সর্বশেষ

2/recent/ticker-posts

কাঁকড়া খাওয়া হালাল এবং তা চাষ করা বা রপ্তানী করা বৈধ

কাঁকড়া খাওয়া হালাল এবং তা চাষ করা বা রপ্তানী করা বৈধ
▪▪▪▪▪▪▪▪▪▪▪
প্রশ্ন: কাঁকড়া খাওয়ার বিধান কি? এটি কি হালাল, হারাম নাকি মাকরুহ? কাঁকড়া চাষ করে বিদেশে রফতানি করাও কি হারাম হবে? ব্যাখ্যা সহ জানালে খুব উপকৃত হব।

উত্তর:
ইসলামের দৃষ্টিতে ক্ষতিকর ও হিংস্র প্রাণী ব্যতীত সমস্ত সামুদ্রিক প্রাণী-ই খাওয়া হালাল। সুতরাং এ দৃষ্টিতে কাঁকড়াও হালাল প্রাণীর অন্তর্ভূক্ত।
🔷 আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
..أُحِلَّ لَكُمْ صَيْدُ الْبَحْرِ وَطَعَامُهُ
“তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও সুমুদ্রের খাদ্য হালাল করা হয়েছে তোমাদের উপকারার্থে”। (সূরা মায়িদাহ: ৯৬)
🔷 আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন: قُلْ لَا أَجِدُ فِي مَا أُوحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا إِلَّا أَنْ يَكُونَ مَيْتَةً أَوْ دَمًا مَسْفُوحًا أَوْ لَحْمَ خِنْزِيرٍ فَإِنَّهُ رِجْسٌ
“আপনি বলে দিনঃ যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে, তন্মধ্যে আমি কোন হারাম খাদ্য পাই না কোন ভক্ষণকারীর জন্যে, যা সে ভক্ষণ করে; কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের মাংস এটা অপবিত্র অথবা অবৈধ। (সূরা আনআম:৫)
🔷 রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাহাবী শুরাইহ বলেন; পানিতে বসবাসকারী সমস্ত প্রাণী খাওয়া বৈধ।” (বুখারী ৫/২০৯১)
🔷 রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেন:« هو الطهور ماؤه الحل ميتته »
“নদী বা সাগরের পানি পবিত্র, এবং পানিতে বসবাসকারী মৃতপ্রাণীও খাওয়া বৈধ।”

প্রমাণঃ-
حدثنا قتيبة، عن مالك، ح وحدثنا الأنصاري، إسحاق بن موسى حدثنا معن، حدثنا مالك، عن صفوان بن سليم، عن سعيد بن سلمة، من آل ابن الأزرق أن المغيرة بن أبي بردة، وهو من بني عبد الدار أخبره أنه، سمع أبا هريرة، يقول سأل رجل رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال يا رسول الله إنا نركب البحر ونحمل معنا القليل من الماء فإن توضأنا به عطشنا أفنتوضأ من ماء البحر فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ هو الطهور ماؤه الحل ميتته ‏"‏ ‏.‏ قال وفي الباب عن جابر والفراسي ‏.‏ قال أبو عيسى هذا حديث حسن صحيح ‏.‏ وهو قول أكثر الفقهاء من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم منهم أبو بكر وعمر وابن عباس لم يروا بأسا بماء البحر ‏.‏ وقد كره بعض أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم الوضوء بماء البحر منهم ابن عمر وعبد الله بن عمرو ‏.‏ وقال عبد الله بن عمرو هو نار ‏.‏

মুগীরা ইবনু আবী বুরদা থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি আবু হুরাইরা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট প্রশ্ন করল , হে আল্লাহর রাসূল! আমরা সমুদ্র পথে আসা-যাওয়া করি এবং সাথে করে সামান্য মিঠা পানি নেই। যদি আমরা তা দ্বারা ওযূ করি তাহলে পিপাসার্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ ক্ষেত্রে আমরা কি সমুদ্রের পানি দিয়ে ওযূ করতে পারি? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “তার পানি পবিত্র এবং তার মৃত জীব হালাল”।

সহীহ। ইবনু মাজাহ (৩৮৬-৩৮৮)
 

জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৬৯
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
এছাড়াও,,,
حدثنا عبد الله بن مسلمة، عن مالك، عن صفوان بن سليم، عن سعيد بن سلمة، - من آل ابن الأزرق - أن المغيرة بن أبي بردة، - وهو من بني عبد الدار - أخبره أنه، سمع أبا هريرة، يقول سأل رجل النبي صلى الله عليه وسلم فقال يا رسول الله إنا نركب البحر ونحمل معنا القليل من الماء فإن توضأنا به عطشنا أفنتوضأ بماء البحر فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ هو الطهور ماؤه الحل ميتته ‏"‏ ‏.‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! আমরা সমুদ্রে যাত্রা করি এওং পান করার জন্য সামান্য (মিঠা) পানি বহন করি। আমরা যদি তা দিয়ে উযু করি তাহলে পিপাসায় থাকত হয়। সুতরাং এরূপ অবস্থায় আমরা সমুদ্রের পানি দিয়ে উযু করব কি? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সমুদ্রের পানি পবিত্র এবং তার মৃত প্রানী (খাওয়া) হালাল।


ফুটনোটঃ
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ
১। সমুদ্রের পানি পাক।
২। সমুদ্রের প্রানী, যা কেবল সমুদ্রেই বসবাস করে (স্থলে নয়) তা হালাল।
৩। কোন মুফতু কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হলে তিনি যদি বুঝতে পারেন যে, প্রশ্নকারীকে উক্ত মাসআলাহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দিকও অবহিত করার প্রয়োজন আছে, তবে তাঁর জন্য মুস্তাহাব হচ্ছে প্রশ্নকারীকে তৎসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়াদিও জানিয়ে দেয়া। কেননা প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত তথ্য সংযোজনে পরিপূর্ণ উপকার পাওয়া যায়। যেমন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণীঃ ‘‘এবং সমুদ্রের মৃত হালাল।’’ এ অতিরিক্ত সংযোজন শিকারীদের জন্য উপকারী। আর প্রশ্নকর্তাও তাদের একজন ছিলেন। এটা ফাতাইয়াহর উপকারী দিক।

সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৮৩
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
হাদীসটি আলবানী (রহ.) ইরওয়াতে সহীহ বলেছেন: ১/২১)
🔷 রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা যা হালাল করেছেন, তা হালাল, আর যা হারাম করেছেন, তা হারাম, আর যে বিষয়ে নীরবতা অবলম্বন করেছেন, তা মাফ করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে মাফকৃত বস্তু গ্রহণ কর। কেননা আল্লাহ কোন বিষয়ে ভুলেন না। অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই আয়াত তেলাওয়াত করেন। আর তোমার রব্ব কিছুই ভুলেন না।” (সূরা মারইয়ম : ৬৪)
🔹 তাছাড়া ইসলামের একটি অন্যতম মূলনীতি হল, দুনিয়াবী সকল বস্তুই বৈধ যতক্ষণ না ইসলামে সে ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যায়। আর কাঁকড়া খাওয়ার ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা কুরআন-সুন্নায় নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যায় না।

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথা প্রতিয়মান হল যে, কাঁকড়া খাওয়া বৈধতার ব্যাপারে কোন বাধা নেই। মাকরূহ বলাও প্রমাণ সাপেক্ষ নয়। তবে কারও যদি তা খেতে রুচি না হয় তবে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু এটাকে হারাম বা মাকরূহ বলার কোন যৗক্তিকতা নাই।
কাঁকড়া চাষ ও রপ্তানী করা
ইসলামের দৃষ্টিতে যে জিনিস খাওয়া হালাল তার চাষ, ব্যবসা বা তা রপ্তানী করাও বৈধ। সুতরাং কাঁকড়া খাওয়া যেহেতু হালাল সেহেতু তা চাষ করা বা বিদেশে রপ্তানী করাও বৈধ।আল্লাহু আলাম।
--------------------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

সম্পদনা জিয়ানুর রহমান