#Campúsian-33
#Misleading-2
#Qn: “বেহেশত পুরুষের বিলাসস্থল, সেখানে পার্থিব নারী বা স্ত্রীদের স্থান নেই। পৃথিবীতে তারা চুক্তিবদ্ধ দাসী স্বর্গে তারা অনুপস্থিত বা উপেক্ষিত। ইসলামি আইনে নারীকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে এই দৃষ্টিকোণ থেকেই।”[১]
#Ans: মহান আল্লাহর বাণী ও নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস দ্বারা আমরা বুঝতে পারি, জান্নাতের নিয়ামত মানুষের দ্বারা অনুধাবন করা সম্ভব নয়। কেননা জান্নাতে আল্লাহ তা-ই দিবেন, যা জান্নাতীরা চাইবে। সেখানে নারীরা যা চাইবে, তাদেরকে তা-ই দেওয়া হবে। আর পুরুষরা যা চাইবে, তাদেরকেও তা-ই দেওয়া হবে। জান্নাতের অফুরন্ত নিয়ামত ও জান্নাতের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা এই স্বল্প পরিসরে যেমন সম্ভব না, তেমনই আমাদের উদ্দেশ্যও তা না।
জান্নাতের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও যমীন, যা তৈরী করা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্যে[২]
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একটি হাদীসে বিষয়টি আরও পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, “মহান আল্লাহ বলেছেন, আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্যে এমন কিছু তৈরি করে রেখেছি, যা কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শুনেনি এবং কোনো মানুষের অন্তরে তার কল্পনাও হয়নি। এ কথার স্বপক্ষে আল্লাহর কিতাবের বাণী রয়েছে—“কোনো প্রাণি জানে না যে, জান্নাতবাসীদের জন্যে কত চোখ জুড়ানো নিয়ামত গুপ্ত রাখা হয়েছে ওসব সৎকাজের প্রতিদান স্বরূপ, যা তারা দুনিয়াতে করেছিল”[৩,৪]
.
উপরের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা আলোচনাকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছি :
১) পার্থিব স্ত্রীরা কি জান্নাতে অনুপস্থিত?
২) জান্নাতে পার্থিব নারীদের মর্যাদা কেমন হবে?
৩) জান্নাতী নারীদের ভোগ বিলাসের ব্যবস্থা কী হবে?
.
#️⃣#️⃣পার্থিব স্ত্রীরা কি জান্নাতে অনুপস্থিত : #️⃣#️⃣
একটি আয়াত খেয়াল করুন, আল্লাহ বলেন, “স্থায়ী জান্নাত; যাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নী, ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও এবং ফিরিশতাগণ তাদের নিকট প্রবেশ করবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে। এবং বলবে, তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি। কত উত্তম এই পরিণাম।”[৫]
আয়াতটির তাফসীর করতে গিয়ে ইমাম ইবনু কাসীর রাহিমাহুল্লাহ লিখেছেন, “সেই উত্তম পরিণাম এবং উত্তম ঘর হচ্ছে জান্নাত, যা অবিনশ্বর ও চিরস্থায়ী। আবদুল্লাহ ইবনু আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, জান্নাতে একটি প্রাসাদের নাম ‘আদন’। তাতে মিনার ও কক্ষ রয়েছে। তাতে রয়েছে পাঁচ হাজার দরজা। প্রত্যেক দরজার ওপর পাঁচ হাজার ফিরিশতা। ওই প্রাসাদটি নবি, সিদ্দিক ও শহীদদের জন্যে নির্দিষ্ট। যাহহাক রাহিমাহুল্লাহ বলেন যে, এটা জান্নাতের শহর। এতে থাকবেন নবিগণ শহীদগণ এবং হিদায়াতের ইমামগণ। তাদের আশে পাশে অন্যান্য লোকেরা থাকবেন। ওর চতুর্দিকে অন্যান্য জান্নাত রয়েছে। ওখানে তারা তাদের প্রিয় জনকেও তাদের সাথে দেখতে পাবে। তাদের সাথে থাকবে তাদের মুমিন পিতা, মাতামহ, পুত্র, পৌত্র, স্ত্রী ইত্যাদি আত্নীয় স্বজন। তারা সুখে শান্তিতে অবস্থান করবেন এবং তাদের চক্ষুগুলি ঠাণ্ডা হবে। এমনকি তাদের মধ্যে কারও কারও আমল যদি তাকে ওই উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছাবার যোগ্যতা নাও রাখে, তবুও আল্লাহ তাআলা তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং ওই উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছিয়ে দেবেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘এবং যারা ঈমান আনে আর তাদের সন্তান সন্ততি ঈমানে তাদের অনুগামী হয়, তাদের সঙ্গে মিলিত করবো তাদের সন্তান সন্তুতিকে এবং তাদের কর্মফল আমি কিছুমাত্র হ্রাস করবো না। প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজ কৃতকর্মের জন্যে দায়ী।’[৬]
তাদেরকে মুবারকবাদ ও সালাম জ্ঞাপনের জন্যে সদাসর্বদা প্রত্যেকটি দরজা দিয়ে ফিরিশতাগণ যাতায়াত করবেন। এটাও আল্লাহ তাআলার একটি নিয়ামত। এর ফলে তারা সবসময় খুশি থাকবেন এবং সুসংবাদ শুনবেন। এটা ফেরেশতাদের সৌভাগ্যের কারণ যে, তারা শান্তির ঘরে নবি, সিদ্দীক ও শহীদদের সংস্পর্শে থাকতে পাবেন। এতে তারা নিজেদের জীবনকে ধন্য মনে করবেন।”[৭]
.
মুফতি মুহাম্মাদ শফি রাহিমাহুল্লাহ এই আয়াতের তাফসীরে বলেন,
“এরপর তাদের জন্যে আরও একটি পুরস্কার উল্লেখ করা হয়েছে। তা এই যে, আল্লাহ তাআলার এই নিয়ামত শুধু তাদের ব্যক্তিসত্বা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং তাদের বাপ দাদা, স্ত্রী-সন্তানেরাও এর অংশ পাবে। শর্ত এই যে, তাদের উপযুক্ত হতে হবে। এর ন্যূনতম স্তর হচ্ছে মুসলমান হওয়া। উদ্দেশ্য এই যে, তাদের বাপ দাদা ও স্ত্রীদের নিজস্ব আমল যদিও এ স্তরে পৌঁছার যোগ্য নয়; কিন্তু আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের খাতিরে ও বরকতে তাদেরকেও এই উচ্চ স্তরে পৌঁছিয়ে দেওয়া হবে।
এর পর আরও একটি পরকালীন সাফল্য বর্ণনা করা হয়েছে যে, ফিরিশতারা তাদের সালাম করতে প্রত্যেক দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে এবং বলবে, ‘সবরের কারণে তোমরা যাবতীয় দুঃখ কষ্ট থেকে নিরাপত্তা লাভ করেছ। এটা পরকালের কতই না উত্তম পরিণাম’।”[৮]
.
অপর এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, “এবং যারা ঈমান আনে আর তাদের সন্তান সন্ততি ঈমানে তাদের অনুগামী হয়, তাদের সংগে মিলিত করবো তাদের সন্তান সন্ততিকে এবং তাদের কর্মফল আমি কিছুমাত্র হ্রাস করবো না; প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের জন্যে দায়ী।” [৯]
.
ইমাম ইবনু কাসীর রাহিমাহুল্লাহ এই আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন,
“আল্লাহ তাআলা নিজের ফযল ও করম এবং স্নেহ ও করুণার বর্ণনা দিচ্ছেন, যেসব মুমিনের বাপ-দাদারা ঈমানের ব্যাপারে বাপ-দাদাদের অনুসারী হয়, কিন্তু সৎ কর্মের ব্যাপারে তাদের পিতৃপুরুষের সমতুল্য হয় না, আল্লাহ তাআলা তাদের সৎ আমলকে বাড়িয়ে দিয়ে তাদের পূর্বপুরুষদের সমপর্যায়ে পৌঁছিয়ে দিবেন। যাতে পূর্বপুরুষরা তাদের উত্তরসূরিদেরকে তাদের পার্শ্বে দেখে শান্তি লাভ করতে পারে। আর উত্তরসূরিরাও যেন পূর্বসূরিদের পার্শ্বে থাকতে পেরে সুখী হতে পারে।
মুমিনদের আমল কমিয়ে দিয়ে যে তাদের সন্তানদের আমল বাড়িয়ে দেওয়া হবে, তা নয়। বরং অনুগ্রহশীল ও দয়ালু আল্লাহ তাঁর পরিপূর্ণ ভাণ্ডার হতে তা দান করবেন। এই বিষয়ে মারফু হাদীসও আছে। অন্য একটি বর্ণনায় আছে যে, জান্নাতীরা যখন জান্নাতে চলে যাবে এবং তাদের স্ত্রী ও সন্তানদেরকে সেখানে দেখতে পাবে না, তখন তারা আরয করবে, ‘হে আল্লাহ! তারা কোথায়?’ উত্তরে আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘তারা তোমাদের মর্যাদায় পৌছাতে পারেনি’। তারা তখন বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তো নিজেদের জন্যে ও সন্তানদের জন্যে নেক আমল করেছিলাম!’ তখন মহান আল্লাহর নির্দেশক্রমে এদেরকেও ওদের সম-মর্যাদায় পৌঁছিয়ে দেওয়া হবে।
এও বর্ণিত আছে যে, জান্নাতীদের যেসব সন্তান ঈমান আনয়ন করেছে তাদেরকে তো তাদের সাথে মিলিত করা হবেই, এমনকি তাদের যেসব সন্তান শৈশবেই মৃত্যুবরণ করেছে, তাদেরকেও তাদের কাছে পৌঁছিয়ে দেওয়া হবে।” [১০]
.
আরেকটি আয়াত ও তার তাফসীর বর্ণনা করেই আমরা মূল আলোচনায় চলে যাবো ইন শা আল্লাহ। আল্লাহ তাআলা বলেন,“তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মিণীগণ সানন্দের জান্নাতে প্রবেশ করো।”[১১]
.
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনু কাসীর রাহিমাহুল্লাহ লিখেছেন,
“ইরশাদ হচ্ছে, কিয়ামতে দিন মুত্তাকীদের বলা হবে, হে আমার বান্দাগন! আজ তোমাদের কোনো ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখিতও হবে না—যারা আমার আয়াতে বিশ্বাস করেছিলে এবং আত্মসমর্পণ করেছিলে—তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মিণীগণ সানন্দে জান্নাতে প্রবেশ করো। এটা হলো তোমাদের ঈমান ও ইসলামের প্রতিদান। অর্থাৎ ভিতরে বিশ্বাস ও পূর্ণ প্রত্যয়, আর বাইরে শরীয়তের ওপর আমল।
মু’তামার ইবনে সুলাইমান স্বীয় পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, কিয়ামতের দিন যখন মানুষ নিজ নিজ কবরে উত্থিত হবে, তখন সবাই অশান্তি ও ভীত সন্ত্রস্ত থাকবে। তখন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা (আল্লাহর বাণী) করবে, ‘হে আমার বান্দাগণ! আজ তোমাদের কোনো ভয় নাই এবং দুঃখিতও হবে না তোমরা।’ এ ঘোষণা শুনে সবাই খুশী হয়ে যাবে কারণ এটাকে সাধারণ ঘোষণা মনে করবে। এরপর আবার ঘোষণা করা হবে, যারা আমার আয়াত বিশ্বাস করেছিলে এবং আত্মসমর্পণ করেছিলে। এ ঘোষণাটি শুনে খাটি ও পাকা মুসলমান ছাড়া অন্যান্য সবাই নিরাশ হয়ে যাবে। অতঃপর তাদেরকে বলা হবে, তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মীরা সানন্দে জান্নাতে প্রবেশ করো।
...আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সর্বনিম্ন শ্রেণীর জান্নাতীর সাততলা প্রাসাদ হবে। সে ষষ্ঠ তলায় অবস্থান করবে এবং সপ্তম তলাটি তার ওপরে থাকবে। তার ত্রিশজন খাদেম থাকবে, যারা সকাল সন্ধ্যায় স্বর্ণ নির্মিত তিনশটি পাত্রে তার জন্যে খাদ্য পরিবেশন করবে।...আয়ত চক্ষু বিশিষ্ট হুরদের মধ্য হতে তার বাহাত্তরটি স্ত্রী থাকবে এবং দুনিয়ায় স্ত্রী পৃথকভাবে থাকবে। তাদের মধ্যে এক জন এক এক মাইল জায়গার মধ্যে বসে থাকবে। সাথে সাথে তাদেরকে বলা হবে, তোমাদের এই নিয়ামত চিরস্থায়ী থাকবে। আর তোমরাও হবে স্থায়ী, অর্থাৎ কখনও এখান হতে বের হবে না এবং এটা হতে স্থানান্তর কামনা করবে না’।”[১২]
.
ওপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি, যেসব নেককার স্বামীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের নেককার স্ত্রীরাও তাদের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে। দুনিয়ার স্ত্রীরা যদি সমপর্যায়ে পৌঁছাতে নাও পারে, তবুও আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সমপর্যায়ে পৌঁছার ব্যবস্থা করে দেবেন। স্বামী-স্ত্রীকে একসাথে জান্নাতে থাকার সুযোগ করে দেবেন। আর জান্নাতী হুদের তুলনায় দুনিয়ার পুণ্যবতী স্ত্রীর জায়গা আলাদা সম্মানজনক জায়গায় হবে। আর শুধু স্ত্রীই নয়, আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে জান্নাতীদের সন্তান সন্ততিসহ, বাবা-মা, দাদা-দাদী, পৌত্রদেরকেও তাদের সমপর্যায়ে পৌঁছার ব্যবস্থা করে দেবেন। সবাইকে এক সাথে থাকার সুযোগ করে দেবেন।
কাজেই এর পরেও যদি কেউ বলে, পার্থিব নারীরা জান্নাতে অনুপস্থিত, কিম্বা নারীরা দুনিয়ায় চুক্তিবদ্ধ দাসী আর জান্নাতে অবহেলিত; তবে আমাদেরকে বলতেই হয়—তার জানা-শোনার ঘাটতি আছে। ইসলাম সম্পর্কে সে মক্তবের বাচ্চাদের থেকেও কম জ্ঞান রাখে।
.
#️⃣#️⃣জান্নাতে পার্থিব নারীদের মর্যাদা: #️⃣#️⃣
ইসলাম কি পার্থিব নারীদের জান্নাতী হুরদের থেকে কম সম্মানিত করেছে? এর উত্তর অবশ্যই না। উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,
“আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! বলুন যে, পার্থিব নারীরা উত্তম না জান্নাতের হুরেরা?’ তিনি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘বরং পৃথিবীর নারীরা হুরদের দেয়ে উত্তম। যেমন কাপড়ের বাইরের দিকটি ভিতরের দিক অপেক্ষে উত্তম’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! কেন?’ তিনি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তাদের সালাত রোযা ও অন্যান্য ইবাদতের কারণে; যা তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করে থাকে।’[১৩]
.
এই হাদীস অত্যন্ত পরিষ্কার করে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, পার্থিব নারীর মর্যাদা হুরদের চেয়েও বেশি। কেননা যুগে যুগে আজাদের মতো লোকেরা তাদের স্রষ্টার পথ থেকে সরিয়ে নিতে বিভিন্ন ধরণের কৌশল অবলম্বন করেছে। কিন্তু তারা বিভ্রান্ত লোকদের ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করে, দুনিয়ায় সত্যের ওপরে প্রতিষ্ঠিত থেকেছে। রবের হুকুমের সামনে নিজেদের মস্তক সদা অবনত করে রেখেছে। বিশুদ্ধ ঈমান বক্ষে ধারণ করে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। তাই এই সব মহীয়ান, গরীয়ান নারীদের মর্যাদা জান্নাতী হুরদের চেয়েও দামি হয়ে গেছে। কোনো কোনো সাহাবির উক্তি থেকে এও জানা যায়, আল্লাহর ইবাদতের অনুপাতে দুনিয়ার স্ত্রীগণ জান্নাতে ডাগরচোখা হুরদের চেয়েও দেখতে অনেক সুন্দরী হবে। তাদের মর্যাদা এত বেশি থাকবে যে, ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “জান্নাতে প্রত্যেক অধিবাসীর জন্যে অন্যের স্ত্রীদের কাছে ঘেঁষাও নিষিদ্ধ থাকবে।” [১৪]
.
#️⃣#️⃣জান্নাতী নারীদের ভোগ বিলাসের ব্যবস্থা: #️⃣#️⃣
মুক্তমনারা এ কথা বুঝাতে চেয়েছেন যে, ইসলামে নারী হলো পুরুষের ভোগ্য পণ্য। চুক্তিবদ্ধ দাসী। ব্যক্তি হিসেবে পুরুষ তার প্রভু, আর সে কেবল ভোগের সামগ্রী। কেননা একদিকে পুরুষকে দুনিয়ায় বহুবিবাহের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, অপরদিকে জান্নাতে হুরের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু নারীর জন্যে এই ধরনের কিছু ঘোষিত হয়নি।
যেমন তাদের গুরু বলেছেন,
“পুরুষ ও নারী ইসলামে ব্যক্তি হিসেবে প্রভু ও দাসী...নারী দাসী, তবে সম্ভোগের বস্তুও। সব রকম সম্ভোগের চূড়ান্তরূপ হচ্ছে নারী সম্ভোগ; এবং এ ধর্মেও নারীকে নির্দেশ করা হয়েছে কামসামগ্রীরূপে; পুরুষের কামকে পৃথিবী থেকে স্বর্গ পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে, আর নারীর কামকে করে দেয়া হয়েছে নিষিদ্ধ...সারকথা হচ্ছে নারী অবাধ্য, অশুভ, ও কামুক। তবে নারী তার কাম চরিতার্থ করতে পারবে না, পুরুষ নারীতে চরিতার্থ করবে কাম। পুরুষের কামসামগ্রীর চূড়ান্ত রূপ ধরেছে হুর-এ।”...“ইসলামে কামসামগ্রীর চরম রূপ হুর। পুরুষের কামকল্পনার চূড়ান্ত রূপ ধরেছে হুর-এ, হুররা চূড়ান্ত যৌনাবেদনময়ী নারী, যাদের দেহ হচ্ছে পুরুষের আদিম কামকল্পনার প্রতিমূর্তি।”[১৫]
.
একটু আগেই দেখেছি, জান্নাতী নারীরা স্বামীদের সাথে মিলিত হবে। আর জান্নাতে তাদের সকল চাওয়াকে পূর্ণ করা হবে। কীভাবে তাদের চাওয়াকে পূর্ণ করা হবে, এই বিষয়ে আলোচনা শুরুর আগে একটি জিজ্ঞাসা, কোনো পুরুষকে যদি বলা করা হয়—ইসলামের হারামকৃত কোন বিষয়ের প্রতি আপনি বেশি দুর্বলতা অনুভব করেন—তাহলে তিনি কী উত্তর দেবেন?........
.
তথ্যসূত্রঃ
1️⃣[নারী, পৃষ্ঠা : ৮৪]
2️⃣ [সূরা আলি ইমরান : ১৩৩ আয়াত]
3️⃣(সূরা সাজদা : ১৭)।
4️⃣[বুখারি, মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল, আস-সহীহ, অধ্যায় : তাফসীর অধ্যায়, ৮/৪৪১৭,৪৪১৮; মুসলিম, আবুল হোসাইন ইবনুল হাজ্জাজ, আস-সহীহ, অধ্যায় : বেহেশত ও তার অধিবাসী..., ৮/৬৯২৮-৬৯৩১; ইবনু কাসীর, ইসমাঈল ইবনু উমার, তাফসীরুল কুরআনীল আযীম, ১৫/৭১৭-৭১৮, আলবানি, মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন, হাদীসে কুদসি সমগ্র, পৃষ্ঠা : ৭১]
5️⃣[সূরা আর-রদ : ২৩-২৪ আয়াত]
6️⃣(সূরা আত-তুর : ২১ আয়াত)
7️⃣[ইবনু কাসীর, তাফসীরুল কুরআনীল আযীম, ১২/২৯৬]
8️⃣[পবিত্র কুরআনুল কারীম : বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর, পৃষ্ঠা : ৭০৪]
9️⃣সূরা আত-তুর : ২১ আয়াত
1️⃣0️⃣তাফসীরুল কুরআনীল আযীম, ১৭/১২০-১২১]
1️⃣1️⃣[সূরা আদ-দুখান : ৭০ আয়াত]
1️⃣2️⃣ [তাফসীরুল কুরআনীল আযীম, ১৬/৫৯৭-৫৯৮ ]
1️⃣3️⃣[হাইসামি, নূরুদ্দীন আলি ইবনু আবি বাকর, মাজমাউয যাওয়াইদ, ১০/৪১৭-৪১৮]
1️⃣4️⃣খারাশি, সুলাইমান ইবন সালেহ, জান্নাতে নারীদের অবস্থা, পৃষ্ঠা : ১৫
1️⃣5️⃣ [নারী, পৃষ্ঠা : ৮৩-৮৪]
#Misleading-2
#Qn: “বেহেশত পুরুষের বিলাসস্থল, সেখানে পার্থিব নারী বা স্ত্রীদের স্থান নেই। পৃথিবীতে তারা চুক্তিবদ্ধ দাসী স্বর্গে তারা অনুপস্থিত বা উপেক্ষিত। ইসলামি আইনে নারীকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে এই দৃষ্টিকোণ থেকেই।”[১]
#Ans: মহান আল্লাহর বাণী ও নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস দ্বারা আমরা বুঝতে পারি, জান্নাতের নিয়ামত মানুষের দ্বারা অনুধাবন করা সম্ভব নয়। কেননা জান্নাতে আল্লাহ তা-ই দিবেন, যা জান্নাতীরা চাইবে। সেখানে নারীরা যা চাইবে, তাদেরকে তা-ই দেওয়া হবে। আর পুরুষরা যা চাইবে, তাদেরকেও তা-ই দেওয়া হবে। জান্নাতের অফুরন্ত নিয়ামত ও জান্নাতের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা এই স্বল্প পরিসরে যেমন সম্ভব না, তেমনই আমাদের উদ্দেশ্যও তা না।
জান্নাতের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও যমীন, যা তৈরী করা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্যে[২]
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একটি হাদীসে বিষয়টি আরও পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, “মহান আল্লাহ বলেছেন, আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্যে এমন কিছু তৈরি করে রেখেছি, যা কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শুনেনি এবং কোনো মানুষের অন্তরে তার কল্পনাও হয়নি। এ কথার স্বপক্ষে আল্লাহর কিতাবের বাণী রয়েছে—“কোনো প্রাণি জানে না যে, জান্নাতবাসীদের জন্যে কত চোখ জুড়ানো নিয়ামত গুপ্ত রাখা হয়েছে ওসব সৎকাজের প্রতিদান স্বরূপ, যা তারা দুনিয়াতে করেছিল”[৩,৪]
.
উপরের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা আলোচনাকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছি :
১) পার্থিব স্ত্রীরা কি জান্নাতে অনুপস্থিত?
২) জান্নাতে পার্থিব নারীদের মর্যাদা কেমন হবে?
৩) জান্নাতী নারীদের ভোগ বিলাসের ব্যবস্থা কী হবে?
.
#️⃣#️⃣পার্থিব স্ত্রীরা কি জান্নাতে অনুপস্থিত : #️⃣#️⃣
একটি আয়াত খেয়াল করুন, আল্লাহ বলেন, “স্থায়ী জান্নাত; যাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নী, ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও এবং ফিরিশতাগণ তাদের নিকট প্রবেশ করবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে। এবং বলবে, তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি। কত উত্তম এই পরিণাম।”[৫]
আয়াতটির তাফসীর করতে গিয়ে ইমাম ইবনু কাসীর রাহিমাহুল্লাহ লিখেছেন, “সেই উত্তম পরিণাম এবং উত্তম ঘর হচ্ছে জান্নাত, যা অবিনশ্বর ও চিরস্থায়ী। আবদুল্লাহ ইবনু আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, জান্নাতে একটি প্রাসাদের নাম ‘আদন’। তাতে মিনার ও কক্ষ রয়েছে। তাতে রয়েছে পাঁচ হাজার দরজা। প্রত্যেক দরজার ওপর পাঁচ হাজার ফিরিশতা। ওই প্রাসাদটি নবি, সিদ্দিক ও শহীদদের জন্যে নির্দিষ্ট। যাহহাক রাহিমাহুল্লাহ বলেন যে, এটা জান্নাতের শহর। এতে থাকবেন নবিগণ শহীদগণ এবং হিদায়াতের ইমামগণ। তাদের আশে পাশে অন্যান্য লোকেরা থাকবেন। ওর চতুর্দিকে অন্যান্য জান্নাত রয়েছে। ওখানে তারা তাদের প্রিয় জনকেও তাদের সাথে দেখতে পাবে। তাদের সাথে থাকবে তাদের মুমিন পিতা, মাতামহ, পুত্র, পৌত্র, স্ত্রী ইত্যাদি আত্নীয় স্বজন। তারা সুখে শান্তিতে অবস্থান করবেন এবং তাদের চক্ষুগুলি ঠাণ্ডা হবে। এমনকি তাদের মধ্যে কারও কারও আমল যদি তাকে ওই উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছাবার যোগ্যতা নাও রাখে, তবুও আল্লাহ তাআলা তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং ওই উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছিয়ে দেবেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘এবং যারা ঈমান আনে আর তাদের সন্তান সন্ততি ঈমানে তাদের অনুগামী হয়, তাদের সঙ্গে মিলিত করবো তাদের সন্তান সন্তুতিকে এবং তাদের কর্মফল আমি কিছুমাত্র হ্রাস করবো না। প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজ কৃতকর্মের জন্যে দায়ী।’[৬]
তাদেরকে মুবারকবাদ ও সালাম জ্ঞাপনের জন্যে সদাসর্বদা প্রত্যেকটি দরজা দিয়ে ফিরিশতাগণ যাতায়াত করবেন। এটাও আল্লাহ তাআলার একটি নিয়ামত। এর ফলে তারা সবসময় খুশি থাকবেন এবং সুসংবাদ শুনবেন। এটা ফেরেশতাদের সৌভাগ্যের কারণ যে, তারা শান্তির ঘরে নবি, সিদ্দীক ও শহীদদের সংস্পর্শে থাকতে পাবেন। এতে তারা নিজেদের জীবনকে ধন্য মনে করবেন।”[৭]
.
মুফতি মুহাম্মাদ শফি রাহিমাহুল্লাহ এই আয়াতের তাফসীরে বলেন,
“এরপর তাদের জন্যে আরও একটি পুরস্কার উল্লেখ করা হয়েছে। তা এই যে, আল্লাহ তাআলার এই নিয়ামত শুধু তাদের ব্যক্তিসত্বা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং তাদের বাপ দাদা, স্ত্রী-সন্তানেরাও এর অংশ পাবে। শর্ত এই যে, তাদের উপযুক্ত হতে হবে। এর ন্যূনতম স্তর হচ্ছে মুসলমান হওয়া। উদ্দেশ্য এই যে, তাদের বাপ দাদা ও স্ত্রীদের নিজস্ব আমল যদিও এ স্তরে পৌঁছার যোগ্য নয়; কিন্তু আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের খাতিরে ও বরকতে তাদেরকেও এই উচ্চ স্তরে পৌঁছিয়ে দেওয়া হবে।
এর পর আরও একটি পরকালীন সাফল্য বর্ণনা করা হয়েছে যে, ফিরিশতারা তাদের সালাম করতে প্রত্যেক দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে এবং বলবে, ‘সবরের কারণে তোমরা যাবতীয় দুঃখ কষ্ট থেকে নিরাপত্তা লাভ করেছ। এটা পরকালের কতই না উত্তম পরিণাম’।”[৮]
.
অপর এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, “এবং যারা ঈমান আনে আর তাদের সন্তান সন্ততি ঈমানে তাদের অনুগামী হয়, তাদের সংগে মিলিত করবো তাদের সন্তান সন্ততিকে এবং তাদের কর্মফল আমি কিছুমাত্র হ্রাস করবো না; প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের জন্যে দায়ী।” [৯]
.
ইমাম ইবনু কাসীর রাহিমাহুল্লাহ এই আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন,
“আল্লাহ তাআলা নিজের ফযল ও করম এবং স্নেহ ও করুণার বর্ণনা দিচ্ছেন, যেসব মুমিনের বাপ-দাদারা ঈমানের ব্যাপারে বাপ-দাদাদের অনুসারী হয়, কিন্তু সৎ কর্মের ব্যাপারে তাদের পিতৃপুরুষের সমতুল্য হয় না, আল্লাহ তাআলা তাদের সৎ আমলকে বাড়িয়ে দিয়ে তাদের পূর্বপুরুষদের সমপর্যায়ে পৌঁছিয়ে দিবেন। যাতে পূর্বপুরুষরা তাদের উত্তরসূরিদেরকে তাদের পার্শ্বে দেখে শান্তি লাভ করতে পারে। আর উত্তরসূরিরাও যেন পূর্বসূরিদের পার্শ্বে থাকতে পেরে সুখী হতে পারে।
মুমিনদের আমল কমিয়ে দিয়ে যে তাদের সন্তানদের আমল বাড়িয়ে দেওয়া হবে, তা নয়। বরং অনুগ্রহশীল ও দয়ালু আল্লাহ তাঁর পরিপূর্ণ ভাণ্ডার হতে তা দান করবেন। এই বিষয়ে মারফু হাদীসও আছে। অন্য একটি বর্ণনায় আছে যে, জান্নাতীরা যখন জান্নাতে চলে যাবে এবং তাদের স্ত্রী ও সন্তানদেরকে সেখানে দেখতে পাবে না, তখন তারা আরয করবে, ‘হে আল্লাহ! তারা কোথায়?’ উত্তরে আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘তারা তোমাদের মর্যাদায় পৌছাতে পারেনি’। তারা তখন বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তো নিজেদের জন্যে ও সন্তানদের জন্যে নেক আমল করেছিলাম!’ তখন মহান আল্লাহর নির্দেশক্রমে এদেরকেও ওদের সম-মর্যাদায় পৌঁছিয়ে দেওয়া হবে।
এও বর্ণিত আছে যে, জান্নাতীদের যেসব সন্তান ঈমান আনয়ন করেছে তাদেরকে তো তাদের সাথে মিলিত করা হবেই, এমনকি তাদের যেসব সন্তান শৈশবেই মৃত্যুবরণ করেছে, তাদেরকেও তাদের কাছে পৌঁছিয়ে দেওয়া হবে।” [১০]
.
আরেকটি আয়াত ও তার তাফসীর বর্ণনা করেই আমরা মূল আলোচনায় চলে যাবো ইন শা আল্লাহ। আল্লাহ তাআলা বলেন,“তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মিণীগণ সানন্দের জান্নাতে প্রবেশ করো।”[১১]
.
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনু কাসীর রাহিমাহুল্লাহ লিখেছেন,
“ইরশাদ হচ্ছে, কিয়ামতে দিন মুত্তাকীদের বলা হবে, হে আমার বান্দাগন! আজ তোমাদের কোনো ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখিতও হবে না—যারা আমার আয়াতে বিশ্বাস করেছিলে এবং আত্মসমর্পণ করেছিলে—তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মিণীগণ সানন্দে জান্নাতে প্রবেশ করো। এটা হলো তোমাদের ঈমান ও ইসলামের প্রতিদান। অর্থাৎ ভিতরে বিশ্বাস ও পূর্ণ প্রত্যয়, আর বাইরে শরীয়তের ওপর আমল।
মু’তামার ইবনে সুলাইমান স্বীয় পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, কিয়ামতের দিন যখন মানুষ নিজ নিজ কবরে উত্থিত হবে, তখন সবাই অশান্তি ও ভীত সন্ত্রস্ত থাকবে। তখন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা (আল্লাহর বাণী) করবে, ‘হে আমার বান্দাগণ! আজ তোমাদের কোনো ভয় নাই এবং দুঃখিতও হবে না তোমরা।’ এ ঘোষণা শুনে সবাই খুশী হয়ে যাবে কারণ এটাকে সাধারণ ঘোষণা মনে করবে। এরপর আবার ঘোষণা করা হবে, যারা আমার আয়াত বিশ্বাস করেছিলে এবং আত্মসমর্পণ করেছিলে। এ ঘোষণাটি শুনে খাটি ও পাকা মুসলমান ছাড়া অন্যান্য সবাই নিরাশ হয়ে যাবে। অতঃপর তাদেরকে বলা হবে, তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মীরা সানন্দে জান্নাতে প্রবেশ করো।
...আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সর্বনিম্ন শ্রেণীর জান্নাতীর সাততলা প্রাসাদ হবে। সে ষষ্ঠ তলায় অবস্থান করবে এবং সপ্তম তলাটি তার ওপরে থাকবে। তার ত্রিশজন খাদেম থাকবে, যারা সকাল সন্ধ্যায় স্বর্ণ নির্মিত তিনশটি পাত্রে তার জন্যে খাদ্য পরিবেশন করবে।...আয়ত চক্ষু বিশিষ্ট হুরদের মধ্য হতে তার বাহাত্তরটি স্ত্রী থাকবে এবং দুনিয়ায় স্ত্রী পৃথকভাবে থাকবে। তাদের মধ্যে এক জন এক এক মাইল জায়গার মধ্যে বসে থাকবে। সাথে সাথে তাদেরকে বলা হবে, তোমাদের এই নিয়ামত চিরস্থায়ী থাকবে। আর তোমরাও হবে স্থায়ী, অর্থাৎ কখনও এখান হতে বের হবে না এবং এটা হতে স্থানান্তর কামনা করবে না’।”[১২]
.
ওপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি, যেসব নেককার স্বামীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের নেককার স্ত্রীরাও তাদের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে। দুনিয়ার স্ত্রীরা যদি সমপর্যায়ে পৌঁছাতে নাও পারে, তবুও আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সমপর্যায়ে পৌঁছার ব্যবস্থা করে দেবেন। স্বামী-স্ত্রীকে একসাথে জান্নাতে থাকার সুযোগ করে দেবেন। আর জান্নাতী হুদের তুলনায় দুনিয়ার পুণ্যবতী স্ত্রীর জায়গা আলাদা সম্মানজনক জায়গায় হবে। আর শুধু স্ত্রীই নয়, আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে জান্নাতীদের সন্তান সন্ততিসহ, বাবা-মা, দাদা-দাদী, পৌত্রদেরকেও তাদের সমপর্যায়ে পৌঁছার ব্যবস্থা করে দেবেন। সবাইকে এক সাথে থাকার সুযোগ করে দেবেন।
কাজেই এর পরেও যদি কেউ বলে, পার্থিব নারীরা জান্নাতে অনুপস্থিত, কিম্বা নারীরা দুনিয়ায় চুক্তিবদ্ধ দাসী আর জান্নাতে অবহেলিত; তবে আমাদেরকে বলতেই হয়—তার জানা-শোনার ঘাটতি আছে। ইসলাম সম্পর্কে সে মক্তবের বাচ্চাদের থেকেও কম জ্ঞান রাখে।
.
#️⃣#️⃣জান্নাতে পার্থিব নারীদের মর্যাদা: #️⃣#️⃣
ইসলাম কি পার্থিব নারীদের জান্নাতী হুরদের থেকে কম সম্মানিত করেছে? এর উত্তর অবশ্যই না। উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,
“আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! বলুন যে, পার্থিব নারীরা উত্তম না জান্নাতের হুরেরা?’ তিনি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘বরং পৃথিবীর নারীরা হুরদের দেয়ে উত্তম। যেমন কাপড়ের বাইরের দিকটি ভিতরের দিক অপেক্ষে উত্তম’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! কেন?’ তিনি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তাদের সালাত রোযা ও অন্যান্য ইবাদতের কারণে; যা তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করে থাকে।’[১৩]
.
এই হাদীস অত্যন্ত পরিষ্কার করে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, পার্থিব নারীর মর্যাদা হুরদের চেয়েও বেশি। কেননা যুগে যুগে আজাদের মতো লোকেরা তাদের স্রষ্টার পথ থেকে সরিয়ে নিতে বিভিন্ন ধরণের কৌশল অবলম্বন করেছে। কিন্তু তারা বিভ্রান্ত লোকদের ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করে, দুনিয়ায় সত্যের ওপরে প্রতিষ্ঠিত থেকেছে। রবের হুকুমের সামনে নিজেদের মস্তক সদা অবনত করে রেখেছে। বিশুদ্ধ ঈমান বক্ষে ধারণ করে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। তাই এই সব মহীয়ান, গরীয়ান নারীদের মর্যাদা জান্নাতী হুরদের চেয়েও দামি হয়ে গেছে। কোনো কোনো সাহাবির উক্তি থেকে এও জানা যায়, আল্লাহর ইবাদতের অনুপাতে দুনিয়ার স্ত্রীগণ জান্নাতে ডাগরচোখা হুরদের চেয়েও দেখতে অনেক সুন্দরী হবে। তাদের মর্যাদা এত বেশি থাকবে যে, ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “জান্নাতে প্রত্যেক অধিবাসীর জন্যে অন্যের স্ত্রীদের কাছে ঘেঁষাও নিষিদ্ধ থাকবে।” [১৪]
.
#️⃣#️⃣জান্নাতী নারীদের ভোগ বিলাসের ব্যবস্থা: #️⃣#️⃣
মুক্তমনারা এ কথা বুঝাতে চেয়েছেন যে, ইসলামে নারী হলো পুরুষের ভোগ্য পণ্য। চুক্তিবদ্ধ দাসী। ব্যক্তি হিসেবে পুরুষ তার প্রভু, আর সে কেবল ভোগের সামগ্রী। কেননা একদিকে পুরুষকে দুনিয়ায় বহুবিবাহের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, অপরদিকে জান্নাতে হুরের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু নারীর জন্যে এই ধরনের কিছু ঘোষিত হয়নি।
যেমন তাদের গুরু বলেছেন,
“পুরুষ ও নারী ইসলামে ব্যক্তি হিসেবে প্রভু ও দাসী...নারী দাসী, তবে সম্ভোগের বস্তুও। সব রকম সম্ভোগের চূড়ান্তরূপ হচ্ছে নারী সম্ভোগ; এবং এ ধর্মেও নারীকে নির্দেশ করা হয়েছে কামসামগ্রীরূপে; পুরুষের কামকে পৃথিবী থেকে স্বর্গ পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে, আর নারীর কামকে করে দেয়া হয়েছে নিষিদ্ধ...সারকথা হচ্ছে নারী অবাধ্য, অশুভ, ও কামুক। তবে নারী তার কাম চরিতার্থ করতে পারবে না, পুরুষ নারীতে চরিতার্থ করবে কাম। পুরুষের কামসামগ্রীর চূড়ান্ত রূপ ধরেছে হুর-এ।”...“ইসলামে কামসামগ্রীর চরম রূপ হুর। পুরুষের কামকল্পনার চূড়ান্ত রূপ ধরেছে হুর-এ, হুররা চূড়ান্ত যৌনাবেদনময়ী নারী, যাদের দেহ হচ্ছে পুরুষের আদিম কামকল্পনার প্রতিমূর্তি।”[১৫]
.
একটু আগেই দেখেছি, জান্নাতী নারীরা স্বামীদের সাথে মিলিত হবে। আর জান্নাতে তাদের সকল চাওয়াকে পূর্ণ করা হবে। কীভাবে তাদের চাওয়াকে পূর্ণ করা হবে, এই বিষয়ে আলোচনা শুরুর আগে একটি জিজ্ঞাসা, কোনো পুরুষকে যদি বলা করা হয়—ইসলামের হারামকৃত কোন বিষয়ের প্রতি আপনি বেশি দুর্বলতা অনুভব করেন—তাহলে তিনি কী উত্তর দেবেন?........
.
তথ্যসূত্রঃ
1️⃣[নারী, পৃষ্ঠা : ৮৪]
2️⃣ [সূরা আলি ইমরান : ১৩৩ আয়াত]
3️⃣(সূরা সাজদা : ১৭)।
4️⃣[বুখারি, মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল, আস-সহীহ, অধ্যায় : তাফসীর অধ্যায়, ৮/৪৪১৭,৪৪১৮; মুসলিম, আবুল হোসাইন ইবনুল হাজ্জাজ, আস-সহীহ, অধ্যায় : বেহেশত ও তার অধিবাসী..., ৮/৬৯২৮-৬৯৩১; ইবনু কাসীর, ইসমাঈল ইবনু উমার, তাফসীরুল কুরআনীল আযীম, ১৫/৭১৭-৭১৮, আলবানি, মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন, হাদীসে কুদসি সমগ্র, পৃষ্ঠা : ৭১]
5️⃣[সূরা আর-রদ : ২৩-২৪ আয়াত]
6️⃣(সূরা আত-তুর : ২১ আয়াত)
7️⃣[ইবনু কাসীর, তাফসীরুল কুরআনীল আযীম, ১২/২৯৬]
8️⃣[পবিত্র কুরআনুল কারীম : বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর, পৃষ্ঠা : ৭০৪]
9️⃣সূরা আত-তুর : ২১ আয়াত
1️⃣0️⃣তাফসীরুল কুরআনীল আযীম, ১৭/১২০-১২১]
1️⃣1️⃣[সূরা আদ-দুখান : ৭০ আয়াত]
1️⃣2️⃣ [তাফসীরুল কুরআনীল আযীম, ১৬/৫৯৭-৫৯৮ ]
1️⃣3️⃣[হাইসামি, নূরুদ্দীন আলি ইবনু আবি বাকর, মাজমাউয যাওয়াইদ, ১০/৪১৭-৪১৮]
1️⃣4️⃣খারাশি, সুলাইমান ইবন সালেহ, জান্নাতে নারীদের অবস্থা, পৃষ্ঠা : ১৫
1️⃣5️⃣ [নারী, পৃষ্ঠা : ৮৩-৮৪]