‘মাশিয়াত’ বা ইচ্ছা বোঝানো হয়। যেমনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
“...আর আল্লাহ যদি ইচ্ছা করতেন, তাহলে তারা পরস্পর লড়াই করতো না। কিন্তু আল্লাহ তাই করেন, যা তিনি ইচ্ছা করেন।” [3]
২। শারইয়্যাহঃ
এ ধরণের ইচ্ছা দ্বারা আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছাকৃত জিনিসটি সম্পন্ন হওয়া অপরিহার্য নয়। তবে এ ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত জিনিস বা বিষয়টি তাঁর পছন্দনীয়। যেমনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
“আর আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিতে চান।... ” [4]
উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা বুঝতে পরবেন ভালো করে,
আবু বকর(রা.) এর ঈমান আনা – এই ঘটনাটি একই সাথে আল্লাহর কাউনিয়্যাহ ও শারইয়্যাহ ইচ্ছার উদাহরণ। এটি কাউনিয়্যাহ ইচ্ছা এই জন্য যেঃ এটি সংঘটিত হয়েছিল। শারইয়্যাহ ইচ্ছা এই জন্য যেঃ এটি আল্লাহর পছন্দনীয় ছিল।
আবার ফিরআউনের কুফরী – এটি শুধুমাত্র আল্লাহর কাউনিয়্যাহ ইচ্ছার উদাহরণ। এটি কাউনিয়্যাহ ইচ্ছা এই কারণে যেঃ এটি সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু এটি শারইয়্যাহ ইচ্ছা নয় কেননা এর পেছনে আল্লাহর কোন অনুমোদন বা সন্তুষ্টি ছিল না। আল্লাহ মুসা(আ.)কে তার নিকট ঈমানের দাওয়াত দিয়ে প্রেরণ করেছিলেন। [5]
আরো সহজে বললে, আল্লাহ মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন যাকাত আদায় করার, তিনি মানুষকে চুরি করতে নিষেধ করেছেন। এ নির্দেশগুলো পালন করা আল্লাহর নিকট পছন্দনীয়। মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দেওয়া হয়েছে যা দ্বারা সে এ আদেশগুলো মানতেও পারে আবার ভঙ্গও করতে পারে। মানুষ যদি নিজ ইচ্ছাশক্তি দ্বারা যাকাত আদায় না করে কিংবা চুরি করে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা তাকে জোর করে যাকাত আদায় করতে বাধ্য করেন না কিংবা চুরি করা আটকে দেন না। যদিও আল্লাহর এ ক্ষমতা আছে। মানুষ যদি যাকাত আদায় না করে কিংবা যদি চুরি করে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা তা হতে দেন। কিন্তু এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি নেই।
🎲🎲 সিধান্ত:
যেহেতু মানুষের সকল কর্ম আল্লাহর সৃষ্টি কাজেই পূণ্যের সাথে সাথে পাপও আল্লাহর ইচ্ছাক্রমে হয়। তবে তা কেবলমাত্র এ অর্থে যে আল্লাহ এগুলোকে(পাপ) নির্ধারিত করেছেন; এ অর্থে নয় যে আল্লাহ এগুলো অনুমোদন করেন বা আদেশ দেন। পৃথিবীতে যত খারাপ কাজ বা অপরাধ সংঘটিত হয়, এগুলোর উপর আল্লাহ তা’আলার কোনো সন্তুষ্টি নেই। আল্লাহ এগুলো ঘৃণা করেন, অপছন্দ করেন এবং এগুলো থেকে বিরত হবার আদেশ দেন। [6]
পৃথিবীতে যত অপরাধ সংঘটিত হয়, এগুলোর উপর আল্লাহর সন্তুষ্টি না থাকা সত্ত্বেও কেন আল্লাহ এগুলো সংঘটিত হতে দেন এর উত্তরে বলা যেতে পারে – কুফর যদি না থাকত, তাহলে মু’মিন ও কাফির আলাদা করা যেত না বরং সবাই মু’মিন হত। [7] একইভাবে, পাপ যদি না থাকতো, তাহলে পূণ্য বলে কিছু থাকতো না, সৎকর্ম ও মহত্ত্বেরও কোনো মানে থাকতো না। যদি অশুভ শক্তি না থাকতো, তাহলে শুভ ও কল্যাণকর জিনিসের কোনো মূল্য থাকতো না। অন্ধকার আছে বলেই আলোর গুরুত্ব আছে। পৃথিবীতে নিষ্ঠুরতা বা নৃশংসতা না থাকলে মানবতারও কোনো আলাদা অস্তিত্ব বা অর্থ থাকতো না। কাজেই পৃথিবীতে অন্যায়, পাপ ইত্যাদির অস্তিত্ত্বও আল্লাহর সৃষ্টির অসামান্য হিকমতের পরিচায়ক।
এ ব্যাপারে একটি কবিতা খুবই প্রাসঙ্গিক –
“আলো বলে, “অন্ধকার তুই বড় কালো,”
অন্ধকার বলে, “ভাই তাই তুমি আলো।” ”
#️⃣#️⃣মানুষের কর্ম তার পরিণতির কারণ:#️⃣#️⃣
কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা এটি সাব্যস্ত হয়েছে যে – মানুষ যে কর্ম করবে ঠিক সে অনুযায়ী প্রতিদান পাবে। মানুষের প্রতিদান নির্ধারিত হবে তার কর্মের ভিত্তিতে।কিছু প্রমাণ দেখে নেই:
*️⃣*️⃣কুরআন থেকে প্রমাণ:*️⃣*️⃣
১)“নিশ্চয়ই আমি [আল্লাহ] মানুষকে শ্রমনির্ভররূপে সৃষ্টি করেছি।” [8]
২)“সেখানে প্রত্যেকে যাচাই করে নিতে পারবে যা কিছু সে ইতিপূর্বে করেছিল এবং আল্লাহর প্রতি প্রত্যাবর্তন করবে যিনি তাদের প্রকৃত মালিক, আর তাদের কাছ থেকে দূরে যেতে থাকবে যারা মিথ্যা বলত।” [9]
৩)“আর যত লোকই হোক না কেন, যখন সময় হবে, তোমার প্রভু তাদের সকলেরই আমলের প্রতিদান পুরোপুরি দান করবেন। নিশ্চয়ই তিনি তাদের যাবতীয় কার্যকলাপের খবর রাখেন।
৪)“আর ধৈর্য্যধারণ কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ পূণ্যবানদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না।” [10]
৫)“আজকের দিনে [শেষ বিচারের দিন] কারও প্রতি জুলুম করা হবে না এবং তোমরা যা করবে কেবল তারই প্রতিদান পাবে।” [11]
৬)“যে মন্দ কর্ম করে, সে কেবল তার অনুরূপ প্রতিফল পাবে, আর যে, পুরুষ অথবা নারী মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম করে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে। সেখানে তাদেরকে বেহিসাব রিযিক দেয়া হবে।” [12]
৭)“ তাদেরই জন্য প্রতিদান হলো তাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে প্রস্রবণ যেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল। যারা আমল করে তাদের জন্য কতইনা চমৎকার প্রতিদান।” [13]
৮)“ আর পুরুষ কিংবা নারীর মধ্য থেকে যে সৎকাজ করবে এমতাবস্থায় যে, সে মু’মিন(বিশ্বাসী), তাহলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি খেজুর বিচির আবরণ পরিমাণ জুলুমও করা হবে না।” [14]
৯)“তোমাদের কাছে যা আছে তা নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং আল্লাহর কাছে যা আছে, কখনও তা শেষ হবে না। যারা ধৈর্য ধরে, আমি তাদেরকে প্রাপ্য প্রতিদান দেব তাদের উত্তম কর্মের প্রতিদানস্বরূপ যা তারা করত। যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং যে ঈমানদার— সে পুরুষ হোক কিংবা নারী হোক আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত।” [15]
১০)“যে কষ্ট স্বীকার করে, সে তো নিজের জন্যেই কষ্ট স্বীকার করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্ববাসীর উপর প্রাচুর্যশীল। আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদের মন্দ কাজগুলো মিটিয়ে দেব এবং তাদেরকে কর্মের উৎকৃষ্টতর প্রতিদান দেব।” [16]
১১)“ নিশ্চয়ই যারা বলে, আমাদের প্রভু আল্লাহ অতঃপর অবিচল থাকে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত হবে না। তারাই জান্নাতের অধিকারী। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। তারা যে কর্ম করত, এটা তারই প্রতিফল। ” [17]
১২)“ এটা তোমাদের প্রতিদান। তোমাদের প্রচেষ্টা স্বীকৃতি লাভ করেছে।” [18]
১৩)“বস্তুতঃ যারা মিথ্যা জেনেছে আমার আয়াতসমূকে এবং আখিরাতের সাক্ষাতকে, তাদের যাবতীয় কাজকর্ম ধ্বংস হয়ে গেছে। তেমন বদলাই সে পাবে যেমন আমল করত।” [19]
১৪)“ পার্থিব জীবনে সামান্যই লাভ, অতঃপর আমার নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন আমি তাদেরকে আস্বাদন করাব কঠিন আযাব-তাদেরই কৃত কুফরীর বদলাতে।” [20]
১৫)“ যেদিন আমি পর্বতসমূহকে পরিচালনা করব এবং তুমি পৃথিবীকে দেখবে একটি উম্মুক্ত প্রান্তর এবং আমি মানুষকে একত্রিত করব অতঃপর তাদের কাউকে ছাড়ব না। তারা তোমার প্রভুর [আল্লাহ] সামনে পেশ হবে সারিবদ্ধ ভাবে এবং বলা হবেঃ তোমরা আমার কাছে এসে গেছ; যেমন তোমাদেরকে প্রথম বার সৃষ্টি করেছিলাম। না, তোমরা তো বলতে যে, আমি তোমাদের জন্যে কোন প্রতিশ্রুত সময় নির্দিষ্ট করব না। আর আমলনামা সামনে রাখা হবে। তাতে যা আছে; তার কারণে তুমি অপরাধীদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখবে। তারা বলবেঃ “হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা। এ যে ছোট বড় কোন কিছুই বাদ দেয়নি-সবই এতে রয়েছে!” তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। তোমার প্রভু কারও প্রতি জুলুম করবেন না।” [21]
১৬)“হে অপরাধীরা! আজ তোমরা আলাদা হয়ে যাও। হে আদম সন্তান! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, শয়তানের দাসত্ব করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? এবং আমার দাসত্ব কর। এটাই সরল পথ। শয়তান তোমাদের অনেক দলকে পথভ্রষ্ট করেছে। তবুও কি তোমরা বোঝোনি? এই সে জাহান্নাম, যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হতো। তোমাদের কুফরের কারণে আজ এতে প্রবেশ কর।” [22]
🎲🎲সিধান্ত:
আল কুরআন আমাদের জানাচ্ছে যে – মানুষ তার সৎকাজের জন্য পুরষ্কার পাবে। মানুষ দুনিয়াতে যে কর্ম করে, পরকালে তার প্রতিফলস্বরূপ জান্নাত লাভ করবে। পক্ষান্তরে, মানুষ তার কর্মের জন্যই পরকালে শাস্তির সম্মুখীন হবে।
তাদের কর্মই তাদের জিম্মাদার। এবং এই কর্ম আল্লাহর ইচ্ছা ও অনুমতিক্রমে হয়ে থাকে।
#️⃣ #️⃣হাদীস থেকে প্রমাণ:#️⃣#️⃣
১)“এখন মুশরিকরা বলবে, ‘যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তবে না আমরা শিরক করতাম, না আমাদের বাপ-দাদারা আর না আমরা কোনো বস্তুকে হারাম করতাম।’ এমনিভাবে তাদের পূর্ববর্তীরা মিথ্যারোপ করেছে, পরিশেষে তারা আমার শাস্তি আস্বাদন করেছে। বলো, তোমাদের কাছে কি কোনো জ্ঞান আছে, যা আমাকে দেখাতে পারো? তোমরা যে-সবের পেছনে চলছো, তা ধারণা-অনুমান ছাড়া কিছু না। তোমরা শুধু অনুমান করেই কথা বলো। বলে দাও: অতএব, পরিপূর্ণ যুক্তি আল্লাহরই। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সবাইকে পথপ্রদর্শন করতেন।” [23]
২)আলী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ(ﷺ) একখণ্ড কাঠ হাতে নিয়ে উপবিষ্ট ছিলেন। তিনি তা দ্বারা যমীনে টোকা দিচ্ছিলেন। এরপর তিনি তার মাথা উঠালেন। তখন তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার জান্নাত ও জাহান্নামের ঠিকানা পরিজ্ঞাত (নির্ণীত) নয়। তাঁরা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ(ﷺ)! তাহলে আমরা কাজ-কর্ম ছেড়ে কি ভরসা করে বসে থাকব না? তিনি বললেন, না, বরং আমল করতে থাকো। যাকে যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তাই তার জন্য সহজ করা হয়েছে।
এরপর তিনি তিলওয়াত করলেনঃ “সুতরাং কেউ দান করলে, মুত্তাকি হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে, আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ। এবং কেউ কার্পণ্য করলে ও নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে, এবং যা উত্তম তা বর্জন করলে, তার জন্য আমি সুগম করে দেবো কঠোর পরিণামের পথ।” (সূরা লাইল ৯২:৫-১০) [24]
৩)আনাস বিন মালিক(রা.) থেকে বর্ণিত; একজন ব্যক্তি বলল, “হে আল্লাহর রাসুল(ﷺ), আমি কি আমার উট বেঁধে আল্লাহর উপর ভরসা করব, নাকি আমি ওটাকে না বেঁধে ছেড়ে রেখেই আল্লাহর উপর ভরসা করব?” তিনি [রাসুল(ﷺ)] বললেন, "ওটাকে বাঁধো এবং [এরপর আল্লাহর উপর] ভরসা কর।” [25]
🎲🎲 সিদ্ধান্ত: “আল্লাহ না চাইলে তো পাপ কাজ করতাম না, তাকদিরে আছে বলেই পাপকাজ করেছি”—এই জাতীয় কথা বলার কোনো মানে নেই। কারণ এরূপ কথা বলার অর্থ হচ্ছে—গায়েবের জ্ঞান থাকার দাবি করা। “তাকদিরে পাপ করার কথা আছে”—এটা তো কেউ আমাদের বলে দেয়নি। এই জ্ঞান তো আমাদের কারো নেই। কাজেই এধরনের কথা বলার অর্থ হচ্ছে, আন্দাজের অনুসরণ করা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে পাপকাজে লিপ্ত হওয়া।
#️⃣#️⃣মানুষের কি আদৌ কোনো ইচ্ছাশক্তি আছে, নাকি তাকে বাধ্য করা হচ্ছে? #️⃣#️⃣
#Qn: আল্লাহ কি কাউকে জোর করে জাহান্নামে পাঠাবেন?
#Ans: কে জান্নাতে যাবে আর কে জাহান্নামে যাবে এটা আল্লাহ তা‘আলা স্বাভাবিকভাবেই আগে থেকে জানেন। তবে এর মানে এই নয় যে, আল্লাহ্‌ জোর করে কাউকে জাহান্নামের পাঠান।
কুরআন ও হাদিসে বলা হয়েছে—
“…আল্লাহ এমন নন যে, তোমাদের ঈমান নষ্ট করে দেবেন। নিশ্চয়ই মানুষের প্রতি আল্লাহ অত্যন্ত স্নেহশীল, করুণাময়।” [26]
“তিনিই (আল্লাহ) প্রথমবার অস্তিত্ব দান করেন এবং পুনরায় জীবিত করেন। তিনি ক্ষমাশীল, প্রেমময়; মহান আরশের অধিকারী।” [27]
“উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী (ﷺ)-এর নিকট কিছুসংখ্যক বন্দি আসে। বন্দিদের মধ্যে একজন মহিলা ছিলো। তার স্তন দুধে পূর্ণ ছিল। সে বন্দিদের মধ্যে কোনো শিশু পেলে তাকে ধরে কোলে নিতো এবং দুধ পান করাতো। নবী (ﷺ) আমাদের বললেন, “তোমরা কি মনে করো, এ মহিলা তার সন্তানকে আগুনে ফেলে দিতে পারে?” আমরা বললাম, “না। ফেলার ক্ষমতা রাখলেও সে কখনো ফেলবে না।” তারপর তিনি বললেন, “এ মহিলাটি তার সন্তানের উপর যতটুকু দয়ালু, আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি এর চেয়েও বেশি দয়ালু।” [28]
“আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি নেক কাজের ইচ্ছা করে অথচ এখনও তা সস্পাদন করেনি, তার জন্য একটি সাওয়াব লেখা হয়। আর যে ইচ্ছা করার পর কার্য সস্পাদন করে, তবে তার ক্ষেত্রে দশ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত সাওয়াব লেখা হয়। পক্ষান্তরে যে কোনো মন্দ কাজের ইচ্ছা করে আর তা না করে, তবে কোনো গুনাহ লেখা হয় না; আর তা করলে (একটি) গুনাহ লেখা হয় ।” [29]
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়া(র) মানুষের কর্মের ভূমিকা সম্পর্কে বলেছেনঃ মানুষ প্রকৃতই কর্ম করে, এবং আল্লাহ তাদের কর্মের স্রষ্টা। কোনো ব্যক্তি মু’মিন অথবা কাফির হতে পারে, পূন্যবান কিংবা পাপী হতে পারে, সলাত আদায় ও সিয়াম পালন করতে পারে –মানুষের তার কর্মের উপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এবং তার নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি রয়েছে। এবং আল্লাহ তার এ নিয়ন্ত্রণ ও ইচ্ছাশক্তির স্রষ্টা। যেরূপ আল্লাহ বলেছেন—“[এটা] তার জন্যে, যে তোমাদের মধ্যে সরল পথে চলতে চায়। তোমরা ইচ্ছা করবে না, যদি জগতসমূহের প্রভু আল্লাহ ইচ্ছা না করেন।” (সুরা তাকওয়ির ৮১:২৮-২৯) [30]
এ প্রসঙ্গে শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমিন(র) বলেছেনঃ “...মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি আছে যেমন মানুষের খাওয়া ও পান করার ক্ষমতা আছে। যেমনঃ ফজরের সলাতের সময় মানুষ (ওযু করতে) পানির দিকে যায় নিজ ইচ্ছায়, যখন ঘুম আসে, তখন মানুষ বিছানায় যায় নিজ ইচ্ছায়। ...এভাবে প্রতিটি কর্মের ব্যাপারেই মানুষের নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি আছে। যদি তা না হত, তাহলে পাপীকে শাস্তি দেয়া অন্যায্য হত। মানুষকে এমন কিছুর জন্য কিভাবে শাস্তি দেয়া যেতে পারে যার উপর তার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই? যদি তা না হত, তাহলে কিভাবে পূণ্যবানকে পুরষ্কার দেয়া যেতে পারে, যেখানে ঐ কর্মের উপর তার কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না? ...কাজেই মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি আছে তবে সে আল্লাহর নির্ধারণকৃত তাকদিরের বাইরে কোনো কাজ করে না কারণ তার কর্মের উপর আল্লাহর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। কিন্তু আল্লাহ মানুষকে বাধ্য করেন না। মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি আছে এবং এ অনুযায়ী মানুষ কাজ করে।
যদি নিজের ইচ্ছার বাইরে মানুষ কোনো কাজ করে ফেলে, তবে এ জন্য তাকে দায়ী করা হয় না। আল্লাহ গুহাবাসীদের(আসহাবে কাহফ) ব্যাপারে বলেছেনঃ “তুমি মনে করবে তারা জাগ্রত, অথচ তারা নিদ্রিত। আমি [আল্লাহ] তাদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাই ডান দিকে ও বাম দিকে। ...” (সুরা কাহফ ১৮:১৮)
এখানে তাদের পার্শ্ব পরিবর্তন করার কর্মটি আল্লাহর দিকে ন্যস্ত করা হয়েছে কারণ তারা ছিল ঘুমন্ত এবং তাদের নিজেদের উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। আল্লাহর রাসুল(ﷺ) বলেছেন, “যদি কেউ ভুলক্রমে খায় ও পান করে তবে সে যেন তার সিয়াম(রোজা) পূর্ণ করে নেয়, কেননা আল্লাহ তা‘আলাই তাকে এ পানাহার করিয়েছেন।” [বুখারী : ১৯৩৩; মুসলিম : ১১৫৫] এখানে খাওয়া ও পান করার কর্মগুলো আল্লাহর দিকে ন্যস্ত করা হয়েছে কারণ মানুষ রোজা অবস্থায় ভুলবশত এ কাজগুলো করে ফেলে। সে নিজে থেকে খেয়ে বা পান করে নিজের রোজা নষ্ট করবার সিদ্ধান্ত নেয়নি।” [31]
ইসলামবিরোধীরা অভিযোগ করতে চায় যে – ইসলাম বলে মানুষের কর্মের কোনো ভূমিকা নেই বরং শুধুমাত্র পূর্বনির্ধারনের জন্যই মানুষ জান্নাত লাভ করে বা জাহান্নামে যায়। তাদের মতে সব কিছু পূর্ব নির্ধারণ অনুযায়ী সংঘটিত হয়, এতে মানুষের ব্যক্তিগত কোনো স্বাধীনতা নেই। প্রচণ্ড বাতাসে কারো ছাদ থেকে নিচে পড়ে যাওয়া আর সিঁড়ি বেয়ে স্বেচ্ছায় নিচে নেমে আসা একই কথা। অথচ এগুলো ছিল একটি বাতিল ফির্কা(heretic) ‘জাবারিয়াহ’দের আকিদা। [32] মুসলিম আলিমগণ এরূপ ভ্রান্ত বিশ্বাস খণ্ডন করে কলম ধরেছেন। যে ধরণের বিশ্বাস ইসলামে নেই এবং যে বিশ্বাসকে খণ্ডন করে মুসলিম আলিমগণ কলম ধরেছেন, সেই বিশ্বাস ইসলামের উপর চাপিয়ে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ তুলে যারা ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তাদের উদ্যেশ্য অবশ্যই সৎ নয়।
পার্থিব জীবন মানুষের জন্য পরীক্ষা
আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন, ভালো-খারাপ উভয় পথই মানুষের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে, এবং এটিই মানুষের জন্য পরীক্ষা।
“আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্রবিন্দু হতে, তাকে পরীক্ষা করার জন্য। এজন্য আমি তাকে করেছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। আমি তাকে পথনির্দেশ দিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে।” [33]
“আমি কি তার জন্য সৃষ্টি করিনি দুই চক্ষু? আর জিহ্বা ও দুই ঠোঁট? এবং আমি কি তাকে দুইটি পথই দেখাইনি?” [34]
🎯🎯ডিসিশন: উপরের আলোচনা থেকে এটা প্রমাণিত হলো যে,
❏ পৃথিবীতে অন্যায় আছে বলেই ন্যায়ের মহিমা প্রকাশ পায়। পাপ না থাকলে পূণ্য বলে কিছু থাকতো না, পূণ্যবানের পূণ্যের কোনো মূল্য থাকতো না।
❏ পৃথিবীতে যত অন্যায়-অপরাধ হয়, এর কোনোটির উপর আল্লাহর সন্তুষ্টি নেই। আল্লাহ মানুষের তাকদির নির্ধারণ করেছেন। মানুষকে ইচ্ছাশক্তিও দিয়েছেন, মানুষের বিশ্বাস ও কর্ম দ্বারা সে জান্নাত বা জাহান্নামের উপযোগী হয়।
❏ আল্লাহ মানুষের প্রতি বিন্দুমাত্র জুলুমও করেন না। পরিণতি জানা সত্ত্বেও আল্লাহ মানুষকে দুনিয়ার পরীক্ষাক্ষেত্রে পাঠান, তার ভালো-মন্দ পরীক্ষা করার জন্য। মানুষের কর্ম অনুযায়ী আল্লাহ এর প্রতিদান দেন। আল্লাহ সব থেকে বড় ন্যায়বিচারক।
তথ্যসূত্র রেফারেন্স:
1️⃣আল-কুরআন, সুরা আ’রাফ ৭:২৮
2️⃣‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আকীদা’ – শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমিন(র), পৃষ্ঠা ২০-২২ (islamhouse)
3️⃣আল-কুরআন, সুরা বাকারাহ ২:২৫৩
4️⃣আল-কুরআন, সুরা নিসা ৪:২৭
5️⃣‘Are we Forced or do we have a Free Will’ by Shaykh Muhammad Ibn Salih Al Uthaymeen; page 27-29;
ডাউনলোড লিঙ্কঃ https://islamhouse.com/en/books/373557/
6️⃣‘শারহ আকিদা আত ত্বহাওয়ী’ – ইবন আবিল ইজ্জ হানাফী(র); পৃষ্ঠা ৩৮(ইংরেজি অনুবাদ)
7️⃣‘Are we Forced or do we have a Free Will’ by Shaykh Muhammad Ibn Salih Al Uthaymeen; page 32
8️⃣আল-কুরআন, সুরা বালাদ ৯০:৪
9️⃣আল-কুরআন, সুরা ইউনুস ১০:৩০
1️⃣0️⃣আল-কুরআন, সুরা হুদ ১১: ১১১, ১১৫
1️⃣1️⃣আল-কুরআন, সুরা ইয়াসিন ৩৬:৫৪
1️⃣2️⃣আল-কুরআন, সুরা মু’মিন(গাফির) ৪০:৪০
1️⃣3️⃣আল-কুরআন, সুরা আলি ইমরান ৩:১৩৬
1️⃣4️⃣আল-কুরআন, সুরা নিসা ৪:১২৪
1️⃣5️⃣আল-কুরআন, সুরা নাহল ১৬:৯৬-৯৭
1️⃣6️⃣আল-কুরআন, সুরা আনকাবুত ২৯:৬-৭
1️⃣7️⃣আল-কুরআন, সুরা আহকাফ ৪৬:১৩-১৪
1️⃣8️⃣আল-কুরআন, সুরা দাহর(ইনসান) ৭৬:২২
1️⃣9️⃣আল-কুরআন, সুরা আ’রাফ ৭:১৪৭
2️⃣0️⃣আল-কুরআন, সুরা ইউনুস ১০:৭০
2️⃣1️⃣আল-কুরআন, সুরা কাহফ ১৮:৪৭-৪৯
2️⃣2️⃣আল-কুরআন, সুরা ইয়াসিন ৩৬:৫৯-৬৪
2️⃣3️⃣আল-কুরআন, সুরা আন‘আম ৬:১৪৮-১৪৯
2️⃣4️⃣সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৬৪৯২
2️⃣5️⃣সুনান তিরমিযি, হাদিস: ২৫১৭, হাসান
2️⃣6️⃣আল-কুরআন, সুরা বাকারাহ ২:১৪৩
2️⃣7️⃣আল-কুরআন, সুরা বুরুজ ৮৫:১৩-১৫
2️⃣8️⃣সহীহ বুখারি, হাদিসঃ ৫৯৯৯; সহীহ মুসলিম, হাদিসঃ ২৭৫৪
2️⃣9️⃣সহীহ মুসলিম, খণ্ড ১, হাদিস ২৩৬
3️⃣0️⃣আল ওয়াসিত্বিয়া মা’আ শারহ হাররাস, পৃষ্ঠা ৬৫;
“Is man’s fate pre-destined or does he have freedom of will?” (islamQA - Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid)
https://islamqa.info/en/20806
3️⃣1️⃣‘Are we Forced or do we have a Free Will’ by Shaykh Muhammad Ibn Salih Al Uthaymeen; page 54-55
মূল আরবির জন্য দেখুনঃ শারহ হাদিস জিব্রীল [শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমিন(র)]
ডাউনলোড লিঙ্কঃ https://goo.gl/mGrWGn অথবা http://bit.ly/2jjYxnQ
3️⃣2️⃣‘ফতোওয়া আরকানুল ইসলাম’ – শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমিন(র); পৃষ্ঠা ১০৫-১০৬
‘তাক্বদীর—আল্লাহর এক গোপন রহস্য’ – আব্দুল আলীম ইবন কাওছার; পৃষ্ঠা ৩১
3️⃣3️⃣আল-কুরআন, সুরা দাহর (ইনসান) ৭৬:২-৩
3️⃣4️⃣আল-কুরআন, সুরা বালাদ ৯০:৮-১০