#Campúsian-12
#ফারিস_সিরিজ-৮
.
#উপলব্ধিঃ " ইসলাম কেন তার আইনকে প্রতিষ্ঠিত করতে বলেছে"?
ইসলাম তার অনুসারীদের বাধ্য করে ধর্মের আইনকে রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে। এর জন্য প্রয়োজন হলে যুদ্ধ করতে। এগুলো কি এক্সট্রিম রুলস নয়? এরপরেও কি মনে হয় না যে ইসলাম শান্তির নয় বরং সন্ত্রাসের ধর্ম?
বলুন তো বর্তমান বিশ্ব কাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়?
- পাশ্চাত্যের দ্বারা।
- বর্তমান পৃথিবীর অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রকৃতি কেমন?
- ক্যাপিটালিসম। আই মিন পুঁজিবাদ।
- আর বিশ্ব মোড়লের ভূমিকায় কে অভিনয় করে?
- আমেরিকা।
- খোদ আমেরিকার অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বৈষম্যের মাত্রাটা কেমন? চলুন দেখে নেওয়া যাক।
তাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বিশাল মাত্রার বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। আমেরিকার সবচেয়ে ধনী ১% লোকের কাছে রয়েছে মোট সম্পদের ৩৫ ভাগ। উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণি যাদের সংখ্যা ২০% তাদের কাছে আছে ১১ ভাগ। আর সবথেকে নীচু শ্রেণি, যাদের সংখ্যা ৪০% তাদের কাছে যে সম্পদ আছে তা মোট সম্পদের তুলনায় ১ ভাগেরও কম।
.
সম্পদের এত বৈষম্য? তাও আবার খোদ আমেরিকা তে? যারা সাম্যের স্লোগান নিয়ে ঘুরে বেড়ায়?
আমেরিকায় বিদ্যমান সম্পদের বৈষম্যের দিকটা প্রথম ফুটে উঠে ২০০৭ সালে। এর আগ পর্যন্ত তারা বিষয়টিকে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল। ২০১১ তে এসে এই বৈষম্য আরও প্রকট আকার ধারণ করে। সবচেয়ে ধনী মাত্র ৪০০ জন আমেরিকানের সম্পদের পরিমাণ আমেরিকার মোট সম্পদের অর্ধেকের চাইতেও বেশি। তবে এটা তো কেবল আমেরিকার সম্পদের বৈষম্য। বিশ্বজুড়ে সম্পদের বৈষম্য তো আরও বেশি।
সম্পদের বৈশ্বিক বৈষম্যটা কেমন?
মাত্র ১% লোকের হাতে বিশ্বের মোট ৪০ ভাগ সম্পদ বন্দী।জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ওয়েলথ রিপোর্ট এর ২০০৬ এর একটি হিসাব। তাদের ২০১৫ এর রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে পৃথিবীর শতকরা ৫০ ভাগ সম্পদ।
এই পরিসংখ্যান থেকে আমরা কি বুঝতে পারি?
গত ৯ বছরে ১ ভাগ ধনীর সম্পদ বেড়েছে ১০ শতাংশ। ঘুরিয়ে বললে, এই ৯ বছরে বিশ্বের শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষের সম্পদ কমেছে ১০ শতাংশ। পৃথিবীতে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কী হারে বাড়ছে, তা অনুধাবনে এই একটি পরিসংখ্যানই যথেষ্ট।
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর কাছে বন্দী আছে ৯৪ শতাংশ সম্পদ। আর বাকী ৮০% লোকের কাছে রয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ সম্পদ। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ৩০০ জনের সম্পদের পরিমাণ সচেয়ে দরিদ্র ৩ বিলিয়ন মানুষের সম্পদের সমান। অর্থাৎ তাদের সম্পদের পরিমাণ ইন্ডিয়া, চীন, আমেরিকা, ব্রাজিল এর মোট সম্পদের চাইতেও বেশি। ধনী দেশগুলোর বাৎসরিক মাথাপিছু আয় ১০০০০০ ডলার, আর দরিদ্র দেশগুলোর মাত্র ১০০০ ডলার। যাদের মধ্যে ২০% এর দৈনিক আয় হল ১.২৫ ডলারেরও কম।
কৈলাস সত্যার্থী কে চেনেন তো!নোবেল বিজয়ী মানবাধিকার কর্মী।
ঢাকায় ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ১৩৬তম সম্মেলনের সাধারণ আলোচনায় তিনি বিশ্বব্যাপী বিরাজমান সম্পদের বৈষম্যের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “কয়েক দশক আগে যুক্তরাষ্ট্রে একজন সিইও ২০ জন শ্রমিকের সমান আয় করতেন। আর এখন এই বৈষম্য বেড়ে ১:২০০ হয়েছে। বিশ্বের ৫০ শতাংশ মানুষের সমপরিমাণ সম্পদ মাত্র আটজন ধনীর কাছে আছে। দিনে দিনে এই বৈষম্য বাড়ছে। আমরা যখন এই সম্মেলন করছি, তখন ২৭০ মিলিয়ন শিশু স্কুলে যেতে পারছে না। ২১ মিলিয়ন মানুষ বিক্রি হয়ে শ্রম দাসে পরিণত হয়েছে। এটা মেনে নেয়া যায় না, সহ্য করা যায় না। একদিকে ১০০ মিলিয়ন শিশু দাসত্ব, পাচার ও শিক্ষাবঞ্চনাসহ বিভিন্ন সহিসংতার শিকার হচ্ছে ............... ,
বিশ্বের ২৩০ মিলিয়ন শিশু সংঘাতপূর্ণ এলাকায় বসবাস করছে। তাদের জীবন ও শিক্ষা বিপদগ্রস্ত। যৌথভাবে এর সমাধান করা আমাদের দায়িত্ব। টেকসই উন্নয়নে এর জন্য ফ্রেমওয়ার্ক আছে। আমি আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাব এই বিপদগ্রস্ত শিশুদের বাঁচানোর জন্য। বিশ্বের সব শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার জন্য মাত্র ২২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন, যা বিশ্বের সাড়ে তিন দিনের প্রতিরক্ষা বাজেটের সমান। আমাদের এই বিশ্ব কি এতই গরিব যে ওই পরিমাণ অর্থ প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ব্যয় করতে পারব না”?
.
ধনী দেশগুলো তো দরিদ্র দেশগুলোকে আর্থিক অনুদান দেয়ার মাধ্যমে এই বৈষম্য কমানোর চেষ্টা করে।
এর মাধ্যমে দরিদ্র দেশগুলোর তো উন্নতি হচ্ছেই না, বরং তারা আরও দরিদ্র হচ্ছে। পক্ষান্তরে ধনী দেশগুলো দিন-দিন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে।
.
প্রতি বছর ধনী দেশগুলো গরীব দেশগুলোকে প্রায় ১৩০ বিলিয়ন ডলার অনুদান দেয়। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, তার পরেও কেন সম্পদের বৈষম্য কমছে না। বেড়েই চলছে? এর একটা কারন হল ট্রেড মিসপ্রাইসিং নামক ট্যাক্স ফাকির মাধ্যমে মাল্টি ন্যাশনাল কর্পোরেশন গুলো প্রতি বছর দরিদ্র দেশগুলো থেকে ৯০০ বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
.
দরিদ্র দেশগুলো বিভিন্ন ঋণের বিপরীতে ধনী দেশগুলোকে প্রতি বছর ৬০০ বিলিয়ন ডলার সুদ দিতে বাধ্য হচ্ছে। পাশাপাশি দরিদ্র দেশগুলো টাকা হারাচ্ছে ঐসব বানিজ্য নীতির কারনে যা ঠিক করা হচ্ছে ধনী দেশগুলো থেকে। ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেট এর অর্থনিতিবিদদের মতে এসব বাণিজ্য নীতির কারনে দরিদ্র দেশগুলো প্রতি বছর হারাচ্ছে ৫০০ বিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলো থেকে সবথেকে ধনীদের কাছে যাচ্ছে ২ ট্রলিয়ন ডলার। প্রতি বছর।এখন বলুন, ধনী দেশগুলো যে ঋণ দিচ্ছে তার মাধ্যমে কি তারা সম্পদের বৈষম্য কমিয়ে আনতে সহায়তা করছে? নাকি সম্পদের বৈষম্য আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে?
.
তবে সব দেশই তো কমবেশি উন্নতির দিকে আগাচ্ছে। এভাবে হয়ত ক্রমান্বয়ে দরিদ্র দেশগুলো উন্নতির দিকে পৌঁছাবে?
.
পৌঁছাবে হয়ত কোনদিন। যেদিন আপনার তিনহাজার প্রজন্ম গত হবে।
- জিম্বাবুয়ে একটি উন্নয়নশীল দেশ। যে গতিতে দেশটি উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এভাবে যদি আগাতে থাকে তাহলে আরও ২৭২২ বছর লাগবে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে উঠতে। আর সে পর্যন্ত আপনার তিনহাজার প্রজন্ম গত হবে।
.
এই অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কি হতে পারে বলে?
.
- এর বিপরীতে আমাদের সামনে একটি সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে। যেটি মানুষের বানানো নয় বরং মানুষের স্রষ্টার পক্ষ থেকে আগত।
- ইসলাম।
পুঁজিবাদ আর ইসলামের পার্থক্য অনেক।
প্রথমত, ইসলাম তার অনুসারীদের বাহ্যিক দিক থেকে আত্নিক পরিবর্তনের প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করে থাকে। যা পুঁজিবাদ করে না। আর মানুষ বাহিরগত ভাবে যতই ভাল হোক না কেন তার অভ্যন্তরীন ভাগ ভাল না হলে তার দ্বারা মানবকল্যান করা সম্ভব নয়। তাই ইসলামের ইতিহাস অধ্যয়ন করলে আপনি দেখবেন মুসলিমদের দ্বারা যতটা মানবকল্যাণ সাধিত হয়েছে তা আর কোন ধর্মালম্বীদের দ্বারা হয় নি।
দ্বিতীয়ত, ইসলাম উপার্জনের বৈধ অবৈধ পন্থা নির্ণয় করেছে। যা পুঁজিবাদ করে নি। ইসলাম ঐসব ব্যবসাকে হারাম করেছে যা মানবতার জন্য অকল্যাণকর। যেমনঃ নেশাদার সামগ্রী, মদ, জুয়া, পতিতাবৃত্তি, অশ্লীল ও যৌন উত্তেজক সকল প্রকার দ্রব্যাদি, পর্নোগ্রাফি ইত্যাদি।
আর লক্ষ্য করলে দেখবেন পুঁজিবাদ এ সকল কর্মকে নিষেধ করেনি বরং ক্ষেত্রবিশেষে উৎসাহিত করেছে। কেননা তারা চায় মানুষ এসব পণ্যের ভোক্তায় পরিণত হোক। আর তারা এসব অসৎ ব্যবসার দ্বারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হোক। পুঁজিবাদে এ সকল মানবতাবিরোধী ব্যবসাগুলোই অনেককে বিত্তশালী করে তুলছে। পতিতাবৃত্তি কিংবা পর্নোগ্রাফি কি আজ বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা নয়?
.
তৃতীয়ত ইসলামের সাথে পুঁজিবাদের পার্থক্য হল, আপনি যদি এমন টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত রাখেন যা আপনার কোন কাজেই লাগে না। বছর পূর্তি হলে ইসলাম এমন টাকার উপর ২.৫% হারে যাকাত নির্ধারণ করবে।
আর পুঁজিবাদে আপনি যদি ব্যাংকে টাকা জমা রাখেন তাহলে ব্যাংক আপনাকে মাসে মাসে ইন্টারেস্ট দেবে। ফলে আপনার টাকা তো কমবেই না বরং দিন-দিন আরও বাড়তে থাকবে। যাকাত হচ্ছে ইসলামী অর্থব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যাকাত আদায় করার ফলে বিত্তশালীদের সম্পদের অংশ সাধারণ মানুষের মধ্যে বন্টিত হবে। ফলে সম্পদ একটি শ্রেণির হাতেই কেবল কুক্ষিগত হয়ে রইবে না বরং তা সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে পড়বে।
যাকাত ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একটি সুফলতার এক বাস্তব উদাহরণ,
- খলীফা ওমার ইবনুল আব্দুল আযীয (র)’র সময় যাকাত এমনভাবে আদায় ও বন্টিত হয়েছিল যে, বছর দুয়েকের মধ্যে যাকাত নেয়ার মত কোন লোক খুঁজে পাওয়া যায় নি। কোন লোককে গরীব থাকতে হয় নি। অভাবী থাকতে হয় নি। না খেয়ে মরতে হয় নি। মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করতে হয় নি। বরং যাকাতের টাকা পেয়ে বছর দুয়েকের মধ্যেই অনেকে যাকাত দেয়ার মত সক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছিল।
.
ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাথে পুঁজিবাদের চতুর্থ পার্থক্য হল, ইসলাম আপনাকে অর্থব্যায়ের নির্দেশ দিয়েছে। আপনাকে বিভিন্ন মানব কল্যাণমূলক কাজে অংশীদার হতে উৎসাহিত করেছে। আর এখানেই পুঁজিবাদের সাথে মূল পার্থক্য। কেননা পুঁজিবাদ মনে করে দান করলে মূলধন থেকে কমে যায়। আর ইসলাম মনে করে দান করলে কমে না বরং বেড়ে যায়। আর পুঁজিবাদের সাথে ইসলামের অর্থব্যায়ের পার্থক্য হল ইসলাম লৌকিকতা মুক্ত দানকে গ্রহণ করে।
আর পুঁজিবাদে দানের ক্ষেত্রে লৌকিকতাই মূখ্য। আপনি একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন, যারা বিভিন্ন সময়ে অসহায় মানুষের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তারা তা পত্র-পত্রিকায় ফলাওভাবে প্রচার করতে থাকে। অপরদিকে ইসলাম এমন দানকে বেশি পছন্দ করে যে দান লোকচক্ষুর আড়ালে সম্পাদিত হয়।
পঞ্চমত, পুঁজিবাদ ঋণ দেয়। তবে সুদ ছাড়া নয়। সুদ বিহীন ঋণদান কর্মসূচী পুঁজিবাদ কখনো কল্পনাও করে না। ফলে দেখা যায় ঋণ গ্রহীতা কখনোই ঋণদাতাকে আর্থিক দিক দিয়ে অতিক্রম করে যেতে পারে না। সুদের ঘানি টানতে টানতে তার জীবন অতিবাহিত হয়ে যায়। অনেক সময় সুদের টাকা পরিশোধ না করার অপরাধে পুঁজিবাদ ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে তার বাসস্থান, আসবাবপত্র ছিনিয়ে নেয়। তাকে দেউলিয়া করে দেয়। অপরদিকে ইসলাম সুদকে চিরতরে হারাম করেছে। তবে ঋণদানকে উৎসাহিত করেছে। ইসলাম ঋণ দেয়। তবে সুদ ছাড়া। কেননা সুদ ইসলাম কখনো কল্পনাও করতে পারে না। পাশাপাশি ঋণগ্রহীতা যদি অক্ষম হয়, তাহলে তাকে তাকাদা দিতে অনুৎসাহিত করেছে। এমনকি ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধে অক্ষম হলে তাকে ক্ষমা করে দিতে উৎসাহিত করেছে। যা পুঁজিবাদে অকল্পনীয়।
পুঁজিবাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, এ ব্যবস্থার মাধ্যমে একটা সময় মন্দাভাব দেখা দেবে।
.
ধন সঞ্চয় করে সুদী ব্যবস্থায় নিয়োগ করার ফলাফল হল, সম্পদ কিছুসংখ্যক মানুষের হাতে কুক্ষিগত হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা দিন-দিন কমে যাবে। ফলে কৃষি, শিল্প, ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দেবে। অবশেষে এমন অবস্থায় পৌঁছাবে যে, পুঁজিপতিরা তাঁদের টাকা বিনিয়োগ করার রাস্তা খুঁজে পাবে না।
অপরদিকে ইসলামে যাকাত, দান, সদকাহ আদায় করার মাধ্যমে সম্পদকে কিছু শ্রেণির মানুষের কাছে পুঞ্জীভূত হতে না দিয়ে, সম্পদকে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এর মাধ্যমে একদিকে বিত্তবানদের বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি হবে। অপরদিকে সমাজের সাধারণ মানুষের উপকার হবে। কেননা সমাজের যাকাত, দান, সাদাকাহ এর অর্থ ইসলামিক রাষ্ট্রের বায়তুল মালে জমা হবে।
আর এটিই মুসলমানদের কো-অপারেটিভ সোসাইটি, তাঁদের ইনসিউরেন্স কোম্পানী এবং প্রভিডেন্ট ফান্ড। এখান থেকেই মুসলিম সমাজের বেকারদের সহায়তা করা হয়। হত-দরিদ্র দুস্থদের কল্যানে ব্যয় করা হয়।
সবচেয়ে বড় কথা হল এ ব্যবস্থা মুসলমানদেরকে ভবিষ্যৎ অন্ন সংস্থানের চিন্তা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত করে। ইসলাম রাষ্ট্র পরিচালনা, সিভিল সার্ভিস, সেনাবাহিনী ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যয় সংকোচন করেছে। আর রাষ্ট্রের অর্থের বেশীরভাগ মানবতার কল্যাণে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছে। পুঁজিবাদে রাষ্ট্রীয় কাজেই সম্পদের সিংহভাগ ব্যয়িত হয়। যা ইসলাম করে না।
.
একটা সহজ উদাহরণ দিচ্ছি। পুঁজিবাদের দাবি হচ্ছে অর্থ সঞ্চয় করতে হবে এবং তার পরিমাণ বাড়াবার জন্য সুদ নিতে হবে। যার ফলে সুদের নালা দিয়ে গড়িয়ে-গড়িয়ে আশেপাশের লোকদের সবার টাকা পয়সা এ পুকুরে এসে পড়বে। বিপরীতপক্ষে, ইসলাম নির্দেশ দেয়, টাকা পয়সা জমা করে রাখা যাবে না। আর যদি কখনো জমা হয়ে যায়, তাহলে এ পুকুর থেকে নালা কেটে দিতে হবে। যাতে আশেপাশের শুকিয়ে যাওয়া ক্ষেতগুলোতে পানি পৌঁছে যায় এবং সমস্ত জমি তরতাজা হয়ে সবুজে শ্যামলে ভরে উঠে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় ধন আবদ্ধ ও জমাটবদ্ধ হয়ে থাকে। কিন্তু ইসলামে তা মুক্ত। স্বাধীন। অবাধ গতিশীল। পুঁজিবাদের পুকুর থেকে পানি নিতে হলে গ্রহীতার কাছে অবশ্যই কিছু পানি থাকতে হবে। নয়তো এক ফোটা পানি ও তাকে দেয়া হবে না।
কিন্তু ইসলামী ব্যবস্থায় পুকুরের নিয়ম হচ্ছে, যার নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি থাকবে সে তার বাড়তি পানি ঐ (বায়তুল মাল) পুকুরে ঢেলে দিয়ে যাবে। আর যার যার পানির প্রয়োজন হবে যে ওখান থেকে পানি নিয়ে যাবে।
.
আপনার সামনে দুটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পার্থক্য আমি কিছুটা তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। এখন আপনি বলুন তো এ দুটির কোনটি বেশি মানবকল্যানমূলক?
.
এটা তো কেবল ইসলামের একটি আইনের সৌন্দর্য আপনি দেখলেন। ইসলামের প্রত্যেকটি আইন-ই এমন সুন্দর। প্রত্যেকটি আইনের মধ্যেই নিহিত রয়েছে মানবতার কল্যান। কেননা ইসলাম মানবতার ধর্ম। আর ইসলামের আইনগুলো কোন মানুষ তৈরি করেন নি। সর্বশক্তিমান স্রষ্টা এগুলো তৈরি করেছেন। এই হাইপোক্রাইসিস সিস্টেমের বিপরীতে ইসলাম যদি এ সব সুন্দর ল’ গুলোকে ইস্টাবলিস করতে তার অনুসারীদেরকে নির্দেশ দেয়, এর জন্য কি ইসলামকে আপনি সন্ত্রাসী ধর্ম বলবেন?
.
আপনি পাকিস্তানীদের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন কেন?
- পশ্চিম পাকিস্তানীদের অন্যায় অবিচারের কালো হাতকে ভেঙ্গে দিতে।
- তাই বলে যুদ্ধ?
.
- আমরা তো প্রথমে যুদ্ধে যেতে যাই নি। আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে এর সমাধান চেয়েছি। কিন্তু যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তখন অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছি।
- ইসলামও যদি একই কাজ করে তাহলে আপনার আপত্তি কেন আংকেল?
- মানে?
.
- ইসলামও প্রথমে সমাজ বিল্পবের কথা শিখিয়েছে। শান্তিপুর্ন উপায়ে মানুষকে সত্যের পথে আহ্বান করতে শিখিয়েছে। আর যেসব কারনে ইসলাম যুদ্ধের অনুমতি দিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল, অশুভ শক্তির অন্যায় অবিচারের কালো হাতকে ভেঙ্গে দিয়ে মানবতাকে মুক্তি দিতে। শোষণতান্ত্রিক এ ব্যবস্থা থেকে মানুষকে উদ্ধার করতে। মানুষকে মানুষের দাসত্ব থেকে স্বাধীন করে দিতে। এটা কি ইসলামের ভুল? নাকি এক্সট্রিমিসম?
.
ফারিস সিরিজ- ০৮/ জাকারিয়া মাসুদ
.
______________________
তথ্যসূত্রঃ
1) আল কোরআন কারীম। (সূরা বাকারাহঃ ১৮৮,২৭৫,২৭৮-২৮০, ২৮৩; আলে ইমরানঃ ১৩০,১৬১; আল মায়্যিদাহঃ ৯,৩৮,৯০; তাওবাঃ ৬০; আল মুতাফফিফীনঃ ৩; আন-নূরঃ ২,৩৩)
2) https://www.oxfam.org/…/just-8-men-own-same-wealth-half-wor…
3) https://www.google.com/…/half-world-wealth-in-hands-populat…
4) https://www.google.com/…/10-startling-facts-about-global-…/…
5) https://www.google.com/…/worlds-eight-richest-people-have-s…
6) https://en.wikipedia.org/wiki/Distribution_of_wealth…
7) https://en.wikipedia.org/wiki/International_inequality…
8) https://en.wikipedia.org/…/List_of_countries_by_distributio…
9) http://www.bdnews24us.com/bangla/article/585805/index.html…
10) http://www.jugantor.com/old/window/2015/10/31/345315
#ফারিস_সিরিজ-৮
.
#উপলব্ধিঃ " ইসলাম কেন তার আইনকে প্রতিষ্ঠিত করতে বলেছে"?
ইসলাম তার অনুসারীদের বাধ্য করে ধর্মের আইনকে রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে। এর জন্য প্রয়োজন হলে যুদ্ধ করতে। এগুলো কি এক্সট্রিম রুলস নয়? এরপরেও কি মনে হয় না যে ইসলাম শান্তির নয় বরং সন্ত্রাসের ধর্ম?
বলুন তো বর্তমান বিশ্ব কাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়?
- পাশ্চাত্যের দ্বারা।
- বর্তমান পৃথিবীর অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রকৃতি কেমন?
- ক্যাপিটালিসম। আই মিন পুঁজিবাদ।
- আর বিশ্ব মোড়লের ভূমিকায় কে অভিনয় করে?
- আমেরিকা।
- খোদ আমেরিকার অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বৈষম্যের মাত্রাটা কেমন? চলুন দেখে নেওয়া যাক।
তাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বিশাল মাত্রার বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। আমেরিকার সবচেয়ে ধনী ১% লোকের কাছে রয়েছে মোট সম্পদের ৩৫ ভাগ। উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণি যাদের সংখ্যা ২০% তাদের কাছে আছে ১১ ভাগ। আর সবথেকে নীচু শ্রেণি, যাদের সংখ্যা ৪০% তাদের কাছে যে সম্পদ আছে তা মোট সম্পদের তুলনায় ১ ভাগেরও কম।
.
সম্পদের এত বৈষম্য? তাও আবার খোদ আমেরিকা তে? যারা সাম্যের স্লোগান নিয়ে ঘুরে বেড়ায়?
আমেরিকায় বিদ্যমান সম্পদের বৈষম্যের দিকটা প্রথম ফুটে উঠে ২০০৭ সালে। এর আগ পর্যন্ত তারা বিষয়টিকে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল। ২০১১ তে এসে এই বৈষম্য আরও প্রকট আকার ধারণ করে। সবচেয়ে ধনী মাত্র ৪০০ জন আমেরিকানের সম্পদের পরিমাণ আমেরিকার মোট সম্পদের অর্ধেকের চাইতেও বেশি। তবে এটা তো কেবল আমেরিকার সম্পদের বৈষম্য। বিশ্বজুড়ে সম্পদের বৈষম্য তো আরও বেশি।
সম্পদের বৈশ্বিক বৈষম্যটা কেমন?
মাত্র ১% লোকের হাতে বিশ্বের মোট ৪০ ভাগ সম্পদ বন্দী।জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ওয়েলথ রিপোর্ট এর ২০০৬ এর একটি হিসাব। তাদের ২০১৫ এর রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে পৃথিবীর শতকরা ৫০ ভাগ সম্পদ।
এই পরিসংখ্যান থেকে আমরা কি বুঝতে পারি?
গত ৯ বছরে ১ ভাগ ধনীর সম্পদ বেড়েছে ১০ শতাংশ। ঘুরিয়ে বললে, এই ৯ বছরে বিশ্বের শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষের সম্পদ কমেছে ১০ শতাংশ। পৃথিবীতে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কী হারে বাড়ছে, তা অনুধাবনে এই একটি পরিসংখ্যানই যথেষ্ট।
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর কাছে বন্দী আছে ৯৪ শতাংশ সম্পদ। আর বাকী ৮০% লোকের কাছে রয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ সম্পদ। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ৩০০ জনের সম্পদের পরিমাণ সচেয়ে দরিদ্র ৩ বিলিয়ন মানুষের সম্পদের সমান। অর্থাৎ তাদের সম্পদের পরিমাণ ইন্ডিয়া, চীন, আমেরিকা, ব্রাজিল এর মোট সম্পদের চাইতেও বেশি। ধনী দেশগুলোর বাৎসরিক মাথাপিছু আয় ১০০০০০ ডলার, আর দরিদ্র দেশগুলোর মাত্র ১০০০ ডলার। যাদের মধ্যে ২০% এর দৈনিক আয় হল ১.২৫ ডলারেরও কম।
কৈলাস সত্যার্থী কে চেনেন তো!নোবেল বিজয়ী মানবাধিকার কর্মী।
ঢাকায় ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ১৩৬তম সম্মেলনের সাধারণ আলোচনায় তিনি বিশ্বব্যাপী বিরাজমান সম্পদের বৈষম্যের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “কয়েক দশক আগে যুক্তরাষ্ট্রে একজন সিইও ২০ জন শ্রমিকের সমান আয় করতেন। আর এখন এই বৈষম্য বেড়ে ১:২০০ হয়েছে। বিশ্বের ৫০ শতাংশ মানুষের সমপরিমাণ সম্পদ মাত্র আটজন ধনীর কাছে আছে। দিনে দিনে এই বৈষম্য বাড়ছে। আমরা যখন এই সম্মেলন করছি, তখন ২৭০ মিলিয়ন শিশু স্কুলে যেতে পারছে না। ২১ মিলিয়ন মানুষ বিক্রি হয়ে শ্রম দাসে পরিণত হয়েছে। এটা মেনে নেয়া যায় না, সহ্য করা যায় না। একদিকে ১০০ মিলিয়ন শিশু দাসত্ব, পাচার ও শিক্ষাবঞ্চনাসহ বিভিন্ন সহিসংতার শিকার হচ্ছে ............... ,
বিশ্বের ২৩০ মিলিয়ন শিশু সংঘাতপূর্ণ এলাকায় বসবাস করছে। তাদের জীবন ও শিক্ষা বিপদগ্রস্ত। যৌথভাবে এর সমাধান করা আমাদের দায়িত্ব। টেকসই উন্নয়নে এর জন্য ফ্রেমওয়ার্ক আছে। আমি আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাব এই বিপদগ্রস্ত শিশুদের বাঁচানোর জন্য। বিশ্বের সব শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার জন্য মাত্র ২২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন, যা বিশ্বের সাড়ে তিন দিনের প্রতিরক্ষা বাজেটের সমান। আমাদের এই বিশ্ব কি এতই গরিব যে ওই পরিমাণ অর্থ প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ব্যয় করতে পারব না”?
.
ধনী দেশগুলো তো দরিদ্র দেশগুলোকে আর্থিক অনুদান দেয়ার মাধ্যমে এই বৈষম্য কমানোর চেষ্টা করে।
এর মাধ্যমে দরিদ্র দেশগুলোর তো উন্নতি হচ্ছেই না, বরং তারা আরও দরিদ্র হচ্ছে। পক্ষান্তরে ধনী দেশগুলো দিন-দিন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে।
.
প্রতি বছর ধনী দেশগুলো গরীব দেশগুলোকে প্রায় ১৩০ বিলিয়ন ডলার অনুদান দেয়। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, তার পরেও কেন সম্পদের বৈষম্য কমছে না। বেড়েই চলছে? এর একটা কারন হল ট্রেড মিসপ্রাইসিং নামক ট্যাক্স ফাকির মাধ্যমে মাল্টি ন্যাশনাল কর্পোরেশন গুলো প্রতি বছর দরিদ্র দেশগুলো থেকে ৯০০ বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
.
দরিদ্র দেশগুলো বিভিন্ন ঋণের বিপরীতে ধনী দেশগুলোকে প্রতি বছর ৬০০ বিলিয়ন ডলার সুদ দিতে বাধ্য হচ্ছে। পাশাপাশি দরিদ্র দেশগুলো টাকা হারাচ্ছে ঐসব বানিজ্য নীতির কারনে যা ঠিক করা হচ্ছে ধনী দেশগুলো থেকে। ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেট এর অর্থনিতিবিদদের মতে এসব বাণিজ্য নীতির কারনে দরিদ্র দেশগুলো প্রতি বছর হারাচ্ছে ৫০০ বিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলো থেকে সবথেকে ধনীদের কাছে যাচ্ছে ২ ট্রলিয়ন ডলার। প্রতি বছর।এখন বলুন, ধনী দেশগুলো যে ঋণ দিচ্ছে তার মাধ্যমে কি তারা সম্পদের বৈষম্য কমিয়ে আনতে সহায়তা করছে? নাকি সম্পদের বৈষম্য আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে?
.
তবে সব দেশই তো কমবেশি উন্নতির দিকে আগাচ্ছে। এভাবে হয়ত ক্রমান্বয়ে দরিদ্র দেশগুলো উন্নতির দিকে পৌঁছাবে?
.
পৌঁছাবে হয়ত কোনদিন। যেদিন আপনার তিনহাজার প্রজন্ম গত হবে।
- জিম্বাবুয়ে একটি উন্নয়নশীল দেশ। যে গতিতে দেশটি উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এভাবে যদি আগাতে থাকে তাহলে আরও ২৭২২ বছর লাগবে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে উঠতে। আর সে পর্যন্ত আপনার তিনহাজার প্রজন্ম গত হবে।
.
এই অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কি হতে পারে বলে?
.
- এর বিপরীতে আমাদের সামনে একটি সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে। যেটি মানুষের বানানো নয় বরং মানুষের স্রষ্টার পক্ষ থেকে আগত।
- ইসলাম।
পুঁজিবাদ আর ইসলামের পার্থক্য অনেক।
প্রথমত, ইসলাম তার অনুসারীদের বাহ্যিক দিক থেকে আত্নিক পরিবর্তনের প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করে থাকে। যা পুঁজিবাদ করে না। আর মানুষ বাহিরগত ভাবে যতই ভাল হোক না কেন তার অভ্যন্তরীন ভাগ ভাল না হলে তার দ্বারা মানবকল্যান করা সম্ভব নয়। তাই ইসলামের ইতিহাস অধ্যয়ন করলে আপনি দেখবেন মুসলিমদের দ্বারা যতটা মানবকল্যাণ সাধিত হয়েছে তা আর কোন ধর্মালম্বীদের দ্বারা হয় নি।
দ্বিতীয়ত, ইসলাম উপার্জনের বৈধ অবৈধ পন্থা নির্ণয় করেছে। যা পুঁজিবাদ করে নি। ইসলাম ঐসব ব্যবসাকে হারাম করেছে যা মানবতার জন্য অকল্যাণকর। যেমনঃ নেশাদার সামগ্রী, মদ, জুয়া, পতিতাবৃত্তি, অশ্লীল ও যৌন উত্তেজক সকল প্রকার দ্রব্যাদি, পর্নোগ্রাফি ইত্যাদি।
আর লক্ষ্য করলে দেখবেন পুঁজিবাদ এ সকল কর্মকে নিষেধ করেনি বরং ক্ষেত্রবিশেষে উৎসাহিত করেছে। কেননা তারা চায় মানুষ এসব পণ্যের ভোক্তায় পরিণত হোক। আর তারা এসব অসৎ ব্যবসার দ্বারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হোক। পুঁজিবাদে এ সকল মানবতাবিরোধী ব্যবসাগুলোই অনেককে বিত্তশালী করে তুলছে। পতিতাবৃত্তি কিংবা পর্নোগ্রাফি কি আজ বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা নয়?
.
তৃতীয়ত ইসলামের সাথে পুঁজিবাদের পার্থক্য হল, আপনি যদি এমন টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত রাখেন যা আপনার কোন কাজেই লাগে না। বছর পূর্তি হলে ইসলাম এমন টাকার উপর ২.৫% হারে যাকাত নির্ধারণ করবে।
আর পুঁজিবাদে আপনি যদি ব্যাংকে টাকা জমা রাখেন তাহলে ব্যাংক আপনাকে মাসে মাসে ইন্টারেস্ট দেবে। ফলে আপনার টাকা তো কমবেই না বরং দিন-দিন আরও বাড়তে থাকবে। যাকাত হচ্ছে ইসলামী অর্থব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যাকাত আদায় করার ফলে বিত্তশালীদের সম্পদের অংশ সাধারণ মানুষের মধ্যে বন্টিত হবে। ফলে সম্পদ একটি শ্রেণির হাতেই কেবল কুক্ষিগত হয়ে রইবে না বরং তা সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে পড়বে।
যাকাত ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একটি সুফলতার এক বাস্তব উদাহরণ,
- খলীফা ওমার ইবনুল আব্দুল আযীয (র)’র সময় যাকাত এমনভাবে আদায় ও বন্টিত হয়েছিল যে, বছর দুয়েকের মধ্যে যাকাত নেয়ার মত কোন লোক খুঁজে পাওয়া যায় নি। কোন লোককে গরীব থাকতে হয় নি। অভাবী থাকতে হয় নি। না খেয়ে মরতে হয় নি। মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করতে হয় নি। বরং যাকাতের টাকা পেয়ে বছর দুয়েকের মধ্যেই অনেকে যাকাত দেয়ার মত সক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছিল।
.
ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাথে পুঁজিবাদের চতুর্থ পার্থক্য হল, ইসলাম আপনাকে অর্থব্যায়ের নির্দেশ দিয়েছে। আপনাকে বিভিন্ন মানব কল্যাণমূলক কাজে অংশীদার হতে উৎসাহিত করেছে। আর এখানেই পুঁজিবাদের সাথে মূল পার্থক্য। কেননা পুঁজিবাদ মনে করে দান করলে মূলধন থেকে কমে যায়। আর ইসলাম মনে করে দান করলে কমে না বরং বেড়ে যায়। আর পুঁজিবাদের সাথে ইসলামের অর্থব্যায়ের পার্থক্য হল ইসলাম লৌকিকতা মুক্ত দানকে গ্রহণ করে।
আর পুঁজিবাদে দানের ক্ষেত্রে লৌকিকতাই মূখ্য। আপনি একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন, যারা বিভিন্ন সময়ে অসহায় মানুষের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তারা তা পত্র-পত্রিকায় ফলাওভাবে প্রচার করতে থাকে। অপরদিকে ইসলাম এমন দানকে বেশি পছন্দ করে যে দান লোকচক্ষুর আড়ালে সম্পাদিত হয়।
পঞ্চমত, পুঁজিবাদ ঋণ দেয়। তবে সুদ ছাড়া নয়। সুদ বিহীন ঋণদান কর্মসূচী পুঁজিবাদ কখনো কল্পনাও করে না। ফলে দেখা যায় ঋণ গ্রহীতা কখনোই ঋণদাতাকে আর্থিক দিক দিয়ে অতিক্রম করে যেতে পারে না। সুদের ঘানি টানতে টানতে তার জীবন অতিবাহিত হয়ে যায়। অনেক সময় সুদের টাকা পরিশোধ না করার অপরাধে পুঁজিবাদ ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে তার বাসস্থান, আসবাবপত্র ছিনিয়ে নেয়। তাকে দেউলিয়া করে দেয়। অপরদিকে ইসলাম সুদকে চিরতরে হারাম করেছে। তবে ঋণদানকে উৎসাহিত করেছে। ইসলাম ঋণ দেয়। তবে সুদ ছাড়া। কেননা সুদ ইসলাম কখনো কল্পনাও করতে পারে না। পাশাপাশি ঋণগ্রহীতা যদি অক্ষম হয়, তাহলে তাকে তাকাদা দিতে অনুৎসাহিত করেছে। এমনকি ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধে অক্ষম হলে তাকে ক্ষমা করে দিতে উৎসাহিত করেছে। যা পুঁজিবাদে অকল্পনীয়।
পুঁজিবাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, এ ব্যবস্থার মাধ্যমে একটা সময় মন্দাভাব দেখা দেবে।
.
ধন সঞ্চয় করে সুদী ব্যবস্থায় নিয়োগ করার ফলাফল হল, সম্পদ কিছুসংখ্যক মানুষের হাতে কুক্ষিগত হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা দিন-দিন কমে যাবে। ফলে কৃষি, শিল্প, ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দেবে। অবশেষে এমন অবস্থায় পৌঁছাবে যে, পুঁজিপতিরা তাঁদের টাকা বিনিয়োগ করার রাস্তা খুঁজে পাবে না।
অপরদিকে ইসলামে যাকাত, দান, সদকাহ আদায় করার মাধ্যমে সম্পদকে কিছু শ্রেণির মানুষের কাছে পুঞ্জীভূত হতে না দিয়ে, সম্পদকে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এর মাধ্যমে একদিকে বিত্তবানদের বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি হবে। অপরদিকে সমাজের সাধারণ মানুষের উপকার হবে। কেননা সমাজের যাকাত, দান, সাদাকাহ এর অর্থ ইসলামিক রাষ্ট্রের বায়তুল মালে জমা হবে।
আর এটিই মুসলমানদের কো-অপারেটিভ সোসাইটি, তাঁদের ইনসিউরেন্স কোম্পানী এবং প্রভিডেন্ট ফান্ড। এখান থেকেই মুসলিম সমাজের বেকারদের সহায়তা করা হয়। হত-দরিদ্র দুস্থদের কল্যানে ব্যয় করা হয়।
সবচেয়ে বড় কথা হল এ ব্যবস্থা মুসলমানদেরকে ভবিষ্যৎ অন্ন সংস্থানের চিন্তা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত করে। ইসলাম রাষ্ট্র পরিচালনা, সিভিল সার্ভিস, সেনাবাহিনী ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যয় সংকোচন করেছে। আর রাষ্ট্রের অর্থের বেশীরভাগ মানবতার কল্যাণে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছে। পুঁজিবাদে রাষ্ট্রীয় কাজেই সম্পদের সিংহভাগ ব্যয়িত হয়। যা ইসলাম করে না।
.
একটা সহজ উদাহরণ দিচ্ছি। পুঁজিবাদের দাবি হচ্ছে অর্থ সঞ্চয় করতে হবে এবং তার পরিমাণ বাড়াবার জন্য সুদ নিতে হবে। যার ফলে সুদের নালা দিয়ে গড়িয়ে-গড়িয়ে আশেপাশের লোকদের সবার টাকা পয়সা এ পুকুরে এসে পড়বে। বিপরীতপক্ষে, ইসলাম নির্দেশ দেয়, টাকা পয়সা জমা করে রাখা যাবে না। আর যদি কখনো জমা হয়ে যায়, তাহলে এ পুকুর থেকে নালা কেটে দিতে হবে। যাতে আশেপাশের শুকিয়ে যাওয়া ক্ষেতগুলোতে পানি পৌঁছে যায় এবং সমস্ত জমি তরতাজা হয়ে সবুজে শ্যামলে ভরে উঠে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় ধন আবদ্ধ ও জমাটবদ্ধ হয়ে থাকে। কিন্তু ইসলামে তা মুক্ত। স্বাধীন। অবাধ গতিশীল। পুঁজিবাদের পুকুর থেকে পানি নিতে হলে গ্রহীতার কাছে অবশ্যই কিছু পানি থাকতে হবে। নয়তো এক ফোটা পানি ও তাকে দেয়া হবে না।
কিন্তু ইসলামী ব্যবস্থায় পুকুরের নিয়ম হচ্ছে, যার নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি থাকবে সে তার বাড়তি পানি ঐ (বায়তুল মাল) পুকুরে ঢেলে দিয়ে যাবে। আর যার যার পানির প্রয়োজন হবে যে ওখান থেকে পানি নিয়ে যাবে।
.
আপনার সামনে দুটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পার্থক্য আমি কিছুটা তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। এখন আপনি বলুন তো এ দুটির কোনটি বেশি মানবকল্যানমূলক?
.
এটা তো কেবল ইসলামের একটি আইনের সৌন্দর্য আপনি দেখলেন। ইসলামের প্রত্যেকটি আইন-ই এমন সুন্দর। প্রত্যেকটি আইনের মধ্যেই নিহিত রয়েছে মানবতার কল্যান। কেননা ইসলাম মানবতার ধর্ম। আর ইসলামের আইনগুলো কোন মানুষ তৈরি করেন নি। সর্বশক্তিমান স্রষ্টা এগুলো তৈরি করেছেন। এই হাইপোক্রাইসিস সিস্টেমের বিপরীতে ইসলাম যদি এ সব সুন্দর ল’ গুলোকে ইস্টাবলিস করতে তার অনুসারীদেরকে নির্দেশ দেয়, এর জন্য কি ইসলামকে আপনি সন্ত্রাসী ধর্ম বলবেন?
.
আপনি পাকিস্তানীদের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন কেন?
- পশ্চিম পাকিস্তানীদের অন্যায় অবিচারের কালো হাতকে ভেঙ্গে দিতে।
- তাই বলে যুদ্ধ?
.
- আমরা তো প্রথমে যুদ্ধে যেতে যাই নি। আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে এর সমাধান চেয়েছি। কিন্তু যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তখন অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছি।
- ইসলামও যদি একই কাজ করে তাহলে আপনার আপত্তি কেন আংকেল?
- মানে?
.
- ইসলামও প্রথমে সমাজ বিল্পবের কথা শিখিয়েছে। শান্তিপুর্ন উপায়ে মানুষকে সত্যের পথে আহ্বান করতে শিখিয়েছে। আর যেসব কারনে ইসলাম যুদ্ধের অনুমতি দিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল, অশুভ শক্তির অন্যায় অবিচারের কালো হাতকে ভেঙ্গে দিয়ে মানবতাকে মুক্তি দিতে। শোষণতান্ত্রিক এ ব্যবস্থা থেকে মানুষকে উদ্ধার করতে। মানুষকে মানুষের দাসত্ব থেকে স্বাধীন করে দিতে। এটা কি ইসলামের ভুল? নাকি এক্সট্রিমিসম?
.
ফারিস সিরিজ- ০৮/ জাকারিয়া মাসুদ
.
______________________
তথ্যসূত্রঃ
1) আল কোরআন কারীম। (সূরা বাকারাহঃ ১৮৮,২৭৫,২৭৮-২৮০, ২৮৩; আলে ইমরানঃ ১৩০,১৬১; আল মায়্যিদাহঃ ৯,৩৮,৯০; তাওবাঃ ৬০; আল মুতাফফিফীনঃ ৩; আন-নূরঃ ২,৩৩)
2) https://www.oxfam.org/…/just-8-men-own-same-wealth-half-wor…
3) https://www.google.com/…/half-world-wealth-in-hands-populat…
4) https://www.google.com/…/10-startling-facts-about-global-…/…
5) https://www.google.com/…/worlds-eight-richest-people-have-s…
6) https://en.wikipedia.org/wiki/Distribution_of_wealth…
7) https://en.wikipedia.org/wiki/International_inequality…
8) https://en.wikipedia.org/…/List_of_countries_by_distributio…
9) http://www.bdnews24us.com/bangla/article/585805/index.html…
10) http://www.jugantor.com/old/window/2015/10/31/345315
