রমাযান মাসে কিছু বিদায়াত এবং কুসংস্কার
কোন কোন অঞ্চলে বা সমাজে রমাযান মাসে এক এক প্রকার বিদআত প্রচলিত হয়ে পড়েছে। সে সকল বিদআত থেকে সাবধান করার জন্য এখানে কিছু বিদআত উল্লেখ করা সঙ্গত বলে মনে করছি।
১। রোযার নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা।
২। ‘‘নাওয়াইতু আন আসূমা গাদাম মিন শাহরি রামাযান’’ বলে বাঁধা নিয়ত বলা।
৩। রমাযানের রাত্রে কুরআন পড়ার জন্য ভাড়াটিয়া কারী ভাড়া করা।[1]
৪। মাইকে এক রাত্রে কুরআন খতম (শবীনা পাঠ) করা।
৫। মীলাদ বা মওলূদ পাঠ করা এবং তার শেষে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর শানে দরূদ পাঠ করার জন্য উঠে দাঁড়িয়ে মনগড়া দরূদ পড়া। সেই সাথে মুনাজাতে আমলের সওয়াব আম্বিয়া ও আওলিয়া বা কোন আত্মীয়র রূহের জন্য বখশে দেওয়া।[2]
৬। পূর্বসতর্কতামূলক কর্ম ভেবে ফজর হওয়ার ৫/১০ মিনিট আগে খাওয়া বন্ধ করা এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার ৩/৫ মিনিট পরে ইফতার করা।[3]
৭। সেহরী ও ইফতারের সময় জানানোর উদ্দেশ্যে তোপ দাগা।[4]
৮। সেহরী খেতে জাগানোর উদ্দেশ্যে আযানের পরিবর্তে কুরআন ও গজল পাঠ করা।
৯। মসজিদের মিনারে সেহরী ও ইফতারের জন্য নির্দিষ্ট লাইট ব্যবহার করা। যেমন, সেহরীর সময় শেষ হলে লাল বাতি এবং ইফতারীর সময় শুরু হলে সবুজ বাতি জ্বালিয়ে দেওয়া।[5]
১০। সেহরী না খেয়ে অধিক সওয়াবের আশা করা।[6]
১১। কুরআন খতম হওয়ার পর বাকী রাতে তারাবীহ না পড়া।[7]
১২। প্রথমে পানি না খেয়ে আদা ও লবণ দিয়ে ইফতারী করাকে ভালো মনে করা।
১৩। ইফতারের আগে হাত তুলে জামাআতী মুনাজাত করা।
১৪। ইফতারের সময় ‘‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা বিরাহমাতিকাল্লাতী অসিআত কুল্লা শাইইন আন তাগফিরা লী’’ বলে দুআ করা।[8]
১৫। ইফতারের সময় ‘‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু, অবিকা আ-মানতু, অআলাইকা তাওয়াক্কালতু, অআলা রিযক্বিকা আফতারতু, বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামুর রা-হিমীন’’ বলে দুআ করা।
১৬। বিশেষ করে রজব, শাবান ও রমাযানে মৃতদের কল্যাণের উদ্দেশ্যে দান-খয়রাত করা।[9]
১৭। সারা বছর নামায না পড়ে এবং তার সংকল্প না নিয়ে কেবল রমাযান মাসে রোযা রেখে (ফরয, সুন্নত ও নফল) নামায পড়া ও তসবীহ আওড়ানো।[10]
১৮। শবেকদরের ১০০ বা ১০০০ রাকআত নামায পড়া।
১৯। শবেকদরে বিশেষ করে ‘সালাতুত তাসবীহ’ নামায পড়া।
২০। কেবল ২৭শের রাতকে শবেকদর মনে করা এবং কেবল সেই রাত জাগরণ করা ও বাকী রাত না জাগা।
২১। বিশেষ করে শবেকদরের রাতে উমরাহ করা।[11]
২২। বিশেষ করে ২৭শের রাত্রি জাগরণ করে জামাআতী যিক্র করা, নানা রকমের পানাহার সামগ্রী তৈরী বা ক্রয় করে পান-ভোজন করা, মিষ্টি বিতরণ করা ও ওয়ায-মাহফিল করা।[12]
২৩। নির্দিষ্ট কোন রাতে একাকী বা জামাআতী নির্দিষ্ট যিক্র পড়া।[13]
২৪। সাতাশের রাত্রে লোকেদের মিষ্টি কিনতে ভিঁড় করা, (তা খাওয়া ও দান করা)।[14]
২৫। ঈদের রাত্রি জাগরণ করে ইবাদত করা। পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে যে, এ ব্যাপারে বর্ণিত হাদীসটি জাল।[15]
২৬। রমাযানের শেষ জুমআহ (বিদায়ী জুমআহ) বিশেষ উদ্দীপনার সাথে পালন করা।
২৭। মা-বাপের নামে বিশেষ ভোজ-অনুষ্ঠান করা।[16]
২৮। শাবানের ১৫ তারীখের রাতে নামায ও দিনে রোযা রাখা।[17] বলা বাহুল্য এ ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস নেই।
সবশেষে এ কথা সকল মুসলিমের জেনে রাখা উচিত যে, নিশ্চয় উত্তম বাণী আল্লাহর গ্রন্থ এবং উত্তম পথ-নির্দেশ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) -এর পথ-নির্দেশ। সব চেয়ে মন্দ কর্ম দ্বীনের অভিনব রচিত কর্মসমূহ। এবং প্রত্যেক নব কর্মই বিদআত, আর প্রত্যেক বিদআত্ই ভ্রষ্টতা।’’ ‘‘এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার স্থান দোযখে।’’[18]
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি কোন এমন কাজ করে যার উপর আমাদের কোন নির্দেশ নেই তা প্রত্যাখ্যাত।’’[19] তিনি আরো বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমাদের এ (দ্বীন) বিষয়ে কিছু এমন কর্ম উদ্ভাবন করবে যা ওর পর্যায়ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।’’[20]
[1] (মু’জামুল বিদা’ ২৬৮পৃঃ, দুরুসু রামাযান অকাফাত লিস্-সায়েমীন ৪০পৃঃ) [2] (আহকামুল জানায়েয, আলবানী ২৬০-২৬১পৃঃ) [3] (ফাতহুল বারী ৪/১৯৯, তামামুল মিন্নাহ, আল্লামা আলবানী ৪১৫পৃঃ, মু’জামুল বিদা’ ২৬৮, ৩৬১পৃঃ) [4] (মু’জামুল বিদা’ ২৬৮পৃঃ) [5] (ফাতহুল বারী ৪/১৯৯, মু’জামুল বিদা’ ৩৬১পৃঃ) [6] (মু’জামুল বিদা’ ৩৬১পৃঃ) [7] (ঐ ২৬৮পৃঃ) [8] (এ ব্যাপারে আসারটি যয়ীফ। দ্রঃ যয়ীফ ইবনে মাজাহ, আলবানী ৩৮৭, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৯২১নং, আর ইফতারীর বিবরণে আলোচিত হয়েছে যে, ‘‘যাহাবায যামাউ---’’ ছাড়া ইফতারীর জন্য অন্য কোন দুআ বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নয়।) [9] (আহকামুল জানায়েয, আলবানী ২৫৭নং বিদআত, মু’জামুল বিদা’ ২৬৯পৃঃ) [10] (মু’জামুল বিদা’ ২৭০পৃঃ) [11] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৪৯৬, ৪৯৭) [12] (মাজাল্লাতুদ দা’ওয়া, ইবনে বায ১৬৭৪/১৪ রমাযান ১৪১৯হিঃ) [13] (ঐ) [14] (মু’জামুল বিদা’ ২৬৯পৃঃ) [15] (দ্রঃ সিলসিলাহ যায়ীফাহ, আলবানী ৫২০, ৫২১, ৫২২নং, মু’জামুল বিদা’ ৩৩২পৃঃ, দুরুসু রামাযান অকাফাত লিস্-সায়েমীন ১০০পৃঃ) [16] (ফাসিঃ মুসনিদ ১০৪পৃঃ, তাযকীরু ইবাদির রাহমান, ফীমা অরাদা বিসিয়ামি শাহরি রামাযান ৫০পৃঃ) [17] (মু’জামুল বিদা’ ৩৬২পৃঃ) [18] (মুসলিম, নাসাঈ) [19] (মুসলিম) [20] (বুখারী, মুসলিম)
Collected
আরও পড়ুন
"রমজান মাসের
কতিপয় বিদআত ও কুসংস্কার"...
রামাযান মাসে সমাজে একধিক বিদ্আত
প্রচলিত রয়েছে। যেগুলো এক জায়গায় এক
রোকম, অন্য জায়গায় আর এক রোকম। এক
দেশের লোকাচার অন্য দেশ থেকে ভিন্ন।
ইসলাম এ বিদাত এর কোন স্থান নেই।নিম্নে
আমরা আমাদের দেশে প্রচলিত এ সংক্রান্ত
কিছু বিদআতী কাজের চিত্র তুলে ধরব।
১) রামাযানের নতুন চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে
বিদ্আত:
রামাযানের নতুন চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে
দেখা যায়, কিছু লোক চাঁদের দিকে হাত উঁচু
করে শাহাদাত আঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করে
থাকে। এটা বিদআত। কেননা, কুরআন-
সুন্নাহতে এর কোন ভিত্তি নাই।
তবে নতুন চাঁদ দেখলে নিম্নোক্ত দুআটি পাঠ
করা সুন্নাত:
আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি
ওয়াল ঈমানি ওয়াস সালামাতি ওয়াল
ইসলাম। রাব্বী ওয়া রাব্বুকাল্লাহ”।
অর্থ: হে আল্লাহ, এ চাঁদকে আমাদের মাঝে
বরকত, ঈমান, শান্তি-নিরাপত্ত
সাতে উদিত কর। আমার ও তোমার রব
আল্লাহ।”
২) সেহরী সংক্রান্ত বিদআত:
দেখা যায়, রামাযান মাসে শেষ রাতে
মুআযযিনগণ মাইকে উচ্চ আওয়াযে কুরআন
তেলাওয়াত, গযল, ইসলামী সঙ্গীত ইত্যাদি
গাওয়া শুরু করে। অথবা টেপ রেকর্ডার
চালিয়ে বক্তাদের ওয়াজ, গজল বাজাতে
থাকে। সেই সাথে চলতে থাকে ভায়েরা
আমার, বনেরা আমার, উঠুন, সাহরীর সময়
হয়েছে, রান্না-বান্না করুন, খাওয়া-দাওয়া
করুন” ইত্যাদি বলে অনবরত ডাকাডাকি।
অথবা কোথাওবা কিছুক্ষণ পরপর উঁচু আওয়াজে
হুইশেল বাজানো হয়।
এর থেকে আরো আজব কিছু আচরণ দেখা যায়।
যেমন, এলাকার কিছু যুবক রামাযানের শেষ
রাতে মাইক নিয়ে এসে সম্মিলিত কন্ঠে
গযল বা কাওয়ালী গেয়ে মানুষের বাড়ির
দুআরে দুআরে গিয়ে চাঁদা আদায় করে। অথবা
মাইক বাজিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে
থাকে। এ ছাড়াও এলাকা ভেদে বিভিন্ন
বেদআতী কার্যক্রম দেখা যায়।
আমাদের জানা উচিত, শেষ রাতে মহান
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা নিচের
আসমানে নেমে আসেন। এটা দুআ কবুলের
সময়। আল্লাহ তাআলার নিকট এ সময় কেউ দুআ
করলে তিনি তা কবুল করেন। মুমিন বান্দাগণ
এ সময় তাহাজ্জুদের নামায পড়েন, কুরআন
তেলাওয়াত করেন, মহান আল্লাহ তাআলা
তায়ালা দরবারে রোনাযারী করে থাকেন।
সুতরাং এ সময় মাইক বাজিয়ে, গযল গেয়ে
বা চাঁদা তুলে এ মূল্যবান সময়ে ইবাদতে
বিঘ্নিত করা নিঃসন্দেহে গুনাহর কাজ।
এতে মানুষের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটানো হয়। যার
ফলে অনেকের সেহরী এমনকি ফজরের
নামায পর্যন্ত ছুটে যায়। এই কারণে অনেক
রোযাদারগণ সেহরীর শেষ সময় পর্যন্ত বিলম্ব
না করে আগে ভাগে সেহরী শেষ করে দেয়।
এ সবগুলোই গুনাহের কাজ।
৩) সেহরী খাওয়ার সময় মুখে নিয়ত উচ্চারণ
করা বিদআত:
সেহরী খাওয়া একটি ইবাদত। আর যে কোন
ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য নিয়ত অপরিহার্য
শর্ত। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।” (সহীহ
বুখারী) তাই রোযা রাখার জন্য নিয়ত থাকা
অপরিহার্য। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“যে রাতে (ফজরের আগে) রোযা রাখার
নিয়ত করে নি তার রোযা হবে না।” (সুনান
নাসাঈ, আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে
সহীহ বলেছেন।)
নিয়ত কাকে বলে? নিয়ত অর্থ: ইমাম নববী
(রাহ:) বলেন: মনের মধ্যে কোন কাজের ইচ্ছা
করা, সিদ্ধান্ত নেয়া। সুতরাং রোযা
রাখার কথা মনে মধ্যে সক্রিয় থাকাই
নিয়তের জন্য যথেষ্ট। ইসলামী শরীয়তে কোন
ইবাদতের নিয়ত মুখ দিয়ে উচ্চারণের কথা
আদৌ প্রমণিত নয়।
অথচ আশ্চর্য জনক হলেও সত্য যে, আমাদের
দেশে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে ওযুর নিয়ত,
নামাযের নিয়ত, সেহরী খাওয়ার নিয়ত
ইত্যাদি চর্চা করা হয়। নামায শিক্ষা,
রোযার মাসায়েল শিক্ষা ইত্যাদি বইতে এ
সব নিয়ত আরবীতে অথবা বাংলা অনুবাদ
করে পড়ার জন্য জনগণকে শিক্ষা দেয়া হয়।
কিন্ত আমাদের একথা ভুলে গেলে চলবে না
যে, দ্বীনের মধ্যে এভাবে নতুন নতুন
সংযোজনের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ
ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন। তিনি বলেন:
“যে আমাদের এই দ্বীনে এমন নতুন কিছু তৈরি
করল যা তার অন্তর্ভূক্ত নয় তা
পরিত্যাজ্য।” (বুখারী ও মুসলিম)
তাই মুসলমানদের কর্তব্য হল, দলীল-প্রমাণ
ছাড়া গদবাধা নিয়ত সহ সব ধরণের বিদআতী
কার্যক্রম পরিত্যাগ করা এবং সুন্নতকে
শক্তভাবে ধারণ করা। আল্লাহ আমাদের
সহায় হোন।
৪) বিলম্বে ইফতার করা:
কিছু রোযাদারকে দেখা যায়, স্পষ্টভাবে
সূর্য ডুবে যাওয়ার পরও অতি সর্তকতার
কারণে আরও কিছুক্ষণ পরে ইফতার করে। এটি
স্পষ্ট সুন্নত বিরোধীতা। কারণ, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন :
"মানুষ ততদিন কল্যাণে উপর থাকবে যতদিন
তাড়াতাড়ি ইফতার করবে।” (বুখারী ও
মুসলিম)
৫) তারাবীহ নামায সংক্রান্ত বিদআত:
অনেক মসজিদে দেখা যায়, তারাবীহর
নামাযের প্রতি দু বা চার রাকাত শেষে
মুসল্লীগণ উঁচু আওয়াজে সুবাহানা যিল
জাবারূতে ওয়াল মালাকূতে…” দুআটি পাঠ
করে থাকে। অথচ এটা স্পষ্ট বিদ্আত।
অনুরূপভাবে অন্য কোন দুআ এক সাথে উঁচু
আওয়াজে পাঠ করাও বিদআত। কারণ, এ
ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম থেকে কোন সহীহ হাদীস নেই।
বরং নামায শেষে যে সকল দুআ সহীহ
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে সেগুলো পাঠ করা
সুন্নত। যেমন, তিনবার আস্তাগফিরুল্লাহ
একবার আল্লাহুম্মা আন্তাস সালাম
ওয়ামিন্কাস সালাম, তাবারাক্তা ইয়া যাল
জালালি ওয়াল ইকারাম” ইত্যাদি।
৬) তারাবীর নামাযে খুব তাড়াতাড়ি কুরআন
তেলাওয়াত করা বা তাড়াহুড়া করে নামায
পড়া।
অনেক মসজিদে রামাযানে তারাবীর
নামাযে খুব তাড়াতাড়ি কুরআন তেলাওয়াত
করা বা তাড়াহুড়া করে নামায শেষ করা।
যার কারণে তেলাওয়াত ঠিক মত বুঝাও যায়
না। নামাযে ঠিকমত দুআ-যিকিরও পাঠ করা
যায় না। এটা নি:সন্দেহে সুন্নত পরিপন্থী।
কেননা, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এর রাতের কিয়ামুল লাইল হত
অনেক দীর্ঘ এবং ধীরস্থির।
৭) ইতিকাফ সংক্রান্ত ভুল ধারণা:
আমাদের দেশে মনে করা হয় যে, সমাজের
পক্ষ থেকে এক ব্যক্তিকে অবশ্যই ইতিকাফে
বসতে হবে তা না হলে সবাই গুনাহগার হবে।
কিন্তু এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। কারণ,
ইতিকাফ হল একটি সুন্নত ইবাদাত। যে কোন
মুসলমানই তা পালন করতে পারে। যে ব্যক্তি
তা পালন করবে সে অগণিত সোওয়াবের
অধিকারী হবে। সবার পক্ষ থেকে একজনকে
ইতিকাফে বসতেই হবে এমন কোন কথা
শরীয়তে নেই।
৮) জুমুআতুল বিদা পালনের বিদআত:
আমাদের দেশে দেখা যায়, রামাযানের
শেষ শুক্রবারে জুমুআতুল বিদা পালন করা হয়।
এ উপলক্ষ্যে জুমুআর নামাযে প্রচুর ভিড়
পরিলক্ষীত হয়। অথচ কুরআন সুন্নায় এ
ব্যাপারে কোন ধারণা পাওয়া যায় না।
আমাদের কর্তব্য প্রত্যেক জুমুআকে গুরুত্ব
দেয়া। শেষ জুমুআর বিশেষ কোন ফযীলত
আছে বলে কোন প্রমাণ নাই।
৯) ফিতরা প্রদানের ক্ষেত্রে সুন্নাতের
বরখেলাপ:
খাদ্য দ্রব্য না দিয়ে টাকা দিয়ে অথবা
কাপড় কিনে ফিতরা দেয়া সুন্নতের
বরখেলাপ। কারণ, হাদীসে ফিতরা হিসেবে
খাদ্য দ্রব্য প্রদান করার কথাই বর্ণিত হয়েছে
। যেমন ইবনে উমর (রা) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন
"রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
মুসলমানদের প্রত্যেক স্বাধীন, দাস, পুরুষ
অথবা নারী সকলের উপর এক সা (প্রায় আড়াই
কেজি) পরিমান খেজুর অথবা জব যাকাতুল
ফিতর হিসেবে আবশ্যক করেছেন।” (বুখারী ও
মুসলিম) এখানে খাদ্য দ্রব্যের কথা সুস্পষ্ট।
তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর যুগেও দিনার-দিরহামের প্রচলন
ছিল কিন্তু তিনি অথবা তার কোন সাহাবী
দিনার-দিরহাম দ্বারা ফিতরা আদায়
করেছেন বলে কোন প্রমাণ নাই। তাই সুন্নত
হল, আমাদের দেশের প্রধান খাদ্য দ্রব্য (যেমন
চাউল) দ্বারা ফিতরা আদায় করা।
আরেকটি বিষয় হল: হাদীসে বর্ণিত এক সা’র
পরিবর্তে আধা সা ফিতরা দেওয়াও সুন্নতের
বরখেলাপ। যেমনটি উপরোক্ত হাদীসে
স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হচ্ছে। যদিও আমাদের
সমাজে আধা সা ফিতরা দেয়ার মাসআলাই
দেয়া হয়।
আল্লাহ তাআলা সকল ক্ষেত্রে তার নবীর
সুন্নতকে যথাযথভাবে পালন করার তাওফীক
দান করুন এবং সকল বিদআত ও সুন্নত বিরোধী
কার্যকলাপ থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
[1] মুসনাদ আহমাদ, তালহা বিন ওবায়দুল্লাহ
থেকে বর্ণিত (৩/৪২০), তিরমিযী, অনুচ্ছেদ:
চাঁদ দেখার সময় কী বলবে? আল্লামা
আলবানী (রাহ:) বলেন: হাদীসটি সহীহ।
[2] বুখারী, অনুচ্ছেদ: ফজরের আগে আযান
দেয়া। মুসলিম: অনুচ্ছেদ: ফজর উদিত হলে
রোযা শুর হবে……।
Collected