সর্বশেষ

2/recent/ticker-posts

হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরকে চুমু খাওয়া নিয়ে আপত্তি।

#Campúsian-38
#MSRM-10
#Qn:❏ হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরকে চুমু খাওয়া নিয়ে আপত্তি।
হজের সময়ে হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরকে চুমু খাওয়া নিয়ে খ্রিষ্টান মিশনারী ও নাস্তিক-মুক্তমনারা বহুমুখী অভিযোগ তোলে। অভিযোগগুলো মিথ্যাই নয়, অশ্লীলও বটে।
প্রথমত, তারা বলতে চায়--হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর নাকি নারীদের যোনীর প্রতিকৃতি যাতে মুসলিমরা চুম্বন করে (নাউযুবিল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ)।
এই অভিযোগদের একটি ফির্কা কারামিতারা ৩১৭ হিজরীতে কা’বা থেকে হাজরে আসওয়াদ লুট করে, ২২ বছর পর ৩৩৯ হিজরীতে তা উদ্ধার করা হয়। এই ২২ বছর হাজরে আসওয়াদ ছাড়াই হজ সম্পাদিত হয়েছিল। কারামিতারা হাজরে আসওয়াদ ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলেছিল। [৭] এ কারণে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া পাথরটিকে একত্রে জোড়া দিয়ে একটা গোল ধারক বা ফ্রেমের ভেতর স্থাপন করা হয়েছে। যে কারণে আমরা বর্তমানে গোল রূপালী রঙের ফ্রেমের মাঝে কালো পাথর বা হাজরে আসওয়াদ দেখি। প্রকৃতপক্ষে যদি আমরা পূর্ণ হাজরে আসওয়াদের ছবি দেখি, তাহলে কোনভাবেই এর সাথে নারীদের যোনীর আকৃতির কোন মিল পাওয়া যাবে না(নাউযুবিল্লাহ)। দেখুন হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরের পূর্ণ আকৃতি:, (পিক)
ছবিটির উৎসঃ প্রাচ্যবিদ William Muir এর লেখা মুহাম্মাদ(ﷺ) এর জীবনী "The Life of Muḥammad", পৃষ্ঠা ২৯। ডাউনলোড লিঙ্কঃ https://goo.gl/PE7Thb ; উইকিপিডিয়া থেকেও দেখা যেতে পারেঃ https://goo.gl/7yYTAo
মানুষ তো তার সন্তানকেও ভালোবেসে চুম্বন করে। এর মানে কি মানুষ তার সন্তানের উপাসনা করে? কোন পৌত্তলিক জাতিগোষ্ঠীগুলোর উপাসনার রীতি যদি আমরা লক্ষ্য করি, তাহলেও আমরা এর সাথে মুসলিমদের কোন মিল খুঁজে পাই না। কোন ক্যাথোলিক খ্রিষ্টান কি চার্চে গিয়ে মরিয়ম(আ) কিংবা যিশুর মূর্তিকে চুমু খায়? কিংবা কোন হিন্দু কি কখনো মন্দিরে পুজার সময় দুর্গা, স্বরস্বতী, কালি এসব দেব-দেবীর মূর্তিতে চুমু খায়?হাজরে আসওয়াদকে মুসলিমরা কখনোই আল্লাহ তা’আলার মূর্তি বা প্রতিকৃতি মনে করে না (নাউযুবিল্লাহ), একে কল্যাণ-অকল্যাণের মালিকও মনে করে না, এর কাছে কোন সাহায্যও চায় না। শুধুমাত্র নবী(ﷺ) এর সুন্নাত হিসাবে মুসলিমরা হজের সময় একে চুম্বন করে। অথচ পৌত্তলিকরা যেসব বস্তুর পুজা করে সেগুলো হয় তাদের উপাস্য দেবতার মূর্তি নয়তো তারা সেগুলোর কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করে। কাজেই হাজরে আসওয়াদকে পৌত্তলিকতার সাথে মেলানো অত্যন্ত অযৌক্তিক একটি অভিযোগ।
উমর (রা) থেকে বর্ণিত যে, তিনি হাজরে আসওয়াদের কাছে এসে তা চুম্বন করে বললেন, আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একখানা পাথর মাত্র, তুমি কারো কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পার না। নবী(ﷺ)কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে কখনো আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না।
[সহীহ বুখারী ; হাদিস নং ১৫০২; লিঙ্কঃ https://goo.gl/BAcnhA ]
হাজরে আসওয়াদের উৎস কী? এটি কা’বা ঘরে কেন রয়েছে?
কোন কোন বর্ণনা অনুযায়ী ফেরেশতা জিব্রাঈল(আ) হাজরে আসওয়াদ কা’বার স্থানটিতে রাখেন এবং ঐ স্থানের উপরেই ইব্রাহিম(আ) কা’বা নির্মাণ করেন। [৮]
এক্ষেত্রে আগ্রহোদ্দীপক ব্যাপার হচ্ছে, বাইবেল অনুযায়ী বনী ইস্রাঈল জাতির কিবলা বাইতুল মুকাদ্দাসের(Temple Mount/মহামন্দির) গোড়াপত্তনের সাথেও একটি পাথর জড়িয়ে আছে! বাইবেল অনুযায়ী – ইস্রায়েল জাতির পিতা যাকোব {ইয়া’কুব(আ)/Jacob} একটি বিশেষ পাথরের উপরে বাইতুল মুকাদ্দাসের ভিত্তি স্থাপন করেন! শুধু তাই না, যাকোব {ইয়া’কুব(আ)} সেই পাথরটিকে স্তম্ভের মত করে দাঁড় করান এবং ভক্তিভরে তার উপর তেল ঢালেন!
এই ঘটনার রেফারেন্সঃ বাইবেল, আদিপুস্তক(Genesis/পয়দায়েশ) ২৮:১০-২২।বাইবেল থেকে সংশ্লিষ্ট অংশ পড়তে পারেন এই লিঙ্ক https://goo.gl/wk5Evv অথবা এই লিঙ্ক https://goo.gl/R9sSX2 থেকে।
খ্রিষ্টান মিশনারীরা কা’বা ঘরের হাজরে আসওয়াদের ব্যাপারে প্রশ্ন তোলেন অথচ তাদের নিজ ধর্মগ্রন্থে Temple Mount বা বাইতুল মুকাদ্দাসের গোড়াপত্তনের সাথে একটি পাথর জড়িয়ে আছে সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিরব থাকেন। যাকোব{ইয়া’কুব(আ)}কে তারাও নবী বলে মানেন। মুসলিমদের হাজরে আসওয়াদে চুম্বন করা তাদের কাছে ‘পৌত্তলিক আচরণ’ হয়ে যায়, কিন্তু যাকোব কর্তৃক Temple Mount এর পাথরে ভক্তিভরে তেল ঢালা তাদের কাছে কোন পৌত্তলিকতা হয় না।
কেন এই দ্বিমুখী আচরণ?
বাংলার নাস্তিক মুক্তমনাদেরকেও কখনো দেখিনি এই ব্যাপার নিয়ে প্রশ্ন তুলতে। অথচ মুসলিমদের বিরুদ্ধে সব সময়েই তাদেরকে সরব দেখা যায়।
সেই পাথরটির(হিব্রুতেঃ Even Ha-Shetiya) উপরেই বনী ইস্রাঈলের নবীগণের বাইতুল মুকাদ্দাস মসজিদ(Temple Mount) ছিল এবং হাজার হাজার বছর ধরে সেটা ইহুদিদের কিবলা। পাথরটি আজও সে স্থানে আছে। সেই পাথরের স্থানে ফিলিস্তিনে বাইতুল মুকাদ্দাস এরিয়ার ভেতরে বর্তমানে সোনালী গম্বুজের কুব্বাতুস সাখরা(Dome of Rock) মসজিদ রয়েছে। [৯]
হজকে ব্যাঙ্গ করে খ্রিষ্টান মিশনারীরা মুসলিমদেরকে পাথরের উপাসক(!) বা ‘উল্কা উপাসক’ বলে অভিহীত করে [১০] অথচ খোদ বাইবেলে বলা আছে যে ঈশ্বর একজন পাথর এবং বাইবেলে বহু জায়গায় “ঈশ্বর-পাথরের” বন্দনাগীত করা হয়েছে! এমনকি বাইবেলে এ কথাও বলা হয়েছেঃ “যাবতীয় প্রশংসা পাথরের”!!
অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে? তাহলে দেখুনঃ বাইবেল এর --- ২ শামুয়েল(2 Samuel) ২২:২-৩, ২২:৪৭; গীতসংহিতা(সাম সঙ্গীত/জবুর শরীফ/Psalms) ১৮:২, ১৮:৪৬, ১৯:১৪, ২৮:১, ৩১:২-৩, ৪২:৯, ৬২:২, ৬, ৭১:৩, ৯২:১৫, ১৪৪:১। প্রকৃতপক্ষে বাইবেল জুড়ে “পাথর-ঈশ্বরের” এত পরিমাণে বন্দনাগীত করা হয়েছে যে এর রেফারেন্স খুঁজে পাওয়া খুব সহজ। ইংরেজি বাইবেলের পিডিএফের সার্চ অপশনে গিয়ে ‘my rock’ লিখে সার্চ দিলে বহুবার “পাথর ঈশ্বরের” অথবা শুধু পাথরের প্রচুর বন্দনা পাওয়া যাবে। খ্রিষ্টান মিশনারীরা মুসলিমদেরকে ‘পাথরের উপাসক’ বলে মিথ্যা অপবাদ দেয় অথচ তাদের নিজ ধর্মগ্রন্থের অবস্থা এইরূপ।
তথ্যসূত্রঃ
1️⃣“Questions about the Black Stone” – islamqa(Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid)
https://islamqa.info/en/45643
2️⃣■ ‘দারসে তিরমিযি’, মুফতি তাকি উসমানী; খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৭
‘দারসে তিরমিযি’র লিঙ্কঃ https://archive.org/…/Dars-e-Tirmidhi-3Volumes-ByShaykhMuft…
■ “What is the story behind the origin of the Black Stone, Hajre Aswat?When was it place by the Kaaba, and by whom? Is it true that it has turned black absorbing the sins of Muslims?” (islamqa Hanafi)
https://goo.gl/CSm8sC
3️⃣■ “Foundation Stone” (Wikipedia: The Free Encyclopedia)
https://en.wikipedia.org/wiki/Foundation_Stone…
■“The Temple Institute: A CALL TO REMEMBER”
http://www.templeinstitute.org/a-call-to-remember.htm