খুবই গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট, তাই সবাইকে মনযোগ দিয়ে পড়ার ও বুঝার অনুরোধ রইলো।
রাসূল(সাঃ) কে অনুসরণের কিছু মূলনীতি নিয়ে আজকে আলোচনা করব। যেমন- আমরা যখন কোন ইবাদত করবো তা রাসূল(সাঃ) এর সাথে কোন কোন দিক থেকে মিলতে হবে তাই আজকের আলোচনার মূল বিষয়:
১.কারণে কারণে মিলতে থাকতে হবে। যেমন:কেউ যদি জিজ্ঞেস করে আপনি মাগরিবের ফরযে প্রথম দুই রাক'আতে ক্বিরাত শব্দ করে এবং তৃতীয় রাক'আতে ক্বিরাত চুপে চুপে পড়েন কেন? তখন নিশ্চই উত্তর হবে- রাসূল(সাঃ) মাগরিবের ফরযে প্রথম দুই রাক'আতে ক্বিরাত শব্দ করে পড়তেন এবং তৃতীয় রাক'আতে ক্বিরাত চুপে চুপে পড়তেন তাই আমিও প্রথম দুই রাক'আতে ক্বিরাত শব্দ করে পড়ি এবং তৃতীয় রাক'আতে চুপে চুপে পড়ি। এখানে আমার কারণের সাথে রাসূল(সাঃ)এর কার্যক্রমের মিল আছে অর্থাৎ কোন ইবাদতের ক্ষেত্রে দেখতে হবেউ আমার ইবাদতের কারণ রাসূল(সাঃ) এর আমলের সাথে মিলে কিনা।
২.একই প্রজাতি/উপকরণ হতে হবে- যেমন: রাসূল(সা:) উট, দুম্বা, গরু,ছাগল,খাশি,মহিষ এগুলো দিয়ে কোরবানি করার অনুমোদন দিয়েছেন। এখন যদি আমি বলি যে, না আমি বড় আকারের একটা মুরগী যেগুলো দেখতে অনেকটা খাশির সমান হয়ে যায় সেগুলো দিয়ে কোরবানি দিব। রাসূল(সাঃ) তো খাশি মুরগি দিয়ে কুরবানি করতে নিষেধ করে যাননি। তাহলে কি আমার কোরবানি হবে? হবে না কারণ আমার উপকরণ আর রাসূল(সাঃ) এর উপকরণ মিলেনি। অর্থাৎ উপকরণের দিক থেকেও রাসূল(সাঃ) এর সাথে মিলতে হবে।
৩. পরিমাণে পরিমাণে মিল থাকতে হবে- এখন মনে করেন আমি যোহরের ফরয সালাত চার রাকাত এর পরিবর্তে পাঁচ রাকাত পড়লাম,আর বললাম সালাত তো যত বেশি আদায় করব তত বেশি সওয়াব তাই এক রাক'আত বেশি আদায় করি,তাহলে কি আমার সওয়াব বেশি হবে নাকি আরও গুনাহ হবে? অবশ্যই গুনাহ হবে কারণ আমার সালাতের পরিমাণ রাসূল(সাঃ) এর সালাতের পরিমাণের সাথে মিলেনি। অর্থাৎ রাসূল(সাঃ) কে অনুসরণ করতে চাইলে তাঁর ইবাদতের সাথে আমাদের ইবাদতের পরিমাণও মিলতে হবে।
৪.পদ্ধতিতে মিল থাকতে হবে- যেমন মনে করেন আপনি ওযু করতে গিয়ে চিন্তা করলেন যেহেতু আগে জুতা খুলেছি তাহলে পা ই আগে ধুয়ে নেই, তারপর হাত ধুলেন, তারপর মুখ নাক না ধুয়েই পুরো মুখমণ্ডল ধৌত করলেন,এরপর পর্যায়ক্রমে বাকি অঙ্গগুলো ধৌত করলেন কিন্তু সিরিয়াল মেইনটেইন করে না, এলোমেলো ভাবে। আপনি কিন্তু সবগুলো অঙ্গই ধৌত করলেন কিন্তু আপনার অযু কি হবে? অবশ্যই হবে না, কারণ কি? কারণ একটাই আপনি সবগুলো অঙ্গ ধৌত করলেও আপনার পদ্ধতি রাসূল(সাঃ)এর পদ্ধতির সাথে মিলেনি। অর্থাৎ কোন ইবাদত করলেই হবে না তার পদ্ধতি রাসূল(সাঃ) এর পদ্ধতির সাথে মিলতে হবে।
৫.স্থানের সাথে স্থান মিলতে হবে- যেমন: রাসূল(সাঃ) তাওয়াফের সময় শুধু রুকনে ইয়ামিনী ও হাজরে আসওয়াদ সংলগ্ন কোণ স্পর্শ করতেন। এখন আপনি মনে করলেন আল্লাহর ঘর পুরোটাইতো বরকতময় অতএব আমি চার কোণই স্পর্শ করবো, রাসূল(সাঃ) তো চার কোণ স্পর্শ করতে নিষেধ করেনি। তাহলে কি আপনার তাওয়াফ হবে? হজ্ব হবে? কখনোই না। কারণ আপনার স্থান,রাসূল(সাঃ) এর স্থানের সাথে মিলেনি। এক্ষত্রেও তাঁর সাথে স্থানের সাথে স্থান মিলতে হবে। ভাল মনে করে বেশি করলে আর রাসূল(সাঃ) এর অনুসরণ হবে না।
৬. সময়ে সময়ে মিলতে হবে- যেমন: রাসূল(সাঃ) ৯ই জিলহজ্ব আরাফার ময়দানে অবস্থান করেছেন,কিন্তু আপনি মনে করলেন এই দিন আরাফার ময়দানে এত ভীড় থাকে যে হাটাই যায় না, এমনকি ওয়াশরুমেও যদি যাওয়ার প্রয়োজন হয় তবেও বিশাল সিরিয়ালে দাঁড়াতে হয়, তার চেয়ে আমি ৯ই জিলহজ্জ আরাফার ময়দানে অবস্থান না করে ১০ই জিলহজ্ব আরাফার ময়দানে অবস্থান করব কারণ ঐ সময় আরাফাহ একেবারেই ফাঁকা থাকবে। তাহলে আপনার হজ্ব কি হবে? হওয়ার প্রশ্নই আসে না। কারণ ১০ই জিলহজ্ব আরাফার ময়দানের যেই মর্যাদা আর আপনার বাড়ির পাশের মাঠেরও একই মর্যাদা। বছরে শুধুমাত্র একটা দিন এই জায়গার মর্যাদা পৃথিবীর অন্য সকল জায়গার চেয়ে বেশি। সেদিন এখানে এত দু'আ কবুল করা হয় যে, পৃথিবীর অন্য কোথাও করা হয়না। আপনার এই ভুল সময়ে অবস্থানের কারণে কি হজ্ব হবে? জ্বি না হবে না কারণ আপনার অবস্থান করার সময় আর রাসূল(সাঃ) এর অবস্থান করার সময় মিলেনি। অর্থাৎ ইবাদত বলে গণ্য হতে আপনার সময়ের সাথে রাসূল(সাঃ) এর সময়ও মিলতে হবে।
মোটামুটিভাবে এগুলোই হল রাসূল(সাঃ) কে অনুসরণ করার মূলনীতি। এর মধ্যে কোনটা যদি মিসিং হয়ে যায়, তখন তা আর ইবাদত থাকে না বিদ'আত পরিণত হয়ে যায়। তাই এই মূলনীতি গুলো সবসময় মাথায় রাখতে হবে।
এখন সহিহ হাদিস বিদ্বষী অনেকেই বলে, সহিহ হাদিসে তো আছে রাসূল(সাঃ) ১১ টা বিয়ে করেছেন, দাঁড়িয়ে প্রশ্রাব করেছেন তো তোমরা করনা কেন?
প্রথমত রাসূল(সাঃ) এর সব কাজ কি উম্মতের জন্য অনুসরণীয়? জ্বি না,কিছু বিধান আছে আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা এগুলো শুধু রাসূল(সাঃ)এর জন্যই নির্ধারণ করে দিয়েছেন যেমন: তাহাজ্জুদের সালাত রাসূল(সাঃ) এর জন্য ফরয ছিল কিন্তু আমাদের জন্য তা নফল। রাসূল(সাঃ) ঘুমালেও অযু ভাঙতো না কিন্তু আমরা ঘুমালেই অযু ভেঙে যাবে। তাই বলে কি আমরাও বলবো আমাদের জন্যও তাহাজ্জুদ আদায় করা ফরয বা আমরা ঘুমালেও অযু ভাঙবে না? জ্বি না, এগুলো শুধুই তার জন্য খাস ছিল, এগুলো উম্মতের জন্য অনুসরণীয় নয়।
*আর দাড়িয়ে প্রসাব করার ব্যাপারটা? মুহাদ্দিসগণ বলেন, রাসূল(সাঃ) তখন এমন একটা জায়গায় ছিলেন যেখানে বসে প্রস্রাব করলে কাপড়ে ময়লা লাগার সম্ভাবণা ছিল তাই তিঁনি দাঁড়িয়েই প্রস্রাব করেছিলেন, আবার কিছু কিছু বর্ণনায় এসেছে যে রাসূল(সাঃ) অসুস্থ্য ছিলেন তাই দাঁড়িয়ে প্রশ্রাব করেছেন। তাই, আমরাও যদি এমন কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হই বা অসুস্থতার কারণে বসতে না পারি তাহলে অবশ্যই দাঁড়িয়ে প্রশ্রাব করবো। আগেই বলা হয়েছে যে, রাসূল(সাঃ) কে অনুসরণ করতে গেলে কারণে কারণেও মিল থাকতে হবে। আশা করি ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়েছে।
0 Comments
Thanks for your comment