সমাজে প্রচলিত বিদআত
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেন-
“কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা বিশ্বাসী (মু’মিন) হতে পারবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচারভার তোমার উপর অর্পণ না করে, অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নেয়।” (সূরা ৪ নিসা: ৬৫)
আবূ নাজীহ আল-ইরবাদ ইবনু সারিয়াহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী বক্তৃতা শুনালেন যে, তাতে অন্তর ভীত হল এবং চোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে গেল। সুতরাং আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! এ যেন বিদায়ী ভাষণ মনে হচ্ছে। তাই আপনি আমাদেরকে অন্তিম উপদেশ দিন।’ তিনি বললেন, ‘‘আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি এবং (রাষ্ট্রনেতার) কথা শোনার ও তার আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি; যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো (আফ্রিকার কৃষ্ণকায় অধিবাসী) রাষ্ট্রনেতা হয়। (স্মরণ রাখ) তোমাদের মধ্যে যে আমার পর জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ বা অনৈক্য দেখবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নত ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদ্বীনের রীতিকে আঁকড়ে ধরবে এবং তা দাঁত দিয়ে মজবূত করে ধরে থাকবে। আর তোমরা দ্বীনে নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদ‘আত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।’’ (আবূ দাউদ ৪৬০৭, দারেমী ৯৫)
বিদ’আত বুঝা ও পরিত্যাগ করার জন্য উপরের এই হাদীসই যথেষ্ট। দ্বীনের ভিতর যা অনুপ্রবিষ্ট (দুনিয়াবিষয়ক নয়) সবই বাতিল ও পরিত্যাজ্য। আর বিদআ’তের পরিণতি জাহান্নাম।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে কোনো নতুন কিছু উদ্ভাবন করল—যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।’’ (বুখারী ২৬৯৭, মুসলিম ১৭১৮, আবূ দাউদ ৪৬০৬) মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘যে ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করল, যাতে আমাদের নির্দেশ নেই, তা বর্জনীয়।’’
প্রচলিত কিছু বিদআ’ত:
১. মীলাদ-কিয়াম: তরীকতপন্থী (সুন্নীয়তের দাবিদার) বিদআ’তীদের কাছে এটি খুবই জনপ্রিয় ও প্রসিদ্ধ। এই ধরণের ইবাদত রাসূলুল্লাহ সা. ও তার পরের তিনযুগেও প্রচলণ না থাকার পরেও দলীলবিহীনভাবে যুক্তি দিয়ে তারা আবেগের সাথে পালন করে আসছে।
২. জামায়াতবদ্ধ বা সম্মিলিত যিকির/জিকির:উত্তম যুগের দৃষ্টান্ত না থাকার পরও এই কাজটি পীরপন্থীদের মাঝে বহুল প্রচলিত। যিকরের শাব্দিক, পারিভাষিক অর্থের বিকৃতি ঘটিয়ে ও সুন্নাতের খেলাপ করে তারা সমবেত কন্ঠে যিকর করছে। (বি.দ্র: যিকর একাকী এবং অনুচ্চস্বরেই সুন্নাত)
৩. শুধু আল্লাহ বা ইল্লাল্লাহ যিকর: এটা খুবই গর্হিত ও আপত্তিজনক কাজ অথচ বিদআতীরা পছন্দ করে এই কাজটি করছে।
৪. জামায়াতবদ্ধ দরূদ বা সুরেলা সালাত-সালাম:নবীর শানে সালাত ও সালামের এই নবপদ্ধতি নিঃসন্দেহে বিদআ’ত। রাসূলুল্লাহ সা. যেভাবে উম্মাতকে দরূদ শিখিয়েছেন সেভাবেই দরূদ পড়তে হবে।
৫. কোন বুযুর্গের মাযারে মৃত্যুবার্ষিকী বা ওরস পালন: ওরস পালন খুবই গর্হিত ও আপত্তিজনক কাজ, যদিও পীরপন্থীদের কাছে খুবই প্রিয়।
৬. কুলখানী, চেহলাম বা চল্লিশা এবং মৃতের উদ্দেশ্য খানা খাওয়ানো।
৭. কবর পাকাকরণ বা সজ্জিত করা ও উৎসবের আয়োজন
৮. ফরয সালাতের পর জামায়াতবদ্ধভাবে হাত তুলে দু’আ
৯. আযানের পর হাত উঠিয়ে দুআ করা
১০. আযান ইকামতের মধ্যে বা অন্য যেকোনো সময় রাসুল সা. এর নাম শুনলে বৃদ্ধা আঙ্গুলে চুমু দিয়ে চোখে লাগানো।
১১. ঈদের নামাযের পর মুসাহাফা ও মুআনাকা বা কোলাকুলি করা
১২. ঈদের মাঠে সালাতের আগে বয়ানের নামে আরেকটি বাংলা খুতবা দেয়াও বিদআ’ত।
১৩. জানাযা ও দাফনের পর কবরের উপর চার কুল, সমবেত দু’আ, বা ব্যক্তিগত ইস্তেগফার বা দুআ ছাড়া সবই বিদআ’ত।
১৪. দাফনের পর কবরের কাছে আযান দেয়া।
১৫. কবরে ফুল দেয়া, বাতি জ্বালানো।
0 Comments
Thanks for your comment