সর্বশেষ

2/recent/ticker-posts

ইসলামিক দাসপ্রথা:গোলাম যেখানে মেহমান।

#Campúsian-42
#Standard-1
ইসলামিক দাসপ্রথা:গোলাম যেখানে মেহমান।নিজের, আপন ভাই
দাসপ্রথার জঘন্যতম পাশবিকতার বর্ণনা দেওয়া আসলেই কঠিন। সারাবছরই ধন-সম্পদের লোভে যুদ্ধে লেগে থাকতো আর যুদ্ধে জয়ী হলে তারা নারী-পুরুষ সবাইকে দাস বানিয়ে পশুর মতো খাটাতো আর নারীদেরকে ভোগ্যপন্যের মতো ব্যবহার করত। জীবনের অন্যতম ভোগ ছিলো দাসী নারীদের নিয়ে ভোগ্যপণ্যের মতো ব্যবহার। দাসরা তাদের প্রভুর উপরে সামগ্রিকভাবে নির্ভর করত পিতার মতোই। এমনকি কোনো প্রভুরা দাসদের নিজেদের বাস্তবিকই সন্তান বলে পরিচয় দিত যাকে গ্রীক ভাষায় পাই আর ল্যাটিন ভাষায় পুয়ের বলা হতো।[16] দাসদের সাক্ষ্যও গ্রহন ও করা হতো না। সাক্ষ্য-প্রমান সংগ্রহ করার জন্য তাদের উপর ভয়াবহ অত্যাচার নিপীড়ন ও চলত। তাদেরকে কখনো কখনো ছেড়ে দেওয়া হতো হিংস্রসব মাছভর্তি চৌবাচ্চায় সামান্য কাচের দামী পানপাত্র ভেঙ্গে ফেলায়।[17] কখনো কখনো দাসদের বা যুদ্ধবন্দীদেরকে রোমান দর্শকদেরকে আনন্দ দানের জন্য ভয়ানক হিংস্র প্রাণির সাথে বা কখনো মারাত্মক অপরাধীদের সাথে লড়তে বাধ্য করা হতো যাদেরকে গ্ল্যাডিয়েটর বলা হতো[18] দুর্ভিক্ষের দিনে গ্ল্যাডিয়েটরদের নগর থেকে বিতাড়িত করা হতো খাবার বাচানোর জন্যে। এককথায় দাসদের কোনো প্রকার মানবিক অধিকার বলতে কিছু ছিলো না।
এবার আসুন ইসলামের দাসপ্রথার কিছু সিস্টেম দেখি!!মেহমান,গোলাম,নিজের ভাই সর্বোপরি নিজের ফ্যামিলির মেম্বার হিসেবে মেনে নেওয়া!!
১।আবূ মাস্‘ঊদ আল আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি স্বীয় দাসকে প্রহাররত অবস্থায় আমার পেছন হতে উচ্চৈঃস্বরে একটি আওয়াজ শুনলাম, হে আবূ মাস্‘ঊদ! সাবধান! তুমি তোমার দাসের ওপর যতটুকু ক্ষমতা রাখ আল্লাহ তদপেক্ষা তোমার ওপর অধিক ক্ষমতার অধিকারী। অতঃপর আমি পিছন ফিরে দেখি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এ কথাটি) বলছেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! তাকে আল্লাহর ওয়াস্তে মুক্ত করে দিলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি যদি এটা না করতে তবে জাহান্নামের আগুন তোমাকে ঝলসিয়ে দিত। (মুসলিম)[1]
২।‘আমর ইবনু শু‘আয়ব তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, আমার নিকট ধন-সম্পদ আছে এবং আমার পিতা দারিদ্র্যতার দরুন আমার ধন-সম্পদের মুখাপেক্ষী। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি এবং তোমার ধন-সম্পদ তোমার পিতার। তোমাদের সন্তান-সন্ততিগণ তোমাদের উত্তম রিযক। সুতরাং তোমরা সন্তানের উপার্জন খাও। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[2]
৩.উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাণ-ওষ্ঠাগতপ্রায় অবস্থায় বারবার বলছিলেন, তোমরা সলাতের প্রতি যত্নবান হও এবং অধীনস্থ দাস-দাসীগণের হক আদায় কর। (বায়হাক্বী- শু‘আবুল ঈমান)[3]
৪.আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অধীনস্থ দাস-দাসীদের সাথে অসদাচরণকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[4]
৫.রাফি‘ ইবনু মাকীস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অধীনস্থ দাস-দাসীদের সাথে সদ্ব্যবহার করা কল্যাণকর ও বরকতময় এবং অসদাচরণকারী কল্যাণ ও বারাকাতের প্রতিবন্ধক। (আবূ দাঊদ)[5]
৬.আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন তার খাদিম (চাকর-বাকর)-কে মারধর করে, আর ঐ সময়ে সে যদি আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে, তখন তোমরা হাত সরিয়ে নাও। (তিরমিযী ও বায়হাক্বী- শু‘আবুল ঈমান)[6]
৭.আবূ আইয়ূব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মা ও তার সন্তান-সন্ততির মাঝে বিচ্ছেদ ঘটায়, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামত দিবসে তার ও তার পরিবার-পরিজনদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাবেন। (তিরমিযী ও দারিমী)[7]
(مَنْ فَرَّقَ بَيْنَ وَالِدَةٍ وَوَلَدِهَا)
‘‘যে ব্যক্তি মা ও তার সন্তানের মাঝে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করল...।’’ মা ও সন্তানের মাঝে বিচ্ছেদ, যেমন কারো দাসীর সঙ্গে তার মেয়ে রয়েছে, লোকটি মাকে রেখে মেয়েকে বিক্রি করে দিল অথবা কাউকে হাদিয়া হিসেবে দিয়ে দিল ইত্যাদি। অথবা মেয়েকে রেখে মাকে বিক্রি করে দিল।
মোটকথা, যে কোনোভাবে মেয়েকে মার কাছ থেকে পৃথক করে দিল, তবে কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা‘আলা তার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিবেন। কিয়ামত দিবসে আল্লাহর অনুমতিতে অনেক সময় নিজের প্রিয় মানুষের সুপারিশ কাজে আসে। আবার দুনিয়ায় নিজের যে প্রিয় মানুষ রয়েছে তার সাথে জান্নাতে থাকলে মানুষ আনন্দবোধ করবে দেখে আল্লাহ এই ব্যবস্থাও করবেন। কিন্তু যে ব্যক্তি দুনিয়ায় আরেকজনের রক্ত সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটাবে কিয়ামত দিবসে সে নিজের প্রিয়জনের সুপারিশ পাওয়া বা প্রিয়জনের সাথে জান্নাতে থাকার আনন্দ হতে বঞ্চিত হবে।
মোটকথা, যে কোনোভাবে মেয়েকে মার কাছ থেকে পৃথক করে দিল, তবে কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা‘আলা তার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিবেন। কিয়ামত দিবসে আল্লাহর অনুমতিতে অনেক সময় নিজের প্রিয় মানুষের সুপারিশ কাজে আসে। আবার দুনিয়ায় নিজের যে প্রিয় মানুষ রয়েছে তার সাথে জান্নাতে থাকলে মানুষ আনন্দবোধ করবে দেখে আল্লাহ এই ব্যবস্থাও করবেন। কিন্তু যে ব্যক্তি দুনিয়ায় আরেকজনের রক্ত সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটাবে কিয়ামত দিবসে সে নিজের প্রিয়জনের সুপারিশ পাওয়া বা প্রিয়জনের সাথে জান্নাতে থাকার আনন্দ হতে বঞ্চিত হবে।
৮.‘আলী (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি এক দাসী ও তার সন্তানের মাঝে (একজনকে বিক্রির মাধ্যমে) বিচ্ছেদ ঘটালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করলেন এবং বিক্রয় প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিলেন। (আবূ দাঊদ হাদীসটি মুনক্বতি‘ [বিচ্ছিন্ন] সানাদে বর্ণনা করেছেন)[8]
৯.জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যার মধ্যে তিনটি গুণ বিদ্যমান রয়েছে আল্লাহ তা‘আলা তার মৃত্যু সহজ করে দেবেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন- অসহায়-দুর্বলের সাথে সদাচরণ, পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও দাস-দাসীর প্রতি উত্তম ব্যবহার। (তিরমিযী; তিনি হাদীসটিকে গরীব বলেছেন)[9]
১০.আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আলী (রাঃ)-কে একটি গোলাম দান করে বললেন, একে প্রহার করো না। কেননা, আল্লাহ আমাকে সলাত আদায়কারীকে প্রহার করতে নিষেধ করেছেন, আর আমি তাকে সলাত আদায় করতে দেখেছি। (এটা মাসাবীহ-এর বাক্য)[10]
১১.‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! গোলামকে তার অপরাধের জন্য কতবার আমরা ক্ষমা করব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিশ্চুপ রইলেন। সে ব্যক্তি পুনরায় জিজ্ঞেস করল, (এবারও) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিশ্চুপ রইলেন। তৃতীয়বার প্রশ্নের জবাবে বললেন, তাকে ক্ষমা কর, প্রত্যহ ৭০ বার (অপরাধ করলেও) মাফ করে দাও। (আবূ দাঊদ)[11]
১২.আবূ যার্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের অধীনস্থ দাস-দাসীকে নিজেরা যা খাবে, তাকেও তাই খাওয়াবে; নিজেরা যা পরিধান করবে, তাকেও তাই পরিধান করাবে। আর যারা তোমাদের (অধীনস্থ) উপযোগী বা মানানসই নয়, তাদের বিক্রি করে দাও এবং তোমরা আল্লাহর বান্দাকে কষ্ট দিও না। (আহমাদ, আবূ দাঊদ)[12]
১৩.আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা‘নাত করেছেন, যে ব্যক্তি পিতা পুত্রের মধ্যে এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ ঘটায়। (ইবনু মাজাহ, দারাকুত্বনী)[13]
১৪.‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যখন যুদ্ধবন্দী হয়ে আসতো তখন তাদের মাঝে যাতে সম্পর্কচ্ছেদ না ঘটে, সেজন্য এক পরিবারের সকলকে এক ব্যক্তির অধীন করে দিতেন। (ইবনু মাজাহ)[14]
১৫.আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি কি তোমাদের মাঝে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তির ব্যাপারে বলব না? সে হলো যে একাকী খায়, স্বীয় দাসকে প্রহার করে এবং দান-সাদাকা হতে বিরত থাকে।[15]
রেফারেন্স:
[1] সহীহ : মুসলিম ১৬৫৯, আবূ দাঊদ ৫১৫৯, তিরমিযী ১৯৪৮, সহীহ আত্ তারগীব ২২৭৭, আহমাদ ২২৩৫০, সহীহ আল জামি‘ ৫০৩৪। হাদিসের মানঃ সহিহ
[2] হাসান : আবূ দাঊদ ৩৫৩০, ইবনু মাজাহ ২২৯২, আহমাদ ৬৬৭৮, সহীহ আল জামি‘ ১৪৮৭। হাদিসের মানঃ হাসান (
[3] সহীহ : শু‘আবুল ঈমান ৮১৯৩, ইবনু মাজাহ ১৬২৫, সহীহ আত্ তারগীব ২২৮৬। হাদিসের মানঃ সহিহ
[4] তিরমিযী ১৯৪৬, ইবনু মাজাহ ৩৬৯১, আহমাদ ৩১।
[5]: আবূ দাঊদ ৫১৬২, য‘ঈফ আল জামি‘ ২৭২১।
[6] তিরমিযী ১৯৫০, য‘ঈফাহ্ ১৪৪১, য‘ঈফ আল জামি‘ ৫৮২।
ইমাম বায়হাক্বী’র বর্ণনায় ‘হাত সরানোর’ পরিবর্তে ‘তাত্থেকে বিরত থাক’ রয়েছে।
[7] হাসান : তিরমিযী ১৫৬৬, আহমাদ ২৩৪৯৯, দারিমী ২৪৭৯, সহীহ আল জামি‘ ৬৪১২, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৯৬। হাদিসের মানঃ হাসান
[8]আবূ দাঊদ ২৬৯৬; কারণ প্রাগুক্ত। হাদিসের মানঃ যঈফ।
[9]তিরমিযী ২৪৯৪, য‘ঈফাহ্ ৯২, য‘ঈফ আল জামি‘ ২৫৫৬, য‘ঈফ আত্ তারগীব ৫৫৯।
[10] হাসান : আহমাদ ৫/২৫০, ২৫৮, সহীহাহ্ ১৪২৮, সহীহ আল জামি‘ ৮৬০। হাদিসের মানঃ হাসান
[11] সহীহ : আবূ দাঊদ ৫১৬৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৫৭৯৯, সহীহাহ্ ৪৮৮। হাদিসের মানঃ সহিহ
[12] সহীহ : আবূ দাঊদ ৫১৫৭, সহীহ আত্ তারগীব ২২৮২, আহমাদ ২১৪৮৩, সহীহাহ্ ৭৩৯, সহীহ আল জামি‘৬৬০২। হাদিসের মানঃ সহিহ।
[13]ইবনু মাজাহ ২২৫০, দারাকুত্বনী ৩০৪৬, য‘ঈফ আল জামি‘ ৪৬৯৩, য‘ঈফ আত্ তারগীব ১১২০।
[14]ইবনু মাজাহ ২২৪৮, আহমাদ ৩৬৯০, য‘ঈফ আল জামি‘ ৪৩২১
[15] রাজিন।
[16] রেদওয়ানুর রহমান, দাস বিদ্রোহ ও স্পার্টাকাস(২০১৫), পৃ-১৪
[17] ঐ, পৃ-১৬
[18] http://www.ancient.eu/gladiator/
No photo description available.