সর্বশেষ

2/recent/ticker-posts

দোহা বা চাশতের সালাtত

'দোহা' (الضحى) আরবী শব্দ। এর অর্থ পূর্বাহ্ন বা দিনের প্রথম অংশ। (forenoon)। ফারসী ভাষায় একে চাশত বলা হয়। সূর্যোদয়ের পর থেকে মধ্যাহ্ন বা দুপুরের পূর্ব পর্যন্ত সময়কে আরবীতে দোহা বলা হয়।
.
সূর্যোদয়ের সময় সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ। সূর্য পরিপূর্ণরূপে উদিত হওয়ার পরে, অর্থাৎ সূর্যোদয়ের মুহূর্ত থেকে প্রায় ১৫/২০ মিনিট পরে দোহা বা চাশতের সালাতের সময় শুরু। এ সময় থেকে শুরু করে দ্বিপ্রহরের পূর্ব পর্যন্ত যে কোন সময়ে এ সালাত আদায় করা যায়। দোহার সলাত দুই রাকাত থেকে বার রাকাত পর্যন্ত আদায় করা যায়। তাহাজ্জুদ সালাতের পর গুরুত্বপূর্ণ অন্যতম মাসনূন নফল সলাত দোহার সালাত। বিভিন্ন হাদিসে এ সলাতকে 'সলাতুল আওয়াবীন' বা "আল্লাহওয়ালাগণের সালাত" বলে অভিহিত করা হয়েছে। আমাদের দেশে এ সালাত 'ইশারকের সালাত' বা 'সূর্যোদয়ের সালাত' বলে পরিচিত। অনেকেই সূর্যোদয়ের পরের সালাতকে 'ইশারকের সালাত' এবং পরবর্তী সময়ের সালাতকে দোহা বা চাশতের সালাত বলেন। হাদীস শরীফে 'সালাতুদ দোহা' বা দোহার সালাত শব্দটিই ব্যবহার করা হয়েছে; "ইশারকের সালাত" শব্দটি হাদীসে পাওয়া যায় না। এছাড়া হাদীসে ইশারক ও দোহার সালাতের মধ্যে কোনরূপ পার্থক্য করা হয়নি। সূর্যোদয় থেকে দুপুরের পূর্ব পর্যন্ত যে কোন সময় নফল সালাত আদায় করলে তা "সালাতুদ দোহন" বা দোহার সলাত বলে গণ্য হবে।
.
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাআতে আদায় করে, তারপর সূর্য উঠা পর্যন্ত বসে বসে আল্লাহ তা'আলার যিকর করে, তারপর দুই রাকাআত নামায আদায় করে- তার জন্য একটি হাজ্জ ও একটি উমরার সাওয়াব রয়েছে। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পূর্ণ, পূর্ণ, পূর্ণ (হাজ্জ ও উমরার সাওয়াব)। [1]
.
আবু উমামাহ ও উতবা ইবনু আবাদ (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: "যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামাআতে আদায় করে বসে থাকবে দোহার (চাশতের) সালাত আদায় করা পর্যন্ত, সে একটি পূর্ণ হজ্জ ও একটি পূর্ণ ওমরার মতো সাওয়াব পাবে।" হাদিসটি হাসান। [2]
.
এভাবে বসতে না পারলেও দোহার সালাত পৃথকভাবে আদায়ের জন্য হাদীসে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। যে কোন মুসলিম ফজরের জামাআতের পরে যিকর করুন বা না করুন, সুর্যোদয়ের পর থেকে দ্বিপ্রহরের মধ্যে দু/চার রাক'আত দোহার সালাত আদায় করলেই বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত অশেষ সাওয়াব ও রবকতের আশা করতে পারবেন।
.
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার বন্ধু আমাকে তিনটি বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন, প্রতি মাসে তিন দিন করে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করা এবং দু’রাকআত সালাতুদ দোহা এবং ঘুমানোর পূর্বে বিতর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা। [3]
.
আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন ভোরে উঠে, তখন তার প্রতিটি জোড়ার উপর একটি সাদাকা রয়েছে। প্রতি সূবহানাল্লাহ সাদাকা, প্রতি আলহামদুলিল্লাহ সাদাকা, প্রতি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ সাদাকা, প্রতি আল্লাহু আকবার সাদাকা, আমর বিল মা'রুফ (সৎকাজের আদেশ) সাদাকা, নাহী আনিল মুনকার (অসৎকাজের নিষেধ) সাদাকা। অবশ্য চাশতের সময় দু রাকআত সালাত আদায় করা এ সবের পক্ষ থেকে যথেষ্ট। [4]
.
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ একটি বাহিনী প্রেরণ করেন, তনরা খুব দ্রুত অনেক যুদ্ধলব্ধ মালামাল নিয়ে ফিরে আসেন। মানুসের তাদের অতি অল্প সময়ে এত বেশি সম্পদ লাভের বিষয়ে আলোচনা করতে লাগল। তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, "আমি কি তোমাতেরকে এর চেয়েও নিকটবর্তী, বেশি সম্পদ লাভ ও দ্রুত প্রত্যাবর্তনের অভিযানের কথা বলব না? যে ব্যক্তি অযু করল, এরপর দোহার সালাত আদায় করতে মসজিদে গেল, সে ব্যা্তির অভিযান অধিকতর নিকটবর্তী, লব্ধ সম্পদ বেশি এবং ফিরেও আসল তাড়াতাড়ি।" হাদীসটি সহীহ। [5]
.
উকবা ইবনু আমির (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, আল্লাহ ﷻ বলেন, "হে আদম সন্তান, তুমি তোমার দিনের প্রথম ভাগে চার রাক'আত সালাত আমাকে প্রদান করো, দিনের শেষ ভাগ পর্যন্ত তোমার জন্য আমি যথেষ্ট থাকব (আমার কাছে তাই যথেস্ট বলে বিবেচিত হবে)। হাদীসটি সহীহ। [6]
.
আবু দারদা (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, "যে ব্যক্তি দোহার (চাশতের) সালাত দু রাকআত আদায় করবে সে গাফিল বা অমনোযোগী বলে গণ্য হবে না। আর যে চার রাকআত আদায় করবে সে আবিদ বা বেশি বেশি বেশি ইবাদাতকারী বলে গণ্য হবে। আর যে ছয় রাকআত আদায় করবে সেদিনের জন্যে আর কিছু দরকার হবে না। আর যে আট রাকআত আদায় করবে, তাকে আল্লাহ 'কানিতীন' (উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন ওলী) বান্দাদের মধ্যে লিখে নিবেন। আর যে বার রাকআত আদায় করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে বাড়ি বানিয়ে রাখবেন।" হাইসামীর পর্যালোচনায় হাদীসটি হাসান। [7]
.
আবু হুরায়রাহ (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, "একমাত্র আউয়াব [আওয়াবীন] বা বেশি বেশি আল্লাহর যিকরকারী ও তাওবাকারী ছাড়া কেউ দোহার সালাত নিয়মিত পালন করে না। এটি সালাতুল আউয়াবীন বা আউয়াবদের সালাত। হাদীসটি হাসান। [8]
.
আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে তাঁর সন্তুষ্টি প্রাপ্ত " আওয়াবীন" বা প্রিয় যাকিরগণের অন্তর্ভুক্ত করে নিন। আ-মী-ন।
.
.
ফুটনোট সমূহঃ
___________
.
[1] সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪/ কিতাবুল জুমু’আ (জুমু’আর নামায) (كتاب الجمعة عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৫৮৬।
[2] আলবানী, সহীহুত তারগীব 1/260।
[3] সহীহ বুখারী (ইফাঃ) অধ্যায়ঃ ২৩/ সাওম বা রোজা (كتاب الصوم)
হাদিস নম্বরঃ ১৮৫৭
[4] সহীহ মুসলিম (ইফাঃ) অধ্যায়ঃ ৬/ মুসাফিরের সালাত ও কসর (كتاب صلاة المسافرين وقصره) হাদিস নম্বরঃ ১৫৪৪
[5] মুসনাদ আহমদ 2/175, হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ 2/235, আলবানী, সহীহুল তারগীব 1/349।
[6] মুসনাদ আহমদ 4/153, আলবানী, সহীহুল তারগীব 1/350।
[7] হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ 2/237, আলবানী, সহীহুল তারগীব 1/351।
[8] ইবনু খুযাইমা, আস সহীহ 2/228; আল মুসতাদরাক 1/459; আলবানী, সাহীহাহ 2/202
.
সংগৃহীত:
রাহে বেলায়াত ও রাসুলুল্লাহ ﷺ -এর যিকর ওযীফা
ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহিমাহুল্লাহ)
পৃষ্টা: 494-498 (সপ্তম সংস্করণ)
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
লেখাঃ আরিফুল ইসলাম কুতুবী (আল্লাহ্‌ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)


Post a Comment

0 Comments